৪২. সময়ের বাড়া কারিগর নেই

আশাপূর্ণা দেবী

সময়ের বাড়া কারিগর নেই।

সময়ের র‍্যাঁদার নিচেয় পড়ে সব অসমানই সমান হয়ে আসে, সব। এবড়ো-খেবড়োই তেলা হয়ে যায়।

সকল সংসারের মত নিতাইয়ের সংসারেও এই লীলা চলছে বৈকি। প্রথম দিকে এক-একদিন এক-একটা ছুতোয় মনে হত, নিতাই বোধ করি এই দণ্ডে বৌকে দেশে রেখে আসবে। অথবা বৌ ভাবিনী সেই রাত্রেই আড়ায় দড়ি ঝুলিয়ে নিজে ঝুলে পড়বে। কিন্তু কার্যকালে তেমন কিছুই হল না।

ক্রমশই, বোধ করি নিজেদের অজ্ঞাতসারেই, ভাবিনী স্বাধীন সংসারের সংসার-রসে এবং নিতাই আর এক স্কুল রসে মজতে শুরু করল, অতঃপর দুজনেই পরস্পরের কাছে অপরিহার্য হয়ে উঠল।

অতএব খণ্ড প্রলয়ের সেই অবস্থাটি কোন্ ফাঁকে ফিকে হতে হতে বিলীন হয়ে গেল, দেঁতো হাসি বাজার দখল করল।

এখন দেখা যাচ্ছে নিতাইয়ের বৌ রুটি গড়তে শিখেছে, এবং নিতাই বৌকে ভয় করতে শিখেছে।

ভয় থেকেই আসে মনোরঞ্জন-চেষ্টা। ক্রমশই অনুধাবন করছে নিতাই, সত্যবতীর নিন্দাবাদটি হচ্ছে বৌয়ের মনোরঞ্জনের একটি প্রশস্ত পথ, মনোবৈকল্যের একটি প্রকৃষ্ট ওষুধ।

অতএব সেই প্রশস্ত আর প্রকৃষ্ট উপায়টিই বেছে নিয়েছে নিতাই। না নিয়ে করবেই বা কি? পরিবারে পরকলায় জগৎকে দেখতে না শিখলে যে জগৎ দুঃসহ হয়ে ওঠে। অন্তত নিতাইদের মত নিতান্ত গৃহগতপ্রাণ গেরস্থ জীবদের। এদের ও ছাড়া উপায় নেই।

আগুনের মালসা কোলে করে তো আর ঘর করা যায় না। আগুনে জল ছিটোতেই হয়। তদৃতপ্রাণ বশংবদ হয়ে পড়াই সেই শীতল জল।

নারীজাতী যতই অবলা কোমলা হোক, স্বক্ষেত্রে সে বাঘিনী। আর ইচ্ছাপূরণের অভাব ঘটলে ফণাধরা নাগিনী হয়ে উঠতেও পিছপা নয়। শান্তিকামী পুরুষজাতি যতক্ষণ না এটা ধরতে পারে, সংঘর্ষ বাধে, ততক্ষণ মনে করে এটা মেনে নেব না, অবস্থা আয়ত্তে আনা অসম্ভব হয় অথচ একবার বশ্যতা স্বীকার করলেই মিটে গেল গোল। কিসে তুষ্টি ধরতে পারলেই বিশ্বশান্তি।

অতএব এখন ভাবিনী যে কোন কারণেই মেজাজ গরম করুক অথবা বাক্যালাপ বন্ধ করুক, নিতাই এটা ওটা কথার ছলে স্বগতোক্তিক সুরে সত্যবতীর প্রসঙ্গ এনে ফেলে। সে প্রসঙ্গ আর যাই হোক প্রশস্তির পর্যায়ে পড়ে না।

দু-চারবার চেষ্টার পরই কার্যসিদ্ধি হয়, মৌনব্রতধারিণী ঝঙ্কার দিয়ে বলে ওঠে, কেন, এখন আবার এসব কথা কেন? চিরদিনই তো শুনে আসছি তিনি গুণের গুণমণি! তার পাদোদক জল খেতে পারলে তবে যদি আমাদের মত অধমদের উদ্ধার হয়!

নিতাই সোৎসাহে কাজে এগোয়, তা বলতে অবিশ্যি পার, এই মুখেই অনেক গুণগান করেছি বটে। কিন্তু এখন? এখন আর নয়। এখন আর তাকে চিনতে বাকী নেই। কি বলব তোমাকে, ওই ‘বেহ্ম’টার সঙ্গে যা নটঘটি, দেখে দেখে চিত্তির চটে গেল। অবশ্যি– নিতাই মুখ কোঁচকায়, সন্দেহ একটু আধটু বরাবরই ছিল, তবে সে সন্দেহকে আমল দিতাম না। বলি, না না, ছিঃ! বামুনের ঘরের মেয়ে কিন্তু এখন তো দেখছি চোখের চামড়াহীন বেপরোয়া! একলা ঘোড়ার গাড়ি ভাড়া করে তার বাড়ি গিয়ে গিয়ে

তা তোমার বন্ধু কি কানা না বোবা? ভাবিনী চিপটেন কাটে।

নিতাই মুচকে হেসে বলে, স্ত্রৈণ পুৰুষ শুধু কানা বোবা কেন, বোবা কালা কানা হাবা বুদ্ধু ভেড়া সব। ক্রমশই যে অবস্থা আমার ঘটছে আর কি!

ভাবিনীর কালো কালো ডাবর ডাবর মুখে আহ্লাদ রসের হাসি উছলে ওঠে। সেও মুখটিপে বলে, আহা লো মরি মরি! তবু যদি না রাতদিন এই বাঁদী থরহরি কম্প হয়ে থাকত। বেড়াপুরুষ কেমনধারা একবার দেখতে সাধ যায়।

সেদিন নিতাই এই কথার পিঠে বলে ওঠে, সাধ যায় তো চল না দেখবে। ও বাড়ি তো যেতেই চাও না।

পরের বাড়ি গিয়ে দেখে আর কি হবে?

ভাবিনী “গুলি” চোখে কটাক্ষ হানে।

নিতাই বলে, তা সকল বস্তুই কি আর ঘরেই মেলে গো? তবু দৃষ্টি সার্থক করবে তো চল। শুনলাম দেশ থেকে সদুদি এসেছে বৌয়ের আঁতুড় তুলতে। দেখা হবে

সদুদি এসেছে? ভাবিনী গালে হাত দিয়ে বলে, আঁতুড় কলকাতাতেই উঠবে? গিন্নী দেশে যাবেন না? এ সময়েও শাউড়ীর ধার ধারবেন না?

তাই তো শুনছি। বলেছেন নাকি, কেন, কলকাতায় কি আর জন্মমৃত্যু হচ্ছে না?

তা ভাল!

নিতাইয়ের বৌয়ের মুখে অন্ধকার নামে। সত্যবতীর খবরটা শুনে অবধি একটা আশা ছিল কিছুদিনের মতন অন্তত ওই চক্ষুশূলটা চোখছাড়া হবে। আর সেই অবসরে ভাবিনী সত্যবতীর স্বামী পুরকে নেমন্তন্ন-আমন্তন্নর ছলে খাইয়ে মাখিয়ে বশ করে ফেলে বরকে তাক লাগিয়ে দেবে।

তা না এই বার্তা!

বাসায় বসে আঁতুড় তোলাবেন!

ক্রুদ্ধকণ্ঠে বলে ওঠে ভাবিনী, তা ভেড়া বর তাতেই রাজী তো? মা-বাপের মুখে চুনকালি দিয়ে বৌ আপনি স্বাধীন হয়ে বেটা-বেটি বিয়োবে–

নিতাই চোখ মটকে বলে, তা হোক। ও তো বাঁচল। পরিবারকে চোখছাড়া করতে হল না।

.

কথাটা নিতাই অনুমানে বলল মাত্র। প্রকৃত ঘটনা কিন্তু তা নয়। সত্যবতীর এ প্রস্তাবে নবকুমার শিউরেই উঠেছিল এবং “অসম্ভব” বলে উড়িয়েই দিয়েছিল।

আঁতুড় পর্বের মত একটা ভয়ঙ্কর পর্ব যে দেশের বাড়িতে গিয়ে না পড়ল মিটতে পারে, এ তার ধারণার বাইরে।

কিন্তু শেষ অবধি বরাবর যা হয় তাই হল। সত্যবতীর তীক্ষ্ণ যুক্তির বাণে নবকুমারের দ্বিধা লজ্জা ভয় সব টুকরো টুকরো হয়ে গেল।

ভয়টা কিসের?

কলকাতায় জন্ম মৃত্যু হচ্ছে না? ভূমিষ্ঠ শিশুর নাড়ি কাটা বাকী থাকছে?

লজ্জা?

লজ্জার অর্থ? বুড়ো বয়সে যদি আবার কেঁচেগন্ডুষে লজ্জা না হয় তো বাসায় আঁতুড় তোলাতেই লজ্জা?

অতএব?

দ্বিধার প্রশ্নটা অবান্তর।

নবকুমার অবশ্য এই বুড়ো বয়সে কথাটায় রেগে উঠেছিল। বলেছিল, বুড়ো বয়স বুড়ো বয়স করছ কেবলই কেন বল তো? আমার ছোট মাসীর পৌত্তুরে উপনয়ন হয়ে যাবার পর আবার একটা মেয়ে হয়েছিল-

সত্য জ্বলন্ত দৃষ্টিতে শুধু তাকিয়েছিল একবার, তারপর সংক্ষেপে বলেছিল, ওসব কথা থাক, এখানেই ব্যবস্থা করতে হবে সেই কথাটাই জানিয়ে রাখলাম।

বলা বাহুল্য মাত্র এইটুকুতেই কাজ হয় নি।

নবকুমার বিস্তর হাত-পা আছড়েছিল, বিস্তর আক্ষেপ জানিয়ে বলেছিল, আমি ওসবের কি জানি? এখানে কাউকে চিনি আমি? ব্যবস্থা করতে হবে বললেই হল?

তার পর সত্যর একটি তীব্র মন্তব্যে সহসা চুপ করে গিয়েছিল। আর অতঃপর একদিন বুদ্ধি করে চুপি চুপি গিয়েছিল সদুর বরের কাছে। শুনেছিল তার গণ্ডা তিন-চার ছেলেমেয়ে। সেগুলো নাকি কলকাতাতেই জন্মেছে, অতএব লোকটা অভিজ্ঞ।

তা অভিজ্ঞ লোকটা দরাজ ভরসা দিয়ে আশ্বস্ত করল নবকুমারকে এবং সেই সঙ্গে সদুকে আনিয়ে নেবার পরামর্শটা দিল।

দিন তিনেক ছুটি নিয়ে বারুইপুরে গিয়ে সদুকে এনে ফেলল নবকুমার।

কিন্তু যত সহজে বলা হল, কাজটা কি তত সহজে হয়েছিল?

পাগল? তাই কি সম্ভব?

এলোকেশী একাধারে রাধুনী পরিচর্যাকারিণী এবং নিঃসঙ্গ সংসারের সঙ্গিনী সদুকে কি এক কথায় ছাড়তে রাজী হয়েছিলেন?

হারামজাদী শতেকখোয়ারী হাড়বজ্জাত বৌটার নামে একশো গালাগালের ছড়া কেটে, বেয়াক্কেলে বেহায়া বৌয়ের দাসানুদাস ছেলেকে কি শুধু-হাতে বিদায় করতে উদ্যত হন নি?

হয়েছিলেন।

কিন্তু ভেস্তে দিল স্বয়ং সদু।

সে বলে বসল, আমি যাব।

তুই যাবি? এলোকেশী গর্জে উঠেছিলেন, আক্কেলখাকী, চোখের মাথাখাকী, নেমকহারাম লক্ষ্মীছাড়ি! তুই আমাদের একা ফেলে সেই হাড়বাতির পাদোক খেতে যাবি?

কিন্তু সদু অনমনীয়।

সদুর যে এত গো আছে, এ কথা কে কবে জানত?

এ যেন আর এক সদু।

সামান্য দু-চারখানা কাপড়ের সম্বল নিয়ে সদু সদরে দাঁড়িয়ে প্রস্তুত।

আজন্ম অগঙ্গার দেশে মুখ থুবড়ে প্রাণ গেল সদুর, কালী-গঙ্গার দেশে যেতে পাবার এই সুযোগ ছাড়বে না।

তোমাদের কন্না? সে তো চিরকাল করে এল! সদুর কি ছুটি নেই? সদু যদি মরে? তোমরা কি না খেয়ে থাকবে?

কে সদুকে এই বিদ্রোহের শক্তি দিল ঈশ্বর জানেন।

“থ” হয়ে গেলেন এলোকেশী, হকচকিয়ে গেল নবকুমার।

নীলাম্বর বাঁড়ুয্যের ক্রুদ্ধ গলায় বললেন, যাচ্ছ যাও, কিন্তু আর কখনো এ ভিটেয় মাথা গলাতে এস না বলে রাখছি।

সদু প্রণাম করে নম্র গলায় বলল, আচ্ছা।

দিশেহারা নবকুমার বলল, ভয়ে আমার নাড়ি ছেড়ে আসছে সদুদি, থাক তোমায় যেতে হবে না। বৌয়ের যদি পরমায়ু থাকে বাচবে, আর যদি কপালে মৃত্যু থাকে

সৌদামিনী মৃদু হেসে বলল, তোর বৌকে বাঁচাতে যাচ্ছি ভেবেছিস? মোটেও না। নিজের কপালটা ফের আর একবার যাচাই করতে ইচ্ছে হয়েছে, তাই যাচ্ছি।

এ কথার মানে নবকুমার বুঝতে পারে নি। চোরের মত মা-বাপের সামনে থেকে পালিয়ে এসেছে।

এলোকেশী উচ্চকণ্ঠে ভগবানকে ডাক দিয়ে আদেশ করেছেন–ভগবান, যে সর্বনাশী আজীবন আমার বুকে কুলকাঠের আংরা জ্বেলে রেখে দগ্ধাল, আর বুড়ো বয়সে এই কোমরের বলটুকু পর্যন্ত কেড়ে নিয়ে মজা দেখতে বসল, তুমি তার বিচার করো। যদি ন্যায়পরায়ণ হও তো সর্বনাশীর যেন তেরাত্তির না পোহায়! তার ভরা ঘরে যেন দোর পড়ে, তার মুখের গেরাস যেন বাসি চুলোর ছাই হয়ে যায়, পরকালে এহকালে যেন তার গতি না হয়!

সত্যবতীর আরো অনেক ভয়াবহ পরিণতির জন্য ন্যায়পরায়ণ ভগবানের কাছে আবেদন জানাতে থাকেন এলোকেশী সুর করে ছন্দে গেঁথে।

না, কথাটাকে মিথ্যা ভাববার হেতু নেই, বাড়াবাড়ি ভাবলেও ভুল ভাবা হবে, সত্যবতীদের আমলে এলোকেশীরা নিতান্তই বিরল ছিল না।

আর আজই কি আছে?

নেই। শুধু হয়তো অভিশাপের বাণীগুলি সভ্য মার্জিত সূক্ষ্ম হয়েছে। তীব্র চিৎকারটা তীক্ষ্ণ মন্তব্যে পরিণত হয়েছে।

.

সে যাক, সত্যবতীর কানে এসব পৌঁছল না। বিনা নোটিশে হঠাৎ সদূর আবির্ভাব প্রথমটা একটু বিমূঢ় হয়ে পড়েছিল সে। তার পরই অবশ্য সামলে নিল। হাসিমাখা মুখে বলল, যাক, ভালই হল। সংসারটা একজনের হাতে তুলে দেবার লোক হল। এবার নিশ্চিন্দি হয়ে মরে বাঁচব!

সদু ভুরু কোঁচকাল, কেন, মরার কি হল? রাজ্যিসুদ্ধ মেয়েমানুষ মরছে?

সত্যবতী হাসল, কি জানি, এবার কেবলই মনে হচ্ছে মরে যাব। কালের ঘণ্টা কানে বাজছে যেন।

তা যে ঘণ্টাই কানে বাজুক, মরে অবিশ্যি গেল না সত্যবতী। শুধু দীর্ঘকাল যমে-মানুষে টানাটানি চলল, শুধু সত্যবতীর সংসারে অনেক ওলটপালট কাণ্ড ঘটে গেল, আর সত্যবতীর মনোজগতে অনেক বিপর্যস্ত ধাক্কা মেরে মেরে আরো দৃঢ় করে তুলল সত্যবতীকে।

এরই মাঝখানে সত্যবতীর নবজাত কন্যা কেবলমাত্র কান্নার জগৎ থেকে হাসির জগতের উঁকি দিতে শিখে ফেলল।

সাধন সরল দুই ভাই কাঁচের পুতুরের মত মেয়েটাকে গলার হার করে তুলল, আর নবকুমারের দেখা দিল প্রবল একটি বাৎসল্যরসের ধারা। তবু তার যেন নববধুর লজ্জা!

যদিচ মেয়ে সন্তান কানাকড়ি মাত্র, তথাপি দেখতে ইচ্ছে করে, নাড়াচাড়া করতে ইচ্ছে করে। আর স্নেহের বস্তু বলে মিষ্ট একটা অনুভূতি আসে।

সাধন সরল তার অপরিণত বয়সের ফল। সে বয়সে বাৎসল্যরসের সৃষ্টি হয় নি। বরং সেই নবযৌবনের তীব্র আবেগের সময় ওদের আপদ বালাইয়ের মতই মনে হত।

এখন সেকাল নেই।

এখন সত্যবতী তো হাতছাড়াই। তবু এর সূত্রে যদি আবার একটু সরসতা আসে এই আশা। যমে-মানুষে টানাটানির লড়াইয়ের মানুষই জিতেছে, তাই মেয়েকে পয়মন্তও মনে হচ্ছে নবকুমারের!

মোট কথা সংসার বেশ ভালই চলছে নবকুমারের।

কিন্তু এ বাড়িতে সুহাস বলে যে একটা মেয়ে ছিল? সে কোথায় গেল? তাকে তো আর দেখা যায় না? সে কি তবে মারা গেছে? নাকি তার কুলত্যাগিনী মায়ের পদাঙ্ক অনুসরণ করে কুলত্যাগই করেছে?

তা নবকুমার তাই বলেছে।

প্রায় কুলত্যাগের ধিক্কারই দিয়েছে তাকে। জীর্ণদেহ সত্যবতীর সামনে তীব্রকণ্ঠে ধিক্কার ঘোষণা করতেও দ্বিধা করে নি। বলেছে, আর যেন ওটা এ বাড়ির ছায়া না মাড়ায়! কুলত্যাগে আর ধর্মত্যাগে তফাতটা কি? না-ই বা বিয়ে হত। হিন্দুর ঘরের মেয়ে, ঠাকুর-দেবতার পূজোপাট করে জীবনটা কাটিয়ে দেওয়া যেত না। একটা বাপের বয়সী বুড়োর সঙ্গে ছি ছি ছি!… বুঝলে তুড়ুর মা, আমড়া গাছে কখনো ন্যাংড়া ফলে না! এই যে তুমি এতদিন গাছের গোড়ায় জল ঢাললে, এত সার দিলে, ন্যাংড়া কি ফলল? আমড়ার ছানা আমড়াই হল!

সত্যবতী হাত নেড়ে থামবার ইশারা করে পাশ ফিরেছিল।

এখন আর সত্য শয্যাগত নয়, তবু বেশীর ভাগ বিছানাতেই পড়ে থাকে। সদু এসে তার সংসারভার হাতে তুলে নেওয়ায় সত্য যেন অদ্ভুত একটা মুক্তির স্বাদে মগ্ন হয়ে আছে। সদু যেই বলে, থাক থাক বৌ, তুমি আবার কেন উঠে এলে রোগা মানুষ অমনি সত্য গিয়ে ঝুপ করে শুয়ে পড়ে। আগের মত তর্ক করে না, বলে না, এখন তো ভাল আছি। শুয়ে পড়ে

আর বেশীক্ষণ শুয়ে থাকলেই সেইদিনের অভিনীত নাটকটার দৃশ্যগুলোই তার চোখের পর্দায় ছুটোছুটি করে বেড়ায়।

গোড়া থেকে সবটাই জানে সত্য।

সত্যর জ্ঞান-চৈতন্য নেই ভেবে আঁতুড়ঘরের দোরে বসে সদু আর ভাবিনী সশব্দেই আলোচনাটা চালাচ্ছিল। কিন্তু অস্ফুট চৈতন্যের মধ্যেও সত্যর মাথার মধ্যে ওদের কথাগুলো যেন হাতুড়ির ধাক্কায় ধাক্কায় ঢুকে পড়তে লেগেছিল। অথচ ওদের নিষেধ করবার ক্ষমতা হয় না। না পারে হাত নাড়তে, না পারে কথা বলতে।

আর ভাবিনী হাতমুখ নেড়ে হ্যাঁ, ভাবিনীই বক্তা, সদু শ্রোতা। দেশে থাকতে ভাবিনীর সাধ্য ছিল না যে পাড়ার বয়স্কদের সঙ্গে কথা বলে। কিন্তু এখানে আলাদা, এখানে ভাবিনী ‘একজন’। তাই হাতমুখ নেড়ে কথা বলতে বাধে না, আর বলো না বামুন-ঠাকুরঝি, দেখে আমরা থ’ হয়ে গেছি।

ওই একটা বেজাতক বেজন্মা আইবুড়ো থুবড়ি মেয়েকে নিয়ে নাচানাচি, কী নাচানাচি!

জন্মের কথা কী বললে কায়েত বৌ?

শিউরে উঠেছিল সদু।

অথবা শিউরে উঠেছিল সদুর চিরদিনের সংস্কারে পুষ্ট রক্তকণিকা।

সদু যে ওই মেয়েটার হাতে খাচ্ছেদাচ্ছে গো!

সে কথাই বলে ফেলে সদু

কে না খাচ্ছে?

ভাবিনী ঠোঁট উল্টেছিল, নারায়ণের ঘরের ভোগ রাধবার দরকার হলেও বোধ হয় গিন্নী ওই ভাইঝিটিকে এগিয়ে দেবেন

ভাইঝি!

সদু বলেছিল, রোস দিকি, আমায় আগে বুঝতে দাও সবটা। এই তো শুনছিলাম বিধবা, আবার তুমি বলছ আইবুড়ো, একবার জন্মের খোটা শোনালে, আবার বলছ ভাইঝি, সব কেমন গোলমেলে ঠেকছে যে!

অচৈতন্য সত্যবতীর কানে বিষের তীর বিধতে থাকে, ভাইঝি আমি বলছি না গো, উনিই ওই পরিচয় রটিয়ে রেখেছেন। যে ভাজ বারো বছরে বিধবা, তার বাইশ বছর বয়সের গর্ভের এই রত্ন! বোঝ! মা কুলে কলঙ্ক ঘটিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল, মামাশ্বশুর- মানে গিয়ে তোমাদের বৌয়ের বাবা, নাকি ঢাকে কাঠি দিয়ে দশজন মান্যিগণ্যি লোককে ডেকে সেই বার্তা বড় গলা করে শোনালেন। আবার ইনি এতকাল পরে সেই আঁস্তাকুণের জঞ্জালকে মাথায় করে এনে ঘরের মধ্যে দেৰীপিতিষ্ঠে করেছেন। কী বলব ভাই, তোমাদের বামুনের ঘরের রীতিনীতি দেখে আমরা হা। বলছিলে বিধবা? বিধবা নয় গো, থুবড়ি, আইবুড়িই। কে ওই জাতজন্মহীন ধ্বজাকে বে করবে যে বে হবে? মা মাগী লোকলজ্জায় আর মেয়ের কাছে ঘেন্না ঢাকতে বলে বেড়াত, পাঁচ বছরে বে, পাঁচ বছরেই বিধবা! ইনিও সেই কথাই চালিয়ে আসছেন। আবার শুনি নাকি বেহ্মবাড়িতে বে দেবে বলে বর খুঁজছে।

সদু কিছুক্ষণ গালে হাত দিয়ে বলে, তা দিতেই পারে। মেয়েদের ইস্কুলে পড়াচ্ছে যখন। বৌয়ের শরীরে অনেক গুণ ছিল, ওই বুকের পাটাতেই সব হরে গেল। অতিরিক্ত তেজ, অতিরিক্ত আস্পদ্দা! নইলে কোন মেয়েমানুষের এ সাহস হয়, নদ্দমার পাক তুলে নিয়ে এসে পুজি করে? শুনে আমি হাঁ হয়ে যাচ্ছি কায়েত বৌ! রেখেছিস রেখেছিস, তার হাতে ভাত জল খাচ্ছিস কোন্ আক্কেলে? নবাটাও তো।

ওনার কথা আর তুলো না ঠাকুরঝি। উনি একেবারে কামরূপ কামিখ্যের ভেড়া। নচেৎ আর এতখানিটা হয়? উনি সুদ্ধু হা সুহাস যো সুহাস! এদিকে তো মুনির মন টলে এমন রূপ! ওই কি ভাল থাকবে নাকি! দেখো কোন্ দিন কি করে বসে। মিথ্যে বলব না ভাই, ওই ভয়ে তোমাদের ভাইকে আমি সাধ্যপক্ষে এ বাড়িতে একা আসতে দিই নে। পুরুষ হচ্ছে মাছির জাত, ফুল থেকে উঠে পাঁচড়ায় গিয়ে বসে। ওই ছুড়ি

সহ্যের সীমা অতিক্রম করলে বুঝি বোবারও বোল ফোটে। তাই “অজ্ঞান অচৈতন্য” সত্যবতীর মুখ থেকে সহসা ক্রুদ্ধ গর্জন বেরিয়ে আসে। যেন মুখ চেপে ধরা কোন ক্রুদ্ধ জন্তুর আর্তনাদ!

এরা চমকে ওঠে।

কি হল বলে আঁতুড়ঘরের ঝিকে ডাক-পাড়াপাড়ি করতে থাকে এবং তার ঘণ্টা কয়েক পরেই সারাবাড়িতে অন্য একটা সোরগোল ওঠে।

প্রশ্ন আর বিস্ময়!

নেই?

কোথায় গেল?

শেষ কখন কে দেখেছে?

কে দেখেছে ঠিক কেউ মনে করতে পারে না। দেখেছিল তো সর্বক্ষণ সবাই, হঠাৎ জলজ্যান্ত একটা মানুষ হাওয়া হয়ে যাবে?

অথচ তাই গেল।

সুহাসকে পাওয়া গেল না।

.

সত্য চোখ বুজলেই যেন সেই কথাগুলো শুনতে পায়। সদু আর ভাবিনীর সেই নিতান্ত সহজ অসতর্ক উক্তি।

তার পর পট পরিবর্তন হয়।

আর এক দৃশ্য চোখে ভাসে।

যা নিয়ে পরে বহু শ্লেষাত্মক কথা শুনতে হয়েছে সত্যকে। কিন্তু নাটকের সেই অঙ্কের উপর তো সত্যর কোনও হাত ছিল না। সেটা শুধু সত্যর চোখের সামনে ঘটেছিল।

আঁতুড়ঘরের দরজায় এসে দাঁড়িয়েছিলেন ভবতোষ মাস্টার।

দরজার একটা পাল্লা ধরে ভাঙ্গা গলায় আর্তনাদ করে উঠেছিলেন, বৌমা!

সত্য চমকে তাকিয়েছিল।

অবাক হয়ে চারিদিকে তাকিয়েছিল। এখানে উনি কেন! এ কি অঘটন? এমন উদভ্রান্ত ভাবই বা কেন ওঁর? কী বলছেন এসব?

বুঝতে সময় লেগেছিল।

লাগবারই কথা।

কে ভাবতে পেরেছিল এ বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নিতে আর জায়গা পেল না সুহাস, নিতে গেল ভবতোষ মাস্টারের বাড়ি! জীবনে যার বাড়িতে একবার মাত্র গিয়েছে, আর জীবনে যার সঙ্গে একবারও কথা বলে নি!

কিন্তু এবার গিয়ে কথা বলেছে।

অনেকগুলো কথা।

ভবতোষ তেমনি রুদ্ধকণ্ঠে আস্তে আস্তে উচ্চারণ করেন, বলে কিনা–আপনার বাড়িতে একটা ঝিয়েরও তো দরকার হয়। সেই ভাবেই থাকব আমি। সব কাজ করব। আপনি তো উদারধর্মী, আপনার তো আমার হাতে খেতে ঘেন্না করবে না! শোন দিকি কথা–তোমার ওই দেবকন্যার মত মেয়ে, তার হাতে খেতে ঘেন্না করবে!

সেদিন সত্যর বাক্যস্ফূর্তির শক্তি ছিল। সেদিন সত্য আস্তে আস্তে বলেছিল, আপনি তো একথা বলছেন, লোকের যে ঘেন্না করে!

ঘেন্না করে?

করে বৈকি! সত্যবতী বালিশ থেকে ঘাড়টা একটু তুলে ক্ষুব্ধ হেসে বলে, করবে না কেন? আপনি তো ওর সবই জানেন মাস্টার মশাই, বিশ্বসুদ্ধ লোকই ওকে ঘেন্না করবে।

করতে পারে, ভবতোষ আবেগৰুদ্ধ কণ্ঠে বলে উঠেছিলেন, আমি তা হলে তোমার এই বিশ্বসংসারে কেউ নই বৌমা!

সত্য এক লহমা অপলকে ওঁর মুখের দিকে তাকিয়ে বলেছিল, জানি। আর সে মুখপুড়ীও এক নিমেষে সে কথা জেনে ফেলেছিল। তাই আগুনের ঝাঁপটা থেকে বাঁচতে ছুটে গিয়েছে আপনার কাছেই শরণ নিতে।

কিন্তু এক্ষেত্রে আমি কী করব? ভবতোষ ব্যাকুল বিব্ৰত বিভ্রান্ত, আমার বাসায় মেয়েছেলে বলতে কেউ নেই।

নাই বা থাকল–  সত্য মৃদু হেসেছিল, ও সব চালিয়ে নিতে পারবে।

চালিয়ে নিতে পারবে?

ভবতোষ হতাশ স্বরে বলেন, তুমিও কি তোমার ভাইঝির মত পাগল হয়ে গেলে বৌমা? তাকেও তো কিছুতেই বোঝ মানাতে পারলাম না। গাড়ি দাঁড় করিয়ে রেখে শত সাধ্যসাধনা করলাম, সেই এক কথা, আপনার সব কাজ করে দেব, তার বদলে এক কোণায় একটু থাকতে দিন আর আপনার বইগুলো পড়তে দিন। আর কিছু চাই না আমি। শোন পাগলামি!

সত্য হঠাৎ গাঢ়স্বরে বলে, পাগলামি কেন বলছেন মাস্টার মশাই, এর থেকে ভাল আশ্রয় ও আর কোথায় পাবে? ওর জন্মের বিত্তান্ত শুনেও কে ওকে ছেদ্দা করবে, স্নেহমমতা করবে?

ভবতোষ আরও ব্যাকুল হয়ে বলেন, সে সব তো বুঝলাম, ওই জন্যেই পাত্র যোগাড় করে উঠতেও পারছি না। অথচ তুমি বলেছ সব কথা খুলে বলতে। কিন্তু একটা কথা তুমি বুঝছ না

ভবতোষ থামেন।

সত্য শান্তস্বরে বলে, বলুন?

বলছি– ভবতোষ কেসে বললেন, আমার জন্যে ভাবি না, আমার তিনকুলে কে বা আছে, ওর জন্যেই বলছি-যতই আমি তিনকেলে বুড়ো হই, লোকনিন্দের তো কসুর হবে না তাতে! আমার বাসায় কী পরিচয়ে রাখবো ওকে?

সত্য একটু হেসে বলে, দাসী পরিচয়েই রাখুন।

তুমি বোধ করি আমায় নিয়ে মজা দেখছ বৌমা! ভবতোষের আক্ষেপটা যেন আছড়ে পড়ে।

আঁতুড়ের দরজায় এই দীর্ঘস্থায়ী দৃশ্য।

সদু গালে হাত দিয়ে দালানে বসে, আর নবকুমার খাঁচার বাঘের মত ছটফট করছে। আর ধৈর্য থাকে না। নবকুমার এগিয়ে এসে বলে, মাস্টার মশাই, বাইরে কি আপনার গাড়ি অপেক্ষা করছে? না একখানা ডাকতে পাঠাব?

ভবতোষ বিমূঢ় দৃষ্টি মেলে তার একদা ভক্ত শিষ্যের মুখের দিকে তাকান, এবং সেই মুহূর্তে শুনতে পান সত্যবতীর ক্ষীণ কিন্তু স্পষ্ট স্বর আদেশের সুরে উচ্চারিত হল, থাক, গাড়ির জন্যে কারুর ব্যস্ত থাকতে হবে না মাস্টার মশাইয়ের সঙ্গে আমার এখনো দুটো দরকারী কথা আছে, আর সকলের একটু ওদিকে গেলে ভাল হয়।

আর সকলের ওদিকে গেলে ভাল হয়!

এর চাইতে সত্য কেন একখানা থান ইট মারল না নবকুমারের মাথায়? কিন্তু উপায় নেই। ডাক্তার বলে গেছে রুগীর বুক হালকা, রাগ দুঃখ কোন কিছুতেই যেন বেশী উত্তেজিত না হয়।

কাজে কাজেই মনের রাগ মনে চাপা।

হ্যাঁ, ডাক্তার ডাকতে হয়েছিল, আঁতুড়ঘরে ডাক্তার আসা সদু নবকুমার সকলের জ্ঞানেই এই প্রথম। তা উপায় কি? সদুই জোর করে আনিয়েছিল। বলেছিল, যে কালের যে শাস্ত্রর। তুই আর ইতস্তত করিস নে নবু। কলকেতায় যখন বাসা করে আছিস, কলকেতার মতই হোক। বারুইপুরের সেই গর্তয় গিয়ে পড়লে তো মরেই যেত, এ যদি–

তা সেই ডাক্তারের নির্দেশেই স্নান মাথাঘষা বন্ধ, কাজেই একুশে ষষ্ঠীও মুলতুবী। একুশ দিনের আঁতুড় একত্রিশ দিনে গিয়ে ঠেকেছে।

তা ছাড়া মুশকিলই কি কম?

বাড়ির লোকের সেবা-যত্নটা তো পাচ্ছে না! সেবা বলতে সেই হাঁড়ি দাই মাতঙ্গিনী। সেরে উঠবে কি করে?

অথচ আঁতুড়ের দরজাতেই এই সব কাণ্ড।

চলে যেতে হবে! ও! বলে দুমদুম্ করে চলে যায় নবকুমার।

ভবতোষ অপ্রতিভের একশেষ হয়ে বলেন, আমি যাই বৌমা!

না।

সত্য দৃঢ়স্বরে বলে, কথা তো শেষ হয় নি। আপনি বললেন, আমি আপনাকে নিয়ে মজা দেখছি, এই কি একটা কথা?

কি করব বৌমা, দিশেহারা হয়ে যাচ্ছি বলেই–

কেন হবেন? সত্য স্থির স্বরে বলে, দিশে তো সামনেই রয়েছে। আপনি সেদিন ঠাট্টা করে বলেছিলেন, সুন্দরী নাতনীর জন্যে যদি আপনার মাথায় টোপর দিতে হয় তো দেবেন। সেই ঠাট্টাটাই সত্যি করে তুলুন।

বৌমা!

অস্থির হবেন না মাস্টারমশাই, আমি বলছি এই ভাল হবে।

এই ভাল হবে!

হ্যাঁ। আপনি আর দ্বিধা করবেন না। বিনা পরিচয়ে একটা মেয়েছেলের থাকায় নিন্দে, আপনিই পরিচয় দিয়ে দিন ওকে। পরিচয়ের মত পরিচয়।

তুমি কি আমাকে আমার চিরদিনের অপরাধের শাস্তি দিতে চাও বৌমা?

ভবতোষের কণ্ঠে দৈন্যের সঙ্গে একটা জ্বালা ফুটে ওঠে বুঝি।

কিন্তু সত্যবতীর কণ্ঠে ফুটে ওঠে স্নিগ্ধ স্নেহের করুণা।

ছি ছি, ওকথা বলছেন কেন মাস্টার মশাই! বরং বলুন এ আমার এতকালের শিক্ষা-দীক্ষার গুরুদক্ষিণা। লেখাপড়া জানা বুদ্ধিমতী মেয়েরা আপনার প্রিয়, এ আমার জানা, সুহাস আপনার অপছন্দের হবে না।

ভবতোষ ক্ষুব্ধ হাস্যে বলেন, পছন্দ জিনিসটা শুধু বেটাছেলের একচেটে নয় বৌমা! সে এই জেঠার বয়সী বুড়োটাকে

তাতে কি?

সত্য সকৌতুক হাস্যে বলে, মহাদেবও তো বুড়ো, তবু তো মেয়েরা তাঁকেই বর চেয়ে বত্ত করে। সুহাস যদি সেকথা না জানত তো আপনার কাছেই ছুটে যেত না।

আস্তে আস্তে কণ্ঠস্বর গাঢ় হয়ে আসে সত্যবতীর, সুহাস আপনাকে ভক্তি করে, জেনে বুঝেই সে আপনার আশ্রয় নিতে গেছে। আপনিই শুধু বুঝতে পারছেন না। মেয়েমানুষ মুখ ফুটে আর কত বলবে?

কিন্তু আমি তো ভেবে কূল পাচ্ছি না বৌমা, হঠাৎ এমন কি নতুন ঘটনা ঘটল যে সে অমন করে ছুটে গিয়ে–

বলব, সব বলব। আজ আর পারছি না।

সত্য একটু ক্লান্ত হাসি হাসে।

তবু ভবতোষ কথা বলেন।

কাতরকণ্ঠে বলেন, এই কি তোমার শেষ রায় বৌমা? এই শাস্তিই মাথায় তুলে নিতে হবে আমাকে?

সত্য আবার একটু কৌতুকের হাসি হাসে, এবার কিন্তু আমি রেগে যাব মাস্টার মশাই! আমার জামাই হওয়া বুঝি আপনার শাস্তি?

ভবতোষ একটুক্ষণ চুপ করে তাকিয়ে থেকে বলেন, তবু আমি হয়তো কোনদিনই আমাকে ক্ষমা করতে পারব না বৌমা! মনে হবে

ভুল ভেবে মনে কষ্ট করবেন না। এখন কি মনে হচ্ছে জানেন? মনে হচ্ছে– শেষের কথাটা যেন নিজেকেই নিজে বল সত্য, মনে হচ্ছে, সুহাসকে বুঝি এমন মনের মত গড়তে চেষ্টা করেছি আপনার কথা ভেবেই। শুধু সে কথা নিজেই টের পাই নি এতদিন।

সকল অধ্যায়

১. ০১. সত্যবতীর গল্প
২. ০২. গঞ্জে মেলায় যেমন
৩. ০৩. দীনতারিণী নিরামিষ ঘরে
৪. ০৪. সারাদিন গুমোটের পর
৫. ০৫. রোদে পিঠটা চিনচিন করছে
৬. ০৬. শুধু হাঁটু পর্যন্ত
৭. ০৭. আঁচল ডুবিয়ে নাড়া
৮. ০৮. দুঃসংবাদের সঙ্গে সঙ্গে
৯. ০৯. আসর-সাজানো বরাসনে
১০. ১০. যাও বলে মানুষকে তাড়ানো যায়
১১. ১১. অপরাধটা হচ্ছে লক্ষ্মীর ঘরে
১২. ১২. সত্যর মনের কাছে এত বড় ভয়ের পরিচয়
১৩. ১৩. যজ্ঞির জন্যে ছানাবড়া ভাজা হচ্ছে
১৪. ১৪. পালকি থেকে মুখ বাড়িয়ে
১৫. ১৫. সকালবেলা নেড়ুকে হাতের লেখা
১৬. ১৬. বসেছে কাব্যপাঠের আসর
১৭. ১৭. জগতের সমস্ত বিস্ময়
১৮. ১৮. সপরিবার তুষ্টু গয়লা
১৯. ১৯. লক্ষ্মীকান্ত বাড়ুয্যে মারা গেলেন
২০. ২০. এলোকেশী দাওয়ায় পাটি পেতে
২১. ২১. ত্রিবেণীর ঘাটে এসেছিলেন রামকালী
২২. ২২. রামকালীর পালকি
২৩. ২৩. সত্যর বেহায়াপনার কথা
২৪. ২৪. নীলাম্বর বাঁড়ুয্যে নিত্যনিয়মে
২৫. ২৫. শীত গ্রীষ্ম বর্ষা বসন্তের অচ্ছেদ্য শৃঙ্খলা
২৬. ২৬. নবকুমার চলে গিয়ে পর্যন্ত
২৭. ২৭. ভাগ্যবানের বোঝা ভগবান বয়
২৮. ২৮. সংসারসুদ্ধ সকলেই আশা করেছিল
২৯. ২৯. জ্বর জ্বর
৩০. ৩০. এ তল্লাটে এ ইতিহাস এই প্রথম
৩১. ৩১. সাহেব ডাক্তারের হাতযশে
৩২. ৩২. এ এক আশ্চর্য সকাল
৩৩. ৩৩. কালের খাতায় কয়েকখানা পাতা
৩৪. ৩৪. নিতাইয়ের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ নেই
৩৫. ৩৫. হাত ধরার অপরাধে জাত যাবে না
৩৬. ৩৬. কথায় আছে মাটি বোবা
৩৭. ৩৭. দেশের বাড়িতে আর এক চেহারা
৩৮. ৩৮. হারিয়ে যাওয়া সত্য
৩৯. ৩৯. ভরা দুপুর
৪০. ৪০. সরল পিসির কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি
৪১. ৪১. অনুতাপ-দগ্ধ সুহাসের দৃঢ় সংকল্প
৪২. ৪২. সময়ের বাড়া কারিগর নেই
৪৩. ৪৩. পরকীয়া ভাব
৪৪. ৪৪. জগন্নাথের রথের চাকা
৪৫. ৪৫. কাটে দিন, কাটে রাত্রি
৪৬. ৪৬. নিতাইয়ের বাড়ি থেকে
৪৭. ৪৭. ছেলের বিয়ের জন্য
৪৮. ৪৮. হিহি হিহি হিহি হিহি

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন