১৯৪০। বয়স ৪১ বছর

হরিশংকর জলদাস

১৯৪০। বয়স ৪১ বছর 

এ সময় কলকাতার কবিরা দুটো দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। একদল বামপন্থী কাব্যভাবনায় আবিষ্ট, অন্যদল কবিতায় বিদেশি ভাব-ভাষা, প্রতীক-দুর্বোধ্যতার বিরোধী। শেষের দলটি বামপন্থী কবিতার আধিপত্য খর্ব করার ব্যাপারে বদ্ধপরিকর। 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে এই সময় ‘পূর্ব্বাশা’ পত্রিকার প্রকাশ সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। এই সময় সঞ্জয় ভট্টাচার্য (১৯০৯-১৯৬৯) ও প্রেমেন্দ্র মিত্র (১৯০৪–১৯৮৮) মিলে ‘নিরুক্ত’ নামে একটি নতুন ত্রৈমাসিক পত্রিকা প্রকাশ করেন (আশ্বিন ১৩৪৭ বঙ্গাব্দ)। এই পত্রিকার প্রথম বর্ষ প্রথম সংখ্যায় জীবনানন্দের ‘গতিবিধি’ ও ‘নির্দেশ’ নামে দুটি কবিতা প্রকাশিত হয়। এই সংখ্যায় আর যাঁদের লেখা স্থান পেয়েছিল তাঁরা হলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মোহিতলাল মজুমদার ও সজনীকান্ত দাস। এই সংখ্যায় যাঁদের লেখা ছিল না, অথচ কাম্য ছিল, তাঁরা হলেন বিষ্ণু দে, সমর সেন ও বুদ্ধদেব বসু। 

রবীন্দ্রনাথের বয়স ৭৯। ফেব্রুয়ারিতে কবিকে শেষবারের মতো দেখতে এলেন গান্ধীজী ও কস্তুরা বাঈ। শান্তিনিকেতনে সংবর্ধিত হলেন গান্ধীজী। রবীন্দ্রনাথের নিকটজনেরা মারা গেলেন পর পর। এপ্রিলে অ্যান্ড্রুজ, মে-তে সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুর মারা গেলেন। মৃত্যুমুখে পতিত হলেন রবীন্দ্র-প্রিয় প্রতিভাময়ী গায়িকা অমিতা সেন। 

পৃথিবী ও ভারতের রাজনৈতিক অবস্থার কথা জানিয়ে রবীন্দ্রনাথ মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টকে পত্র দিলেন। 

বোলপুরে প্রথম টেলিফোন লাইন এল। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় কবি রবীন্দ্রনাথকে ‘ডি.লিট’ উপাধি দেন। ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের ৭ আগস্ট অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিবর্গ শান্তিনিকেতনে এসে রবীন্দ্রনাথকে এ উপাধি প্রদান করেন। এই উপাধি গ্রহণের প্রতিভাষণ রবীন্দ্রনাথ প্রস্তুত করেছিলেন সংস্কৃত ভাষায়। 

সেপ্টেম্বরে কালিম্‌পঙ গেলে সেখানে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন রবীন্দ্রনাথ। টেলিফোনে সংবাদ পেয়ে ডাক্তাররা সেখানে গিয়ে তাঁকে কলকাতায় নিয়ে এলেন। দু’মাস শয্যাশায়ী থাকলেন কবি। অসুস্থতার জন্যে নিজে লিখতে পারেন না। মুখে মুখে বলেন, অন্যরা লিখে নেন। এভাবে ‘আরোগ্য’র সকল কবিতা রচিত হয়। 

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষার মাধ্যমে প্রবেশিকা পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের নায়ক মাইকেল ডায়ারকে হত্যা করেন উধম সিং। লন্ডনে তাঁকে ফাঁসি দেওয়া হয়। মুহম্মদ আলী জিন্নাহর নেতৃত্বে মুসলিম লীগ ‘পাকিস্তান প্রস্তাব’ উপস্থাপন করে। 

জার্মানি নরওয়ে, ডেনমার্ক, হল্যান্ড ও বেলজিয়াম দখল করে। ফ্রান্সের এক বিরাট অংশও জার্মানি দখল করে নেয়। ইতালি ফ্রান্স ও ব্রিটেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। ডানকার্কের যুদ্ধে জার্মানির হাতে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের মিলিত বাহিনীর শোচনীয় পরাজয় ঘটে। 

জাপান ভারত আক্রমণ করে। বার্মা জাপানের করতলগত হয়। কলকাতায় জাপান বোমা বর্ষণ করে। 

সামরিক বিপর্যয়ের ফলে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চেম্বারলেন পদত্যাগ করেন, বৃদ্ধ চার্চিল প্রধানমন্ত্রিত্ব গ্রহণ করেন। 

কবি লুই আরাগঁ যুদ্ধে যোগ দিলেন। ট্রটস্কি নিহত হলেন। 

১৯৪০ থেকে ১৯৪৩ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিধ্বংসী কাল। সুইডিশ রাজা নোবেল পুরস্কার দেওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করলেন। 

এ বছর জন্মগ্রহণ করলেন পবিত্র মুখোপাধ্যায়, কেতকীকুশারী ডাইসন, মৃণাল দত্ত, আনোয়ারা সৈয়দ হক, আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, এখলাসউদ্দিন আহমদ, গোলাম মুরশিদ, বিপ্রদাশ বড়ুয়া, মনজুরে মওলা, মনিরুজ্জামান, মাহমুদুল হক, রাহাত খান, নাজমা জেসমিন চৌধুরী। বুদ্ধদেব বসুর দ্বিতীয় কন্যা দময়ন্তীর জন্ম হয় এ বছর। 

আর পরলোক গমন করেছেন অ্যান্ড্রুজ, সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুর, কালীমোহন ঘোষ, ১৯০৯ সালে সাহিত্যে নোবেলজয়ী সেলমা লাগেরলফ্। 

প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রিকা : প্রকাশিত হয় রবীন্দ্রনাথের ‘নবজাতক’, ‘সানাই’, ‘চিত্রলিপি-১’, ‘রোগশয্যায়’, ‘রবীন্দ্র রচনাবলী-৩য়, ৪র্থ, ৫ম খণ্ড’ ও ‘অচলিত ১ম খণ্ড’ এবং ইংরেজিতে ‘মাই বয়হুড ডেজ’। 

প্রকাশ পায় মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্প সংকলন ‘বৌ’, উপন্যাস ‘সহরতলী’, সুধীন্দ্রনাথ দত্তের ‘উত্তর ফাল্গুনী’, মনীশ ঘটকের ‘শিলালিপি’, প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘সম্রাট’, অজিত দত্তের ‘পাতাল কন্যা’, বুদ্ধদেব বসুর ‘নতুন পাতা’, সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ‘পদাতিক’, আবুল হোসেনের ‘নববসন্ত’, কামাক্ষীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের ‘মৌচাক’, প্রবোধকুমার সান্যালের ‘নদ ও নদী’, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘আদর্শ হিন্দু-হোটেল’, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কালিন্দী’, সমর সেনের ‘গ্রহণ ও অন্যান্য কবিতা’, সুকুমার সেনের ‘বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস : ১ম খণ্ড-পূর্বার্ধ’, ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘সাহিত্যসাধক চরিতমালা’। আবু সয়ীদ আইয়ুব ও হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘আধুনিক বাংলা কবিতা’ [শ্রাবণ ১৩৪৬] সংকলনের প্রকাশ। এতে বিষ্ণু দে রচিত ‘অভীপ্সা’, ‘চতুর্দশী’, ‘টপ্পা-ঠুংরী’, ‘জন্মাষ্টমী’, ক্রেসিডা’, ‘ঘোড়সওয়ার’, ‘পদধ্বনি’ মোট সাতটি কবিতা গৃহীত হয়। 

বের হয় আর্নেস্ট হেমিংওয়ের ‘ফর হুম দি বেল টোলস্’। সঞ্জয় ভট্টাচার্য ও প্রেমেন্দ্র মিত্র সম্পাদিত ‘নিরুক্ত’ পত্রিকা প্রকাশিত হয়। 

সকল অধ্যায়

১. ১৮৯৯ – জন্ম
২. ১৯০০। বয়স ১ বছর
৩. ১৯০১। বয়স ২ বছর
৪. ১৯০২। বয়স ৩ বছর
৫. ১৯০৩। বয়স ৪ বছর
৬. ১৯০৪। বয়স ৫ বছর
৭. ১৯০৫। বয়স ৬ বছর
৮. ১৯০৬। বয়স ৭ বছর
৯. ১৯০৭। বয়স ৮ বছর
১০. ১৯০৮। বয়স ৯ বছর
১১. ১৯০৯। বয়স ১০ বছর
১২. ১৯১০। বয়স ১১ বছর
১৩. ১৯১১। বয়স ১২ বছর
১৪. ১৯১২। বয়স ১৩ বছর
১৫. ১৯১৩। বয়স ১৪ বছর
১৬. ১৯১৪। বয়স ১৫ বছর
১৭. ১৯১৫। বয়স ১৬ বছর
১৮. ১৯১৬। বয়স ১৭ বছর
১৯. ১৯১৭। বয়স ১৮ বছর
২০. ১৯১৮। বয়স ১৯ বছর
২১. ১৯১৯। বয়স ২০ বছর
২২. ১৯২০। বয়স ২১ বছর
২৩. ১৯২১। বয়স ২২ বছর
২৪. ১৯২২। বয়স ২৩ বছর
২৫. ১৯২৩। বয়স ২৪ বছর
২৬. ১৯২৪। বয়স ২৫ বছর
২৭. ১৯২৫। বয়স ২৬ বছর
২৮. ১৯২৬। বয়স ২৭ বছর
২৯. ১৯২৭। বয়স ২৮ বছর
৩০. ১৯২৮। বয়স ২৯ বছর
৩১. ১৯২৯। বয়স ৩০ বছর
৩২. ১৯৩০। বয়স ৩১ বছর
৩৩. ১৯৩১। বয়স ৩২ বছর
৩৪. ১৯৩২। বয়স ৩৩ বছর
৩৫. ১৯৩৩। বয়স ৩৪ বছর
৩৬. ১৯৩৪। বয়স ৩৫ বছর
৩৭. ১৯৩৫। বয়স ৩৬ বছর
৩৮. ১৯৩৬। বয়স ৩৭ বছর
৩৯. ১৯৩৭। বয়স ৩৮ বছর
৪০. ১৯৩৮। বয়স ৩৯ বছর
৪১. ১৯৩৯। বয়স ৪০ বছর
৪২. ১৯৪০। বয়স ৪১ বছর
৪৩. ১৯৪১। বয়স ৪২ বছর
৪৪. ১৯৪২। বয়স ৪৩ বছর
৪৫. ১৯৪৩। বয়স ৪৪ বছর
৪৬. ১৯৪৪। বয়স ৪৫ বছর
৪৭. ১৯৪৫। বয়স ৪৬ বছর
৪৮. ১৯৪৬। বয়স ৪৭ বছর
৪৯. ১৯৪৭। বয়স ৪৮ বছর
৫০. ১৯৪৮। বয়স ৪৯ বছর
৫১. ১৯৪৯। বয়স ৫০ বছর
৫২. ১৯৫০। বয়স ৫১ বছর
৫৩. ১৯৫১। বয়স ৫২ বছর
৫৪. ১৯৫২। বয়স ৫৩ বছর
৫৫. ১৯৫৩। বয়স ৫৪ বছর
৫৬. ১৯৫৪। বয়স ৫৫ বছর
৫৭. জীবনানন্দ দাশ বিষয়ক

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন