নিয়ম – বেন বোভা

রণেন ঘোষ

নিয়ম – বেন বোভা

না–যেমন তেমন গবেষণা নয়… অরগানাইজড বা সংঘবদ্ধ গবেষণা। ঘুরন্ত চেয়ারে বসে কথাগুলো বললেন গোরম্যান।

কস্ট-টাইম অ্যানালিস্ট হোপলার ঘাড় দুলিয়ে সায় দিলেন।

আরও পরিষ্কার করে বলতে গেলে বলা উচিত সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টা এবং সন্তর্পণ নিয়ন্ত্রণ… এই হল মূল কথা… আর এইসব প্রচেষ্টা আর নিয়ন্ত্রণ হয় সম্পূর্ণ ওপর থেকে। এরই জন্যে এত ভালো ফল পাওয়া যায়। বিজ্ঞানীদের নিজ নিজ পদ্ধতিতে গবেষণা করার সুযোগ দিলে আর দেখতে হবে না… যত সব অপ্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে গবেষণা করে দিস্তে দিস্তে রিপোর্ট তৈরি করবে। কী সব বিষয়বস্তু! প্রজাপতির বংশবৃদ্ধি পদ্ধতি ও পারিপার্শ্বিকতা অথবা সাব-অ্যাটমিক পার্টিকেলের গুণগত উৎকর্ষ এবং আর উপকারিতা… এমনি সব উদ্ভট উদ্ভট গবেষণা!

টেবিলের সামনে চেয়ারে বসে ওঁরই মতে মত দিলেন হোপলার। মিনমিন করে বললেন, কিন্তু আজকের সমস্যার সঙ্গে এই সব—

দেখুন, সকলের সঙ্গে সকলের সম্পর্ক আছে। এই যে গাদা গাদা ফাইল আর রিপোর্ট নিয়ে আপনি চলে এলেন এর ফলশ্রুতি কী হতে পারে তা ভেবেছেন একবার? টেবিলের ওপরে থাক দেওয়া ফাইলগুলো দেখিয়ে বলে উঠলেন গোরম্যান।

আমার তো মনে হয়, এতটা ভেবে আসেননি। আপনি শুধু গণিতের সমস্যার যোগবিয়োগ ইত্যাদি ইত্যাদিতে রিপোর্ট ভরতি করেছেন? কখনও কি মানুষ সম্বন্ধে ভেবেছেন? ভেবেছেন কি বিশেষ কোনও মানুষের নাম, সমষ্টিগত অভিপ্রায়… ধারণা? এসব তো আপনার ক্যালকুলেশনে আসবে না!

নিদারুণ অস্বস্তিতে পড়ে গেলেন হোপলার। একটু কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলে উঠলেন, আমার কাজ তো অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ। ব্যক্তিগত বিষয়ের গুরুত্ব দেওয়া তো সিস্টেম বিরুদ্ধ কাজ। তা ছাড়া

–যতটা বলছেন ঠিক ততটা নয়। গবেষণা তো মানবজাতির কল্যাণের জন্যে… সেইজন্যেই

-–যাক, এখন তো ওসব মিটে গেছে। আজকে আমার আসার উদ্দেশ্য হল… মানে আমি জানতে চাই, সমস্ত ব্যুরো জুড়ে যে গুজব তোলপাড় করছে…

–প্রতিকার বিষয়ে তো? যা রটেছে তা একশো ভাগ সত্যি। ম্যাজিকের মতো প্রতিকার। অবশ্য বিশদভাবে কিছু বলতে পারব না। তারপর একটু মাথা চুলকিয়ে বললেন, ব্যাপারটা হল রিপ্রেসিভ মলিকিউল বা উৎপীড়ক অণুগুলো যথার্থ প্রয়োগরীতি নিয়ে… ক্যানসারে আক্রান্ত কোষগুলোর প্রতিরোধক্ষমতা থাকে না… সেজন্যে আমাদের সঙ্গে বায়োকেমিস্টদের যৌথ প্রচেষ্টায় উৎপীড়ক অণুগুলোকে ক্যানসারগ্রস্ত কোষে যোগ করার প্রযুক্তি আজ আমাদের করায়ত্ত। এটা করার ফলে ক্যানসারগ্রস্ত সেল আর বৃদ্ধি পায় না। ক্যানসারকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। স্বাভাবিকভাবেই রুগি সুস্থ হয়ে ওঠে। আমরা এখন সাফল্যের সঙ্গে এর ব্যবহার করতে পারি।

–এ তো দারুণ খবর… একেবারে অলৌকিক ব্যাপার?

মোটা ভ্রূ-দুটো কুঁচকে উঠল গোরম্যানের। বিরক্তির সুরে বলে উঠলেন, এর মধ্যে আবার অলৌকিকত্ব কী দেখলেন? বুঝি না, মানুষ কেন যে যে কোনও ভালো ফলাফলকে অলৌকিক বলে দাবি করে! বরং ক্যানসার রোগটাকেই কেন অলৌকিক বলা হয় না… ওটাকে অলৌকিকই বলা উচিত।

কোনও কিছু বলার চেষ্টা করেও হোপলার কিছু না বলা ঠিক মনে করলেন।

-–ঠিক আছে.. আপনার দুঃখ পাওয়ার কিছু নেই। আপনার বিশ্লেষণই রীতিমতো বিস্ময়কর… সারা দেশ জুড়ে সমস্ত জনগণের মধ্যে কত সহজে যে প্রতিকারের কাজ করা যায় সেটা আপনার রিপোর্টে সুন্দরভাবে বোঝানো আছে। এগুলো চালু করতে যে বিশাল কিছু অর্থের দরকার তাও নয়। খুব যে প্রশিক্ষণ পাওয়া লোকেদের প্রয়োজন এমনও নয়। এই সমস্ত বিচারে আপনার বিশ্লেষণ রীতিমতো বাস্তবসম্মত।

–তাহলে সারা বিশ্বজুড়ে ক্যানসার প্রতিরোধ এবং প্রতিকারের কাজ শুরু করে দেওয়া হোক। বেশ উত্তেজিতভাবে বলে উঠলেন হোপলার।

–না… সেটা করা সম্ভব নয়।

–কী বললেন? আমি তো কিছুই বুঝলাম না… আমার রিপোর্ট তো…

–হ্যাঁ হ্যাঁ… বলছি তো বিশ্লেষণটা খুবই ভালো… অবশ্য এমন বিশ্লেষণ আরও জমা পড়েছে। সিস্টেম সব কিছুই বিচার বিবেচনা করে দেখছে.. এই সিস্টেমই কিছুদিন আগে স্ট্রোক, হার্ট ডিজিজেস-এর মতো মারাত্মক অসুখ সম্পূর্ণ নির্মূল করেছে। শুধু কি তাই? এ ছাড়াও রাস্তায় চলার পথে দুর্ঘটনাও সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করা হয়েছে… এসব তো সিস্টেমেরই কাজ!

তাই তো বলছি ক্যানসারের মতো মারাত্মক রোগটাকেও তাহলে নির্মূল করা হোক।

–না… মোটেই তা নয়। ক্যানসার যেমন ছিল তেমনই থাকবে। জনসংখ্যার বৃদ্ধির হারটাই এত বিপজ্জনকভাবে বেড়ে যাচ্ছে যার ফলে রোগ প্রতিকারের সব ভাবনা চিন্তাই বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া আর কোনও পথ নেই। সারা পৃথিবীর পারিপার্শ্বিক অবস্থাটার কথা একবার ভাবুন। মারাত্মক সব অসুখবিসুখ না থাকায় মৃত্যুর হার হু হু করে কমে যাচ্ছে। বিপরীতে একই হারে বেড়ে চলেছে জনসংখ্যা। এর পর যদি ক্যানসারকেও খারিজ করে দেওয়া হয়, তাহলে পৃথিবীর বুকে দুর্যোগ ঘনিয়ে আসবে। মানুষের ভিড়ে তিল ধারণের জায়গা থাকবে না– সেজন্যে একটা অন্তত মারাত্মক মারণব্যাধি থাক। ক্যানসারকে রোধ করা যাবে না– করা উচিতও হবে না।

স্তম্ভিত হোপলারের মুখ দিয়ে কথা সরে না। বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন কিন্তু, কিন্তু মানুষের কল্যাণের জন্যেই প্রতিকারের প্রয়োজন।

গোরম্যানও মাথা নেড়ে সায় দিলেন।

–আমিও তাই ভাবছি। কিন্তু সিস্টেমের বাইরে তো করার কোনও ক্ষমতা নেই… সিস্টেমের ঘোরতর আপত্তি। আপাতত তাই…

সকল অধ্যায়

১. রাখে হরি মারে কে – আইজাক আসিমভ
২. ভবিষ্যৎ – ডব্লিউ হিল্টন ইয়ং
৩. মানুষ এক ভিন্ন জীব – এলান ব্লচ
৪. গণিতজ্ঞ – আর্থার ফেল্ডম্যান
৫. ব্যাবসা – ম্যাক রেনল্ড
৬. চিড়িয়াখানা – এডোয়ার্ড ডি. হচ
৭. ডক্টর – হেনরি সেলসার
৮. অভিজ্ঞ – রবার্ট টি, কুরোসাকা
৯. আবিষ্কার – জর্জ আর আর. মার্টিন
১০. দেশপ্রেমিক – অ্যামব্রোস বিয়ার্স
১১. বাছাই – হেনরি সেলসার
১২. বিষের পেয়ালা – লি. কিলাও
১৩. শিকারিরা – ওয়াল্ট সেন্ডন
১৪. ক্রিকেট বল – অ্যাভ্রো ম্যানহাটান
১৫. অ্যাপয়েন্টমেন্ট – এরিক ফ্র্যাঙ্ক রাসল
১৬. রমণী – রবার্ট শেকলে
১৭. পুনরুজ্জীবন – ডান্নি প্লাচটা
১৮. অস্ত্র – ফ্রেডরিক ব্রাউন
১৯. বিজ্ঞানী – জিরাল্ড অ্যাটকিন্স
২০. ব্যবসায়ী – হেনরি সেলসার
২১. জেদি – স্টিফেন গোল্ডিন
২২. ওঁ – মার্টিন গার্ডনার
২৩. কে ভালো – রে রাসেল
২৪. চুলকানি দিয়ে শুরু – রবার্ট শেকলে
২৫. নিয়ম – বেন বোভা
২৬. প্রাগৈতিহাসিক এক ভোরের গল্প – জন, পি. ম্যাকনাইট
২৭. কিউব রহস্য – নেলসন বন্ড
২৮. অমনোনীত – কে. ডব্লিউ. ম্যাকান
২৯. এমন যদি হত – র‍্যালফ মিলনে ফারলে
৩০. হারানো সেই দিনের কথা – আইজাক আসিমভ
৩১. উত্তর – ফ্রেডরিক ব্রাউন
৩২. মানুষ ক্রীতদাস হবে – সিদ্ধার্থ নারলেকার
৩৩. প্রহরী – লরেন্স এস. জ্যানিফার
৩৪. একটি মর্মান্তিক মৃত্যু – সমরজিৎ কর
৩৫. আমি কে – অমিতানন্দ দাস
৩৬. এস্প – এইচ. জি. ওয়েলস
৩৭. নেপথ্যে – আর্থার সি. ক্লার্ক
৩৮. কিন্ডারগার্টেন – জেমস-ই-গান
৩৯. অমৃত – আর্থার সি. ক্লার্ক
৪০. পলাতক তুফান – জগদীশচন্দ্র বসু
৪১. টেলিপ্যাথদের জন্য সায়েন্স ফিকশন – ই. মাইকেল ব্লেক

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন