সাবিত্রী

মদ্র দেশের রাজা অশ্বপতি ও তাঁর স্ত্রী মালবীর কন্যা। সাবিত্রীদেবীর (সূর্যের অধিষ্ঠাত্রী দেবতা) বরে উনি জন্মেছিলেন বলে ওঁর নামকরণ হয়েছিল সাবিত্রী। সাবিত্রীকে বিবাহ করতে কেউ ইচ্ছাপ্রকাশ করছেন না দেখে অশ্বপতি কন্যাকে বললেন নিজেই উপযুক্ত পাত্রের অন্বেষণ করতে। সাবিত্রী বহু স্থান ভ্রমণ করে এসে পিতাকে জানালেন যে, শাল্ব দেশের দ্যুমৎসেন যিনি রাজ্য হারিয়ে এখন বনবাস করছেন – তাঁর পুত্র সত্যবানকে উনি মনে মনে বরণ করেছেন। অশ্বপতির সভায় সেদিন দেবর্ষি নারদ এসেছিলেন। তিনি বললেন যে, সত্যবান প্রিয়দর্শন সত্যবাদী দাতা ও ব্রাহ্মণসেবী, কিন্তু দৈববশে এক বৎসরের মধ্যেই তাঁর মৃত্যু ঘটবে। অশ্বসেন সেই শুনে কন্যাকে অন্য কোনও পাত্রকে বরণ করতে বলেন। কিন্তু সাবিত্রী রাজি হলেন না। সত্যবানের সঙ্গেই সাবিত্রীর বিবাহ হল। প্রায় এক বৎসর গত হলে সাবিত্রী গণনা করে দেখলেন যে, আর চার দিন বাদে সত্যবানের মৃত্যু হবে। তিনরাত্রি উপবাস করে সাবিত্রী ব্রত উদ্জাপন করলেন। সত্যবানের মৃত্যুর দিন সত্যবান যখন কাঠ ও ফলমূল সংগ্রহ করতে বনের গভীরে যাচ্ছেন, তখন সাবিত্রী তাঁর সঙ্গ নিলেন। কাঠ কাটতে কাটতেই সত্যবান অসুস্থ বোধ করে সাবিত্রীর কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লেন। সাবিত্রী দেখলেন যে, সূর্যের মত তেজস্বী এক ভয়ঙ্কর পুরুষ হাতে পাশ নিয়ে সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন। যম সত্যবানের প্রাণহীন দেহ নিয়ে যখন চলতে শুরু করলেন, তখন সাবিত্রীও তাঁকে অনুসরণ করলেন। যম সাবিত্রীকে বললেন যে, পতির প্রতি ওঁর যা কর্তব্য উনি তা করেছেন, এখন ফিরে যেতে। কিন্তু সাবিত্রী থামলেন না। যমকে বললেন যে, পতিহীনা নারীর পক্ষে একা বনে বাস করে ধর্মাচরণ করা সম্ভব নয়। এইবলে যমকে ধর্মকথা শোনাতে লাগলেন। যম তাতে তুষ্ট হয়ে পতির জীবন ছাড়া আর যে কোনও বর চাইতে বললেন। সাবিত্রী তখন যমকে বললেন – ওঁর অন্ধ শ্বশুরকে চক্ষুদান করতে। যম সেই বর দিয়ে ক্লান্ত সাবিত্রীকে ফিরে যেতে বললেন। কিন্তু সাবিত্রী চলতেই থাকলেন। বললেন যে, ওঁর পতি কাছে থাকলে উনি ক্লান্ত হবেন কেন। তাছাড়া যম সজ্জন, সুতরাং উনি সাধুসঙ্গ করছেন। যম তখন তুষ্ট হয়ে সত্যবানের জীবন ছাড়া আরেকটি বর দিতে চাইলেন। সাবিত্রী বর চাইলেন যে, ওঁর শ্বশুর পুনর্বার তাঁর রাজ্য লাভ করুন। যম সেই বর দিয়ে সাবিত্রীকে বললেন আর পরিশ্রম না করে ফিরে যেতে। সাবিত্রী না ফিরে যমকে সনাতন ধর্মের কথা শোনালেন। যম তাতে প্রীত হয়ে সাবিত্রীকে পতির জীবন ছাড়া অন্য কোনও বর দিতে চাইলেন। সাবিত্রী বললেন যে, ওঁর পিতা পুত্রহীন – তাঁর যেন শতপুত্র হয়। যম বর দিয়ে বললেন যে, ওঁরা অনেক দূরে এসে পড়েছেন – এবার সাবিত্রী ফিরে যান। সাবিত্রী বললেন যে, এটা ওঁর পক্ষে দূর নয়, কারণ উনি স্বামীর কাছে আছেন। তারপর যমকে বললেন যে, যম সমবুদ্ধিতে প্রজাশাসন করেন বলে তিনি ধর্মরাজও। যম হলেন সজ্জন। নিজের চেয়েও সজ্জনদের উনি বেশি বিশ্বাস করেন। যম প্রীত হয়ে বললেন যে, সত্যবানের জীবন ছাড়া তিনি আরেকটি বর দিতে চান। সাবিত্রী বললেন যে, আমার গর্ভে যেন সত্যবানের ঔরসে বলশালী শতপুত্র হয়। যম সাবিত্রীর প্রার্থিত বর দিয়ে বললেন যে, এবার সাবিত্রী ফিরে যান। সাবিত্রী নিবৃত্ত হলেন না। তিনি যমকে আরও ধর্মকথা শোনালেন। তখন যম বললেন যে, সাবিত্রীর ধর্মসম্মত কথা শুনে ওঁর ভক্তি হচ্ছে। সাবিত্রীকে উনি আরেকটি বর দিতে চান। সাবিত্রী বললেন, সত্যবান জীবন লাভ করুন। পতিহীনা হয়ে উনি বাঁচতে চান না। যম প্রীত হয়ে সেই বর দিয়ে সত্যবানকে রেখে চলে গেলেন।

সকল অধ্যায়

১. হৃষিকেশ
২. অক্রুর
৩. অগ্নি
৪. অগ্নিবেশ
৫. অগ্নিহোত্র
৬. অচ্যুত
৭. অঙ্গ
৮. অঙ্গদেশ
৯. অঙ্গারপর্ণ
১০. অঙ্গিরা
১১. অজাতশত্রু
১২. অজৈকপাদ
১৩. অতিরথ
১৪. অত্রি (১)
১৫. অত্রি (২)
১৬. অদিতি
১৭. অদ্রিকা
১৮. অধর
১৯. অধর্ম
২০. অধিরথ
২১. অনন্তনাগ
২২. অনবদ্যা
২৩. অনল
২৪. অনসূয়া
২৫. অনিল
২৬. অনু
২৭. অনুহলাদ
২৮. অনূপা
২৯. অন্ধ্রদেশ
৩০. অপ্সরা
৩১. অবন্তী
৩২. অবিজণাতগতি
৩৩. অভিমন্যু
৩৪. অমৃত
৩৫. অম্বা
৩৬. অম্বালিকা
৩৭. অম্বিকা
৩৮. অর্ক
৩৯. অরণি
৪০. অরিষ্টনেমা
৪১. অরুণ
৪২. অরুণা
৪৩. অরুন্ধতী
৪৪. অর্জ্জন্য
৪৫. অর্থ
৪৬. অর্য্যমা
৪৭. অলম্বুষ
৪৮. অলম্বুষা
৪৯. অশ্ব
৫০. অশ্বতীর্ণ
৫১. অশ্বমেধ-যজ্ঞ
৫২. অশ্বত্থমা
৫৩. অশ্বিনী
৫৪. অশ্বিনীকুমার
৫৫. অশ্মক
৫৬. অষ্টক
৫৭. অষ্টবসু
৫৮. অষ্টাবক্র
৫৯. অসুরা
৬০. অহঃ
৬১. অহির্বুধন্য
৬২. আদিত্য
৬৩. আরুণি (১)
৬৪. আরুণি (২)
৬৫. আরুষী
৬৬. আস্তিক
৬৭. ইক্ষাকু-বংশ
৬৮. ইন্দ্র
৬৯. ইন্দ্রজিত
৭০. ইন্দ্রকিল
৭১. ইরাবন
৭২. ইল্বল
৭৩. উগ্রশ্রবাঃ
৭৪. উতঙ্ক
৭৫. উতত্থ্য
৭৬. উত্তর
৭৭. উত্তরা
৭৮. উদ্দালক
৭৯. উপমন্যু
৮০. উপপ্লব্য
৮১. উপরিচর বসু
৮২. উমা
৮৩. উর্বশী
৮৪. উরুক্রম
৮৫. নৈর্ঋত
৮৬. পঞ্চচূড়া
৮৭. পরন্তপ
৮৮. পরশুরাম
৮৯. পরাশর
৯০. পুত্র বা কন্যাদের বৈচিত্র্য
৯১. পুত্র
৯২. পুলহ
৯৩. পুলোমা (১)
৯৪. পুলোমা (২)
৯৫. পুণ্ডরিকাক্ষ
৯৬. পুরোচন
৯৭. পুরুমিত্র
৯৮. পুরূরবা
৯৯. পুরুষোত্তম
১০০. পুলস্ত্য
১০১. পুষ্টি
১০২. পূর্ণ
১০৩. পুর্ণায়ু
১০৪. পূষাঃ
১০৫. পৃথু
১০৬. পৌলম/কালকেয়
১০৭. পৌষ্য
১০৮. পৌলস্ত্য
১০৯. প্রভাস
১১০. প্রচন্দ্র
১১১. প্রতর্দন
১১২. প্রধা
১১৩. প্রদ্যুম্ন
১১৪. প্রহ্লাদ
১১৫. উলুপী
১১৬. সহদেব (১)
১১৭. সহদেব (২)
১১৮. সহস্রপাদ
১১৯. সাত্যকি
১২০. সাবিত্রী
১২১. সিদ্ধ
১২২. সিংহচন্দ্র
১২৩. সিংহিকা
১২৪. সুতসোম
১২৫. সুতেজন
১২৬. সুজাতা
১২৭. সুদক্ষিণ
১২৮. সুদর্শন
১২৯. সুদর্শনা
১৩০. সুদেষ্ণা
১৩১. সুন্দ ও উপসুন্দ
১৩২. প্রজাপতি
১৩৩. সুপর্ণ

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন