ম্যাজিশিয়ান বিশ্বমামা

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

ম্যাজিশিয়ান বিশ্বমামা

বিশ্বমামা বললেন, ছোটবেলায় একটা ম্যাজিক দেখেছিলাম, বুঝলি! আজও সেটা ভুলতে পারিনি।

আমি বললুম, তুমি মোটে একটা ম্যাজিক দেখেছ? আমরা তো কত ম্যাজিক দেখেছি। পি সি সরকারের জাদুর খেলা দেখেছি অনেকবার। ম্যাজিশিয়ান বিশ্বমামা

বিশ্বমামা বললেন, আমিও কম ম্যাজিক দেখিনি। সব তো মনে থাকে না। সব মনে রাখার যোগ্যও নয়। এই একটা ম্যাজিকের কথা মনে খুব দাগ কেটে গিয়েছিল। আমরা তখন উত্তর কলকাতায় শ্যামপুকুর স্ট্রিটে থাকি। মিঃ ফক্স নামে একজন ম্যাজিশিয়ান ছিলেন, কালো রঙের প্যান্ট-কোট আর মাথায় একটা লম্বা টুপি পরতেন। আসলে কিন্তু বাঙালি, এরকম নাম নিয়েছিলেন ইচ্ছে করে। আমাদের ইস্কুলে একবার ম্যাজিক দেখিয়েছিলেন, অনেক সময় তো বড় রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়েও হঠাৎ ম্যাজিক দেখাতে শুরু করতেন।

বিলুদা বলল, রাস্তার ম্যাজিশিয়ান? তার মানে তো এলেবেলে!

বিশ্বমামা বললেন, নারে, স্টেজে দাঁড়িয়ে ম্যাজিক দেখানোই বরং অনেক সোজা। সেখানে অনেক যন্ত্রপাতির কারসাজি থাকে। কিন্তু রাস্তায়, সকলের চোখের সামনে খালি হাতে ম্যাজিক দেখানোর কৃতিত্বই সবচেয়ে বেশি।

বিলুদা বলল, খালি হাতে কেউ ম্যাজিক দেখায় না। আমি শুনেছি, ম্যাজিশিয়ানদের কোটের পকেটে সব সময় কিছু ম্যাজিকের জিনিসপত্র থাকে। ওরা যে তাসের প্যাকেট নিয়ে খেলা দেখায়, সেও তো সাধারণ তাস নয়।

বিশ্বমামা বললেন, তা অবশ্য ঠিকই বলেছিস। তবে ভালো ম্যাজিশিয়ানরা খালি হাতেও কিছু কিছু খেলা দেখাতে পারে। সেটা হাতের কায়দা। মিঃ ফক্সের তেমন নাম ছিল না, কিন্তু সত্যি ভালো-ভালো ম্যাজিক দেখাতে পারতেন। কাঁচের গেলাস খেয়ে ফেলতেন, একটা রুমাল ঝেড়ে পায়রা বার করতেন, এক টাকার নোটকে একশো টাকার নোট করে দিতেন চোখের নিমেষে। এগুলো এমন কিছু না। কিন্তু আর একটা যে ম্যাজিক দেখিয়েছিলেন

বিলুদা বাধা দিয়ে বলল, ম্যাজিকের গল্প শুনতে চাই না। তুমি একটা ম্যাজিক দেখাও।

বিশ্বমামা বিরক্ত হয়ে বললেন, যাঃ, তবে বলব না! ম্যাজিক দেখতে চাস, আমাকে দেখাতে হবে কেন, চারপাশে তাকালেই তো দেখতে পাবি। এই যে ফোঁটা-ফেঁটা জলে সূর্য কিরণ পড়লে মস্ত বড় একটা রামধনু হয়ে যায় এক-এক সময়, সেটা একটা ম্যাজিক না? সেটা হল আকাশের ম্যাজিক। বটগাছের ফল দেখেছিস, এইটুকু একটা মেটে রঙের গুলির মতন, তার মধ্যে থেকে একটা বিশাল বটগাছ হয়, এটা ম্যাজিক বলে মনে হয় না? প্রকৃতির মধ্যে এরকম কত ম্যাজিক আছে।

আমি বিলুদার দিকে তাকিয়ে বললুম, আঃ, চুপ করো না। গল্পটা শুনতে দাও। বিশ্বমামা, তোমার মিস্টার ফক্সের গল্প বলো।

বিশ্বমামা বললেন, শুনবি? মিস্টার ফক্স অনেক ম্যাজিক দেখাতেন, কিন্তু একটা ম্যাজিকই আমার মনে গেঁথে গিয়েছিল। সেটা অবশ্য রাস্তার মোড়ে নয়, স্টেজেই দেখিয়েছিলেন। সেই ম্যাজিকটার নাম জাদু গাছ! প্রথমে তিনি একটা হলদে পাতিলেবু হাতে নিয়ে সবাইকে দেখালেন। তারপর স্টেজের ওপর রাখা একটা টবে সেই লেবুটা আস্তই পুঁতে দিলেন। তারপর টবটার ওপর একটা কালো কাপড় চাপা দিয়ে কোটের পকেট থেকে বার করলেন একটা কাঁচের শিশি। তিনি বললেন, এর মধ্যে কী আছে জানেন? এক রকম আশ্চর্য সার, অর্থাৎ ফার্টিলাইজার। পৃথিবীর আর কেউ এই সারের খবর জানে না। এই সার দিলে কী হয় দেখুন! তিনি কালো কাপড়টার মধ্যে হাতে ঢুকিয়ে সেই শিশি থেকে খানিকটা কী যেন ফেলে দিলেন। তারপর কালো কাপড়টা তুলতেই দেখা গেল, সেই টবে একটা পাতি লেবু গাছ গজিয়ে গেছে!

বিলুদা ঠোঁট উলটে বলল, এ আবার হয় নাকি?

আমি বললুম, চুপ!

বিশ্বমামা বললেন, চোখের সামনেই দেখলাম তো! স্টেজে আর কেউ আসেনি। এখানেই শেষ নয়। মিস্টার ফক্স গাছটায় আবার কালো কাপড় ঢাকা দিলেন। আবার শিশি থেকে কিছু ঢাললেন। এরপর কাপড়টা তুলতেই দেখা গেল, সেই গাছটায় পাঁচ ছটা পাতি লেবু ফলে আছে। সত্যি সত্যি লেবু, কাগজের নয়! আমরা হাত দিয়ে টিপে টিপে দেখলাম।

বিলুদা বলল, এ আমি নিজের চোখে দেখলেও বিশ্বাস করব না।

বিশ্বমামা বললেন, তোরা সবজান্তা হয়ে গেছিস। আমি সত্যি খুব অবাক হয়েছিলাম। আমার তখন এগারো বছর বয়েস। এটুকু বুঝতে শিখেছি যে এক টাকার নোটকে একশো টাকার নোট করে ফেলা নিশ্চয়ই হাতের কারসাজি। এরকম হতে পারে না। যদি সত্যিই সম্ভব হতো, তা হলে মিস্টার ফক্স বড়লোক হয়ে যেতে পারত। তা তো হয়নি, লোকটি বেশ গরিবই ছিল, বুড়ো বয়সে ছেঁড়া কোট গায়ে দিত। কিন্তু ওই গাছ তৈরির ব্যাপারটায় আমার খটকা লেগেছিল। সার দিলে সব গাছই বাড়ে। মিস্টার ফক্স হয়তো এমন কোনও শক্তিশালী সার আবিষ্কার করেছেন, যাতে কয়েক মিনিটে গাছ বড় হয়ে যায়।

বিলুদা বলল, তা হলে তো খাদ্য সমস্যার সমাধান হয়ে যায় পৃথিবীতে। ধান গাছ পুঁতে ফসলের জন্য আর কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হয় না। এক জমিতে একশো দুশো বার চাষ করা যায় বছরে। আজকে একটা কলাগাছ পুঁতলে কালকেই এক ছড়া পাকা কলা পাওয়া যাবে। কোনও কিছুরই অভাব থাকবে না।

বিশ্বমামা বললেন, আমিও সেইরকম ভেবেছি। মিঃ ফক্স তো পাড়ার লোক, তাকে প্রায়ই জিগ্যেস করতাম, ওই গাছের ম্যাজিকটা কি সত্যি? উনি ধমক দিয়ে বলতেন, সত্যি না তো কী! আমি মিথ্যে কিছু দেখাই না, যা ভাগ এখান থেকে। তখন আমি গাছপালা নিয়ে পড়াশুনা করতে লাগলাম। আজ পর্যন্ত কোনও বৈজ্ঞানিক বলেননি, একদিনে গাছ তৈরি করা যায়। তবে বীজ থেকে গাছ হতে কেন অনেক সময় লাগে, সেটা জেনেছি। তারপর অনেক বছর বাদে, মিস্টার ফক্স বেশ বুড়ো হয়ে গেছেন, একদিন আমায় ডেকে আসল কথাটা ফাঁস করে দিলেন। আমার কাঁধে হাত রেখে বললেন, দ্যাখ, এখন তো আর কেউ আমাকে ম্যাজিক দেখাতে ডাকে না, তাই তোকে বলতে আর বাধা নেই। আসলে তিনটে টবের ব্যাপার। একটা খালি টব, একটাতে লেবুগাছ লাগানো টব, আর একটাতে লেবু গাছে লেবু ফলে আছে। আমার একজন সহকারী সেই টবগুলো বদলে-বদলে দেয়। স্টেজের একটা জায়গায় কাটা রাখতে হয়, স্টেজের নিচে সহকারীটি লুকিয়ে বসে থাকে। আমি কালো কাপড় ঢাকা দিয়ে আড়াল করে দাঁড়ালেই সে টব বদলে দেয়।

বিলুদা হাসিমুখে বলল, আমি আগেই ধরেছি! তখনই বলেছি, একদিনের মধ্যে, এমনকী দু-তিন দিনের মধ্যেও ধান থেকে গাছ বেরুনো কিছুতেই সম্ভব নয় কখনো! কেউ দেখেনি!

বিশ্বমামা এবার চোখ বুজে বললেন, সম্ভব! বিলুদা

বলল, অ্যাঁ!

বিশ্বমামা বললেন, মিস্টার ফক্সের এ ম্যাজিক আমি ভুলতে পারিনি বলে ওই নিয়ে অনেক গবেষণা করেছি। এখন আমি নিজেই একদিনে বীজ থেকে গাছ তৈরি করে দিতে পারি।

বিলুদা অবিশ্বাসের সুরে বলল, যাঃ! কী বলছ তুমি।

আমি বললুম, বুঝেছি! বুঝেছি! আজ তুমি এক বাটি জলের মধ্যে কতকগুলো ছোলা ভিজিয়ে রাখো। কালই সেই ছোলার মুখ থেকে কল বেরুবে। সেও তো বীজ থেকে গাছ হওয়া।

বিলুদা বলল, ওটা তো ফাঁকিবাজি। ছোলার কল আবার গাছ নাকি?

বিশ্বমামা হাসতে-হাসতে বললেন, নীলুটা প্রায় ধরে ফেলেছিল। ঠিক আছে, ছোলা নয়, অন্য ফলের বীজ থেকে গাছ তৈরি করে দিলে হবে তো? লেবু গাছ, কিংবা আম গাছ?

বিলুদা বলল, আম গাছ তৈরি করে দেখাতে পারো তো বুঝবো, সত্যিই তুমি ম্যাজিক জানো!

বিশ্বমামা বললেন, ঠিক আছে। আমার দুদিন সময় লাগবে। ততদিন মাটি তৈরি করব। এর মধ্যে বাজার থেকে একটা বেশ পাকা দেখে আম জোগাড় করো। আমটা যেন খুঁতো না হয়, একেবারে বোঁটা থেকে ছেঁড়া।

দুদিন বাদে সত্যিই ব্যাপারটা শুরু হল। বিশ্বমামাদেরই বাড়ির পেছনে একটা ছোট্ট বাগান আছে। তার এক কোণে খানিকটা মাটি কাদা কাদা করা। তার ওপরে একটা কাঁচের ঢাকনা দেওয়া। সেটা তুলে, পাকা আমটার খোসা খানিকটা ছাড়িয়ে সাবধানে পুঁতে দেওয়া হল মাটিতে।

তারপর বিশ্বমামা বললেন, এবার শুরু হবে, শুম্ভ-নিশুম্ভের লড়াই। দেখা যাক, কে জেতে!

বিলুদা বলল, তার মানে?

বিশ্বমামা বললেন, সেটা কাল বুঝিয়ে দেব।

আমি বললুম, কিন্তু বিশ্বমামা, তুমি যে চুপি-চুপি করে এখানে এসে একটা চারা গাছ পুঁতে দিয়ে যাবে না, সেটা কী করে বুঝব?

বিশ্বমামা বললেন, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার দুটো উপায় আছে। তোরা এখানেই সারাদিন, সারারাত বসে থাক, বসে-বসে পাহারা দে। কিংবা, আমার সঙ্গে সঙ্গেই সর্বক্ষণ থেকে যা। আমার ওপরেই নজর রাখ।

আমরা দ্বিতীয়টাই বেছে নিলুম।

দুপুরবেলা আমরা বিশ্বমামাকে নিয়ে গেলুম একটা সিনেমা দেখাতে। সন্ধের পর চিনে হোটেলে খাওয়া হল। সব বিশ্বমামারই পয়সায় অবশ্য। আমরা পয়সা কোথায় পাব?

খাওয়া-দাওয়া সেরে গঙ্গার ধারে বেড়ালুম খানিকক্ষণ। বিশ্বমামা চেঁচিয়ে গান ধরল। বিশ্বমামার গলায় একেবারে সুর নেই, বড় বাজে গান গায়। কিন্তু সে গান শুনেও আহা-আহা করতে হল। সিনেমা দেখিয়েছে, খাইয়েছে, এরপর কি আর গান খারাপ বলা যায়।

বাড়ি ফিরে খানিকক্ষণ গল্প হল, তারপর ঘুম।

ভোর হতে না হতেই বিশ্বমামাকে ঠেলা দিয়ে জাগিয়ে দিলুম।

বিশ্বমামা চোখ কচলাতে কচলাতে বললেন, আঃ, কাঁচা ঘুম ভাঙিয়ে দিলি তো? সূর্যের আলো ফুটেছে? ভালো করে রোদ না উঠলে কিছুই হবে না।

আমরা জানলার ধারে বসে রইলুম রোজ্জ্বরের প্রতীক্ষায়। বিশ্বমামা আবার নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়লেন।

আটাটা বাজার পর নিজেই উঠে পরে বললেন, চল, এবার দেখা যাক।

আমরা প্রায় দৌড়েই গেলুম বাগানে। তাজ্জব ব্যাপার! অবিশ্বাস্য! সত্যিই যেখানে আমটা পোঁতা হয়েছিল, সেখানে দুটি পাতা সমেত একটা আমের চারা ফুঁড়ে বেরিয়েছে।

বিলুদা অনেকক্ষণ হাঁ করে চেয়ে রইল।

বিশ্বমামা মুচকি মুচকি হেসে মাথা দোলাতে-দোলাতে বললেন, দেখলি, দেখলি আমার ম্যাজিক! এখানে কোনও স্টেজ নেই। আমার কোনও সহকারী নেই। খালি হাতের ম্যাজিক।

আমি জিগ্যেস করলুম, এরপর তুমি একদিনের মধ্যে এই গাছে আম ফলাতে পারো?

বিশ্বমামা বললেন, তাতে পারিই। সেটা করা এর চেয়ে সোজা। কিন্তু সেটা আমি করব না। এই পর্যন্তই যথেষ্ট।

বিলুদা এবার বলল, বিশ্বমামা, সত্যি তুমি তাক লাগিয়ে দিলে। এটা ম্যাজিক, আমাদের চোখের ভুল, না বাস্তব!

বিশ্বমামা বললেন, ম্যাজিক, তবে বিজ্ঞানের ম্যাজিক।

বিলুদা বলল, তা হলে আমাদের একটা বুঝিয়ে দাও। তুমি তো আর মিস্টার ফক্স নও!

বিশ্বমামা বললেন, মাটিতে কোনও বীজ পড়লে, সঙ্গে সঙ্গে, কিংবা দু-চারদিনের মধ্যে তার থেকে গাছ বেরোয় না কেন, তা জানিস? বীজেরা ঘুমোয়। কেন ঘুমোয়? কোন মাটিতে পড়ল, সেখানকার আবহাওয়া কেমন, এসব তো বুঝে নিতে হবে; তাই বীজ কয়েকদিন ঘুমিয়ে নেয়। সব বীজ কিন্তু ঘুমোয় না। নীলু যে কাল ছোলার কল বেরুবার কথা বলেছিল, তার মানে ছোলা, মটর এরা ঘুমোয় না। অধিকাংশ বীজই কিন্তু মাটির মধ্যে কয়েকদিন ঘুমিয়ে থাকে।

আমি বললুম, তুমি সেই ঘুম ভাঙিয়ে দিয়েছ?

বিশ্বমামা বললেন, আমি নিজে ঠিক ভাঙাইনি। ওই যে কাল বললুম, শুম্ভ-নিশুম্ভের যুদ্ধ! প্রত্যেকে বীজের মধ্যে ডরমিন বলে একটা জিনিস থাকে। এই ডরমিনের জন্যই বীজকে ঘুমোতে হয়। এদিকে বীজ মাটিতে থাকতে-থাকতে আর একটা জিনিস তৈরি হয়, তার নাম অকসিন। এই অকসিন এসে ডরমিনকে কাবু করে ফেলে, তার ফলেই বীজের ঘুম ভাঙে। অকসিন বেশি তৈরি হলেই বীজ থেকে গাছ বেরুতে শুরু করে। আমি এখানকার মাটি এমনভাবে তৈরি করেছি, যাতে প্রচুর অকসিন খুব তাড়াতাড়ি তৈরি হয়। সেই অকসিন এসে ডরমিনকে কাবু করে ফেলেছে, আর অমনি গাছ বেরিয়েছে।

বিলুদা বলল, ইউরেকা। দারুণ ব্যাপার। বিশ্বমামা, তুমি আর কাউকে বলবে না। এবার আমরা বড়লোক হয়ে যাব।

বিশ্বমামা অবাক হয়ে বললেন, কী ব্যাপার। তুই হঠাৎ এত উত্তেজিত হয়ে পড়লি কেন?

বিলুদা বলল, বাঃ হব না? এরপর আমরা একটা বাগান কিনব। সেখানে রোজ রোজ আম-জাম-পেয়ারা ফলাব। প্রতিদিন গাছ হবে, প্রতিদিন ফল পাব। রাশি-রাশি ফল। সেইগুলো বিক্রি করলে বড়লোক হতে কদিন লাগবে?

বিশ্বমামা বললেন, একে বলে গাছে কাঁঠাল, গোঁফে তেল! এ জিনিস আমি শুধু একবারই করলাম, তোদের দেখাবার জন্য। আর কোনওদিন করব না। প্রকৃতির একটা নিজস্ব নিয়ম-শৃঙ্খলা আছে, তাকে আমি ভাঙতে যাব কেন? কারুকে বড়লোক করবার জন্য আমি বিজ্ঞানচর্চা করি না।

বিলুদা বলল, তুমি নিজেও তো বড়লোক হবে। এত কষ্ট করে তুমি এই ব্যাপারটা

আবিষ্কার করলে, এখন তার ফল ভোগ করবে না?

বিশ্বমামা বললেন, তুই গীতা পড়েছিস?

বিলুদা বলল, গীতা? সে তো খুব খটোমটো বই, পড়তে গেলে দাঁত ভেঙে যায়!

বিশ্বমামা বললেন, কখনো কষ্ট করে পড়ে দেখিস, তা হলে তখন বুঝবি, কেন আমি ফল ভোগ করতে চাই না।

তারপর বিশ্বমামা হাঁটু গেড়ে বসে সেই কচি আমপাতায় খুব যত্ন করে হাত বুলোতে-বুলোতে বললেন, এবার তোমরা নিজে নিজে বড় হও। আমি আর তোমাদের বিরক্ত করব না। তোমাদের মায়ের কাঁচা ঘুম ভাঙিয়েছি বলে লক্ষ্মীসোনা আমার ওপর রাগ করো না।

বিশ্বমামা এমনভাবে বলতে লাগলেন, যেন চারাগাছটা ওঁর সব কথা বুঝতে পারছে। বুঝে মাথা নাড়ছে একটু-একটু।

সকল অধ্যায়

১. তিন নম্বর চোখ (উপন্যাস)
২. আকাশ দস্যু (উপন্যাস)
৩. অন্ধকারে সবুজ আলো (উপন্যাস)
৪. মহাকালের লিখন
৫. ইচ্ছাশক্তি
৬. বিশ্বমামা ও নকল ফুল
৭. বিশ্বমামার ভূত ধরা
৮. বিশ্বমামার খুদে বন্ধু
৯. বিশ্বমামা ও গলদা চিংড়ি
১০. বিশ্বমামা ও বেড়াল-ভূত
১১. বিশ্বমামার গোয়েন্দাগিরি
১২. বিশ্বমামার চোর ধরা
১৩. বিশ্বমামা ও অহি-নকুল
১৪. বিশ্বমামার রহস্য
১৫. বিশ্বমামার ম্যাজিক
১৬. ম্যাজিশিয়ান বিশ্বমামা
১৭. বিশ্বমামার হায় হায়
১৮. নীল রঙের মানুষ
১৯. নীল মানুষের কাহিনি
২০. নীল মানুষের সংসার
২১. নীল মানুষের মন খারাপ
২২. নীল মানুষের খেলা
২৩. নীল মানুষের পরাজয়
২৪. নীল মানুষের বন্ধু
২৫. নীল মানুষ ও ছোট্ট বন্ধু
২৬. সেই একলা নীল মানুষ
২৭. ভূতের দেশে নীল মানুষ
২৮. দেওয়ালের সেই ছবি
২৯. রণজয়ের শহর-অভিযান
৩০. আজব লড়াই
৩১. খেলার সঙ্গী
৩২. নতুন পুকুরের জাগ্রত দৈত্য
৩৩. রণজয় আর অলৌকিক শিশুরা
৩৪. পঞ্চমশক্তি
৩৫. অদৃশ্য পাখি
৩৬. সেই অদ্ভুত লোকটা
৩৭. হীরে কি গাছে ফলে?
৩৮. রাত্তিরবেলা একা একা
৩৯. মেঘচোর
৪০. সাধুবাবার হাত
৪১. লাল জঙ্গল
৪২. রাক্ষুসে পাথর

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন