পার্লারে বোটক্স ট্রিটমেন্ট

অর্পিতা সরকার

সুশোভন বলল, ‘ম্যাডাম, রাঘব এসে দাঁড়িয়ে আছে৷’

লগ্নজিতা বলল, ‘ওকে ডাকো তো৷ আর সুশোভন, জলধরবাবুর খবর কী? গিয়েছিলে ওর বাড়ি?’

সুশোভন বলল, ম্যাডাম, পারিজাতস্যার আর ইন্দ্রনীল গিয়েছিল৷ ওর স্ত্রী নাকি কী বলতে এসেছিল৷ তাকে চুপ করিয়ে দিয়েছে জলধরবাবু৷ তারপর একটা প্রেসক্রিপশন দেখিয়ে বলেছে, গলায় ইনফেকশন, হাই প্রেশার তাই ডক্টর রেস্টে থাকতে বলেছেন৷ কথা বলতে পারবেন না৷’

লগ্নজিতা বিরক্তির গলায় বলল, ‘এটা শুনে তোমার ওই বডি বিল্ডাররা কি ব্যাক টু প্যাভিলিয়ন?’

সুশোভন বলল, আর কী করবে বলুন? বয়েস আর মেডিক্যাল গ্রাউন্ড দেখাচ্ছেন৷ আর প্রত্যক্ষ কোনো প্রমাণও তো জোগাড় করতে পারিনি ওঁর বিরুদ্ধে৷ তাই উনি যদি কোঅপারেট না করেন কী করবে ওরা?’

লগ্নজিতা বলল, ‘তখনই তো বলতে হত ওঁর স্ত্রী-কে, চলুন ম্যাডাম, আপনার সঙ্গে একটু সাংসারিক গল্প করি৷ দেখতে, জলধরের জল শুকিয়ে যেত৷’

সুশোভন বলল, ‘ম্যাডাম, আপনি যদি এখন আপনার টেকনিক ওদের মধ্যে আশা করেন, সেটা হবে চরম ভুল৷’

লগ্নজিতা বলল, ‘বুঝেছি, এখন চলো তো৷ সুশোভন, তোমার কি একটাই ফোন?’

না ম্যাডাম, আরেকটা আছে৷ ওটা পার্সোনাল নম্বর৷ বাড়ির লোকজনের সঙ্গে কথা বলি ওটাতে৷’

‘একটা কাজ করো, তোমার এই ফোনটা সুইচ অফ করে থানায় রেখে চলো৷’

সুশোভন বলল, ‘কেন ম্যাডাম?’

লগ্নজিতা বলল, ‘তোমার ফোনটা ট্যাপ হয়েছে৷ অত অবাক হবার কিছু নেই৷ কে করেছে, সেসব পরে বলব৷ এখন যেটা বললাম, সেটাই করো৷’

রাঘব কাঁচুমাচু মুখ করে ঢুকল৷ বলল, ‘বলুন ম্যাডাম, কী জানতে চান?’

লগ্নজিতা বলল, ‘তুমি আর উৎপল তো ভালো বন্ধু৷ তাহলে সেদিন ওর নামে নালিশ করতে এসেছিলে কেন?’

রাঘব বলল, ‘ম্যাডাম, উৎপল একটা বেইমান৷ সৌমিলীর সঙ্গে আমার প্রেমের কথা পাড়ার সবাই জানত৷ এমনকী দত্তকাকুও জানতেন৷ সৌমিলী ফোনে আমায় না পেলে উৎপলকে কল করে খবর অবধি দিত৷ তারপরেও উৎপল সৌমিলীকে প্রোপোজ করেছিল, ম্যাডাম৷ কই, আমি তো ওর দশটা গার্লফ্রেন্ডকে ভাঙাতে যাইনি৷ আমি আর ও দুজনেই জয়ন্তদার দোকানে যেতাম৷ আচমকাই জয়ন্তদা ওর খুব কাছের হয়ে গেল৷ আগে ওর জেঠু আমায় স্কুলের অনুষ্ঠানের ক্যাটারিংগুলো দিতো৷ সেটাও উৎপল কাঁচি করেছে৷ জেঠু আর আমায় ডাকে না৷ কীসের হিংসা ওর আমার প্রতি, আমি কি জানি না? আমার ব্যাবসার ঘরটা ও-ই কিনবে বলে স্থির করেছিল৷ তারপর আজ নয় কাল, কাল নয়, পরশু বলে দোকানদারকে ভোগাচ্ছিল৷ তখন আমি বিজ্ঞাপন দেখে টাকা অ্যাডভান্স করে আসি৷ এটা থেকেই ওর রাগ আমার ওপরে৷ সামনে কিছু বলবে না৷ কিন্তু আচরণে বুঝিয়ে দেয়৷ সামনে খুব বন্ধুত্ব দেখায়৷ সেই কারণেই আমি ওর নামে বলেছিলাম৷’

লগ্নজিতা বলল, ‘জয়ন্তর দোকানে তো তোমরা বসতে৷ জয়ন্তর স্ত্রী-কেও নিশ্চয় দেখেছ?’

রাঘব বলল, ‘লাস্ট দেখেছিলাম প্রায় পাঁচ মাস আগে৷ তাও খুব ভোরে আমি ফিরছিলাম একটা বিয়েবাড়ির অর্ডার সেরে আর বউদি দেখলাম, টুক করে গাড়িতে উঠে পড়ল৷ জয়ন্তদা বলেছিল, নার্সিং হোম থেকেই একবার বাড়িটা ঘুরিয়ে নিয়ে গেলাম রে৷ আমার অবশ্য ওঁকে দেখে অসুস্থ মনে হয়নি৷’

লগ্নজিতা বলল, ‘পরশু জলধরবাবু কেন ডেকেছিলেন?’

রাঘব বলল, ‘স্যারের শরীর খারাপ৷ একটা প্রেসক্রিপশন দিয়ে বললেন, এই ওষুধ দুটো এনে দিস বাবা৷ তাই ফোন পেয়ে এসেছিলাম৷’

‘লগ্নজিতা ফোটো গ্যালারি ওপেন করে বলল, ‘দেখো তো, জয়ন্তর স্ত্রী?’

রাঘব বলল, ‘হ্যাঁ এটাই৷ তবে চুলে নতুন কালার করেছে৷ আর ঠোঁটের কাছটাও প্লাস্টিক সার্জারি নাকি? কেমন অন্যরকম লাগছে যেন৷’ বিয়ের সময়ের থেকে অনেক বদলে গেছে৷ আমি বহুদিন সামনে থেকে দেখিনি তো৷ তাই বুঝতে পারিনি৷ তবে এটাই দিয়াশাবউদি৷’

লগ্নজিতা বলল, ‘এই ব্যাবসায় শুনলাম, তুমিও ইনভেস্ট করেছিলে৷

রাঘব বলল, ‘না ম্যাডাম৷ যদি কেউ বলে থাকে, মিথ্যে বলেছে৷ আমার অত টাকা নেই৷ পঞ্চাশ টাকা পিস পানমশলা কিনে লাভ করব কী? তবে একটা কথা বলতে পারি, জয়ন্তদার কথা শুনে বুঝেছিলাম, শুধু লজেন্স বা পানমশলায় সীমাবদ্ধ নেই ব্যাপারটা৷ নাইট ক্লাবে পুরিয়া যেত৷ জয়ন্তদা বলত, একবার শুঁকলে বার বার শুঁকবে পাগলা৷ ম্যাডাম, এর নেশা ভয়ংকর৷ ইলেভেনের ছেলেরা পর্যন্ত জয়ন্তদার দোকানে বিশেষ সিগারেট কিনতে আসত বিকেলে মাঠে খেলার পরে৷ জয়ন্তদা প্রচুর ছোটো ছোটো দোকানে সাপ্লাইও দিত৷ এসব কথা আগে আমার সামনে বলত৷ তারপর ওই উৎপল কানে কী সব ঢালল, আমি গেলেই জয়ন্তদা চুপ করে যেত৷ সত্যি বলতে কী ম্যাডাম, তারপর আমার ব্যাবসাতেও একটু লোকসান যাচ্ছিল৷ তখন জয়ন্তদাকে বললাম, কী সব কিছুর পার্টনার করবে বলছিলে, তো বিষয়টা কী? উৎপল ওখানেই বসে ছিল৷ ও ফট করে বলল, এসব ব্যাবসা তোর মতো ভিখারির জন্য নয়৷ সেদিন হাতাহাতি লেগে গিয়েছিল৷ তারপর তো ওর সঙ্গেই জয়ন্তদার ঝগড়া লেগেছিল৷ যেদিন জয়ন্তদা মারা গেল, তার ঠিক একদিন আগেই৷ কী সব টাকা ইনভেস্ট নিয়ে৷ আমি বলছি ম্যাডাম উৎপলের ওই নায়কের মতো মুখ দেখে ভুলবেন না, ছেলেটা এক নম্বরের বজ্জাত৷’

লগ্নজিতা বলল, ‘তপন কেমন লোক ছিল?’

রাঘব বলল, ‘ওটা আরেক জিনিস৷ মোবাইল নিয়ে ঘুরত৷ এমন ভাব করত যেন মোবাইল হ্যান্ডেল করতেই পারে না৷ অথচ ইস্কুলে কোথায় কী হচ্ছে, সব ভিডিয়ো করে রাখত৷ একবার স্কুলের অনুষ্ঠানে একটু ফ্রায়েড রাইস বেড়েছিল৷ তো আমার ক্যাটারারের ছেলেগুলো খাবে বলে ব্যাগে ভরেছিল৷ তপনকাকুই তখন স্কুলের গ্রুপে ওই ভিডিয়োটা দিয়ে দিয়েছিল৷ হঠাৎ মনে কী দুঃখ হল যে সুইসাইড করতে হল? রিম্পাবউদির সঙ্গে খুব তো হাসিগল্প চলত৷’

লগ্নজিতা বলল, অনীতার বাড়িতে আজকের পর কে কে আসছে, তার লিস্ট বানিয়ে আমায় পাঠাবে৷ এখন যাও৷’

রাঘব বেরিয়ে যেতেই সুশোভন বলল, ‘ম্যাডাম, ফোর্স রেডি৷’

যেটা বললাম, করেছ? ‘হ্যাঁ ম্যাডাম, ফোন ড্রয়ারে চাবি দিয়ে রেখে দিয়েছি অফ করে৷’

‘ফার্স্ট পার্লারে চলো৷ তোমরা বাইরে থাকবে৷ আমার একজন পরিচিত যাবে ফেসিয়াল করাতে৷ নীহারিকাকে রাস্তা থেকেই তুলব৷’

সুশোভন বলল, ‘ম্যাডাম, কী করে বুঝলেন, আমার ফোনটা ট্যাপ করা হয়েছে?

‘লগ্নজিতা বলল, ‘আমারটা হয়নি, চেক করেছি৷ তাই তোমারটা হয়েছে, কারণ আমাদের সব কথা পৌঁছে যাচ্ছে অন্য লোকের কাছে৷ অপরাধীকে পালাতে সুযোগ দিয়ে লাভ আছে?’

সুশোভন আর কিছু না বলে চুপ করে রইল৷ ইন্দ্রনীল বলল, ‘ম্যাডাম, আদৌ কি তাকে আমরা ধরতে পারব?

লগ্নজিতা বলল, ‘লাস্ট কতদিন আগে ভাতঘুম ছেড়ে মিশনে গিয়েছিলে এভাবে?’

 ইন্দ্রনীল আমতা আমতা করছিল৷ সুশোভন বলল, ‘ম্যাম, আমরা কিন্তু পৌঁছে গেছি৷’

লগ্নজিতা বলল, ‘নীহারিকা, রেডি তো? তুমি কিন্তু এই মুহূর্তে শুধুই কাস্টমার৷ মনে রেখো, রক্তিমা অবধি পৌঁছাতে হবে৷ তাই ওই মেডিসিন নেবার আগ্রহটা যেন বেশি থাকে৷’

নীহারিকা নামতেই সুশোভন বলল, ‘অ্যাট্রাকটিভ মেডিসিনটার টেস্ট রিপোর্ট এসেছে ম্যাম, ভালোরকম কোকেন আছে এতে৷ হাতে ধরে প্রেশার দিলে ক্যাপসুল ভেঙে যাচ্ছে৷ তারপর উত্তপ্ত করে নাকে শুঁকছে মেয়েগুলো৷’

লগ্নজিতা বলল, ‘হ্যাঁ সোনাঝুরি, ঋতিকা আর অনুরূপা তো তা-ই বলল৷ এখন তিনজনেই স্বীকার করছে, এগুলো তিন-দিন খেয়েছিল, তারপর থেকে এরা শুঁকেই বেশি আরাম পাচ্ছিল৷ রক্তিমাম্যাডামও নাকি এরকমই নির্দেশ দিয়েছে৷ এর গন্ধটাই নাকি অ্যারোমা থেরাপি৷’

লগ্নজিতা বলল, ‘কদিন জেলের ভাত খেলে অ্যারোমা থেরাপি শেখানো বেরিয়ে যাবে৷ নীহারিকা ভিতরে গিয়ে যতক্ষণ পর্যন্ত না মেসেজ দিচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত চুপ করে ওয়েট করতে হবে বাইরে৷ সোনাঝুরির বয়ান অনুযায়ী শনি আর রবি ম্যাডাম নিজে থাকেন৷ আজ শনিবার৷ তাই থাকার সম্ভাবনা প্রবল৷’

 নীহারিকা পুলিশে আছে প্রায় বছর চারেক৷ কিন্তু এখন এরকম মিশনে সেভাবে আসেনি কোনোদিন৷ তাই একটু নার্ভাস লাগছে ইউনিফর্ম ছাড়া এভাবে কাজ করতে৷ নীহারিকার স্কিনটা ভালো, চুলটা লম্বা বলেই ম্যাডাম ওকেই সিলেক্ট করল এই মিশনে৷ প্রতিমাসে একবার করে পার্লারে ও এমনিতেও আসে৷ কিন্তু আজ যেন অন্যরকম আসা৷ স্পা-টা বেশ বড়ো৷ ইন্টিরিয়র ডেকোরেটর দিয়ে দুর্দান্তভাবে সাজানো৷ চার-পাঁচজন মেয়ে কাজ করছে৷ মেয়েগুলো যথেষ্ট সুন্দরী৷ সেজেগুজে রয়েছে৷ ভিতরে চারজন অল্পবয়েসি কাস্টমারও রয়েছে৷’

নীহারিকা ঢুকেই বলল, ‘আমি বোটক্স ট্রিটমেন্ট করাব৷ আর আমার অ্যাট্রকটিভটা শেষ হয়ে গেছে, ওটা একটা লাগবে৷’

রাইন নামের মেয়েটা বলল, ‘আপনি কি এই মেডিসিন এর আগে খেয়েছেন, ম্যাম?’

নীহারিকা নিজের ব্যাগ থেকে ফাঁকা শিশিটা বের করে বলল, ‘অবশ্যই৷ আমি নিচ্ছিলাম ডার্ক সার্কলের জন্য৷ আমার খুব কাজ হয়েছে৷ ‘একটু ম্যামের সঙ্গে দেখা করা যাবে?’

দুটো মেয়ে নিজেদের মধ্যে ইশারা বিনিময় করে বলল, ‘হ্যাঁ যাবে৷ একটু ওয়েট করতে হবে৷ ভিতরে অন্য পেশেন্ট আছে৷’

নীহারিকা প্রায় আধ ঘণ্টা চুপচাপ বসে বসে হেয়ার কাটিং, ফেসিয়াল এগুলোও দেখছিল৷ একটি মেয়ে মিনিট পঁয়ত্রিশ পরে এসে বলল, ‘ভিতরে আসুন৷’ আলো-আঁধারি মতো একটা ঘর৷ নরম আলো, মৃদু ঠান্ডা এ ঘরের রং থেকে পরদা, সিলিং থেকে লাইটের কম্বিনেশন সবকিছু যেন মাপা৷ একটু বেশি বা কম হলেই যেন কোথায় একটা ঘাটতি থেকে যেত৷ এ ঘরের সবকিছুই বড়ো নিখুঁত৷ নীহারিকার দিকে মিষ্টি হেসে রক্তিমা বলল, বসুন৷ ‘কী প্রবলেম বলুন?’

‘সুশোভন, তোমার সুন্দরী রক্তিমা ঘোষ মনে হচ্ছে, আমাদের ডিনার খাইয়ে তবে ছাড়বে৷ আরে বিয়েবাড়িতে দু-হাজার লোক আমন্ত্রিত হলেও তো এতক্ষণ টেবিলের জন্য বসে থাকতে হয় না৷ বোটক্স ট্রিটমেন্টের নামে মেয়েটাকে ইঞ্জেকশনের মধ্যে কোনো হাই ডোজের ড্রাগ পুশ করে দিল না তো? এত দেরি কেন করছে নীহারিকা?’ ইন্দ্রনীল বলল, ‘ম্যাডাম, নীহারিকা ক্যামেরা অন করেছে৷’

লাফিয়ে উঠল লগ্নজিতা৷ ‘ঘরটা কেমন অন্ধকার করে রেখেছে দেখেছ? যাতে ওর মুখটা কাস্টমাররা সেভাবে না দেখতে পায়৷ মহিলা কিন্তু বেশ চালাক৷’

সুশোভন বলল, ‘ম্যাডাম, শুধু চালাক নয়, অত্যন্ত সাহসীও৷ পুলিশের নাকের ডগায় বসে খুন করাচ্ছে, স্কুলের বাচ্চাদের ড্রাগস এজেন্ট বানিয়ে ছাড়ছে৷’

 লগ্নজিতা বলল ‘চুপ, শুনতে দাও৷ রেকর্ডের অপশন চালু আছে তো?’ ইন্দ্রনীল ঘাড় নেড়ে হ্যাঁ বলল৷

রক্তিমা হাত জোড় করে বলল, ‘আমি রক্তিমা দস্তিদার৷ স্কিন আর হেয়ারের ওপরে বিশেষ পড়াশোনা করার পরে আমার মনে হয়েছে বাহ্যিক সৌন্দর্যটাই বড়ো কথা নয়৷ ভিতর থেকে সুন্দর থাকলেই বাইরেটাও ঝকঝক করবে৷’

নীহারিকা বলল, ‘ম্যাডাম, আমার একটা ফোবিয়া আছে৷ চুল আঁচড়াতে গিয়ে দুটো চুল মাটিতে পড়লেই হাত-পা কাঁপতে শুরু করে দেয়৷’

রক্তিমা বলল, ‘এই ভয়ই টেনশনের জন্মদাত্রী৷ এরপরই ডার্ক সার্কল, তারপরেই পিম্পল, হেয়ারফল— এসবের সূত্রপাত হবে৷ তখন আমাদের মেনে নিতে হবে, আমরা এককালে দেখতে সুন্দর ছিলাম৷ ভয়ংকর মানসিক কষ্ট নিয়ে গ্যালারির ছবি দেখে যেতে হবে৷ আমি চাই না, যারা একবার আমার কাছে আসবে, তাদের এরকম কোনো সমস্যা হোক৷’

নীহারিকা বলল, ‘ম্যাডাম, প্লিজ এরকম বলবেন না৷ আমার হাত ঘামছে৷ বুকে কষ্ট হচ্ছে৷ প্লিজ ডু সামথিং৷’

রক্তিমা হেসে বলল, ‘আমি সব থেকে অপছন্দ করি ভিতু মানুষদের৷ ভয়কে জয় করার নাম জীবন৷ আনন্দকে ছিনিয়ে নেওয়ার জীবন৷ রঙিন জিনিসকে সাদা-কালো না-দেখার নামই তো লাইফ৷ অ্যাট্রাকটিভের একটা কন্টেইনার ধরিয়ে দিয়ে রক্তিমা বলল, ‘কুড়ি হাজার৷ উহুঁ, এত দাম কেন বলে চমকে উঠবেন না৷ সৌন্দর্য, মানসিক শান্তি, জনগণের মুগ্ধ দৃষ্টি, নিজের কনফিডেন্স ধরে রাখার জন্য এই দামটুকু নগণ্য৷’  

নীহারিকা বলল, ‘ম্যাডাম, আগের বার আমি পনেরোতে কিনেছিলাম তো৷’

রক্তিমা স্মার্টলি বলল, ‘পনেরোই তো, বাকি পাঁচ আমার ফি৷ মানুষকে পজিটিভ এনার্জি প্রোভাইড করার ফি৷’

আচমকাই নিজের ঘরের সি.সি.টি.ভি.-র দিকে তাকিয়ে চমকে উঠল রক্তিমা৷ কিছু বোঝার আগেই দুজন লেডি কনস্টেবল ওকে পিছন থেকে চেপে ধরে ফেলেছে৷ নীহারিকা ততক্ষণে সার্ভিস রিভলভার বের করে রক্তিমার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে৷ ফিসফিস করে বলল, ‘সব পরদা ফাঁস হওয়ার নামও জীবন৷ জীবন একটা জংশন৷ সবাইকে একবার করে নামতেই হয় সেই স্টেশনে৷ শুধু উঠে গেলে হবে? নামতেও তো হবে৷’

রক্তিমা নিজের প্রাথমিক ভয়টাকে সামলে নিয়েই বলল, ‘কিন্তু কেন? আমার অপরাধ? এভাবে সাধারণ মানুষকে আপনারা তুলে নিয়ে যেতে পারেন না৷’ রক্তিমাকে নিয়ে এসে পুলিশ ভ্যানে তোলার পরেই ওই পার্লারটা সার্চ করা হল৷ রক্তিমার নিজস্ব কেবিনের পিছনের ওয়াশরুম লেখা ঘরটা আসলে ওয়াশরুম নয়, গোডাউন৷ ছোটো ছোটো পাউচের ওপরে ওয়েট আর প্রাইস লেখা ব্রাউন শুগার৷ এরকম পাউচ ভরতি বড়ো বড়ো বক্স অন্তত গোটা পাঁচেক ঠাসাই করে রাখা৷ লগ্নজিতা বলল, ‘পার্লার সিল করে দাও৷’

সকল অধ্যায়

১. ব্যাঙ্কে কান্নাকাটি
২. সক্রেটিসের শিষ্য
৩. হসপিটালে হট টপিক
৪. রাঘব না রাঘব বোয়াল?
৫. মাসি না মডেল?
৬. কৌশিকের মানভঞ্জন
৭. জলধরের জলপান
৮. রিলস সুন্দরী
৯. ফেসবুকে প্রেম
১০. তীরে এসে তরি ডুবল
১১. সুইসাইড না মার্ডার?
১২. অ্যাট্রাকটিভ
১৩. লগ্নজিতার ব্যর্থতা
১৪. শয়তানের কারসাজি
১৫. ফাঁদ
১৬. পোস্টমর্টেম রিপোর্ট
১৭. ইঞ্জেকশন সিরিঞ্জ
১৮. এ ঘরে মৃত্যুর গন্ধ
১৯. এক মাসে সুন্দরী
২০. অষ্টধাতুর কৃষ্ণমূর্তি
২১. আবার খুন
২২. পার্লারে বোটক্স ট্রিটমেন্ট
২৩. স্বীকারোক্তি
২৪. সম্পর্কের সমাপ্তি
২৫. নামবিভ্রাট
২৬. হু ইজ জগমোহন?
২৭. মিডিয়া কনফারেন্স
২৮. সেলিব্রেশন মুড
২৯. সাইকিয়াট্রিস্টের পরামর্শ
৩০. গল্পের শ্রোতা

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন