১৯৩২। বয়স ৩৩ বছর

হরিশংকর জলদাস

১৯৩২। বয়স ৩৩ বছর 

মার্চ ও আগস্ট-সেপ্টেম্বরে ‘প্রেতিনীর রূপকথা’ ও ‘নিরূপম যাত্রা’ নামক উপন্যাস দু’টো রচনা করেন জীবনানন্দ। এগুলো মৃত্যুর পরে প্রকাশিত হয়। এ বছর ছোটগল্প লিখেছেন ৩৩টি। 

এই সময় জীবনানন্দ কর্মহীনতার দৈনন্দিন বিড়ম্বনায় অত্যন্ত বিস্রস্ত। দারিদ্র্যের ও পরমুখাপেক্ষিতার কারণে হতাশাগ্রস্ত, অপমানাহত, বিক্ষুব্ধ, আত্মধিক্কারপীড়িত এবং কখনো কখনো সামান্য পরশ্রীকাতর ও ঈর্ষান্বিত। 

‘নানা রকমভাবে এই অকর্মক জীবনযাপন ঘোচাবার চেষ্টা তিনি (জীবনানন্দ) করেছেন। প্রাইভেট ট্যুইশনি করেছেন; ছাতার ডাঁট তৈরি হয় যে মোটা বেতে, তা আমদানির ব্যবসায় যুক্ত হবেন কিনা ভেবেছেন, ইসিয়োরেন্সের দালালিও একটা উপযুক্ত উপায় মনে হয়েছে তাঁর; একটা স্টেনোটাইপিস্টের বা খবরের কাগজের রিপোর্টারের চাকরি পেলেও তো সৌভাগ্যের ব্যাপার হত চিন্তা করেছেন; এমন কী খবরের কাগজ ফেরি করলে কেমন হয়, তাও হয়তো ভেবেছেন।’ [জীবনানন্দ দাশের দিনলিপি’, ভূমেন্দ্র গুহ] 

বেকারজীবন নিয়ে জীবনানন্দ বিব্রত বিভ্রান্ত। একজন প্রাক্তন ছাত্র তাঁকে রেল কোম্পানির গার্ডের চাকরির সন্ধান দিয়েছিল। ওই চাকরিতে জীবনানন্দের মন সায় দেয়নি। ওই সময় তিনি রাজমিস্ত্রির কাজ করাবেন কি না ভেবেছেন। লিটারেরি নোটস-এ জীবনানন্দ লিখেছেন — ‘না, ওটা তাঁর ধাতে সইবে না, পেটে খিল মেরে রেখে ওরকম বাঁশের মাচায় চেপে সিমেন্ট জমানোর কাজ করতে অথবা ইটের পাঁজার মোট বইতে যে নার্ভ-এর জোরটা লাগে, তা তাঁর নেই। পথ চলতে ওদের ওপরে চোখ পড়ে গেলে সহানুভূতি বোধ করা যায়, মমতা বোধ করা যায়, করুণা বোধ করা যায়, কিন্তু মগজে দু’চামচে বিদ্যে পড়েছে বলে ও কাজটায় নিজেকে জুতে দেওয়া যায় না।’ [দিনলিপি, পৃ. ৫৯৭-৯৮] 

রবীন্দ্রনাথের বয়স ৭১। ১১ এপ্রিল পারস্যের রাজা রেজা শাহ পহ্লবীর আমন্ত্রণে পারস্যে গেলেন রবীন্দ্রনাথ। বিমানে গেলেন, সঙ্গী প্রতিমা দেবী ও অমিয় চক্রবর্তী। ইরাক ও ইরানের নানা স্থানে বক্তৃতা দিলেন। বিপুলভাবে সংবর্ধিত হলেন তিনি সেখানে। ৩ জুন বিমানেই কলকাতায় ফিরলেন। 

দারুণ অর্থসংকটের কারণে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘রামতনু লাহিড়ী অধ্যাপক’-এর পদটি গ্রহণ করলেন রবীন্দ্রনাথ। মুক্তছন্দে ‘পুনশ্চ’ লিখলেন। 

নজরুল স্বদেশী গ্রামোফোন কোম্পানিতে যোগ দেন। নভেম্বরে সিরাজগঞ্জের বঙ্গীয় মুসলিম তরুণ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন নজরুল। ডিসেম্বরে এলবার্ট হলে বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সম্মেলনের অষ্টম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। মূল সভাপতি কবি কায়কোবাদ তাঁকে প্রদত্ত ফুলের মালা নজরুলের গলায় পরিয়ে দেন। 

রবীন্দ্রনাথের কাহিনী অবলম্বনে সবাক চলচ্চিত্র ‘চিরকুমার সভা’ নির্মিত হয়। নির্মাতা : প্রেমাঙ্কুর আতর্থী। শ্রেষ্ঠাংশে অভিনয় করলেন দুর্গাদাস, তিনকড়ি, মনোরঞ্জন, ইন্দুবালা, নিভাননী, মলিনা। 

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় দ্বিতীয় বারের মতো সিটি কলেজ থেকে বিএসসি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়ে অকৃতকার্য হলে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার অবসান ঘটান এবং সম্পূর্ণভাবে সাহিত্যসাধনায় ব্রতী হন। 

গোলটেবিল বৈঠক সেরে ভারতে ফেরার ৭ দিনের মধ্যে গান্ধীকে গ্রেপ্তার করল ইংরেজ সরকার। রবীন্দ্রনাথ এর বিরুদ্ধে লন্ডনে প্রতিবাদপত্র পাঠালেন। জেলে গান্ধী অনশন শুরু করলে রবীন্দ্রনাথ সেপ্টেম্বরে গান্ধীকে দেখতে গেলেন পুনায়। ওই দিনই গান্ধী অনশন ভঙ্গ করলেন। 

প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের নেতৃত্বে চট্টগ্রামে বিপ্লবীরা ইউরোপীয়ান ক্লাব আক্রমণ করেন। গ্রেপ্তার এড়াতে গিয়ে প্রীতিলতা আত্মহত্যা করেন। 

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কনভোকেশন সভায় কুমারী বীণা দাস নামের এক ছাত্রী বাংলার গভর্নর স্যার স্ট্যানলি জ্যাকসনকে গুলি করতে গিয়ে ধরা পড়েন। বিপ্লবী প্রদ্যোৎ ভট্টাচার্য মেদিনীপুরের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মি. ডগলাসকে, কালীপদ মুখার্জী মুন্সীগঞ্জের স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট কামাখ্যাপ্রসাদ সেনকে, শান্তিসুধা ঘোষ ও সুনীতি চৌধুরী নামক দুজন ছাত্রী কুমিল্লার ম্যাজিস্ট্রেট মি. স্টিভেন্সকে হত্যা করেন। বিপ্লবীদের দ্বারা সারাদেশে হত্যাযজ্ঞ প্রকট হয়ে ওঠে। 

ডি. ভ্যালেরা আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হলেন। তিনি ব্রিটেনের সঙ্গে সকল প্রকার রাজনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করলেন। 

৬০টি দেশের অংশগ্রহণে আন্তর্জাতিক নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলন বসল জেনেভায়। ইবন সৌদের নেতৃত্বে সৌদী আরব রাষ্ট্রের জন্ম হল। 

এ বছর জন্মালেন শঙ্খ ঘোষ, আলোক সরকার, তরুণ সান্যাল, শংকরানন্দ মুখোপাধ্যায়, কবিতা সিংহ, হাসান হাফিজুর রহমান, ফয়েজ আহমদ, জাহানারা আরজু। 

পরলোক গমন করলেন প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, স্বর্ণকুমারী দেবী, কৃষ্ণকমল ভট্টাচার্য, বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন (৯ ডিসেম্বর)। 

এ বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন জন গলস্ওয়ার্দি (১৮৬৭ – ১৯৩৩)। ঔপন্যাসিক। ব্রিটেনের অধিবাসী। 

পুরস্কার দেওয়ার কারণ হিসেবে নোবেল কমিটি লেখেন— 

‘For his distinguished art of narration, which takes highest form in ‘The Farsight Saga.’’ 

তাঁর বিখ্যাত রচনাগুলো হল—’Vill a Rubein’, ‘The Salvation of Swithin Forsyte’, ‘The Man of Property’, ‘The Country House’, ‘Strite’, ‘Justice’, ‘The Dark flowers’. 

প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রিকা : রবীন্দ্রনাথের ‘পরিশেষ’, ‘কালের যাত্রা’, ‘পুনশ্চ’, ‘গীতবিতান-৩য় খণ্ড’ প্রকাশ পায়; ইংরেজিতে বের হয় ‘মহাত্মাজী অ্যান্ড দি ডিপ্রেভ্ হিউম্যানিটি’। 

প্রকাশিত হয় প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘প্রথমা, বুদ্ধদেব বসুর ‘একটি কথা’, ‘যবনিকাপাত’, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘অপরাজিতা’, অন্নদাশঙ্কর রায়ের ‘সত্যাসত্য-১ম খণ্ড’, ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘সংবাদপত্রে সেকালের কথা’, অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের ‘প্রাচীর ও প্রান্তর’। বের হয় বন্দে আলী মিয়ার ময়নামতীর চর’, ‘অনুরাগ’, রবীন্দ্র মৈত্রের ‘মানময়ী গার্লস স্কুল’, বিনয় সরকারের ‘নয়া বাংলার গোড়াপত্তন’ এবং অলডস হাক্সলীর ‘ব্রেভ নিউ ওয়ার্ল্ড’। 

সঞ্জয় ভট্টাচার্যের সম্পাদনায় ‘পূৰ্ব্বাশা’ পত্রিকায় প্রকাশ (বৈশাখ ১৩৩৯ বঙ্গাব্দ)। প্রায় ৩০ বছরেরও অধিক সময় সঞ্জয় ভট্টাচার্য এই পত্রিকা সম্পাদনা করেন। বহু প্রখ্যাত কবি- সাহিত্যিকের প্রথম রচনা এই পত্রিকা প্রকাশ করে। 

শ্রীকাল ভৈরব-এর ভৈরবী চক্র’ উপন্যাসটি নিষিদ্ধ হয়। চারণকবি মুকুন্দ দাসের দুটি দেশাত্মবোধক গানের বই ‘কর্মক্ষেত্রের গান’ ও ‘পথের গান’ বাজেয়াপ্ত হয়। 

সকল অধ্যায়

১. ১৮৯৯ – জন্ম
২. ১৯০০। বয়স ১ বছর
৩. ১৯০১। বয়স ২ বছর
৪. ১৯০২। বয়স ৩ বছর
৫. ১৯০৩। বয়স ৪ বছর
৬. ১৯০৪। বয়স ৫ বছর
৭. ১৯০৫। বয়স ৬ বছর
৮. ১৯০৬। বয়স ৭ বছর
৯. ১৯০৭। বয়স ৮ বছর
১০. ১৯০৮। বয়স ৯ বছর
১১. ১৯০৯। বয়স ১০ বছর
১২. ১৯১০। বয়স ১১ বছর
১৩. ১৯১১। বয়স ১২ বছর
১৪. ১৯১২। বয়স ১৩ বছর
১৫. ১৯১৩। বয়স ১৪ বছর
১৬. ১৯১৪। বয়স ১৫ বছর
১৭. ১৯১৫। বয়স ১৬ বছর
১৮. ১৯১৬। বয়স ১৭ বছর
১৯. ১৯১৭। বয়স ১৮ বছর
২০. ১৯১৮। বয়স ১৯ বছর
২১. ১৯১৯। বয়স ২০ বছর
২২. ১৯২০। বয়স ২১ বছর
২৩. ১৯২১। বয়স ২২ বছর
২৪. ১৯২২। বয়স ২৩ বছর
২৫. ১৯২৩। বয়স ২৪ বছর
২৬. ১৯২৪। বয়স ২৫ বছর
২৭. ১৯২৫। বয়স ২৬ বছর
২৮. ১৯২৬। বয়স ২৭ বছর
২৯. ১৯২৭। বয়স ২৮ বছর
৩০. ১৯২৮। বয়স ২৯ বছর
৩১. ১৯২৯। বয়স ৩০ বছর
৩২. ১৯৩০। বয়স ৩১ বছর
৩৩. ১৯৩১। বয়স ৩২ বছর
৩৪. ১৯৩২। বয়স ৩৩ বছর
৩৫. ১৯৩৩। বয়স ৩৪ বছর
৩৬. ১৯৩৪। বয়স ৩৫ বছর
৩৭. ১৯৩৫। বয়স ৩৬ বছর
৩৮. ১৯৩৬। বয়স ৩৭ বছর
৩৯. ১৯৩৭। বয়স ৩৮ বছর
৪০. ১৯৩৮। বয়স ৩৯ বছর
৪১. ১৯৩৯। বয়স ৪০ বছর
৪২. ১৯৪০। বয়স ৪১ বছর
৪৩. ১৯৪১। বয়স ৪২ বছর
৪৪. ১৯৪২। বয়স ৪৩ বছর
৪৫. ১৯৪৩। বয়স ৪৪ বছর
৪৬. ১৯৪৪। বয়স ৪৫ বছর
৪৭. ১৯৪৫। বয়স ৪৬ বছর
৪৮. ১৯৪৬। বয়স ৪৭ বছর
৪৯. ১৯৪৭। বয়স ৪৮ বছর
৫০. ১৯৪৮। বয়স ৪৯ বছর
৫১. ১৯৪৯। বয়স ৫০ বছর
৫২. ১৯৫০। বয়স ৫১ বছর
৫৩. ১৯৫১। বয়স ৫২ বছর
৫৪. ১৯৫২। বয়স ৫৩ বছর
৫৫. ১৯৫৩। বয়স ৫৪ বছর
৫৬. ১৯৫৪। বয়স ৫৫ বছর
৫৭. জীবনানন্দ দাশ বিষয়ক

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন