কাজী নজরুল ইসলাম
সুরের দুলাল
পাকা ধানের গন্ধ-বিধুর হেমন্তের এই দিন-শেষে,
 সুরের দুলাল, আসলে ফিরে দিগ্বিজয়ীর বর-বেশে!
 আজও মালা হয়নি গাঁথা হয়নি আজও গান-রচন,
 কুহেলিকার পর্দা-ঢাকা আজও ফুলের সিংহাসন।
 অলস বেলায় হেলাফেলায় ঝিমায় রূপের রংমহল,
 হয়নিকো সাজ রূপকুমারীর, নিদ টুটেছে এই কেবল।
 আয়োজনের অনেক বাকি – শুননু হঠাৎ খোশখবর,
 ওরে অলস, রাখ আয়োজন, সুর-শাজাদা আসল ঘর।
 ওঠ রে সাকি, থাক না বাকি ভরতে রে তোর লাল গেলাস,
 শূন্য গেলাস ভরব – দিয়ে চোখের পানি মুখের হাস।
দম্ভ ভরে আসল না যে ধ্বজায় বেঁধে ঝড়-তুফান,
 যাহার আসার খবর শুনে গর্জাল না তোপ-কামান,
 কুসুম দলি উড়িয়ে ধূলি আসল না যে রাজপথে –
 আয়োজনের আড়াল তারে করব গো আজ কোনোমতে।
 সে এল গো যে-পথ দিয়ে স্বর্গে বহে সুরধুনী,
 যে-পথ দিয়ে ফেরে ধেনু মাঠের বেণুর রব শুনি।
 যেমন সহজ পথ দিয়ে গো ফসল আসে আঙিনায়,
 যেমন বিনা সমারোহে সাঁঝের পাখি যায় কুলায়।
 সে এল যে আমন-ধানের নবান্ন উৎসব-দিনে,
 হিমেল হাওয়ায় অঘ্রানের এই সুঘ্রাণেরই পথ চিনে।
আনেনি সে হরণ করে রত্ন-মানিক সাত-রাজার
 সে এনেছে রূপকুমারীর আঁখির প্রসাদ, কণ্ঠহার।
সুরের সেতু বাঁধল সে গো, ঊর্ধ্বে তাহার শুনি স্তব,
 আসছে ভারত-তীর্থ লাগি শ্বেত-দ্বীপের ময়দানব।
 পশ্চিমে আজ ডঙ্কা বাজে পুবের দেশের বন্দিদের,
 বীণার গানে আমরা জয়ী, লাজ মুছেছি অদৃষ্টের।
কন্ঠ তোমার জাদু জানে, বন্ধু ওগো দোসর মোর!
 আসলে ভেসে গানের ভেলায় বৃন্দাবনের বংশী-চোর।
তোমার গলার বিজয়-মালা বন্ধু একা নয় তোমার,
 ওই মালাতে রইল গাঁথা মোদের সবার পুরস্কার।
 কখন আঁখির অগোচরে বসলে জুড়ে হৃদয়-মন,
 সেই হৃদয়ের লহো প্রীতি, সজল আঁখির জল-লিখন।
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন