২৩. ফাঁকা রাস্তায় ঠেলাগাড়ি

হুমায়ূন আহমেদ

ঢাকা শহরের প্রায় ফাঁকা রাস্তায় ঠেলাগাড়ি নিয়ে বের হয়েছে আসগর আলি এবং তার পুত্র মজনু মিয়া। মজনু মিয়ার বয়স নয়-দশ। তার পরনে কালো রঙের প্যান্ট। গা খালি। তবে মাথায় কিস্তি টুপি আছে। মজনু মুসলমান এই পরিচয়ের জন্যে মাথার টুপি বাঞ্ছনীয়। যে-কোনো কারণেই হোক মজনুর মন বড়ই বিষণ্ণ। সেই তুলনায় আসগর আলিকে মনে হয় আনন্দেই আছে। তার বয়স চল্লিশ। শক্ত-সমর্থ শরীর। বা পায়ে কিছু সমস্যা আছে বলে পা টেনে টেনে হাঁটে। তাতে ঠেলাগাড়ি চালাতে অসুবিধা হয় না। পঁচিশে মার্চের পর সে দাড়ি রেখেছে। লোকমুখে শোনা যাচ্ছে মুখে দাড়ি আছে, কলমা জানে—এরকম সাচ্চা মুসলমানদের মিলিটারিরা কিছু বলে না। চড়-থাপ্পড় দিয়ে ছেড়ে দেয়। এই খবর প্রচারিত হবার ফলে অনেক হিন্দুও দাড়ি রেখেছে। বাইরে বের হবার সময় তারা মাথায় গোলটুপি দেয়। কানের ভাঁজে আতর মাখানো তুলা থাকে। এখন অবশ্যি মিলিটারিবা চালাক হয়ে গেছে। দাড়ি এবং টুপিতে কাজ হচ্ছে না। খৎনা হয়েছে কি-না, লুঙ্গি খুলে দেখাতে হচ্ছে।

আসগর আলি তার ছেলেকে নিয়ে চিন্তিত। তার খৎনা এখনো হয় নাই। মিলিটারির হাতে ধরা পড়লে কোন ঝামেলা হয়–এই চিন্তায় আসগর অস্থির হয়ে থাকে। চার কলমা বাপ-বেটা কারোরই মুখস্থ নাই। আসগর আলি একটা কলমা জানে। কলমা তৈহিদ। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ। এক কলমায় কাজ হবে কি-না কে জানে! এই কলমা মজনুকে মুখস্থ করানোর চেষ্টা সে কয়েকদিন ধরেই করছে। মুখস্থ হচ্ছে না। দেখা গেল। কলমা জানার জন্যে এবং খৎনা থাকার কারণে মিলিটারি তাকে ছেড়ে দিল। ধরে নিয়ে গেল। মজনুকে। মিলিটারির সঙ্গে দরবার করে কোনো লাভ হবে না। দরবার করতে গেলে উল্টা গুলি খেতে হবে। চোখের সামনে থেকে ছেলে ধরে নিয়ে যাবে। কিছুই বলা যাবে না। চোখের পানিও ফেলা যাবে না। মিলিটারি চোখের পানি দেখলে রেগে যায়। মুখে হাসি দেখলে তারা রাগে, চোখে পানি দেখলেও রাগে। বড়ই আজিব জাত।

আসগর আলি ছেলের দিকে ফিরে বলল, বাপধন শইলটা কি খারাপ? শইল খারাপ হইলে গাড়ির উপরে উইঠ্যা বস। আমি টান দিয়া নিয়া যাব।

মজনু বলল, শ‍ইল ঠিক আছে।

ক্ষিধা লাগছে?

না।

ক্ষিধা লাগলে বলবা। আইজ গোছ-পর্যাটা খাব; অবশ্য রিজিকের মালিক আল্লাপাক। উনার হুকুম হইলে খাব। হুকুম না হইলে কলের পানি।

মজনু কিছুই বলছে না। মাথা নিচু করে হাঁটছে। আসগর বলল, মার জন্যে পেট পুড়ে?

মজনু সঙ্গে সঙ্গে বলল,হুঁ।

এইবার রোগ ধরা পড়েছে। ছেলের মন খারাপ মার জন্যে। অনেকদিন মায়েরে দেখে না। এদিকে আবার শুরু হয়েছে সংগ্ৰাম। খোঁজ-খবর নাই।

বলছি তো যাব। এখন পথেঘাটে চেকিং বেশি। মিলিটারি সমানে ধরতাছে। উনিশ-বিশ দেখলেই ঠুসঠাস। তোরে নিয়াই আমার বেশি বিপদ। খৎনা হয় নাই, এইদিকে আবার কইলমাও মুখস্থ নাই। মুখস্থ হইছে?

না।

ক দেহি, ধরাইয়া দিতেছি। প্রথমে–লা ইলাহা…। তারপর কী?

জানি না।

আসগর তাকিয়ে দেখল, ছেলে চোখ মুছছে। লক্ষণ ভালো না। চোখের পানি মার জন্যে। ছেলের বয়স তো কম হয় নাই। অখনো যদি দুধের পুলার মতো মা মা করে তাইলে চলবে ক্যামনে! এখন রোজগারপতি শিখতে হবে। দুইটা পয়সা কীভাবে আসে সেই ধান্ধায় থাকতে হবে। মা মা করলে মার আদর পাওয়া যায়, ভাত পাওয়া যায় না। জগতের সারকথা কী? জগতের সার কথা মা না, বাপ না। জগতের সারকথা ভাত। হিন্দুরা বলে অন্ন।

বাপরে, ক্ষিধা লাগছে?

না।

খেচুড়ি খাবি, খেচুড়ি? (আসগর কী কারণে জানি খিচুড়িকে বলে খেচুড়ি। এই খাদ্যটা তার বড়ই পছন্দ। এক প্লেট আট আনা নেয়। আট আনায় পেট ভরে না।)

খেচুড়ির কথাতেও ছেলের চেহারায় কোনো পরিবর্তন হলো না। সে এখনো রাস্তার দিকে তাকিয়ে হাঁটছে। চোখ তুলছে না। আসগর বলল, আচ্ছা যা বিষ্যুদবারে নিয়া যাব। বিষ্যুদবার দিন ভালো। রহমতের দিন। বারের সেরা জুম্মাবার কিন্তু বিষ্যুদবারও মারাত্মক। থাকিবি কিছুদিন মার সাথে। আমি চেষ্টা নিব। এর মধ্যে খৎনা করাইতে। হাজম পাইলে হয়। সংগ্রামের সময় কে কই গেছে.

মজনুর মুখে হাসি ফুটল। সে বলল, ভুখ লাগছে।

কী খাবি? খেচুড়ি?

ডিমের সালুন দিয়া ভাত।

আসগর ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলল। এই ছেলের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। সুখাদ্য বাদ দিয়ে সে চায় ডিমের সালুন। খেচুড়ি খাওয়ার এত বড় সুযোগ সে হেলায় হারাচ্ছে। জীবনে যখন বড় বড় সুযোগ আসবে সেগুলিও হারাবে।

খেচুড়ি খাইয়া দেখ।

ডিমের সালুন খাব।

আচ্ছা যা ডিমের সালুন।

আসগর ঠেলাগাড়ি ঘুরাল। সে বেশ আনন্দে আছে। কারণ গত কিছুদিন তার রোজগার ভালো হয়েছে। লোকজন মালামাল নিয়ে ঢাকা ছাড়ছে। কেউ যাবে কমলাপুর, কেউ বাসস্টেশন। সঙ্গে দুনিয়ার জিনিস। তারা ভাড়া হিসাবে যা দিচ্ছে তার পুরোটাই লাভ। ঠেলার মালিককে কিছু দিতে হচ্ছে না। কারণ পাঁচিশে মার্চের পর ঠেলামালিকের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। মনে হয়। ঘটনা ভালো না। পাঁচশে মার্চ ১৪ তে ঠেলাটা ছিল আসগারের কাছে। তার শরীর ভালো ছিল না। পা ফুলে গিয়েছিল। সে ঠেলাটা নিজের কাছে রেখে দিযে ভেবেছিল সকালে মালিকের কাছে যাবে, ঘটনা ব্যাখ্যা করবে। তারপর তো লেগে গেল ধুন্ধুমার। যাকে বলে রোজ কেয়ামত। দুদিন পর কেয়ামত একটু ঠাণ্ডা হলে সে গেল ঠেলামালিকের খোজে।

মালিক দুটা ঘর তুলে থাকে কাটাবনে। গিয়ে দেখে কোথায় ঘর কোথায় কী! বেবাক পরিষ্কার। ঘরবাড়ি কিছুই নাই। সে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে, এক দাড়িওয়ালা আদমি এসে বলল, কারে খুঁজেন?

সে ভয়ে ভয়ে বলল, ঠেলামালিক ইদ্রিসারে খুঁজি। টিনের ঘর ছিল। ঘরের সামনে দুইটা আম গাছ। কোমর সমান উচা।

দাড়িওয়ালা বলল, টিনের ঘর ছনের ঘর সব শেষ। আম গাছ জাম গাছও শেষ। ঘরের বাসিন্দারাও শেষ; বাড়িতে যান। আল্লাখোদার নাম নেন।

সেই দুঃসময়েও আসাগরের মনে হলো, আল্লা যা করেন মঙ্গলের জন্যে করেন। এইরকম ভয়ঙ্কর ঘটনার মধ্যেও কিছু মঙ্গল আল্লাপাক রেখেছেন। যেমন এখন ঠেলাটার মালিক বলতে গেলে সে। দৈনিক তিন টাকা ঠেলাব জমা তাকে দিতে হবে না। শরীরটা যদি কোনো কারণে খারাপ হয় ঠেলার উপরে চাদর বিছিয়ে ঘুম দিবে। মালিকের জমার টাকা কীভাবে দিবে–এই নিয়ে অস্থির হতে হবে না। বরং সে ঠেলা অন্যকে ভাড়া দিতে পারে। বলতে গেলে সে এখন ঠেলার মালিক। কথায় আছে–আইজ ফকির কাইল বাদশা। কথা মিথ্যা না। তাকে দিয়েই তো মীমাংসা হয়েছে।

আল্লাপাকের অসীম রহমত–সংগ্ৰাম-এর মধ্যেও সে ভালো রোজগার করছে। ঢাকা ছেড়ে যাওয়া এখন ঠিক না। কিন্তু যেতে হবে ছেলের জন্যে। মা ছাড়া ছেলে কিছু বোঝে না। জীবন যে বড় জটিল আল্লাপাক তাকে সেই বোধ দেন নাই। আসগর আলি মাঝে-মধ্যে তাকে বোঝাবার চেষ্টা করে। নানান বিষয়ে উপদেশ দেয়। ছেলেকে উপদেশ দিতে তার ভালো লাগে। উপদেশ শুনে তার ছেলে গম্ভীর ভঙ্গিতে মাথা নাড়ায় আর মুখে বলে ই। ছেলের মুখে ই শুনতে তার বড় ভালো লাগে। কঠিন সময়ে বেঁচে থাকার জন্যে উপদেশের প্রয়োজন আছে। আসগর নানান বিষয়ে উপদেশ দেয়। ধর্ম, আল্লাপাকের বিচার, সবুরে মেওয়া ফলের মীমাংসা। কিছুই বাদ যায় না। তবে তার বর্তমান উপদেশ প্ৰায় সবই মিলিটারি সম্পর্কিত।

বাপধন শোন, মিলিটারি দেখলে তার চোখের দিকে তাকাইবা না। মাথা নিচু কইরা হাঁইট্টা চইল্যা যাবা। যেন কিছুই দেখ নাই। মনে থাকব?

হুঁ।

মিলিটারি যদি বলে–হল্ট। দৌড় দিবা না। দৌড় দিছ কি শ্যাষ। ধুম! পিঠের মধ্যে এক গুল্লি। মনে থাকব?

হুঁ।

মিলিটারির দিকে তাকাইয়া হাসব না, চোখের পানিও ফেলবা না। হাসিচোখের পানি দুইটাই মিলিটারির কাছে বিষ। মনে থাকব?

হুঁ।

সময় সুযোগ হইলে বলবা–পাকিস্তান জিন্দাবাদ। জয় বাংলা বলছ কি গুড়ুম। গুড়ুম। গুল্লি যে কয়টা খাইবা তার নাই ঠিক। মনে থাকব?

হুঁ।

মিলিটারির মধ্যে কিছু আছে কালা পিরান পিন্দে। এরার নাম কালামিলিটারি। এরা সাক্ষাৎ আজরাইল। দূর থাইক্যা যদি দেখা কালা জামা, ফুড়ুৎ কইরা গলির মইধ্যে ঢুকবা। চুকি দিয়া দেখনের কথা মনেও আনবা না। মনে থাকব?

হুঁ।

পথে যখনই নামবা একদমে আল্লাহু আল্লাহু করবা। আল্লাপাকের নিরানব্ববুই নামের সেরা নাম আল্লাহু। খাওয়া-খাদ্যের মধ্যে সেরা খাদ্য যেমন খেচুড়ি। আল্লাপাকের নামের মধ্যে সেরা নাম আল্লাহু। দিলের মধ্যে আল্লাহু থাকলে ভয় নাই। মনে থাকব?

হুঁ।

আসগর আলির গন্তব্য নীলক্ষেতের ভাতের দোকান। এখানে কয়েকটা দোকান আছে খাওয়া এক নম্বর। তরকারির ঝোল দুই-তিনবার নেওয়া যায়, কোনো অসুবিধা নাই। ডাইলের বাটি দুই আনা। এক বাটি শেষ করলে আরো কিছু পাওয়া যায়। সেইটা মাগনা।

বিলাক সিনেমাহলের কাছে এসে আসাগরের হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে গেল। পাঁচছয়জন কলা-মিলিটারি দাড়িয়ে আছে। তাদের সঙ্গে কাপড়ের হুড় লাগানো আলিশান এক ট্রাক। ট্রাকের ভেতরও মিলিটারি, তবে কালা-মিলিটারি না। আসগর চাপা গলায় বলল, বাপধন তাকাইস না। সিনেমাহলের দিকে তাকাইস না। দমে দমে আল্লাহু বল। মাথার টুপি ঠিক করা। বেঁকা হইয়া আছে।

আসগর আলি পেছনে ফিরে ছেলের কাণ্ড দেখে হতভম্ব। টুপি ঠিক করার বদলে সে চোখ বড় বড় করে কালো-মিলিটারির দিকেই তাকিয়ে আছে। এখন ছেলেকে ইশারা করে কিছু বলা ঠিক হবে না। মিলিটারি বুঝে ফেলবে ইশারায় কথাবার্তা চলছে। মিলিটারিরা ইশারা একেবাবেই পছন্দ করে না।

এই ঠেলাওয়ালা, থাম!

আসগর আলির মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। একে বিপদ বলে না। একে বলে মহাবিপদ। নবিজীর শাফায়াত ছাড়া এই বিপদ থেকে রক্ষা নাই। আসগর আলি চোখ বন্ধ করে এক মনে সূরা ফাতেহা পড়ে ফেলল। এই একটা সূরাই তার মুখস্থ।

তোমার নাম কী?

আসগর আলি ভালোমতো তাকিয়ে দেখে মিলিটারি না। বাঙালি এক লোক তাকে প্রশ্ন করছে। বিশিষ্ট কোনো লোক হবে। তার সঙ্গে আরো লোকজন আছে। তাদের হাতে ক্যামেরা। আরো কী সব যন্ত্রপাতি। যে প্রশ্ন করছে তার গায়ে রঙচঙা শার্ট। মাথায় হইলদা টুপি। মিলিটারি যমানায় রঙচঙা শার্ট, মাথায় বাহারি টুপি পরে ঘুরে বেড়ানো সহজ ব্যাপার না। যে কেউ পারবে না। আসগর আলি বিনীত গলায় বলল, জনাব আমার নাম আসগর। আমার ছেলের নাম মজনু। আমারা ভালোমন্দ কোনো কিছুর মধ্যে নাই।

টুপিওয়ালা বলল, ভয় পােচ্ছ কেন? ভয়ের কিছু নেই। আমরা তোমার কিছু কথাবার্তা রেকর্ড করব। টিভিতে প্রচার হবে। টিভি চিন?

জি জনাব চিনি।

আমরা সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষদের ইন্টারভ্যু নিচ্ছি। ঢাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক। কোনো ঝামেলা নাই–এইটা বলবে। বুঝেছি?

জি।

উল্টাপাল্টা কিছু বলবে না। শুধু ভালো ভালো কথা বলবে। যেমন শহর শান্ত। কোনো সমস্যা নাই। দোকানপাট খুলেছে। ব্যবসা বাণিজ্য হচ্ছেএইসব। ঠিক আছে?

জি।

ওকে, ক্যামেরা।

একজন এসে আসগর আলির মুখের সামনে ক্যামেরা ধরল। একজন ধরল ছাতির মতো একটা জিনিস। টুপিওয়ালা মাইক হাতে প্ৰায় আসগর আলির গা ঘেসে দাঁড়াল। টুপিওয়ালার মুখভর্তি হাসি।

আমরা এখন কথা বলছি ঢাকা শহরের খেটে খাওয়া একজন শ্রমজীবির। সঙ্গে। তিনি এবং তার পুত্র এই শহরে দীর্ঘদিন ধরে ঠেলা চালান। ভাই, আপনার নাম কী?

আমার নাম আসগর। আমার ছেলের নাম মজনু।

ঢাকা শহরে এখন ঠেলা চালাতে আপনার কি কোনো সমস্যা হচ্ছে?

জে-না।

শহরের অবস্থা কী?

অবস্থা ভালো। মাশাল্লাহ। অবস্থা খুবই ভালো।

চারদিকে যা দেখছেন তাতে কি মনে হয়–শহরে কোনো সমস্যা আছে?

জে-না।

শহরের বর্তমান অবস্থায় আপনি কি সন্তুষ্ট? আয় রোজগার হচ্ছে?

জি জনাব। পাকিস্তান জিন্দাবাদ।

ভাই আসগর আলি, আপনাকে ধন্যবাদ।

আসগর কপালের ঘাম মুছল। আল্লাপাকের অসীম দয়ায় বিপদ থেকে অল্পের উপর রক্ষা পাওয়া গেছে। টুপিওয়ালা লোকটা ভালো। সে পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করে তাকে একটা সিগারেট দিল। এখানেই শেষ না। পাঁচটা টাকাও দিল। আসগর ভেবেছিল তার মহা বিপদ। এখন দেখা গেলবড়ই সুখের সময়। আল্লাপাক কখন যে মানুষকে বিপদ দেন, কখন যে বিপদ থেকে উদ্ধার করে পুরস্কার দেন বোঝা মুশকিল। কে ভেবেছিল কোনো পরিশ্রম ছাড়া মুখের কথায় রোজগার হয়ে যাবে। এই জমানায় পাঁচ টাকা কোনো সহজ ব্যাপার না।

 

খেতে বসে মজনু সিদ্ধান্ত বদল করল। ডিমের সালুন না, সে গরুর মাংস খাবে। আসগর আনন্দিত গলায় বলল, যত ইচ্ছা খা। যেইটা খাইতে ইচ্ছা করে খা। তয় এইখানেও একটা ঘটনা আছে।

মজনু বলল, কী ঘটনা?

আসগর বলল, রিজিক আল্লাপাকের নিজের হাতে। তুই কী খাবি না খাবি সবই আল্লাপাক আগেই ঠিক কইরা রাখছেন। এখন যদি তুই ডিমের সালুন খাস, বুঝতে হবে। আল্লাপাক নির্ধারণ কইরা রাখছেন ডিমের সালুন। আর যদি গরুর মাংসের ভুনা খাস, তবে বুঝন লাগব রিজিকে ছিল গো মাংস।

যদি দুইটাই খাই?

তাইলে বুঝতে হবে। আল্লাহপাক নির্ধারণ কইরা রাখছেন আমার পেয়ারের বান্দা মজনু মিয়া ডিমের সালুনও খাবে, গো মাংসও খাবে। তোর কি দুইটাই খাইতে মন চাইতেছে?

হুঁ।

খা, দুইটাই খা। অসুবিধা নাই। সবই আল্লাপাকের নির্ধারণ। আমার করনের কিছু নাই। আমি উসিলা। পুরা দুনিয়াটাই তার উসিলার কারখানা।

মজনু মিয়ার খাওয়া দেখে আসগধের ভালো লাগছে। কী আগ্রহ করেই না সে খাচ্ছে! সে খাচ্ছে মাংস দিয়ে কিন্তু ডিমটাও পাতে রেখে দিয়েছে। মাঝেমাঝে ডিমটা হাতে নিয়ে দেখছে। আবার থালার এক কোনায় রেখে দিচ্ছে। তার মনে হয় খেতে মায়া লাগছে। আহা বেচারা! পাঁচিশে মার্চ রাত থেকে ছাবিবশে মার্চ সারাদিন-রাত সে ছিল না খাওয়া। তারা বাপ-বেটা লুকিয়ে ছিল গর্তের ভেতর। মতিঝিলে বিল্ডিং বানানোর জন্যে বড় গর্ত করা হয়েছিল, সেই গর্তে। এই দীর্ঘ সময়ে মজনু একবারও বলে নাই— ভুখ লাগছে। বড়ই বুঝদার ছেলে। আসগর বলল, মাংস স্বাদ হইছে?

মজনু বলল, ই।

ডিমটা খা।

অখন না। পরে।

মার জন্যে তোর কি বেশি পেট পুড়তাছে?

হুঁ।

আসগর আলি রহস্যময় গলায় বলল, পেট বেশি পুড়লে একটা ঘটনা অবশ্য ঘটানি যায়। আইজও যাওয়া যায়। খাওয়া শ্যাষ কইরা বাসে উঠলাম। চইলা গেলাম। সন্ধ্যার আগে আগে উপস্থিত। এখন বাস চলাচল আছে।

মজনু একদৃষ্টিতে বাবার দিকে তাকিয়ে আছে। তার চোখ ছলছল করছে। মনে হচ্ছে যে-কোনো মুহুর্তে সে আনন্দে কেঁদে ফেলবে। আসগর আলির খাওয়া শেষ হয়েছে। সে টুপিওয়ালা সাহেবের দেয়া সিগারেটটা আরাম করে ধরিয়েছে। দোকানের ছেলেটাকে বলেছে জর্দা দিয়ে একটা পান দিতে। সে মন ঠিক করে ফেলেছে–আজই যাবে। ছেলেটা এত খুশি হয়ে তাকিয়ে আছে! খুশি নষ্ট করা ঠিক না। ছেলেমেয়ের খুশি অনেক বড় জিনিস।

 

টঙ্গী ব্রিজের কাছে মিলিটারি চেকপোষ্ট। বাসের সব যাত্রীদের নামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। মিলিটারিরা যাত্রীদের মালামাল পরীক্ষা করে দেখে। আসগর আলির বাস চেকপোষ্টে থামল। বাসের আটত্রিশজন যাত্রীর মধ্যে ছয়জনকে আলাদা করা হলো। কোনোরকম কারণ ছাড়াই তুরাগ নদীর পাড়ে দাঁড় করিয়ে তাদের গুলি করা হলো। মৃতদেহগুলি ভাসতে থাকল। তুরাগ নদীতে। সেই ছয়জন হতভাগ্যের একজন আসগর আলি। গুলি করার আগমুহূর্তেও সে বুঝতে পারে নি তাকে গুলি করা হচ্ছে। সে তাকিয়েছিল মজনুর দিকে। মজনুর হাতে তার মার জন্যে কেনা কচুয়ারঙের শাড়ির প্যাকেট। আসগর আলির একমাত্র দুশ্চিন্তা–মিলিটারিরা শাড়ির প্যাকেট রেখে দিবে না তো?

সেদিন রাত নটায় নগরীর হালচাল অনুষ্ঠানে ঢাকা নগরে সমাজের বিভিন্ন স্তরের কিছু মানুষের ইন্টারভিউ প্রচার করা হলো। তাদের মধ্যে সরকারি চাকুরে আছেন, ব্যবসায়ী আছেন, গৃহিণী আছেন এবং শ্রমজীবী মানুষের প্রতিভূ হিসেবে আসগর আলিও আছে। গৃহিণী হাসিমুখে বললেন, শহরের অবস্থা এখন অনেক ভালো। বিশৃঙ্খলার সময় গরুর মাংসের সের হয়েছিল দুটাকা। এখন সবচে ভালোটা দেড় টাকায় পাওয়া যায়। পেয়াজ এবং লবণের দামও কমেছে।

অনুষ্ঠান শেষ হলো আসগর আলিকে দিয়ে। উপস্থাপক জিজ্ঞেস করলেন, শহরের বর্তমান অবস্থায় আপনি কি সন্তুষ্ট?

আসগর আলি বলল, জি জনাব। পাকিস্তান জিন্দাবাদ।

 

আসগর আলির সঙ্গে গলা মিলিয়ে গৌরাঙ্গ বলল, পাকিস্তান জিন্দাবাদ!

গৌরাঙ্গ খাটে লম্বা হয়ে শুয়ে আছে। তার গায়ে গরম চাদর। সে চোখ বড় বড় করে টিভি দেখছে। সন্ধ্যার পর থেকে যত রাত পর্যন্ত টিভি চলে সে টিভি দেখে। শেষ অধিবেশনে পাকিস্তানের জাতীয় সঙ্গীত হয়–পাক সারা যামিন সাদবাদ। গৌরাঙ্গ সুর কবে জাতীয় সঙ্গীত গায়। তখন তাকে দেখে মনে হয় সে বেশ আরাম পাচ্ছে। শাহেদের সঙ্গে সে কথা বলে না। প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলে চুপ করে থাকে। কথা বলে নিজের মনে। বিড়বিড় করে কথা। শাহেদ যখন বলে, কী বলছ? তখন সে এমন ভঙ্গিতে তাকায় যেন শাহেদ খুবই অন্যায় কোনো কথা বলেছে, যে কথা শুনে সে আহত! গৌরাঙ্গের আরেক সমস্যা হলো, বাথরুমে যখন যায়। তখন বাথরুমের দরজা পুরোপুরি খোলা রাখে। দরজা বন্ধ করলে তার নাকি ভয় লাগে।

শাহেদ বুঝতে পারছে, গৌরাঙ্গের বড় ধরনের কোনো মানসিক সমস্যা হয়েছে। তাকে ভালো ডাক্তার দেখানো উচিত। এখন কোথায় ডাক্তার, কোথায় কী? শহর পুরো এলোমেলো। কখন এই এলোমেলো অবস্থা কাটবে কে জানে! তার বাসার কাছেই যে ফ্যামেসি সেখানে মাঝে-মাক্সে একজন ডাক্তার বসেন। তার সঙ্গে শাহেদ কথা বলেছে। ডাক্তার সাহেব বলেছেন, পাগলের দেশে সবাই মানসিক রোগী। এই রোগের কোনো চিকিৎসা নাই। ঘুমের ওষুধ দিচ্ছি। ওষুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখবেন।

ঘুমের ওষুধ গৌরাঙ্গকে রাতে খাওয়ানো হয়। এতে তার ঘুম আসে না। তবে ওষুধ খাবার পর সে মোটামুটি স্বাভাবিকভাবে কথা বলে। কথার বিষয়বস্তু এলোমেলো, তবে বলার ভঙ্গি স্বাভাবিক।

মিতা, আমি ঠিক করেছি। মুসলমান হবো। আসল মুসলমান। তুমি ব্যবস্থা করো। হিন্দু হওয়ার অনেক যন্ত্রণা। আর ভালো লাগে না। তবে দুর্গাপূজা দিতে হবে। বৎসরে একবার তো। চুপেচাপে দিয়ে দিব। তাতে কি কোনো সমস্যা হবে?

এই জাতীয় প্রশ্নের জবাব দেয়া অর্থহীন। শাহেদ চুপ করে থাকে। গৌরাঙ্গের তাতে সমস্যা হয় না। সে নিজের মনে কথা বলতে থাকে।

মিতা শোন, এই মুহুর্তে বাংলাদেশের সবচে নিরাপদ জায়গা কোনটা জানো?

জানি না।

সবচে নিরাপদ জায়গা হলো, পুরনো ঢাকার হিন্দুবাড়ি। যে-সব বাড়িতে মিলিটারি অ্যাটাক করে মানুষজন মেরে ফেলেছে সেইসব বাড়ি। যেমন ধরো, আমার বাড়ি। দ্বিতীয় দফায় সেইসব বাড়িতে মিলিটারি ঢুকবে না। বুঝেছি মিতা?

বুঝেছি।

আমি ঠিক করেছি, নিজের বাড়িতে গিয়ে থাকব। বাড়ির দখল ছেড়ে দেয়া তো ঠিক না। বুদ্ধি ভালো বের করেছি না?

হুঁ।

তুমিও চলো আমার সঙ্গে। দুই ভাই একসঙ্গে থাকল।

ঘুমাও। রাত অনেক হয়েছে।

রাত হয়েছে বলেই তো আমি ঘুমাব না। মিতা, তোমার তো জানা উচিত আমি রাতে ঘুমাই না, দিনে ঘুমাই। নিজের নাম এখন দিয়েছি–গৌরাঙ্গ প্যাচক। নাম ভালো হয়েছে না?

হুঁ।

মুসলমান হওয়ার পর নাম বদলাতে হবে। মিতা, বলে তো কী নাম দেই? তোমার নামের সঙ্গে মিল দিয়ে একটা নাম ঠিক করো।

আচ্ছা করব।

করব না, এখন করো।

বিরক্ত করো না তো! নানান যন্ত্রণায় আছি। এখন আর বিরক্তি ভালো লাগে না।

আমি তোমাকে বিরক্ত করি?

শাহেদ চুপ করে আছে। তার এখন সত্যি সত্যি বিরক্তি লাগছে। গৌরাঙ্গ গলা উচিয়ে বলল, বিরক্ত করি? জবাব দাও, বিরক্ত করি?

হ্যাঁ, করো।

আর করব না। কাল সকালে আমি চলে যাব।

কোথায় যাবে?

সেটা আমার বিষয়। তুমি কোনোদিনই আমাকে পছন্দ করো না, সেটা আমি জানি। সকাল হোক। রাস্তায় রিকশা নামলেই আমি বিদায় হবো।

তোমার শরীর ভালো না। এখন পাগলামি করার সময়ও না।

এখন কী করার সময়? বিরক্ত করার সময়। Time of annoyance? আমার নতুন নাম এখন কি গৌরাঙ্গ বিরক্ত দাস? সংক্ষেপে জি বি দাস?

প্লিজ চুপ করো।

না মিতা, আমি চুপ করব না। আমি বিরক্ত করতেই থাকব। যা বিরক্ত করার আজ রাতেই করব। সকালে আমাকে পাবে না।

 

পরদিন ভোরবেলা গৌরাঙ্গ সত্যি সত্যিই শাহেদের বাসা ছেড়ে চলে গেল। শাহেদকে কিছু বলে গেল না। শাহেদ তখনো ঘুমে। শাহেদের বালিশের কাছে একটা চিঠি লিখে গেল। দু লাইনের চিঠি–

মিতা, চলে গেলাম।

তুমি ভালো থেকে।

ইতি

গৌরাঙ্গ বিরক্ত দাস

সকল অধ্যায়

১. ০১. মাওলানা ইরতাজউদ্দিন কাশেমপুরী
২. ০২. শাহেদের অফিস মতিঝিলে
৩. ০৩. পুলিশ ইন্সপেক্টর মোবারক হোসেন
৪. ০৪. নীলগঞ্জ হাইস্কুলের বারান্দা
৫. ০৫. কলিমউল্লাহ নামটা
৬. ০৬. মোবারক হোসেনের ছুটির দিন
৭. ০৭. কবিতা একবার পড়লে
৮. ০৮. অনেকক্ষণ কড়া নাড়ার পর
৯. ০৯. মরিয়ম কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না
১০. ১০. মোবারক হোসেন
১১. ১১. চায়ের কাপ নামিয়ে
১২. ১২. আকাশে ট্রেসার উড়ছে
১৩. ১৩. ২৬ মার্চ ভোর আটটায়
১৪. ১৪. বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্ৰ
১৫. ১৫. ভয়ঙ্কর রাতের পরের যে ভোর
১৬. ১৬. মাত্র দুঘণ্টার জন্যে কারফিউ-বিরতি
১৭. ১৭. ভয়ঙ্কর দিন যাচ্ছে
১৮. ১৮. পিরোজপুর মহকুমার পুলিশপ্রধান ফয়জুর রহমান
১৯. ১৯. জেনারেল টিক্কা খান
২০. ২০. দৈনিক পাকিস্তান-এর সাহিত্যপাতা
২১. ২১. শিউলি গাছে আশ্বিন কার্তিক মাসে ফুল ফুটবে
২২. ২৩. গৌরাঙ্গ বিরক্ত দাস
২৩. ২৩. ফাঁকা রাস্তায় ঠেলাগাড়ি
২৪. ২৪. শাহেদের চেহারায় পাগল পাগল ভাব
২৫. ২৫. চীনের প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাই
২৬. ২৬. দারোগাবাড়ি
২৭. ২৭. ফজরের নামাজ
২৮. ২৮. নীলগঞ্জ থানার ওসি ছদারুল আমিন
২৯. ২৯. সকাল থেকে বিরামহীন বৃষ্টি
৩০. ৩০. রুনি বলল, মা, আমরা কোথায় যাচ্ছি
৩১. ৩১. আয়েশা বেগম নৌকায় বসে আছেন
৩২. ৩২. হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মেয়ে বেগম আখতার সোলায়মান
৩৩. ৩৩. পাকিস্তান সরকার স্বীকার করে
৩৪. ৩৪. বুদ্ধিজীবীদের বিবৃতি
৩৫. ৩৫. জাতিসংঘের মহাসচিব উ থান্ট
৩৬. ৩৬. গভর্নর টিক্কা খান
৩৭. ৩৭. কবি শামসুর রাহমান
৩৮. ৩৮. ডেইলি পিপল পত্রিকার সাব-এডিটর নির্মলেন্দু গুণ
৩৯. ৩৯. ফজরের ওয়াক্তে
৪০. ৪০. ক্যাপ্টেন মুহাম্মদ বাসেতের চিঠি
৪১. ৪১. দলিলপত্ৰ : অষ্টম খণ্ড
৪২. ৪২. রাত দশটা
৪৩. ৪৩. একটা সময় পর্যন্ত দেশের মানুষ
৪৪. ৪৪. কাঁদছে আমাদের বাংলাদেশ
৪৫. ৪৫. দুর্ধর্ষ ক্র্যাক প্লাটুন
৪৬. ৪৬. বেগম সুফিয়া কামালের দিনলিপি
৪৭. ৪৭. জেনারেল ইয়াহিয়ার সাক্ষাৎকার
৪৮. ৪৮. লায়ালপুরের জেলের একটি বিশেষ কক্ষ
৪৯. ৪৯. বেগম মুজিবের বিষাদঘন দিনগুলো
৫০. ৫০. নীলগঞ্জ জামে মসজিদ
৫১. ৫১. বেলুচ রেজিমেন্টের সেপাই আসলাম খাঁ
৫২. ৫২. আসমানী হতাশ চোখে
৫৩. ৫৩. রফিকের নাম মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকাতেও নেই
৫৪. ৫৪. জেড ফোর্স
৫৫. ৫৫. মেজর জিয়া
৫৬. ৫৬. দিন ঘনায়ে আসলে মানুষ ধর্ম কপচায়
৫৭. ৫৭. কলিমউল্লাহর বাবুর্চি বাচ্চু মিয়া
৫৮. ৫৮. মাওলানা ভাসানী
৫৯. ৫৯. জনৈক মুক্তিযোদ্ধার চিঠি
৬০. ৬০. ডাক্তার ক্যাপ্টেন সিতারা বেগম, বীর প্রতীক
৬১. ৬১. শ্রাবণ মাসের এক দুপুরে
৬২. ৬২. ধীরেন্দ্রনাথ রায় চৌধুরী
৬৩. ৬৩. মিলিটারিরা গৌরাঙ্গকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে
৬৪. ৬৪. ৩৬ ডিভিশনের প্রধান মেজর জেনারেল জামশেদ
৬৫. ৬৫. জাহাজ মারা হাবীব
৬৬. ৬৬. হেমায়েতউদ্দিন ‘হিমু’
৬৭. ৬৭. আমার নাম মোহাম্মদ আবু তাহের
৬৮. ৬৮. ইন্দিরা গান্ধী
৬৯. ৬৯. ডিসেম্বরের ছয় তারিখ
৭০. ৭০. আত্মসমৰ্পণ করুন
৭১. ৭১. চৌদ্দই ডিসেম্বর ভোরবেলা
৭২. ৭২. ১৬ ডিসেম্বর সকাল

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন