রাত ভ’রে বৃষ্টি – ৫

বুদ্ধদেব বসু

পাঁচ

ভোরের দিকে দু’জনেই ঘুমিয়ে পড়েছিলো, উঠলো বেলায়। আর মেঘ নেই, ঝকঝকে রোদ্দুরের দিন।

চায়ের টেবিলে বসলো এসে দু’জনে। জানালা দিয়ে ট্যারচা রোদ টেবিলে, চায়ের পেয়ালাগুলো ঝকঝকে আর সাদা।

দুর্গামণি চা নিয়ে এলো। নয়নাংশু খবর-কাগজ খুললো।

—‘আজ বড্ড বেলা হ’য়ে গেছে। দুর্গামণি, শিগগির বাজারে যাও।’

—‘দ্য গোল দেখছি মহা মস্তান হ’য়ে উঠেছে। আমার আজ আপিশ নেই। মহরমের ছুটি। (‘ওর আজ ছুটি। আমাকে কিছু করতে হবে আজ। কিছু নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হবে সারাদিন। আলমারি থেকে সব শাড়ি নামিয়ে আবার গোছাবো। দেয়ালে ঝুল। পাখায় ধুলো। রান্নাঘরে ঘষামাজা। বাথরুমে ঘষামাজা। ভেজা কাগজ ঘ’ষে-ঘ’ষে জানালার কাঁচ ঝকঝকে। নিজে দাঁড়িয়ে থেকে সব করাবো কেষ্টকে দিয়ে। নিজের হাতে করবো সব। সবচেয়ে ভালো হাতের কাজ, গতর খাটা। কিছু ভাবার ফুরসত নেই। মনের বালাই ঝেঁটিয়ে দূর। খিদে। ক্লান্তি। ঘুম। বস্তির ঝিয়েরা কখনো কি ভালোবাসা নিয়ে মাথা ঘামায়? মেরুদণ্ড বাঁকিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে ঘর মোছা, বাসন বোয়া, কাপড় কাচা, সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত রোজ, তার তলায় চাপা প’ড়ে যায় শাশুড়ির লাথি, স্বামীর হুংকার, ছেলেপুলের সংখ্যা ও অপমৃত্যু। সুখের সময় নেই, শোকের সময় নেই: পরম চিকিত্সক খাটুনি।’)

—‘এই আনারসের জ্যামটা বেশ। চোখে দেখবে নাকি?

—‘না। আবার একটা ট্রেন- দুর্ঘটনা। কী যে হচ্ছে।’

—‘কেমন শরৎকালের মতো হয়েছে আজ দিনটা।’ মালতীর চোখ বাইরে থেকে ঘরে ফিরে এলো—বাতাবি-রঙের দেয়াল, আলমারিতে কাচের বাসন, কার যেন আঁকা সূর্যমুখী ফুলের ছবি। সব ঝকঝক করছে, সারা রাত বৃষ্টির পরে ঝকঝকে রোদ্দুরে।

—‘তোমার আজ ছুটি?’

—‘আমার আজ ছুটি।’

(‘আমার আজ ছুটি। মুশকিল। কী করি বাড়ি ব’সে সারাদিন? মালতী। আর আমি। এক বাড়িতে, একা বাড়িতে সারাদিন। কী করি? বিবাহবিচ্ছেদ? আদালত? ছোঃ! নাটুকেপনা। বাজে হৈ-চৈ। কিন্তু মালতী যদি চায়? চাইবে কি? সে-ই বা তাতে এমন কী পাবে যা এখন পাচ্ছে না! মোহ—কেটে যাবে। জয়ন্ত—কেটে পড়বে একদিন। তারও আছে স্ত্রী ছেলেপুলে সংসার। আর মালতীর আছে বুন্নি বাপের বাড়ি শ্বশুরবাড়ি। আর—শেষ পর্যন্ত কে কী বলবে সেই ভাবনা। আর আমি—কিন্তু না! এ সহ্য করা যায় না। আমি অপমানিত হয়েছি। মাসের পর মাস, দিনের পর দিন—অসম্মান, অপমান, লাঞ্ছনা। আমি সহ্য করবো না। আমি প্রতিশোধ নেব। ডিভোর্স। বুন্নিকে দেবো না। এক পয়সা খেসারত দেবো না। বুন্নিকে শেখাবো তোমার মা খারাপ, তোমার মা-কে তুমি ভুলে যাও। যাক যেখানে খুশি; চুলোয় যাক; গোল্লায় যাক। আবার বিয়ে করুক। আমি কিছু জানি না। আমি প্রতিশোধ নেবো।’)

চা গিলতে গিয়ে বিষম ঠেকলো নয়নাংশুর। মালতী বললো, ‘এক ঢোঁক জল খাও।’ নয়নাংশু জলের গ্লাশে চুমুক দিয়ে খবরের কাগজের পাতা ওল্টালো।

—‘কলকাতায় আরো পাঁচশো ট্যাক্সি ছাড়া হবে। ভালো।’

—‘বুন্নিকে অনেকদিন ধরে কথা দিয়ে রেখেছি চিড়িয়াখানায় নিয়ে যাবো। হ’য়ে আর উঠছে না।’

(‘সেই ভালো। বেরিয়ে পড়ি চিড়িয়াখানায় বুন্নিকে নিয়ে। সঙ্গে অংশু, আর-জয়ন্ত। কী দোষ তাতে—বেশ তো, ভালো। অনিদ্রায়, অন্ধকারে বৃষ্টির শব্দে—সব কেমন প্রকাণ্ড হ’য়ে উঠেছিলো কাল, আমি ভয় পেয়েছিলাম, হঠাৎ মনে হয়েছিলো অচেনা দেশে রাস্তা হারিয়ে ফেলেছি। কিন্তু আজ এই শরতের মত রোদ্দুরে সব কেমন সহজ মনে হচ্ছে—সহজ, আর স্বাভাবিক কী হয়েছে? কিছুই হয়নি। নয়নাংশুরই বন্ধু জয়ন্ত—আমারও বন্ধু। বুন্নিও ভালোবাসে জয়ন্তকে। জয়ন্ত কাছে থাকলে নিশ্চিত লাগে আমার—এই সংসারে ও আমার মস্ত সহায়। আর এই সংসার কার? নয়নাংশুর।’)

চৌরঙ্গিতে দ্বারভাঙা বাড়িটা ভেঙে ফেলেছে। একটা স্কাইস্ক্রেপার উঠবে সেখানে।’

—‘ভাবছিলাম আজ নিয়ে যাবো। দিনটা বেশি গরম হবে না আজ। বৃষ্টিও নেই।’

—‘বেশ তো। কেষ্টকে পাঠিয়ে দাও বুন্নিকে নিয়ে আসুক।’

—‘পাঠিয়ে দিয়েছি। বুন্নি এসে পড়বে এক্ষুণি। তুমি তো জীবজন্তু দেখতে ভালোবাসো। তুমি কি যাবে?’

—‘আমি? না। আমি যাবো না।’

(‘নির্লজ্জ!’’ তুমি কি যাবে?” চোখে মিথ্যা, মুখে মিথ্যা, প্রতিটি পা ফেলায় মিথ্যা। কিন্তু আমি ক্ষমা করবো না। আমি ক্ষমা করবো না। আমি যন্ত্রণা দেবো ওকে, ছোট-ছোট যন্ত্রণা, সূক্ষ্ম নির্যাতন-দিনের পর দিন বছরের পর বছর, সারা জীবন! আমি ভুলবো না, আমি ছাড়বো না ওকে, আমি ক্ষমা করবো না। কষ্ট দেবো—সারা জীবন। বুন্নি বড়ো হ’তে-হ’তে ওর মা-র কাছে শুনবে ওর বাবা এক নিষ্ঠুর খামখেয়ালি অত্যাচারী মানুষ। বুন্নি আমাকে ভালোবাসবে না। সকলেই ওর পক্ষ নেবে, যেহেতু ও স্ত্রীলোক। আর যেহেতু ও স্ত্রীলোক, আমি কিছু বলতে পারবো না কখনো, সারা জীবন মুখ বুজে থাকতে হবে, বজায় রাখতে হবে আমার স্ত্রীর সম্মান। আর স্ত্রীলোককে অবলা বলি আমরা! কী মারাত্মক অবলার বল, আর পুরুষ—যদি ভদ্রলোক হয়—সে কি সাংঘাতিক অসহায়!’)

—‘একটা সাদা ভালুক এসেছে চিড়িয়াখানায়। বরফের ঘরে রেখেছে। যাবে নাকি।’

—‘আমার অন্য কাজ আছে। বরং জয়ন্তকে খবর পাঠিয়ে দাও। সে বেশ বুন্নিকে কাঁধে তুলে দেখাতে পারবে সব।’

‘জয়ন্তবাবুর কি সময় হবে এক্ষুণি?’

‘তুমি বললেই হবে। কেষ্টকে পাটিয়ে দাও।’

চোখাচোখি হ’লো, তাদের, সকালে ওঠার পরে এই প্রথম। দুটো দৃষ্টি ধাক্কা খেয়ে ফিরে এলো।

(‘এটা কেন বলতে গেলাম? কী বোকামি! না, এই আমার প্রতিশোধ। তুমি যা চাও তা-ই দিচ্ছি তোমাকে। তোমাকে ছেড়ে দিচ্ছি। অথচ ছাড়ছি না। আমি তোমাকে যন্ত্রণা দেবো, ছোটো ছোটো সূক্ষ্ম যন্ত্রণা, দিনের পর দিন, বছরের পর বছর—তাই আমি তোমাকে চাই। তাই তোমাকে দরকার আমার!-শুধু তা-ই? একটা স্মৃতি কি নেই? কিন্তু সেই স্মৃতিও আমি মুছে ফেলবো মন থেকে, উপড়ে ফেলবো, থেঁতলে দেবো পায়ের তলায়। কিন্তু যদি আমি মনস্থির করি ওকেই ভালোবাসবো? সব নিয়েও, সব সত্ত্বেও, ওকেই ? বিনা আশায়, বিনা প্রতিদানে, কষ্ট ভুলে গিয়ে? তা কি সম্ভব নয়? মনস্থির করলে সবই পারা যায়। ভালোবাসতে পারাটাই সুখের—যদি শুধু ভালোবাসাকেই ভালোবাসি, ধরাছোঁয়ার মতো আর-কিছু যদি নাও থাকে, তবু।—কিন্তু না, আমি উন্টোরকম মনস্থির করবো। উপড়ে দেবো শিকড়সুদ্ধ গাছ, যাতে একদিন ফুল আর ফল ধরেছিলো। প্রতিটি পাতা ছিড়বো নিজের হাতে। পায়ের তলায় মাড়িয়ে মাড়িয়ে থেঁতলে দেবো ফুল, ফল, পাতা, শিকড়। সেই জমিতে ফুটে উঠবে আমার কষ্ট, আমার ঘৃণা, এক আশ্চর্য বিশাল বিদেশী কোনো ফুলের মতো। ক্যাক্টাসের মতো সুন্দর ও কাঁটায় ভরা, ক্যাক্টাসের ফুলের মতো, মহার্ঘ, সাপের ফণার মতো বিষাক্ত ও সুন্দর। এই আমার প্রতিশোধ।’)

নয়নাংশু বসার ঘরে এলো; সোফায় বসে ‘আর্ট অ্যান্ড পাব্লিসিটি’ নামে একটা পত্রিকার পাতা ওল্টাতে লাগলো। কী চমৎকার বুক-কভার করে আজকাল আমেরিকায়। সিগারেটগুলি একদম নেতিয়ে থাকে বর্ষাকালে, ধোঁয়া বেরোয় না। আমার ফাউন্টেনপেনটা সারাতে দিতে হবে। আমি দাড়ি কামাইনি এখনো। কামাবো না? না থাক, ছুটির দিন। না-কামালে কুটকুট করে। করুক। কামাবো না? না, হ্যাঁ, না, হ্যাঁ, না। আজ সারাদিন ধরে একটা বই পড়লে হয়। উপন্যাস? নাটক? কোনো জীবনী? জীবনী ভালো হবে—না, নাটক—না, উপন্যাস। কোথাও ঘুরে আসবো চটি পায়ে আধময়লা পাজামা-পাঞ্জাবি প’রে? না—আজ বড্ড রোদ, আলো। আমার ভালো লাগে মেঘলা দিন, ছায়া, বৃষ্টি, আবছায়া, আমার ভালো লাগে শহর বৃষ্টি দোতলা বাস নিয়ন-বাতি, ঝাপসা শহর মানুষ ঝাপসা দিন।

চোখ মেলে দেখলো সামনে মালতী দাঁড়িয়ে। স্নান ক’রে এসেছে এইমাত্র, পিঠের উপর চুল খোলা, হাতে চিরুনি। নয়নাংশুর হঠাৎ সময়টা গোলমাল হ’য়ে গেলো—মনে হলো একটা অন্য কোনো দিন, অনেক আগেকার অন্য কোনো দিন। চোখ তুলে তাকালো মালতীর দিকে।

—‘তুমি ঘুমিয়ে পড়েছিলে ব’সে ব’সে।’

—‘তা-ই নাকি?’

—‘আমি ভাবছি বরং বেলেঘাটায় যাই।’

—‘হঠাৎ বেলেঘাটায়?’

—‘পিসিমাকে একবার দেখে আসি।’ পিসিমার কথা শোনামাত্র নয়নাংশুর সব মনে পড়ে গেলো। চোখ সরিয়ে নিলো।

‘চিড়িয়াখানার কী হ’লো? ‘

—‘আর-একদিন হবে।’

—‘বুন্নি এলে তাকে নিয়ে যেয়ো।’

—‘হ্যাঁ, বুন্নিকে তো নেবোই। তুমি?’

—‘আমি?

—‘তুমি কি যাবে?’

—‘চিড়িয়াখানায়?’

—‘না, বেলেঘাটায়। তুমি কি যাবে?’

—‘আমি তো কাল গিয়েছিলুম।’

—‘আজও যেতে পারো।’

—‘না, আজ আমি যাবো না।’

(‘যাবে না? আলবত যাবে। আমি মিষ্টি ক’রে বলবো দু-চারবার, চোখে মিনতি ফুটিয়ে বলবো, “চলো না!” একবার হয়তো হাত দেবো ওর চুলে—আর তখন ও গুটিগুটি পায়ে উঠে দাঁড়াবে। পুরুষ! দশটা পুরুষকে একসঙ্গে খেলাতে পারে একটা মেয়ে, মাথায় যদি ছিটেফোঁটা বুদ্ধি থাকে। অমন বোকা একটা দু পেয়ে জন্তু ভগবান আর তৈরি করেননি। ছিঃ! কী ভাবছি! অংশু তো কোনো ক্ষতি করেনি আমার। ও ভালো, কিন্তু ওর ভালোত্ব তেমন কাজে লাগলো না—এই হয়েছে মুশকিল। কাজে লাগলো না—তারই বা অর্থ কী? আমি কি ওকে ছেড়ে গিয়েছি, না কি যেতে পারি, না কি ও-ই আমাকে কখনো বলবে ‘‘চ’লে যাও’’? না- কেউ যেন কল্পনাও না করে আমি এই সংসার ভেঙে দেবো। তা কী ক’রে হয়—আমি তো বুন্নির মা। আমার জামাই হবে একদিন, কুটম্ব হবে, নাতি-নাতনি হবে। এই সংসার আমার—তিলে তিলে আমি একে গড়েছি, সাজিয়েছি, বাড়িয়েছি। আমি অংশুরই স্ত্রী-থাকবে চিরকাল—সব জেনে, সব বুঝেও অংশুকে থাকতে হবে আমার স্বামী সেজে। এই ওর শাস্তি, এই আমার শাস্তি। আর শান্তিও এতেই।’)

—‘শোনো, আমি আজ সারাদিন বেলেঘাটায় কাটিয়ে আসবো—অনেকদিন যাওয়া হয়নি ও-বাড়িতে।’

নয়নাংশু হাঁটুর উপর হাঁটু তুলে দিলো, চোখ নামালো ‘আর্ট অ্যান্ড পাব্লিসিটি’র পাতার উপর। মালতী শোবার ঘরে অদৃশ্য হ’লো।

(“চিড়িয়াখানায় বেলেঘাটায়, চিংড়িহাটায় উল্টোডাঙ্গায়। আমি কি ঘুমিয়ে পড়ছি আবার? না, ঘুমোলে চলবে না, আমাকে ভাবতে হবে। পাছে সন্ধেবেলা জয়ন্ত এসে ফিরে যায়, তাই এখনই পিসিমাকে দেখতে যাচ্ছে। কর্তব্য ত্রুটি হ’তে দেবে না। বা হয়তো জয়ন্তকে এড়াতে চায় আজ। বা হয়তো সবই আমার ভুল। বা হয়তো ভুল নয়। বা হয়তো বাড়িয়ে দেখছি পুরো ব্যাপারটাকে। বা হয়তো যা ভাবছি তা নয়। হয়তো যা ভাবছি তা-ই। সে যা হয় হোক, আমার আর এসে যায় না। কিছু। ওর কথায় আমি রাজী হলেও কিছু এসে যায় না। জয়ন্ত, মালতী, আমি—একসঙ্গে বুন্নিকে নিয়ে চিড়িয়াখানায়, বেশ তো। আমার যাওয়া, আমার না-যাওয়া—একই ব্যাপার। কোনো তফাত নেই। দাড়ি কামিয়ে স্নান ক’রে ফিটফাট হ’য়ে যাই যদি ‘‘সপরিবারে’’ বেলেঘাটায় সারাদিন কাটিয়ে আসি? গেলে হয়, না-গেলেও হয়—কোনো তফাত হবে না। এটা ফরাশি বিপ্লব নয়, রুশ বিপ্লব নয়, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ নয়—পঞ্চাশ বছর পরে এর কী চিহ্ন থাকবে? দশ বছর পরে এর কী চিহ্ন থাকবে? পাঁচ বছর পরে এর কী চিহ্ন থাকবে? জীবন-স্টিমরোলার, ভীষণ, ক্ষমাহীন, দয়াময়। এমনি চলবে। একদিন স্বপ্ন থেকে জেগে উঠবে ওরা—মালতী আর জয়ন্ত। আর নয়নাংশু। কষ্ট ম’রে যাবে, ইচ্ছে ম’রে যাবে, শরীর ধ্বসে যাবে, গনগনে রাগের উনুনে পড়ে থাকবে শুধু একমুঠো ছাই। এই তো; এখনই রাগ নেই আমার দিনের আলো, খবর-কাগজ, ট্রামের শব্দ; সব মিলিয়ে কেমন সাধারণ, কেমন সাধারণ! রোজ এই দিনের আলো ট্রামের শব্দ খবর-কাগজ-রোজ-রোজ-রোজ—তারপর একদিন ধুমধাম ক’রে বুন্নির বিয়ে দেবে তোমরা, তুমি আর মালতী—ধীরে-ধীরে বুড়ো হবে—যেমন চারদিকে কোটি-কোটি মানুষ—অন্ধ, মূর্খ, অচেতন-তেমনি বেঁচে থাকবে বছরের পর বছর। কিন্তু একটা কথা ঠিক জেনো; ছেঁড়া তার আর জোড়া লাগবে না, হারানো সুর ফিরে পাবে না কখনো-যে তোমাকে ভালবাসে না তার সঙ্গে, যাকে তুমি ভালবাসতে ভুলে যাবে তার সঙ্গে-ভালবাসা জরুরী নয়, স্বামী-স্ত্রী জরুরী, বেঁচে থাকাটা জরুরী। একটা হাত কাটা গেলেও বেঁচে থাকে মানুষ, একটা ফুসফুস নষ্ট হ’লেও বেঁচে থাকে—সে-তুলনায় কত ছোট এই ক্ষতি, কত তুচ্ছ এই ঘটনা। ধূসর—কালো নয় উজ্জ্বলও নয়, হিংস্র সুন্দর মহৎ নিষ্ঠুর ভোগী ত্যাগী—কোনোটাই নয়—কোটি-কোটি মানুষ—জীবন—অফুরন্ত, মূর্খ, অন্তহীন। তুমি এমন কী মহাপুরুষ যে অন্যরকম পাবে? ওঠো, নয়নাংশু, তাকিয়ে দ্যাখো আজকের এই ঝকঝকে দিনটির দিকে তোমাদের এই নতুন জীবনকে অভ্যর্থনা জানাও।’)

***

[পড়ে ভাল লাগলে বই কিনে রাখুন।]

অধ্যায় ৫ / ৫

সকল অধ্যায়

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন