দাউদাউ আগুন – ১১

সমরেশ মজুমদার

এগারো

দরজা খুলে কালীচরণ বলল, ‘বিকেলবেলায় দারোগাবাবু এসেছিল।’

ওর গলার স্বর নীচুতে, যেন কোনও গোপন খবর দিচ্ছে।

‘জানি। দেখা হয়েছে।’ বনবিহারী ভেতরে ঢুকতেই কালীচরণ দরজা বন্ধ করে দিল।

‘ওনাকে দেখে খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। অবশ্য এক গ্লাস জল খেয়েই চলে গেছেন কিন্তু মনে হয় মামণিকে দেখেছেন। বাচ্চাটা হঠাৎ ওইসময় কেঁদে উঠল—!’

বনবিহারী নিজের ঘরে গেলেন। অন্ধকার নেমে গেছে। আলো জ্বেলে চেয়ারে বসলেন। দরোগার প্রস্তাবে সায় দিতে তাঁর মন চাইছিল না। লোকটা নিশ্চয়ই কিছু সন্দেহ করছে। হয়তো এটা ওর একটা চাল। একটা মেয়েকে জঙ্গলে ছেড়ে দিয়ে দেখতে চায় পলাতক ছেলেটি আসে কিনা। যেন কুনকি হাতি দিয়ে জঙ্গলের হাতিকে ধরতে চাইছে লোকটা। তিনি অস্বীকার করতেই পারেন। দারোগার এই প্রস্তাব পঞ্চায়েতকে জানিয়ে দিলে হইচই হবেই। কিন্তু সেক্ষেত্রে মামণিকে প্রকাশ্যে নিয়ে যেতে হবে। তখন কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে যেতে কতক্ষণ? না, যত অভিযোগ থাক তাঁকে গিলে ফেলতে হবে।

চোখ বন্ধ করলেন বনবিহারী। নাঃ, এভাবে এখানে থাকা যায় না। এখানকার মানুষ তাঁকে শ্রদ্ধা করে। সবাই জানে এই জায়গার উন্নতির জন্যে তিনি নিঃস্বার্থ হয়ে কাজ করছেন। রাতারাতি যদি প্রচারিত হয় একটি উগ্রপন্থী মেয়েকে তিনি আশ্রয় দিয়েছেন, পুলিশকে খবরটা গোপন করেছেন তাহলে মুখ দেখানোর উপায় থাকবে না। জেলেও যেতে হবে তাঁকে। এই জায়গা ছেড়ে চলে যেতে হবে তাঁকে। এই জায়গা ছেড়ে চলে গেলে কেমন হয়?

সোজা হয়ে বসলেন বনবিহারী। বহু বছর আগে, মা চলে যাওয়ার পর ইচ্ছেটা মনে এসেছিল। মাকে ছাড়া এখানে থাকা অসম্ভব বলে মনে হয়েছিল সে সময়। তখন মহেশমুন্ডায় চলে যাওয়ার কথা ভেবেছিলেন।

বনবিহারীর পিতৃদেব তাঁর এক বন্ধুর পরামর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে জলের দামে মহেশমুন্ডায় জমি কিনেছিলেন। মধুপুর থেকে গিরিডি যাওয়ার পথে একটি শান্ত, নির্জন এবং সুন্দর জায়গা দেখে ভালো লেগে গিয়েছিল তাঁর। এক বিঘে জমি কিনে তারের বেড়া দিয়ে ঘিরে রেখে ফিরে এসেছিলেন খুশি মনে। মা শুনে বলেছিলেন, ‘ওই জমি পাঁচভূতে লুটেপুটে খাবে।’

তখন শীত পড়লেই বাবা তাদের নিয়ে গিরিডি-মধুপুরে বেড়াতে যেতেন। আসলে যাওয়ার উদ্দেশ্য ছিল তাদের জমিটা দেখানো। জমি দেখার পর মা পালটে গিয়েছিলেন। বাবাকে বলেছিলেন, মধুপুর বা গিরিডি নয়, বেড়াতে গেলে নিজেদের জমিতে থাকতে চান। বছর খানেকের মধ্যে দু-ঘরের একটা বাড়ি তৈরি করেছিলেন বাবা। একজন আদিবাসী যুবককে দায়িত্ব দিয়েছিলেন বাড়িটাকে ঠিকঠাক রাখার। প্রতিমাসে তার নামে মানি অর্ডার পাঠাতেন। বাবার মৃত্যুর পরে ডাক্তার বনবিহারী একাই গিয়েছিলেন মহেশমুন্ডায়। সেই যুবক বিয়ে করে ওই বাড়িতেই থেকে গেছে। দেখে মনে হাচ্ছিল বাড়িটার মালিক সে। কিন্তু লোকটা অকৃতজ্ঞ নয়। বলেছিল, ‘আপনারা আসেন না বলেই আমি এই বাড়িতে আছি। তবে আমার তো কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। যদি এই জমির কোনও একধারে মাটির দেওয়াল আর টিনের ছাদ দিয়ে দুটো ঘর বানিয়ে দেন তাহলে সেখানে উঠে যেতে চাই।’

ফিরে এসে টাকা পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। প্রতিবছর একটা পোস্টকার্ড আসে। তাতে কত টাকা খাজনা দিতে হবে জানিয়ে দেয় লোকটা। মায়ের চলে যাওয়ার পর বনবিহারীর মনে হয়েছিল সেখানে গিয়ে থাকবেন। আশেপাশের গ্রামের মানুষগুলোর চিকিৎসা করবেন। গরিব মানুষগুলো যে যা পারে দিলে খাওয়াটা চলে যাবে। কিন্তু এই জায়গা থেকে চলে যাওয়া সহজ ছিল না। শেকড় এত গভীর চলে গিয়েছে যে উপড়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। এখানকার নিরানব্বই ভাগ মানুষ তাঁর পরিচিত। তাঁকে শ্রদ্ধা করে সবাই। এতদিন এখানে থাকতে তাঁর বিন্দুমাত্র খারাপ লাগেনি। মায়ের মৃত্যুর পরে এখানকার মানুষের চিকিৎসার জন্যে শুধু নয়, নানান উন্নয়নের কাজে দিনের অনেকটা সময় ব্যায় করে আসছেন। কিন্তু মামণি আসার পরে তাঁর কেবলই মনে হচ্ছে পায়ের তলার মাটি সরে গেছে। সবসময় মনে এক চাপ নিয়ে থাকা, যে-কোনও মুহূর্তে পুলিশের হাতে পড়া, এসব আর ভালো লাগছে না। এখন যদি তিনি মামণিকে বলেন চলে যেতে, বলতে পারা যায় না, তবু ও যদি কোথাও চলে যায় তাহলে ওর থাকাটা তো মিথ্যে হয়ে যাবে না!

বনবিহারী ঠিক করলেন মহেশমুন্ডার লোকটাকে চিঠি লিখবেন। কিন্তু চিঠি লিখতে হয় হিন্দিতে। তিনি হিন্দি লিখতে জানেন না। যাকে দিয়ে লেখাবেন সে তো খবরটা চাউর করে দেবে। তার চেয়ে একটা টেলিগ্রাম করাই ভালো। ইংরেজিতে লিখলে লোকটা পড়িয়ে নিতে পারবে।

‘একি! এখনও বসে আছেন?’ কালীচরণ চায়ের কাপ নিয়ে এল।

‘মামণি কোথায়?’

‘রান্নাঘরে।’

‘সেকি! কি করছে সে?’

‘ডিম দিয়ে কি সব রান্না করছে।’

‘হুম।’ চায়ের কাপ নিলেন বনবিহারী।

‘পাশের বাড়ির মাসিমা এসেছিল। খুব জোর করছিল ভেতরে আসার জন্যে।’

‘হু।’ বনবিহারী চায়ে চুমুক দিলেন, ‘কালীচরণ, আমি ভাবছি এখান থেকে চলে গেলে কেমন হয়! মহেশমুণ্ডাতে তো মাথা গোঁজার জায়গা আছে।’

কালীচরণ জিজ্ঞাসা করল, ‘ওখানে আশেপাশে বাঙালি আছে?’

‘বাঙালি?’ হেসে ফেললেন বনবিহারী, ‘বোধহয় না। জায়গাটা তো এখন ঝাড়খণ্ডের মধ্যে পড়েছে। কলকারখানা নেই, অফিসটফিস নেই, তাই ওখানে বাঙালির না থাকারই কথা।’

‘তাহলে চলুন। কিছুদিন ওখানে থাকলে সবার ভালো লাগবে।’

‘সবার মানে?’

‘আপনি নিশ্চয়ই মামনি আর বাচ্চাটাকে এখানে রেখে যাবেন না? এই কয়েকদিন একসঙ্গে থাকার পর আমার পক্ষে আবার একা থাকা অসম্ভব।’ কালীচরণ চলে গেল।

জামাকাপড় ছেড়ে চেয়ারে বসে একটা মেডিকেল জার্নাল পড়ছিলেন বনবিহারী। হঠাৎ কাঁধে স্পর্শ পেয়ে চমকে তাকাতেই মামণিকে দেখতে পেলেন। একেবারে তাঁর পিঠ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে সে হাসছে, হাতে একটা প্লেট।

‘ওটা কি?’

প্লেট বনবিহারীর সামনে টেবিলের ওপর রেখে ইশারায় মামণি বোঝাল ওটা সে রেঁধেছে। বনবিহারী দেখলেন। ঘুগনির মতো দেখতে, ডিম দিয়ে রাঁধা। একটা চামচ রয়েছে পাশে। তিনি বললেন, ‘বাঃ, খুব ভালো হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। কিন্তু আমি যদি এখন খাই তাহলে রাতের খাবার খেতে পারব না।’

সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ করতে লাগল মামণি। দ্রুত মাথা নেড়ে অদ্ভুত সব শব্দ বের করতে লাগল মুখ দিয়ে। বাধ্য হয়ে এক চামচ তুলে মুখে দিয়ে বনবিহারী বললেন, ‘বাঃ! দারুণ হয়েছে। এটা রাত্রে রুটি দিয়ে খাব, কেমন?’

এবার শান্ত হল মামণি।

‘এটাকে রান্নঘরে রেখে এসো।’

পাখির মতো উড়ে গেল মামণি। কিন্তু ফিরে এল ওই রকম গতিতে তারপর টেবিলের ওপর উঠে বসে পা ঝুলিয়ে ইশারায় যেটা বলতে চাইল তা বুঝতে পারলেন না বনবিহারী। তিনবারের বার বুঝতে পারলেন তিনি। মামণি বলছে, তিনি খুব ভালো মানুষ।

হাসলেন বনবিহারী। বললেন, ‘তুমি নিজে ভালো বলে আমাকে ভালো ভাবছ।’

দ্রুত মাথা নেড়ে আপত্তি জানাল মামণি।

বনবিহারী বললেন, ‘কিন্তু একটা জরুরি ব্যাপার। বাচ্চাটা হয়েছে সদরের হাসপাতালে। ওর বার্থ সার্টিফিকেট নিয়ে আসতে হবে। ওর বাবার নামটা বলো।’

সঙ্গে-সঙ্গে মুখ ভ্যাটকাল মামণি। যেন ও বিষয়ে সে আলোচনা করতে চায় না।

‘তা বললে তো চলবে না। এটা দরকার। বড় হয়ে ও তো জানতেই চাইবে কে ওর বাবা? তখন তো না বলে পারবে না।’

হঠাৎ ডান হাতের তর্জনী বনবিহারীর দিকে এগিয়ে তাঁকে চিহ্নিত করে মামণি টেবিল থেকে নেমে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।

হতভম্ব হয়ে গেলেন বনবিহারী। মেয়েটা কি উন্মাদ? আঙুল দেখিয়ে কী বলতে চাইল ও? ছেলের বাবা হিসেবে তাঁর নাম দিতে বলল। না না। এ চলতে দেওয়া যায় না। ওর মাথা থেকে এসব ভাবনা বের করা দরকার। ঠিক সময়ে বিয়ে করলে ওর কাছাকাছি বয়সের মেয়ে থাকতে পারত তাঁর।

সেই রাত্রে ঘুম আসছিল না বনবিহারীর।

সকালে থানা থেকে একজন সেপাই এল সাইকেলে চেপে। মুখবন্ধ খাম দিয়ে গেল। দারোগাবাবু পাঠিয়েছেন। সবে চা খেয়েছে বনবিহারী। খামটা হাতে নিয়ে একটু নাড়াচাড়া করলেন। এই কয়েকদিনে পুলিশ তাঁর কাছে যতবার এসেছেন, গত দিনগুলোতে তাদের দেখা পেয়েছেন বলে মনে পড়ে না। কোনও অনুষ্ঠানে মুখোমুখি হলে নমস্কার বিনিময় হয়েছে। সৌজন্য ওই পর্যন্ত। এখনকার ঘনিষ্ঠতা যে-কোনও লোকের চোখে পড়বে। বিশেষ করে পালবাবুর। লোকটা এখন এখানে নেই। শাশুড়ির শ্রাদ্ধ করতে নবদ্বীপে গিয়েছে।

খাম খুললেন বনবিহারী। একটুকরো কাগজে লেখা, ‘ঠিক সকাল দশটায় মেছুয়াপুল পেরিয়ে একটু এগিয়ে গেলে বাঁ-দিকের জঙ্গলের মধ্যে একটা পায়ে চলা রাস্তা পাবেন। সেটা ধরে খানিকটা গেলে ঝরনার ওপর সাঁকো দেখতে পাবেন। আপনি সেখানে বিশ্রাম করতে পারেন। ওকে বলবেন একটু ঘুরে দেখতে। ধরুন আধঘণ্টা।’

বনবিহারীর মনে পড়ল। ওই রাস্তা দিয়ে সেই রাত্রে বোধহয় তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল মামণিকে প্রসব করানোর জন্যে। যদিও অন্ধকারে তিনি স্পষ্ট কিছুই বুঝতে পারেননি। কিন্তু সকাল দশটা কেন? ওই সময় তো তাঁর চেম্বারে থাকার কথা। পেশেন্টরা ওই সময় তাঁকে পাবে বলে জানে। বড়বাবু হুকুম করবেন আর তাঁকে চেম্বার ছেড়ে যেতে হবে। আফশোস হল। সেপাইটাকে দাঁড় করিয়ে একটা কড়া জবাব লিখে দেওয়া যেত।

এইসময় মামণি এল এই ঘরে। এসে একগাল হাসল।

বনবিহারী তাকালেন, ‘কি? ঘুম হয়েছে?’

মাথা কাত করে মামণি জানাল, হয়েছে।

বনবিহারী বললেন, ‘তুমি তো বাড়িতে আটকে আছ। ভাবছি, তোমাকে নিয়ে একটু বেড়িয়ে এলে কীরকম হয়। এখানে আশেপাশে শুধু জঙ্গল আর নদী। কিন্তু তার সৌন্দর্য কম নয়। আজ যাবে ঘুরতে?’

পাশে চলে এল মামণি। মাথা নাড়তে লাগল। বোঝা গেল, বেড়ানোর প্রস্তাব শুনে তার খুব ভালো লাগছে। খুশি হয়েছে।

‘সামনে এসে দাঁড়াও। হ্যাঁ। আমি এখানকার লোকজনদের বলেছি তুমি আমার আত্মীয়া মালদহ থেকে বেড়াতে এসেছে। থাকবে কিছুদিন।’

চোখ বড় করল মামণি। যেন খুব মজা পাচ্ছিল।

তোমার গলায় একটা ইনফেকশন হয়েছে তাই ডাক্তার কথা বলতে নিষেধ করেছেন। এখানে যেহেতু কলকারখানা বলতে একমাত্র চায়ের বাগান এবং তার জন্যে কোনও পল্যুশন নেই তাই তোমার গলা তাড়াতাড়ি সারবে। বলেছি তোমার একটা বাচ্চা আছে। কি? আমার কথাগুলো তোমার কানে যাচ্ছে?’

মাথা নাড়ল মামণি।

‘বাইরে বের হলে নিশ্চয়ই কারও না কারও সঙ্গে দেখা হবে। তাদের কেউ-কেউ তোমার সঙ্গে কথা বলতে চাইবে। তুমি কোনও শব্দ করবে না। চুপ করে থেকে ঠোঁটে আঙুল চেপে বোঝাবে তোমার কথা বলা নিষেধ। তুমি যে শব্দগুলো করো তা যারা কথা বলতে অক্ষম তারাই করে। কিন্তু যারা কথা বলে এবং ডাক্তারের নির্দেশে না বলতে বাধ্য হয় তারা ওইরকম শব্দ উচ্চারণ করবে না। মনে থাকবে তোমার না, আবার বুঝিয়ে বলব?’

মামণি আঙুল তুলে বনবিহারী মাথা দেখাল। তারপর শূন্যে একটা শূন্য আঁকল। অর্থাৎ বনবিহারীর মাথায় কিস্যু নেই।

হাসলেন বনবিহারী, ‘তাহলে তৈরি হয়ে নিও। আমরা সাড়ে ন’টায় বেরুব।’

মামণি লাফিয়ে ভেতরে ঢুকে গেল। কিন্তু কয়েক মিনিট পরেই কালীচরণ হন্তদন্ত হয়ে এল, ‘এই পাগলিটা কী বলছে? আপনি ওকে বেড়াতে নিয়ে যাচ্ছেন?’

‘কি করে বোঝাল তোমাকে?’ বনবিহারী হাসলেন।

‘হাত নেড়ে দেখাল, আপনি ওকে আকাশে নিয়ে যাচ্ছেন।’

সঙ্গে সঙ্গে ভেবে নিলেন বনবিহারী। কালীচরণকে সত্যি কথা বলা যাবে না। ও মামণিকে এরকম ভাবে ব্যবহার করা মেনে নেবে না।

বললেন, ‘মেয়েটা সেই থেকে ঘরবন্দি হয়ে আছে। ওকে আশেপাশের জায়গাগুলো দেখিয়ে নিয়ে আসি।’

‘লোকে দেখলে প্রশ্ন করবে কিন্তু।’

‘তা তো করবেই। কিন্তু কদ্দিন আর ঘরে আটকে রাখতে পারবে!’

ঠিক। তাহলে রিকশা ডেকে সেই রিকশায় যান।’

‘বেশ। ডেকে দিও। সাড়ে নটায় বেরুব।’

‘এখন কেন? বিকেলে গেলে হত।’

‘বিকেলে গেলে ফিরতে সন্ধে নেমে গেলে—, না, না।’

‘তাহলে ওকে নিয়ে জঙ্গলের দিকে যাবেন না।’

‘কেন?’

গলা নামাল কালীচরণ, ‘শুনেছি, ও যে দলে ছিল তার সবাই মারা যায়নি। যদি কেউ বেঁচে থাকে তাহলে সে জঙ্গলেই লুকিয়ে আছে। তাই ওদিকে না যাওয়াই ভালো। যাই, তাড়াতাড়ি জলখাবার করে দিই।’ কালীচরণ চলে গেলে বনবিহারী বুঝলেন, স্নেহের শেকড় মাটি পেয়ে গেলে সবসময় ভয়ে ভয়ে থাকে। কালীচরণের ক্ষেত্রে ওর জীবনে এই প্রথম সেটা হয়েছে।

ঠিক সাড়ে নটায় রিকশা ডেকে নিয়ে এসেছিল কালীচরণ। রিকশাওয়ালা পরিচিত, নাম পবন। আগে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পবনকে বনবিহারী বললেন, ‘মালদহ থেকে ভাগনি এসেছে হে। ওকে একটু চারপাশে ঘুরিয়ে দেখাতে চাই।’

‘যেমন বলবেন ডাক্তারবাবু। কোথায় যাবেন? বিনাগুড়ি, তেলিপাড়া, ডুডুয়া?’

‘দূর! ওসব জায়গায় দেখার তো কিছু নেই। আজ হাট কোথায় হচ্ছে?’

‘আজ্ঞে, নাথুয়ায়।’

‘অদ্দুর যেতে পারবে?’

কি এমন দূর?’ পাঁই পাঁই পক্ষীরাজ ছোটাবো।’

‘কত নেবে?’

‘এটা কী বললেন? আমার বউটাকে আপনি বাঁচিয়েছেন। আপনার যা খুশি দেবেন। যদি না দেন তাহলেও কোনও কথা নেই।’ পবন হাসল।

মামণি এল। বনবিহারীর কিনে দেওয়া সালোয়ার কামিজ পরে এসেছে। বেশি দামি নয় কিন্তু চমৎকার দেখাচ্ছে ওকে। বললেন, ‘ওঠ।’

স্বচ্ছন্দে উঠে বসল মামণি রিকশায়। তার ওঠা দেখে পবন বলল, ‘ভাগনিদিদি নিশ্চয়ই খেলাধুলো করেন। এখানকার কোনও মেয়ে এভাবে উঠতে পারে না।’

বনবিহারী উঠলেন। দুজন পাশাপাশি বসলে গায়ে গা ঠেকবেই। একটু অস্বস্তি হল বনবিহারীর। তিনি বাঁ-পাশে ঝুঁকলেন সেটা বাঁচাতে। রিকশা চলতে শুরু করতেই দেখতে পেলেন সুনয়নী এসে দাঁড়িয়েছেন তাঁদের বাড়ির দরজায়। দু-চোখ বিস্ফারিত। বনবিহারী মুখ ফিরিয়ে নিলেন।

পিচের রাস্তা ধরে রিকশা চলে এল গঞ্জের ভেতরে। বনবিহারী বললেন, ‘এই হল আমাদের দোকানপাট আর বাজার এলাকা। তুমি নিশ্চয়ই জেনেছ আমি ডাক্তারি করি। ওই হল আমার চেম্বার।’

মামণি কৌতূহলী চোখে সব কিছু দেখছিল। চেম্বারের দরজা বন্ধ দেখে সে তার মতো শব্দ উচ্চারণ করতে যেতেই বনবিহারী ঠোঁটে আঙুল চেপে নিষেধ করতেই সে হেসে ফেলল। তারপর মাথা নেড়ে বোঝাল, ভুলে গিয়েছিল।

‘ডাক্তারবাবু!’

ডাকটা শুনেই পবন রিকশা থামাল। প্রৌঢ় হেডমাস্টার মশাই এগিয়ে এলেন, ‘আমি আপনার চেম্বার বন্ধ দেখে ফিরে আসছি। আজ বসবেন না?’

‘বিকেলে বসব, তিনটে থেকে।’

‘কোনও দরকারি কাজ—?’

‘হ্যাঁ।’ বনবিহারী জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কারও অসুখ?’

‘হ্যাঁ। আমার। তাহলে তিনটের পরে আসব।’

‘কী হয়েছে যদি বলেন—!’

মামণির দিকে একবার তাকিয়ে একটু ইতস্তত করে হেডমাস্টার বললেন, ‘কাল থেকে প্রস্রাব করায় সময় কষ্ট হচ্ছে। একটু জ্বালা জ্বালা ভাব।’

‘আগে যেমন হত তেমন স্বাভাবিক বার হচ্ছে?’

‘না কমে গেছে।’

‘ঠিক আছে। এখন এক শিশি আলকাশল কিনে নিন। দু-চামচ করে দুবার খেয়ে বিকেলে আসুন। আর হ্যাঁ, প্রচুর জল খাবেন। আলকাশল জলে মিশিয়ে খাবেন।’

‘ঠিক আছে।’ মাথা নাড়লেন হেডমাস্টার, ‘এটি কে?’

‘আমার ভাগনি। চল পবন।’

তেমাথা পার হয়ে স্কুলের মাঠের সামনে আসতেই আবার থামতে হল। ডাক্তারবাবু চেম্বারে বসছেন না জেনে যেন মাথায় বাজ পড়ল ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের ওই কর্মীর। বললেন, ‘মায়ের শরীর খুব খারাপ। এখন চেম্বারে নিয়ে যাব ভেবেছিলাম!’

‘আপনাকে তো বলেছি ওঁকে শহরে নিয়ে গিয়ে ভালো কার্ডিওলজিস্টকে দেখান। আমি তো কার্ডিওলজিস্ট নই। ওঁর অসুখ হার্টের।’ বনবিহারী বললেন।

‘মাসখানেক আগে নিয়ে গিয়েছিলাম। বড় ডাক্তার ইসিজি করে বললেন ভরতি হতে হবে। অ্যাঞ্জিও—অ্যাঞ্জিও—।’

‘অ্যাঞ্জিওগ্রাফি?’

‘হ্যাঁ। ওই করে দেখবেন বুকে রক্ত যাওয়ার শিরা বন্ধ আছে কিনা। যা খরচ হবে তার অঙ্ক শুনে আমার মাথা ঘুরে গেছে। আমি ফতুর হয়ে যাব। ছেলেমেয়ে নিয়ে পথে বসব। ফিরিয়ে এনেছিলাম মাকে। দেখুন ডাক্তারবাবু, মায়ের বয়স হয়েছে। এখন ওসব কাটাছেঁড়া করাতে চাই না। আপনি ওষুধ দিয়ে যে কদিন বাঁচিয়ে রাখতে পারেন সেই ক’দিন থাকুন। কি বলেন?’

‘যা বলার তো আপনি বলছেন!

চল পবন।’

রিকশা চালু হলে পবন বলল, ‘ঢেঁকি স্বর্গে গিয়েও ধান ভানে।’

খিলখিল করে হেসে উঠল মামণি। বনবিহারী ধমক দিলেন, ‘অ্যাই। তোমাকে ডাক্তার গলা থেকে কোনও শব্দ বের করতে নিষেধ করেছে, মনে নেই?’

সঙ্গে সঙ্গে বনবিহারীর কোমরে আঙুলের ডগা দিয়ে খোঁচা মারল মামণি।

পবন বলল, ‘ভাগনিদিদির গলায় কিছু হয়েছে নাকি?’

‘হ্যাঁ। ডাক্তার ওকে পনেরো দিন কথা বলতে নিষেধ করেছেন।’

ধীরে ধীরে রিকশা চলে এল মেছুয়া ব্রিজের কাছে। ব্রিজ না বলে পুল বলাই ভালো। নীচে তিরতির করে ঝরনা বয়ে যাচ্ছে। সেটা দেখে প্রবল উৎসাহে নীচে নামতে চাইল মামণি। বনবিহারী ঘড়ি দেখলেন। ঠিক এক মিনিট দেরি আছে দশটা বাজতে। বললেন, ‘এখন নয়, ফেরার পথে নেমো।’

এখন দুপাশে দীর্ঘ গাছের সারি। পিচের সরু পথটা ছায়ায় মাখামাখি। বনবিহারী বললেন, ‘বাবা পবন, অনেকক্ষণ চালিয়েছ। এখানে একটু জিরিয়ে নাও। আমি ওকে পাশের জঙ্গলটা দেখিয়ে আনি। বাঁদর তো আছেই।’

রাস্তার পাশে রিকশা থামাল পবন, ‘বেশিদূর যাবেন না।’

‘কেন? বাঘ-ভাল্লুক তো নেই।’

‘মাঝে-মাঝে চিতা আসে আর হাতি তো জঙ্গলটাকে ঘরবড়ি করে ফেলেছে। যান, ঘুরে আসুন।’ পবন বলল।

মামণিকে নিয়ে জঙ্গলের রাস্তায় ঢুকলেন বনবিহারী। তিনি নিশ্চত যে তাঁদের ওপর চোখ রাখছে পুলিশরা। নিশ্চয়ই গাছগুলোর আড়ালে লুকিয়ে আছে তারা। বাচ্চা মেয়ের মতো আচরণ করছে মামণি। পাশের গাছের ডালে বসা দুটো বাঁদরকে দেখে সে হাততালি দিতেই তারা পরি কি মরি করে পালাল অন্য গাছে। মামণি তাদের পেছনে ধাওয়া করতে গিয়ে বুনো ঝোপের জন্যে থেমে গেল। ঝিঁঝি ডাকছে সমানে। মাথার ওপর সূর্য দেখা যাচ্ছে না। বেশ খানিকটা যাওয়ার পরে বনবিহারী ঝট করে মামণির হাত ধরে আটকালেন। কুচকুচে কালো একটা সাপ রাস্তার এপাশ থেকে ওপাশে যাচ্ছে। ওটা চলে যাওয়ার পর খানিকটা এগোতেই একটা ঝরনার ওপরে সাঁকো চোখে পড়ল। বনবিহারী বললেন, ‘আমি এখানে একটু বসি। তুমি খানিকটা এগিয়ে দেখে এসো।’ বলামাত্র একটা শিসের শব্দ কানে এল। এত তীব্র যা কোনও পাখির গলা থেকে বেরুতে পারে না। শব্দ শুনেই সম্ভবত, মামণি মাথা নাড়ল, সে যাবে না।

ফাঁপরে পড়লেন বনবিহারী। দারোগাবাবু বলেছন ওকে একা আধঘণ্টাটাক ঘুরতে দিতে হবে। তিনি বোঝালেন, ‘আমার বয়স হয়েছে। এই সাঁকোর ওপর বসে বিশ্রাম করব। তুমি যাও, অনেক বাঁদর, খরগোশ, হরিণ দেখতে পাবে।’

শেষ পর্যন্ত মাথায় হাত দিয়ে বোঝালে মামণি রাজি হল। রাস্তার পাশে পড়ে থাকা একটা শক্ত ডালকে লাঠি বানিয়ে সে হাঁটতে হাঁটতে বারবার পেছনে তাকিয়ে দেখল বনবিহারী বসে আছেন কিনা! বাঁক নেওয়া রাস্তা ওকে চোখের আড়ালে নিয়ে গেল।

সাঁকোর দুপাশের সিমেন্টের স্লাবের একটায় বসলেন বনবিহারী। এখানে কোনও আদিবাসীকে চোখে পড়ছে না যে খবর পাঠাবে। পুলিশও অদৃশ্যে রয়েছে। তিনি নীচের ঝরনার জলের দিকে তাকালেন। ইঞ্চি ছয়েক লম্বা একটা রুপোলি মাছের ঝাঁক এক ফুট জলে খেলা করছে। কি মাছ এগুলো? পুঁটি নয়, দেখে মনে হচ্ছে বাটা মাছের মতো। বাটা কি ঝরনায় হয়? বোরলি নিশ্চয়ই নয়। ওটা তিস্তা-তোর্সা ছাড়া পাওয়া যায় না। আরও খানিকক্ষণ দেখে বনবিহারী খুশি হলেন। এই ঝরনায় মাছ আছে। পুঁটিদের ঝাঁক চলে গেল। এবার এল পাথরঠোকা মাছেরা। দারুণ সুস্বাদু। আজকাল বাজারে ওঠে না। এই ঝরনা গিয়ে পড়েছে মেছুয়া নদীতে। সেখান থেকে আংরাভামায়। এখন ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টে কাঠ কাটা বা মাছ ধরায় বেশ কড়াকড়ি হওয়ায় ওরা বাড়তে পারছে। সেইসঙ্গে আছে হাতির সামনে পড়ার ভয়।

এটা মনে আসতেই শঙ্কিত হলেন তিনি। মামণি যদি হাতির সামনে পড়ে যায় তাহলে ওকে ফিরে আসতে হবে না। সেক্ষেত্রে বাচ্চাটাকে নিয়ে তিনি কি করবেন? ওই বাচ্চা বড় হবে কিন্তু কোনওদিন জানতে পারবে না ওর বাবার নাম, মা-বাবার ঠিকানা। তাছাড়া ওকে বড় করার ঝামেলা সামলাবে কে? কালীচরণ কদ্দিন পারবে? সবাই জিজ্ঞাসা করবে, মা না হয় হাতির পায়ের তলায় গিয়েছে, বাবা কোথায়? বাবা এ বাচ্চাকে নিয়ে যাচ্ছে না কেন?

উঠে দাড়ালেন বনবিহারী। না, এবার ওকে ফেরানো উচিত। ঘড়ি দেখলেন, ইতিমধ্যে পনেরো মিনিট চলে গেছে। হঠাৎ একটা চিৎকার কানে এল। ভয় পেয়ে একটা গোঙানি ছিটকে উঠেছে, এটা মামণি ছাড়া কারও হতে পারে না। তারপরেই তিনি মেয়েটাকে দৌড়ে আসতে দেখলেন। যেন প্রাণের ভয়ে ছুটছে সে। কাছে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বনবিহারীকে দু-হাতে জড়িয়ে ধরল মামণি। ওর সর্বাঙ্গ কাঁপছে, বুক উথালপাথাল। প্রায় আধমিনিট গেল স্থির হতে।

বনবিহারী জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কি হয়েছে?’

উত্তর দিতে বোধহয় পারল না চট করে। বনবিহারীর অস্বস্তি হল। ওর মাথা তাঁর চিবুকের ওপরে। নিজের বুকে মামণির শরীর চেপ্টে থাকায় তিনি যা অনুভব করছেন তা এর আগে কখনও করেননি। হঠাৎ মনে হল, তাঁর ভালো লাগছে। একটা নরম উত্তাপ শরীরে তিরতির করে ছড়াচ্ছে।

সেই মুহূর্তে মামণি হাত নামিয়ে জঙ্গলটা দেখাল।

‘কি হয়েছে ওখানে?’ নতুন উপলব্ধির আবিষ্কারকে কমিয়ে দিলেন বনবিহারী।

হাত দিয়ে হাতির আকৃতি দেখাল মামণি। তারপর আঙুল তুলে চার বোঝাল। এবং সেই সঙ্গে তাঁর হাত ধরে টানতে লাগল ফিরে যাওয়ার জন্যে।

রিকশায় উঠে বনবিহারী বললেন, ‘পবন, হাতি দেখে মেয়েটা খুব ভয় পেয়ে গেছে। আজ আর নাথুয়ায় গিয়ে কাজ নেই, বাড়ি ফিরে চলো।’

‘ভাগনিদিদির কপাল ভালো, হাতির সামনে পড়লে কেউ রক্ষা পায় না।’ পবন রিকশা ফেরাল।

সকল অধ্যায়

১. দাউদাউ আগুন – ১
২. দাউদাউ আগুন – ২
৩. দাউদাউ আগুন – ৩
৪. দাউদাউ আগুন – ৪
৫. দাউদাউ আগুন – ৫
৬. দাউদাউ আগুন – ৬
৭. দাউদাউ আগুন – ৭
৮. দাউদাউ আগুন – ৮
৯. দাউদাউ আগুন – ৯
১০. দাউদাউ আগুন – ১০
১১. দাউদাউ আগুন – ১১
১২. দাউদাউ আগুন – ১২
১৩. দাউদাউ আগুন – ১৩
১৪. দাউদাউ আগুন – ১৪
১৫. দাউদাউ আগুন – ১৫
১৬. দাউদাউ আগুন – ১৬
১৭. দাউদাউ আগুন – ১৭
১৮. দাউদাউ আগুন – ১৮
১৯. দাউদাউ আগুন – ১৯
২০. দাউদাউ আগুন – ২০
২১. দাউদাউ আগুন – ২১
২২. দাউদাউ আগুন – ২২
২৩. দাউদাউ আগুন – ২৩
২৪. দাউদাউ আগুন – ২৪
২৫. দাউদাউ আগুন – ২৫
২৬. দাউদাউ আগুন – ২৬
২৭. দাউদাউ আগুন – ২৭
২৮. দাউদাউ আগুন – ২৮
২৯. দাউদাউ আগুন – ২৯
৩০. দাউদাউ আগুন – ৩০
৩১. দাউদাউ আগুন – ৩১
৩২. কাঠকয়লার আগুন – ১
৩৩. কাঠকয়লার আগুন – ২
৩৪. কাঠকয়লার আগুন – ৩
৩৫. কাঠকয়লার আগুন – ৪
৩৬. কাঠকয়লার আগুন – ৫
৩৭. কাঠকয়লার আগুন – ৬
৩৮. কাঠকয়লার আগুন – ৭
৩৯. কাঠকয়লার আগুন – ৮
৪০. কাঠকয়লার আগুন – ৯
৪১. কাঠকয়লার আগুন – ১০
৪২. কাঠকয়লার আগুন – ১১
৪৩. কাঠকয়লার আগুন – ১২
৪৪. কাঠকয়লার আগুন – ১৩
৪৫. কাঠকয়লার আগুন – ১৪
৪৬. কাঠকয়লার আগুন – ১৫
৪৭. কাঠকয়লার আগুন – ১৬
৪৮. কাঠকয়লার আগুন – ১৭
৪৯. কাঠকয়লার আগুন – ১৮
৫০. কাঠকয়লার আগুন – ১৯
৫১. কাঠকয়লার আগুন – ২০
৫২. কাঠকয়লার আগুন – ২১
৫৩. কাঠকয়লার আগুন – ২২
৫৪. কাঠকয়লার আগুন – ২৩
৫৫. কাঠকয়লার আগুন – অন্তিম পর্ব

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন