কাঠকয়লার আগুন – ১৪

সমরেশ মজুমদার

চোদ্দো

পায়ের নীচের মাটি যদি উথালপাথাল হত, আকাশ যদি মাথার ওপর ভেঙে পড়ত তাহলে বোধহয় এভাবেই অসাড় হয়ে যেতেন বনবিহারী। তাঁর চোয়াল ধীরে ধীরে শক্ত হল। মনে হল এরকম একটা আজগুবি কারণ দেখিয়ে মেয়েটা নিজের সব দোষ আড়াল করতে চায়। ঘুরে ওর গালে সজোরে চড় মারলে চালাকি বের হয়ে যাবে। কিন্তু বনবিহারী চড় মারতে পারলেন না।

একটা গাড়ির শব্দ জানান দিয়ে বাড়ির সামনে থামতেই বনবিহারী চাপা গলায় বললেন, ‘ভেতরের ঘরে যাও। দয়া করে আমাকে ডুবিও না। যাও।’

মামণি দ্রুত চলে যাওয়ামাত্র দরজায় শব্দ হল। বনবিহারী এগিয়ে গিয়ে সেটা খুলতেই দেখলেন থানার বড়বাবু দাঁড়িয়ে হাসছেন, ‘আপনাকে ধন্যবাদ জানাতে এলাম।’

‘ওঃ।’ বনবিহারী গম্ভীর হলেন।

‘ছেলেটার অবস্থা কেমন দেখলেন?’

মাথা নাড়লেন বনবিহারী, ‘ওর কপাল।’

‘অর্থটা বোধগম্য হল না।’ বড়বাবুর চোখ ছোট হল।

‘দেখুন, ওর কপালে যা লেখা আছে তাই হবে। আমি নিজে ভাগ্যে বিশ্বাস করি না। কিন্তু ওর ক্ষেত্রে এখন আর কোনও উপায় নেই। হয় মরে গিয়ে বেঁচে যাবে, নয় বেঁচে গেলে জেলে পচতে হবে।’ বনবিহারী বললেন, ‘ভেতরে আসুন।’

‘না। আপনি কী চান? ও মরে যাক?’

‘আমার চাওয়ার ওপর কি ওর ভাগ্য নির্ভর করছে?’

‘কিছু মনে করবেন না, আপনার কথায় যেন অন্যরকম সুর পাচ্ছি।’

‘এসব দেখতে আমার ভালো লাগছে না। এরা চোর-ডাকাত নয়। এত বড় দেশ ভারতবর্ষে কখনও বিপ্লব সম্ভব নয় তা নিশ্চয়ই ওদের জানা। তবু কী কারণে জীবন নষ্ট করছে আমি ভেবে পাই না।’

‘আপনি ওদের বোঝান না। বুঝিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনুন।’

হেসে ফেললেন বনবিহারী, ‘আমার কথা তারা শুনবে কেন? তা ছাড়া আমি তাদের পাব কোথায়? ওদের সন্ধানে জঙ্গলে জঙ্গলে ঘোরা তো সম্ভব নয়। আর ঘুরলে আপনাদের চর ভেবে আমাকে মেরে ফেলবে।’

‘হুঁ! যাক গে, আপনি নিশ্চয়ই খুব ক্লান্ত। বৃষ্টির মধ্যে সারারাত না ঘুমিয়ে কাটিয়েছেন। বিশ্রাম করুন। ও হ্যাঁ, আপনার বাড়িতে যে লোকটি কাজ করে তার নাম তো কালীচরণ, তাই না?’ ফিরে যেতে গিয়েও ঘুরে দাঁড়ালেন অফিসার।

‘হ্যাঁ।’

‘সে কি আর কাজ করে না?’

‘ছুটি নিয়েছে দেশে যাবে বলে।’

‘ওর দেশ কোথায়?’

‘তা আমি জানি না। এর আগে কখনও গিয়েছে কিনা মনে পড়ছে না।’

‘ফরেস্টের লাগোয়া বস্তিতে সে ঘর ভাড়া করে আছে। এইসব অঞ্চলে নতুন লোক ঘর ভাড়া করলে আমরা তার সম্পর্কে খোঁজখবর করি। আচ্ছা, চলি।’ অফিসার এবার গাড়িতে উঠে বসলেন, গাড়ি চলে গেল।

হঠাৎ শীত করতে লাগল বনবিহারীর। কালীচরণ কোথাও না গিয়ে ফরেস্টের পাশের বস্তিতে ঘর ভাড়া করে আছে। কেন? বস্তির ঘর মানে চ্যাটাইয়ের দেওয়াল আর খড়ের ছাউনি! হঠাৎ ওরকম কষ্ট করার সাধ হল কেন? তার পরেই কথাটা মাথায় এল। আজ থানার বড়বাবু তাঁকে নিছক ধন্যবাদ জানাতে আসেননি, এসেছেন সতর্ক করতে। পুলিশের সন্দেহের খাতায় তাঁর নাম যে উঠে গেছে সেটা ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিলেন, নইলে কালীচরণের প্রসঙ্গ ওভাবে তুলতেন না। বনবিহারী অনুমান করলেন এখন থেকে পুলিশ তাঁর ওপর কড়া নজর রাখবে। এমন কোনও কাজ নিজে তো করাই যাবে না, অন্যকেও জেনেশুনে করতে দেবেন না যা তাঁর বিরুদ্ধে যেতে পারে।

দরজা বন্ধ করে শোওয়ার ঘরে চলে আসামাত্র মামণি সেখানে হাজির হল। তাকে আড়চোখে দেখেও দেখলেন না বনবিহারী। তিনি টেবিলের সামনে চেয়ার টেনে বসতেই মেয়েটা পাশে এসে দাঁড়িয়ে একটা চিরকুট এগিয়ে দিল। ভাঁজ খুললেন তিনি, ‘আমি আর কোথাও যাব না।’

মাথা নাড়লেন বনবিহারী, ‘না। পুলিশ সন্দেহ করছে। তুমি এখানে থাকলে আমাকে জেলে যেতে হবে। আমি জেলে গেলে সন্তানের কী হবে? তুমি তাকে অনায়াসে ত্যাগ করে চলে যেতে পেরেছ, কিন্তু সে তো আমার ভরসায় বোর্ডিং-এ থেকে পড়াশুনা করছে।’

কোনও শব্দ নয়। নীরবে দ্বিতীয় চিরকুট এগিয়ে দিল মামণি, ‘আমি এখানেই থাকব।’

‘জোর-জবরদস্তি নাকি? না। রাত বাড়লে যেখান থেকে এসেছিলে সেখানে চলে যেও।’

তৃতীয় চিরকুট সামনে রাখল মামণি, ‘না। আমার কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।’

‘কেন? তোমার মা? তিনি তো আছেন!’

এবার চিরকুটে লিখে এগিয়ে দিল, ‘মা মারা গেছেন।’

‘বাঃ!’ মাথা নাড়লেন বনবিহারী, ‘এই বাড়িকে উগ্রপন্থীদের ক্যাম্প করা চলবে না।’

আবার লেখা হল, ‘আমার সঙ্গে ওদের কোনও সম্পর্ক নেই।’

খুব বিরক্ত হলেন বনবিহারী, ‘আমি বিশ্বাস করি না। আবার যদি বিশ্বাস করতেও চাই তাহলে তুমি এই বাড়িতে কী পরিচয় নিয়ে থাকবে? এখানকার মানুষ জানে আমি একা, ওই বাচ্চাটাকে মানুষ করছি কারণ ওর বাবা-মা নেই। হঠাৎ তুমি কোত্থেকে উদয় হলে?’

কয়েক সেকেন্ড বনবিহারীর চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে থাকল মামণি। তারপর ধীরে ধীরে চিরকুটে লিখল, ‘আপনি আমাকে বিয়ে করুন।’

পড়ামাত্র হৃৎপিণ্ড যেন এক লাফে গলার কাছে চলে এল। কী লিখল মেয়েটা! কোনওমতে বলতে পারলেন, ‘তুমি কি পাগল?’

মামণি দুপাশে মাথা নাড়ল কয়েকবার।

‘আরে! তুমি আমার মেয়ের বয়সি। ঠিক সময়ে বিয়ে করলে তোমার মতো একটা মেয়ে থাকত আমার। পাগলের মতো কথা বলছ!’ ধমকে উঠলেন তিনি।

মামণি আবার লিখল, ‘আপনি আমাকে জন্ম দেননি। যদি ভালোবেসে গ্রহণ করেন তাহলে বয়সের পার্থক্য কোনও বাধাই হতে পারে না।’ বলতে-বলতে হাঁটুমুড়ে বসে বনবিহারীর শিথিল ডান হাত তুলে নিজের মাথায় চেপে ধরল সে, এবার সেই আওয়াজ বেরুল তার গলা থেকে যা একদা শুনতে অভ্যস্ত ছিলেন বনবিহারী। কাতর হয়ে অনুরোধ করার সময় এরকম শব্দ ওর গলা থেকে বের হয়।

‘ঠিক আছে। কোথাও যেতে হবে না তোমাকে। কিন্তু কথা দিতে হবে আর ওদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে না। যদি প্রমাণ পাই তাহলে নিজে পুলিশকে বলব। তাতে ওরা যদি আমাকে অ্যারেস্ট করে তো করবে। কি রাজি?’

হাতটা মাথার ওপর থেকে নামিয়ে ঠোঁটে চেপে ধরল মামণি। সঙ্গে সঙ্গে শরীরের শিরায় শিরায় রক্ত উথালপাথাল। বনবিহারী দাঁতে দাঁত চেপে নিজেকে সামলালেন। হঠাৎই মামণি দৌড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। বনবিহারীর মনে হল নিজের আচরণে ও যেন লজ্জা পেল। কিন্তু তিনি এখন কী করবেন?

সুজয় এখন বেশ সুস্থ। তবে বনবিহারীর নির্দেশ মেনে বাড়ির বাইরে হাঁটাচলা করে না। তিনি অনুমতি দিয়েছেন, সামনের সোমবার থেকে সে স্কুলে যেতে পারে। স্কুলের সেক্রেটারির উদ্দেশ্যে একটা চিঠি লিখল সে। ডাক্তার অনুমতি দিয়েছেন সামনের সোমবার থেকে জয়েন করতে। সেক্রেটারির যদি আপত্তি না থাকে তাহলে সে ওইদিন কাজে যোগ দিতে চায়।

চিঠিটা লেখার পর সে সদানন্দর খোঁজে ঘর থেকে বের হচ্ছিল। তাকে অনুরোধ করবে যদি সেক্রেটারির কাছে পৌঁছে দেয়। তখনই শিবানীকে দেখতে পেল। বাগানের খিড়কি দরজা খুলে এগিয়ে আসছে। হালকা নীল শাড়িতে বেশ মিষ্টি দেখাচ্ছে তাকে।

কাছে এসে শিবানী জিজ্ঞাসা করল, ‘কেমন আছেন?’

‘এখন ভালো।’

‘স্কুল থেকে ফিরছিলাম, ভাবলাম আপনার খোঁজ নিয়ে যাই।’

‘অনেক ধন্যবাদ।’

‘আপনি এত পোশাকি কথা বলছেন কেন? ধন্যবাদ কীসের জন্যে! ওহো! আমি বাবাকে আপনার ঘর খোঁজার কথা বলেছিলাম।’ শিবানী হাসল।

কৌতূহলী হল সুজয়, ‘কোনও খবর পাওয়া গেল?’

‘হুম। খারাপ খবর।’

‘কীরকম?’

‘যেসব বাড়িতে অবিবাহিত মেয়ে আছে তারা আপনাকে ঘর ভাড়া দেবে না।’

‘সর্বনাশ!’

‘সর্বনাশের কিছু হয়নি। বাবা খোঁজখবর নিচ্ছেন।’

‘আসলে আমি তো বেরুতে পারছি না। দেখি, সোমবার জয়েন করলে অন্য টিচারদের সঙ্গে কথা বলব।’

‘আপনি সোমবারে জয়েন করছেন? বাঃ!’

‘একটা উপকার করবেন? এই চিঠিটা সেক্রেটারির কাছে পৌঁছে দেবেন?’

‘নিশ্চয়ই।’

‘আমার কাছে খাম নেই—।’

‘ঠিক আছে, খামে ভরে দেব। গোপনীয় কিছু নয় তো?’

‘না, না। জয়েন করার কথা লিখেছি।’

চিঠি নিয়ে শিবানী বলল, ‘চলি। আপনার সঙ্গে সোমবার দেখা হবে।’ সে চলে গেলেও দরজা থেকে সরল না সুজয়। মেয়েটি যেমন ভদ্র তেমনি আন্তরিক। সে লক্ষ করেনি সদানন্দর বউ ভেতরের বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে। দেখার পর ভদ্রতা করে হাসল সুজয়।

‘আপনাকে একটা কথা বলার আছে।’ সদানন্দর বউ বলল। দুজনের মধ্যে অনেকটাই দূরত্ব, গলা ঈষৎ তুলে সুজয় বলল, ‘বলুন।’

‘আপনি দুদিনের মধ্যে অন্য কোথাও ঘর দেখুন।’

‘দুদিনের মধ্যে? এত তাড়াতাড়ি কি পাওয়া যাবে! অন্তত এই মাসটা—।’

‘না। আর নয়। ঢের হয়েছে।’

‘আপনি হঠাৎ এভাবে কথা বলছেন কেন?’

‘কেন বলছি? একটা আইবুড়ো মেয়ে চুপচাপ এই বাড়িতে এসে আপনার সঙ্গে প্রেম করবে আর সেটা আমাদের দেখতে হবে?’ সদানন্দর বউ হিসহিস করে উঠল।

‘ছি-ছি! আপনি এসব কী বলছেন?’ সুজয় প্রতিবাদ করল।

‘আবার ছি-ছি বলছেন? শিবানী কেন এসেছিল আপনার কাছে?’

‘আমি এখন কেমন আছি তার খোঁজ নিতে এসেছিল!’

‘আপনি ভালো না মন্দ আছেন তাতে ওর কী? ক’দিনের আত্মীয়তা আপনাদের? দুদিন দেখেই এত কর্তব্যবোধ জেগে উঠল? আমি কি ঘাসে মুখ দিয়ে চলি? কথাটা বাইরে বললে মেয়েটার বদনাম হবে, মেয়ে হয়ে ওর ক্ষতি করতে চাই না। আপনি পারবেন ওর দায়িত্ব নিতে? পারবেন না। তাহলে কেন ওকে প্রশয় দিচ্ছেন! না, আমি নাকের ডগায় এই প্রেমলীলা দেখতে রাজি নই। আপনি দুদিনের মধ্যে সময় না দিলে আমি পাঁচজনকে জানিয়ে দিতে বাধ্য হব।’ কথাগুলো বলে ঘরের ভেতরে চলে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল সদানন্দর বউ।

সুজয় হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকল খানিকক্ষণ। এই মহিলা তার সঙ্গে অত্যন্ত ভালো ব্যবহার করে এসেছেন এতদিন। সেই ব্যবহার ওঁর স্বামী পছন্দ করে না সুজয় বুঝেছিল। চাহনিতে, খাবার দেওয়ার সময় একটু অতিরিক্ত হাসি ভদ্রমহিলাকে ভালো লাগতে সাহায্য করেছিল। সেই মহিলা এরকম পালটি খেয়ে যাবেন?

সুজয় পাজামার ওপর পাঞ্জাবি পরে নিয়ে কয়েকটা টাকা পকেটে পুরে ঘর থেকে বেরিয়ে এল। হাঁটতে তেমন অসুবিধে হচ্ছে না কিন্তু শরীর যে দুর্বল তা বুঝতে পারছে।

বড় রাস্তায় এসে সে রিকশা নিল। রিকশাওয়ালা জিজ্ঞাসা করল, ‘কোথায় যাবেন?’

‘স্কুলের দিকে চলো।’

পথে মানুষ রয়েছে কিন্তু কেউ তার চেনা নয়। ছুটির পর স্কুল এখন শুনসান। এমনকী মাঠে ছেলেরাও খেলাধূলা করছে না। শেষ পর্যন্ত একটা চায়ের দোকানের সামনে রিকশা থামাল সে। রাস্তার পাশে মাটিতে বাঁশ পুঁতে তার ওপর বেঞ্চি। জনা চারেক লোক অলসভঙ্গিতে বসে আছে। একটা চা দিতে বলায় দোকানদার বলল, ‘বসুন আপনি।’

বেঞ্চিতে বসার পর পাশের লোকটি জিজ্ঞাসা করল, ‘নতুন মনে হচ্ছে?’

‘হ্যাঁ। স্কুলের চাকরি নিয়ে এসেছি।’

দ্বিতীয়জন বলল, ‘আচ্ছা! মাস্টারমশাই? ভালো ভালো।’

দোকানদার চায়ের গ্লাস দিয়ে বলল, ‘থাকছেন কোথায়?’

‘ওইটাই সমস্যা। যেখানে ছিলাম সেখানে আর দুদিন থাকা যাবে।’ সুজয় বলল, ‘একটা ঘর খুঁজছি। কিন্তু এখানে তো জানাশোনা নেই।’

‘দুদিন থাকা যাবে মানে?’ প্রথমজন অবাক হল, ‘কোথায়? কার বাড়িতে আছেন?’

‘সদানন্দবাবুর বাড়িতে। ওই যে যাঁর ভাতের হোটেল।’

‘তাই বলুন। ও ব্যাটা তো এক নম্বরের চামার। বাড়িতে ভাড়া রেখেছিল নাকি? ও তো কাউকে বাড়িতে ঢোকায় না। এর আগে এক বুড়োবুড়িকে ভাড়াটে রেখেছিল। শুনেছি বউকে খুব সন্দেহ করে। তা দুদিনের মধ্যে চলে যেতে বলল কেন?’

‘আমি জানি না।’

দোকানদার জিজ্ঞাসা করল, ‘বিয়ে-থা করেছেন?’

‘না।’

‘তাহলে তো মুশকিল।’

‘কেন?’

‘বুঝতেই পারছেন, আইবুড়ো ছেলেকে ঘরে ঢোকাতে সবাই সাহস পায় না।’

চতুর্থজন এতক্ষণ চুপচাপ ছিল, এবার বলল, ‘একটা জায়গায় যেতে পারেন।’

প্রথমজন বলল, ‘কার কথা বলছ যদুনাথ?’

‘বলাইচাঁদবাবুর বাড়িতে খোঁজ নিলে ঘর পেতে পারেন উনি। শরীর পড়ে যাওয়ার পর তো অবস্থা ভালো নেই। মেয়েদের সেলুন করে ওর বউ যা আয় করে তাতে কোনওরকমে চলে। দেখতে পারে, অনেকগুলো ঘর আছে।’ চতুর্থজন বলল।

‘কিন্তু বউটা তো জাঁহাবাজ।’ দোকানদার বলল।

‘আঃ। জাঁহাবাজ তো কী হয়েছে? উনি ভাড়াটে হয়ে থাকবেন, নাক না গলালেই হল।’ প্রথমজন রায় দিলেন। ‘চলে যান। সোজা ফরেস্টের দিকে গিয়ে একটা বটগাছ পাবেন। বটগাছের গায়েই দেখবেন বাড়ি। সামনে মেয়েদের বিউটি পার্লার। নামেই পার্লার। ওই চুল কাটা, আলতা পরানো হয় বোধহয়। ওটাই বলাইচাঁদবাবুর বাড়ি।’

মাথা নাড়ল সুজয়। তারপর চায়ের দাম মিটিয়ে রিকশায় উঠল। বলল ফরেস্টের দিকে যেতে। রিকশাওয়ালা জানাল ওই রাস্তাই সোজা ফরেস্টে ঢুকে গেছে।

আর একটু এগোতে রাস্তার দুপাশে ঘরবাড়ি কমে এল। যে কয়েকটা রয়েছে তার চাল টিনের, দেওয়াল কাঠের। পিচের রাস্তার ওপর গরু বসে আছে। হঠাৎ সে বেশ জোরে চেঁচিয়ে উঠল, ‘কালীচরণদা না?’

কালীচরণ মুখ ঘুরিয়ে তাকাল। তারপর দ্রুত হাঁটতে লাগল। রিকশাওয়ালা ওর পাশে চলে এল সুজয় জিজ্ঞাসা করল, ‘আরে? আমাকে চিনতে পারছ না নাকি?’

‘না, মানে আমার একটু তাড়া আছে।’

‘কোথায় যাবে?’

‘ওই ফরেস্টের দিকে।’

‘তাহলে উঠে এসো। তাড়া যখন আছে তখন পৌঁছে দিচ্ছি।’

‘না, না থাক।’

‘থাকবে কেন? ওঠো বলছি। বেশ জোরে বলল সুজয়।

হাতে একটা থলে, কালীচরণ রিকশায় উঠল। কিন্তু তাকে খুব আড়ষ্ট দেখাচ্ছিল।

‘শরীর ভালো হয়ে গেছে?’ কালীচরণ জিজ্ঞাসা করল।

‘অনেকটা। সামনের সোমবার স্কুলে জয়েন করব।’ সুজয় বলল, ‘মুশকিলে পড়েছি খুব। থাকার জন্যে ঘর খুঁজছি কিন্তু বিয়ে করিনি বলে কেউ দিতে রাজি হচ্ছে না।’

‘কীরকম ঘর খুঁজছেন?’

‘কীরকম আবার? সাদামাটা থাকা যায় এমন ঘর, পরিষ্কার বাথরুম, ল্যাটিন। কিন্তু আমার পক্ষে বেশি দূরে যাওয়া যেমন সম্ভব নয়, বেশি ভাড়াও দিতে পারব না।’ বলতে-বলতে সুজয় বটগাছটা দেখতে পেল। তার গায়ে একটা টুকরো টিনের ওপর লেখা, ‘বিউটি পার্লার।’

রিকশাওয়ালাকে থামতে বলল সুজয়। কালীচরণ নেমে দাঁড়াল, ‘আমি চলি।’

‘তুমি এদিকে কোথায় যাচ্ছ?’

‘এদিকেই থাকি। আপনার যদি ঘরের প্রয়োজন না মেটে তাহলে এদিকে আসতে পারেন। ফরেস্টের গায়ে অনেক ঘর হয়েছে। তবে খুব ভালো নয়। ওখানে গিয়ে আমার খোঁজ করবেন। নমস্কার বাবু।’ কালীচরণ চলে গেল। বিস্মিত হল সুজয়। সে বুঝতে পারল কালীচরণ সন্তানদের বাড়িতে এখন থাকে না। সে রিকশা থেকে নেমে একটা ছেলেকে জিজ্ঞাসা করল, ‘আচ্ছা, ওটা কি বলাইচাঁদবাবুর বাড়ি?’

সকল অধ্যায়

১. দাউদাউ আগুন – ১
২. দাউদাউ আগুন – ২
৩. দাউদাউ আগুন – ৩
৪. দাউদাউ আগুন – ৪
৫. দাউদাউ আগুন – ৫
৬. দাউদাউ আগুন – ৬
৭. দাউদাউ আগুন – ৭
৮. দাউদাউ আগুন – ৮
৯. দাউদাউ আগুন – ৯
১০. দাউদাউ আগুন – ১০
১১. দাউদাউ আগুন – ১১
১২. দাউদাউ আগুন – ১২
১৩. দাউদাউ আগুন – ১৩
১৪. দাউদাউ আগুন – ১৪
১৫. দাউদাউ আগুন – ১৫
১৬. দাউদাউ আগুন – ১৬
১৭. দাউদাউ আগুন – ১৭
১৮. দাউদাউ আগুন – ১৮
১৯. দাউদাউ আগুন – ১৯
২০. দাউদাউ আগুন – ২০
২১. দাউদাউ আগুন – ২১
২২. দাউদাউ আগুন – ২২
২৩. দাউদাউ আগুন – ২৩
২৪. দাউদাউ আগুন – ২৪
২৫. দাউদাউ আগুন – ২৫
২৬. দাউদাউ আগুন – ২৬
২৭. দাউদাউ আগুন – ২৭
২৮. দাউদাউ আগুন – ২৮
২৯. দাউদাউ আগুন – ২৯
৩০. দাউদাউ আগুন – ৩০
৩১. দাউদাউ আগুন – ৩১
৩২. কাঠকয়লার আগুন – ১
৩৩. কাঠকয়লার আগুন – ২
৩৪. কাঠকয়লার আগুন – ৩
৩৫. কাঠকয়লার আগুন – ৪
৩৬. কাঠকয়লার আগুন – ৫
৩৭. কাঠকয়লার আগুন – ৬
৩৮. কাঠকয়লার আগুন – ৭
৩৯. কাঠকয়লার আগুন – ৮
৪০. কাঠকয়লার আগুন – ৯
৪১. কাঠকয়লার আগুন – ১০
৪২. কাঠকয়লার আগুন – ১১
৪৩. কাঠকয়লার আগুন – ১২
৪৪. কাঠকয়লার আগুন – ১৩
৪৫. কাঠকয়লার আগুন – ১৪
৪৬. কাঠকয়লার আগুন – ১৫
৪৭. কাঠকয়লার আগুন – ১৬
৪৮. কাঠকয়লার আগুন – ১৭
৪৯. কাঠকয়লার আগুন – ১৮
৫০. কাঠকয়লার আগুন – ১৯
৫১. কাঠকয়লার আগুন – ২০
৫২. কাঠকয়লার আগুন – ২১
৫৩. কাঠকয়লার আগুন – ২২
৫৪. কাঠকয়লার আগুন – ২৩
৫৫. কাঠকয়লার আগুন – অন্তিম পর্ব

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন