চিলের ছাতের ঘর

হেমেন্দ্রকুমার রায়

আমার ছেলেবেলার বন্ধু মানিক। সেবারে মানিক তার বাড়ির আর সকলকার সঙ্গে পশ্চিমে বেড়াতে গিয়েছিল। জায়গাটার নাম না-হয় আর বললুম না। কিছুদিন পরে মানিকের কাছ থেকে এই চিঠি পেলুম—

ভাই অমল,

 তোমার জন্যে বড়ো মন কেমন করছে; কারণ এ-দেশটা এত

 সুন্দর যে, তোমাকে না দেখালে আমাদের তৃপ্তি হচ্ছে না।

 যে-বাড়িতে আছি, সেখানিও চমৎকার। একদিকে ধু-ধু মাঠ,

দু-দিকে নিবিড় বনের রেখা এবং আর একদিকে পাহাড়ের পর

পাহাড় ও তাদের কোল দিয়ে নাচতে নাচতে বয়ে যাচ্ছে একটি

 রুপোলি নদী।

 তুমি আজকেই মোটমাট বেঁধে নিয়ে রওনা হও। আমাদের চিলের

 ছাতের ঘর থেকে চারিদিকের দৃশ্য খুব স্পষ্ট দেখা যায়। তুমি কবি

 বলে মা তোমার জন্যে এই ঘরখানি ‘রিজার্ভ’ করে রেখেছেন।

 আসতে দেরি হলে জরিমানা দিতে হবে। এখানকার খবর সব

ভালো। ইতি

 তোমার মানিক

মানিকের মা আমাকে খুব ‘কমপ্লিমেন্ট’ দিয়েছেন—আমি নাকি কবি! বাংলাদেশে কবিতা লিখলেই কবি হওয়া যায় কিনা! সুতরাং এত বড়ো একটা উপাধি লাভের পরেও মানিকের আমন্ত্রণ রক্ষা না করলে একটা অকৃতজ্ঞতার কাজ করা হবে! অতএব মোটমাট বাঁধতে শুরু করলুম।

 মানিকের বাড়িতে এসে উঠেছি।

বাড়িখানি পুরোনো হলেও প্রাসাদের মতন প্রকাণ্ড এবং দেখতেও পরমসুন্দর। চারিদিকে উঁচু পাঁচিল দিয়ে ঘেরা মস্ত এক বাগানের ভিতরে দাঁড়িয়ে সেই উঁচু বাড়িখানা প্রত্যেক পথিকেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

এদিকে-ওদিকে কৌতূহলী দৃষ্টি নিক্ষেপ করতে করতে প্রথম যখন অমলের সঙ্গে বাগানের পথ দিয়ে বাড়ির দিকে অগ্রসর হলুম, হঠাৎ একদিকে আমার চোখ পড়ল। বিলাতি ‘পাম’ গাছ দিয়ে ঘেরা এক টুকরো জমির ভিতরে ছোটো একটা স্মৃতিস্তম্ভের মতো কী দাঁড়িয়ে রয়েছে।

জিজ্ঞাসা করলুম, ‘ওটা কী মানিক?’

মানিক বললে, ‘কবর।’

‘কবর!’

‘হ্যাঁ। এ বাড়িখানা আগে এক সায়েবের ছিল। তার মেম মারা গেলে পর তাকে এইখানেই কবর দেওয়া হয়।’

এমন সময় মানিকের কুকুর ‘লিলি’ মনিবের সাড়া পেয়ে সেইখানে এসে হাজির হল। তারপরেই রেগে গরর-গরর করতে লাগল! দেখলুম, সে কবরের দিকে তাকিয়ে গর্জন করছে। কিন্তু কবরের দিকে তাকিয়ে আমি তো কিছুই দেখতে পেলুম না।

বললুম, ‘মানিক, তোমার কুকুর কী দেখে খেপে গেল?’

মানিক বললে, ‘জানি না। লিলি ওই কবরটাকে দেখলেই খেপে যায়, যেন সে হাওয়ার সঙ্গে লড়াই করতে চায়!’

আমি বললুম, ‘না মানিক, ও তো লড়াই করতে চায় বলে মনে হচ্ছে না। ওকে দেখলে মনে হয়—ও যেন মহাভয়ে পাগল হয়ে গেছে!’

মানিক হেসে বললে, ‘জাতে আর নামে বিলিতি হলেও লিলি আমাদের কাছে এসে হিন্দু ধর্ম অবলম্বন করেছে। হিন্দুর বাড়িতে ক্রিশ্চানের কবর ও বোধ হয় পছন্দ করে না!…কিন্তু ও-কথা এখন থাক। চলো, তোমাকে তোমার ঘরে নিয়ে যাই।’

বাড়ির ভিতরে ঢুকলুম। যেমন প্রকাণ্ড বাড়ি তেমনি মস্ত মস্ত ঘর। সে-সব ঘরের অবস্থা এখন ভালো নয়। কোথাও চুন-বালি খসে পড়েছে, কোথাও মেঝে ছ্যাঁদা করে ইঁদুরেরা বড়ো বড়ো গর্ত বানিয়েছে, কোথাও কড়িকাঠ থেকে বাদুড়েরা দলে দলে ঝুলছে!

মানিক বললে, ‘এ বাড়িখানা অনেক দিন খালি পড়েছিল। এই মেড়ুয়াদের দেশে কুসংস্কার বড়ো বেশি। বোধ হয় ওই কবরের ভয়েই এ-বাড়িখানা এতদিন কেউ ভাড়া নিতে চায়নি!’

আমি বললুম, ‘বসতবাড়িতে আমিও কবর-টবর পছন্দ করি না। জীবন আর মৃত্যুর কথা একসঙ্গে মনে পড়লে বেঁচে সুখ পাওয়া যায় না।’

মানিক বললে, ‘আমরা কিন্তু আজ তিন হপ্তা ধরে এখানে খুব সুখে বাস করছি। ও কবর ফুঁড়ে উঠে কোনোদিন কোনো মেম-পেতনি আমাদের সঙ্গে গল্প করতে আসেনি।… নাও, এখন ওপরে উঠে তোমার ঘর দেখবে চলো।’

চওড়া এক কাঠের সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে লাগলুম। এক সময়ে এই সিঁড়ি যে দেখতে খুব চমৎকার ছিল, এখনও তা বেশ বোঝা যায়। কিন্তু আজ এ সিঁড়ি এমন জীর্ণ হয়ে গেছে যে, আমাদের পায়ের চাপে যন্ত্রণায় যেন আর্তনাদ করতে লাগল।

চিলের ছাতের ঘর বলতে আমরা যা বুঝি, এখানি সেরকম নয়। এ ঘরখানা নতুন ধরনের। এ-শ্রেণির ঘর প্রায়ই খুব ছোটো হয়, কিন্তু এ ঘরখানা বেশ বড়োসড়ো। এর একদিকে কাঠের সিঁড়ি ওপরে এসে উঠেছে এবং তার পরেই ঘরখানা শুরু হয়েছে। তিন দিকে সারি সারি বারোটা লম্বা-চওড়া জানলা ও ঘরের ম্যাটিংমোড়া মেঝের ওপরে কতকগুলো পুরোনো সোফা, কৌচ, চেয়ার, ড্রেসিং-টেবিল, ওয়াশিং স্ট্যান্ড ও একখানি মস্ত বড়ো লোহার খাট। সিঁড়ি ছেড়ে ঘরের মেঝেতে পা দিয়েই—কেন জানি না, আমার মনে হল, এ-জায়গাটা যেন খালি নয়, এখানে যেন কী-একটা অদৃশ্য ও বীভৎস্য রহস্য একান্তে অনেক দিন ধরে গোপনে বাস করছে! সঙ্গে-সঙ্গে কেমন একটা অজানা আতঙ্কে আমার সারা মন আচ্ছন্ন হয়ে গেল! যেন এখানে একটুও হাওয়া নেই, আমার দম বন্ধ হয়ে আসতে লাগল।

তাড়াতাড়ি বললুম, ‘মানিক, ঘরের জানলা-দরজাগুলো বন্ধ করে রেখেছে কেন? খুলে দাও, খুলে দাও!’

মানিক আমার কথামতো কাজ করলে। বাহির থেকে খোলা আলো আর হাওয়া ঘরের ভিতর ছুটে এল শিশুর মতো সকৌতুকে! সঙ্গে-সঙ্গে আমার মনের সকল গ্লানি কেটে গেল।

একটা জানলার সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই চোখের ওপরে ভেসে উঠল, অপূর্ব চিত্রপট!

প্রথমেই দেখলুম, পাহাড়ের পর পাহাড়ের শিখর ক্রমেই উঁচু হয়ে আলোমাখা নীলাকাশের দিকে উঠে গেছে; যেন ভগবানের পূজার থালার মধ্যে নৈবেদ্যের সার সাজানো রয়েছে! তাদের সামনে দিয়ে বয়ে যাচ্ছে এক গান-পাগলিনী, নৃত্যশীলা নদী! সেই কালো পাহাড়মালার তলায় রৌদ্রদীপ্ত নদীটিকে দেখে মনে হচ্ছে, অচপল কাজলমেঘের তলায় চঞ্চল বিদ্যুতের একটি চকচকে রেখা!

তারপরেই আবিষ্কার করলুম, আমার জন্যে নির্দিষ্ট এই ঘরের তলাতেই রয়েছে সেই কবরটা! মনটা আবার খুঁতখুঁত করতে লাগল।

ফিরে বললুম, ‘দেখ মানিক, এমন সুন্দর জায়গায় যে-সায়েবটি বাড়ি তৈরি করেছেন, নিশ্চয়ই তিনি কবি ছিলেন। কিন্তু কবির চোখ পেয়েও এমন মনোরম স্থানে তিনি নিজের স্ত্রীর দেহকে গোর দিলেন কেন—সেটা কিছুতেই আমার মাথায় ঢুকছে না!’

মানিক বললে, ‘এখানকার লোকেদের মুখে এক গাঁজাখুরি গল্প শুনেছি। মারা গেলে পর মেমের দেহকে নাকি প্রথমে গোরস্থানেই নিয়ে গিয়ে গোর দেওয়া হয়। কিন্তু তার পরদিনই দেখা যায়, মড়াসুদ্ধ কফিনটা কবরের পাশে মাটির ওপরে পড়ে রয়েছে! কফিনটাকে আবার গর্তে পুরে মাটি চাপা দেওয়া হল। কিন্তু পরদিন সকালে আবার সেই দৃশ্য! উপরি-উপরি তিনবার এই দৃশ্যের অভিনয় হওয়ার পর গোরস্থানের পাদরি বললেন, ‘এই পাপীর দেহ গোরস্থান ধারণ করতে রাজি নয়। একে অন্য কোথাও নিয়ে যাওয়া হোক।’ তখন সকলে বাধ্য হয়েই দেহটাকে এই বাড়ির ভিতরে এনে গোর দিলে। সেই থেকে ‘পাপী’ কবর থেকে আর পালাবার চেষ্টা করেনি।’

আমি বললুম, ‘পাদরি-সায়েব মেমের দেহকে পাপীর দেহ বললেন কেন?’

মানিক বললে, ‘মেমটা নাকি আত্মহত্যা করেছিল! কিন্তু আজগুবি গল্প আমি বিশ্বাস করি না—এ সব হচ্ছে বানানো কথা।’

ঘরের চারিধারে চোখ বুলিয়ে আমি জিজ্ঞাসা করলুম, ‘এ-ঘরের এই পুরোনো আসবাবগুলো কোত্থেকে এল?’

মানিক বললে, ‘আসবাবগুলো হচ্ছে সেই সায়েবের। তাঁর মেম এই ঘরেই বাস করত। স্ত্রীর মৃত্যুর পর তিনি আসবাবগুলো যেমন ছিল, তেমনিভাবেই রেখে দিয়েছেন। আমাদেরও মানা করে দেওয়া হয়েছে, আমরা যেন এ-ঘর থেকে কোনো জিনিস না সরিয়ে রাখি।’

হঠাৎ খাটের ঠিক মাথার ওপরেই দেওয়ালে-টাঙানো একখানা প্রকাণ্ড ‘অয়েল-পেন্টিং’-এর দিকে আমার দৃষ্টি আকৃষ্ট হল। স্ত্রীলোকের ছবি। আসলে মানুষের দেহ যত বড়ো হয়, সেই আঁকা ছবির দেহটিও তার চেয়ে ছোটো নয়।

শুধালুম, ‘ও কার ছবি মানিক?’

মানিক বললে, ‘সেই মেমের। কাছে গিয়ে দেখ-না মেমটি দেখতে ঠিক ডানাকাটা পরির মতো ছিল না!’

পায়ে পায়ে ছবির কাছে এগিয়ে গেলুম। পটে আঁকা আছে এক বুড়ির চেহারা। তাঁর বয়স পঁয়ষট্টির কম হবে না। লিকলিকে দেহ, বাঁখারির মতন সরু বাহু, সাদা শনের মতন চুলগুলো কাঁধের ওপর এসে পড়েছে! ঠোঁটের কোণে অত্যন্ত কুৎসিত হাসি, নাকটা টিয়াপাখির মতন বাঁকানো, আর তার কোটরে-ঢাকা কুৎকুতে চোখ দুটো!—ওঃ, সেই চোখ দুটোর ভিতর থেকে যে ক্রুর দৃষ্টি বেরিয়ে আসছে, আমি কিছুতেই তা বর্ণনা করতে পারব না! আমার মনে হল, গোখরো সাপের চেয়েও ভয়ানক সেই চোখ দুটো যেন এখনও জ্যান্ত হয়ে আছে! ছবিতে-আঁকা মূর্তি ও তার চোখ যে এত বেশি স্বাভাবিক ও জীবন্ত হয়, এটা কখনো কল্পনা করতে পারিনি! বিলিতি কেতাবে আঁকা ডাইনি মূর্তি যেন রক্তমাংসের দেহ নিয়ে আমার সমুখে এসে দাঁড়িয়েছে!

মানিক বললে, ‘কি হে অমল, এই মেমসাহেবটিকে তোমার পছন্দ হল?’

ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে আমি বললুম, ‘পছন্দ! যাকে দেখে এই ছবিখানা আঁকা হয়েছে, সে-মানুষটির প্রকৃতি নিশ্চয়ই খুব জঘন্য ছিল। তোমার এই মেমের ছবি যদি ঘর থেকে সরিয়ে না রাখো, তাহলে রাত্রে আমি দুঃস্বপ্ন দেখব!’

মানিক বললে, ‘কিন্তু ঘর থেকে যে কিছু সরাতে মানা আছে!’

আমি বললুম, ‘তা হলে আমাকে অন্য ঘরে দাও।’

মানিক একটু ভেবে বললে, ‘আচ্ছা, এসো আমরা দুজনে মিলে ছবিখানাকে নামিয়ে ঘরের বাইরে রেখে দিই। তারপর বাড়ি ছাড়বার সময়ে ছবিখানাকে আবার দেওয়ালে টাঙিয়ে রেখে গেলেই চলবে।’

খাটের ওপরে উঠে দুজনে মিলে সেই প্রকাণ্ড ছবিখানাকে নামাবার চেষ্টা করলুম। কিন্তু উঃ, সেকী বিষম ভারী ছবি! ওজনে যেন একজন মানুষের দেহের মতোই ভারী!

মানিক আশ্চর্য হয়ে বললে, ‘ছবি কখনো এত ভারী হয়!’

অবশেষে কষ্টেসৃষ্টে ছবিখানাকে নামিয়ে, ঘরের বাইরে ছাদের ওপরে নিয়ে গিয়ে রেখে এলুম।

মানিক হঠাৎ হাঁপাতে হাঁপাতে চমকে উঠে বললে, ‘ওকী অমল, তুমি হাত কাটলে কেমন করে? তোমার হাতে অত রক্ত কেন?’

তাড়াতাড়ি হাত তুলে দেখি, সত্যিই তো! আমার দু-খানা হাত-ই যে রক্তে রাঙা হয়ে উঠেছে!

তারপরেই মানিকের দুই হাতের দিকে তাকিয়ে আমিও বলে উঠলুম, ‘মানিক, মানিক! তোমার হাতেও যে রক্ত!’

মানিক নিজের হাতের দিকে হতভম্বের মতো তাকিয়ে বললে, ‘তাই তো! কখন যে হাত কেটেছে, আমি তো কিছুই টের পাইনি!’

দুজনে তখনি ছুটে গিয়ে হাত ধুয়ে ফেললুম। তারপর আপন আপন হাতের দিকে তাকিয়ে আমরা একেবারে অবাক হয়ে গেলুম। আমাদের কারুর হাতেই কোথাও এতটুকু আঁচড়ের দাগ পর্যন্ত নেই!

তবে এ কীসের রক্ত? এ কী রহস্য?

সে রাত্রে চাঁদের আলো এসে বাইরে অন্ধকারের সমস্ত ময়লা ধুয়ে দিয়েছিল এবং দূরের নদী পাহাড় বনকে দেখাচ্ছিল ঠিক পরিস্থানের স্বপ্নময় দৃশ্যের মতো!

সেদিকে মোহিত চোখে তাকিয়ে তাকিয়ে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লুম, কিছুই বুঝতে পারলুম না।

আচম্বিতে আমার ঘুম ভেঙে গেল। কী জন্যে ঘুম ভাঙল, সেটা বুঝতে পারলুম না বটে, কিন্তু এটা বেশ অনুভব করলুম, ঘরের ভিতরে নিশ্চয়ই কোনো একটা অস্বাভাবিক কিছু হয়েছে!

ধড়মড়িয়ে বিছানার ওপর উঠে বসে চেয়ে দেখি, কালো মেঘের চাদরে চাঁদের মুখ ঢাকা পড়ে গেছে!

ঘরে ঘুটঘুটে অন্ধকার। সঙ্গে-সঙ্গে কেমন একটা বিশ্রী দুর্গন্ধ আমার নাকে এল। মেডিকেল কলেজে যে-ঘরে পচা মড়া কাটা হয়, একবার সেই ঘরে ঢুকে আমি ঠিক এইরকম দুর্গন্ধই পেয়েছিলুম!

হঠাৎ আমার মাথার ওপর কে ফোঁস করে নিশ্বাস ফেললে—আমার স্তম্ভিত বুকটা ঢিপঢিপ করতে লাগল!

ভাবলুম, মনের ভুল। হয়তো জানলা দিয়ে হাওয়ার দমক এসে আমার চুলে লেগেছে।

একটু সরে বসে বিছানা হাতড়ে দেশলাইয়ের বাক্সটা পেলুম। একটা কাঠি জ্বেলে তুলে ধরে তাড়াতাড়ি ঘরের চারদিকটা একবার দেখে নিলুম।

দেশলাইয়ের কাঠি নিবে গেল। কিন্তু যা দেখেছি, সেইটুকুই যথেষ্ট!

মানিক আর আমি দুজনে মিলে যে ভারী ছবিখানাকে ধস্তাধস্তি করে নামিয়ে বাইরে রেখে এসেছিলুম, সেই ছবিখানা ঘরের দেওয়ালে যেখানে ছিল আবার ঠিক সেইখানেই টাঙানো রয়েছে!

আড়ষ্ট হয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছি, কী করব! হঠাৎ আমার কাঁধের ওপর কে যেন একখানা হাত রাখলে, বরফের মতো ঠান্ডা কনকনে একখানা হাত!

ভয়ে পাগলের মতো হয়ে গিয়ে আমি সামনের দিকে সজোরে এক ঘুষি ছুড়লুম এবং পরমুহূর্তেই কে যেন সশব্দে দড়াম করে মেঝের ওপরে পড়ে গেল!

আমিও আর অপেক্ষা করলুম না, তিরের মতো ছুটে ছাতের ঘরের সিঁড়ি দিয়ে নীচের দিকে নামতে লাগলুম!

সিঁড়ির ঠিক তলাতেই একটা লণ্ঠন হাতে করে উদবিগ্নমুখে দাঁড়িয়েছিল মানিক। আমাকে দেখেই শুধোলে, ‘ব্যাপার কী? তোমার ঘরে ও-কীসের শব্দ হল?’

আমি কাঁপতে কাঁপতে বললুম, ‘তোমাদের সেই ডাইনির ছবি আবার ঘরে ফিরে এসেছে!’

‘ধ্যেৎ! যত বাজে কথা! ছবির কি পা আছে? দাঁড়াও দেখে আসি।’ এই বলে মানিক দ্রুতপদে ওপরে উঠে গেল।

কিন্তু তারপরেই শুনলুম মানিকের উচ্চ আর্তনাদ এবং তারপরেই দেখলুম, সে একসঙ্গে তিন-চারটে সিঁড়ি টপকে নীচে নেমে আসছে! আকুল স্বরে সে বললে, ‘ঘরের ভিতরে পচা মড়ার গন্ধ আর ঘরের মেঝেতে উপুড় হয়ে পড়ে আছে একটা বুড়ির পচা আর গলা মড়া!’

হঠাৎ আমার নিজের গায়ের দিকে নজর পড়ল—আমার কাঁধের ওপর থেকে একটা রক্তের ধারা গা বয়ে নেমে আসছে! এই কাঁধেই সেই বরফের মতো ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেয়েছিলুম!

সকল অধ্যায়

১. পোড়োবাড়ি
২. ছায়া, না কায়া?
৩. জীবন মৃত্যু
৪. স্বপ্ন হলেও সত্য
৫. ভৌতিক চক্রান্ত
৬. জুজুর ভয়
৭. ভূতের ভয়
৮. ভূত যখন বন্ধু হয়
৯. গঙ্গার বিভীষিকা
১০. এথেন্সের শেকল বাঁধা ভূত
১১. বাদশার সমাধি
১২. কে?
১৩. মূর্তি
১৪. অভিশপ্ত নীলকান্ত
১৫. মিসেস কুমুদিনী চৌধুরি
১৬. কী?
১৭. পোড়ো মন্দিরের আতঙ্ক
১৮. চিলের ছাতের ঘর
১৯. ওলাইতলার বাগানবাড়ি
২০. আয়নার ইতিহাস
২১. খামেনের মমি
২২. বাঁদরের পা
২৩. রামস্বামীর উপল মণি
২৪. ক্ষুধিত জীবন
২৫. বাড়ি
২৬. বাড়ি, বুড়ো, বুট
২৭. শয়তান
২৮. বন্দি আত্মার কাহিনি
২৯. আধখাওয়া মড়া
৩০. ভেলকির হুমকি
৩১. জ্বলন্ত চক্ষু
৩২. আজও যা রহস্য
৩৩. শয়তানি-জুয়া
৩৪. কোর্তা
৩৫. রহস্যময় বাড়ি
৩৬. বাঘের চোখ
৩৭. জীবন্ত মৃতদেহ
৩৮. মানুষ, না পিশাচ
৩৯. জাগ্রত হৃৎপিণ্ড
৪০. অভিশপ্ত মূর্তি
৪১. ঐন্দ্রজালিক
৪২. টেলিফোন
৪৩. ভূতের রাজা
৪৪. অভিশপ্তা
৪৫. সূর্যদেবতার পুরোহিত
৪৬. অদৃশ্যের কীর্তি
৪৭. নসিবের খেলা
৪৮. ভৌতিক, না ভেলকি?
৪৯. ছায়া—কায়া—মায়া
৫০. বিছানা
৫১. ‘বাজলে বাঁশি কাছে আসি’!
৫২. কঙ্কাল-সারথি
৫৩. লোটা
৫৪. মাঝরাতের ‘কল’
৫৫. এক রাতের ইতিহাস
৫৬. কিন্তু
৫৭. পেপির দক্ষিণ পদ
৫৮. কিসমৎ
৫৯. কায়া কি ছায়া কি মায়া
৬০. নবাব কুঠির নর্তকী
৬১. ডাকবাংলো
৬২. তবে
৬৩. মামূর্তের দানব-দেবতা
৬৪. দিঘির মাঠে বাংলো
৬৫. নবাব বাহাদুরের বংশধর
৬৬. মুক্তি
৬৭. পিশাচ
৬৮. মৃতদেহ
৬৯. নবাবগঞ্জের সমাধি
৭০. ভীমে-ডাকাতের বট
৭১. নরকের রাজা
৭২. কলকাতার বিজন দ্বীপে
৭৩. রুদ্রনারায়ণের বাগানবাড়ি

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন