কাজী নজরুল ইসলাম
জীবন-বন্দনা
গাহি তাহাদের গান – ধরণির হাতে দিল যারা আনি ফসলের ফরমান। শ্রম-কিণাঙ্ক-কঠিন যাদের নির্দয় মুঠি-তলে ত্রস্তা ধরণি নজরানা দেয় ডালি ভরে ফুলে ফলে। বন্য-শ্বাপদ-সংকুল জরা-মৃত্যু-ভীষণা ধরা যাদের শাসনে হল সুন্দর কুসুমিতা মনোহরা। যারা বর্বর হেথা বাঁধে ঘর পরম অকুতোভয়ে বনের ব্যাঘ্র মরুর সিংহ বিবরের ফণী লয়ে। এল দুর্জয় গতিবেগ সম যারা যাযাবর-শিশু – তারাই গাহিল নব প্রেমগান ধরণি-মেরির জিশু – যাহাদের চলা লেগে উল্কার মতো ঘুরিছে ধরণি শূন্যে অমিত বেগে !
খেয়াল খুশিতে কাটি অরণ্য রচিয়া অমরাবতী
 যাহারা করিল ধ্বংসসাধন পুন চঞ্চলমতি,
 জীবন-আবেগ রুধিতে না পারি যারা উদ্ধত-শির
 লঙ্ঘিতে গেল হিমালয়, গেল শুষিতে সিন্ধু-নীর।
 নবীন জগৎ সন্ধানে যারা ছুটে মেরু-অভিযানে,
 পক্ষ বাঁধিয়া উড়িয়া চলেছে যাহারা ঊর্ধ্বপানে।
 তবুও থামে না যৌবন-বেগ, জীবনের উল্লাসে
 চলেছে চন্দ্র-মঙ্গল-গ্রহে স্বর্গে অসীমাকাশে।
 যারা জীবনের পসরা বহিয়া মৃত্যুর দ্বারে দ্বারে
 করিতেছে ফিরি, ভীম রণভূমে প্রাণ বাজি রেখে হারে।
 আমি মর-কবি – গাহি সেই বেদে-বেদুইনদের গান,
 যুগে যুগে যারা করে অকারণ বিপ্লব-অভিযান।
 জীবনের আতিশয্যে যাহারা দারুণ উগ্রসুখে
 সাধ করে নিল গরল-পিয়ালা, বর্শা হানিল বুকে !
 আষাঢ়ের গিরি-নিঃস্রাবসম কোনো বাধা মানিল না,
 বর্বর বলি যাহাদের গালি পাড়িল ক্ষুদ্রমনা,
 কূপমণ্ডূক ‘অসংযমী’র আখ্যা দিয়াছে যারে,
 তারই তরে ভাই গান রচে যাই, বন্দনা করি তারে !
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন