সুন্দর

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

প্লাটিনমের আঙটির মাঝখানে যেন হীরে।
             আকাশের সীমা ঘিরে মেঘ,
      মাঝখানের ফাঁক দিয়ে রোদ্‌দুর আসছে মাঠের উপর।
             হূহু করে বইছে হাওয়া,
         পেঁপে গাছগুলোর যেন আতঙ্ক লেগেছে,
      উত্তরের মাঠে নিমগাছে বেধেছে বিদ্রোহ,
         তালগাছগুলোর মাথায় বিস্তর বকুনি।
      বেলা এখন আড়াইটা।
             ভিজে বনের ঝল্‌মলে মধ্যাহ্ন
উত্তর দক্ষিণের জানলা দিয়ে এসে জুড়ে বসেছে আমার সমস্ত মন।
 
                 জানি নে কেন মনে হয়
      এই দিন দূর কালের আর-কোনো একটা দিনের মতো।
         এরকম দিন মানে না কোনো দায়কে,
                 এর কাছে কিছুই নেই জরুরি,
         বর্তমানের নোঙর-ছেঁড়া ভেসে-যাওয়া এই দিন।
      একে দেখছি যে অতীতের মরীচিকা ব’লে
         সে অতীত কি ছিল কোনো কালে কোনোখানে,
             সে কি চিরযুগেরই অতীত নয়।
      প্রেয়সীকে মনে হয় সে আমার জন্মান্তরের জানা–
             যে কালে স্বর্গ, যে কালে সত্যযুগ,
         যে কাল সকল কালেরই ধরা-ছোঁওয়ার বাইরে।
      তেমনি এই-যে সোনায় পান্নায় ছায়ায় আলোয় গাঁথা
             অবকাশের নেশায় মন্থর আষাঢ়ের দিন
      বিহ্বল হয়ে আছে মাঠের উপর ওড়না ছড়িয়ে দিয়ে,
             এর মাধুরীকেও মনে হয় আছে তবু নেই,
         এ আকাশবীণায় গৌড়সারঙের আলাপ–
             সে আলাপ আসছে সর্বকালের নেপথ্য থেকে।

সকল অধ্যায়

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন