লেখক-জন্ম

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

পূর্বজন্মে অবশ্য একটা মহাপাপ করিয়াছিলাম নতুবা লেখক হইয়া জন্মিলাম কেন? মনের ভাবগুলা যখন বাহিরে আনিয়া ফেলিয়াছি তখন বাহিরের লোক উচিত অনুচিত যে কথাই বলে না শুনিয়া উপায় নাই। সুধাকর চন্দ্র, তুমি যদি ক্ষীরোদ সমুদ্রের মধ্যেই আরামে শয়ান থাকিতে তাহা হইলে কবিদের কবিত্ব করিবার কিঞ্চিৎ ব্যাঘাত হইত বটে কিন্তু নিশীথের শৃগাল তোমার দিকে মুখ তুলিয়া অকস্মাৎ তারস্বরে অসম্মান জানাইয়া যাইত না।

মনের ভাব যখন মনে ছিল সে যেন আমার গৃহদেবতা ইষ্টদেবতা ছিল; এখন কী মনে করিয়া তাহাকে চতুষ্পথে বটবক্ষের তলায় স্থাপন করিলাম? সকল জীবজন্তুই কি তাহার সম্মান বোঝে? যদি বা না বোঝে তবুও কি তাহাকে বিশ্বের চোখের সামনে পাথর হইয় বসিয়া থাকিতে হয় না।

তাহার পর আবার আত্মীয় বন্ধুদের কাছেও জবাবদিহি আছে। এটা কেন লিখিলে, ওটা কীভাবে বলিলে, সেটার অর্থ কী? এও তো বিষম দায়! যেন আমি কোদাল দিয়া পথ কাটিতেছি বলিয়া গাড়ি করিয়া মানুষকে পার করিয়া দেওয়াও আমার কর্তব্য।

যাহা হৌক, ঝগড়া কাহার সহিত করিব? জন্মকালে অদৃষ্ট পুরুষ ললাটে এইরূপ লিখিয়া গিয়াছেন। বসিয়া কিন্তু সেই প্রবীণ ভাগ্যলিপিলেখক মহাশয়কে তাঁহার কোন্‌ লিখনের জন্য সহস্র লাঞ্ছনা করিলেও তিনি দিব্য গা-ঢাকা দিয়া বসিয়া থাকেন। আর তাঁহারই বশবর্তী হইয়া আমরা যদি দুটো কথা লিখি তাহা হইলে কথার আর শেষ থাকে না।

পকেটবুক, [রচনাকাল : ফাল্গুন, ১২৯৯ ]

সকল অধ্যায়

১. সান্ত্বনা
২. নিঃস্বার্থ প্রেম
৩. যথার্থ দোসর
৪. গোলাম-চোর
৫. চর্ব্য, চোষ্য, লেহ্য পেয়
৬. দরোয়ান
৭. জীবন ও বর্ণমালা
৮. রেল গাড়ি
৯. লেখা কুমারী ও ছাপা সুন্দরী
১০. গোঁফ এবং ডিম
১১. সত্যং শিবং সুন্দরম্
১২. ভানুসিংহ ঠাকুরের জীবনী
১৩. পুষ্পাঞ্জলি
১৪. বিবিধ প্রসঙ্গ ১
১৫. বিবিধ প্রসঙ্গ ২
১৬. বর্ষার চিঠি
১৭. বরফ পড়া
১৮. শিউলিফুলের গাছ
১৯. বানরের শ্রেষ্ঠত্ব
২০. কার্যাধ্যক্ষের নিবেদন
২১. সৌন্দর্য ও বল
২২. আবশ্যকের মধ্যে অধীনতার ভাব
২৩. শরৎকাল
২৪. ছেলেবেলাকার শরৎকাল
২৫. ইন্দুর-রহস্য
২৬. কাজ ও খেলা
২৭. ঘানির বলদ
২৮. জীবনের বুদ্‌বুদ
২৯. বাগান
৩০. ঠাকুরঘর
৩১. নিষ্ফল চেষ্টা
৩২. সফলতার দৃষ্টান্ত
৩৩. লেখক-জন্ম
৩৪. সম্পাদকের বিদায় গ্রহণ

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন