মৃত্যু

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

           মরণের ছবি মনে আনি।
ভেবে দেখি শেষ দিন ঠেকেছে শেষের শীর্ণক্ষণে।
        আছে ব’লে যত কিছু
    রয়েছে দেশে কালে–
যত বস্তু, যত জীব, যত ইচ্ছা, যত চেষ্টা,
     যত আশানৈরাশ্যের ঘাতপ্রতিঘাত
        দেশে দেশে ঘরে ঘরে চিত্তে চিত্তে,
যত গ্রহনক্ষত্রের
    দূর হতে দূরতর ঘূর্ণ্যমান স্তরে স্তরে
        অগণিত অজ্ঞাত শক্তির
           আলোড়ন আবর্তন
        মহাকালসমুদ্রের কূলহীন বক্ষতলে,
           সমস্তই আমার এ চৈতন্যের
    শেষ সূক্ষ্ম আকম্পিত রেখার এ ধারে।
           এক পা তখনো আছে সেই প্রান্তসীমায়,
               অন্য পা আমার
           বাড়িয়েছি রেখার ও ধারে,
    সেখানে অপেক্ষা করে অলক্ষিত ভবিষ্যৎ
        লয়ে দিনরজনীর অন্তহীন অক্ষমালা
               আলো-অন্ধকারে-গাঁথা।
    অসীমের অসংখ্য যা-কিছু
           সত্তায় সত্তায় গাঁথা
               প্রসারিত অতীতে ও অনাগতে।
নিবিড় সে সমস্তের মাঝে
        অকস্মাৎ আমি নেই।
 
               একি সত্য হতে পারে।
উদ্ধত এ নাস্তিত্ব যে পাবে স্থান
    এমন কি অণুমাত্র ছিদ্র আছে কোনোখানে।
        সে ছিদ্র কি এতদিনে
           ডুবাতো না নিখিলতরণী
               মৃত্যু যদি শূন্য হত,
                   যদি হত মহাসমগ্রের
                          রূঢ় প্রতিবাদ।

সকল অধ্যায়

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন