য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি – ৩৫

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

১৭ অক্টোবর। বিকালের দিকে জাহাজ মাল্টা দ্বীপে পৌঁছল। কঠিন দুর্গপ্রাকারে বেষ্টিত অট্টালিকাখচিত তরুগুল্মহীন শহর। এই শ্যামল পৃথিবীর একটা অংশ যেন ব্যাধি হয়ে কঠিন হয়ে গেছে। দূর থেকে দেখে নাবতে ইচ্ছে করে না। অবশেষে আমার নববন্ধুর অনুরোধে তাঁর সঙ্গে একত্রে নেবে পড়া গেল। সমুদ্রতীর থেকে সুরঙ্গপথের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ঘাটের মতো উঠেছে, তারই সোপান বেয়ে শহরের মধ্যে উঠলুম। অনেকগুলি গাইড পাণ্ডা আমাদের ছেঁকে ধরলে। আমার বন্ধু বহুকষ্টে তাদের দাড়িয়ে দিলেন। কিন্তু একজন কিছুতেই আমাদের সঙ্গ ছাড়লে না। বন্ধু তাকে বার বার ঝেঁকে ঝেঁকে বললেন, “চাই নে তোমাকে, একটি পয়সাও দেব না।” তবু সে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে লেগে ছিল। তার পরে যখন তাকে নিতান্তই তাড়িয়ে দিলে তখন সে ম্লানমুখে চলে গেল। আমার তাকে কিছু দেবার ইচ্ছে ছিল কিন্তু সঙ্গে স্বর্ণমুদ্রা ছাড়া আর কিছুই ছিল না। বন্ধু বললেন, লোকটা গরিব সন্দেহ নেই কিন্তু কোনো ইংরেজ হলে এমন করত না। আসলে মানুষ পরিচিত দোষ গুরুতর হলেও মার্জনা করতে পারে কিন্তু সামান্য অপরিচিত দোষ সহ্য করতে পারে না।

মাল্টা শহরটা দেখে মনে হয় একটা অপরিণত বিকৃত য়ুরোপীয় শহর। পাথরে বাঁধানা সরু রাস্তা একবার উপরে উঠেছে একবার নিচে নামছে। সমস্তই দুর্গন্ধ ঘেঁষাঘেঁষি অপরিষ্কার। রাত্রে হোটেলে গিয়ে খেলুম। অনেক দাম দেওয়া গেল, কিন্তু খাদ্যদ্রব্য কদর্য। আহারান্তে, শহরের মধ্যে একটি বাঁধানো চক আছে, সেইখানে ব্যাণ্ড বাদ্য শুনে রাত দশটার সময় জাহাজে ফিরে আসা গেল। ফেরবার সময় নৌকোওআলা আমাদের কাছ থেকে ন্যায্য ভাড়ার চেয়ে কিছু বেশি আদায়ের চেষ্টায় ছিল। আমার বন্ধু এদের অসৎ ব্যবহারে বিষম রাগান্বিত। তাতে আমাদের মনে পড়ল এবারে লণ্ডনে প্রথম যেদিন আমরা দুই ভাই গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছিলুম গাড়োয়ান পাঁচ শিলিং ভাড়ার জায়গায় আমাদের কাছে বারো শিলিং ঠকিয়ে নিয়েছিল। সে লোকটার তত দোষ ছিল না, দোষ আমাদেরই। আমাদের দুই ভাইয়ের মুখে বোধ করি এমন কিছু ছিল যা দেখলে সৎলোকেরও ঠকিয়ে নিতে হঠাৎ প্রলোভন হতে পারে। যা হ’ক মাল্টাবাসীর অসাধু স্বভাবের প্রতি আমার বন্ধুর অতিমাত্র ক্রোধ দেখে এ ঘটনাটা উল্লেখ করা আমার কর্তব্য মনে করলুম।

সকল অধ্যায়

১. য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি – ০১
২. য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি – ০২
৩. য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি – ০৩
৪. য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি – ০৪
৫. য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি – ০৫
৬. য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি – ০৬
৭. য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি – ০৭
৮. য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি – ০৮
৯. য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি – ০৯
১০. য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি – ১০
১১. য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি – ১১
১২. য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি – ১২
১৩. য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি – ১৩
১৪. য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি – ১৪
১৫. য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি – ১৫
১৬. য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি – ১৬
১৭. য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি – ১৭
১৮. য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি – ১৮
১৯. য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি – ১৯
২০. য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি – ২০
২১. য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি – ২১
২২. য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি – ২২
২৩. য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি – ২৩
২৪. য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি – ২৪
২৫. য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি – ২৫
২৬. য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি – ২৬
২৭. য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি – ২৭
২৮. য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি – ২৮
২৯. য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি – ২৯
৩০. য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি – ৩০
৩১. য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি – ৩১
৩২. য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি – ৩২
৩৩. য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি – ৩৩
৩৪. য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি – ৩৪
৩৫. য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি – ৩৫
৩৬. য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি – ৩৬
৩৭. য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি – ৩৭
৩৮. য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি – ৩৮
৩৯. য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি – ৩৯
৪০. য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি – ৪০
৪১. য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি – ৪১
৪২. য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি – ৪২
৪৩. য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি – ৪৩
৪৪. য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি – ৪৪
৪৫. য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি – ৪৫
৪৬. য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি – ৪৬
৪৭. য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি – ৪৭

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন