হোক্‌ ভারতের জয়!

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

এসো এসো ভ্রাতৃগণ! সরল অন্তরে
সরল প্রীতির ভরে
সবে মিলি পরস্পরে
আলিঙ্গন করি আজ বহুদিন পরে।
এসেছে জাতীয় মেলা ভারতভূষণ,
ভারত সমাজে তবে
হৃদয় খুলিয়া সবে
এসো এসো এসো করি প্রিয়সম্ভাষণ।
দূর করো আত্মভেদ বিপদ-অঙ্কুর,
দূর করো মলিনতা
বিলাসিতা অলসতা,
হীনতা ক্ষীণতা দোষ করো সবে দূর।
ভীরুতা বঙ্গীয়জন-কলঙ্ক-প্রধান —
সে-কলঙ্ক দূর করো,
সাহসিক তেজ ধরো,
স্বকার্যকুশল হও হয়ে একতান।
হল না কিছুই করা যা করিতে এলে —
এই দেখো হিন্দুমেলা,
তবে কেন কর হেলা?
কী হবে কী হবে আর তুচ্ছ খেলা খেলে?
সাগরের স্রোতসম যাইছে সময়।
তুচ্ছ কাজে কেন রও,
স্বদেশহিতৈষী হও —
স্বদেশের জনগণে দাও রে অভয়।
নাহি আর জননীর পূর্বসুতগণ —
হরিশ্চন্দ্র যুধিষ্ঠির
ভীষ্ম দ্রোণ কর্ণ বীর,
অনন্তজলধিতলে হয়েছে মগন।

নাহি সেই রাম আদি সম্রাট প্রাচীন,
বিক্রম-আদিত্যরাজ,
কালিদাস কবিরাজ,
পরাশর পারাশর পণ্ডিত প্রবীণ।
সকলেই জল বায়ু তেজ মৃত্তিকায়
মিশাইয়া নিজদেহ
অনন্ত ব্রহ্মের গেহ
পশেছে কীর্তিরে শুধু রাখিয়ে ধরায়।
আদরে সে প্রিয় সখী আচ্ছাদি গগনে
সে লোকবিশ্রুত নাম
সে বিশ্ববিজয়ী ধাম
নির্ঘোষে ঘুষিছে সদা অখিল ভুবনে।
যবনের রাজ্যকালে কীর্তির আধার
চিতোর-নগর নাম
অতুলবীরত্বধাম,
কেমন ছিল রে মনে ভাবো একবার।
এইরূপ কত শত নগর প্রাচীন
সুকীর্তি-তপন-করে
ভারত উজ্জ্বল ক’রে
অনন্ত কালের গর্ভে হয়েছে বিলীন।
নাহি সেই ভারতের একতা-বিভব,
পাষাণ বাঁধিয়া গলে
সকলের পদতলে
লুটাইছে আর্যগণ হইয়া নীরব।
গেল, হায়, সব সুখ অভাগী মাতার —
ছিল যত মনোআশা
নিল কাল সর্বনাশা,
প্রসন্ন বদন হল বিষণ্ণ তাঁহার।
কী আর হইবে মাতা খুলিয়া বদন।
দীপ্তভানু অস্ত গেল,
এবে কালরাত্রি এল,বসনে আবরি মুখ কাঁদো সর্বক্ষণ।
বিশাল অপার সিন্ধু, গভীর নিস্বনে
যেখানে যেখানে যাও
কাঁদিতে কাঁদিতে গাও —
ডুবিল ভারতরবি অনন্ত জীবনে।
সুবিখ্যাত গৌড় যেই বঙ্গের রতন —
তার কীর্তিপ্রতিভায়
খ্যাতাপন্ন এ ধরায়
হয়েছিল একদিন বঙ্গবাসিগণ।
গেল সে বঙ্গের জ্যোতিঃ কিছুকাল পরে —
কোনো চিহ্ন নাহি তার,
পরিয়া হীনতাহার,
ডুবিয়াছে এবে বঙ্গ কলঙ্কসাগরে।
হিন্দুজনভ্রাতৃগণ! করি হে বিনয় —
একতা উৎসাহ ধরো,
জাতীয় উন্নতি করো,
ঘুষুক ভুবনে সবে ভারতের জয়।
জগদীশ! তুমি, নাথ, নিত্য-নিরাময়
করো কৃপা বিতরণ,
অধিবাসিজনগণ,
করুক উন্নতি — হোক্‌ ভারতের জয়!

বান্ধব, মাঘ ১২৮১

সকল অধ্যায়

১. অভিলাষ
২. হোক্‌ ভারতের জয়!
৩. হিন্দুমেলায় উপহার
৪. প্রকৃতির খেদ – প্রথম পাঠ
৫. প্রকৃতির খেদ – দ্বিতীয় পাঠ
৬. জ্বল্‌ জ্বল্‌ চিতা! দ্বিগুণ, দ্বিগুণ
৭. প্রলাপ ১
৮. প্রলাপ ২
৯. প্রলাপ ৩
১০. ভারতী
১১. দিল্লি দরবার
১২. হিমালয়
১৩. আগমনী
১৪. আকুল আহ্বান
১৫. অবসাদ
১৬. মেঘ্‌লা শ্রাবণের বাদ্‌লা রাতি
১৭. হা বিধাতা — ছেলেবেলা হতেই এমন
১৮. শারদা
১৯. এসো আজি সখা
২০. পার কি বলিতে কেহ
২১. ছেলেবেলাকার আহা, ঘুমঘোরে দেখেছিনু
২২. আমার এ মনোজ্বালা
২৩. উপহার-গীতি
২৪. পাষাণ-হৃদয়ে কেন সঁপিনু হৃদয়
২৫. ভেবেছি কাহারো সাথে
২৬. হা রে বিধি কী দারুণ অদৃষ্ট আমার
২৭. ও কথা বোলো না সখি
২৮. কী হবে বলো গো সখি
২৯. এ হতভাগারে ভালো কে বাসিতে চায়
৩০. জানি সখা অভাগীরে ভালো তুমি বাস না

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন