জীবনমধ্যাহ্ণ

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

 জীবন আছিল লঘু প্রথম বয়সে, চলেছিনু আপনার বলে, সুদীর্ঘ জীবনযাত্রা নবীন প্রভাতে আরম্ভিনু খেলিবার ছলে। অশ্রুতে ছিল না তাপ, হাস্যে উপহাস, বচনে ছিল না বিষানল— ভাবনাভ্রূকুটিহীন সরল ললাট সুপ্রশান্ত আনন্দ-উজ্জ্বল। কুটিল হইল পথ, জটিল জীবন, বেড়ে গেল জীবনের ভার— ধরণীর ধূলি-মাঝে গুরু আকর্ষণ, পতন হইল কত বার। আপনার’পরে আর কিসের বিশ্বাস, আপনার মাঝে আশা নাই— দর্প চূর্ণ হয়ে গেছে, ধূলি-সাথে মিশে লজ্জাবস্ত্র জীর্ণ শত ঠাঁই। তাই আজ বার বার ধাই তব পানে, ওহে তুমি নিখিলনির্ভর— অনন্ত এ দেশকাল আচ্ছন্ন করিয়া আছ তুমি আপনার’পর। ক্ষণেক দাঁড়ায়ে পথে দেখিতেছি চেয়ে তোমার এ ব্রহ্মাণ্ড বৃহৎ— কোথায় এসেছি আমি, কোথায় যেতেছি, কোন্‌ পথে চলেছে জগৎ! প্রকৃতির শান্তি আজি করিতেছি পান চিরস্রোত সান্ত্বনার ধারা— নিশীথ-আকাশ-মাঝে নয়ন তুলিয়া দেখিতেছি কোটি গ্রহতারা— সুগভীর তামসীর ছিদ্রপথে যেন জ্যোতির্ময় তোমার আভাস, ওহে মহা-অন্ধকার, ওহে মহাজ্যোতি, অপ্রকাশ, চির-স্বপ্রকাশ। যখন জীবন-ভার ছিল লঘু অতি যখন ছিল না কোনো পাপ তখন তোমার পানে দেখি নাই চেয়ে, জানি নাই তোমার প্রতাপ— তোমার অগাধ শান্তি, রহস্য অপার, সৌন্দর্য অসীম অতুলন— স্তব্ধভাবে মুগ্ধনেত্রে নিবিড় বিস্ময়ে দেখি নাই তোমার ভুবন। কোমল সায়াহ্নলেখা বিষণ্ন উদার প্রান্তরের প্রান্ত-আম্রবনে, বৈশাখের নীলধারা বিমলবাহিনী ক্ষীণ গঙ্গা সৈকতশয়নে, শিরোপরি সপ্ত ঋষি যুগ-যুগান্তের ইতিহাসে নিবিষ্ট-নয়ান, নিদ্রাহীন পূর্ণচন্দ্র নিস্তব্ধ নিশীথে নিদ্রার সমুদ্রে ভাসমান— নিত্যনিশ্বসিত বায়ু, উন্মেষিত উষা, কনকে শ্যামলে সম্মিলন, দূর দূরান্তরশায়ী মধ্যাহ্ন উদাস, বনচ্ছায়া নিবিড় গহন, যতদূর নেত্র যায় শস্যশীর্ষরাশি ধরার অঞ্চলতল ভরি— জগতের মর্ম হতে মোর মর্মস্থলে আনিতেছে জীবনলহরী। দেখিতেছি কোটি গ্রহতারা— সুগভীর তামসীর ছিদ্রপথে যেন জ্যোতির্ময় তোমার আভাস, ওহে মহা-অন্ধকার, ওহে মহাজ্যোতি, অপ্রকাশ, চির-স্বপ্রকাশ। যখন জীবন-ভার ছিল লঘু অতি যখন ছিল না কোনো পাপ তখন তোমার পানে দেখি নাই চেয়ে, জানি নাই তোমার প্রতাপ— তোমার অগাধ শান্তি, রহস্য অপার, সৌন্দর্য অসীম অতুলন— স্তব্ধভাবে মুগ্ধনেত্রে নিবিড় বিস্ময়ে দেখি নাই তোমার ভুবন। কোমল সায়াহ্নলেখা বিষণ্ন উদার প্রান্তরের প্রান্ত-আম্রবনে, বৈশাখের নীলধারা বিমলবাহিনী ক্ষীণ গঙ্গা সৈকতশয়নে, শিরোপরি সপ্ত ঋষি যুগ-যুগান্তের ইতিহাসে নিবিষ্ট-নয়ান, নিদ্রাহীন পূর্ণচন্দ্র নিস্তব্ধ নিশীথে নিদ্রার সমুদ্রে ভাসমান— নিত্যনিশ্বসিত বায়ু, উন্মেষিত উষা, কনকে শ্যামলে সম্মিলন, দূর দূরান্তরশায়ী মধ্যাহ্ন উদাস, বনচ্ছায়া নিবিড় গহন, যতদূর নেত্র যায় শস্যশীর্ষরাশি ধরার অঞ্চলতল ভরি— জগতের মর্ম হতে মোর মর্মস্থলে আনিতেছে জীবনলহরী।

সকল অধ্যায়

১. ভুলে
২. ভুল-ভাঙা
৩. বিরহানন্দ
৪. ক্ষণিক মিলন
৫. শূণ্য হৃদয়ের আকাঙ্ক্ষা
৬. আত্মসমর্পণ
৭. নিষ্ফল কামনা
৮. সংশয়ের আবেগ
৯. বিচ্ছেদের শান্তি
১০. তবু
১১. একাল ও সেকাল
১২. আকাঙ্ক্ষা
১৩. নিষ্ঠুর সৃষ্টি
১৪. প্রকৃতির প্রতি
১৫. মরণস্বপ্ন
১৬. কুহুধ্বনি
১৭. পত্র
১৮. সিন্ধুতরঙ্গ
১৯. শ্রাবণের পত্র
২০. নিষ্ফল প্রয়াস
২১. হৃদয়ের ধন
২২. প্রকাশবেদনা
২৩. নিভৃত আশ্রম
২৪. নারীর উক্তি
২৫. পুরুষের উক্তি
২৬. শূন্য গৃহে
২৭. জীবনমধ্যাহ্ণ
২৮. শ্রান্তি
২৯. বিচ্ছেদ
৩০. মানসিক অভিসার
৩১. পত্রের প্রত্যাশা
৩২. বধূ
৩৩. ব্যক্ত প্রেম
৩৪. গুপ্ত প্রেম
৩৫. অপেক্ষা
৩৬. দুরন্ত আশা
৩৭. দেশের উন্নতি
৩৮. বঙ্গবীর
৩৯. সুরদাসের প্রার্থনা
৪০. নিন্দুকের প্রতি নিবেদন
৪১. কবির প্রতি নিবেদন
৪২. পরিত্যক্ত
৪৩. ধর্মপ্রচার
৪৪. নববঙ্গদম্পতির প্রেমালাপ
৪৫. মায়া
৪৬. বর্ষার দিনে
৪৭. মেঘের খেলা
৪৮. ধ্যান
৪৯. পূর্বকালে
৫০. অনন্ত প্রেম
৫১. আশঙ্কা
৫২. ভালো করে বলে যাও
৫৩. মেঘদূত
৫৪. অহল্যার প্রতি
৫৫. গোধূলি
৫৬. উচ্ছৃঙ্খল
৫৭. আগন্তুক
৫৮. বিদায়
৫৯. সন্ধ্যায়
৬০. শেষ উপহার
৬১. মৌন ভাষা
৬২. আমার সুখ

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন