৩৯. ফজরের ওয়াক্তে

হুমায়ূন আহমেদ

ইরতাজউদ্দিন কাশেমপুরী খুব প্ৰফুল্ল বোধ করছেন। ফজরের ওয়াক্তে এমনিতেই তিনি প্ৰফুল্ল বোধ করেন। অন্য এক ধরনের আনন্দ কিছুটা হলেও তাকে অভিভূত করে রাখে। কেন এরকম হয় তিনি নিজেও জানেন না। হয়তো নতুন একটা দিন শুরু করার আনন্দ। শুধু মানুষ না, পশুপাখি গাছপালা সবাই নতুন দিন শুরু করে। সেই সবার সঙ্গে যুক্ত থাকার আনন্দ। আজকের আনন্দের সঙ্গে বিষাদ মিশ্ৰিত আছে। তিনি তাঁর শোবার ঘর থেকে শিশুর কান্না শুনছেন। এই শিশু সব সময় কাদে না। হঠাৎ হঠাৎ কেন্দে ওঠে। আবার হঠাৎই থেমে যায়। তাঁর বাড়িতে দীর্ঘদিন কোনো শিশু কাদে নি, এই প্ৰথম কাঁদছে। জায়নামাজে বসে থেকে তার মনে হলো, শিশুর কান্নার মধ্যে পবিত্র কোনো ব্যাপার অবশ্যই আছে। যতবারই তিনি শিশুর কান্না শুনছেন, ততবারই তাঁর মন অন্যরকম হয়ে যাচ্ছে।

শিশুটির এখনো কোনো নাম দেওয়া হয় নি। ছদরুল আমিন সাহেবের পুত্ৰ সন্তান। ইদারুল আমিন সাহেব ছেলের মুখ দেখে যেতে পারেন নি। ছেলের জন্ম সংবাদও শুনে যেতে পারেন নি। একজন বাবার জন্যে এরচে দুঃখের কিছু হতে পারে বলে ইরতাজউদিনের মনে হয় না। তবে নিশ্চয়ই আল্লাহপাকের কোনো উদ্দেশ্য এর পেছনেও আছে।

ইরতাজউদ্দিন কমলা এবং তার পুত্রকে নিজের বাড়িতে নিয়ে এসেছেন। দেশের অবস্থা আরেকটু ভালো হলেই মা-পুত্ৰকে খুলনা দিয়ে আসবেন। কমলার মার বাড়ি খুলনার বাগেরহাটে। এই সুযোগে বাগেরহাটের খানজাহান আলির মাজারও জিয়ারত করা হবে।

ইরতাজউদ্দিন অন্যান্য দিনের চেয়ে আজ অনেক বেশি সময় জয়নামাজে কাটালেন। তার সামান্য কারণও আছে। তিনি খতমে জালালি শুরু করেছিলেন। আজ সেই খতম শেষ হলো। ফজরের নামাজ শেষ করে দীর্ঘ সময় নিয়ে দেয়া করলেন। দোয়ার পরপর মনটা একেবারেই শান্ত হয়ে গেল। কদিন ধরেই মন খুব অশান্ত হয়েছিল। রাতে ভালো ঘুম হতো না। মাঝে-মাঝে দুঃস্বপ্ন দেখতেন। সেইসব দুঃস্বপ্নের কোনো আগামাথা নেই। একটা দুঃস্বপ্ন খুব স্পষ্ট দেখলেন, যেন শাহেদ এসেছে নীলগঞ্জে। সে একা, সঙ্গে কেউ নেই। সে খুব রোগী হয়ে গেছে, রোগা এবং বুড়ো। কণ্ঠার হাড় বের হয়ে গেছে, ঠোঁট ফ্যাকাশে, মাথার চুল প্রায় সবই সাদা। তিনি বললেন, তোর এই অবস্থা কেন? চুল টুল পেকে বুড়ো হয়ে গেছিস, কী হয়েছে? শাহেদ জবাবে বিড়বিড় করে কী বলল, বোঝা গেল না। তিনি অবাক হয়ে দেখলেন, শাহেদ ক্রমাগত মাথা চুলকাচ্ছে। মাথাভর্তি উকুন। মাথা থেকে উকুন টপটপ করে মাটিতে পড়ছে।

তিনি বললেন, তুই একা কেন? ওদের কোথায় রেখে এসেছিস?

তার উত্তরেও শাহেদ বিড়বিড় করে কী বলল। তিনি বললেন, বিড়বিড় করছিস কেন? কী বলবি পরিষ্কার করে বল। কেশে গলা পরিষ্কার করে নে। তোর দেখি মাথা ভর্তি উকুন। তুই গোসল করিস না?

শাহেদ বলল, ভাইজান, বিরাট বিপদে পড়েছি। বলেই কাঁদতে শুরু করল। তখন তাঁর ঘুম ভেঙে গেল। সেই রাতে তাঁর ঘুম হলো না। তিনি শাহেদকে চিঠি লিখতে বসলেন।

শাহেদ,

দোয়া গো। পর সমাচার এই, আমরা মঙ্গলমতো আছি। তোমাদের কোনো খবর না পাইয়া বিশেষ চিন্তাযুক্ত। ফুলপুর টেলিগ্রাম অফিস হইতে তোমাকে পরপর দুইটি টেলিগ্রাম করিয়াছি, কোনো জবাব পাই নাই। টেলিগ্রাম ছাড়াও তোমাকে পত্ৰ দিয়াছি, তাহারও জবাব পাই নাই।

নীলগঞ্জের অবস্থা এখন মোটামুটি ভালো। প্রথম দফায় জনৈক আধাপাগল সামরিক অফিসার নীলগঞ্জে কয়েক ঘণ্টার জন্য এসেছিলেন। তিনি কোনোরকম কারণ ছাড়াই কিছু মানুষ মেরে ফেলেছেন। তার মধ্যে নীলগঞ্জ থানার ওসি ছদরুল আমিন সাহেবও ছিলেন। আল্লাহর অশেষ রহমত উনি অতি অল্প সময়েই প্ৰস্থান করেছেন। বর্তমানে নীলগঞ্জ থানায় একদল মিলিটারি অবস্থান করিতেছে। তাহাদের প্রধান একজন ক্যাপ্টেন, নাম মুহাম্মদ বাসেত। অতি ভদ্র ও সজ্জন। সবচেয়ে বড় কথা ধর্মপ্রাণ। গত জুম্মার দিনে তিনি সকলের সঙ্গে জুম্মার নামাজ আদায় করিয়াছেন। খোতবার শেষে তিনি ইংরেজিতে একটা বক্তৃতা দিয়াছেন। বক্তৃতাটি আমার বিশেষ পছন্দ হইয়াছে। তিনি বলিয়াছেন–বহু দুঃখ ও বহু কষ্টে আমরা ইংরেজের গোলামি হইতে মুক্ত হইয়াছি। এখন আবার নতুন চক্রান্ত শুরু হইয়াছে। আমাদের সবাইকে সেই চক্রান্ত সম্পর্কে সাবধান থাকিতে হইবে। একজন মুসলমান অন্য আরেকজন মুসলমানের ভাই। ভাই সবসময় থাকিবে ভাইয়ের পাশে। এক ভাই যদি ভুল করে অন্য ভাই তাহা শুধরাইয়া দিবে।

ক্যাপ্টেন সাহেবের সঙ্গে অত্র এলাকার হিন্দুদের সঙ্গেও সদ্ভাব আছে। আমাদের স্কুলের শিক্ষক কালিপদ বাবুকে ডাকাইয়া নিয়া তার সঙ্গে দাবা খেলেন। কালিপদ বাবুও ক্যাপ্টেন সাহেবের ভদ্রতায় মুগ্ধ। ক্যাপ্টেন সাহেবের উদযোগে এইখানে স্থানীয়ভাবে শান্তি কমিটি গঠন করা হইয়াছে। আমি সেই কমিটির প্রেসিডেন্ট। কমিটির প্রধান কাজ শান্তি বজায় রাখা। নীলগঞ্জের শান্তি বর্তমানে বজায় আছে।

ছদরুল আমিন সাহেবের বিধবা স্ত্রী পুত্ৰসহ বর্তমানে আমার সঙ্গে আছে। আমি তাহাদের খুলনায় পৌছাইয়া দিয়া খুলনা হইতে রকেট-স্টিমার যোগে ঢাকা যাইব এবং

আমি বড়ই অস্থির থাকি…।

ভোরবেলা চিঠি পোস্ট করতে গিয়ে ফিরে এলেন। পোস্টাপিস বন্ধ পোস্টমাস্টার কাউকে কিছু না বলে পোস্টাপিস তালাবন্ধ করে চলে গেছে। চিঠি পোস্ট করতে হলে এখন যেতে হবে ফুলপুর। তাঁর শরীরটা ভালো যাচ্ছিল না; হাঁটলে হাঁটুতে ব্যথা করে। পায়ে পানি এসে যায়। তারপরও তিনি নিজেই হেঁটে হেঁটে ফুলপুরে গেলেন। এই কাজটা অন্যকে দিয়েও করানো যেত। তিনি ব্যক্তিগত কাজ কখনোই অন্যকে দিয়ে করান না। নবি-এ-করিম তার কাজ নিজে করতেন। ইরতাজউদ্দিন সারাজীবন নবি-এ-করিমকে অনুসরণ করে। এসেছেন। আজ শুধুমাত্র বয়সের দোহাই দিয়ে তা থেকে বিরত থাকবেন তা হয় না। তিনি ফুলপুর রওনা হলেন। চিঠির সঙ্গে টেলিগ্রামও করলেন।

সেই টেলিগ্রামেরও কোনো জবাব এলো না। মনে হচ্ছে পুরো দেশে ডাক যোগাযোগ বলে কিছু নেই। তার মন খুবই অস্থির হলো। তিনি অস্থিরতা দূর করার জন্য ইসতেখারা করার সিদ্ধান্ত নিলেন। ইসতেখারায় বিশেষ বিশেষ দোয়াদরুদ পড়ে পবিত্ৰ মনে ঘুমুতে যেতে হয়। তখন স্বপ্নে প্রশ্নের জবাব আসে। তবে স্বপ্ন খুব সরাসরি হয় না।

আল্লাহপাক প্রতীকের মাধ্যমে বান্দার প্রশ্নের জবাব দেন। সেই প্ৰতীক বোঝা সবসময়ই কঠিন।

তারপরও তিনি একরাতে ইসতেখারা করে ঘুমোতে গেলেন। স্বপ্নে দেখলেন রুনিকে। রুনি বড় একটা থালায় কী যেন খাচ্ছে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, কী খাচ্ছিস; রুনি বলল, বলব না। তিনি বললেন, দেখি। রুনি বলল, দেব না।

এই স্বপ্নের মানে কী? রুনি খাওয়া-দাওয়া করছে, তার মানে সে ভালো আছে। বড় একটা থালায় খাবার নিয়ে খাচ্ছে, এর অর্থও ভালো। ছোট একটা পিরিচে খাবার নিয়ে খাচ্ছে দেখলে অভাব বুঝাত। তবে তিনি রুনিকে একা দেখেছেন, সঙ্গে বাবা-মা কেউ নেই। এরও কি কোনো অর্থ আছে? শাহেদ এবং আসমানী এরা দুজন কোনো বিপদে পড়ে নি তো? তিনি রুনির কাছে খাবার চাইলেন। রুনি দিতে রাজি হলো না। এরও কি আলাদা কোনো অর্থ আছে? আছে নিশ্চয়ই। তিনি ধরতে পারছেন না। এর পরপরই তিনি খতমে জালালি শুরু করেন। আজ সেই খতম শেষ হয়েছে। তিনি খুব ভালো বোধ করছেন। তার মন বলছে আর কোনো ভয় নেই।

ইরতাজউদ্দিন জায়নামাজ ছেড়ে উঠতেই কমলা ঘর থেকে বের হলো। ইরতাজউদ্দিন বলল, কেমন আছ গো মা? কমলা বলল, ভালো।

তোমার ছেলের জ্বর কি কমেছে? জি কমেছে। আলহামদুলিল্লাহ। কমলা বলল, চাচাজি, আমি আপনাকে একটা কথা বলতে আসছি। জরুরি কথা।

ইরতাজউদ্দিন বললেন, বলো মা।

আমি খুলনা যাব না। সেখানে আমার কেউ নাই। মা মারা গেছেন। সৎভাই আছে। তার সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভালো না। খুলনা গেলে ছেলে নিয়ে আমি বিপদে পড়ব।

ইরতাজউদ্দিন বললেন, বিপদ দেওয়ার মালিক আল্লাহ। বিপদ থেকে উদ্ধারের মালিকও আল্লাহ। মাগো শোন, তোমার যতদিন ইচ্ছা তুমি এই বাড়িতে থাকিবা। তোমার কোনো সমস্যা নাই।

আপনার অনেক মেহেরবানি। চাচাজি, আপনাকে চা বানায়ে দেই? চা খান।

বানাও চা বানাও। ততক্ষণ আমি তোমার ছেলে কোলে নিয়া বসে থাকব। আল্লাহপাকের রহমতের একটা সূরা আছে। সূরা আর-রাহমান। এইটা পড়ে তার মাথায় ফুঁ দিব। মাশাল্লাহ তোমার এই ছেলে সুসন্তান হবে।

চা শেষ করে ইরতাজউদ্দিন সাহেব হাঁটতে বের হলেন। তাঁর এই হাঁটা স্বাস্থ্যরক্ষার হাঁটা না। ফজরের নামাজের পর হাঁটতে হাঁটতে নদীর পাড় পর্যন্ত যেতে তাঁর খুব ভালো লাগে। সোহাগী নদীর পানি এই বছর দ্রুত বাড়ছে। ফুলে ফোঁপে উঠছে। প্রতিদিনই নদী বদলে যাচ্ছে। সব পরিবর্তনের মধ্যে এই পরিবর্তন দেখার মধ্যেও আনন্দ আছে।

ইরতাজউদ্দিন দেখলেন, নদীর পানি আরো বেড়েছে। বন্যা হবে না তো? নীলগঞ্জ উঁচু অঞ্চল। সহজে বন্যা হয় না। তবে প্রতি সাত বছর পরপর প্রবল বন্যা হয়। সাত বছর কি হয়েছে?

মাওলানা সাব, আপনের শইলডা। আইজ কেমুন?

ইরতাজউদ্দিন চমকে তাকালেন। নিবারণ হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে। এই মানুষ হাস্যমুখি। অতি দুঃসময়েও তার মুখে হাসি থাকে। অতি ভালো গুণ।

ছোটখাটো মানুষ। গায়ের রঙ গাঢ় কৃষ্ণ। মাথার ঘন চুল ঘাড় পর্যন্ত নেমে এসেছে। সাদামাটা চেহারার এই লোক গানের আসরে নিমিষের মধ্যে ঘোর তৈরি করতে পারে। এমন দরদি গলা এই অঞ্চলেই আর নাই।

তুমি কোত্থেকে নিবারণ?

নিবারণ হাসল। এগিয়ে এসে পা ছুঁয়ে প্ৰণাম করল। তার প্রণামের ভঙ্গি অদ্ভুত। আঙুল দিয়ে পা ছুঁয়ে সেই আঙুল জিভে ঠেকায়।

আমরা হইলাম বাদাইম্মা পাখি, আমরার কি কিছু ঠিক আছে? ঘুরতে ঘুরতে চইল্যা আসছি।

এখন সময় খারাপ, এখন কি আর এত ঘোরাঘুরি করা ঠিক?

কথা ঠিক। তয় একজাগায় মন টিকে না। অনেকে বলছে ইন্ডিয়া চইল্যা যাও। যাব কেন কন? এইটা আমার দেশ না?

অবশ্যই তোমার দেশ।

নিজের দেশে আমারে সবেই চিনে। যেখানে যাই আদর কইর্যা বসায়। ইন্ডিয়ায় আমারে চিনে কে?

ঠিকই বলেছ।

নিবারণ গুনগুন করে উঠল,

পাখি থাকে নিজের বনে,
বনের মধু খায়।
সেই পাখি ক্যামনে বলো
বন ছাইড়া যায়?
বনে লাগছে মহা আগুন
সব পুইড়া যায়,
এখন বলো সেই পাখিটার হবে কী উপায়?

ইরতাজউদ্দিন বললেন, গানটা এখন বাঁধলা?

জে।

ভালো গান বেঁধেছি। নদীর পাড়ে একা একা কী করছ?

মনটা খুব খারাপ ছিল। এই জন্য ভাবলাম নদীর পাড়ে আইস্যা বসি। নদীর পানি হইল চলতি পানি। চলতি পানি মনের দুঃখ সাথে নিয়া যায়।

নিবারণ, আমার সাথে চলো। নাশতা করবে।

নিবারণ বিনয়ের সঙ্গে বলল, জি-না। মন ভালো করতে আসছি, দেখি মন ভালো হয় কি-না।

মন এত খারাপ কেন?

নিবারণ আবারো গুনগুন করে উঠল,

আসমানে উড়তাছে শকুন
জলে পড়ছে ছায়া।
মানুষ মরে ঘরে ঘরে
আমি থাকি চাইয়া

ইরতাজউদ্দিন সাহেবের ইচ্ছা করছে কিছুটা সময় নিবারণের সঙ্গে থাকেন। সেই ইচ্ছা তিনি দমন করলেন। নিবারণ এসেছে একা একা থাকার জন্য, তাকে একা থাকতে দেওয়া উচিত। তিনি বাড়িতে ফিরে এলেন। নিবারণ একা একা ঘুরতে লাগল। দুপুরের দিকে মিলিটারি তাকে নদীর পাড় থেকে ডেকে নিয়ে গেল। ক্যাপ্টেন সাহেব নিবারণের অনেক নাম শুনেছেন। তাঁর গান শুনতে চান।

ক্যাপ্টেন মুহাম্মদ বাসেত নিবারণের গান শুনে মুগ্ধ হলেন। তার আফসোস হলো যে, সঙ্গে ক্যাসেট প্লেয়ার নেই। ক্যাসেট প্লেয়ার থাকলে গানটা রেকর্ড করা যেত। ক্যাপ্টেন সাহেব বললেন, যে গানটা গেয়েছ সেটা আবার গাও। এটা কী ধরনের গান?

নিবারণ বলল, এরে বলে কাটা বিচ্ছেদের গান। উকিল মুনশির কাটা বিচ্ছেদ। এই বিচ্ছেদ কইলজা কাটে।

ক্যাপ্টেন সাহেব বাংলা জানেন না। নিবারণের কথা ইংরেজিতে অনুবাদ করে দিচ্ছেন নীলগঞ্জ স্কুলের শিক্ষক ছগীর সাহেব। ক্যাপ্টেন সাহেবের সঙ্গে ছগীর উদিনের ভালো সখ্যতা হয়েছে। তিনিও প্রায়ই ক্যাপ্টেন সাহেবের সঙ্গে দাবা খেলতে আসেন। ক্যাপ্টেন সাহেব দাবায় তেমন পারদশী না। ছগীর উদ্দিন ইচ্ছা করে ভুল খেলে হেরে যান। কারণ তিনি জানেন দাবায় হারলে মেজাজ খারাপ হয়। তিনি বুদ্ধিমান মানুষ। মিলিটারির মেজাজ খারাপ হয়–এমন কাজ তিনি করবেন না।

নিবারণ গান ধরল,

শোয়া চান পাখি
আমি ডাকিতাছি
তুমি ঘুমাইছ না কি?

গানের কথাগুলি ছগীর উদ্দিন অনুবাদ করে দিচ্ছেন–

Oh my lying bird
I am calling you
Why you are not responding?

ক্যাপ্টেন বাসেত নিবারণকে কফি খাওয়ালেন। তার সঙ্গে ছাণীর উদিনের মাধ্যমে কিছুক্ষণ গল্পগুজব করলেন।

তুমি হিন্দু?

জি জনাব, আমি হিন্দু। আমার অপরাধ ক্ষমা করে দেন।

হিন্দু হওয়া কোনো অপরাধ না। ক্ষমার প্রশ্ন আসছে না। মুসলমানের মধ্যে যেমন ভালো-মন্দ আছে, হিন্দুর মধ্যেও তেমন আছে।

জনাব আপনার কথা শুনে আনন্দ পেয়েছি।

আমিও তোমার গান শুনে আনন্দ পেয়েছি। তোমাকে একটা প্ৰশংসাপত্ৰ লিখে দিচ্ছি। বিপদে পড়লে এই প্ৰশংসাপত্ৰ দেখালে ছাড়া পাবে।

জনাব আপনার অনেক দয়া।

দয়া-টয়া কিছু না, আমি গুণের কদর করি।

অন্তরে দয়া না থাকলে কেউ গুণের কদর করতে পারে না।

ক্যাপ্টেন মুহাম্মদ বাসেত একটা প্ৰশংসাপত্ৰ লিখে নিবারণকে দিলেন। যে কলম দিয়ে প্রশংসাপত্ৰ লেখা হয়েছে সেই কলামটাও দিলেন। নিবারণ তার বিশেষ ভঙ্গিমায় ক্যাপ্টেন সাহেবকে প্ৰণাম করল। প্ৰণামের বিশেষ ভঙ্গিটাও ক্যাপ্টেন সাহেবের ভালো লাগল। ছবি তুলে রাখলে দেশে ফিরে দেখানো যেত।

 

ইরতাজউদ্দিনের বাড়ির উঠানে হারুন মাঝি উবু হয়ে বসে বিড়ি টানছে। হারুন মাঝির সঙ্গে আছে তার দীর্ঘদিনের সহচর কালা মিয়া। কালা মিয়াকে দেখলে দুবলা-পাতলা মানুষ বলে ভুল হতে পারে, তবে তার ক্ষিপ্ৰতা গোখড়া সাপের মতো। হারুন মাঝিও বিড়ি টানছে। সে বসেছে ওস্তাদের দিকে পেছন ফিরে। ওস্তাদের সামনে বিড়ি-সিগারেট খাওয়ার মতো বেয়াদবি সে করতে পারবে না। ইরতাজউদ্দিন বাড়িতে ছিলেন না। তিনি শেখেরহাট গিয়েছিলেন কমলার ছেলের জন্যে তালমিছরি কিনতে। বাচ্চাটার বুকে প্রায়ই কফ জমে। তালমিছরি খেলে কফের দখল কিছু কমে।

বাড়ি ফিরে এই দুইজনকে বসে থাকতে দেখে তিনি বিস্মিত হলেন। হারুন মাঝি এবং কালা মিয়া দুজনেই অতি দ্রুত তাদের বিড়ি ফেলে দিয়ে উঠে দাঁড়াল। ইরতাজউদ্দিন বললেন, ব্যাপার কী?

হারুন মাঝি বিনয়ে নিচু হয়ে বলল, আপনার কাছে একটা আবদার।

কী আবদার?

ওসি সাহেবের ছেলের জন্যে একটা স্বর্ণের চেইন আনছি। চেইনটা গলায় পরাব।

তোর চুরি-ডাকাতির চেইন গলায় পরাবি কী জন্যে? এটা কেমন কথা?

হারুন মাঝি বিব্ৰত ভঙ্গিতে মাথা চুলকাতে লাগল। চুরি-ডাকাতির চেইন ব্যাপারটা সত্যি। ডাকাতির জিনিসপত্র কিছুই সে সঙ্গে রাখে না। এই চেইনটা কীভাবে যেন ছিল।

ইরতাজউদ্দিন বললেন, উঠানে বসে থাকিবি না। বাড়িতে যা।

বাড়িঘর কি আমরার আছে যে বাড়িতে যাব? ওসি সাবের ছেলেটারে একটু আইন্যা দেন। দেখি বাপের মতো চেহারা হইছে কি না। তার বাপ ছিল বিরাট সাবাসি মানুষ। কইলজা ছিল বাঘের। উনারে মাইরা ফেলছে–এইটা মনে হইলেই রাগে শইল কাপে। ওসি সাহেবের ইসাতিরি। আর ছেলেরে যে আপনে নিজের কাছে আইন্যা রাখছেন–এইটা বিরাট কাজ করছেন। আপনে বেহেশতে যাইবেন এই কারণে।

আমার বেহেশতে যাওয়া নিয়া তোর মীমাংসা দিতে হবে না।

হারুন মাঝি বলল, ওসি সাহেবের পুলাটারে একটু আনেন। দূর থাইক্যা দেখি বাপকা বেটা হইছে কি না।

ইরতাজউদ্দিন ছেলে কোলে নিয়ে বের হলেন। হারুন মাঝি আগ্রহ করে। হাত বাড়াল। এই দুর্ধর্ষ ডাকাতের হাতে ছেলে তুলে দিতে ইরতাজউদিনের মন সায় দিচ্ছে না। কিন্তু ডাকাতটা এত আগ্রহ করে হাত বাড়িয়েছে! ইরতাজউদ্দিন ছেলেকে হারুন মাঝির হাতে দিলেন।

মৌলানা সব ছেলের নাম কী?

নাম রাখা হয় নাই।

হারুন মাঝি আনন্দের সঙ্গে বলল, দেখেন দেখেন আমারে কেমন চোখ পিটপিটাইয়া দেখতাছে। ঐ ব্যাটা, কী দেখস? তোর পিতা আমারে ধরছিল। সে বিরাট সাবসি মানুষ ছিল। তুইও তোর বাপের মতো সাবাসি হইবি, মেনা গরু হইবি না।

ইরতাজউদ্দিন বললেন, অনেক হয়েছে, এখন তারে দেও মার কোলে দিয়া আসি। ছোট শিশুদের কখনোই অধিকক্ষণ মায়ের কোল ছাড়া করতে নাই।

হারুন মাঝি ছেলে ফেরত দিয়ে ইরতাজউদ্দিনকে কদমবুসি করে বিদায় হলো। ইরতাজউদ্দিন কমলার হাতে ছেলেকে তুলে দেবার সময় দেখলেন, ছেলের গলায় সোনার চেইন চকচক করছে। তিনি খুবই বিরক্ত হলেন।

 

নীলগঞ্জে ফকির বাড়ির সামনে দুজন মিলিটারি। তারা গ্রাম পরিদর্শনে বের হয়েছে। ফকির বাড়িতে তাদের ডাব খেতে দেয়া হয়েছে। ডাব খাওয়া শেষ হবার পর তারা মহানন্দে ডাবের শাঁস খাচ্ছে। লোকজন একটু দূর থেকে ভীত চোখে তাদের দেখছে। ফকির বাড়ির মেজ ছেলে আরো ডাব কাটছে। ডাবের পানি ফেলে দিয়ে শুধু শাঁস বের করে প্লেটে রাখা হচ্ছে।

ডাবের শাঁস খাওয়ার এই দৃশ্যটা হারুন মাঝি এবং তার সঙ্গী কালা মিয়া ধান খেতের আড়াল থেকে দেখল। হারুন মাঝি বলল, অলংগা* দিয়া এই দুইটারে বিনতে পারবি?

কালা বলল, একটারে পারব।

হারুন মাঝি বলল, তুই একটারে আমি একটারে।

কালা মিয়া বলল, বাদ দেন।

হারুন মাঝি সঙ্গে সঙ্গে বলল, আচ্ছা যা বাদ। তাছাড়া অলংগাও নাই।

হারুন মাঝি মাথা নিচু করে ধান খেতের আল বেয়ে এগুচ্ছে। হঠাৎ সে তার মত পরিবর্তন করল। অলংগা সঙ্গে নেই এটা সত্যি, তবে অলংগা জোগাড় করা কোনো সমস্যাই না। মিলিটারি দুটা ডাব খেয়ে নিশ্চিত মনে হাঁটতে হাঁটতে নীলগঞ্জ হাইস্কুলের দিকে যাবে। তাদের যেতে হবে বাঁশঝাড়ের ভেতর দিয়ে। তখন পিছন থেকে অলংগার ঘা দিলে আর দেখতে হবে না। এদের সঙ্গে ভালো বন্দুক আছে। বন্দুক দুটা কাজ করা যাবে। ডাকাতির সুবিধা হবে। এই সময় তার হাত খালি। রামদা ছাড়া অন্ত্রপাতি কিছুই নাই। মিলিটারিদের এইসব বন্দুক কীভাবে চালাতে হয়–তা অবশ্য জানা নাই। সেটা শেখা যাবে। সব বন্দুকই একরকম। গোড়ায় চাপ দিলে গুলি।

কালা মিয়া!

হুঁ।

চল অলংগার জোগাড় দেখি।

কালা মিয়া ওস্তাদের দিকে কিছুক্ষণ স্থির চোখে তাকিয়ে থেকে বলল, চলেন।

 

দুপুর তিনটায় ক্যাপ্টেন বাসেতকে ঘুম থেকে তুলে বলা হলো, সেনাবাহিনীর দুজন সদস্যকে গ্রামের লোকজন বর্শা বিধিয়ে মেরে ফেলেছে।

সন্ধ্যা ছাঁটার মধ্যে নীলগঞ্জের এক-তৃতীয়াংশ বাড়ি-ঘর জ্বলিয়ে দেয়া হলো। সর্বমোট আটত্রিশ জন মানুষকে গুলি করে মারা হলো। এর মধ্যে গাতক নিবারণও আছে। তার হাতে ক্যাপ্টেন বাসেত সাহেবের লেখা প্ৰশংসাপত্র। সেই প্ৰশংসাপত্রেও কাজ হলো না।

রাত এগারোটায় ক্যাপ্টেন বাসেত হতভম্ব হয়ে গেলেন, কারণ জঙ্গলে ঢাকা দক্ষিণ দিক থেকে নীলগঞ্জ হাইস্কুল লক্ষ্য করে কারা যেন গুলি করছে। এতটা সাহস বাঙ্গালি কুত্তাদের হবে–তা তাঁর ধারণাতেও ছিল না। তাঁর ধারণাতে ভুল ছিল। হারুন মাঝির সাহসের সঙ্গে তিনি পরিচিত না। হারুন মাবি জঙ্গলের দিক থেকে গুলি করছে মিলিটারি বন্দুক কী করে চালাতে হয় এটা শেখার জন্যে। তার পরিকল্পনা ভিন্ন। সে গুলি করবে। খুব কাছ থেকে। ডাকাত কখনো দূর থেকে গুলি করে না। তারা গুলি করে খুব কাছে থেকে।

ভোর ছটা। প্ৰবল বর্ষণ শুরু হয়েছে। মাঝে-মাঝে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। বিদ্যুতের আলোয় হঠাৎ হঠাৎ দেখা যাচ্ছে হারুন মাঝি তার সঙ্গী কালা মিয়াকে নিয়ে নীলগঞ্জ হাইস্কুলের দিকে এগুচ্ছে। কালা মিয়া বলল, ওস্তাদ বিড়িতে টান দিতে পারলে হইত। হারুন মাঝি বলল, বৃষ্টির মধ্যে বিড়ি ধরাইবি ক্যামনে? কালা মিয়া হতাশ গলায় বলল, সেইটাও একটা বিবেচনা।

হারুন মাঝি ভয় একেবারেই পাচ্ছে না। কিন্তু তার গা ছমছম করছে। তার মনে হচ্ছে, তারা মানুষ দুজন না। তিনজন। নীলগঞ্জ থানার ওসি ছদারুল আমিনও তাদের সঙ্গে আছে। তবে ওসি সাহেবকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। হারুন মাবি জানে এই সবই মনের ধান্ধা। মন অনেক ধান্ধাবাজি করে। তারপরেও সে ওসি সাহেবকে মন থেকে দূর করতে পারছে না। এই বিষয়টা নিয়ে কালা মিয়ার সঙ্গে কথা বলতে পারলে হতো। কথা বলা ঠিক হবে না। কালা মিয়া প্ৰচণ্ড সাহসী কিন্তু সে ভূত-প্ৰেত ভয় পায়।

—————
*অলংগা : বর্শা। তালগাছের কাঠ দিয়ে এই বর্শা বানানো হয়।

সকল অধ্যায়

১. ০১. মাওলানা ইরতাজউদ্দিন কাশেমপুরী
২. ০২. শাহেদের অফিস মতিঝিলে
৩. ০৩. পুলিশ ইন্সপেক্টর মোবারক হোসেন
৪. ০৪. নীলগঞ্জ হাইস্কুলের বারান্দা
৫. ০৫. কলিমউল্লাহ নামটা
৬. ০৬. মোবারক হোসেনের ছুটির দিন
৭. ০৭. কবিতা একবার পড়লে
৮. ০৮. অনেকক্ষণ কড়া নাড়ার পর
৯. ০৯. মরিয়ম কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না
১০. ১০. মোবারক হোসেন
১১. ১১. চায়ের কাপ নামিয়ে
১২. ১২. আকাশে ট্রেসার উড়ছে
১৩. ১৩. ২৬ মার্চ ভোর আটটায়
১৪. ১৪. বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্ৰ
১৫. ১৫. ভয়ঙ্কর রাতের পরের যে ভোর
১৬. ১৬. মাত্র দুঘণ্টার জন্যে কারফিউ-বিরতি
১৭. ১৭. ভয়ঙ্কর দিন যাচ্ছে
১৮. ১৮. পিরোজপুর মহকুমার পুলিশপ্রধান ফয়জুর রহমান
১৯. ১৯. জেনারেল টিক্কা খান
২০. ২০. দৈনিক পাকিস্তান-এর সাহিত্যপাতা
২১. ২১. শিউলি গাছে আশ্বিন কার্তিক মাসে ফুল ফুটবে
২২. ২৩. গৌরাঙ্গ বিরক্ত দাস
২৩. ২৩. ফাঁকা রাস্তায় ঠেলাগাড়ি
২৪. ২৪. শাহেদের চেহারায় পাগল পাগল ভাব
২৫. ২৫. চীনের প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাই
২৬. ২৬. দারোগাবাড়ি
২৭. ২৭. ফজরের নামাজ
২৮. ২৮. নীলগঞ্জ থানার ওসি ছদারুল আমিন
২৯. ২৯. সকাল থেকে বিরামহীন বৃষ্টি
৩০. ৩০. রুনি বলল, মা, আমরা কোথায় যাচ্ছি
৩১. ৩১. আয়েশা বেগম নৌকায় বসে আছেন
৩২. ৩২. হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মেয়ে বেগম আখতার সোলায়মান
৩৩. ৩৩. পাকিস্তান সরকার স্বীকার করে
৩৪. ৩৪. বুদ্ধিজীবীদের বিবৃতি
৩৫. ৩৫. জাতিসংঘের মহাসচিব উ থান্ট
৩৬. ৩৬. গভর্নর টিক্কা খান
৩৭. ৩৭. কবি শামসুর রাহমান
৩৮. ৩৮. ডেইলি পিপল পত্রিকার সাব-এডিটর নির্মলেন্দু গুণ
৩৯. ৩৯. ফজরের ওয়াক্তে
৪০. ৪০. ক্যাপ্টেন মুহাম্মদ বাসেতের চিঠি
৪১. ৪১. দলিলপত্ৰ : অষ্টম খণ্ড
৪২. ৪২. রাত দশটা
৪৩. ৪৩. একটা সময় পর্যন্ত দেশের মানুষ
৪৪. ৪৪. কাঁদছে আমাদের বাংলাদেশ
৪৫. ৪৫. দুর্ধর্ষ ক্র্যাক প্লাটুন
৪৬. ৪৬. বেগম সুফিয়া কামালের দিনলিপি
৪৭. ৪৭. জেনারেল ইয়াহিয়ার সাক্ষাৎকার
৪৮. ৪৮. লায়ালপুরের জেলের একটি বিশেষ কক্ষ
৪৯. ৪৯. বেগম মুজিবের বিষাদঘন দিনগুলো
৫০. ৫০. নীলগঞ্জ জামে মসজিদ
৫১. ৫১. বেলুচ রেজিমেন্টের সেপাই আসলাম খাঁ
৫২. ৫২. আসমানী হতাশ চোখে
৫৩. ৫৩. রফিকের নাম মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকাতেও নেই
৫৪. ৫৪. জেড ফোর্স
৫৫. ৫৫. মেজর জিয়া
৫৬. ৫৬. দিন ঘনায়ে আসলে মানুষ ধর্ম কপচায়
৫৭. ৫৭. কলিমউল্লাহর বাবুর্চি বাচ্চু মিয়া
৫৮. ৫৮. মাওলানা ভাসানী
৫৯. ৫৯. জনৈক মুক্তিযোদ্ধার চিঠি
৬০. ৬০. ডাক্তার ক্যাপ্টেন সিতারা বেগম, বীর প্রতীক
৬১. ৬১. শ্রাবণ মাসের এক দুপুরে
৬২. ৬২. ধীরেন্দ্রনাথ রায় চৌধুরী
৬৩. ৬৩. মিলিটারিরা গৌরাঙ্গকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে
৬৪. ৬৪. ৩৬ ডিভিশনের প্রধান মেজর জেনারেল জামশেদ
৬৫. ৬৫. জাহাজ মারা হাবীব
৬৬. ৬৬. হেমায়েতউদ্দিন ‘হিমু’
৬৭. ৬৭. আমার নাম মোহাম্মদ আবু তাহের
৬৮. ৬৮. ইন্দিরা গান্ধী
৬৯. ৬৯. ডিসেম্বরের ছয় তারিখ
৭০. ৭০. আত্মসমৰ্পণ করুন
৭১. ৭১. চৌদ্দই ডিসেম্বর ভোরবেলা
৭২. ৭২. ১৬ ডিসেম্বর সকাল

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন