ঈশ্বরের বাগান – ৬

অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়

।। ছয়।।

সুরেন জানালায় উঁকি দিয়ে অবাক হয়ে গেছে। আটটা বেজে গেছে কখন, এখনও ঘুমাচ্ছে। সাদা চাদরে ঢাকা শরীর। চিৎ হয়ে শুয়ে আছেন তিনি। ফুল স্পিডে পাখা চলছে। সাদা সাদা ছাই উড়ছে ঘর ভর্তি। রোদ এসে পড়েছে জানালায়। জানালার একটা পাট সামান্য খোলা, সে উঁকি দেবার সময় পাটটা ঠেলে দিল। দরজা বন্ধ দেখে প্রথমে অবাক হয়ে গেছিল—তিনি কি ভেতরে নেই! দরজা ভেতর থেকে বন্ধ দেখে ভেবেছিল, ভেতরেই আছেন। এত বেলায় দরজা বন্ধ করে কি করছেন। কিন্তু তার শিরে শমন। অন্দরে ডাক পড়েছে। সে বৌরাণীর মেজাজ জানে। এক্ষুনি ডেকে নিয়ে না গেলে, তার কৈফিয়ত তলব হবে। দরজা বন্ধ যখন জানালায় উঁকি দেওয়া যাক—কিন্তু যদি মানুষটার জপ-তপের অভ্যাস থাকে—তা ভঙ্গ হলে ক্ষেপে যেতে পারেন। তবু খুব সাহস করে জানালায় উঁকি দিতেই অবাক। আবছা মত একটা ছায়ামূর্তি বিছানায় পড়ে আছে। জানালা ঠেলে দিতেই স্পষ্ট দেখল, তিনি চিত হয়ে শুয়ে আছেন। চাদরে গলা পর্যন্ত ঢাকা। হাওয়ায় চুল ঝড়ের মতো উথাল- পাতাল হচ্ছে। তিনি ঘুমাচ্ছেন। তারপরই কেমন শঙ্কায় বুক কেঁপে গেল। এভাবে মানুষ ঘুমায় না। মরেটরে যায়নি তো। আজকাল আকছার এই শহরে কত রকমের অপমৃত্যু ঘটছে। কাল বিকেলে একটা লাশ পাওয়া গেছে, আবার কি আজ সকালে আর একটা লাশ বের করা হবে। প্রায় তার পা ঠকঠক করে কাঁপছিল। তখনই সে চিৎকার করে উঠল,; অ নতুনবাবু, নতুন বাবু অন্দরে আপনাকে নিয়ে যেতে বলেছে।

অতীশ অনেক দূর থেকে যেন শুনতে পাচ্ছে তখনও, ও ছোটবাবু ছোটবাবু আর কতদূর। আমরা আর ডাঙা পাব না? দু’দিন হয়ে গেল!

দরজায় খুটখুট শব্দ, তারপর সজোরে কেউ দরজায় ধাক্কা মারতেই সে ধড়মড় করে উঠে বসল। দেখল, জানালায় সুরেন। আরও কেউ কেউ বারান্দায় দাঁড়িয়ে। সে উঠে তাড়াতাড়ি দরজা খুলে দিল। মানসদা, সেই ছেলেটা, আরও দু-একজন। মানসদা চটেই গেলেন, তুমি কি মানুষ না! এত বেলায় লোকে ঘুমোয়! তোমার চোখ-মুখ ভাল না বাপু। তোমাকে বিশ্বাস নেই।

অতীশ খুব লজ্জায় পড়ে গেছে। এত বেলা হয়েছে সে টের পায়নি। সারারাত সে ধূপকাটি জ্বালিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল, কখন সে ঘুমিয়ে পড়েছিল জানে না। সে সারারাত হিজিবিজি সব স্বপ্ন দেখেছে। স্বপ্ন দেখলে তার ভাল ঘুম হয় না। সকালে কেমন অবসাদ লাগে। সে একবার সকালে জেগেছিল, তারপর অবসাদ বোধ করতেই আর একটু গড়াগড়ি দিতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল। এত বেলা হয়ে গেছে সে ঘুণাক্ষরে টের পায়নি।

সে দরজা খুলতেই সুরেন ওকে সেলাম দিল। এ-বাড়িতে এ-সব রেওয়াজ এখনও চালু আছে। সে তো খুব বড় কাজ করে না এদের। মাঝারি সাইজের কর্তা-ব্যক্তি। তার আর কুমারবাহাদুরের মাঝখানে একজন বুড়ো মতো অফিসার আছেন। কলকারখানার সাধারণ সমস্যা সংক্রান্ত কথাবার্তা সব তারই সঙ্গে সারতে হবে বলে কুম্ভবাবু জানিয়েছে। এখন সুরেনের কথাবার্তা শুনে সে খুবই চমকে গেল। তার অন্দরে ডাক পড়েছে। কে ডাকছে কেন ডাকছে এত সব প্রশ্ন করার ক্ষমতা তার নেই। বোধ হয় সুরেনেরও জানার কথা নয়। সে তাড়াতাড়ি কি করবে ভেবে উঠতে পারছে না। বিছানার চাদর ঠিকঠাক করতে গিয়ে দেখল মানসদা তার দিকে সংশয়ের চোখে তাকিয়ে আছেন। সে বলল, কি হল মানসদা?

তোমার সাহস দেখছি। তুমি যেন গ্রাহ্যই করছ না।

—হাতমুখ না ধুয়ে যাই কি করে!

—তাড়াতাড়ি কর। এই সুরেন বেটা দালাল, বলগে যা, যাচ্ছে। এক্ষুনি ঘুম থেকে উঠল।

অতীশ মুখে পেস্ট নিয়ে বলল, আমাকে ডাকছে কেন সুরেন?

—বাবু আমরা নফর মানুষ। অত জানলে এখানে আমাদের রাখবে কেন বলুন।

মানসদা,জয়ন্ত বিছানায় বসে পড়েছে ততক্ষণে। জয়ন্ত ঘরটা দেখছে। অজস্র পোড়া ধূপকাঠি ছড়ানো ছিটানো। ঘরটা নোংরা হয়ে আছে। ঘুমের ঘোরে সে নিজের ঘরেও সুগন্ধ আতরের মতো কিছুর গন্ধ পেয়েছে। একবার সে বিছানা ছেড়ে উঠবে ভেবেছিল—গন্ধটা কোত্থেকে আসছে। এবাড়িতে এখানে সেখানে দুর্গন্ধ উঠছে কবে থেকে, সুগন্ধ থাকার ত কথা নয়। এখন বুঝতে পারছে এটা অতীশবাবুর কান্ড। শোবার সময় গুচ্ছের ধূপকাঠি শিয়রে জ্বালিয়ে রাখে। সে মানসদার দিকে তাকিয়ে বলল, প্রায় আপনার জুড়িদার।

মানসদা কিঞ্চিৎ বিরক্ত হলেন। তাঁর ঘরে মাঝে মাঝে তালা মেরে যায় কেউ। সে এত ভাল থাকার চেষ্টা করে, কারো কোন অপকার করে না, কেবল মাঝে মাঝে তার কি হয়—সে চিৎকার করতে থাকে—ও কি গন্ধ! পচা টাকার গন্ধ! ঘরের মধ্যে সে তখন ছুটে বেড়ায়।

—তোমরা পচা টাকার গন্ধ পাচ্ছ না। অহ কি গন্ধ! টেকা যাচ্ছে না। কোত্থেকে আসছে গন্ধটা। পুলিশে খবর দাও। সব অসুখে পড়ে যাবে। মহামারী শুরু হয়ে যাবে।

অতীশ বাথরুমে বলে জয়ন্তর কথা শুনতে পায়নি। সে এসে দেখল, তখনও সুরেন দাঁড়িয়ে আছে! অতীশ মুখ মুছে বলল, তুমি যাও। আমি যাচ্ছি।

—চিনবেন না বাবু।

আসলে সুরেন সঙ্গে নিয়ে যেতে চাইছে। সে ভাবল, এমন কি করেছে, যার জন্য তার অন্দরে ডাক পড়েছে। এটা তার কাছে খুবই অস্বাভাবিক ঠেকছে। এরা বনেদী জমিদার বংশ। এখনও যা আছে যেমন ধরা যাক কলকাতার ওপর ত্রিশ-বত্রিশ বিঘে নিয়ে এই বাড়ি, কাঠাপিছু দাম কুড়ি হাজার টাকা করে হলে, কি দাম হয় এবং কলকাতায় এমন আছে অনেক অট্টালিকা, দেশে বিশাল দেবোত্তর সম্পত্তি এবং শহরের কিছু এলাকা এখনও ইজারা দেওয়া আছে। সবই উড়ো খবরের মতো তার কানে এসে ঢুকেছে। বাইরে থেকে এদের বৈভব এখন ঠিক বোঝা যায় না। ভিতরে ঢুকলে বোঝা যায়, বৈভবের অন্ত নেই। অন্দরের নিয়মকানুন লঙ্ঘন করা যায় না। পর্দা ঢাকা গাড়ির চল সেদিনও ছিল নাকি। এ-বাড়ির রাজকন্যাদের মুখ বৌরাণীদের মুখ কেউ দেখেছে কখনও এককালে বিশ্বস্ত আমলারাও বলতে পারত না। এখন অবশ্য এতটা বোধহয় বেড়াজাল নেই। অতীশ জামা প্যান্ট পরতে পরতে বলল, মানসদা, কেন যে ডাকছে, বুঝছি না।

মানসদা পরেছেন পাজামা পাঞ্জাবি। তার চা এসেছে। তিনি বললেন, চাটা দু’ভাগ করে দাও। অতীশ চা পেয়ে খুব বিগলিত হয়ে গেল। চা খেতে খেতে বলল, মানসদা বসুন, আমি ঘুরে আসছি। সে এটাচি খুলে একটা পাট ভাঙা রুমাল পকেটে গুঁজে নিল। তখন মানসদা বলল, ঘাবড়ে যাচ্ছ খুব দেখছি। মাথার চুলটা আঁচড়ে নাও। এত স্বাভাবিক এবং ভাল মানুষ মানসদা, তার ঘরে তালা ঝোলে কেন। মানসদার চোখ নীলচে রঙের। উজ্জ্বল। এতটুকু অস্বাভাবিকতা নেই চোখে মুখে। এ- মুহূর্তে মানসদাকে তার পৃথিবীর একজন অন্যতম শ্রেষ্ঠ মানুষ মনে হচ্ছে। এই মানুষটি সম্পর্কে কুম্ভ কোনও খবর দেয়নি। কুম্ভ রাজবাড়ির এত খবর রাখে, অথচ এই মানুষটি সম্পর্কে যেন কিছুই জানে না। সে বের হবার মুখে মানসদা বলল, আমি ঘরে তালা দিয়ে দিচ্ছি। এসে চাবিটা নিয়ে নিও। অতীশ সিঁড়িতে নামতে নামতেই হাত তুলে দিল। সিঁড়ির মুখে ছোট্ট লন। কাঁটা তারের বেড়া। মাঝে ছোট গেট। ওপরে মাধবীলতার ঝাড়। সে লম্বা বলে মাথা এখানটায় নুইয়ে ঢুকল। লন পার হয়ে লম্বা বারান্দার ওপর বড় বড় সেকালের পেল্লাই দরজা। বার্মা টিকের। যে কোনও দরজা দিয়ে সামনের মারবেল পাথরের মেঝে দেখা যায়। সুরেন একটা দরজায় তার জন্য অপেক্ষা করছে। অতীশকে বলল,আজ্ঞে এখানে বসুন। শঙ্খ এসে আপনাকে নিয়ে যাবে।

সেই বড় বসার ঘরটা। মাঝখানে কার্পেট পাতা। সোফা নেই। কোণায় কোণায় বসার জন্য আলাদা ডিভান। এই ঘরটা এত বড় যে ও পাশে একটা লোক বসে ন্যাতা মারছে সে টেরই পায় নি। দু’দিন ধরে যতবার সে এই প্রাসাদে ঢুকছে, ‘লোকটাকে দেখেছে, জল আর ঝাড়ন নিয়ে ঘরদোর সাফ করে যাচ্ছে। এ-প্রাসাদে লোকটা বুঝি সারাদিন এই একটা কাজই করে। হাবা-গোবা মুখ। খোঁচা খোঁচা দাড়ি। পরনে ছেঁড়া খাঁকি হাফপ্যান্ট শতচ্ছিন্ন গেঞ্জি গায়ে। অতীশ ঘরে কেমন একটা বিদেশী আতরেরও গন্ধ পাচ্ছে। সকালেই বোধহয় এই প্রাসাদের নিয়ম সারা ঘরে দামী আতর স্প্রে করে দেওয়া। বাইরে থেকে গন্ধটা পাওয়া যায় না। যত ভিতরে ঢোকা যায় গন্ধটা তত প্রবল হয়।

ঘড়িতে দেখল, সাড়ে আটটা বেজে গেছে। ঘরের এখানে সেখানে কাঁচের জারে সব রকমারি ঘড়ি, কোনটা সাড়ে আটটা বাজায় বেহালার ছড় টেনে দিল, কোনটার শব্দ কাচের বলের মতো গড়িয়ে গেল—কোনটা এক জলতরঙ্গ আওয়াজ তুলে নিথর হয়ে গেল। বিচিত্র এক শব্দ ধ্বনির মধ্যে দেখল রাধিকাবাবু হন্তদন্ত হয়ে এদিকে আসছেন পেছনে নধরবাবু এবং অফিসের সেই বুড়ো বড়কর্তা, পরনে ছাই রঙের সুট, চোখে ভারি চশমা, পেছনে আরও কেউ আসছে ফাইলের পাহাড় নিয়ে। অতীশকে অসময়ে এখানে বসে থাকতে দেখে রাধিকাবাবু কিঞ্চিৎ সংশয়ে পড়ে গেল। বলল, তুমি এখানে ভাই। কুমারবাহাদুরের সঙ্গে দেখা করবে?

অতীশ উঠে দাঁড়াল। বলল, না।

অতীশের কথা শোনার সময় নেই রাধিকাবাবুর। তিনি চলে যাচ্ছেন। বোকার মতো অতীশ কিছুটা তার সঙ্গে হেঁটে গেল। আবার যদি কিছু প্রশ্নটশ্ন করে সেই আশায়—কিন্তু রাধিকাবাবু সোজা বিলিয়ার্ড টেবিলের ধার ঘেঁষে দ্রুত হেঁটে চলে গেল। এবং সে দেখল অফিসার, কেরানী, পিয়নের একটা পল্টন লাইনবন্দী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ভেতরে যাবে বলে, তারা দাঁড়িয়ে আছে। ভেতরের দরজা বন্ধ। ভেতর থেকে নির্দেশ না এলে কেউ ঢুকতে পারছে না। অতীশ এটা দেখার পরই ভাবল, সে ঠিক জাগয়ায় বসে নেই। শঙ্খ এসে যদি দেখতে পায় সে নেই, তবে খবর দেবে, কোথায়, কেউ নেই ত! তবে আর এক কেলেঙ্কারী। সুরেন তাকে যেখানে বসতে বলে গেছে, তাড়াতাড়ি সেখানে গিয়ে সে বসে পড়ল। পাশে কুম্ভবাবু থাকলেও যেন এ-মুহূর্তে সাহস পাওয়া যেত।

সেই লোকটার কিন্তু কোন দিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। সে জল ঝাড়ন নিয়ে বিশাল কক্ষের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ন্যাতা মেরেই চলেছে। এ-ঘরটা হয়ে গেলে পাশের ঘরে। ওটা হলে তার পাশের ঘরে। সকাল থেকে সে এই কাজটা যে কত মনোযোগ দিয়ে করে যাচ্ছে! তখনই সাদা ধবধবে উর্দি পরা একজন হাফ যুবক তাকে সেলাম দিল।

—আসুন সাব। বলে সে তাকে বিশাল কক্ষের একটার পর একটা পার করে নিয়ে যেতে থাকল। এবং শেষে দেখল, সব রেশমী সুতায় কারুকাজ করা সাদা চাদরে ঢাকা এক আশ্চর্য বিলাস কক্ষ। মেহগনি কাঠের দেয়াল। এয়ার কন্ডিশানড ঘর। দু’পাশের দরজা ভারি কাঁচের। সিল্কের দামী পর্দা ঝুলছে; কারুকাজ করা কাঁচের জানালায় দুটো পাখি বসে। দেয়ালে রাজপুরুষদের সব মাথা সমান বিশাল ছবি, মাথায় পাগড়ি, এবং সম্ভবত দামী বৈদূর্যমণি পাথর-টাথরের মালা গলায়। দেয়ালে ছ’-সাতজন রাজপুরুষ কোমরে তরবারি, নাগরাই জুতো পায়ে। বংশ পরম্পরায় এক একজন এসে এই দেয়ালে দাঁড়িয়ে গেছেন। রাজেন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী ওরফে রাজেনদার ছবিটা সে আবিষ্কার করল, উত্তরের দেয়ালে। পরিচিত মানুষটাকে এই পোশাকে দেখে সে কেন জানি ফিক করে হেসে ফেলল। তারপরই মনে হল, ঘরে কেউ নেই ত! কোনও গুপ্ত পথে তাকে কেউ দেখছে না ত! সে খুব সতর্ক হয়ে গেল। শঙ্খ ওকে বসতে বলে গেছে। কেন বসতে বলে গেছে, কে আসবে এ ঘরে সে কিছুই বুঝতে পারছে না। আশেপাশে কোনও কাকপক্ষী আছে বলে টের পাওয়া যাচ্ছে না। শুধু সেই দামী আতরের গন্ধটা এখানেও ভুরভুর করছে। গতকাল সে বৌরাণীকে এক পলক দেখেছিল—বড় চেনা, বড় অন্তর্গত সেই ছবি—কিন্তু সারারাত ধূপকাঠি পুড়িয়েও সে কে আবিষ্কার করতে পারে নি।

মনে পড়ছে, একবার এমনি দৈবদুর্বিপাকের মতো স্যালি হিগিনসের কেবিনে তার ডাক পড়েছিল। সে সেখানে এমনি এক সংশয় নিয়ে গেছিল। বুক কাঁপছিল। এখানেও তাই। কোনও অবিশ্বাস্য ঘটনা জীবনে ঘটে গেলে তার এই রকমের হয়। মুখে ভীতু বালকের ছাপ ফুটে ওঠে। সোফাগুলোর কভার সব দামি ভেলভেট কাপড়ের। কার্পেটে বাঘ সিংহের লাল নীল মুখ আঁকা। মাথা সমান উঁচু আয়না। কাঁচের বড় জারে শ্বেতপাথরের দুটো নগ্ন নারী মূর্তি। পরস্পর জড়িয়ে আছে। এমন একটা কক্ষে তার সঙ্গে এখন কে দেখা করতে আসছে!

তখনই মনে হল খুব মৃদু পায়ের শব্দ। কেউ আসছে। তার উত্তেজনায় দম বন্ধ হয়ে আসছিল। এমন এক বনেদি পরিবারে সে এই ঘরে এসে বসতে পেরেছে—তার সৌভাগ্য না দুর্ভাগ্য সে ঠিক বুঝতে পারছে না। পায়ের শব্দ ক্রমশ এগিয়ে আসছে। খুব নরম চটি পরে কেউ আসছে। তারপরই সে দেখতে পেল, প্রায় জাদুমন্ত্রে বিপরীত দিকের দরজার পর্দা সরে যাচ্ছে। এবং প্রায় আবির্ভাবের মতো এক যুবতী নারী তার সামনে হাজির। লাল পেড়ে সাদা সিল্ক, হাতে ঢাকাই শাঁখা, কপালে বড় সিঁদুরের টিপ এবং চোখে অনেক দূর অতীতের স্মৃতি। তার দিকে অপলক তাকিয়ে বলছে, তুই কি রে, তুই চিঠির জবাবটাও দিলি না। এমন অমানুষ তুই!

অতীশ হাঁ করে তাকিয়ে থাকল। এবং ক্রমে কেমন জলের অতলে ডুবে যাচ্ছিল। কি বলবে, কিভাবে অভিবাদন করবে এবং সহজ স্বাভাবিক হতে গেলে তার এখন কি করণীয় কিছুই বুঝতে পারছে না। সে নির্বাক হয়ে গেছে। মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে—চিঠি, কিসের চিঠি। রমণী তার কবে দেখা এক বালিকা যেন। সে কিছুতেই কাল রাতে মনে করতে পারে নি। সে শেষ পর্যন্ত কোথায় এসে উঠল!

—কি রে তুই আমার কথার জবাব দিচ্ছিস না কেন? এতটুকু দেখছি স্বভাব পাল্টায় নি তোর সেই আগের মতো দশটা কথা না বললে কথার উত্তর দিস না।

এবার আর না পেরে অতীশ বলল, কিছুই বুঝতে পারছি না বৌরাণী! আমার কিছু মনে পড়ছে না।

—তুই আসলে নিজেকে ছাড়া আর কিছু চিনলি না। খুব স্বার্থপর তুই। না হলে ভুলে যায় কেউ আর তখনই অতীশের মাথার মধ্যে ড্যাং ড্যাং করে পূজার বাজনা বাজতে থাকল। ঢাক বাজছে ট্যাং ট্যাং। সবুজ ঘাস খাচ্ছে একটা মোষ। মোষটাকে কারা বেধেঁ নিয়ে যাচ্ছে পূজামন্ডপে। নতুন গামছা কোমরে বেঁধে ছোটাছুটি করছে কারা। ধূপ দীপ জ্বলছে। মোষ বলির রক্ত নিয়ে কাড়াকাড়ি করছে কারা। কে ছুটে এসে ওর কপালে, সেই রক্তের ফোঁটা দিয়ে গেল। সে একটা থামের আড়ালে দাঁড়িয়ে সব দেখছিল। সেই মুখ, সেই মুখ, সেই সেই—সে কেমন মুহ্যমানের মতো বলল, তুমি অমলা!

—অমলা কি রে? অমলা পিসি বল।

অতীশ মাথা নিচু করে বলল, আমি জানতাম না, তুমি এ-বাড়ির বৌরাণী অমলা!

—কে জানত। আমি জানতাম! কত নতুন ম্যানেজার আসে। আমি জানতাম তুই সেই মুখচোরা জেদি ছেলেটা! কাল এক পলক দেখেই অবাক—আরে এ যে সেই! সব ঠিক আছে। সব। কেবল লম্বায় তালগাছ হয়ে গেছিস।

তারপর অতীশ কোনও রকমে একবার চোখ তুলে বলল, কাল আমারও মনে হচ্ছিল বড় চেনা তুমি। কবে কোথায় যেন দেখেছি? তারপর, তারপর সেই ভাঙা শ্যাওলা ধরা পরিত্যক্ত জমিদার বাড়ির কক্ষের কথা ভাবতেই ওর কান গরম হয়ে গেল। এই হাত দে। দে না। কেউ দেখবে না। ফ্রক পরা এক বালিকা, চুল সোনালী, চোখ নীল এক বালিকা তাকে জাপ্টে ধরেছিল। সে এখন নারী। তার শরীর শিউরে উঠল। অমলা তার সর্বস্ব উজাড় করে দিয়ে যেন সামনে বসে আছে। অমলা সোফায় শরীর এতটুকু এলিয়ে দেয় নি। সোজা হয়ে বসে আছে। হাত দুটো হাঁটুর ওপর রাখা। আঙুলে বিশাল হীরের আংটি জ্বলজ্বল করছে। মাথায় সামান্য ঘোমটা, পায়ের পাতা শাড়িতে ঢাকা। অতীশের কেন জানি ইচ্ছা হল অমলা তার পা সামান্য বের করে রাখুক। সেই সুন্দর দেবী প্রতিমার মতো পা দুটো তার এখন দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে।

তারপরই অমলা কেমন আবেগে বলল, তুই এতদিন কোথায় ছিলি!

অতীশ কত কথা বলতে পারে। কিন্তু সে এ-বাড়িতে নতুন। তার পক্ষে সব জানা সম্ভব না। অমলা ফের গোপনে ডেকে এনেছে কিনা কে জানে। এতে তো বিপদ বাড়ে। কিংবা অমলার মাথায় কোনও গন্ডগোল ঘটে যায় নি তো। একজন সদ্য আসা যুবককে, এই অন্দরে নিয়ে আসা নিয়ে হৈচৈ হতে পারে। পারিবারিক মানসম্মানের প্রশ্ন আছে। সে বলল, অমলা তুমি ডেকেছ কেন?

—তোকে একটু দেখব বলে।

অতীশ এর কি জবাব দেবে! সে বলল, কমলা কোথায় আছে?

বৌরাণীর মুখে কূট হাসি খেলে গেল। বলল, সে আছে। সে তোকে নিয়ে যেতে বলেছে।

—ও জানল কি করে?

—কালই ফোন করলাম। বললাম, একটা আশ্চর্য খবর দিচ্ছি কমলা। খুব অবাক হয়ে যাবি। তার ইচ্ছা হল জানতে কমলার বর কি করে। তারপর মনে হল, অমলা না কমলা—কে তাকে জাপ্টে ধরেছিল! আসলে সেই শৈশব মানুষকে চিরদিন তাড়না করে বেড়ায়। অতীশের কেন জানি আজ কমলাকেও দেখতে ইচ্ছে করছে। যা ফেলে এসেছিল, এই দেখার মধ্যে তা সে নতুন করে যেন ফিরে পাবে। সেই সুবিশাল জমিদার গৃহে সে তখন কুণ্ঠিত বালক। তার কাছে জগৎটা ছিল রূপকথার দেশের মতো। অমল কমল ছিল তার জীবনে প্রথম দেখা রূপকথার রাজকন্যা। তাদের একজনকে এখানে সে দেখবে স্বপ্নেও ভাবতে পারে নি। সে ভাবল, এই নতুন জীবনে এটা ভাল হল কি মন্দ হল জানে না। ওদের দু’জনকে দূরাগত কোন ছবির মধ্যে সে পেতে চেয়েছে এতদিন। এত সামনা-সামনি একজনকে পেয়ে সে কেমন ঘাবড়ে গেছে।

অমলা ওর দিকে তাকিয়ে আছে। বলছে, হাবার মত কি দেখছিস?

অতীশ বলল, না কিছু না।

—আমার দিকে তাকা।

অতীশ তাকাতে পারল না।

—তাকা বলছি।

অতীশ বলল, আমি বুঝতে পারছি না। তোমার কি ইচ্ছে। আমাকে বিভ্রমের মধ্যে ফেলে দিও না।

—তুই অনেক দিন জাহাজে ছিলি না রে?

—ছিলাম।

—অনেক দিন নিরুদ্দেশ হয়ে ছিলি?

—ছিলাম।

তোকে দেখলেই মনে হয় যে নাবিক হারায়েছে দিশা। তোর যেন কি হারিয়ে গেছে না রে? অতীশ খুব বিষণ্ণ বোধ করল।

অতীশের এই মুখ দেখলে ভারি কষ্টের মধ্যে পড়ে যেতে হয়। অমলা সহসা উঠে কাছে এল অতীশের। শরীরে সামান্য ঠেলা দিয়ে বলল, ভয় পাচ্ছিস!

—না!

—মুখ এত কাতর কেন?

অতীশ বলল, অমলা, মেজবাবুর খবর কি! সে কথা ঘোরাতে চাইল।

—বাবা গত হয়েছেন সোনা। কথাটা বলতে গিয়ে ভেতরে কেমন অমলার কান্নার উদ্রেক হল। সে উঠে গেল জানালায়—কি দেখল, তারপর ফিরে এসে পায়ের ওপর পা তুলে বসল। একটা মাছি ভনভন করে উড়ছিল। অমলা বেল টিপল। সেই উর্দি পরা হাফ যুবক হাজির। ওর দিকে তাকিয়ে বলল, এটা কি!

শঙ্খ মাছিটাকে ঘর থেকে তাড়াবার জন্য উঠে পড়ে লেগে গেল। পর্দা তুলে দিল। দরজা খুলে দিল, তারপর মাছিটাকে তাড়িয়ে নিজেও অদৃশ্য হয়ে গেল।

অতীশ বলল, কত তাড়াবে। ঐ দেখ পাশে আর একটা।

অমলা খুব কাতর চোখে তাকাল। যেন এখুনি ওটা এসে ওকে কামড়াবে। হুল ফোটাবে। এবং সে মরে যাবে। অতীশ উঠে গিয়ে হাওয়ার মধ্যেই খপ করে মাছিটাকে ধরে ফেলল।

অমলা বলল, ছি ছি সোনা তোর ঘেন্না-পিত্তি নেই। তুই একেবারে গেছিস। বলে অমলা নিজে উঠে গেল। একটা ট্রে নিয়ে এল। একটা দামী শ্যামপোর শিশি। ট্রেটা কাছে নিয়ে বলল, হাত ধো অতীশ হাত পাতলে জল দিল, সে হাত ধুলে কাঁধ থেকে তোয়ালে নিয়ে বলল, হাত মুছে ফেল। এবং হাত মোছা হলেই দেখল, ট্রে হাতে আর কেউ আসছে। শরবতি লেবুর রস, কিছু আঙুর, দুটো হাফ-বয়েল ডিম, স্যান্ডউইচ চার পিস। অমলা নিজেই সাদা চাদরের উপর প্লেট সাজিয়ে রাখল। খা।

সে কিছুই না করতে পারছে না। সে যতবার অমলাকে চোখ তুলে দেখেছে, সেই মুখ, ফ্ৰক গায়ে বব কাট চুলের মুখ। বিশাল বারান্দায় অথবা ছাদে দৌড়াচ্ছে। চঞ্চল বালিকার সেই মুখ ছাড়া অমলার মুখে আর কিছু দেখতে পাচ্ছে না অথবা নদীর পাড়ে জুড়িগাড়িতে বসে আছে অমলা। অনেক দূরের কোন বালিয়াড়িতে সে দাঁড়িয়ে। তাকে হাত তুলে ডাকছে। অথবা সেই হাতী—গলায় ঘণ্টা বাজছে, যেন দূর অতীত থেকে সে ধ্বনি কানে আসছে। অতীশ চামচেয় দুটো আঙুর মুখে তুলে বলল, আমরা সব হারিয়েছি অমলা। বড় হতে হতে আমরা কত কিছু হারাই।

অমলা ওর খাওয়া দেখছিল—সতর্ক নজর রাখছে—এ-ঘরে দু’দুটো মাছি কি করে ঢুকল। আরও যে নেই কে জানে। কখন খাবারটার ওপর উড়ে এসে বসবে কে জানে! সে চারপাশে খুব সতর্ক নজর রাখছিল। আর চুরি করে সোনার মুখ দেখছিল।

—রোজই আমি কেন জানি আশা করতাম, তুই আমাকে চিঠি লিখবি। এখন দেখছি নিজেই হাজির। আমার ঈশ্বর তোকে এখানে নিয়ে এসেছেন। আমি প্রার্থনায় বিশ্বাস করি সোনা।

অতীশ বলতে পারত, দেশ ভাগের পর আমরা এক মহাপ্লাবনে ভেসে যাচ্ছিলাম। সেখানে নদীর দু’পাড়ের সব কিছু অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছিল। কোথায় কার ঘরবাড়ি কিছুই চোখে পড়ছিল না। কে কিভাবে বেঁচে আছে জানার কোনও উপায় ছিল না। এখন প্লাবনের জল নেমে গেছে। দু-পাড়ে বাড়ি-ঘর মাঠ, গাছপালা, পাখি সব এখন দৃশ্যমান। কিন্তু মানুষের যা হয়, জীবন বয়ে যেতে যেতে সে অন্য এক প্লাবনে ভেসে যায়। সে কোথাও স্থির থাকতে পারে না অমলা। আমিও এক জায়গায় স্থির বসে নেই। কত রকমের জটিলতা আমাকে গ্রাস করছে তুমি জান না। কাল সারারাত ঘুমাতে পারি নি ভাল করে। এখানে আসার পর কেন জানি না আর্চির প্রেতাত্মার আবার গন্ধ গাচ্ছি। গন্ধটা পেলেই বুঝি, আমার খুব সতর্ক থাকা দরকার। কোন দিক থেকে বিপদ আসবে বুঝতে পারছি না।

অমলা সহসা বলল, তোর বৌ দেখতে কেমন হয়েছে রে?

—খুব সুন্দর। খুব ভাল মেয়ে।

—ভূঁইয়া দাদু কোথায় আছেন?

অতীশ বুঝতে পারল অমলা তার সোনাজ্যাঠামশাইর খবরাখবর নিতে চায়। সে বলল, বড়দার কাছে আছেন।

—তোর সেই পাগল জ্যাঠামশাই?

—তিনি কোথায় চলে গেছেন।

—কোথায় গেলেন! কোন খবর পাস নি?

—না। বাবা জ্যাঠামশাই ঘর-বাড়ি বিক্রি করে চলে এলেন এখানে। আমরা সবাই। তার পরের ঘটনার কথা ভেবে হাসি পেল অতীশের। সে তখন জানতও না, হিন্দুস্থান বললে মানুষের কোন ঠিকানা বোঝায় না। কত সরল বিশ্বাসে সে একটা গাছে লিখে এসেছিল, জ্যাঠামশাই আমরা হিন্দুস্থানে চলিয়া গিয়াছি। পাগল জ্যাঠামশাইর কথা বলতে গিয়ে কেন জানি অতীশের চোখে জল এসে গেল। অতীশ চোখ আড়াল করার জন্য মুখ ঘুরিয়ে বলল, উঠি অমলা।

—দাঁড়া। আর একটু বোস। বলে অমলা উঠে এল তার কাছে। তারপর কেমন ঝুঁকে পড়ল মাথার ওপর। নাক টানল, তারপর কেমন হতাশ গলায় বলল, হ্যাঁ রে তোর গায়ে যে চন্দনের গন্ধ লেগে থাকত, সেটা টের পাচ্ছি না কেন রে।

অতীশ বলল, আমার গায়ে কবে চন্দনের গন্ধ ছিল অমলা।

—ছিল। তুই জানতিস না। ছাদে আমি প্রথম গন্ধটা পাই।

—এখন নেই?

—না।

—বোধহয় তাও হারিয়েছি।

—এই তুই দাঁড়া তো!

অতীশ দাঁড়াল। অমলাও পাশে এসে দাঁড়াল। আশ্চর্য সুঘ্রাণ অমলার শরীরে। প্রায় গা ঘেঁষে। সেই বালিকা বয়সের মতো মাথায় হাত তুলে দেখল, সোনা তার চেয়ে কতটা লম্বা! অনেকটা। হাত নামিয়ে বলল, তুই আমার চেয়ে তখন খাটো ছিলি না রে?

অতীশ বলল, মনে নেই।

—আমার সব মনে আছে। সব।

সব বলতে অমলা কি বোঝাতে চায়। অমলার কি সংশয় জন্মেছে, প্রাচীন শ্যাওলা ধরা ঘরটার স্মৃতি সে ভুলে গেছে! সে ইচ্ছে করেই বলল, তোমার মুখ বাদে আমার কিছু মনে নেই অমলা।

—চিঠিটার কথা?

—তাও ভুলে গেছি।

—এত ভুলে গেলে কোম্পানি চালাবি কি করে। অমলা কেমন একটু রূঢ় হয়ে উঠল।

—কুম্ভবাবু আছে। সনৎবাবু আছেন।

—তোর নিজের কিছু থাকবে না! না থাকলে ওরা পেয়ে বসবে না!

অতীশ কোনও জবাব দিল না।

অমলার ঋজু নাক মুখ। স্বর্ণ চাঁপার মতো রঙ। আর বড় বড় চোখ। পরনে লাল পেড়ে সিল্ক যেন আগুন হয়ে জ্বলছে তার পাশে। অন্ধকারে মোমের আলোর মতো জ্বলছে। তার ভয় হচ্ছিল। কেউ এ ঘরে আসতে পারে, রাজেনদা আসতে পারে। এত কাছাকাছি যে সে ঘেমে উঠছিল। অমলা তখনই বলল, সোনা তুই নষ্ট হয়ে গেছিস। তুই আর ভাল নেই। চন্দনের গন্ধ চলে গেলে কেউ আর ভাল থাকে না।

সে বলতে পারত, জীবনে এক পরিমণ্ডল থেকে অন্য এক পরিমণ্ডলে চলে এসেছি অমলা। বয়স বাড়ছে, আর পরিমণ্ডল পরিবর্তিত হচ্ছে। এখন আর ইচ্ছে করলেই দুম করে কাজ ছেড়ে দিতে পারব না। সেদিনও যা পেরেছি, আজ আর তাও পারব না। আগে আমার একটা ছোট জাহাজ ছিল। জাহাজটার যাত্রী মা বাবা ভাই বোন। এখন জাহাজে যাত্রী বেড়েছে। নির্মলা, মিণ্টু, টুটুল নতুন যাত্রী। এই জাহাজটাকে চালিয়ে ঘাটে পৌঁছে দিতে হবে। আগে জাহাজের ক্রু ছিলাম। এখন নিজেই কাপ্তান। খুশি মত যেখানে সেখানে জাহাজ ছেড়ে দিতে পারি না। যাত্রা অনিশ্চিত। তবু ঘাটে পৌঁছাব বলেই এই বড় শহরে চলে এসেছি। তুমি আমাকে যতই নষ্ট চরিত্রের বল, আমি আর কিছুতেই ঘাবড়াব না। তারপরই মনে হল সে কি সব হিজিবিজি ভাবছে। অমলা কখন চলে গেছে এই বিলাস কক্ষ থেকে সে টেরও পায় নি। সামনে সেই উর্দি পরা হাফ-যুবক সে বলছে, আজ্ঞে আইয়ে সাব। সে তাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

.

খাবার টেবিলে কুমারবাহাদুর ঠাট্টা করে বৌরাণীকে বললেন, দ্যাশের পোলা কিডা কয়।

বৌরাণীও ঠাট্টা করে বলল, কিছু কয় না। তারপর চামচে করে সামান্য গ্রীন পিজ মুখে দেবার সময় খুব গম্ভীর হয়ে গেল বলতে বলতে, ওকে না আনলেই ভাল করতে। ওর বাবাকে চিনি, ওর জ্যাঠামশাইকে চিনি। সেকেলে মানুষ। ভাল মানুষ। অতীশও তাই। ওর বড় জ্যাঠামশাই পাগল হয়ে গেছিলেন। অতীশের আর কি সম্ভ্রান্ত চেহারা, ওর পাগল জ্যাঠামশাইকে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না মানুষ দেখতে কত সুপুরুষ হয়। ভ্যুইয়া দাদুকে আমাদের বাড়ির সবাই সমীহ করত। বাবা স্টীমার ঘাটে নেমে প্রথম সে মানুষটার পায়ে মাথা ঠুকতেন। নিয়ম ছিল, আমাদেরও গড় হওয়া। তাঁর ভাইপোকে এনে কতটা ভাল করলে মন্দ করলে বুঝতে পারছি না।

সকল অধ্যায়

১. ঈশ্বরের বাগান – ১
২. ঈশ্বরের বাগান – ২
৩. ঈশ্বরের বাগান – ৩
৪. ঈশ্বরের বাগান – ৪
৫. ঈশ্বরের বাগান – ৫
৬. ঈশ্বরের বাগান – ৬
৭. ঈশ্বরের বাগান – ৭
৮. ঈশ্বরের বাগান – ৮
৯. ঈশ্বরের বাগান – ৯
১০. ঈশ্বরের বাগান – ১০
১১. ঈশ্বরের বাগান – ১১
১২. ঈশ্বরের বাগান – ১২
১৩. ঈশ্বরের বাগান – ১৩
১৪. ঈশ্বরের বাগান – ১৪
১৫. ঈশ্বরের বাগান – ১৫
১৬. ঈশ্বরের বাগান – ১৬
১৭. ঈশ্বরের বাগান – ১৭
১৮. ঈশ্বরের বাগান – ১৮
১৯. ঈশ্বরের বাগান – ১৯
২০. ঈশ্বরের বাগান – ২০
২১. ঈশ্বরের বাগান – ২১
২২. ঈশ্বরের বাগান – ২২
২৩. ঈশ্বরের বাগান – ২৩
২৪. ঈশ্বরের বাগান – ২৪
২৫. ঈশ্বরের বাগান – ২৫
২৬. ঈশ্বরের বাগান – ২৬
২৭. ঈশ্বরের বাগান – ২৭
২৮. ঈশ্বরের বাগান – ২৮
২৯. ঈশ্বরের বাগান – ২৯
৩০. ঈশ্বরের বাগান – ৩০
৩১. ঈশ্বরের বাগান – ৩১
৩২. ঈশ্বরের বাগান – ৩২
৩৩. ঈশ্বরের বাগান – ৩৩
৩৪. ঈশ্বরের বাগান – ৩৪
৩৫. ঈশ্বরের বাগান – ৩৫
৩৬. ঈশ্বরের বাগান – ৩৬
৩৭. ঈশ্বরের বাগান – ৩৭
৩৮. ঈশ্বরের বাগান – ৩৮
৩৯. ঈশ্বরের বাগান – ৩৯
৪০. ঈশ্বরের বাগান – ৪০
৪১. ঈশ্বরের বাগান – ৪১
৪২. ঈশ্বরের বাগান – ৪২
৪৩. ঈশ্বরের বাগান – ৪৩
৪৪. ঈশ্বরের বাগান – ৪৪
৪৫. ঈশ্বরের বাগান – ৪৫
৪৬. ঈশ্বরের বাগান – ৪৬
৪৭. ঈশ্বরের বাগান – ৪৭
৪৮. ঈশ্বরের বাগান – ৪৮
৪৯. ঈশ্বরের বাগান – ৪৯
৫০. ঈশ্বরের বাগান – ৫০
৫১. ঈশ্বরের বাগান – ৫১
৫২. ঈশ্বরের বাগান – ৫২
৫৩. ঈশ্বরের বাগান – ৫৩
৫৪. ঈশ্বরের বাগান – ৫৪
৫৫. ঈশ্বরের বাগান – ৫৫
৫৬. ঈশ্বরের বাগান – ৫৬
৫৭. ঈশ্বরের বাগান – ৫৭
৫৮. ঈশ্বরের বাগান – ৫৮
৫৯. ঈশ্বরের বাগান – ৫৯
৬০. ঈশ্বরের বাগান – ৬০
৬১. ঈশ্বরের বাগান – ৬১
৬২. ঈশ্বরের বাগান – ৬২
৬৩. ঈশ্বরের বাগান – ৬৩
৬৪. ঈশ্বরের বাগান – ৬৪
৬৫. ঈশ্বরের বাগান – ৬৫
৬৬. ঈশ্বরের বাগান – ৬৬
৬৭. ঈশ্বরের বাগান – ৬৭
৬৮. ঈশ্বরের বাগান – ৬৮
৬৯. ঈশ্বরের বাগান – ৬৯
৭০. ঈশ্বরের বাগান – ৭০
৭১. ঈশ্বরের বাগান – ৭১
৭২. ঈশ্বরের বাগান – ৭২
৭৩. ঈশ্বরের বাগান – ৭৩
৭৪. ঈশ্বরের বাগান – ৭৪
৭৫. ঈশ্বরের বাগান – ৭৫
৭৬. ঈশ্বরের বাগান – ৭৬
৭৭. ঈশ্বরের বাগান – ৭৭
৭৮. ঈশ্বরের বাগান – ৭৮
৭৯. ঈশ্বরের বাগান – ৭৯
৮০. ঈশ্বরের বাগান – ৮০
৮১. ঈশ্বরের বাগান – ৮১
৮২. ঈশ্বরের বাগান – ৮২
৮৩. ঈশ্বরের বাগান – ৮৩
৮৪. ঈশ্বরের বাগান – ৮৪

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন