৫৭. একটি রাজত্বের শুরু ও শেষ

ইশতিয়াক খান

অধ্যায় ৫৭ – একটি রাজত্বের শুরু ও শেষ

খ্রিস্টপূর্ব ৬৫০ থেকে ৬০৫ সালের মাঝে রোমের নাম বদলে তরুসকান হল এবং ব্যাবিলন বিশ্বের রানীতে পরিণত হল।

তিবার নদীর তীরে অবস্থিত, দুই পাহাড়ের বাসস্থান রোমের কলেবর বাড়তে লাগল। পুরাতাত্ত্বিক স্যাবাইন সহ-শাসক টাইটাস টাশিয়াস রায়টে মারা গেলেন। তার কোনো বিকল্প আসেনি, রমুলাস একাই শাসন করতে লাগলেন। টাইটাসের মৃত্যুর অল্পদিন পর সে একই তিবার নদীর তীরে, রোম থেকে খানিকটা উপরে অবস্থিত ফিদেনাই শহরের লোকজন রোমানদের শস্যক্ষেত লুণ্ঠন করতে লাগলেন। রমুলাস এরকম এক হুমকি নির্মূল করলেন ও অপর পক্ষের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করলেন। তবে এসব আক্রমণ ছিল আরও বড় সমস্যার অশনি সংকেত।

এতরুসকান শহরগুলো উত্তরে একটি দুর্বল জোটের অংশ ছিল। এতরুসকান ও লাশিয়ালরা একসময় একই ধরনের আচার ও সংস্কৃতি অনুসরণ করতেন। তবে তিবারের উত্তরের গ্রামগুলো নবাগতদের কারণে উলটে পালটে গিয়েছিল। সিম্মেরিয়ানরা এশিয়া মাইনরে চলে যাওয়ার ফলে ফ্রিজিয়ান ও লিদিয়ানরা থ্রেসে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। তারা বসফরাস প্রণালি ও হেল্লেসপন্টের সরু জলরাশির মধ্যদিয়ে যান। ফলে পশ্চিমমুখী মানুষরা একধরনের চক্রাকার সমস্যায় পড়েন। উত্তর ইতালিতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হওয়া গোত্রগুলো ভিল্লানোভান ভূখণ্ডে এসে হাজির হয়। সেখানে তারা ভিল্লানোভানদের সঙ্গে পারিবারিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় এশিয়া মাইনর থেকে আগত শরণার্থীরা। তারাও আগুন, যুদ্ধ ও আগ্রাসনের শিকার হওয়া বিভিন্ন শহর থেকে সেখানে এসেছিলেন।

রোমান কিংবদন্তি মতে ট্রোজান বীর আয়েনিয়াস তার পিতাকে ধ্বংসপ্রাপ্ত শহর ট্রয় থেকে পিঠে বহন করে নিয়ে আসেন। তিনি একজন নির্বাসিত ব্যক্তি হিসেব থ্রেসের মধ্যদিয়ে আসেন। এরপর তিনি নৌপথে সিসিলি হয়ে সেখান থেকে ইতালির উপকূলে এসে পৌঁছান। ইতালিতে তিনি বিয়ে করেন, তার পুত্রসন্তানের জন্ম হয় এবং তিনি নিজেই একধরনের রাজা হয়ে যান। এ যেন পৌরাণিক গল্পের বর্ণনার বাস্তব জীবনের প্রতিফল। ভিল্লানোভার বাসিন্দা ও নবাগতদের মিশেলে তৈরি হয় এক নিজস্ব সংস্কৃতি। পূর্বাঞ্চল থেকে নিয়ে আসা দক্ষতার সংমিশ্রণে গড়ে ওঠে এক নতুন জাতি, যাদের নাম এতরুসকান। এরা ছিলেন শক্তিশালী নির্মাতা ও ধনাঢ্য বণিক। তারা বিনা চ্যালেঞ্জে লাশিয়ালদের দক্ষিণে রাজ্য বিস্তার করতে দিতে চাইতেন না।

রমুলাসের ৪০ বছরের রাজত্বে এতরুসকানদের বিরূপ মনোভাবই একমাত্র সমস্যা ছিল না। ইতিহাসবিদ লাইভি মন্তব্য করেন, ‘তাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতেন সেনাবাহিনী। সিনেটের কাছেও তার গ্রহণযোগ্যতা বেশি ছিল না, আর সাধারণ জনগণ তাকে দেখতেই পারতেন না।’ লাইভি ‘সিনেট’ শব্দটা ব্যবহার করলেও খুব সম্ভবত এটি অ্যানাক্রোনিসম ছিল; অর্থাৎ, ‘সিনেটের’ ধারণার উদ্ভব হওয়ার আগের ইতিহাস বর্ণনা করলেও তিনি এর সঙ্গে সিনেট শব্দটি জুড়ে দেন। রোমের প্রথমদিকের রাজারা গ্রিক সম্রাটদের চেয়ে খুব বেশি একনায়কসুলভ আচরণ দেখানোর সুযোগ পেতেন না। তবে কাউন্সিলের কিছু জ্যেষ্ঠ সদস্য রাজার ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতেন। এমনকি নিজেকে ঐশ্বরিক ক্ষমতাসম্পন্ন দাবি করার পরেও রমুলাসকে এদের সঙ্গে মোকাবিলা করতে হত।

সিনেটরদের ক্ষমতার বিষয়টা রমুলাসের মৃত্যুর সময়েও পরিষ্কার হয়। একদিন তিনি তার সেনাবাহিনীর নিরীক্ষা করছিলেন। তখন হঠাৎ করে বজ্রপাত ও ঝড় দেখা দেয়। মেঘে আছন্ন হয়ে পড়েন রমুলাস। এই মেঘ এত ঘন ছিল যে উপস্থিত সবার চোখ ধাঁধিয়ে গেল। এরপর তাকে পৃথিবীর বুকে আর কেউ দেখতে পেল না। সিনেটররা রাজার পাশেই ছিলেন। তারা ঘোষণা দিলেন, এক ঘূর্ণিবায়ু রাজাকে স্বর্গে নিয়ে গেছে। সব মানুষ তাকে ঈশ্বরের পুত্র এবং একজন দেবতা হিসেবে মেনে নিলেন এবং তার উদ্দেশে উপাসনায় রত হলেন। তবে বিষয়টা উদযাপনযোগ্য ঘটনা হলেও, আমার ধারণা, কিছু ভিন্নমতাবলম্বী ঠিকই ধরে নিয়েছিলেন যে সিনেটররাই রাজাকে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করেছিলেন। তবে তারা তাদের এই ধারণা গোপনই রাখেন—সংগত কারণে।

রমুলাসকে সিনেটররা হত্যা করুক বা না-করুক, তার অন্তর্ধানের অল্প সময়ের মাঝেই সিনেটররা তাদের ক্ষমতার দাপট দেখানো শুরু করল। তারা নিজেরাই সিংহাসন দখল করে নিল এবং কমিটির মাধ্যমে দেশশাসনের ঘোষণা দিল। তবে শহরের সেবাইন জনগোষ্ঠী এর তীব্র প্রতিবাদ জানালেন। রমুলাসের সহ-শাসকের মৃত্যুর পর স্যাবাইনরা ক্ষমতায় বসতে পারেনি। এরপর কেটে গেছে কয়েকটি দশক। এ কারণে স্যাবাইন রাজা নিয়োগের দাবি গতিশীল হয়।

সিনেটররাও একপর্যায়ে বিষয়টি মেনে নেন। তবে তাদের এক শর্ত, সিনেটররাই স্যাবাইনদের মধ্য থেকে একজনকে রাজা হিসেবে বেছে নেবেন। তারা নুমা পমপিলিয়াস নামে এক স্যাবাইনকে নির্বাচন করলেন। তিনি একজন বড় যোদ্ধা না হলেও জ্ঞানী ও ন্যায়বিচারের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন। লাইভি জানান, ‘অস্ত্রের শক্তিতেই রোম শহরের গোড়াপত্তন হয়। নতুন রাজা শহর ও সম্প্রদায়কে নতুন জীবন দিতে চাইলেন, কিন্তু এবার আর অস্ত্রের ঝনঝনানিতে নয়, বরং আইন ও ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গির দৃঢ় ভিত্তির ওপর।’ রমুলাসের মতো নুমা পম্পিলিয়াসও খুব সম্ভবত রূপকথার চরিত্রই ছিলেন। তবে তার প্রচলিত আইনের মাধ্যমে রোমের রূপান্তরের বিষয়টি সম্পর্কে জানা যায়। যুদ্ধের মাধ্যমে সৃষ্ট জনবসতি থেকে সরে রোম একটি সুশৃঙ্খল ও শ্রেণিবদ্ধ অস্তিত্বের দিকে ধাবিত হতে লাগল। নুমা পম্পিলিয়াসের অধীনে প্রথমবারের মতো যুদ্ধের দেবতা জেনাসের মন্দিরের তোরণে তালা দেওয়া হল। এর মাধ্যমে রোম বাকি বিশ্বকে জানাল যে তারা বহির্বিশ্বের সঙ্গে শান্তি চায়, যুদ্ধ নয়।

কিন্তু এতকিছুর পরেও শহরে অন্তর্কোন্দল থামল না। হালিকারনাসুস থেকে আগত ডাইওনিসিয়াস (একজন গ্রিক ইতিহাসবিদ, যিনি অগাস্টাস সিজারের আমলে রোমে যান এবং সেখানে ২২ বছর সময় নিয়ে শহরের ইতিহাস রচনা করেন) আমাদেরকে জানান, ‘রমুলাসের সঙ্গে এই কলোনির গোড়াপত্তন করেন আলবান এলিমেন্ট। তারা এ শহরের সর্বোচ্চ সম্মান উপভোগের দাবি জানান। নবাগত সেটলাররা ভাবল, এটা ঠিক নয়। তারা অন্যদের তুলনায় অধিকতর দুর্বল অবস্থানে থাকতে চাইত না। এ অনুভূতি স্যাবাইন জাতির মাঝে খুব বেশি পরিমাণে ছিল।’

রোমে যারা বসবাস করতেন, সেসময় তাদের প্রায় কেউই নিজেদেরকে ‘রোমান’ হিসেবে বিবেচনা করতেন না। তারা সবাই একই প্রাচীরের নিরাপত্তা উপভোগ করতেন, কিন্তু এছাড়া জাতি হিসেবে একাত্ম থাকার আর তেমন কোনো যুক্তি খুঁজে পেত না কেউ। ফলে, ডাইনোসিউসের মতে, ‘রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম এক উন্মত্ত সাগরসম সংশয়ে আচ্ছন্ন’ থাকত।

বাইরের দেশগুলোর সঙ্গে শান্তির বিষয়টিও ছিল ক্ষণিকের। নুমা’র পরের দুই রাজা, লাতিনদের তুলাস হোসটিলিয়াস ও স্যাবাইনদের এনকাস মারসিয়াস- উভয়ই সিনেট দ্বারা নির্বাচিত হন, এবং উভয় আশেপাশের শহর ও গোত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন এবং জোর করে রোমের আকার দ্বিগুণ করেন। যদিও বা কখনো রোমে শান্তি বজায় ছিল, তা ছিল ক্ষণিকের। রোম খুব দ্রুতই সশস্ত্র ঘাঁটির ভাবমূর্তিতে ফিরে যায় এবং সর্বক্ষণ প্রতিবেশীদের শান্তির প্রতি হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হতে থাকে।

তবে প্রতিবেশীরা একেবারে অসহায় ছিলেন না। টিবার নদের উত্তর তীরে অবস্থিত এতরুসকান শহর টারকিনি রোম দখলের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করে।

সেখানে এক ব্যক্তি ছিলেন, যার নাম লুকুমো। তার মা ছিলেন এতরুসকান, কিন্তু বাবা ছিলেন করিন্থ শহর থেকে আসা গ্রিক-বংশোদ্ভূত ব্যক্তি দিমিতার। লাইভির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ‘রাজনৈতিক ঝঞ্ঝাটের কারণে তিনি দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছিলেন’। ছোটবেলা থেকেই ‘খাঁটি রক্তের’ এতরুসকানদের টিটকারির শিকার হন দিমিতার। যখন তার স্ত্রী রোমে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন (যেখানে কে কোন্ গোত্র থেকে এসেছেন, তার সঙ্গে জীবন-জীবিকার সুযোগের কোনো যোগসূত্র নেই), লাইভি বলেন, ‘যে জায়গায় দক্ষতার ভিত্তিতে জীবনের সব ধরনের উন্নতি দ্রুত আসে, সেখানে একজন সক্রিয় ও সাহসী মানুষ জন্য প্রচুর সুযোগ থাকবে’। রোমে লাতিনদের আধিপত্য থাকা সত্ত্বেও একাধিক স্যাবাইন গোত্রীয় মানুষ রাজা হতে পেরেছিলেন-সেখানে বিদেশি রক্ত কোনো সমস্যার সৃষ্টি করে না।

রোমে থিতু হয়ে এতরুসকানদের লুকোমো কঠোর পরিশ্রম করতে লাগলেন (এবং চারপাশে অর্থ ছড়াতে লাগলেন)। একপর্যায়ে তিনি রাজার ডানহাতে পরিণত হলেন। এনকাস মারসিয়াস এমনকি রাজপুত্রদের রাজকীয় অভিভাবক হিসেবেও তাকে নিয়োগ দেন। রাজার মৃত্যুর সময় দুই রাজপুত্রের বয়স বেশ কম ছিল। ডায়োনিসিয়াসের নথি অনুযায়ী, ‘একজন তখন শিশু ছিলেন এবং অপরজনের মাত্র দাড়ি-গোঁফ গজাতে শুরু হয়েছে’।

লাইভি জানান, লুকোমো রাজপুত্রদের শহরের বাইরে এক শিকার-অভিযানে পাঠিয়ে দেন এবং তৎক্ষণাৎ নিজের পক্ষে সমর্থন আদায়ের জন্য প্রচারণা শুরু করেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে তিনি রাজা হিসেবে নির্বাচিত হন এবং খ্রিস্টপূর্ব ৬১৬ সালে রোমের সিংহাসনে বসেন।

পরবর্তীকালে ইতিহাসবিদরা তাকে লুসিয়াস টারকুইনিয়াস প্রিশাস বা টারকুইন দ্য এলডার হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

প্রায় ৪০ বছর রাজত্ব করার পর তার স্থলাভিষিক্ত হন তারই জামাতা, সারভিয়াস তুলিয়াস। কিংবদন্তিমতে, রাজা হিসেবে তার ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হয়েছিল শৈশবেই, যখন রোমের মানুষ দেখতে পায় তিনি আগুনে বিস্ফোরিত হন। তিনি তখন ঘুমাচ্ছিলেন এবং একজন চাকর তার মাথায় পানি ঢেলে দিতে উদ্যত হচ্ছিলেন। সেসময় তিনি জেগে ওঠেন এবং তার নিজের বর্ণনায়, ততক্ষণে আগুন নিভে গেছে। সেসময় থেকেই, লাইভি জানান, রোমের বাসিন্দারা এ শিশুটিকে ‘রক্তের রাজপুত্র’ হিসেবে বিবেচনা করে সে অনুযায়ী তাকে সমীহ করে চলতে শুরু করে। টারকুইন দ্য এলডার তার নিজের মেয়েকে তুলিয়াসের সঙ্গে বিয়ে দেন এবং তাকে তার উত্তরাধিকারী হিসেবে নির্বাচন করেন।

শ্বশুরের মতো সারভিয়াস তুলিয়াসও এতরুসকান গোত্রীয়। এ দুই রাজা আমাদেরকে এক ঐতিহাসিক সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করায়। রোম শহর কিছুদিন যুদ্ধংদেহী আর কিছুদিন পবিত্রতার ভাবমূর্তি বজায় রাখে। প্রতিবেশীদের সঙ্গে সারাক্ষণ বিবাদে জড়িয়ে থাকে; আশেপাশে যত পর্বত ছিল, সবগুলোর সামনে বড় বড় প্রাচীর তৈরি করে। তা সত্ত্বেও, রোম তার উত্তরের প্রাচীন, বলিষ্ঠতর ও অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী সংস্কৃতির কাছে পরাজয় মেনে নিতে বাধ্য হয়। এতরুসকান শহরগুলো ইতোমধ্যে আপেনিনের অপর প্রান্তের ‘অন্তহীন নদী’ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছিল (পো নদীর আগের নাম)। উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে এতরুসকান শহরগুলোর দখলে ছিল তথাকথিত ‘ধাতু-উৎপাদনকারী পর্বতে অবস্থিত তামা, লোহা ও রুপার খনিগুলোর দখল। এসব ধাতু ইতালির উপকূল ঘেঁষে থাকা গ্রিক কলোনিগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যে ব্যবহার হত। বাণিজ্যের পাশাপাশি এসব গ্রিক উপনিবেশের কাছ থেকে গ্রিক অক্ষর ও লেখনীর সঙ্গে পরিচিত হন এতরুসকানরা। এরপর খুব অল্প সময়ের মাঝে এতরুসকানরা তাদের নিজেদের পণ্যের লেবেলিঙের কাজে গ্রিক অক্ষর ব্যবহার শুরু করে—তাদের নিজেদের ভাষার কথাই গ্রিক অক্ষরে লিখতেন তারা।

অক্ষরগুলো পরিচিত হলেও, আজও এতরুসকান ভাষার মর্মোদ্ধার এক দুরুহ কাজ হিসেবে বিবেচিত।

তবে তথাকথিত ‘এতরুরিয়া’ নামে কোনো রাজত্বের অংশ হয়নি রোম। এতরুরিয়া সাম্রাজ্য বলেও কোনোকিছুর অস্তিত্ব ছিল না। যা ছিল, তা হল, বেশকিছু এতরুসকান শহরে একইসঙ্গে একই ভাষা ও কিছু আচার-ঐতিহ্যে মিল খুঁজে পাওয়া যায়। তারা কখনো কখনো মিত্র, কখনো একে অপরের শত্রু ছিল। রোম শহরে আগে থেকেই বিভিন্ন জাতি ও গোত্রের মানুষের বসবাস ছিল। এতরুসকানদের অনুপ্রবেশ কোনো নতুন ঘটনা না হলেও, এর আগে তাদের মতো এত প্রভাবশালী কোনো গোত্র এ শহরে আসেনি—এটাই যা পার্থক্য।

লাইভি টারকুইন দ্য এল্ডারকে রোমের সার্কাস ম্যাক্সিমাস স্টেডিয়ামের পরিকল্পনার কৃতিত্ব দেন। এই স্টেডিয়ামটি প্যালাটাইন ও এভেন্টাইন পর্বতের মাঝে অবস্থিত ছিল। এছাড়াও ক্যাপিটলে তিনি জুপিটারের মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ডয়োনোসিউস যোগ করেন, ‘তিনি শহরের প্রাচীরগুলোকে আরও মজবুত করেন এবং শহরের আবর্জনা নিষ্কাশনের জন্য নর্দমা খনন করেন। অর্জন হিসেবে এটি কম চিত্তাকর্ষক হলেও এতে নগরবাসী অনেক বেশি উপকৃত হয়।

এতরুসকান সার্ভিয়াস তুলিয়াসের অর্জনের মধ্যে আছে কুইরিনাল ও ভিমিনাল টিলা দখল করা এবং ট্রেঞ্চ ও সুড়ঙ্গ খুঁড়ে রোমের প্রতিরক্ষাকে আরও দৃঢ় করা। বাস্তবিকই এসব স্থাপনার পেছনে এতরুসকানদের হাত রয়েছে। নির্মাণকাজে রোমানরা একেবারেই দক্ষ ছিল না। কিন্তু এতরুরিয়াতে ধর্মীয় আচারের কারণে বড় বড় শহর, প্রাচীর ও তোরণ তৈরির কাজ কখনোই থেমে থাকত না।

মাটি খুঁড়ে বের করার পর এতরুসকান শহরে সুপরিকল্পিত সড়ক খুঁজে পাওয়া গেছে। এগুল সুবিন্যস্ত গ্রিড আকারে বসানো হয়েছিল, যে বিষয়টি রোমানদের বিবেচনায় ছিল না। ভারতের হরপ্পা সভ্যতার শহরগুলোর মতো, এতরুসকান শহরের সড়কগুলোতে শ্রেণিবিভাজন ছিল—মূল সড়ক, তাদের ওপর দিয়ে যাওয়া বিকল্প সড়ক ও এর মাঝে থাকা অপেক্ষাকৃত ছোট সড়ক। রোমের ক্ষেত্রে মাটি খুঁড়ে বের করা নিদর্শন থেকে দেখা গেছে, আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৬৫০ সালের দিকে গাছের শাখা ও কাদার দেয়ালের মাধ্যমে নির্মিত কুঁড়েঘর ভেঙে পাথরের তৈরি বাড়িঘর বানানো শুরু হয়। শহরের পশ্চিমপ্রান্তের কুঁড়েঘরগুলো সব গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। সেখানে তৈরি হওয়া খালি জায়গাটির মাটি বেশ শক্ত করে লেপে দেওয়া হয় এবং পরবর্তীতে এটি ‘রোমান ফোরাম’ নামে পরিচিতি পায়, যেখানে সারা শহরের মানুষ জমায়েত হতে পারতেন।

ইতিহাসের এ পর্যায়ে, রোমের একেবারে ভিত্তিমূলে এতরুসকানদের পদচারণা শুরু হয়। এমনকি তাদের শাসনতন্ত্রও প্রভাবিত হতে থাকে। ডায়োনোসিয়াস জানান, টারকুইন দ্য এলডার রোমে এতরুসকান রাজতন্ত্রের নিশানা চালু করেন। তিনি একটি স্বর্ণের তৈরি মুকুট এবং এমব্রয়ডারি-করা পার্পল রঙের পোশাক পরতেন। এছাড়াও, হাতির দাঁতের তৈরি রাজদণ্ড হাতে নিয়ে একই উপাদানে তৈরি সিংহাসনে বসতেন তিনি। তিনি যখন কোথাও যেতেন, তখন তার সঙ্গে ১২টি দেহরক্ষী থাকত (যাদের নাম ছিল লিকটর)। তাদের প্রত্যেকের হাতে থাকত একধরনের বিশেষায়িত কুড়াল। এই কুড়ালে বেশকিছু রড একসঙ্গে সংযুক্ত থাকত। এসব কুড়াল অন্যায়কারীকে শাস্তি দেওয়ার ও গুরুতর অপরাধীদের ফাঁসি দেওয়ার অধিকারের পরিচায়ক ছিল।

সারভিয়াস তুলিয়াসের আমলে ‘শহরের কলেবর বড় আকারে বেড়েছিল’ এবং তিনি রাজা হিসেবে প্রায় ৪৪ বছর রাজ্য শাসন করেন। এতরুসকান সম্রাট হিসেবে তিনি লাতিন, স্যাবাইন ও এতরুসকান গোত্রের সমন্বয়ে গঠিত এক মিশ্ৰ জনগোষ্ঠীর শাসক ছিলেন। তখনও রোমে যুদ্ধ বন্ধ থাকেনি। শহরের যোদ্ধারা স্যাবাইন ও লাতিন শহরের বিরুদ্ধে লড়ছিলেন এবং অন্যান্য এতরুসকান রাজাদের আগ্রাসন ঠেকাচ্ছিলেন। অনেক রাজাই রোমের টিবার নদের ওপর একক আধিপত্য সহ্য করতে প্রস্তুত ছিলেন না। ডায়োনোসিয়াস ও লাইভি, উভয়ই একই ধরনের ইতিহাস বর্ণনা করেছেন। তারা রোমের সঙ্গে কোলাশিয়া, ফিদেনাই ও ৫ শহরের মৈত্রী জোটের বিরুদ্ধে রোমের একের পর এক যুদ্ধের বর্ণনা দেন।

রোম সভ্যতার সূচনালগ্নেই বেশ ঝামেলার মধ্যদিয়ে যাচ্ছিল, আর অপরদিকে পূর্বের এক প্রাচীন সাম্রাজ্য ধ্বংসের মুখে পড়ছিল।

অ্যাসিরীয়ায় ত্রিমুখী যুদ্ধ অব্যাহত ছিল। আশুরবানিপালের উত্তরসূরি আশুর- এতিল্লু-ইলানি নিনেভেহ শহরে তার ভাই সিন-শুম-ইশকুনের বিরুদ্ধে লড়ার জন্য অ্যাসিরীয় বাহিনীকে জমায়েত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। সিন-শুম-ইশকুনের অধীনে ছিল ব্যাবিলন-কেন্দ্রিক অ্যাসিরীয় ও ব্যাবিলনীয় সেনার সমন্বয়ে গঠিত এক যৌথবাহিনী। ইতোমধ্যে চালদিয়ান রাজা নাবোপোলাসার দক্ষিণ থেকে ব্যাবিলনের বিরুদ্ধে লড়ছিলেন। তিনি একের পর এক প্রাচীন সুমেরীয় শহরের দখল নিতে থাকেন।

দীর্ঘ যুদ্ধের পর (ঠিক কতদিন, তা অনিশ্চিত, কারণ ব্যাবিলনীয় রাজার একেক তালিকা একেকরকম), সিন-শুম-ইশকুন ব্যাবিলন রক্ষার চেষ্টায় ক্ষান্ত দেন এবং নাবোপোলাসার তার বাহিনী নিয়ে শহরে ঢুকে পড়েন। এক্ষেত্রে কিছুটা সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। তবে ধারণা করা যায়, সিন-শুম-ইশকুন শুধু তার রাজত্বের দক্ষিণ অংশ চালদিয়ানদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। খুব সম্ভবত তিনি সেনাসামন্ত নিয়ে উত্তরে যেয়ে ভাইয়ের সিংহাসন দখল করতে সমর্থ হয়েছিলেন। ইতিহাসের এ পর্যায়ে এসে আশুর-এতিল্লু-ইলানি সবধরনের নথি থেকে হারিয়ে যান—তার নাম আর একবারও, কোথাও উচ্চারিত হয়নি। ব্যাবিলন-অ্যাসিরীয়ার মূল ভূখণ্ডে তখন অরাজকতা চলছিল এবং এক চালদিয়ান রাজা ব্যাবিলনের শাসক হয়েছিলেন।

সিংহাসনকে সুসংহত করে নাবোপোলাসার আবারও যুদ্ধ শুরু করলেন। এবার অ্যাসিরীয়দের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে নামলেন তিনি। তার কৌশল ছিল, ইউফ্রেতিস নদীর তীর ধরে এগিয়ে যাওয়া এবং পথিমধ্যে একের পর এক প্রদেশকে ‘স্বাধীনতা’ দেওয়া। এরপর টাইগ্রিস নদ ধরে নিনেভেহর পথে আগানো।

এ যুদ্ধে তিনি অন্যান্য গোত্রদের কাছ থেকে সহায়তা পেয়েছিলেন। মেদেসের রাজা সায়ারক্সিস ও পারস্যবাসীরা সুযোগ বুঝে তার সঙ্গে যোগ দেন। তারা নাবোপোলাসারের সঙ্গে বন্ধুত্ব করেন। অ্যাসিরীয়ার পতন হলে সবাই এই বিশাল ভূখণ্ড নিজেদের মাঝে ভাগাভাগি করে নেবেন—এমনটাই ছিল প্রত্যাশা। নাবোপোলাসার তার ছেলে (ব্যাবিলনের প্রধান রাজপুত্র ও বাবার সবচেয়ে বিশ্বস্ত সেনাপতি) নেবুচাদনেজারকে মেদিয়ানদের রাজকন্যা, অর্থাৎ সিয়ারক্সেসের মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দিলেন।

মেদেস ও পারস্যকে সঙ্গে নিয়ে ব্যাবিলনীয়রা বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীণ এক সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখল, যে জাতি দীর্ঘদিন সমগ্র পৃথিবীর একটি বড় অংশের দখলদার ছিল। ব্যাবিলনীয় বর্ণনামতে, ধীরে ধীরে অ্যাসিরীয়ার ক্ষয় হতে থাকে এবং ‘যুদ্ধের দশম বছরে নাবোপোলাসার আইয়ারু মাসে ব্যাবিলনের সমগ্র বাহিনীকে একত্রিত করে ইউফ্রেতিসের তীরে এসে উপস্থিত হন। সেখানকার মানুষ তাকে আক্রমণ না করে তার জন্য বিভিন্ন ধরনের উপঢৌকন পেশ করে।

এসারহাদোনের মৃত্যুর পর যখন চালদিয়ান রাজা নাবোপোলাসার রাজা হলেন, তার ঠিক ১০ বছর পরের সময়টা ছিল খ্রিস্টপূর্ব ৬১৬ অথবা ৬১৫ সাল। আইয়ারু মাসটি ছিল বসন্তকালের পরিচায়ক; যা এপ্রিলের শেষে অথবা মে’র প্রথম দিকে শুরু হয়। ততদিন ইউফ্রেতিসের তীরে বসবাসকারী জনগণ বুঝে গিয়েছিল যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি কোন্‌দিকে আগাচ্ছে।

আরও এক বছর যুদ্ধের পর নাবোপোলাসার আসসুরে এসে পৌঁছালেন এবং শহরে হামলা চালালেন। তবে এক মাসের ব্যবধানেই তাকে পিছু হটতে হল। তিনি পুরো গ্রীষ্মকাল নিকটবর্তী একটি দুর্গে আত্মগোপন করে কাটালেন। ধারণা করা হয়, সেসময় মেদেসের বাহিনী তাদের দেশে ফিরে গেছিল। এরপর আবার তারা তাদের ব্যাবিলনীয় মিত্রদের সহায়তা করতে ফিরে এল। কিন্তু নাবোপোলাসারের বাহিনীর সঙ্গে যোগ না দিয়ে তারা সরাসরি অ্যাসিরীয় ভূখণ্ডের কেন্দ্রে আঘাত হানলো। সিয়ারক্সেস নিজেই তাইগ্রিস পার হয়ে আসসুরে হামলা চালালেন। নাবোপোলাসার ব্যর্থ হলেও তিনি হলেন না। তিনি শহরের দখল নিয়ে সেখানে ব্যাপক লুটপাট করলেন এবং বিপুল পরিমাণ সম্পদ ও দাস-দাসীর মালিক হলেন। তিনি মেদিয়ান সেনাদের যথেচ্ছ লুটপাট ও হত্যাযজ্ঞ চালানোর অনুমতি দিলেন। ইতোমধ্যে নাবোপোলাসার তার বাহিনী নিয়ে উপস্থিত হয়ে দেখলেন শহরটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।

দুই রাজা নিনেভেহর ওপর চূড়ান্ত হামলার পরিকল্পনা আঁটলেন। প্রস্তুতিপর্বে কয়েক মাস চলে গেল। মেদিয়ান বাহিনী নিজেদের চাঙা করতে আবারও দেশ থেকে ঘুরে এল। নাবোপোলাসার কয়েক মাস সময় নিয়ে ইউফ্রেতিসের তীরের কিছু বিদ্রোহী শহরকে শায়েস্তা করলেন। ৬১২ সাল নাগাদ বাহিনী পুরোপুরি প্রস্তুত হল। ব্যাবিলনের লিপিবদ্ধ ইতিহাস মতে, ১৪তম বছরে ব্যাবিলনের রাজা তার সেনাবাহিনীকে হামলার জন্য প্রস্তুত করলেন। মেদেসের রাজাও ব্যাবিলনের ঘাঁটির কাছে এসে উপস্থিত হলেন তার নিজ বাহিনী নিয়ে। তারা টাইগ্রিসের তীর ধরে নিনেভেহর উদ্দেশে রওনা হলেন। মে থেকে জুলাই পর্যন্ত তারা শহরে হামলা অব্যাহত রাখলেন। আগস্টের শুরুতে নিনেভেহর পতন হল।

মে থেকে আগস্টের মাঝে কিছু নাটকীয় ঘটনা ঘটে, যার বর্ণনা দেন হেরোডোটাস। তার মতে, সিয়ারক্সেস নিনেভেহকে পুরোপুরি ধ্বংস করার ইচ্ছে পোষণ করেছিলেন। কিন্তু রাজা মাসিয়াসের নেতৃত্বাধীন এক বিশাল আকারের স্কাইথিয়ান সেনাবাহিনী সেখানে এসে উপস্থিত হলে সে পরিকল্পনায় বাধা পড়ে।

এই মাদিয়াস সম্ভবত ‘মাদিয়াস দ্য স্কাইথিয়ানের’ নাতি ছিলেন, যিনি ৫০ বছর আগে মেদেসকে পরাভূত করেছিলেন। স্কাইথিয়ানরা হামলা চালানোর জন্য উপযুক্ত সময় বেছে নিয়েছিল। কিন্তু সিয়ারক্সেসের নেতৃত্ব ও প্রশিক্ষণ মেদিয়া ও পারস্যের বাহিনীকে অত্যন্ত বলিষ্ঠ করে তুলেছিল। ফলে এই সম্মিলিত বাহিনী খুব সহজেই স্কাইথিয়ান শত্রুকে পরাজিত করতে সমর্থ হয়।

এরপর সেনারা নিনেভেহর দিকে ফিরে গেল। শহরের নিচে টাইগ্রিস নদীর একটি শাখা প্রবাহিত হত, যার মাধ্যমে শহরে পানি সরবরাহ অব্যাহত থাকত। ফলে অবরুদ্ধ করে এ শহরের দখল নেওয়া দুষ্কর ছিল; খাদ্যের অভাব দেখা দিলেও পানির অভাব দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা কম ছিল। তবে ধারণা করা হয়, হামলাকারীরা বাঁধ তৈরি করে টাইগ্রিসের পানির প্রবাহ সরিয়ে দিয়ে নিনেভেহর প্রাচীরের ক্ষতিসাধন করতে থাকে। একপর্যায়ে সব প্রাচীর ধ্বংস হয়ে যায়। ৬০০ বছর পরে এ-বিষয়ে লেখেন গ্রিক ইতিহাসবিদ ডিওডোরাস (সিসিলি থেকে আগত)। তিনি জানান, নিনেভেহ’র বাসিন্দারা ‘তাদের পূর্বপুরুষদের কাছে দেওয়া এক ভবিষ্যদ্বাণীর ওপর ভরসা করেছিলেন। ওরাকল তাদেরকে বলেছিলেন যে যতদিন পর্যন্ত নিনেভেহ শহরের পানির প্রবাহ অব্যাহত থাকবে এবং যতদিন তা শহরবাসীর শত্রুতে পরিণত না হবে, ততদিন পর্যন্ত নিনেভেহ টিকে থাকবে’। খুব সম্ভবত পরের কোনো ঘটনার ধর্মীয় ব্যাখা দিতে যেয়ে এ উপাখ্যানের জন্ম।

প্রাচীর ধ্বংস হওয়ার পর ব্যাবিলনীয়রা প্রবল বেগে শহরে ঢুকে পড়ল। শুরু হল লুটপাট। ব্যাবিলনীয়দের বর্ণনায় আমরা জানতে পারি, ‘বড় আকারে গণহত্যা শুরু হল। অভিজাত বংশের লোকজন এবং অ্যাসিরীয়ার রাজা সিন- শুম-ইশকুন পালিয়ে গেলেন। শহরটি এক ধ্বংসস্তূপে রূপান্তরিত হল’। ইহুদি ধর্মনেতা নাহুম অ্যাসিরীয় সাম্রাজ্যের ধ্বংস উদযাপন করে একটি কবিতা লেখেন। নিঃসন্দেহে অ্যাসিরীয়দের হাতে তার দেশের উত্তরাঞ্চলের বিভীষিকার বিষয়টি তিনি ভুলতে পারেননি।

১০০ বছর আগে অ্যাসিরীয়রা ব্যাবিলনকে পানিতে তলিয়েছিল—এবার ব্যাবিলনের কাছে এল একই সুযোগ।

অ্যাসিরীয়ার রাজা পালিয়ে হারান শহরের দিকে আগাতে লাগল। বিজয়ী মেদেস পূর্বাঞ্চলের দখল নিলেন, যার মধ্যে এককালে স্কাইথিয়ানদের দখলে থাকা ভূখণ্ডণ্ড অন্তর্ভুক্ত ছিল। ব্যাবিলন পুরনো পশ্চিমা প্রদেশগুলোর দখল নিল।

নিনেভেহ আর হারানের মাঝামাঝি কোনো অজ্ঞাত স্থানে সিন-শুম-ইশকুন মারা গেলেন অথবা তাকে হত্যা করা হল। আসসুর-উবালিত নামে তারইক এক চাচাতো ভাই (যে একইসঙ্গে রাজকীয় কর্মকর্তাও ছিলেন) তার উপাধি গ্রহণ করলেন।

নতুন রাজা ও নতুন রাজধানী পেয়ে ক্ষয়িষ্ণু অ্যাসিরীয় বাহিনী নিজেদের সংগঠিত করার শেষ চেষ্টা চালাল। তবে নাবোপোলাসার খুব বেশিদিন হারানকে শান্তিতে থাকতে দিলেন না। চলমান অরাজকতার সুযোগ নিয়ে কিছু অ্যাসিরীয় শহর নিজেদের স্বাধীন হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিল। সেগুলোকে আচ্ছা করে শায়েস্তা করলেন তিনি। এরপর নাবোপোলাসার হারানর উদ্দেশে রওনা হলেন। বছরটা ছিল খ্রিস্টপূর্ব ৬১০। সিয়ারক্সেসের সঙ্গে আবারও যৌথবাহিনী গঠন করলেন তিনি।

যখন আসুর-উবালিত এই বাহিনীর খবর পেলেন, তখন তিনি ও তার বাহিনী শহর ছেড়ে পালালেন। নাবোপোলাসার শহরে এসে দেখলেন সেখানে প্রতিরোধ গড়ে তোলার মতো কেউ নেই। তিনি ইচ্ছেমতো লুটপাট চালিয়ে নিজের দেশে ফিরে গেলেন।

তবে আসুর-উবালিতের যুদ্ধ করার শখ তখনো মেটেনি। তিনি দক্ষিণে, মিশরের ফারাওর কাছে সাহায্য চেয়ে বার্তা পাঠালেন।

অ্যাসিরীয়দের কাছে প্রশিক্ষণ পাওয়া ফারাও সামমেটিকাস প্রথম (২৬তম রাজবংশের) ৫০ বছর রাজত্ব করার পর বৃদ্ধবয়সে মারা যান। তার ছেলে দ্বিতীয় নেচো তখন সিংহাসনে। তার পিতা অ্যাসিরীয়দের বিরুদ্ধে কয়েক যুগ আগে অস্ত্রধারণ করে থাকলেও, তিনি আসুর-উবালিতের ডাকে সাড়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি চেয়েছিলেন মিশরকে বৈশ্বিক বিষয়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলতে। ইতোমধ্যে তিনি তার সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী করার জন্য গ্রিক ভাড়াটে নাবিক নিয়োগ দিচ্ছিলেন। তার প্রিয় একটি প্রকল্প ছিল এমন একটি খাল খনন করা, যেটি নীলনদকে লোহিত সাগরের সঙ্গে যুক্ত করবে। এর ফলে মিশরের সঙ্গে পূর্বের দেশগুলোর বাণিজ্যিক সম্পর্কের উন্নয়ন হবে। এছাড়াও, মিশর তার নিজ ভূখণ্ডের বাইরে কোনো অঞ্চল দখল করতে চাইলে সবচেয়ে যৌক্তিক জায়গা হবে ভূমধ্যসাগরের উপকূলবর্তী পশ্চিমা সেমাইটদের ভূখণ্ড। ব্যাবিলন বেশি শক্তিশালী হয়ে গেলে মিশর ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের কোনো এলাকা দখল করতে পারবে না—এ চিন্তাও ছিল ফারাওর মনে। আবার অপরদিকে, যদি অ্যাসিরীয়দের পতন হয়, তাহলে স্কাইথিয়ানদের সামনে থাকা আরও একটি বাঁধা দূর হবে, যার ফলে তারা মিশরের দিকে আরও এগিয়ে আসতে পারবে। ইতোমধ্যে দ্বিতীয় নেচোর শৈশব থেকেই মিশরের সীমান্তে স্কাইথিয়ানদের আনাগোনা চলছিল।

সুতরাং তারা চুক্তিবদ্ধ হলেন এবং আসুর-উবালিতের প্রস্তাবমতে, দুই পক্ষ কারচেমিশ শহরে দেখা করে উভয় পক্ষের বাহিনীর সমন্বয় ঘটাতে রাজি হল।

দিতীয় নেচো উত্তরাভিমুখে যাত্রা শুরু করলেন।

‘টু কিংস’ গ্রন্থের লেখক জানান, ‘যখন জোসাইয়াহ জেরুজালেমের রাজা ছিলেন, তখন মিশরের রাজা ও ফারাও নেচো ইউফ্রেতিসের তীর ধরে অ্যাসিরীয়ার রাজাকে সাহায্য করতে গেলেন’।

অ্যাসিরীয়দের ঝামেলার পূর্ণ সুযোগ নিয়ে জুদাহর জোসাইয়াহ তার নিজ দেশের স্বাধীনতাকে আবারও নতুন করে জাহির করতে লাগলেন। তিনি এক ধর্মীয় পুনর্জাগরণের নেতৃত্ব দেন। তিনি শহর থেকে সবধরনের অ্যাসিরীয় নিদর্শন দূর করেন। তিনি চাননি সেখানে অ্যাসিরীয়ার প্রভাব ফিরে আসুক। একইসঙ্গে তিনি চাননি দ্বিতীয় নেচো এসে অ্যাসিরীয়ার পরিবর্তে জেরুজালেমের প্রভু হয়ে যাক। এ কারণে তিনি নেচোকে নির্বিঘ্নে চলে যেতে দেননি—যখন মিশরীয় বাহিনী মেগিদ্দোর কাছাকাছি এসে পৌঁছাল, তখন তিনি তাদের ওপর হামলা চালালেন।

নেচো তাড়াহুড়ার মাঝে ছিলেন। তিনি এত অল্প সময়ের মাঝে জেরুজালেমের বাহিনীর মুখোমুখি হতে প্রস্তুত ছিলেন না। তিনি জোসাইয়াহর কাছে শান্তি স্থাপনের উদ্দেশে দূত পাঠালেন। তিনি দূত মারফত জানালেন, ‘আপনার আর আমার মাঝে কি কলহ রয়েছে? আমি এ সময়ে আপনাকে আক্রমণ করতে যাচ্ছি না, বরং অন্য এক রাজ্যের বিরুদ্ধে আমার যুদ্ধ’। তবে জোসাইয়াহ দূত ও তার বাণীকে অবজ্ঞা করলেন।

‘টু কিংস’-এর বর্ণনা মতে, ‘রাজা জোসাইয়াহ যুদ্ধক্ষেত্রে নেচোর মুখোমুখি হওয়ার জন্য এগিয়ে গেলেন’। কিন্তু নেচো তার মোকাবিলা করলেন এবং মেগিদ্দোতে তাকে হত্যা করলেন। অপর এক বই থেকে আমরা জানতে পারি, ছদ্মবেশী জোসাইয়াহকে তিরন্দাজরা তির ছুড়ে হত্যা করেন। তার দেহরক্ষী আহত রাজাকে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সরিয়ে নেন এবং একটি রথে চড়ে রাজধানীর উদ্দেশে রওনা হন। তবে পথিমধ্যেই প্রাণ হারান এই ৩৯ বছর বয়সি রাজা।

দ্বিতীয় নেচো জেরুজালেমের বিরুদ্ধে যুদ্ধজয় উদযাপনের জন্য অপেক্ষা করলেন না। জুদীয়রা পরাজিত হয়ে তার জন্য পথ ছেড়ে দিলে তিনি আসসুর- উবালিতের নেতৃত্বাধীন অ্যাসিরীয় বাহিনীর মুখোমুখি হওয়ার জন্য আবারও যাত্রা শুরু করলেন। যৌথবাহিনী হারানে অবস্থিত অ্যাসিরীয় সদরদপ্তরের দখল নেওয়ার চেষ্টা করল, যেটি তখন ব্যাবিলনীয় বাহিনীর দখলে ছিল। ব্যাবিলনের ইতিহাস মতে, ‘তারা নাবোপোলাসারের মোতায়েন করা বাহিনীকে পরাজিত করতে সমর্থ হলেও সমগ্র শহরের দখল নিতে ব্যর্থ হল’।

উভয়পক্ষই পিছু হটল। নাবোপোলাসার আর যুদ্ধে যেতে আগ্রহী ছিলেন না। তার স্বাস্থ্য ভেঙে গেছিল। তিনি আর আগের মতো তরুণ ছিলেন না এবং আসসুর-উবালিতকেও তেমন কোনো হুমকি হিসেবে দেখতেন না তিনি। এবার নেচো ঠিক করলেন জেরুজালেমে ফিরে গিয়ে ‘বাকি কাজ’ শেষ করবেন। তিনি তার সেনাদের জেরুজালেমে পাঠালেন। তারা খুব সহজেই জোসাইয়াহর ছেলে ও উত্তরসূরি জেহোয়াহাজকে বন্দি করে ফেললেন। নেচোর নির্দেশে জেহোয়াহাজকে মিশরে নিয়ে যাওয়া হল। অল্প সময় পর সেখানে তিনি মৃত্যুবরণ করলেন।

নেচো জোসাইয়াহর এক কনিষ্ঠ পুত্র এলিয়াকিমকে পুতুলরাজ হিসেবে নির্বাচন করলেন। তিনি এলিয়াকিমের নাম বদলে জেহোইয়াকিম রাখলেন। এটি ছিল আধিপত্য ও মালিকানা জাহিরের এক প্রাচীন ঐতিহ্য। এরপর তিনি তার কাছে স্বর্ণ ও রৌপ্যের বড় আকারের নজরানা দাবি করলেন এবং জেহোইয়াকিম জনগণের ওপর বড় আকারের করের বোঝা চাপিয়ে তা আদায় করলেন।

৬০৫ সালে নাবোপোলাসার আবারও বিদ্রোহীদের দমনের দিকে মনোযোগ দিলেন। মিশর ও অ্যাসিরীয়ার যৌথবাহিনী কারচেমিশে ঘাঁটি স্থাপন করেছিল। কিন্তু নাবোপোলাসারের বয়সও ততদিনে আরও বেড়েছে এবং তিনি আক্রান্ত হয়েছেন নানা দুরারোগ্য ব্যাধিতে। তিনি নিজে না যেয়ে পুত্র নেবুচাদনেজারকে দক্ষিণে, কারচেমিশের উদ্দেশে তার বাহিনীর সেনাপতি হিসেবে পাঠান। লক্ষ্য অ্যাসিরীয় বাহিনীর অবশিষ্টাংশকে ছেঁটে ফেলা।

২ বাহিনী শহরের বাইরে লড়াই করতে লাগল। তীব্র লড়াইয়ের একপর্যায়ে মিশরীয়রা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ল। দ্বিতীয় নেচো বদ্বীপের দিকে পিছু হঠতে বাধ্য হলেন। ফলে তাকে দখলীকৃত পশ্চিমা সেমাইটদের ভূখণ্ড ছেড়ে পালাতে হল। এই পরাজয়কে জুদাহ গোত্রের ধর্মগুরু জেরেমাইয়াহ উদযাপন করেন।

তবে অ্যাসিরীয় পলাতক যোদ্ধা বা যুদ্ধের আর তেমন কোনো বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায় না। ধারণা করা হয়, অ্যাসিরীয় বাহিনী পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছিল—হামলায় কেউই বেঁচে থাকেনি।

যুদ্ধক্ষেত্রেই আসসুর-উবালিত মারা যান; এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে তার মরদেহ এমনভাবে পদদলিত হয়েছিল যে সেটি আর আলাদা করে চিহ্নিত করা যায়নি।

নেবুচাদনেজার পলায়নরত নেচোকে অনেকদূর পর্যন্ত ধাওয়া করেন। তিনি চেয়েছিলেন মিশরের ফারাওকে নিজহাতে হত্যা করতে। কিন্তু নিজ দেশ থেকে ছুটে আসা কিছু বার্তাবাহক তার জয়যাত্রাকে থামিয়ে দেয়। তারা নাবোপোলাসারের মৃত্যুসংবাদ নিয়ে আসে। এই দুঃসংবাদ শুনে নেবুচাদনেজার তৎক্ষণাৎ নেচোর পেছনে ধাওয়া করা থামিয়ে ব্যাবিলনের উদ্দেশে ফিরতি যাত্রা শুরু করেন। ব্যাবিলনের সিংহাসন ছিল একটি আকাশে ভাসতে থাকা ফুটবলের মতো—যথাস্থানে দ্রুত পৌঁছাতে না পারলে অন্য কোনো খেলোয়াড় তাতে পা বা মাথা ছুঁইয়ে গোল দিয়ে দিতে পারে!

ইতোমধ্যে, নেচো আরও দক্ষিণদিকে পালাতে থাকেন। তিনি আর কখনোই ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলে মিশরীয় ক্ষমতার দাপট দেখানো চেষ্টা করেননি। বরং তিনি পুরনো ২৫তম রাজবংশের সিংহাসনের প্রতি যেন নতুন করে আর কোনো হুমকি না আসে, সেদিকে মনোনিবেশ করেন। নিজ দেশের প্রতিরক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নে মনোযোগ দেন দ্বিতীয় নেচো।

ঠিক এভাবেই, প্রাচীন পৃথিবীর দুই মহাপরাক্রমশালী সভ্যতার সূর্য অস্ত যায়।

মিশর এক খাঁচায় বন্দি হয়ে পড়ে আর পৃথিবীর বুক থেকে অ্যাসিরীয়ার নামই মুছে যায় চিরতরে। ব্যাবিলনের সিংহাসনই পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাবান সাম্রাজ্যের কেন্দ্রবিন্দুতে রূপান্তরিত হয়।

সকল অধ্যায়

১. ৩০. চীনের শ্যাং রাজবংশের রাজধানীগুলো
২. ৩১. গ্রিসের মাইসেনীয় জাতি
৩. ৩২. দেবতাদের সংঘর্ষ
৪. ৩৩. যুদ্ধ ও বৈবাহিক সম্পর্ক
৫. ৩৪. অতি প্রাচীনকালের সর্বশ্রেষ্ঠ যুদ্ধ
৬. ৩৫. ট্রয়ের যুদ্ধ
৭. ৩৬. চীনের প্রথম ঐতিহাসিক রাজা
৮. ৩৭. ঋগ্বেদ
৯. ৩৮. যখন আবারো ইতিহাসের চাকা ঘুরল
১০. ৩৯. নতুন রাজত্বের অবসান
১১. ৪০. গ্রিসের অন্ধকার যুগ
১২. ৪১. মেসোপটেমিয়ার অন্ধকার যুগ
১৩. ৪২. শ্যাংদের পতন
১৪. ৪৩. স্বর্গ থেকে আসা আদেশ
১৫. ৪৪. ভারতের যুদ্ধ
১৬. ৪৫. ডেভিডের পুত্র
১৭. ৪৬. আবারও পশ্চিম থেকে পূর্বে গেল ঝৌরা
১৮. ৪৭. অ্যাসিরীয়ার রেনেসাঁ
১৯. ৪৮. নতুন জনগোষ্ঠী
২০. ৪৯. বাণিজ্যিক কেন্দ্র ও উপনিবেশ
২১. ৫০. পুরনো শত্রুরা
২২. ৫১. অ্যাসিরীয়া ও ব্যাবিলনের রাজারা
২৩. ৫২. চমকপ্রদ পরাজয়
২৪. ৫৩. চীনের ক্ষয়িষ্ণু রাজা
২৫. ৫৪. মিশরের অ্যাসিরীয়রা
২৬. ৫৫. মেদেস ও পারস্যবাসীরা
২৭. ৫৬. বিজয় ও স্বৈরাচার
২৮. ৫৭. একটি রাজত্বের শুরু ও শেষ
২৯. ৫৮. একটি সংক্ষিপ্ত সাম্রাজ্য
৩০. ৫৯. সাইরাস দ্য গ্রেট
৩১. ৬০. রোম প্রজাতন্ত্র
৩২. ৬১. রাজত্ব ও সংস্কারকামীরা
৩৩. ৬২. দায়িত্ববোধ, ক্ষমতা ও ‘আর্ট অব ওয়ার’
৩৪. ৬৩ – পারস্য সাম্রাজ্যের আধিপত্য বিস্তার
৩৫. ৬৪. দ্য পার্শিয়ান ওয়ারস : পারস্যের যুদ্ধ
৩৬. ৬৫. পেলোপোনেশীয় যুদ্ধ
৩৭. ৬৬. রোমে প্রথম লুটপাট
৩৮. ৬৭. চি’ইনের জাগরণ
৩৯. ৬৮. মেসিডোনিয়ার বিজেতারা
৪০. ৬৯. রোমের বজ্রআঁটুনি
৪১. ৭০. আলেকজান্ডার ও উত্তরাধিকারীদের যুদ্ধ
৪২. ৭১. মৌর্য সভ্যতার পরিণতি
৪৩. ৭২. প্রথম সম্রাট, দ্বিতীয় রাজবংশ
৪৪. ৭৩. পুত্রদের যুদ্ধ
৪৫. ৭৪. রোমান স্বাধীনতাকামী ও সেলেউসিদ দখলদার
৪৬. ৭৫. পূর্ব ও পশ্চিমের মাঝে
৪৭. ৭৬. প্রচলিত ব্যবস্থার বিনির্মাণ
৪৮. ৭৭. উন্নয়নের সমস্যাগুলো
৪৯. ৭৮. নতুন মানুষ
৫০. ৭৯. সাম্রাজ্য
৫১. ৮০. অমাবস্যা ও পুনর্জাগরণ
৫২. ৮১. উত্তরাধিকারের সমস্যা
৫৩. ৮২. রোমান সাম্রাজ্যের কিনারায়
৫৪. ৮৩. সিংহাসনে শিশুরা
৫৫. ৮৪. উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া ক্ষমতার ভ্রান্তি
৫৬. ৮৫. সাম্রাজ্যের রক্ষাকর্তা

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন