গগনের মাছ – সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়

বারিদবরণ ঘোষ

গগনের মাছ – সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়

গগন পরশুদিন নাটাগড়ে মাছ ধরতে গিয়েছিল৷ তার অন্য কোনো নেশা নেই৷ বন্ধু-বান্ধব নেই৷ আড্ডা নেই৷ তাস পাশা নেই৷ যা আছে তা হল মাছ ধরার ঝোঁক৷ পুকুর কিংবা বিল দেখলেই তার প্রাণটা নেচে ওঠে৷ যত তাড়াতাড়ি থাক, যত কাজই থাক, সে জলের ধারে থমকে দাঁড়ায়৷ জলের রং দেখলেই সে বুঝতে পারে, সেই পুকুর কিংবা বিলে কি কি মাছ আছে৷ কত বড় মাছ আছে৷ মাছগুলোর স্বভাব কি? সহজে ধরা দেবে, না বঁড়শির মুখে গাঁথা টোপটি ঠুকরে ফাতনাটি দুবার নাচিয়ে দিয়ে সরে পড়বে? জলের তলায় ঝাঁজি আছে কিনা, ছোট কাঁকড়া কিংবা কাছিম আছে কিনা, জলের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়েই সে জলের মতো বুঝতে পারে৷ তার এই স্বভাবের জন্যে লোকে তাকে মেছো গগন বলে৷ অনেকের ধারণা গগন পূর্বজন্মে মাছরাঙা ছিল৷ আগামী জন্মে ভোঁদোড় হয়ে জন্মাবে৷

এই মাছের নেশাটি আছে বলেই গগনের জীবনে কোনো দুঃখ নেই৷ সদাশিব মানুষ৷ লম্বাচওড়া চেহারা৷ সহজ সরল মানুষ৷ একটা বড় কারখানায় হাতের কাজ করে যা উপার্জন করে, মা আর ছেলের ছোট্ট সংসার সুখেই চলে যায়৷ শৈশবেই বাবা মারা যান৷ লেখাপড়া সেই কারণে খুব বেশিদূর এগোয়নি৷ বিধবা মা, সহায়সম্বলহীন অবস্থায় কোনো রকমে ছেলেকে মানুষ করেছেন৷ পৈতৃক বাড়িটা ছিল তাই রক্ষে৷ ছোট একতলা বাড়ি৷ খানচারেক ঘর৷ দুখানা ঘর ভাড়া দিয়ে গগনের মা সংসার চালাতেন৷ ভাড়াটে ভালো৷ ভাড়া নিয়ে কোনো অসুবিধা কোনো কালে হয়নি৷ সেই ভাড়াটে এখনো আছেন৷ অনেকটা বাড়ির লোকের মতোই হয়ে গেছেন তাঁরা৷ দুটো পরিবারকে এখন আলাদা করাই শক্ত৷ বাইশ বছর আগে যা ভাড়া ছিল, এখনো তাই আছে৷ এক পয়সা ভাড়া বাড়াবার কথা কেউ কখনো বলেননি৷ এখন গগন রোজগার করছে৷ ভাড়ার টাকার উপর তাদের আর নির্ভর করতে হয় না৷ যা আসে সেইটুকুই বাড়তি৷

গগনের বাহন হল সাইকেল৷ পৈতৃক সাইকেল৷ সেকালের জিনিস৷ গগনের যত্নে ঠিক সারভিস দিয়ে যাচ্ছে৷ একবার চুরি হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু সাইকেলটা গগনের সেবায় এতই সন্তুষ্ট যে আবার ফিরে এসেছিল দিনকতক পরে৷ থানার দারোগা বলেছিলেন, ‘গগনবাবু, এরকম বরাত লাখে একটা মেলে৷’ গগন কৃতজ্ঞতা স্বরূপ সের আড়াই ওজনের একটা কালবোস দারোগাবাবুকে প্রেজেন্ট করে এসেছিল৷ গগনের মাছ-ধরা এই জন্যেই৷ নিজে আর কতটা খাবে৷! গগন ধরে মাছ, পাড়ার লোকে খায় সেই মাছ৷ প্রতিবেশীরাই ভালো পুকুরের সন্ধান এনে দেয়৷ গগন সাইকেলে নানা মাপের ছিপ, হুইল বেঁধে, চার, টোপ নিয়ে, টিফিন ক্যারিয়ারে খাবার নিয়ে সাতসকালেই বেরিয়ে পড়ে৷ গ্রীষ্ম আর বর্ষার দিনে ছাতা থাকে৷ ইদানীং এক বোতল কার্বলিক অ্যাসিডও সঙ্গে রাখে৷ বারকতক কেউটে সাপে তাড়া করেছিল৷

নাটাগড়ের পুকুরটার খবর দিয়েছিল তারই এক সহকর্মী৷ সে-ই সব ব্যবস্থা করে দিয়েছিল৷ বলেছিল, বিশাল পুকুর পাঁচিল ঘেরা বাগানের মধ্যে৷ বারোয়ারি পুকুর নয়, মাছগুলো সেই কারণে ছ্যাঁচড়া নয়৷ ছিপ ফেলতেই ধরা দেবে৷ সব মাছই বড়৷ বৈষ্ণবের পুকুর, কালেভদ্রে জাল পড়ে৷ খুব জানাশোনা লোক ন-মাসে ছ-মাসে শখ করে ছিপ ফেলে৷

গগন অবশ্য ঠিক এই রকম পুকুরে মাছ ধরতে চায় না৷ সে হল পাকা মাছ-ধরিয়ে৷ খেলোয়াড়, ত্যাঁদোড়, তেএঁটে মাছ না হলে সে মাছ ধরে আনন্দ পায় না৷ অনেকদিন তেমন সুযোগ পাচ্ছিল না বলে এ সুযোগটা সে হাতছাড়া করল না৷ দেখাই যাক না কি হয়! গগন বেরিয়ে পড়লো৷ বাহন সাইকেল৷ সঙ্গে একটা টর্চও নিল৷ দূরের পথ, পথে আলো থাকবে কিনা কে জানে! সাবধানের মার নেই৷

বিশাল পুকুর৷ সরোবর বলাই ভালো৷ যাঁদের পুকুর তাঁরা এককালে জমিদার ছিলেন৷ একপাশে তাঁদের বিশাল বাড়ি৷ সংস্কারের অভাবে একটু জীর্ণ৷ একপাশে পুরোনো মডেলের একটা অস্টিন গাড়ি পড়ে আছে৷ গাড়িটা মনে হয় চলে৷ সামনেই ঢালা ছাদ৷ ছাদের কার্নিসে একটা পরী ডানা মেলে আছে৷ যেন এক্ষুনি উড়ে যাবে৷ দেউড়িতে এখনো দারোয়ান বসে৷ গগনের সাইকেলের মতো পুরোনো মনিবের মায়া ছাড়তে পারছে না বলেই বোধ হয় বহাল আছে৷

বাগানের গেট পেরিয়ে ইঁট-বাঁধানো পথে এগোতে এগোতে গগন যেন পুরোনো কালের গন্ধ পেল৷ বহু স্মৃতি যেন ভিড় করে এল৷ প্রাচীন গাছের কালো গুঁড়িতে সবুজ শ্যাওলা৷ বছরের পর বছর পাতা পড়ে গাছের তলায় তলায় আর মাটি দেখা যায় না৷ রোদ খুব কমই পড়ে৷ পাতা পচার জৈবগন্ধ৷ জায়গায় জায়গায় সাদা সাদা ব্যাঙের ছাতা৷ এক একটা গাছের গায়ে পরগাছা উঠেছে লতিয়ে লতিয়ে৷ একসময়কার সযত্ন পরিচর্যার বাগান দীর্ঘ অবহেলায় না বাগান, না জঙ্গল এক ভূতুড়ে পরিবেশ তৈরি করেছে৷ মাঝে মাঝে শ্বেতপাথরের নানা রঙের মূর্তি চলে যাওয়া একটা কালকে পাথরের অবয়বে ধরে রেখেছে৷ গগনের মনে হল, মানুষের সমৃদ্ধি কত ক্ষণস্থায়ী! গরিব আছি বেশ আছি বাবা৷ উত্থানও নেই পতনও নেই৷ ছেলেবেলায় কথায় কথায় মা বলতেন না—‘অতি বাড় বেড়ো না ঝড়ে পড়ে যাবে অতি নিচু হয়ো না গরুতে মুড়িয়ে খাবে৷’

বাগানের পথ দিয়ে বেশ কিছুটা এগিয়ে বেঁকতে বেঁকতে গগন সেই পুকুরের পাড়ে এল৷ যেখানে তার সারাটা দিন কাটবে জলের ওপর বাতাসের হালকা তরঙ্গ দেখে, ফাতনা দেখে, মাছের বুড়বুড়ি আর ঘাই মারা লক্ষ্য করে৷ পুকুরটা এক সময় খুব যত্নের পুকুর ছিল দেখলেই বোঝা যায়৷ চারপাশ ইঁট দিয়ে বাঁধানো৷ চারদিক থেকে চারটে ঘাট জলের অনেক দূর পর্যন্ত নেমে গেছে৷ পাথর বসানো ঘাটের পৈঠের জোড় জায়গায় জায়গায় ছেড়ে গেছে৷ সেইসব ফাঁকে ছোট ছোট আগাছা জন্মেছে৷ কতকালের পুরোনো জল, যেন আলকাতরা গোলা৷ চারিদিক শান্ত নির্জন৷ কোথায় একটা পাখি ডাকছে, টুই-টুই—৷

গগন জল চেনে৷ পুকুরটা দেখে তার ছিপ ফেলতে ইচ্ছে হল না৷ তার মনে হল, চারিদিকে যেন একটা অশরীরী আতঙ্ক ছড়িয়ে আছে৷ জলে, ভাঙা ঘাটে পুরোনো দিনের অনেক গোপন কথা যেন শ্যাওলার মতো ছড়িয়ে আছে৷ বড়লোকের পুকুর দেখলেই গগনের আত্মহত্যার কথা মনে হয়৷ মনে হয় জলের তলায় চেনবাঁধা কঙ্কাল আছে৷ মনে হয় পুকুরের মাঝখানে গভীর একটা কুয়ো আছে, যেখান থেকে মাঝরাতে চেন শিকল আর লোহার কড়া নাড়াবার ঠনঠন শব্দ ওঠে৷ কেউ যেন গুমরে কেঁদে ওঠে, আমায় মুক্তি দাও, মুক্তি দাও! মাঝে মাঝে সোনার বালা পরা একটা হাত মাঝ-পুকুরে জলের ওপর ভেসে উঠে কিছু একটা ধরার নিষ্ফল চেষ্টা করে আবার তলিয়ে যায়৷ গগন এসব কখনো দেখেনি, তার মনে হয়৷

ঘাটের বাঁধানো বেদীতে বসে, পাশে তার ঝোলাঝুলি সাজসরঞ্জাম নামিয়ে রেখে গগন চারপাশটা একবার ভালো করে তাকিয়ে দেখল৷ চারিদিকে বড় বড় রাই ঘাস গজিয়েছে, সাপের আত্মগোপনের জায়গা৷ গগন খুব হতাশ হল৷ এই পুকুর নিয়ে গল্প লেখা চলে, মাছ ধরা চলে না৷ হঠাৎ পুকুরের মাঝখানে জল উথলে উঠল৷ ঘাই দেখে মনে হয়, সের তিরিশ ওজনের একটা মাছ৷ এতবড় মাছ ছিপে পড়লেও ছেড়ে দিতে হবে৷ এ মাছ কেউ খায় না৷

এতদূর এসে গগনের ফিরে যেতেও ইচ্ছে করছে না৷ চুপচাপ বসে থাকতে অবশ্য খারাপ লাগছে না৷ জল থেকে রোদের তাতে গরম ঠাণ্ডা মেশানো একটা ভাপ উঠছে৷ গাছের পাতায় ছায়া কাঁপছে৷ ঘাসের ডগা সিরসির করে হাওয়ায় দুলছে৷ অনেক সব পুরোনো দিনের কথা গগনের মনে আসছিল৷ পুরোনো কথা যত মনে পড়ছিল, মনটাও তত বিষণ্ণ হচ্ছিল৷ একবার মনে হল, ফিরে যায়৷ তারপরে মনে হল, অনেকে আশা করে থাকবে—গগন কখনো ফেলিওর হয়নি৷

টিনের কৌটো খুলে গগন চার, টোপ সব একবার দেখে নিল৷ মনে মনে বলল, এসেছি যখন, এক হাত ফেলেই দেখি, কি হয়! পুকুরের দিকে তাকিয়ে গগনের মনে হল, মানুষের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মতো অজানা সম্ভাবনা নিয়ে স্থির অচঞ্চল৷ ঘাটে বসে কি মাছ ধরা যায়? গগন হেসে উঠল৷ একটু আঘাটায় বসতে হয়৷ বসবে কি করে! বাঁধানো পাড় ঢালু নেমে গেছে৷ অগত্যা ঘাটের শেষ পৈঠেতে বসে গগন ছিপ ফেললে৷ বাতাসের সাঁ সাঁ শব্দ হচ্ছে৷ খুব প্রাচীন মাছও সাঁ সাঁ করে শব্দ করে, গগন শুনেছে৷ অবশ্য নিজের কানে কখনো শোনেনি৷

ফাতনার উপর বারেবারে একটা ফড়িং এসে বসছে৷ ঠিক বসছে না, কেঁপে কেঁপে উড়ছে৷ জলের উপর ছোট্ট একটা মাথা জ্বলজ্বলে দুটো চোখ নিয়ে উত্তর থেকে দক্ষিণে সরে সরে যাচ্ছে৷ জোলো হাওয়ার গরম ঠাণ্ডায় গগনের চোখে যেন ঘুমের আমেজ আসছে৷ প্রচুর নেশা করলে মানুষের এই অবস্থা হয়৷ তবু গগন জলের দিকে তাকিয়ে বসে রইল৷ এক সময় তার মনে হল বঁড়শিটা কিছুতে ঠোকরাচ্ছে৷ গগন ফাতনাটা কায়দা করে সোজা করে নিল, হেলে গিয়েছিল৷

ফাতনাটা হঠাৎ ডুবে গেল৷ গগন প্রস্তুত ছিল, সুতোটা একটু টান করেই আলগা দিল৷ বড় মাছ বলেই মনে হচ্ছে৷ এ পুকুরে ছোট মাছ নেই, গগন জল দেখেই বুঝেছে৷ এও বুঝেছে, চালাক মাছ একটাও নেই, সব কটা বোকা গাধা৷ খাদ্য আর টোপের পার্থক্য বোঝে না৷ তা না হলে বঁড়শি ফেলতেই ধরত না৷ গগনের মনে হল, মাছটা না খেলেই ভালো হত৷ অনর্থক এখন খেলাতে হবে৷ শেষে উঠে আসবে শ্যাওলা ধরা পাঁকগন্ধ এক মাছ৷ যাকে মাছ না বলে মৎস্যাবতার বললেই ভালো হয়৷ যার বয়স হয়তো পঞ্চাশ বছর৷

মাছটা অবশেষে উঠল৷ যা ভেবেছিল তাই৷ মাছটা ইচ্ছে করলে ন্যাজের ঝাপটা মেরে গগনকে কাবু করে ফেলতে পারে৷ ইচ্ছে করলে খেয়েও ফেলতে পারে৷ সারা গায়ে কালো আঁশের উপর এক ধরনের সাদা সাদা লালা জড়িয়ে আছে৷ গগনের হাত ঠেকাতেই ইচ্ছে করছিল না৷ কোনো রকমে ঘাটের পৈঠেতে ফেলল! গগন আশ্চর্য হয়ে দেখল, মাছটার নাকে এক সোনার নথ লাগানো৷ অবাক কাণ্ড! মাছটা খাবি খাচ্ছে, চিঁ চিঁ করে একটা শব্দ করছে৷

গগন কি করবে ভাবছে৷ এমন সময়ে তার পেছনে হালকা চুড়ির কিন কিন শব্দ হল৷ গগন চমকে ফিরে তাকাল৷ তার পেছনে কখন এসে দাঁড়িয়েছে ন-দশ বছরের ফুটফুটে একটি মেয়ে৷ একরাশ ঘন কালো চুল৷ আকাশের মতো নীল বড় বড় দুটো চোখ৷ হাতে গোল গোল দুটো সরু সরু মিছরি কাটা সোনার চুড়ি৷

গগন তাকাতেই মেয়েটি বললে—ওমা তুমি আমার ভোলাকে ধরেছ! তুমি কি গো, ওকে ছেড়ে দাও!

গগন বললে, এর নাম বুঝি ভোলা?

—হ্যাঁ গো, দেখছ না ওর নাকে নোলোক৷ আমার মা পরিয়ে দিয়েছিলেন৷

—তোমার নাম কি মা?

—আমার নাম চুমকি৷ তুমি আগে ছেড়ে দাও, জানো না বুঝি জলের বাইরে মাছ বেশিক্ষণ বাঁচে না!

—দিচ্ছি মা, ছেড়ে দিচ্ছি৷ তোমার সঙ্গে কথা বলছিলুম তো!

—আমার সঙ্গে পরে কথা বলবে৷ আগে ওকে ছেড়ে দাও৷ তুমি ভীষণ নিষ্ঠুর৷ জলের মাছকে কেউ ডাঙায় তোলে!

গগন তাড়াতাড়ি মাছটাকে জলে ছেড়ে দিল৷ মুখ না ঘুরিয়েই বললে, এই নাও তোমার ভোলা আবার জলে চলে গেল৷ আর আমাকে নিষ্ঠুর বলবে—বল মা, আর আমাকে নিষ্ঠুর বলবে?

ভোলা তখন ন্যাজ নাড়তে নাড়তে চলে যাচ্ছে৷ গগন কোনো উত্তর না পেয়ে ফিরে তাকালো৷ কোথায় কি, কেউ কোথাও নেই! গগন জোরে জোরে ডাকল,—চুমকি, চুমকি! বাতাসের শব্দ, সেই পাখিটা ডাকছে টুই-টুই৷

নির্জন দুপুর৷ বড় বড় গাছের তলায় আলোছায়ার খেলা৷

গগনের কেমন ভয়-ভয় করল৷ মনে হল দুপুর নয়, চারিদিকে নিশুতি রাত নেমে এসেছে৷ এত তাড়াতাড়ি যে অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে, সে কি মানুষ? ছমছমে মন নিয়ে গগন বাগানের গেটের কাছে ফিরে এল৷ দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করল, হ্যাঁগো, চুমকি বলে এ বাড়িতে কোনো মেয়ে আছে? প্রশ্ন শুনে দারোয়ানের মুখটা কি রকম হয়ে গেল৷ কেন বাবু? গগন বললে,—না, বেশ মেয়েটি৷ এইমাত্র আমার সঙ্গে কথা হল, তারপর কোথায় যে চলে গেল হঠাৎ! দারোয়ান হঠাৎ খুব গম্ভীর হয়ে গেল—সে বাবু অনেককাল আগের কথা৷ এই বাড়ির মেজোবাবুর ছোট মেয়ে ছিল৷ বিশ-বাইশ বছর আগে ওই পুকুরে ডুবে মারা যায়৷ মেজবাবুও বেঁচে নেই৷ মাইজী এখন বালিগঞ্জে থাকেন৷ ওই ছিল একমাত্র মেয়ে৷ কি করে যে ডুবে মারা গেল কেউ জানে না৷ এই বাড়ির একটা ঘরে এখনো তার খাটবিছানা পাতা আছে৷ সব খেলনা বই সাজানো আছে৷ মাইজী মাঝে মাঝে আসেন৷ আজও এসেছিলেন৷ এই একটু আগে চলে গেলেন৷

গগন তাকিয়ে দেখল, সেই অস্টিন গাড়িটা নেই৷

গগনের নাটাগড়ের গল্প কেউ বিশ্বাস করে, কেউ করে না৷ গগন কিন্তু মাছ আর ধরে না৷ সব মাছই এখন তার কাছে ভোলা৷ চুমকি তাকে নিষ্ঠুর বলেছিল, সেই কথাটা তার মনে কাঁটার মতো বিঁধে আছে৷

‘মাছ কি ডাঙায় বাঁচে! তুমি এত নিষ্ঠুর কেন গো!’

নীল চোখ, কোঁকড়া চুল, চুড়ির মিঠে রিনি রিনি৷

মাছের নেশা আর গগনের নেই৷

সকল অধ্যায়

১. পূজার ভূত – ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়
২. মণিহারা – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
৩. একটি ভৌতিক কাহিনী – প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়
৪. সর্বনাশিনী – পাঁচকড়ি দে
৫. উৎপীড়িতের প্রতিহিংসা – দীনেন্দ্রকুমার রায়
৬. মহেশের মহাযাত্রা – পরশুরাম
৭. নরক এক্সপ্রেস – সৌরীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায়
৮. মায়া – বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
৯. ‘‘ক্লাইম্যাক্স’’ – বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়
১০. অক্ষয়বটোপাখ্যানম – তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
১১. ভয় ও ভূত – সুকুমার সেন
১২. ভেরনল – মণীন্দ্রলাল বসু
১৩. কে? – হেমেন্দ্রকুমার রায়
১৪. অশরীরিণী – শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়
১৫. ‘‘—সাথে সাথে ঘুরবে’’ – প্রমথনাথ বিশী
১৬. নমস্কার – শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়
১৭. চাচা কাহিনী – সৈয়দ মুজতবা আলী
১৮. কলকাতার গলিতে – প্রেমেন্দ্র মিত্র
১৯. অবর্তমান – বনফুল
২০. দুই বন্ধু – বুদ্ধদেব বসু
২১. রক্তের ফোঁটা – অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত
২২. ডাক্তারের সাহস – প্রবোধকুমার সান্যাল
২৩. হলুদপোড়া – মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
২৪. লাল চুল – মনোজ বসু
২৫. চেতলার কাছে – লীলা মজুমদার
২৬. একরাত্রির অতিথি – গজেন্দ্রকুমার মিত্র
২৭. নিজে বুঝে নিন – আশাপূর্ণা দেবী
২৮. রাত তখন এগারোটা – বিমল মিত্র
২৯. কুয়াশা – নীহাররঞ্জন গুপ্ত
৩০. মরণের পরে – সুমথনাথ ঘোষ
৩১. টাইপরাইটার – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়
৩২. ভুতুড়ে কাণ্ড – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়
৩৩. সত্যি ভূতের গল্প – বিমল কর
৩৪. ভুলো ভূত – মহাশ্বেতা দেবী
৩৫. একদিন রাত্রে – শচীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়
৩৬. ছক্কা মিয়ার টমটম – সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ
৩৭. বৃত্তের বাইরে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
৩৮. বড়পিসিমা – সমরেশ মজুমদার
৩৯. স্বপ্নের মতো – নবনীতা দেবসেন
৪০. গগনের মাছ – সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
৪১. তেত্রিশ নম্বর ঘর – দিব্যেন্দু পালিত
৪২. বামরার রহস্য – বুদ্ধদেব গুহ
৪৩. ভূত ও রিপোর্টার – তারাপদ রায়
৪৪. সপ্তর্ষি আর হারানো বিকেল – তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
৪৫. ভূতের কথা – যমদত্ত
৪৬. সংসর্গ – সর্বাণী মুখোপাধ্যায়

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন