বিশ্বমামা ও বেড়াল-ভূত

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

বিশ্বমামা ও বেড়াল-ভূত

মনে আছে, সেই দিনটির কথা। দুবছর কিংবা আড়াই বছর আগে। সকালবেলা বিশ্বমামা হঠাৎ এসেছিলেন আমাদের বাড়িতে। তিনি সারা পৃথিবী ঘুরে বেড়ান, কখন কোথায় থাকেন তার ঠিক নেই। তাই এরকম হঠাৎ-হঠাই আসেন। বাবা বাজারে গেছেন, মায়ের সঙ্গে দাদা আর আমি চা খেতে বসেছি, বিশ্বমামা একটা চেয়ার টেনে বসে বললেন, দিদি, আমাকে চা দাও।

মা ব্যস্ত হয়ে উঠলেন। বিশ্বমামা খেতে ভালোবাসেন। দূর-দূর দেশে থাকেন, সাহেবি খাবার খেতে হয়, বাঙালি খাবার তেমন জোটে না। আমরা সকালে চায়ের সঙ্গে দুখানা টোস্ট খাই জ্যাম-জেলি মাখিয়ে, কোনও-কোনও দিন সঙ্গে থাকে ডিম সেদ্ধ। বিশ্বমামার এসব একেবারে পছন্দ নয়। তিনি ভালোবাসেন লুচি আর আলু-ফুলকপির তরকারি। সাহেবরা লুচি বানাতে জানে না, ওসব দেশে ফুলকপির স্বাদও এত ভালো হয় না।

মা ব্যস্ত হয়ে বললেন, বিশ্ব একটু অপেক্ষা কর, আমি এক্ষুনি লুচি ভেজে দিচ্ছি। বিশ্বমামা আমাদের অবাক করে দিয়ে বললেন, না দিদি, আজ আর লুচি খাব না। বরং আরও আট-দশখানা টোস্ট করে নিয়ে এসো। আজ আমিই তোমাদের একটা নতুন খাবার খাওয়াব।

পকেট থেকে তিনি একটা গোল কৌটো বার করলেন, ওপরে হাঁসের ছবি আঁকা। কয়েকটা তার দিয়ে সেই কৌটোটা শক্ত করে বাঁধা, সেই তার উলটো করে পাকাতেই কৌটোর মুখটা আপনা-আপনি খুলে গেল। বিশ্বমামা একটা ছুরিতে তার ভেতরের জিনিসটা খানিকটা তুলে একটা টোস্টে মাখালেন। আমার হাতে সেটা দিয়ে বললেন, খেয়ে দ্যাখ।

একটা কামড় দিয়েই আমার মুখের চেহারাটা বদলে গেল। এমন চমৎকার খাবার জীবনে খাইনি।

দাদা আর মা দুজনেই খেয়ে একই কথা বললেন। এর স্বাদ একেবারে নতুন রকমের। একটু খেলেই মনে হয়, আরও খাই, আরও খাই।

দাদা জিগ্যেস করল, বিশ্বমামা, এটা কি তোমার আবিষ্কার?

বিশ্বমামা বললেন, না রে, কাল তো ফ্রান্স থেকে ফিরেছি। সেখান থেকে খেয়ে এসেছি। বেশ দামি জিনিস। এর নাম মনে রাখতে পারবি? নাম হচ্ছে, পাতে ফোয়া গ্রা।

দাদা বলল, আমার পাতে আর একটু ওই পাতে দাও।

এই সময় ঘরে ঢুকলো বুলেট। সে আমার কাকার ছেলে, কেন যে তার নাম বুলেট রাখা হয়েছিল। তার বয়েস মোটে ন-বছর, কিন্তু এমন দুষ্টু ছটফটে ছেলে পৃথিবীতে আর একটিও নেই।

বুলেটের আগেই খাওয়া হয়ে গেছে। তবু সে বলল, তোমরা কী খাচ্ছ, আমায় দাও, আমায় দাও।

তাকেও দেওয়া হল সেই পাতে’ মাখানো একটা টোস্ট।

সে সেটা নিয়েই দৌড় লাগাল। এক জায়গায় বসে সে কিছুই খেতে পারে না।

তারপর আমরা বসে-বসে গল্প করছি। কৌটোর খাবারটা সব শেষ হয়ে গেছে। হঠাৎ বাইরে একটা হই-হই শব্দ শুনতে পেলাম। কেউ বলছে, ধর ধর। কেউ বলছে, গেল গেল। কেউ বলছে, ছাদে, ছাদে উঠতে হবে।

আমি আর দাদা দৌড়ে ছাদে উঠে গেলাম। গিয়ে দেখি, সাঙ্ঘাতিক ব্যাপার, বুলেট ছাদের কার্নিস ধরে ঝুলছে। যে কোনও মুহূর্তে পড়ে যেতে পারে। আর তিনতলা থেকে পড়লেই নির্ঘাত মৃত্যু।

দাদা ছাদের পাঁচিলের ওপর অনেকখানি ঝুঁকে কোনওরকমে বুলেটের হাতটা ধরে ফেলল।

টেনে তোলার পর দেখা গেল তার মুখখানা ভয়ে শুকিয়ে গেছে। এর আগেও সে অনেক বিপদে পড়েছে, কিন্তু এতটা হয়নি।

দাদা জিগ্যেস করল, কেন ওখানে গিয়েছিলি?

বুলেট আড়ষ্ট ভাবে বলল, বেড়াল।

ওঃ, এই ছেলেটাকে নিয়ে আর পারা যায় না। যখন যেখানে বেড়াল দেখবে, অমনি তাড়া করে যাবে। বেড়াল দেখলেই ঢিল মারবে, বেড়াল দেখলেই খোঁচাবে। কালীপুজোর সময় একটা বেড়ালের ল্যাজে ফুলঝুরি বেঁধে দিয়েছিল।

বেড়ালরাও জেনে গেছে, এই ছেলেটা তাদের শত্রু। সেইজন্য শুধু বুলেটের থালা থেকেই মাছের টুকরো তুলে নেয়। আজকেও ‘পাতে’ মাখানো টোস্টটা এক কামড় খেয়ে বুলেট এক জায়গায় রেখেছিল, অমনি একটা বেড়াল কোথা থেকে এসে সেটা মুখে করে পালিয়েছে। সেই বেড়ালটাকে তাড়া করতে গিয়েই বুলেট ছাদের পাঁচিল ডিঙিয়ে কার্নিসে পড়ে যায়।

বুলেটকে নিচে এনে বসানো হল। সে বেড়াল তাড়া করতে গিয়ে আরও কতবার বিপদে পড়েছে, সেই গল্প শুরু করলেন মা।

বিশ্বমামা চুপ করে শুনলেন। একটাও কথা বললেন না। কেমন যেন অন্যমনস্ক হয়ে গেলেন।

মা বললেন, বিশ্ব, তুই ওকে বুঝিয়ে বল না, ও যেন আর বেড়ালকে তাড়া করে। বেড়ালও তো ভগবানের জীব। তাকে মারতে নেই। ও যদি বেড়াল দেখলেই না মারে, তা হলে বেড়ালরাও ওর খাবার চুরি করবে না।

বিশ্বমামা বললেন, ও কি আর আমার কথা শুনবে। তোমরা বোঝাও।

পরের দিন বিশ্বমামা চলে গেলেন হাজারিবাগ।

আমরাও সেখানে বেড়াতে যাব ভেবেছিলাম। বিশ্বমামা চিঠি লিখে জানালেন, তিনি অস্ট্রেলিয়া চলে যাচ্ছেন এক বছরের জন্য। সেখানে পড়াতে হবে।

তারপর আর অনেকদিন বিশ্বমামার সঙ্গে দেখা নেই।

মাঝে-মাঝে বিদেশ থেকে ফিরছেন বটে, কিন্তু কলকাতায় না থেকে চলে গেছেন হাজারিবাগ। সেখানে তিনি গবেষণা কেন্দ্র বানিয়েছেন।

আগেরবারেরই মতন হঠাৎ আবার একদিন এসে উপস্থিত হলেন আমাদের বাড়িতে। প্রথমেই আমি জিগ্যেস করলাম, বিশ্বমামা, সেই চমৎকার খাবারটা এনেছ?

বিশ্বমামা বললেন, সেটার নাম কী ছিল, মনে আছে? আমি আর দাদা মাথা চুলকোতে লাগলুম। কী যেন নামটা? মনে পড়ছে না তো।

বিশ্বমামা বললেন, এবার তো আমি ফ্রান্স থেকে আসিনি। তাই আনা হয়নি। আজ আমি লুচি আর ফুলকপির তরকারি খাব। আর ঝোলা গুড়।

খেতে-খেতে তিনি জিগ্যেস করলেন, বুলেট নামে সেই ছেলেটা কোথায়? তাকে ডাক।

বুলেট তো এখানে নেই। তার দুষ্টুমি কিছুতেই সামলানো যেত না। তাই তাকে হস্টেলে ভর্তি করে দেওয়া হয়েছে।

বিশ্বমামা জিগ্যেস করলেন, সে এখনও বেড়ালদের তাড়া করে?

দাদা বলল, ওই রোগটা এখনও সারেনি। বুলেট বেড়াল দেখলে তাড়া করবেই। ঢিল ছুঁড়বে, খোঁচা মারবে। এ জন্য সে একবার আছাড় খেয়ে হাত ভেঙেছে। আর একবার একটা বেড়াল ওকে কামড়ে দিয়েছিল।

বিশ্বমামা বললেন, কাছাকাছি ছুটি নেই? বুলেটকে একবার হাজারিবাগ নিয়ে গেলে হতো!

বিশ্বমামা বুলেটকে মাত্র একবার-দুবার দেখেছেন। তবু আমাদের বদলে তিনি এবার বুলেটকে নিয়েই কথা বলতে লাগলেন।

কদিন পরেই পুজোর ছুটি পড়ে গেল। আমরা বুলেটকে নিয়ে রওনা হয়ে গেলাম হাজারিবাগের দিকে।

যেতে-যেতে বিশ্বমামা বললেন, বুলেট, হাজারিবাগে বাঘ থাকে, জানিস তো? বাঘ আর বেড়াল তো প্রায় একই। একটু বড় আর ছোট। বাঘ দেখলেও তাড়া করতে পারবি?

দাদা বলল, বাঘ বুলেটকেই তাড়া করবে। এক গেরাশে খেয়ে ফেলবে।

বুলেট গম্ভীরভাবে বলল, আমি বাঘকেও ভয় পাই না। বন্দুক দিয়ে গুলি করব।

বিশ্বমামার গবেষণা কেন্দ্র আর থাকার বাড়ি এ দুটো আলাদা। বাড়িটা দোতলা, সঙ্গে অনেকটা বাগান আছে। সেই বাগানের এক কোণে গবেষণা কেন্দ্র।

বিশ্বমামা বলে দিলেন, আমরা ইচ্ছে করলে বাগানে বেড়াতে পারি, জঙ্গলেও যেতে পারি, কিন্তু তার অনুমতি না নিয়ে গবেষণা কেন্দ্রে ঢোকা যাবে না। যখন সময় হবে, তিনি নিজেই আমাদের গবেষণা কেন্দ্রটি দেখাবেন।

খাওয়া-দাওয়ার চমৎকার ব্যবস্থা। একটা জিপ গাড়ি আছে, তা নিয়ে আমরা জঙ্গলে বেড়াতে যেতে পারি। এখনও বাঘ দেখা যায়নি বটে, কিন্তু অনেক ময়ুর আর হরিণ দেখেছি। আর একটা ভাল্লুক।

বুলেট এখানে যথারীতি একটা বেড়ালকে নিয়ে ব্যস্ত। থাকবার বাড়িটাতে যখন তখন একটা বেড়াল আসে। বেড়ালটাকে ভারি চমৎকার দেখতে। বেশ মোটকা-সোটকা কাবুলি বেড়াল, একেবারে হলদে রং, চারটে পায়ের কাছে যেন কালোমোজা পরা, কপালের ঠিক মাঝখানেও একটা গোল কালো ছাপ, যেন কালো রঙের চাঁদ। বেড়ালটাকে দেখলেই আদর করতে ইচ্ছে করে।

কিন্তু আদর করার কি উপায় আছে? সেটাকে দেখলেই বুলেট তাড়া করে যায়, বেড়ালটাও সঙ্গে সঙ্গে পালায়। দেড় দিনের মধ্যেই বেড়ালটা বুঝে গেল, বুলেট তার শত্রু। সেও ইচ্ছে করেই জ্বালাতন করে বুলেটকে।

বিশ্বমামা বেড়ালটার সঙ্গে বুলেটের এই চোর-পুলিশ খেলা দেখে কিছুই বলেন না, হাসেন শুধু। বাধাও দেন না।

একদিন বুলেট বেড়ালটাকে তাড়া করতে গিয়ে আছাড় খেয়ে পা মচকাল।

বিশ্বমামা তখন বলেন, জানিস বুলেট, আগেকার দিনে লোকে কী করত? বেড়ালকে একেবারে মেরে ফেলতে নেই, তাতে পাপ হয়। সেই জন্য, যারা বেড়াল পছন্দ করত না, তারা বেড়াল পার করে দিত।

বুলেট জিগ্যেস করল, বেড়াল-পার মানে কী?

বিশ্বমামা বললেন, কোনওরকমে ফাঁদ পেতে বেড়ালটাকে ধরে ফেলতে হয়। তারপর একটা থলেতে পুরে মুখটা বেঁধে দিতে হয়। বেড়ালটা আর বেরুতে পারে না। এবার সেই থলেসুদ্ধ বেড়ালটাকে অনেক দূরে নিয়ে গিয়ে থলেটার মুখ খুলে ছেড়ে দিয়ে পালিয়ে আসতে হয়।

দাদা বলল, অনেক সময় মানুষরা বাড়ি ফিরে আসার আগেই সেই বেড়ালটা দৌড়ে বাড়ি পৌঁছে যেত। ওরা দারুণ রাস্তা চেনে।

বিশ্বমামা বললেন, আগেকার দিনে লোকে পায়ে হেঁটে যেত। এখন গাড়ি করে অনেক দূরে গিয়ে ছেড়ে দিলে কি আর বেড়াল ফিরতে পারবে? বেড়াল কি গাড়ির সমান দৌড়োত পারবে?

বুলেট বলে উঠল, আমি বেড়াল-পার করব। আমি বেড়াল-পার করব।

বিশ্বমামা বললেন, একটা পরীক্ষা করে দেখলে মন্দ হয় না। যদি একটা বেড়ালকে পাহাড়ের ওপারে নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়, সত্যি কি ফিরতে পারবে?

এটা পরীক্ষা করে দেখতে আমরাও রাজি।

বেড়ালটাকে ধরা মোটেই শক্ত হবে না। বুলেট একটা অন্য ঘরে থাকলে বেড়ালটা আমাদের ভয় পায় না। ডাকলে কাছে আসে। একবার আসতেই তাকে ধরে একটু আদর করার পরই ধরে ফেলা হল একটা চটের থলেতে। বেড়ালটা ম্যাও ম্যাও করে খুব চাঁচাতে লাগল, আমরা সেটাকে নিয়ে দৌড়ে জিপ গাড়িটায় উঠলাম।

বিশ্বমামা অবশ্য গেলেন না।

বুলেটই চেপে ধরে রইল থলিটা। বেড়ালটা মাঝে-মাঝে চাঁচালে সে থাপ্পড় মারে। এখন তো বেড়ালটা আর কামড়াতে পারবে না।

জঙ্গলের মধ্য দিয়ে, আঁকাবাঁকা পথ দিয়ে চলল জিপটা। তারপর ছোট-ছোট পাহাড়। বিকেল শেষ হয়ে এসেছে। আকাশটা লাল।

প্রায় দশ-বারো মাইল যাওয়ার পর জিপটা একটা ছোট পাহাড়ের ওপরে পৌঁছে গেল। ড্রাইভার জিগ্যেস করল, এই জায়গাটাই ঠিক আছে, কী বলুন।

পাহাড়টা ঢালু হয়ে নেমে গেছে। নিচে দেখা যাচ্ছে একটা নদী। বুলেট বলল, হা এখানেই।

থলেটার মুখ খুলে দিতেই বেড়ালটা লাফিয়ে বেরিয়ে এল। বুলেট সেটাকে ঠেলে দিতেই সে গড়াতে লাগল উলটো দিকে। গড়াতে-গড়াতে নেমে গেল অনেকখানি। আর দেখা গেল না। সম্ভবত একেবারে নদীতে গিয়ে পড়বে।

এমন সুন্দর বেড়ালটাকে এরকম বিপদের মধ্যে ফেলে দিতে আমার খুব খারাপ লাগল। কিন্তু বিশ্বমামা নিজেই তো এই পরীক্ষাটা করতে বলেছেন।

দৌড়ে এসে জিপে উঠলাম। বুলেট ভালো করে জিপটা সার্চ করে দেখে নিল, বেড়ালটা কোনওরকমে জিপে উঠে লুকিয়ে আছে কি না। যদিও সে সম্ভাবনা একেবারেই নেই। আমরা সবাই দেখেছি বেড়ালটা গড়িয়ে পড়ে গেছে!

জিপটা চলছে, আমরা পেছনে মাঝে-মাঝেই দেখছি পেছন ফিরে। না, সে হলদে বেড়ালটা ফিরতে পারবে না।

বাড়িতে ফিরতে ফিরতে সন্ধে হয়ে গেল। বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছেন বিশ্বমামা। খুব ব্যস্ত ভাব। জিগ্যেস করলেন, ফেলে দিয়েছিস? ফিরতে পারবে না তো?

আমরা সবাই প্রায় একসঙ্গে বলে উঠলাম, না, ও আর জীবনে এখানে ফিরতে পারবে না।

দাদা বলল, জঙ্গলে থেকে ও আস্তে-আস্তে বন-বিড়াল হয়ে যাবে।

বিশ্বমামা বুলেটকে বললেন, কী বুলেট মাস্টার, খুশি তো? তোমার এক শত্রু গেছে। এবার আর একটা পরীক্ষা করে দেখা যাক।

তিনি বুলেটকে নিয়ে একটা ঘরে ঢুকিয়ে দিলেন। তারপর দরজাটা বন্ধ করতে করতে বললেন, বুলেট এ ঘরে কিছুক্ষণ একা থাকবে।

এক মিনিট বাদেই বুলেট বিরাট জোরে ভয়ের চিৎকার করে উঠল।

বাইরে থেকে বিশ্বমামা বললেন, কী হয়েছে, বুলেট?

বুলেট বলল, দরজা খুলে দাও! দরজা খুলে দাও! দুটো চোখ জ্বলছে। আমার দিকে এই ধেয়ে আসছে।

বিশ্বমামা বললেন, শুধু চোখ?

বুলেট বলল, অন্ধকার, আগুনের মতন জ্বলছে দুটো চোখ। আমাকে বেরোতে দাও। বিশ্বমামা বাইরে থেকে একটা সুইচ টিপে বললেন, অন্ধকার বলেই ভয় পাচ্ছ। এবার দেখো তো! আলো জ্বলছে।

বুলেট আরও চোরে চেঁচিয়ে বলল, ভূত! ভূত!

বিশ্বমামা বললেন, তাই নাকি? কীসের ভূত!

বুলেট বলল, বেড়ালের ভূত। বেড়ালটা ফিরে এসেছে। বাঁচাও, বাঁচাও! আমি আর কোনওদিন বেড়াল মারব না।

বিশ্বমামা দরজাটা খুলে দিতেই দেখা গেল, সেই ঘরের এক কোণে একটা বেড়াল ফাঁস-ফাঁস করছে।

বেড়ালটাকে দেখে আমাদেরও চক্ষু ছানাবড়া। এ তো সেই হলদে বেড়ালটা। চার পায়ে কালো মোজা, মাথায় কালো চাঁদ।

আমি সেঁক গিলে বললাম, কী করে ফিরে এল? এ যে অসম্ভব।

বিশ্বমামা আমার আর দাদার দিকে তাকিয়ে বললেন, নীলু আর বিলু, তোরাও দেখছিস তো, সেই বেড়ালটা ফিরে এসেছে?

দুজনেই মাথা নাড়লাম।

বিশ্বমামা হো-হো করে হেসে উঠলেন।

তারপর বললেন, যাক, তাহলে আমার পরীক্ষা সার্থক।

এখনও বুঝতে না পেরে জিগ্যেস করলাম, কীসের পরীক্ষা? বেড়ালটা ফিরল কী করে?

বিশ্বমামা বললেন, ফেরেনি।

দাদা বলল, তাহলে? ভূত হয়ে তো আর আসতে পারে না?

বিশ্বমামা বললেন, বেড়াল-ভূতের কথা কোনওদিন শোনা যায়নি। বেড়ালটা ফিরেও আসেনি। ভূতও হয়নি।

তারপর সেই বেড়ালটাকে যখন তুলে নিয়ে বললেন, এটা আমার সৃষ্টি। ক্লোনিং কাকে বলে জানিস? বিদেশেতে একটা ভেড়ার মতন অবিকল আর একটা ভেড়ার সৃষ্টি করা হয়েছে। এই যমজ তৈরির আগে ভেবেছিলাম, একটা ইঁদুর কিংবা কুকুরের ক্লোনিং করব। তোদের বাড়িতে বুলেটবাবুর কাণ্ড দেখে মনে হল, তাহলে বেড়ালই তৈরি করা। যাক। হুবহু একরকম হয় কিনা, সেটা বুলেটের ওপর দিয়েই পরীক্ষা করলাম।

বুলেট আর কোনও কথা বলছে না।

বিশ্বমামা বললেন, আগের বেড়ালটাও মরবেও না, হারিয়েও যাবে না। ওই পাহাড়ের নিচে একজন লোক রেখে দিয়েছি। সে ওটাকে নিয়ে আসবে।

দাদা জিগ্যেস করলেন, বিশ্বমামা, মানুষের ক্লোনিং করা যায়?

বিশ্বমামা বললেন, চেষ্টা করলে অসম্ভব নয় এখন। কিন্তু ভেবে দ্যাখো তো, এই বুলেটের মতন যদি ঠিক আর একটা ছেলে তৈরি করা যায়, কী সাঙ্ঘাতিক কাণ্ড হবে।

এবার আমরা সবাই হেসে উঠলাম।

সকল অধ্যায়

১. তিন নম্বর চোখ (উপন্যাস)
২. আকাশ দস্যু (উপন্যাস)
৩. অন্ধকারে সবুজ আলো (উপন্যাস)
৪. মহাকালের লিখন
৫. ইচ্ছাশক্তি
৬. বিশ্বমামা ও নকল ফুল
৭. বিশ্বমামার ভূত ধরা
৮. বিশ্বমামার খুদে বন্ধু
৯. বিশ্বমামা ও গলদা চিংড়ি
১০. বিশ্বমামা ও বেড়াল-ভূত
১১. বিশ্বমামার গোয়েন্দাগিরি
১২. বিশ্বমামার চোর ধরা
১৩. বিশ্বমামা ও অহি-নকুল
১৪. বিশ্বমামার রহস্য
১৫. বিশ্বমামার ম্যাজিক
১৬. ম্যাজিশিয়ান বিশ্বমামা
১৭. বিশ্বমামার হায় হায়
১৮. নীল রঙের মানুষ
১৯. নীল মানুষের কাহিনি
২০. নীল মানুষের সংসার
২১. নীল মানুষের মন খারাপ
২২. নীল মানুষের খেলা
২৩. নীল মানুষের পরাজয়
২৪. নীল মানুষের বন্ধু
২৫. নীল মানুষ ও ছোট্ট বন্ধু
২৬. সেই একলা নীল মানুষ
২৭. ভূতের দেশে নীল মানুষ
২৮. দেওয়ালের সেই ছবি
২৯. রণজয়ের শহর-অভিযান
৩০. আজব লড়াই
৩১. খেলার সঙ্গী
৩২. নতুন পুকুরের জাগ্রত দৈত্য
৩৩. রণজয় আর অলৌকিক শিশুরা
৩৪. পঞ্চমশক্তি
৩৫. অদৃশ্য পাখি
৩৬. সেই অদ্ভুত লোকটা
৩৭. হীরে কি গাছে ফলে?
৩৮. রাত্তিরবেলা একা একা
৩৯. মেঘচোর
৪০. সাধুবাবার হাত
৪১. লাল জঙ্গল
৪২. রাক্ষুসে পাথর

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন