৫১. বেলুচ রেজিমেন্টের সেপাই আসলাম খাঁ

হুমায়ূন আহমেদ

নীলগঞ্জ হাই স্কুলে হেডমাস্টার মনসুর সাহেব মাথা নিচু করে তাঁর শোবার ঘরের খাটে বসে আছেন। তার সামনেই ঘোমটা দিয়ে বসে আছেন তার স্ত্রী আসিয়া। বিস্ময়কর ঘটনা ঘটেছে আসিয়া এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। তাঁর মাথায় কোনো সমস্যা নেই।

মধ্যদুপুর। প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি শুরু হয়েছে কাল রাত থেকে। এত প্রবল বর্ষণ নীলগঞ্জে এর আগে কখনো হয়েছে বলে মনসুর সাহেব মনে করতে পারছেন না। তিনি ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললেন, আসিয়া, তুমি যদি অনুমতি দাও। তাহলে আমি একটা কাজ করতে চাই।

আসিয়া ক্ষীণ গলায় বললেন, কী কাজ?

মনসুর সাহেব বললেন, ঘোমটা সরাও। কথাগুলি আমি তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলতে চাই।

আসিয়া ঘোমটা সরালেন। মনসুর সাহেব বললেন, আমার অতি প্ৰিয়জন ইরতাজউদ্দিন কাসেমপুরী সবসময় বলতেন, যে স্বামী স্ত্রীর মনে কষ্ট দিয়ে কোনো কাজ করবে। আল্লাহপাক তাকে কখনো ক্ষমা করবেন না। যে কাজটা আমি করতে যাচ্ছি, তার জন্যে তোমার অনুমতি চাই।

আসিয়া আবারো বললেন, কী কাজ?

মনসুর সাহেব বললেন, ইরতাজউদ্দিন কাসেমপুরীকে মিলিটারিরা গতকাল সন্ধ্যায় নদীর পাড়ে গুলি করে মেরেছে। তারা এ অঞ্চলে কারফিউ দিয়ে রেখেছে। মৃতদেহ পড়ে আছে নদীর পাড়ে। ভয়ে কেউ সেখানে যাচ্ছে না। আমি উনার ডেডবডি নিয়ে আসতে চাই। নিয়মমতো কবর দিতে চাই।

আসিয়া বললেন, আপনি একা এই কাজ পারবেন?

কেন পারব না? পারতে হবে।

আপনি যদি বলেন, তাহলে আমি যাব আপনার সঙ্গে।

মনসুর সাহেব বিস্মিত হয়ে বললেন, তুমি যেতে চাও?

জি যেতে চাই। মিলিটারি। যদি আপনাকে গুলি করে মারে, তাহলে আপনার সঙ্গে আমিও মরতে চাই। আমি একা বেঁচে থেকে কী করব?

নীলগঞ্জের মানুষ বিস্ময়ের সঙ্গে দেখল, হেডমাস্টার সাহেবের সঙ্গে ঘোমটা পর একজন মহিলা প্ৰবল বর্ষণের মধ্যে মাওলানা ইরতাজউদিনের বিশাল শরীর টেনে নিয়ে যাবার চেষ্টা করছে। তাদের খুবই কষ্ট হচ্ছে। অনেকেই দৃশ্যটা দেখছে, কেউ এগিয়ে আসছে না।

হঠাৎ একজনকে ভিজতে ভিজতে এগিয়ে আসতে দেখা গেল। সে আসিয়া বেগমের কাছে এসে উর্দুতে বলল, মাতাজি আপনি সরুন, আমি ধরছি।

মনসুর সাহেব বললেন, আপনার নাম?

আগন্তুক বলল, আমি বেলুচ রেজিমেন্টের একজন সেপাই। আমার নাম আসলাম খাঁ।*

————-

*ইরতাজউদ্দিন কাশেমপুরীর নামাযে জানাজা হয় দেশ স্বাধীন হবার পর। ঐদিন তার কবর হলেও জানাজা হয় নি। জানাজার জন্যে মাওলানা খুঁজে পাওয়া যায় নি।

সকল অধ্যায়

১. ০১. মাওলানা ইরতাজউদ্দিন কাশেমপুরী
২. ০২. শাহেদের অফিস মতিঝিলে
৩. ০৩. পুলিশ ইন্সপেক্টর মোবারক হোসেন
৪. ০৪. নীলগঞ্জ হাইস্কুলের বারান্দা
৫. ০৫. কলিমউল্লাহ নামটা
৬. ০৬. মোবারক হোসেনের ছুটির দিন
৭. ০৭. কবিতা একবার পড়লে
৮. ০৮. অনেকক্ষণ কড়া নাড়ার পর
৯. ০৯. মরিয়ম কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না
১০. ১০. মোবারক হোসেন
১১. ১১. চায়ের কাপ নামিয়ে
১২. ১২. আকাশে ট্রেসার উড়ছে
১৩. ১৩. ২৬ মার্চ ভোর আটটায়
১৪. ১৪. বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্ৰ
১৫. ১৫. ভয়ঙ্কর রাতের পরের যে ভোর
১৬. ১৬. মাত্র দুঘণ্টার জন্যে কারফিউ-বিরতি
১৭. ১৭. ভয়ঙ্কর দিন যাচ্ছে
১৮. ১৮. পিরোজপুর মহকুমার পুলিশপ্রধান ফয়জুর রহমান
১৯. ১৯. জেনারেল টিক্কা খান
২০. ২০. দৈনিক পাকিস্তান-এর সাহিত্যপাতা
২১. ২১. শিউলি গাছে আশ্বিন কার্তিক মাসে ফুল ফুটবে
২২. ২৩. গৌরাঙ্গ বিরক্ত দাস
২৩. ২৩. ফাঁকা রাস্তায় ঠেলাগাড়ি
২৪. ২৪. শাহেদের চেহারায় পাগল পাগল ভাব
২৫. ২৫. চীনের প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাই
২৬. ২৬. দারোগাবাড়ি
২৭. ২৭. ফজরের নামাজ
২৮. ২৮. নীলগঞ্জ থানার ওসি ছদারুল আমিন
২৯. ২৯. সকাল থেকে বিরামহীন বৃষ্টি
৩০. ৩০. রুনি বলল, মা, আমরা কোথায় যাচ্ছি
৩১. ৩১. আয়েশা বেগম নৌকায় বসে আছেন
৩২. ৩২. হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মেয়ে বেগম আখতার সোলায়মান
৩৩. ৩৩. পাকিস্তান সরকার স্বীকার করে
৩৪. ৩৪. বুদ্ধিজীবীদের বিবৃতি
৩৫. ৩৫. জাতিসংঘের মহাসচিব উ থান্ট
৩৬. ৩৬. গভর্নর টিক্কা খান
৩৭. ৩৭. কবি শামসুর রাহমান
৩৮. ৩৮. ডেইলি পিপল পত্রিকার সাব-এডিটর নির্মলেন্দু গুণ
৩৯. ৩৯. ফজরের ওয়াক্তে
৪০. ৪০. ক্যাপ্টেন মুহাম্মদ বাসেতের চিঠি
৪১. ৪১. দলিলপত্ৰ : অষ্টম খণ্ড
৪২. ৪২. রাত দশটা
৪৩. ৪৩. একটা সময় পর্যন্ত দেশের মানুষ
৪৪. ৪৪. কাঁদছে আমাদের বাংলাদেশ
৪৫. ৪৫. দুর্ধর্ষ ক্র্যাক প্লাটুন
৪৬. ৪৬. বেগম সুফিয়া কামালের দিনলিপি
৪৭. ৪৭. জেনারেল ইয়াহিয়ার সাক্ষাৎকার
৪৮. ৪৮. লায়ালপুরের জেলের একটি বিশেষ কক্ষ
৪৯. ৪৯. বেগম মুজিবের বিষাদঘন দিনগুলো
৫০. ৫০. নীলগঞ্জ জামে মসজিদ
৫১. ৫১. বেলুচ রেজিমেন্টের সেপাই আসলাম খাঁ
৫২. ৫২. আসমানী হতাশ চোখে
৫৩. ৫৩. রফিকের নাম মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকাতেও নেই
৫৪. ৫৪. জেড ফোর্স
৫৫. ৫৫. মেজর জিয়া
৫৬. ৫৬. দিন ঘনায়ে আসলে মানুষ ধর্ম কপচায়
৫৭. ৫৭. কলিমউল্লাহর বাবুর্চি বাচ্চু মিয়া
৫৮. ৫৮. মাওলানা ভাসানী
৫৯. ৫৯. জনৈক মুক্তিযোদ্ধার চিঠি
৬০. ৬০. ডাক্তার ক্যাপ্টেন সিতারা বেগম, বীর প্রতীক
৬১. ৬১. শ্রাবণ মাসের এক দুপুরে
৬২. ৬২. ধীরেন্দ্রনাথ রায় চৌধুরী
৬৩. ৬৩. মিলিটারিরা গৌরাঙ্গকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে
৬৪. ৬৪. ৩৬ ডিভিশনের প্রধান মেজর জেনারেল জামশেদ
৬৫. ৬৫. জাহাজ মারা হাবীব
৬৬. ৬৬. হেমায়েতউদ্দিন ‘হিমু’
৬৭. ৬৭. আমার নাম মোহাম্মদ আবু তাহের
৬৮. ৬৮. ইন্দিরা গান্ধী
৬৯. ৬৯. ডিসেম্বরের ছয় তারিখ
৭০. ৭০. আত্মসমৰ্পণ করুন
৭১. ৭১. চৌদ্দই ডিসেম্বর ভোরবেলা
৭২. ৭২. ১৬ ডিসেম্বর সকাল

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন