১. কমান্ডার নাসরুল্লাহ মনসূর

১. কমান্ডার নাসরুল্লাহ মনসূর

[প্রখ্যাত মুজাহিদ ও জানবাজ গেরিলা কমাণ্ডার নাসরুল্লাহ্ মনসূর (লেংড়িয়াল) এক দল মুজাহিদ নিয়ে ১৯৯২ সনের ৩১ শে অক্টোবর পাকিস্তান থেকে রওনা হয়ে জিহাদরত নির্যাতিত কাশ্মিরী মুসলমানদের সহযোগিতার জন্য অধিকৃত কাশ্মীরে প্রবেশ করেন।

কাশ্মীরের আকাশচুম্বি বরফঢাকা পাহাড় ও দুর্গম পার্বত্য উপত্যকা অতিক্রম করে কিভাবে তিনি নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছলেন এবং অত্যল্প সময়ের মধ্যে কিভাবে আক্রমণ চালিয়ে সাফল্য লাভ করলেন, তার বিবরণ তাঁরই সহযাত্রী মুজাহিদ হাফেজ আকরামুল্লাহর জবানীতে এখানে তুলে ধরা হল।]

যাত্রা হল শুরু

১৯৯২ সালের আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে আমরা কাশ্মীরে প্রবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। প্রতিদিনই ভাবতাম, আজ হয়ত রওনা হয়ে ওপারে গিয়ে পৌছব। কিন্তু প্রতিকূল পরিস্থিতির জন্য আমাদের যাত্রা বিলম্বিত হতে লাগল। আমরা নিজ অবস্থান থেকে কয়েকবার বের হয়েও ছিলাম; কিন্তু বেশী দূর অগ্রসর হওয়া সম্ভব হয়নি। বারবার ফিরে এসে সস্থানে অপেক্ষা করতে হয়েছে।

অবশেষে ৩১শে অক্টোবরের সকালের সূর্য আমাদের জন্য নিয়ে এল সুখবর। আমরা সকাল সকাল বের হয়ে পাকিস্তানকে ‘আল-বেদা জানিয়ে সীমান্ত রেখা অতিক্রম করে একটি পাহাড়ী ঝর্ণার কিনারা ধরে অগ্রসর হতে থাকি। কিছুদূর অগ্রসর হয়ে ঝর্ণাটি দু’ভাগ হয়ে দু’দিকে চলে গেছে। আমরা তার মোহনায় বসে বিশ্রাম নিলাম। কাশ্মীরের মাটিতে এটাই আমাদের প্রথম বিশ্রাম, প্রথম অবস্থান।

বিশ্রামের পর আমরা ঝর্ণাটা পেছনে রেখে. পাহাড়ে উঠতে শুরু করলাম। এখানে আমাদের বেশীক্ষণ অবস্থান করা সম্ভব ছিল না। ডানে-বাঁয়ে ভারতীয় সৈন্যদের পোস্ট। অতি সতর্কতার সাথে কখনো ঝোপ-ঝাড়ের আড়ালে, কখনো মাথা নীচু করে নুয়ে নুয়ে কখনও বা হামাগুড়ি দিয়ে সামনে অগ্রসর হতে থাকি।

এক স্থানে এসে আমাদের বাধ্য হয়ে থেমে যেত হল। এ পাহাড়ের কাছাকাছি দুটি চূড়ায় ভারতীয় সৈন্যদের দু’টি পোস্ট, যার মধ্য দিয়ে দিনের বেলা অতিক্রম করা একেবারে অসম্ভব।

াথের পথে দিনের বেলাটা বসে বসে কাটিয়ে দিলাম। রাতে অন্ধকার ছেয়ে গেলে আমরা দু’ পোস্টের মধ্য দিয়ে সামনে অগ্রসর হই। এবার আমাদের আর একটি পানির নালা ধরে তার পাশে পাশে চলার কথা। কিন্তু নালার কিনারায় তাঁবু টানানো দেখে আমাদের সন্দেহ হল, হয়ত ভারতীয় সৈন্যরা এখানে তাঁবু ফেলে পাহারা দিচ্ছে। তাই পথ পরিবর্তন করে আমরা ঝর্ণা ও চূড়ার উপরে পোস্টের মধ্য বরাবর বেরিয়ে গেলাম।

এ ভাবে ছয়টি বিপজ্জনক পোস্ট অতিক্রম করে আমরা নভেম্বরের দু’ তারিখ সবচেয়ে উঁচু পাহাড় ‘ওঝিটাপ’ এর উপর পৌছতে সক্ষম হই। এবার আমাদের ঢালু পথ ধরে নীচে নামতে হবে।

আমাদের গ্রুপে ৩২ জন মুজাহিদ ছিল। কমান্ডার নাসরুল্লাহ মনসূর কমাণ্ডিংয়ের দায়িত্ব পালন করছিলেন। উপযুক্ত প্রশিক্ষণ নিয়ে আফগান জিহাদে অংশ নেয়ার ফলে কাফেলার সকলেই যুদ্ধের কলা-কৌশল সম্পর্কে ছিল অভিজ্ঞ ।

সর্বশেষ চূড়ায় পৌঁছার পর আমাদের মুজাহিদরা দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে অগ্রসর হতে লাগল। আমাদের সাথে দু’জন গাইড (পথপ্রদর্শক) ছিল। একজন ১৬ জন সাথী নিয়ে প্রথমে অগ্রসর হয়। নাসরুল্লাহ্ মনসুরসহ আমরা পেছনের গ্রুপে ছিলাম। পদচিহ্ন ধরে বেশ কিছুদূর অগ্রসর হয়ে পেছনে ফিরে দেখি, সাথীরা কেউ আসছে না। একটি পাথরের আড়ালে বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম। ক্লান্তিতে আমার চোখে ঘুম নেমে এল।

হঠাৎ পায়ের শব্দে চমকে উঠি। দেখি, আব্দুল গফুরসহ পাঁচজন সাথী এগিয়ে আসছে। বাকী সাথীরা এখনও পেছনে রয়ে গেছে। আমি পিঠের বোঝা নীচে নামিয়ে রেখে দ্রুত সামনে অগ্রসর হলাম, যাতে অগ্রবর্তী গ্রুপকে থামানো যায়।

ঢালু পথ বরফে ঢাকা, তাই বেশী দ্রুত অগ্রসর হতে পারছিলাম না। ঘন্টাখানিক চলার পরও সাথীদের নাগাল পেতে ব্যর্থ হলাম। পেছনে ফিরে এসে দেখি, নাসরুল্লাহ্ মনসুর গাইডসহ সাথীদের নিকট পৌঁছে গেছেন।

নাসরুল্লাহ্ মনসুর ১৯৮১ সন থেকে কাবুল বিজয় পর্যন্ত আফগানিস্তানেই ছিলেন। নিজ হাতে রাশিয়ান হেলিকপ্টার ও ট্যাংক ধ্বংস করেছেন। সাথীরা তাকে ‘ট্যাংক বিধ্বংসী’ উপাধি দিয়েছেন। তিনি বহুবার আহত হয়েছেন। তাঁর উরুতে অনেকগুলো গুলী বিদ্ধ হয়েছিল। তখন থেকে তিনি খুঁড়িয়ে হাঁটেন। ক্রমাগত হাঁটা এবং প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় তাঁর আহত পায়ে ব্যাথা শুরু হয়। তিনি ছাড়া আরো কয়েকজন মুজাহিদ অসুস্থ হয়ে পড়েন। ফলে দিনে বিশ্রাম করে রাতে অগ্রসর হবার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

কমাণ্ডার নাসরুল্লাহ্ মনসুর আমাদের থেকে কিছু দূরে আরেকটি পাথরের আড়ালে কয়েকজন সাথী নিয়ে বসে ছিলেন। যে পাথরগুলোর আড়ালে আমরা াথের পথে বসে ছিলাম, সেগুলো উচ্চতায় কম ছিল। আমরা খঞ্জর দিয়ে মাটি খুঁড়ে তার মধ্যে বসার চেষ্টা করলাম। তবুও পুরোপুরি মাথা লুকানো সম্ভব হল না। উপরন্তু এখানে বসে ফায়ার করার সুবিধাও ছিল না। প্রায় ৬০ বর্গমিটার এলাকা নিয়ে আমরা আলাদা হয়ে পড়ি।

শক্রর সাথে প্রথম সংঘাত

আমাদের গাইড সামনে অগ্রসর হয়ে আশপাশের অবস্থান পর্যবেক্ষণ করতে থাকে। আমার পাশ দিয়ে অতিক্রম করে বিশ মিটার অগ্রসর হতেই হঠাৎ চমকে উঠে সে। তার সামনেই একজন ভারতীয় সৈন্য দাঁড়িয়ে। সৈন্যটি গাইডকে অস্ত্র ফেলে আত্মসমর্পণ করার আহবান জানাচ্ছে।

তাদের কথার শব্দ শুনে আমি একটি পাথরের ছিদ্র দিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখি, সেখানে তিনজন ইন্ডিয়ান সৈন্য দাঁড়িয়ে গাইডের সাথে কথা বলছে। আমি বুঝতে পারলাম, সৈন্যরা আমাদের ঘিরে ফেলেছে। কান পেতে তাদের কথাবার্তা শোনার চেষ্টা করলাম। একজন সৈন্য গাইডকে ফাঁসানোর জন্যে চাতুরী করে বলছে, গুরু, তুমি আত্মসমর্পণ করলে তোমাকে কিছুই বলব না।

গাইড বলল, তুমি শিখ হলে তোমার দাড়ি কোথায়? সে বলল ‘দাড়ি রাখা আমাদের জন্যে আবশ্যক নয়। গাইড আবার জিজ্ঞেস করল, তোমার পাগড়ি কোথায়? সে জবাব দিল, সকাল বেলা তো, তাই পরে আসিনি।’

গাইড বলল, তবে তোমার চুল কোথায়?’ শিখ সৈন্যটি তার মোড়ানো বেনী খুলে তাকে দেখাল।

সে গুরু নানকের কসম খেয়ে আবার বলল, আমরাও স্বাধীনতা চাই। আমি জিয়াউল হকের সময় পাকিস্তান গিয়ে ট্রেনিং নিয়ে এসেছি। তবে এভাবে লড়াই করে স্বাধীনতা লাভ করা যায় না। স্বাধীনতা আলোচনার টেবিলে বসে আদায় করে নিতে হয়।’

সৈন্যরা এত কাছাকাছি ছিল যে, আমরা একত্রিত হয়ে পরামর্শ করতে পারছিলাম না, এখন আমরা কী করব। সকলে নিজ নিজ স্থানে বসে সজাগ দৃষ্টি রাখতে থাকি।

শিখ সৈন্যের নরম কথায় গাইড অস্ত্র ফেলে দিয়ে হাত তুলে দাঁড়াল। তৎক্ষণাৎ কমাণ্ডার নাসরুল্লাহর একটি গুলী এসে একজন সৈন্যের মাথায় বিদ্ধ হয়। সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। কমান্ডার একের পর এক গুলী ছুড়ে সাথীদের আক্রমণ করার জন্য উচ্চস্বরে আদেশ দিতে লাগল।

াথের পথে তাঁর আহবানে সাড়া দিয়ে আমরা আল্লাহু আকবার’ ধ্বনি দিয়ে পাহাড়ী উপত্যকা মুখরিত করে আক্রমণে ঝাপিয়ে পড়লাম। অত্যন্ত ঝুঁকির সাথে পাথরের আড়াল থেকে বের হয়ে গুলী চালাতে হচ্ছিল, কারো ম্যাগজিনের গুলী শেষ হলে সে পাথরের আড়ালে চলে আসত, আর একজন তার স্থানে নেমে আবার গুলী চালাত।

সকালে শুরু হওয়া যুদ্ধ দুপুর পর্যন্ত গড়ায়। শত্রু সৈন্যরা ক্লাশিনকোভ, রকেটলাঞ্চারের গোলা এবং অসংখ্য গ্রেনেড বর্ষণ করছে। আমাদের সাতজন সাথী শহীদ ও একজন গ্রেফতার হয়। বাকী সাতজনের মধ্যে কমাণ্ডার নাসরুল্লাহ মনসুরসহ অধিকাংশ সাথী আহত হয়। আমরা এ অবস্থায় তায়াম্মুম করে পাথরের আড়ালে বসে জোহরের নামাজ আদায় করে নেই।

মাজরুহুল ইসলামের শাহাদাত

মাজরুহুল ইসলাম একজন প্রবীণ মুজাহিদ। তিনি অত্যন্ত পরহেজগার মুত্তাকী এবং মিষ্টিভাষী মানুষ। তিনিও তায়াম্মুম করে জোহরের নামাজ আদায় । করেন। নামাজ পড়ে তিনি কেবলামুখী হয়ে এক সৈন্যের উপর গুলী চালান। মুজাহিদ মুহাম্মদ আসেম তার সাথে ছিল। সে বলল, আমি দেখলাম, গুলী খেয়ে সৈন্যটি লুটিয়ে পড়ে। আর অপর দিক থেকে একটি গুলী এসে মাজরুহুল ইসলামের কপালে বিদ্ধ হয়। তিনি কেবলামুখী হয়ে দুই হাঁটুর উপর বসে পড়েন এবং সোজা সেজদায় চলে যান।

আমরা ধারণা করতে পারিনি যে, তাঁর কপালে গুলী লেগেছে। মনে করেছি, ইন্ডিয়ান সৈন্যকে হত্যা করার শুকরিয়া জানাতে তিনি সেজদায় লুটিয়ে পড়েছেন। অনেক সময় অতিবাহিত হবার পরও তিনি মাথা না উঠালে আমার সন্দেহ হয়। কয়েকবার ডাক দিলাম, কিন্তু কোন জবাব নেই। মনে করলাম, হয়ত যখমী হয়েছেন। উঠাবার চেষ্টা করতেই কপাল থেকে দর দর করে রক্ত পড়তে শুরু করে। তখন আর তিনি বেঁচে নেই। তার আত্মা জান্নাতে পৌছে গেছে’। মাজরুহুল ইসলাম এই যুদ্ধের সর্বশেষ শহীদ।

অবরুদ্ধ অবস্থায়

তিনশ’ ভারতীয় সৈন্য এ আক্রমণে অংশ নেয়। তারা কয়েক লাইনে শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে আমাদেরকে ঘিরে রাখে। তাদের প্রথম বেস্টনী লাইন ছিল আমাদের থেকে মাত্র পঞ্চাশ মিটার দূরে। মাঝে-মধ্যে সৈন্যরা সামনে অগ্রসর হয়ে পাথরের আড়ালে গ্রেনেড ছুড়ে মারত।

াথের পথে

আমাদের হাতে দু’টি রকেটলাঞ্চার ছিল। একবার এক সৈন্য আব্দুশ শুকুরকে লক্ষ্য করে একটি গ্রেনেড ছুড়ে মারে। আব্দুশ শুকুর দ্রুত গ্রেনেডটি তুলে বাইরে নিক্ষেপ করে। এতে তাঁর কাছে রক্ষিত রকেটলাঞ্চারে গ্রেনেডের একটি টুকরোর আঘাত লাগে, যার ফলে রকেটলাঞ্চারটি অকেজো হয়ে যায়।

খানিক পরে একটি হেলিকপ্টার আমাদের মাথার উপর ঘুরতে আরম্ভ করে। তার সাথে ছিল ছয়টি মেশিনগান ফিট করা। হেলিকপ্টার থেকে আমাদের উপর মুষলধারে গুলী বর্ষণ হতে থাকে। কিন্তু এতে আমাদের তেমন কোন ক্ষতি হয়নি।

মাত্র একটি রকেটলাঞ্চার দিয়ে আমরা হেলিকপ্টারের মোকাবেলা করি। এরপর দুশমনরা কয়েকটি মর্টার তোপের গোলাবর্ষণ করে, যা ডানে ও বায়ে পড়ে বিস্ফোরিত হয়। মর্টারের গোলার পর তারা আবার জোরদার আক্রমণ চালায়।

আমি যে পাথরের আড়ালে মোর্চা নিয়েছি, তার উপর চড়ে একজন ভারতীয় সৈন্য আমাকে বের হতে বলল। আমার মোর্চা এত সংকীর্ণ ছিল যে, এর মধ্যে ভাল করে বসতে পারছিলাম না। সৈন্যদের দিকে তাকাবারও সুযোগ পাচ্ছিলাম না। সৈন্যটি আমার উপরে একটি হ্যান্ডগ্রেনেড ছুড়ে মারে, যা আমার পেটের উপর পড়তেই ধরে বাইরে নিক্ষেপ করে ফেলে দেই।

যখন সৈন্যটি দেখল, গ্রেনেড দিয়ে একে ঘায়েল করা যাবে না, তখন সে এক নতুন চাল চালে। আমাকে উদ্দেশ করে বলতে লাগল, তোমার ট্রেনিং দেখে আশ্চর্য হয়েছি। আমাদের তোমার মত সুশিক্ষিত যুবকের খুবই প্রয়োজন। তুমি বাইরে চলে এসো; তোমার যোগ্যতার জন্যে তোমাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে।’

আমি শুধু কথার আওয়াজ শুনছিলাম, কিন্তু তাকে দেখতে পাচ্ছিলাম না। আমি তাকে ডেকে বললাম, তুমি আমার সামনে এসে কথা বল।

কিন্তু সে আমার সামনে আসতে সাহস না করে আমার উপর আরও একটি গ্রেনেড ছুড়ে মারে। গ্রেনেড লক্ষ্যচ্যুত হয়ে বাইরে গড়িয়ে পড়ে। তার গ্রেনেড ফুরিয়ে গেলে সে ফিরে চলে যায়। এ সুযোগে আমি মোর্চা থেকে বের হয়ে পাথরের আড়ালে পজিশন নিয়ে বসি।

জীবনবাজীর লড়াই যখন শেষ হল

কমাণ্ডার নাসরুল্লাহ মনসুর পাথরের আড়ালে অবস্থান নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। যখনই কোন সৈন্যের মাথা নজরে আসত, তখনই সেটা নিশানা বানাতেন। তাঁর হাতের টিপ ছিল নিখুঁত। অযথা গুলী খরচ না করে ঠাণ্ডা মাথায় তিনি এক একজন করে শিকার করতে থাকেন।

াথের পথে একদিকে আমাদের সাথীরা যেমন শহীদ হয়েছে, অপর দিকে দুশমনদেরও লাশের স্থূপ পড়ে গেছে। সন্ধ্যা বেলায় আব্দুশ শুকুর আওয়াজ দিল, আকরাম, যদি জিন্দা থাক, তবে জবাব দাও।’

আমি বললাম, আলহামদুলিল্লাহ, আমি জীবিত আছি।

সে ক্রোলিং করে প্রত্যেকের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে। সর্বপ্রথম সে কমাণ্ডারের কাছে যায়।

ওদিকে শত্রুরা কমাণ্ডারকে বলছে, ও আল্লাহু আকবারের বাচ্চা, আত্মসমর্পণ কর।।

কমাণ্ডার জবাবে বললেন, ‘আমাদের সাথে আল্লাহ আছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত নিঃশ্বাস আছে, কোন সাথী হাতিয়ার ফেলতে রাজী নই।’

রাতে সৈন্যরা কিছু দূরে অবস্থান নিয়ে গুলী চালাতে থাকে। রাতের পর সারা দিন ধরেও গুলী বিনিময় চলতে থাকে।

দ্বিতীয় দিন সন্ধ্যায় কমাণ্ডার গুলী চালানো বন্ধ করার নির্দেশ দেন। যখন কয়েকঘন্টা পর্যন্ত আমাদের পক্ষ থেকে গুলী বন্ধ থাকে, তখন দুশমনরা মনে করে সকল মুজাহিদ নিহত হয়েছে। তারাও আস্তে আস্তে গুলী চালানো বন্ধ করে দেয়। লড়াইয়ে তারা খুব ক্লান্ত হয়ে পড়ায় রাতে নিজ অবস্থান থেকে আর সামনে অগ্রসর হয়নি।

রাত দু’টায় কমান্ডার সকল মুজাহিদকে একস্থানে ডেকে পরামর্শ করলেন। তিনি বললেন, ফিরে যাবার কথা যেন কেউ চিন্তা না করি। যেভাবেই হোক আমাদের সামনের দিকে এগুতেই হবে। যদিও গাইড ধরা পড়েছে, রাস্তা আমাদের চেনা নেই, তবুও আমরা অনুমানের উপর নির্ভর করে অগ্রসর হব । ইনশাআল্লাহ্ আমরা পথের সন্ধান পেয়ে যাব।

আমাদের কাছে বারুদের যে মাইন ছিল, সেগুলি শহীদ সাথীদের চারপাশে বিছানো হল, যাতে শত্রুরা শহীদের লাশের কোন অমর্যাদা করতে চাইলে সাথে সাথে তার প্রতিফল পায়।

কাজ শেষে আমরা অতি সতর্কতার সাথে এক একজন করে একদিকে বের হয়ে এলাম। আল্লাহর শোকর, সকল সাথীসহ আমরা শত্রুর বেষ্টনী পার হয়ে এক পাহাড়ের চূড়ায় পৌছে গেলাম। সকলে ক্ষুধা-পিপাসায় খুবই ক্লান্ত। তাই আজকের মত এখানে বিশ্রাম নিয়ে রাতে সামনের দিকে অগ্রসর হওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

পাহাড়ের চূড়া থেকে যুদ্ধক্ষেত্র ছিল অনেক নীচে। সকাল আটটায় ভারতীয় সৈন্যরা গুলী করতে করতে সামনে অগ্রসর হয়। যখন জবাবে কোন গুলী বর্ষিত হল না, তখন তাদের সাহস বেড়ে গেল। তাদের ধারণা জন্মাল যে, এখন আর কোন মুজাহিদ জীবিত নেই। তারা নিহত সাথীদের তল্লাশী নেয়ার জন্যে সামনে অগ্রসর হয়ে কাছাকাছি পৌঁছতেই একটি মাইন বিস্ফোরিত হয়। এতে কয়েকজন সৈন্য হতাহত হয়ে লুটিয়ে পড়ে। অন্য পাশ থেকে অগ্রসর হওয়া সৈন্যরাও একটি মাইন বিস্ফোরণের কবলে পড়ে হতাহত হয়।

সাধারণ সৈন্যরা মাইন সম্পর্কে তেমন কিছুই জানে না। মাইন তুলে পথ পরিষ্কার করতে সৈন্যদের বিশেষ ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিটের প্রয়োজন হয়। কিন্তু মাইন সুইপার ইউনিট সাথে না থাকায় সৈন্যরা তাদের তল্লাশী অভিযান মুলতবী রাখতে বাধ্য হয়।

সে লড়াইয়ে ৩৬ জন সৈন্য নিহত ও অসংখ্য আহত হয়েছিল। আমাদের আটকাপড়া গাইডকে ভারতীয় সৈন্যরা পরে এসব হতাহতের প্রতিশোধ স্বরূপ বিনা বিচারে গুলী করে হত্যা করে।

অজানা পথে যাত্রা শুরু কমাণ্ডার নাসরুল্লাহ এবার গাইডের দায়িত্ব আমার উপর ন্যস্ত করেন। আমি সবার আগে আগে চলে রাস্তা দেখে নিতাম, বাকী সাথীরা সে পথ ধরে অগ্রসর হত। চলতে চলতে একসময় একটি পাহাড় থেকে একশ’ মিটার নীচে নেমে দেখি, দশ মিটার দূরে চারজন সৈন্য জড়সড় হয়ে একস্থানে বসে শীতে কাঁপছে।

শীতের প্রচণ্ডতা থেকে বাঁচার জন্যে একে অপরের শরীর জড়াজড়ি করে বসে আছে তারা। এত কাছে পৌছার পরও তারা আমার উপস্থিতি টের পায়নি। ইচ্ছে করলে এক ব্রাশ ফায়ারেই চারজনকে ঘায়েল করা যেত। কিন্তু এ মুহূর্তে বন্দুকের আওয়াজ করা ঠিক হবে না বলে নিজেকে সংযত করলাম। এখন আমাদের আসল উদ্দেশ্য কাশ্মীর পৌছা। কমাণ্ডার নাসরুল্লাহ্ পথে সকল প্রকার সংঘাত এড়িয়ে যেতে নির্দেশ দিয়েছেন। একান্ত যদি বিপদ এড়ানো না যায়, তবেই গুলী করার অনুমতি রয়েছে।

আমি অতি সন্তর্পণে পেছনে ফিরে এসে পথ পরিবর্তন করে সাথীদেরকে যথা সম্ভব নিঃশব্দে অগ্রসর হতে বললাম। আধা কিলোমিটার অগ্রসর হওয়ার পর আমরা অনেকগুলি বড় বড় পাথর দেখতে পাই। সাথীরা ক্ষুধা-পিপাসা ও ক্লান্তির শেষ সীমায় পৌছে গেছে; কারো আর চলার মত শক্তি নেই। একমাত্র দৃঢ় মনোবলই তাদের সম্মুখে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। এবার পাথরের ভাল আড়াল পেয়ে সাথীরা সেখানেই বসে পড়ে। অতঃপর বাধ্য হয়ে আমরা একদিন একরাত সেখানে বিশ্রাম নিলাম।

পরের দিন দুপুরের দিকে ত্রিশ-পয়ত্রিশজন সৈন্যের একটি টহলগ্রুপ এ পথে টহল দিতে আসে। তাদের সাথে দু’টি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুরও ছিল। আমি যে পাথরের আড়ালে বসা ছিলাম, একজন সৈন্য সে পাথরের উপর এসে দাঁড়ায় এবং তার সঙ্গী কুকুরটি আমাকে দেখে ফেলে। আমি কুকুরের দিকে তাকিয়ে আল্লাহ্র কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতে লাগলাম। আল্লাহর কুদরতে কুকুর কোন আওয়াজ না করে পাথর থেকে নীচে নেমে গেল।

পঞ্চাশ মিটার অগ্রসর হয়ে বিক্ষিপ্তভাবে বসে সৈন্যরা গাল-গল্প করতে থাকে। তারা চা তৈরী করে পান করে। আমার সামনের দুশমনরা হাসি-ঠাট্টায় মেতে ছিল। আমি তাদের দিকে ক্লাসিকোভ তাক করে বসে ছিলাম। কিন্তু তারা আমাদের সন্ধান না পাওয়ায় আমরা কমাণ্ডারের নির্দেশ অনুযায়ী শিকার হাতের কাছে পেয়েও ছেড়ে দিলাম।

সন্ধ্যা হতেই আমরা আবার সফর শুরু করি। চারঘন্টা পথ চলার পর ক্লান্তির জন্যে আর অগ্রসর হওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। আহত সাথীরা মোটেই চলতে পারছিল না। স্বয়ং কমাণ্ডার নাসরুল্লাহর শরীরের তিন স্থানে যখম ছিল। বাকী সাথীরাও প্রায় সবাই কম বেশী আহত, সবার জামা-কাপড় রক্তে ভেজা। কমাণ্ডার বললেন, “দেখ কোথাও লুকিয়ে থাকার মত জায়গা পাওয়া যায় কিনা?

আমি খোঁজাখুঁজি করে একটি স্থান নির্বাচন করি। বাকী রাত ও পরদিন সেখানে কাটাবার পর সাথীরা ক্ষুধা ও ক্লান্তিতে আরও দুর্বল হয়ে পড়ে। চতুর্থ রাতে আবার ঘন্টাচারেক চলার পর বিশ্রাম নিলাম। এভাবে অল্প অল্প করে অগ্রসর হয়ে সপ্তম রাতের শেষে একটি লোকালয় দেখে ভাবলাম, আমরা কাশ্মীর উপত্যকায় পৌছে গেছি।।

কিন্তু বস্তির অধিবাসীদের সম্পর্কে আমাদের কোন ধারণা ছিল না, এটা মুসলমানদের গ্রাম না হিন্দুদের। গ্রামে সৈনদের ক্যাম্প আছে কিনা সে ব্যাপারেও কোন তথ্য আমাদের জানা ছিল না। অপর দিকে ক্ষুধা নিবারণের জন্যে কমাণ্ডার আমাদের সবাইকে থামতে নির্দেশ দিলে আমরা একস্থানে বসে পড়ি। আমার সাথে একজন সাথী দিয়ে কমাণ্ডার প্রথমে বস্তির কাছাকাছি গিয়ে বস্তির অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে বললেন। আমরা নীচে নেমে একটি ঝোপের আড়ালে বসে তাদের গতিবিধি লক্ষ্য করতে থাকি।

দেখে মনে হল, মুসলমানদের গ্রাম। আশে-পাশে সৈন্যদেরও কোন ক্যাম্প দেখতে পেলাম না। দু’টি বালিকা কতগুলি ছাগল নিয়ে পাহাড়ে চড়াতে যাচ্ছিল। আমি নরম সুরে একটি বালিকাকে কাছে ডেকে প্রথমে তার নাম, বাপের নাম, গ্রামের নাম ও আশ-পাশের গ্রামের নামও জিজ্ঞেস করলাম। তার জবাব শুনে আমাদের অবস্থান এবং আমাদের গন্তব্যের দিক-নির্দেশনাও পেলাম।

গ্রাম থেকে ৫০০ মিটার দূরে সৈনিকদের পোস্ট। তাই গ্রামের ভিতরে প্রবেশ করে কমাণ্ডারের কাছে ফিরে এসে তাঁকে সকল বিষয়ে অবগত করলাম। সব কিছু শুনে তিনি বললেন, ‘যাও, প্রথমে গ্রামপ্রধানের সাথে দেখা করে কিছু খাবার যোগাড় করে নিয়ে আস।’

গ্রামপ্রধান বাড়ী ছিলেন না। তিনি গম ভাঙ্গানোর জন্যে পাশের গ্রামে গিয়েছেন। আমি তার ঘরের লোকদের কাছে খাবার চাইলে তারা আমাকে অল্প কিছু ভুট্টার রুটি দিয়ে বিদায় করতে চাইল। বুঝলাম, তিনি না এলে কাজ হবে না। তাই তাঁর আসার অপেক্ষা করতে লাগলাম। তিনি ফিরে আসলে তাকে সর্বকথা বুঝিয়ে বললাম।

আমরা কোথা থেকে এসেছি, পথে যে যুদ্ধ করতে হয়েছে এবং সাথীদের অবস্থা খুলে বলার পর তিনি গ্রাম থেকে দু’জন লোক আমাদের সাথে দিয়ে দিলেন। আমরা তাদের নিয়ে উপরে গিয়ে সাথীদের খুঁজতে লাগলাম।

আমাদের সাথে দু’জন অপরিচিত লোেক দেখে সাথীরা কোন সাড়া দিচ্ছিল । আমরা আওয়াজ দিয়ে বললাম, কোন ভয় নেই, এরা গ্রামের লোক। এ গ্রামের লোকেরা মুজাহিদদের সহযোগী।

অবশেষে কমাণ্ডার হাত তুলে ইশারায় আমাদের কাছে ডাকেন। পরে সাথীদের নিয়ে গ্রামে চলে আসি।

গ্রামের লোকজন আমাদের জন্যে ভাল খাবারের ব্যবস্থা করে। অনেকদিন পর পেট ভরে খেতে পেয়ে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলাম। খাওয়ার ফাঁকে ফাকে গ্রামের লোকজন আমাদের কাছে পথের খবর জানতে চাইল। আমাদের পথে সংঘটিত সকল ঘটনা শুনে তারা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। বলল, ‘আফগান মুজাহিদ বলেই আল্লাহ্ আপনাদেরকে এমন সহায়তা করেছেন।

যে পথ দিয়ে আমরা এসেছি, সে পথ সম্পর্কে তারা বলল যে, এ পথের দু’পাশে কয়েকশ সরকারী সৈন্যের পোস্ট। সব সময় এ পথে সৈন্যরা টহল দিয়ে ফিরে। নিরাপদে এ পথ পার হয়ে আসায় বিস্ময় প্রকাশ করল তারা।

নিকটেই সৈন্যদের পোস্ট। তাই গ্রামে বেশী সময় কাটানো বিপজ্জনক। তাছাড়া আমাদের নিরাপদ স্থানে পূর্ণ বিশ্রামেরও প্রয়োজন। তাই গ্রামের লোকেরা আমাদেরকে অন্য এক বস্তিতে পৌছিয়ে দিল।

ক্রেক ডাউনের মুখোমুখী

এখানে আমরা পৌছে আমাদের প্রথম গ্রুপের সাথীদের খবর নিলাম। ভাই ওমায়েরসহ অন্যান্য সাথীরা পরদিন আমাদের সঙ্গে মিলিত হল। তারা বলল,

মাত্র দু’দিন দু’রাতে তারা এ পথ অতিক্রম করেছে। অথচ, আমাদের লেগেছে টানা সাত দিন।

আমরা এখান থেকে আরও এক মাইল অতিক্রম করার পর কমাণ্ডার নাসরুল্লাহর শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ হয়ে পড়ায় তাঁকে শ্রীনগর নিয়ে যাওয়া হয়। মুহাম্মদ আসেম এবং মুহাম্মদ সাবেরও তার সাথে শ্রীনগর চলে যায়। আমি (আকরামুল্লাহ্) ও কারী আব্দুস শুকুর এখানেই থেকে গেলাম।

সকালে ঘুম ভাঙ্গতেই গ্রামের লোকজন এসে আমাদের ক্রেক ডাউনের খবর শোনাল। এটা আমার জীবনের প্রথম ক্রেক ডাউনের অভিজ্ঞতা। আমাকে অস্ত্র ছাড়া একজন সাধারণ মানুষের মত দুশমনদের সামনে দাঁড়াতে হবে, আমি একজন কাশ্মিরী, আমি কখনও ভারত সরকারের বিরুদ্ধে কোন কর্মকাণ্ডে অংশ নেইনি ইত্যাদি প্রমাণ করতে হবে।

মনে মনে ভাবলাম, এটা অসম্ভব। তারা আমাদেরকে চিনে ফেলবে। এছাড়া দুশমনদের গুপ্তচররা তো অতি সহজেই আমাদের চিহ্নিত করতে পারবে।

প্রথমে চেষ্টা করলাম ক্রেক ডাউন থেকে বের হওয়ার জন্যে। কিন্তু কোন রাস্তা খুঁজে পেলাম না। অগত্যা লাইনে দাঁড়িয়ে ‘সনাক্তি প্যারেডে’র অপেক্ষা করতে থাকি।

আমাদের জানা ছিল না যে, এই ক্রেক ডাউন শুধু আমাদের ধরার জন্যেই করা হয়েছে। এজন্যই আমরা কোন প্রস্তুতি নেইনি। আমাদের পরনে পাকিস্তানী সেলোয়ার-কোর্তা। তাতে রক্তের উপর ময়লা জমে কালো হয়ে গেছে। যে কেউ দেখলেই বুঝতে পারবে, এরা এ অঞ্চলের লোক নয়।

আমরা ঐ অবস্থায়ই জীপে বসা গুপ্তচরের সামনে দিয়ে কয়েকবার আসা যাওয়া করি। প্রতিবার যাওয়ার সময় আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেছি। আল্লাহ্ গুপ্তচরদেরকে যেন অন্ধ করে দিলেন। তিন হাজার লোকের লাইন থেকে তারা আমাদের একজনকেও খুঁজে পেল না। অথচ লাইনে দাঁড়ানো প্রতিটি লোক আমাদের আফগান মুজাহিদ বলে সম্বোধন করেছে।

মহিলারা যখন ঘর থেকে খাবার দিয়ে যেত, তখন তারা নিজেরা না খেয়ে ভাল অংশ আমাদের দিকে এগিয়ে দিত। একবার জামাতে নামাজ পড়ার পর পেছন থেকে এক লোক উচ্চস্বরে ইমাম সাহেবকে বলল, আমাদের সাথে যে বিদেশী মেহমান মুজাহিদরা আছেন, তাদের নিরাপত্তার জন্য দুআ করুন।।

ইমাম সাহেব বিশেষভাবে দুআ করেন। সকলে ‘আমীন’ ‘আমীন’ বলে সে দু’আয় অংশ নেয়।

আমরা দু’দিন ক্রেক ডাউনের অবরোধের মধ্যে ছিলাম। এ দু’দিনে মোট ছ’বার আমাদের গুপ্তচরের সম্মুখ দিয়ে হেঁটে যেতে হয়েছে। প্রতিবারই আমরা আল্লাহর কাছে দু’আ করতে করতে অগ্রসর হয়েছি। তাঁর বিশেষ রহমতে আমরা তাদের হাত থেকে রক্ষা পাই।

ক্রেক ডাউন তুলে নেয়ার পর সেনাদের গ্রুপকমাণ্ডার গ্রামের লোকদের একত্রে বসিয়ে ভাষণ দেয়। আমরাও তার ভাষণ শোনার জন্যে বসে যাই । ভাষণে সে বলল, আমরা জানতে পেরেছি, এ এলাকায় তিনজন আফগানী দুষ্কৃতিকারী এসে আশ্রয় নিয়েছে। দু’দিন তল্লাশী অভিযান চালিয়েও তাদেরকে ধরতে পারলাম না। এর আগেই তারা পালিয়ে গেছে। এখন আপনাদের এলাকায় কোন দুষ্কৃতিকারী নেই।

সে আরও বলল, আমরা দুষ্কৃতিকারীদের চেহারা দেখলে চিনতে পারি। আমাদের সিপাহীরা যখনই কোন এলাকায় ক্রেক ডাউন করেছে, সেখানের দুষ্কৃতিকারীদের ধরে ফেলেছে।

কর্নেলের কথা শুনে আমরা মনে মনে তার আহম্মকির জন্যে হাসলাম। ভারত সরকার ও তার সিপাইরা নিজেদের উপর এরূপ মিথ্যা আত্মবিশ্বাসই পোষণ করে থাকে। তাদের পায়ের তলা থেকে যে মাটি সরে যাচ্ছে, সে ব্যাপারে তাদের কোনই খবর নেই।

ক্রেক ডাউন শেষে কর্নেল হাসিমুখে জীপে চড়ে বিদায় নিল। এবার আমাদেরও হুঁশ ফিরে এল।

এখানকার যুবকরা সাধারণতঃ প্যান্ট-শার্ট পরে এবং বৃদ্ধরা পরে সাদা রংয়ের জামা-পাজামা। তবে সকলের গায়ে ঢোলা কোর্তা চাপানো থাকে। প্রত্যেকের সাথে ছিল একটি করে কাংরি। কাশ্মীরের লোকেরা তীব্র শীত থেকে বাচার জন্যে একটি বিশেষ ধরনের পাত্রে গরম কয়লা রেখে শরীর ছেকে নেয়। এসব পাত্রকে কাশ্মিরীরা কাংরি’ বলে। তাদের গায়ের উপর মোটা অথবা পশমী কাপড়ের বিশেষ ধরনের ঢোলা কোর্তাটিকে তারা বলে ‘ফেরন।

ক্রেক ডাউন তুলে নেয়ার পর এলাকার নারী-পুরুষ ও শিশুরা আমাদের ঘিরে ধরে। মহিলারা নিজ নিজ বাড়ি থেকে নানা ধরনের সুস্বাদু পিঠা, নাড়ু আমাদের জন্যে নিয়ে আসে। এখান থেকে বিদায় নেয়ার আগে গ্রামের সকল লোক এসে মোবারকবাদ জানিয়ে আমাদের হেফাজতের জন্য দু’আ করে।

আমরা এখান থেকে সোজা শ্রীনগর পৌছে কমাণ্ডার নাসরুল্লাহ মনসুরের সাথে মিলিত হই। কমাণ্ডার সাহেবের পায়ের ব্যথা বেশী হওয়ার কারণে লাগাতার বিশদিন একটি ঘরে থাকতে হয় তাকে।

সাবের ভাইয়ের হাত বরফে অবশ হয়ে গেছে, সে এখনও ঠাণ্ডা পানি ধরতে পারে না। আমি নিজেও একমাস ধরে বিছানায় পড়ে ছিলাম। ডাক্তাররা বলল, আমার পা কেটে ফেলতে হবে। আমি পা কাটাতে রাজী হলাম না। ভালো হওয়ার জন্যে আল্লাহর কাছে দু’আ করতে থাকি ‘হে আল্লাহ! আমি এখানে এসেছি তোমার পথে জিহাদ করে মজলুম কাশ্মিরী মা-বোনদের ইজ্জত বাঁচাতে। পা কেটে ফেললে জিহাদ করব কী করে! তুমি আমার পা ভালো করে দাও।

এখানে আমি এক মুজাহিদের ঘরে আশ্রয় নিয়েছিলাম। তারা আমার যে খেদমত করেছে, তার ঋণ কোনদিনই কিছু দিয়ে শোধ করা যাবে না। যদি আমি নিজের ঘরেও থাকতাম, তাহলেও এমন খেদমত পেতাম কিনা সন্দেহ। আল্লাহ তাদেরকে উত্তম প্রতিদান দান করুন।

তাঁরা দিনে কয়েকবার লেবুর পানি দিয়ে আমার পা ধুইয়ে দিত। আর যখন যা প্রয়োজন হত, সাথে সাথে তা উপস্থিত করত। আমার মনে হয়, ওই লোকদের এখলাস ও খেদমতের বিনিময়ে আল্লাহ আমার পাটা সম্পূর্ণ ভালো করে দিয়েছেন।

কমাণ্ডার নাসরুল্লাহর পায়ের জখম মোটামুটি ভালো হওয়ার পর পুরনো মুজাহিদদের একত্রিত করে পরামর্শ করলেন। এখান থেকে আমরা অন্যস্থানে চলে গেলাম। পুরাতন ট্রেনিং সেন্টারের স্থান পরিবর্তন করে ডোডা জেলার সুউচ্চ পর্বতমালার পাদদেশে নতুন ট্রেনিং সেন্টান স্থাপন করা হল।

আক্রমণের পরিকল্পনা

কমাণ্ডার নাসরুল্লাহ জীবনের এক দীর্ঘ সময় যুদ্ধের ময়দানে অতিবাহিত করেছেন। যুদ্ধ তার কাছে ছেলে খেলার মত। তিনি প্রায়ই বলেন, “আমরা খেলা মনে করে লড়াই করি ঘুর্ণিঝড়ের আবর্তের সাথে।

সকাল-সন্ধ্যা ভারতীয় সৈন্যদের রাস্তায় অবাধ চলা-ফেরা ও বাজারে তাদের নিশ্চিন্তে ঘোরাঘুরি করতে দেখে তার রক্ত গরম হয়ে উঠে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দুশমনের রক্তে হোলি খেলার জন্যে ব্যাকুল হয়ে উঠে তার মন।

তিনি সকাল-সন্ধ্যা ঘুরে ঘুরে এলাকা সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করতে থাকেন। অভিজ্ঞ সাথীদের একত্রিত করে রোজই পরামর্শ করতে থাকেন। অবশেষে প্রস্তুতি সম্পূর্ণ হলে আমাদেরও অপেক্ষার দিন শেষ হয়ে এল। স্থির হল, যেহেতু এখানকার সকলে আমাদের আফগান মুজাহিদ বলে জানে, সেহেতু প্রথম হামলায়ই সফল হয়ে তাদেরকে আরো আশান্বিত করে তুলতে হবে । ভারতীয় সৈন্যদের মধ্যে ত্রাস সৃষ্টি করতে হবে, যেন তারা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে প্রতিশোধ নেয়ার সাহস হারিয়ে ফেলে।

সফল অপারেশন

অভিজ্ঞ মুজাহিদদের সাথে পরামর্শ করে লাগাতার কয়েকদিন খবরাখবর নেয়ার পর কাজীগুণ্ড ও টুল পোস্টের মধ্যবর্তী রাস্তায় টহলদার সৈন্যদের উপর হামলা করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হল। প্রতিদিন বাইশজন করে সৈন্য মহাসড়ক হেফাজতের জন্যে এ পথে টহল দিত।

অতি ভোরে আমরা রাস্তার কিনারায় মোর্চা বানিয়ে ওঁত পেতে বসে গেলাম । আমরা মোট বারজন মুজাহিদ দুই গ্রুপে সমান বিভক্ত হয়ে পজিশন নিয়ে দুই স্থানে বসে রইলাম।

মোর্চায় পৌছার আগে কমাণ্ডার নাসরুল্লাহ কয়েকবার ঘাড় বাকিয়ে হামলা করার কৌশল রপ্ত করেন। আমরা সকলে নিজ নিজ অবস্থানে বসে শিকারের অপেক্ষা করতে থাকি। আমি ছিলাম দ্বিতীয় গ্রুপে।

১৯৯৩ সনের ৩০ শে জানুয়ারী। রাস্তার আশেপাশে হালকা বরফ জমে আছে। সূর্যোদয়ের পর একজন মেজরের নেতৃত্বে ছয়জন সৈন্যের প্রথম দলটা সামনের দিকে অগ্রসর হয়। আমাদের সকলের সামনের মোর্চায় ছিল মুজাহিদ মুহাম্মদ খালেদ। কমাণ্ডার তাকে আগে-ভাগে গুলী ছুড়তে নিষেধ করে দেন। তাকে বলে রেখেছেন, ‘দুশমনরা পুরোপুরি রেঞ্জের মধ্যে পৌঁছে গেলে আমি সম্মুখ থেকে প্রথমে গুলী করব। এরপর তুমি পেছন থেকে গুলী চালাবে, যাতে কেউ পালিয়ে যেতে না পারে।

যখন সৈন্যরা মুজাহিদদের একদম কাছে পৌছে যায়, তখন একজন সৈন্য মেজরকে থামিয়ে বলে, “স্যার, বরফের উপর পায়ের চিহ্ন দেখা যাচ্ছে । সাবধানে চলা উচিত, কোন দুষ্কৃতিকারী ওঁত পেতে থাকতে পারে।’ মেজর তার অধীন সাধারণ সিপাহীর কথায় কর্ণপাত না করে বলল, এখানে কোন দুষ্কৃতিকারী আসার সাহস পায় না। কোন ভয় নেই এখানে।

এরা তখন পুরোপুরি আমাদের রেঞ্জের মধ্যে এসে গিয়েছিল। পায়ের নিশানা দেখে ফিরে যেতে চাইলেও তাদের শেষ রক্ষা হত না।

মেজর সকলের আগে, তার পেছনে একই লাইনে বাকি পাঁচজন সৈন্য অগ্রসর হচ্ছে। তারা নিশ্চিন্ত মনে হেঁটে কমাণ্ডার নাসরুল্লাহর সামনে গিয়ে পৌছতেই তিনি উচ্চ কণ্ঠে ‘হল্ট’ বলে উঠলেন।

মেজর যেন কিছুই বুঝতে পারল না। চলতেই থাকে সে। এবার কমাণ্ডার আরও জোরে হল্ট’ বলে উঠলেন। তার প্রচন্ড গর্জন পাহাড়ের চূড়ায় প্রতিধ্বনিত হয়ে সমগ্র উপত্যকা জুড়ে অনুরণিত হল।

এবার মেজরের টনক নড়ে। সে নিজের ক্লাসিকোভ বোল্ড করে নাসরুল্লাহর প্রতি গুলী বর্ষণের চেষ্টা করে। নাসরুল্লাহর ক্লাসিকোভ আগে থেকেই প্রস্তুত; ট্রিগারে আংগুল দিয়ে একটু চাপ দিতে যা দেরী।

আঙ্গুলের সামান্য ছোঁয়া পেতেই ঝাকে ঝাকে গুলী বেরিয়ে মেজরকে ঝাঁঝরা করে দিয়ে যায়। কমাণ্ডারের অস্ত্র গর্জে উঠতেই বাকী পাঁচজন মুজাহিদের ক্লাশিনকোভ থেকেও অগণিত গুলী বের হতে শুরু করে।

দেখতে না দেখতে ছয়জন ভারতীয় সৈন্য ধূলায় গড়াগড়ি খেতে লাগল। মুজাহিদরা ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনি দিয়ে রাস্তায় নেমে এসে সৈন্যদের অস্ত্র, ক্যাপ। ও ব্যাজ নিয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে চলে যায়।

মুজাহিদদের কোনই ক্ষতি হল না। উপরন্তু গনীমত হিসেবে বেশ কিছু আধুনিক অস্ত্র মুজাহিদদের হস্তগত হয়।

টহলদার বাকী ষোলজন সৈন্য জীপে করে টুলপোস্ট গিয়েছিল। যাওয়ার সময় তারা জীপ থেকে এ সৈন্যদের পথে নামিয়ে দিয়ে যায়। এদের পরিণতি সম্পর্কে ঐ সৈন্যদের কিছুই জানা ছিল না।

ডিউটি শেষে তাদের তুলে নেবার জন্যে জীপগুলি এসে ঠিক সেইখানে এসে দাঁড়ায়। জীপের স্টার্ট বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে আমাদের অস্ত্রগুলো আবার গর্জে ওঠে। গোলাগুলীর শব্দ শুনে ড্রাইভার দ্রুত গাড়ী চালিয়ে পালিয়ে যায়। আমাদের গুলীতে তিনজন সৈন্য নিহত ও তেরজন আহত হয়।

মোট নয়জন নিহত ও তেরজন আহত হওয়ায় এলাকার সৈন্যরা ভীষণ ভয় পেয়ে যায়। রাস্তায় টহল বন্ধ করে দেয় তারা। এলাকার কোন গ্রামে ক্রেক ডাউন করা থেকেও বিরত থাকে।

এলাকার সেনাপ্রধান একজন অসামরিক লোকের মারফত নাসরুল্লাহ মনসুরের কাছে একটি চিঠি পাঠায়। চিঠিতে সে লেখে, আপনারা আমাদের সাথে সংঘাতে লিপ্ত হওয়া থেকে বিরত থেকে অন্য জায়গায় কাজ করুন, আমরা আপনাদেরকে কিছুই বলব না।’

কমাণ্ডার নাসরুল্লাহ মনসুর চিঠির জবাবে লিখে দেন ‘এত তাড়াতাড়ি হিম্মত হারানো ঠিক নয়, আসল খেলা তো শুরুই হয়নি। বাহাদুর মুজাহিদের আকাঙ্খা, তারা তাদের দুশমনদের সাথে সামনা-সামনি লড়াই করবে। আপনারা কাশ্মীর ছেড়ে চলে যান, তাহলে অন্ততঃ কাশ্মীর প্রশ্নে আমরা আপনাদের প্রতি একটি গুলীও ছুড়ব না।’

দিক-নির্দেশনামূলক ভাষণ

হামলার পর কমাণ্ডার সকল মুজাহিদকে একত্রিত করে সুশৃঙ্খলভাবে আক্রমণ পরিচালনার জন্যে তাদের ধন্যবাদ জানালেন। তিনি বললেন, ‘আমরা যখনই কোন আক্রমণের লোগাম তৈরী করি, সর্বপ্রথম এ চিন্তা করি যে, যদি বিজয় লাভ করতে না পারি, তবে কোথায় গিয়ে আশ্রয় নেব। এ ধরনের চিন্তা করাটাও একরকম দুর্বলতা। এ ধরনের চিন্তা খুব বেশী ফলদায়ক হয় না । আমরা যদি তারিক বিন যিয়াদের মত গাজী হওয়ার কিংবা শাহাদাতের তামান্না নিয়ে আক্রমণ করি, তবে অতি স্বল্প ও সাধারণ অস্ত্র নিয়েও আমরা দুশমনের বড় বড় ঘাঁটির উপর বিজয় লাভ করব।

দুশমনের সাথে আমাদেরকে এ প্রত্যয় নিয়ে লড়তে হবে যে, তাদের প্রত্যেককে খতম করে তবে আমরা ক্ষান্ত হব। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে, আমাদের আক্রমণের ফলে, সাধারণ মুসলমানদের যেন কোন ক্ষতি না হয়। আমরা কোন গ্রাম বা বস্তি থেকে সৈন্যদের উপর আক্রমণ চালাব না। এতে সৈন্যরা ক্ষিপ্ত হয়ে সাধারণ মানুষের উপর প্রতিশোধ নেবে।

আমরা আক্রমণের পর কোন মহল্লায়ও আশ্রয় নেব না। এতে ক্রেক ডাউন বসানোর ফলে এলাকাবাসীর উপর চরম দুর্ভোগ নেমে আসার চেয়ে আমরা সৈন্যদের পাহাড়-জংগলে ব্যতিব্যস্ত করব। যুদ্ধ এখন শহর ছেড়ে ময়দানে হবে। যদি শহরের কোন বাংকারে আমাদের আক্রমণ চালাতে হয়, তবে এমনভাবে পরিকল্পনা তৈরী করতে হবে, যাতে ব্রাশ ফায়ারে একটি সাধারণ লোকও গুলীবিদ্ধ না হয়।’

আফগান জিহাদের উদাহরণ দিয়ে কমাণ্ডার পাহাড় ও ময়দানের জিহাদের কৌশল সম্পর্কে আলোচনা করতে থাকেন। তিনি আমাদের বলেন, “বিজয়ের পর কেউ যেন গর্বিত না হয়। আমাদের বিজয় মহান আল্লাহর বিশেষ রহমতের জন্যে হয়। অতএব, যত বিজয় আসবে, তত বেশী করে তাঁর শুকরিয়া আদায় করবে। শেষ রাতে সেজদায় লুটিয়ে আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করবে।

মুসলমানদের কামিয়াবী ও বিজয় একমাত্র আল্লাহর সাহায্যের উপর নির্ভরশীল। অর্থ, শক্তি ও সম্পদে সোভিয়েত ইউনিয়ন কারো থেকে পিছিয়ে ছিল না; কিন্তু আজ তার অবস্থা কত করুণ, অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা-ই এখন তার দায়।

তিনি ভারতীয় সৈন্য ও মুজাহিদদের তুলনা করে বলেন, ছয় লাখ ভারতীয় সৈন্যের মোকাবেলায় অল্প কিছু মুজাহিদ কোনই গুরুত্ব রাখে না। তাদের অত্যাধুনিক মারণাস্ত্রের মোকাবেলায় আমাদের কয়েকটি গুলী কী-ইবা করতে পারে? তাদের মাটির নীচের পাকা বাংকার আর আমরা ভোলা আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে আছি। আমাদের তো কোন অস্তিত্ব থাকার কথা নয়।

আমরা কোন নির্দিষ্ট ভূখন্ডের জন্যে লড়াই করছি না। আমাদের লক্ষ্য আল্লাহর এই বিশ্বে আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করা। আমরা শুধু কাশ্মীরকে স্বাধীন করে ক্ষান্ত হব না। মাহমুদ গজনবীর দেশ থেকে বের হওয়া এ কাফেলা ক্রমে সোমনাথের দিকে অগ্রসর হবে। আমরা আবার হিন্দুদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, সুলতান মাহমুদের রক্ত তাঁর সন্তানদের শিরায় শিরায় প্রবাহিত রয়েছে। কাশ্মীরের এ লড়াই ভারত আযাদীর লড়াই। স্বাধীন কাশ্মীর হল স্বাধীন ভারতের সূচনা মাত্র।

হিন্দুস্থান মুসলমানদের দেশ। এদেশ শাসন করার অধিকার একমাত্র মুসলমানদেরই আছে। মুসলমানরা কখনও হিন্দুদের মত সাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে রাজ্য শাসন করেনি, করবেও না। বরং মুসলমানদের শাসনে সকল ধর্ম ও মতের মানুষ নিজ সন্তানের মত পালিত হয়েছে। জাত-পাতের ভেদাভেদ করে কারও উপর সামান্য অবিচার করা হয়নি। মুসলিম শাসনামলে বিধর্মীদের সাথে এমন উত্তম ব্যবহার করা হয়েছে যে, আজকের সভ্যতার দাবীদার ইউরোপ, আমেরিকাও তার কোন নজীর পেশ করতে পারবে না।

লক্ষ্যস্থল শ্রীনগর

আমাদের দ্বিতীয় টার্গেট শ্রীনগরের বুধরগীর (কাউডারাহ) বাংকারের উপর আক্রমণ করা। এ বাংকার মহাসড়কের উপর দু’টি গ্রামের মধ্যবর্তী এলাকায় খোলা ময়দানে অবস্থিত।

আমার নিয়ম অনুযায়ী এমন টার্গেট নির্ধারণ করা হয়েছে, যাতে সাধারণ লোকদের কোন ক্ষয়-ক্ষতি না হয়।

হামলার জন্যে এগারোজন মুজাহিদ নির্বাচন করা হয়। মুজাহিদ মুহাম্মদ আমেরকে কমাণ্ডারের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়।

বাংকারের কাছাকাছি পৌছে মুজাহিদরা একটি টিলার আড়ালে অবস্থান নিয়ে বাংকারের সৈন্যদের গতিবিধির উপর কড়া নজর রাখতে থাকে।

প্রচণ্ড রোদে সৈন্যরা বাংকারের মধ্যে বসে ছিল। একমাত্র পাহারাদার রাস্তার অপর পাশে রোদে বিছিয়ে দেয়া কম্বলগুলো উল্টিয়ে দিচ্ছিল।

নয়জন মুজাহিদকে টিলার উপর রক্ষণভাগে অবস্থানের জন্যে দাঁড় করিয়ে রেখে মাত্র দু’জন একটি মটর সাইকেলে চড়ে আক্রমণ করার জন্যে বাংকারের দিকে রওনা হয়।

রক্ষী তখন কম্বলগুলো তুলে রাস্তা পার হচ্ছিল। মটর সাইকেল চালক দ্রুত চালিয়ে সাইকেলটা তার গায়ের উপর উঠিয়ে দেয়। রক্ষী তাল সামলাতে না পেরে হুমড়ি খেয়ে পড়ে যায়। চালক সাইকেলটি রাস্তার পাশে দাঁড় করিয়ে রেখে তাকে হাত ধরে তুলে মাফ চাইতে থাকে। অপর মুজাহিদ এ ফাঁকে বাংকারে প্রবেশ করে গুলী চালিয়ে বাংকারে অবস্থানরত পাঁচজন সৈন্যকে গুলীবিদ্ধ করে। বাংকার থেকে বের হয়ে তার মধ্যে গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এতে গুলীবিদ্ধ সৈন্যরা মারা যায় ও বাংকারের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়।

এদিকে সাইকেলের নীচে চাপা খাওয়া আহত পাহারাদার মোকাবেলা করার জন্যে দাঁড়ালে তাকেও গুলী করে চিরতরে রাস্তার উপর শুইয়ে দেয়া হয়।

ছয়জন সৈন্যকে হত্যার করার পর আবার মোটর সাইকেলে চড়ে মুজাহিদ দু’জন পেছনের সাথীদের সাথে মিলিত হয় এবং কোন বাধা-বিপত্তি ছাড়াই তারা মারকাজে ফিরে আসে।

এ আক্রমণ মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে এমন সুশৃঙখলার সাথে সম্পন্ন। হয়েছে যে, দুশমনরা একটি গুলী ছোড়ারও অবকাশ পায়নি। এ আক্রমণের ফলে স্থানীয় জনসাধারণকেও কোন ক্ষয়-ক্ষতির শিকার হতে হয়নি।

মারকাজে ফিরে মুজাহিদরা আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় কর। তাদের এ আক্রমণে শুধু দুশমনরাই পরাজিত হয়নি, স্থানীয় জনসাধারণও অবাক হয়েছে। প্রথমবারের মত সাধারণ মানুষ দেখল যে, মুজাহিদরা এমন একটি সাফল্যজনক হামলা পরিচালনা করেছে, যাতে তাদের নিজেদেরও কোন ক্ষতি হয়নি এবং স্থানীয় লোকদেরও কোন বিপদের সম্মুখীন হতে হল না।

পুলিশ অফিসার হলেন মুজাহিদ

একদিন কমাণ্ডার আমাকে একটি গ্রামে পাঠালেন। সেখানের জনসাধারণ আমাদের অত্যন্ত মহব্বত করত এবং নানাভাবে আমাদের সহযোগিতায় হাত প্রসারিত রাখত। কমাণ্ডার বললেন, “ওখানে গিয়ে জিহাদের ফযিলত সম্পর্কে আলোচনা কর, যাতে লোকদের মধ্যে জিহাদের উদ্দীপনা আরও বৃদ্ধি পায়।

আমি লোকদের একত্রিত করে জিহাদের উপর আলোচনা শুরু করলাম। ঐ মজলিসে একজন পুলিশ অফিসার বসা ছিলেন। প্রথমে আমি জানতাম না যে, এই মজলিসে কোন সরকারী লোক উপস্থিত আছেন। আলোচনা শেষ হবার পর পুলিশ অফিসার আমাকে জিজ্ঞেস করেন, আপনার বাড়ি কোথায়?”

আমি বললাম, আমি এ এলাকার লোক নই, অন্য এলাকা থেকে এসেছি।

তিনি আমাকে আলাদা একটি ঘরে নিয়ে গিয়ে অনেক কথা বললেন। আমিও তাকে অনেক প্রশ্ন করলাম। জবাব শুনে তাকে বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হল। তার হৃদয়ে মুজাহিদদের প্রতি মহব্বত ও কাশ্মিরীদের আযাদীর প্রতি আন্তরিকতা আছে বলে উপলব্ধি করলাম।

তিনি বললেন, আপনার কথা-বার্তা ও চেহারা-সুরত দেখে কাশ্মিরী বলে মনে হয় না। আমি আজ পর্যন্ত জিহাদের উপর এত সাহসী বক্তব্য দিতে কাউকে দেখিনি। আপনার এত বড় হিম্মত কিভাবে হল?”

পরে তার উপর আমি পুরোপুরি আস্থাশীল হলে আমার সঠিক পরিচয় দিয়ে তাকে বললাম, আমি আফগানী।

তাকে প্রশ্ন করলাম, আপনি একজন সরকারী লোক, উপরন্তু পুলিশে চাকুরী করেন; তা সত্ত্বেও মুজাহিদদের প্রতি আপনার এত সহানুভূতির কারণ কি?

আমার প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন, আমার মনে মুজাহিদদের প্রতি এত দয়া হত না, যদি এমন একটা ঘটনা আমি না দেখতাম, যার কারণে আমার মধ্যে আমূল পরিবর্তন এসেছে। আমি তখন থেকে মুজাহিদদেরকে খোঁজ করছিলাম। সিদ্ধান্ত নিলাম, তাদেরকে পেলেই পুলিশী পোষাক ফেলে দিয়ে তাদের সাথে মিলিত হয়ে জিহাদে অংশ নেব।

নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে পাকিস্তান থেকে একদল মুজাহিদ কাশ্মীরে প্রবেশ করে। পথে এরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। এক গ্রুপ আগে পৌছে যায়, অন্য গ্রুপ পেছনে থেকে যায়। পেছনের গ্রুপকে ইণ্ডিয়ান সৈন্যরা ঘিরে ফেলে। তাদের নির্মূল করার জন্যে সৈন্যরা সর্বশক্তি নিয়োগ করে। গ্রেনেড, ক্লাসিকোভ ও রকেটলাঞ্চারের অগণিত গোলা নিক্ষেপ করে তাদের উপর। কিন্তু তারা বীরত্বের সাথে লড়তে থাকে। ইণ্ডিয়ান সৈন্যদের মর্টার তোপের হাজারো গোলা বর্ষণের মুখেও এরা যুদ্ধ থেকে নিবৃত্ত হল না।

অবশেষে হেলিকপ্টার নিয়ে এসে তাদের উপর মেশিনগান দ্বারা বৃষ্টির মত গুলী বর্ষণ করা হয়। এ মুজাহিদরা দুই দিন দুই রাত অবিরাম লড়াই করে সকলে শাহাদাত বরণ করেন। তাদের কেউ-ই জীবন বাঁচাবার জন্যে আত্মসমর্পণ করেনি।

একজন মুজাহিদ পাথরের নীচে লুকিয়ে ছিল। ইণ্ডিয়ান সৈন্যরা পাথরের উপরে উঠে তার উপর গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। আশ্চর্যের ব্যাপার হল, যুদ্ধ শেষ হবার পর সেখানে ঐ মুজাহিদের ফটো পাওয়া গেছে, কিন্তু তার লাশ পাওয়া যায়নি।

যদিও এরা সকলে নিহত হয়েছে, কিন্তু দুই দিন পর্যন্ত এদের বীরত্বপূর্ণ লড়াই দেখে ভারতীয় সৈন্যরা অবাক হয়ে যায়। সৈন্যরা পুলিশকে ওদের লাশ উঠিয়ে নেয়ার জন্যে খবর পাঠায়। ভারতীয় সৈন্যরা কোন মুজাহিদকে শহীদ করতে পারলে তার লাশ পুলিশের মারফত নিজ এলাকায় পৌছিয়ে দেয়, যাতে করে স্থানীয় জনসাধারণ লাশ দেখে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে নিজ নিজ সন্তানদেরকে জিহাদে যাওয়া থেকে বিরত রাখে।

মুজাহিদদের এ গ্রুপের বীরত্বপূর্ণ লড়াইয়ের খবর সেনাবাহিনী ও পুলিশদের মধ্যে ব্যাপক আশংকা ও ভীতির সঞ্চার করে। সর্বত্রই মুজাহিদদের সাহস ও হিম্মতের কথা আলোচিত হতে থাকে। সফরের অবস্থায় ইতিপূর্বে কখন্ও কোন গ্রুপের এত সফল আক্রমণের ইতিহাস কাশ্মীরে এটাই মনে হয় প্রথম। সব চেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হল, তারা সম্পূর্ণরূপে ভারতীয় সেনাদের বেষ্টনির মধ্যে থেকেও কেউ আত্মসমর্পণ করেনি।

পুলিশ যখন তাদের লাশ নিয়ে উপত্যকায় আসে, তখন সৈন্য ও পুলিশের বিপুলসংখ্যক সদস্য তাদের লাশ দেখার জন্য একত্রিত হয়। আমিও এ খবর পেয়ে লাশ দেখার জন্যে ওখানে যাই। কয়েকদিন অতিবাহিত হওয়ার পরও লাশগুলি তরতাজা ছিল। একজন নওজোয়ান- যার মাথায় লম্বা লম্বা চুল ছিল, দেখতে অনেকটা আফগানী বলে মনে হচ্ছিল- তার মাথায় দু’টি গুলী বিদ্ধ হয়েছিল। তার লাশ থেকে বের হওয়া রক্তের খুশবুতে সমগ্র এলাকা বিমোহিত হয়ে পড়ে।

এখানকার লোকজন নানাভাবে তাদের সাহস ও বাহাদুরীর প্রশংসায় মেতে উঠে। পাশে দাঁড়িয়ে লাশ দেখার পর আমার নিজের মধ্যেও বিরাট এক পরিবর্তন লক্ষ্য করি। আমি তখনই বিশ্বাস করে নেই, একে যুদ্ধ বলা যায় না; বরং একেই বলে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ’। এ কেবল কাশ্মীরের আযাদীর আন্দোলন নয়, এতে ইসলামের বিজয়ের আন্দোলন।

অতএব, আমি স্থির করেছি, যারা এ গ্রুপ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আগেই যথাস্থানে পৌঁছে গেছে, আমি তাদের তালাশ করে বের করবই এবং তাদের সাথে মিলিত হয়ে আল্লাহর পথে জিহাদে শরীক হব। আপনি তো আফগান মুজাহিদ, যদি আপনি এদের কোন সন্ধান আমাকে দিতে পারেন, তবে আপনার মঙ্গলের জন্যে চিরদিন আমি দুআ করব।’

এ সময় পুলিশ অফিসার তাঁর পূর্ণ পরিচয় আমাকে দেন। তাঁর বাড়ির ঠিকানাও জানালেন। যে এলাকায় তার বাড়ী ঐ এলাকা সম্পর্কে আমার পরিপূর্ণ ধারণা ছিল। তিনি কোন কথা গোপন না রেখে সবকিছুই আমাকে বলল । সত্যিই তিনি ওই মুজাহিদদের খোঁজ করছিল।

আমি তাকে বললাম, আমি সেই গ্রুপেরই একজন সাধারণ মুজাহিদ।

আমার কথা শুনতেই তিনি বড় বড় চোখে আমার দিকে তাকান এবং দাঁড়িয়ে আমাকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কাঁদতে শুরু কর। এরপর তিনি আমার প্রতিটি কথা অবাক হয়ে শুনতে থাকেন।

আমি তাকে বললাম, সেই কাফেলার সবাই শহীদ হননি। সাতজন শহীদ হয়েছেন এবং বাকী আটজন বেষ্টনি থেকে জীবিত বের হয়ে এসেছেন।

তিনি বললেন, কিন্তু লাশ তো পাওয়া গেছে আটটা’!

এবার বুঝতে পারলাম, আমাদের যে গাইডকে ওরা ধোকা দিয়ে গ্রেফতার করেছিল, তাকেও ওরা শহীদ করে দিয়েছে। আমি বললাম, আপনি যে চুলওয়ালা মুজাহিদের কথা বলছেন, তাঁর নাম মাজরুহুল ইসলাম।

তিনি আবার বললেন, ভারতীয় সৈন্যদের বিশ্বাস, সেখান থেকে কেউ জীবিত ফিরে যেতে পারেনি। তারা এদেরকে তিন লাইনে বেষ্টন করে রেখেছিল।

তিন লাইন অতিক্রম করে কারও পক্ষে বের হয়ে যাওয়া একেবারেই অসম্ভব। তবে তাদেরকে অবাক হতে হয়েছে এই দেখে যে, মুজাহিদরা সবাই তাদের লাশের হেফাযতের জন্যে পাশে মাইন বিছিয়ে রেখেছিল, যার বিস্ফোরণে দু’জন সৈন্য নিহত হয়েছে।

তারা আরও আশ্চর্যান্বিত হয়েছে এই দেখে যে, এক সৈন্য পাথরের নীচে এক মুজাহিদকে গ্রেনেড মেরে হত্যা করেছিল। কিন্তু পরে সেখানে তার ফটোসহ কার্ড পাওয়া গেছে; কিন্তু তাঁর লাশ বা অস্ত্র কিছুই পাওয়া যায়নি। তার ফটো নিয়ে ইণ্ডিয়ান সৈন্যরা শিকারী কুকুর দিয়ে অনুসন্ধান চালিয়েছে; কিন্তু কোথাও তার লাশ পাওয়া যায়নি। জানি না, তাকে মাটি খেয়ে ফেলেছে না আসমানে তুলে নেয়া হয়েছে।’

আমি হাসতে হাসতে বললাম, না, তাকে মাটিও খেয়ে ফেলেনি আকাশেও তুলে নেয়া হয়নি। সে এখন আপনার সামনেই বসে আছে। আমি তখন যখম ও পা পুড়ে যাওয়ার দাগ দেখালাম, যার উপর তখনও পট্টি বাধা ছিল।

তিনি আবার আমাকে বুকে চেপে ধরে বার বার চুমু খেতে থাকেন এবং শিশুর মত কাঁদতে শুরু করেন। তিনি বললেন, আর আমি পুলিশের ডিউটিতে যাব না। আমি আপনাদেরই খোঁজ করছিলাম। আপনাদের পেয়ে গেছি। এখন আপনাদের সাথে মিলে জিহাদ করব।’

আমি তাকে বললাম, আপনি চাকুরী ছাড়বেন না, চাকুরীতে থেকেও আপনি অনেক সহযোগিতা করতে পারেন।

আমার কথার অর্থ তিনি বুঝতে পেরে ঠিক করলেন, পুলিশের মধ্যে থেকে শত ঝুঁকির মধ্যেও তিনি মুজাহিদদের সহযোগিতা করবেন। ঐ পুলিশ অফিসার আরও বললেন যে, ঐ যুদ্ধে ঘটনাস্থলে ২৬ জন সৈন্য নিহত হয়েছে এবং ১০ জন মারাত্মক আহত হয়ে হাসপাতালে মারা গেছে।

অবশেষে তাঁর সাথে ওয়াদা করলাম, শীঘ্রই এমন একজন মহান কমাণ্ডারের সাথে আপনার পরিচয় করিয়ে দেব, যিনি বাকী সাথীদের শুধু ভারতীয় সৈন্যদের ঘেরাও থেকে বের করে উপত্যকায়ই পৌছিয়ে দেননি, পরবর্তিতে বড় বড় যুদ্ধে ভারতীয় সৈন্যদের পরাজিতও করেছেন। এ কথা শুনেই তিনি কমাণ্ডারের সাথে মিলিত হওয়ার জন্যে ব্যাকুল হয়ে উঠেন।

অধ্যায় ১ / ৪

সকল অধ্যায়

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন