আমার এ মনোজ্বালা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

আমার এ মনোজ্বালা

আমার এ মনোজ্বালা কে বুঝিবে সরলে
কেন যে এমন করে, ম্রিয়মাণ হয়ে থাকি
কেন যে নীরবে হেন বসে থাকি বিরলে।
এ যাতনা কেহ যদি বুঝিতে পারিত দেবি,
তবে কি সে আর কভু পারিত গো হাসিতে?
হৃদয় আছয়ে যার সঁপিতে পারে সে প্রাণ
এ জ্বলন্ত যন্ত্রণার এক তিল নাশিতে!
হে সখী হে সখাগণ, আমার মর্মের জ্বালা
কেহই তোমরা যদি না পার গো বুঝিতে,
কী আগুন জ্বলে তার নিভৃত গভীর তলে
কী ঘোর ঝটিকা সনে হয় তারে যুঝিতে।
তবে গো তোমরা মোরে শুধায়ো না শুধায়ো না
কেন যে এমন করে রহিয়াছি বসিয়া
বিরলে আমারে হেথা, একলা থাকিতে দাও,
[আমা]র মনের কথা বুঝিবে কী করিয়া?
[ম্রিয়]মাণ মুখে, এই শূন্যপ্রায় নেত্রে
[ক]লঙ্ক সঁপি গো আমি তোমাদের হরষে;
পূর্ণিমা যামিনী যথা মলিন হইয়া যায়
ক্ষুদ্র এক অন্ধকার জলদের পরশে।
কিন্তু কী করিব বলো, কী চাও কী দিব আমি
তোমাদের আমোদ গো এক তিল বাড়াতে
হৃদয়ে এমন জ্বালা, কী করে হাসিব বলো
কিছুতে বিষণ্ণভাব পারি না যে তাড়াতে।
বিরক্ত হোয়ো না সখি, অমন বিরক্ত নেত্রে
আমার মুখের পানে রহিয়ো না চাহিয়া,
কী আঘাত লাগে প্রাণে, দেখি ও বিরক্ত মুখ
কেমনে সখি গো তাহা বুঝাইব কহিয়া?
ব্যথায় পাইয়া ব্যথা, যদি গো শুধাতে কথা
অশ্রুজলে মিশাইতে যদি অশ্রুজল
আদরে স্নেহের স্বরে, একটি কহিতে কথা,
অনেক নিভিত তবু এ হৃদি-অনল
জানিতাম ওগো সখি, কাঁদিলে মমতা পাব,
কাঁদিলে বিরক্ত হবে এ কী নিদারুণ?
চরণে ধরি গো সখি, একটু করিয়ো দয়া
নহিলে নিভিবে কিসে বুকের আগুন!

সকল অধ্যায়

১. অভিলাষ
২. হোক্‌ ভারতের জয়!
৩. হিন্দুমেলায় উপহার
৪. প্রকৃতির খেদ – প্রথম পাঠ
৫. প্রকৃতির খেদ – দ্বিতীয় পাঠ
৬. জ্বল্‌ জ্বল্‌ চিতা! দ্বিগুণ, দ্বিগুণ
৭. প্রলাপ ১
৮. প্রলাপ ২
৯. প্রলাপ ৩
১০. ভারতী
১১. দিল্লি দরবার
১২. হিমালয়
১৩. আগমনী
১৪. আকুল আহ্বান
১৫. অবসাদ
১৬. মেঘ্‌লা শ্রাবণের বাদ্‌লা রাতি
১৭. হা বিধাতা — ছেলেবেলা হতেই এমন
১৮. শারদা
১৯. এসো আজি সখা
২০. পার কি বলিতে কেহ
২১. ছেলেবেলাকার আহা, ঘুমঘোরে দেখেছিনু
২২. আমার এ মনোজ্বালা
২৩. উপহার-গীতি
২৪. পাষাণ-হৃদয়ে কেন সঁপিনু হৃদয়
২৫. ভেবেছি কাহারো সাথে
২৬. হা রে বিধি কী দারুণ অদৃষ্ট আমার
২৭. ও কথা বোলো না সখি
২৮. কী হবে বলো গো সখি
২৯. এ হতভাগারে ভালো কে বাসিতে চায়
৩০. জানি সখা অভাগীরে ভালো তুমি বাস না

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন