২৭. ভাগ্যবানের বোঝা ভগবান বয়

আশাপূর্ণা দেবী

কথায় বলে, ভাগ্যবানের বোঝা ভগবান বয়! রাসুর বৌ সারদা অবশ্য নিজেকে খুব একটা ভাগ্যবতী মনে করে না, বরং যখন তখন আমার যেমন ভাগ্য বলে আক্ষেপ করতে ছাড়ে না। কিন্তু এক হিসেবে এযাবৎ ভগবান তার বোঝা বয়ে এসেছেন। বয়ে এসেছেন গ্রহ-নক্ষত্রের একটি সুকৌশল সমাবেশ ঘটিয়ে।

নইলে পাটমহলের লক্ষ্মীকান্ত বাঁড়ুয্যের নাতনীর তো এখনো পাটমহলেই পড়ে থাকবার কথা নয়। কিন্তু তাই পড়ে আছে সে, সারদাকে নিঃসপত্নী রাজভোগের সুযোগ দিয়ে।

লক্ষ্মীকান্ত নেই, কিন্তু তার পুত্র শ্যামকান্ত বাপের ঠাট-বাট বজায় রেখেছেন। সর্ববিধ আচার-আচরণ মেনে চলেন তিনি। নড়তে-চড়তে পাঁজিপুঁথি দেখেন এবং গ্রহ ফাঁড়া ঠিকুজিকোষ্ঠী ইত্যাদি গোলমেলে ব্যাপারে প্রত্যেক সময় কাশী-প্রত্যাগত জ্যোতিষার্ণব ঠাকুরের উপদেশ গ্রহণ করে থাকেন।

জ্যোতিষার্ণই পটলীর কোষ্ঠী দেখে তার পতিগৃহে যাত্রা সম্পর্কে একটি বিশেষ বিধিনিষেধ আরোপ করেছিলেন।

ঘোষণা করেছিলেন, আঠারো বছরে পদার্পণের আগে পটলীর স্বামী-সন্দর্শনে বিপদ আছে। উক্ত কলাবধি তার পতিসুখস্থানে রাহুর কটাক্ষ।

জোতিযার্ণবের ঘোষণায় অবশ্য আশ্চর্য কেউ হয় নি, বরং যেন এ ধরনের একটা কিছু না হলেই আশ্চর্য হত। কারণ পটলীর পতিসুখস্থানে যে রাহুর সৃষ্টি, সে আর জ্যোতিষীকে বলতে হবে কেন? সে তো তার বিয়ের দিনই হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া গেছে।

নেহাৎ নাকি ওর বাপের পূর্বজন্মের পুণ্যি ছিল, তাই সেই বিয়ের বর রামকালী কবরেজের দৃষ্টিপথে পড়ে গিয়েছিল। নয়তো পটলীকে তো বাসররাতেই শাখানোয়া খুলতে হত। আর নয়তো দাপড়া আধাবিধবা হয়ে জীবনটা কাটাতে হত।

রামকালী কবরেজ ভগবান হয়ে এসে উদ্ধার করেছেন। কিন্তু অদৃষ্টের ফল কে খণ্ডাবে বল! তাই গ্রহ-নক্ষত্ররা আঙুল তুলে নিষেধ করে রেখেছে, পটলী, তুই স্বামীর দিকে চোখ তুলবি না। অন্তত আঠারো বছর বয়স হবার আগে নয়।

লক্ষ্মীকান্তর শ্রাদ্ধের সময় সামাজিক আচার অনুযায়ী জামাইকে শ্যামাকান্ত নিমন্ত্রণ করেছিলেন। তবে বাড়িতে কড়া শাসন করে রেখেছিলেন, মেয়ে-জামাইয়ে দেখাশুনো না হয়। কিন্তু ভাগ্যচক্রে জামাইয়ের আসাই হল না। সেইদিনই নাকি জামাইয়ের রক্ত-আমাশা দেখা দিল। কে জানে সের দুই কাঁচা দুধ খাবার ফল কিনা সেটা।

যাক সে সব তো অতীত কথা।

শ্যামাকান্ত মেয়ের শ্বশুরকে তার কোষ্ঠীঘটিত বিপর্যয় জানিয়েছিলেন। কাজেই এতদিন ওপক্ষ থেকে বৌ নিয়ে যাবার প্রস্তাব ওঠে নি। দীনতারিণীর অত বড় সমারোহের শ্রাদ্ধেও শ্বশুরবাড়ি আসা হল না তার।

এক ঘাট করতে যে যেখানে জ্ঞাতিগোত্র ছিল সবাই এসে জড় হল, সত্য পুণ্যি কুঞ্জর পাঁচ পাঁচটা শ্বশুর-ঘরন্তী মেয়ে, শিবজায়ার দৌতুরগুষ্টি, বাকী কেউ থাকে নি বাকী ছিল শুধু পটলী যে নাকি সর্বপ্রধানের এক প্রধান।

কিন্তু এবার সময় এসেছে।

আঠারো বছরে পদার্পণ করেছে পটলী। কুঞ্জগৃহিণী অভয়া ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন নতুন বৌকে আনতে। মুখে বলেছেন অবশ্য, আর ফেলে রাখলে কি ভাল দেখায়, কিন্তু ভিতরের উদ্দেশ্য আরো গভীর, উদ্দেশ্য বড় বৌয়ের তেজ অহঙ্কার ভাঙা। সারদার যত তেজ, তত অহঙ্কার। দিন দিন যেন বাড়ছে। সংসারে ভুবনেশ্বরীর শূন্য স্থানটা কেমন করে কে জানে আস্তে আস্তে সারদার দখলে এসে গেছে। ভুবনেশ্বরীর মতই সারদা ভিন্ন যেন সব দিক অচল। কিন্তু ভুবনেশ্বরীর নম্র নীরবতা সারদার মধ্যে নেই, সারদা যতটা চৌকস, ততটাই প্রখর। শাশুড়ীকেও সে ডিঙিয়ে যেতে চায়।

অথচ দীনতারিণীর মৃত্যুতে গিন্নীর যে পদটা অভয়ার পাবার কথা, তা যেন অভয়া পেল না। অভয়ারা সেই হেঁসেলে চাকরির ঊর্ধ্বে নতুন কিছু হল না, বরং সেটাই আরো জটিল হয়ে উঠেছে। কাশীশ্বরী তো নেই-ই, হঠাৎ পড়ে গিয়ে হাত ভেঙে মোক্ষদাও কেমন কমজোরি হয়ে গেছেন। কাজেই অভয়াকে সদ্য-স্নানান্তে ওঁদের ঘরেও কিছু গুছিয়ে দিয়ে আসতে হয়। বাটনাটা জলটা।

মোক্ষদা হাতী হাবড়ে পড়ার নীতি’তেই সেই চির-অস্পৃশ্যার জল স্পর্শ করেন।

অতএব সমগ্ৰ সংসারটা অনেকটা বেলা পর্যন্ত সারদার হাতেই থাকে। সঙ্গে থাকেন অবশ্য শিবজায়া, থাকেন আরও জ্ঞাতি মহিলারা, কিন্তু আশ্চর্য, সবাই যেন আমে দুধে মিশে গেছে। অভয়া-রূপিণী আঁটির ঠাই হয়েছে ছাইগাদায়। অন্তত অভয়ার তাই ধারণা।

বৌয়ের এই প্রতাপ, এই দপদপা আর সহ্য করতে পারছেন না অভয়া। ঢিট করতে ইচ্ছে করছে বৌকে। তা অস্ত্র তাঁর হাতে এসে গেছে এবার। শ্যামাকান্ত জানিয়েছেন, আঠারো বছরে পা দিয়েছে পটলী।

শুনে বুকের জোর বাড়ল অভয়ার। ভাবলেন বড়বৌমার তেজ আসপদ্দা কমুক একটু। সতীন এনে বুকে দিলে মেয়েমানুষ যেমন করে ঢিট হয়, তেমন আর কিসে?

.

ওদিকে পাটমহলে মস্ত তোড়জোড়।

ফাঁড়া কেটেছে এতদিন পরে, ঘরবসত হচ্ছে মেয়ের, ঘরভরা জিনিস দেবার বাসনা পটলীর মা বেহুলার। জিনিস গোছাচ্ছে, আর উঠতে বসতে মেয়েকে উপদেশ দিচ্ছে কিসে মেয়ে শ্বশুরবাড়ি গিয়ে “একজন” হতে পারে। মেয়েটা যে বড় ন্যাকা-হাবা, তাই ভাবনা বেহুলার।

তবে অন্যদিকে একটা মস্ত ভরসা আছে পটলীর মার। অলক্ষ্যে প্রতি মূহুর্তে মেয়ের দিকে তাকিয়ে দ্যাখে আর সেই ভরসায় আলো মুখে ফুটে ওঠে। পটলীর সতীনের বয়সটা মনে মনে হিসেব করে সে আলো আরও জোরালো হয়। পটলীর সঙ্গে কার তুলনা?

একে তো ভরন্ত বয়েস, তায় আবার এতকাল অবধি বাপের ঘরে নিশ্চিন্দির ভাত খেয়ে খেয়ে গড়ন হয়েছে পুরন্ত। আর রূপ? সে তো সেই শৈশভ থেকেই একরকম ডাকসাইটে।

ঘরে পরে সবাই বরং ওই রূপের জন্যেই খোটা দেয় তাকে। বলে, অতি বড় সুন্দরী না পায় বর, শাস্তরের এ কথাটা নতুন করে প্রমাণ করছিস পটলী তুই। এর থেকে আমাদের কালো খেদি মেয়েরা অনেক ভাল। তোর বয়সী সবাই তিন-চার ছেলের মা হল।

এখন আবার ভয়ও দেখাচ্ছে অনেকে।

বলছে, সতীন এখন স্থলকূল দিলে হয়! এযাবৎ একা পাটেশ্বরী হয়ে রয়েছে-পটলীর মা, তুমি মেয়ের গলায় কোমরে ভালমতন রক্ষাকবচ বেঁধে দিও। কে জানে কার মনে কি আছে! মেয়েকে বারণ করে দিও যেন সতীনের হাতের পান জল না খায়!

.

আশা আর আশঙ্কা, স্বপ্ন আর আতঙ্ক, এই নিয়ে দিন কাটাতে কাটাতে অবশেষে একদিন পটলীর জীবনের সেই পরম দিনটি এসে পড়ে। শ্বশুরবাড়ি যাত্রা করে পটলী।

বাড়িটার খানিক খানিক ঝাঁপসা ঝাঁপসা মনে আছে। বড় যে উঠোনটায় বৌছত্তরের উপর গিয়ে দাঁড়িয়েছিল, মস্ত যে দালানটায় তাকে তুলে নিয়ে গিয়ে বসিয়েছিল, ঘাটের যে ধারটায় স্নান করিয়েছিল পটলীকে, যে ঘরে আটদিন বাস করেছিল সে, এইরকম একটু একটু–আর বিশেষ কিছু না।

অতগুলো মেয়েমানুষের মধ্যে কে যে তার সতীন, সে কথা বুঝতেই পারে নি পটলী। তা ছাড়া বোঝবার চেষ্টাই বা করেছে কে? কেঁদে কেঁদে যার চোখ ফুলে করমচা!

শুধু তো শ্বশুরবাড়ি আসার কান্না নয়, নিজেকে ভয়ঙ্কর একটা অপরাধী ভেবে আরও কান্নার যোগ হয়েছিল তার সঙ্গে। সত্যি, পটলীর মত মহা-অপয়া ত্রিজগতে আর কে আছে?

বিয়ের বর বিয়ে করতে এসে রাস্তায় মরে, এমন কথা কে কবে শুনেছে? তার পর আবার এ বাড়ি? বৌভাতের যজ্ঞির দিন বাড়ি যখন রমরম করছে, তখন কিনা বাড়ির একটা জলজ্যান্ত বৌ হারিয়ে গেল! শুনে হা হয়ে গিয়েছিল পটলী।

পুরুষমানুষ রাস্তায়-ঘাটে বেরিয়ে সাপের পেটে বাঘের পেটে কি চোর-ডাকাতের হাতে পড়ে হারিয়ে যেতে পারে, কিন্তু মেয়েমানুষ? বিশেষ করে বৌ-মানুষ? ঘরের মধ্যে থেকে হারিয়ে যাবে কি? ভূতে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া ব্যাপার ছাড়া আর কিছু ব্যাখ্যা করা চলে না এর।

সেই ব্যাখ্যাতেই নিশ্চিন্ত হয়ে সকল কারণের মূল নিজের উপর বিকারে আর ভয়ে যখন খালি কেঁদে আকুল হয়ে যাচ্ছিল, তখন সত্য এসে জ্ঞান দিয়েছিল তাকে।

হ্যাঁ, ওই আর একটা বস্তু মনে আছে পটলীর।

সত্য!

আর্শির মতন চকচকে সেই বড় বড় দুটো চোখ, আর তার উপরকার ঘনকালো জোড়া ভুরু, এখনও যেন স্পষ্ট মনে পড়ে যায় পটলীর।

পটলীর কান্নার কারণ শুনে সেই ভুরু কুঁচকে বলেছিল সত্য, নিজেকে অপয়া বলে কেঁদে মরছ কেন? ভগবান যার ভাগ্যে যা লিখে রেখেছে তার তাই হবে। নিজেকে সমস্ত ঘটন-অঘটনের হেত ভাববার হেতু? তুমি যদি না জন্মাতে, এই পৃথিবীর কলকব্জা বন্ধ থাকত?

অবাক হয়ে গিয়েছিল পটলী তার সেই প্রায় সমবয়সী খুড়তুতো ননদের কথা শুনে। তার জীবনে এ হেন কথা সে কখনো শোনে নি। তাও আবার এতটুকু মেয়ের মুখে!

অথচ এই কদিন পরে অনবরত সব গুরুজনের মুখে শুনছে পটলী, পটলীই নাকি সকল অঘটনের কারণ।

পটলীর দোষেই নাকি যত কিছু খারাপ।

সেই ননদ এখন নিশ্চয় শ্বশুরবাড়ি। কোন মেয়েটা আর পটলীর মত ফাঁড়া নিয়ে বাপের বাড়ি বসে থাকে?

.

তোড়জোড় এ বাড়িতেও চলছিল।

অভয়া যেন একটু বেশী-বেশীই করছেন।

করছেন ভালবেসে যতটা না হোক, লোক জানাতে। সারদা এবং সারদার সুয়োরা যাতে হৃদয়ঙ্গম করতে পারে, যে আসছে সে কারো করুণার ভিখিরী হয়ে নয়। আসছে রীতিমত অধিকারের দাবী নিয়ে।

অবিশ্যি ঘরটা সম্পর্কে স্পষ্ট করে কিছু উচ্চারণ করতে পারেন নি, কিন্তু ইশারায় ইঙ্গিতে ব্যক্ত করেছেন, এখন থেকে সারদার উচিত ছেলেদের নিয়ে এদিককার ঘরে শোওয়া। ছেলে ডাগর হয়ে উঠেছে, আর এখন ঘর আগলানো কেন?

তবে সারদা এসব ইশারা-ইঙ্গিত গায়ে মাখে না। বড় ছেলে ডাগর হয়ে ওঠা অবধি তো তাকে তার কাকাদের কাছে ভর্তি করে দিয়েছে সারদা। নিজের এলাকা ঠিক রেখেছে।

বড় ছেলে ‘বনু’ বা বনবিহারী তো ছোটকাকা নেড়ুর প্রাণপুতুল ছিল। নেড়ু হারিয়ে যাওয়া অবধি অন্য কাকাঁদের। প্রাণপুতুল অবশ্য সকলেরই, কিন্তু সর্বেসর্বা প্রথম নাতিটিকে অভয়া যেন তেমন দেখতে পারেন না। ছেলেটা শুধু সারদার পেটের বলেই নয়, বড় বেশী মা-ঘেঁষা বলেও। তাই যখন-তখনই তাকে খিঁচিয়ে বলতেন, রাতদিন ছোটকাকা ছোটকাকা! ছোটকাকার যখন বিয়ে হয়ে যাবে?

মেজকাকা থাকতে ছোটকাকার বিয়ে কেন হবে, অথবা বিয়ে হলে ভাইপোর সঙ্গে সংঘর্ষ বাধবার কারণটা কি, এ প্রশ্ন করত না ছেলেটা, শুধু সবেগে বলে উঠত, ছোটকাকাকে বিয়ে করতে দেবই না।

অভয়া আরও খিঁচিয়ে বলেন, তা দিবি কেন? কারুর আর এসে কাজ নেই, ভাগ নিয়ে কাজ নেই। একা তোর মা-ই সব্বস্ব দখল করে বসে থাকুক।

তা তার সেই ছোটকাকা নিরুদ্দেশই হয়ে গেল, বিয়ে আর হল না।

অভয়া ভাবেন, এ ঐ অপয়া ছেলেটার বাক্যির ফল।

আর বাক্যগুলো মার শিক্ষার ফল।

সারদা হাতের বাইরে বলে অভয়া হাতের মুঠোয় পুরতে পারেন এমন একটি হাতের পুতুলের বাসনা করছেন। তাকে নিয়ে অভয়া সাজাবেন খাওয়াবেন চোখের ইশারায় ওঠাবেন বসাবেন।

মেজবৌটা এলেও হত!

অথচ অভয়ার মেজছেলের বিয়ের কথা মুখেও আনছেন না রামকালী। বরং একদিন বড় ভাইয়ের মুখের ওপরই স্পষ্ট বলেছিলেন, ওই অপদার্থটার বিয়ে দিয়ে কি হবে?

অপদার্থ বলে যে বেটাছেলের বিয়ে হবে না, এমন ছিষ্টিছাড়া কথা ত্রিসংসারে কে কবে শুনেছে? কিন্তু কুঞ্জ চিরদিনই ছোট ভাইয়ের ভয়ে কাঁটা। সমালোচনা যা করেন সে আড়ালে। তাই যা বলেছেন আড়ালেই বলেছেন। নিজে সাহস করে বিয়ের ব্যবস্থা করতে যান নি।

যাক, এতদিনে অভয়ার একটা নিজস্ব বস্তু পাবার আশা হচ্ছে।

কিন্তু একেবারে নিঃসংশয় সুখ জগতে কোথা?

নতুন বৌয়ের বয়সের কথা ভেবে বুকের মধ্যে তেমন স্বস্তি নেই।

বুড়ো শালিখ কি পোষ মানবে?

পাকা বাঁশ কি নুইবে?

.

কিন্তু পটলী কি পাকা বাঁশ?

কে জানে পটলী কি!

মেয়েমানুষ যতক্ষণ না নিজের স্বার্থ-কেন্দ্রে এসে দাঁড়ায়, ততক্ষণ তাকে কে চিনতে পারে? ভাল মেয়ে লক্ষ্মী মেয়ে এসব বিশেষণ কত ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হয়ে যায়।

পটলী কি তা না জানলেও পটলীর ফাড়া কাটার খবর পাওয়া পর্যন্ত সারদার বুকে বাঁশ পড়েছে। কে যেন সেই বাঁশ দিয়ে অহরহ ডলছে তাকে।

আর রাসু?

রাসুরও যন্ত্রণার শেষ নেই।

মনের মধ্যে দারুণ এক ভয়, অথচ পুলককম্পিত আবেগ। না জানি সেই সাত বছরে মেয়েটি আঠারো বছরের হয়ে কেমনটি হয়েছে। এখান থেকে পত্তর নিয়ে যে গিয়েছিল, সেই রাখুর মা তো এসে বলেছেন, বৌ তো নয়, যেন পদ্মফুল!

শুনে অবধি এক অবর্ণনীয় সুখকর যন্ত্রণা রাসুর মনকে কুরে কুরে খাচ্ছে।

সেই পদ্মফুল কি রাসুর পূজোয় লাগতে দেবে সারদা? নাকি বহুদিন আগের সেই এক দুর্বল মুহর্তের শপথটা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বঞ্চিত করে রাখবে রাসুকে?

সারদা কোনদিনই পদ্মফুল নয়।

পদ্ম গোলাপ চামেলী মল্লিকা কিছুই নয়, ফুলের সঙ্গেই যদি তুলনা করতে হয় তো বলতে হয় অপরাজিতার গা-ঘেঁষা।

কিন্তু শ্যামলা রং হলেও তীক্ষ্ণ মুখশ্রী আর অনবদ্য গঠন-সৌকুমার্যের জোরে এ বাড়ির বড়বৌ হয়ে ঢোকবার সৌভাগ্য তার হয়েছিল।

আর এখন প্রবল ব্যক্তিত্বের জোরে বাড়ির একেবারে শীর্ষস্থানীয় হয়ে বসে আছে সে। কিন্তু রাসু এখনো জীবনরসের সন্ধানী নবীন যুবক। প্রখরা আর মুখরা সারদাকে সে আজকাল ভয় করে।

অবশ্য স্বামীসেবার নিখুত নৈপুণ্যে বরকে আয়ত্তে রেখে দিয়েছে সারদা নিখুত ভাবেই। এখনো গরমকালের রাতে পাখা ভিজিয়ে বাতাস করে স্বামীকে, শীতের রাতে পিদ্দিমে হাত তাতিয়ে ঠাণ্ডা সিরসিরে হাত-পা গরম করে দেয় তার।

আর সংসারের কাজে রান্নাঘরের গরমে যতই গলদঘর্ম হোক, শৌখিন বরটির কাছে রাতে শুতে আসার সময় গা-হাত ধুয়ে কোচানো মিহি শাড়িখানি পরতে ছাড়ে না, মাথায় গন্ধ তেলটি দিয়ে একটু চকচকে হয়ে আসতে ভোলে না।

কিন্তু প্রস্ফুটিত পদ্মের সঙ্গে কি গন্ধ তেল পাল্লা দিতে পারবে?

.

বৌ এসে দাঁড়াতেই একা ধন্যি ধন্যি রব উঠল। উঠল দু কারণেই। একে তো বৌয়ের রূপ, তার উপর ঘরবসতের সামগ্রীর বহর।

রামকালী কবরেজের সংসারে প্রয়োজনের অতিরিক্ত প্রাচুর্য, ঘর-সংসারের জিনিসপত্র তিনি অপ্রয়োজনেই কতকগুলো করে করিয়ে রেখে দেন, কোন একটা উপলক্ষ হলেই। খুঁজলে বাড়িতে ছোটয়-বড়য় খাবারো জাতা মিলবে, খানষোল শিল। জলের ঘড়া না হোক গোটা চল্লিশ-পঞ্চাশ। তবু মেয়েদের মন!

সেই শিল-নোড়া আঁতা-কুলো ঘড়া-ঘটি ইত্যাদি করে সংসার-নির্বাহের তুচ্ছ উপকরণগুলোই তাদের মন আহ্লাদে ভরে তোলে।

সকলেই একবাক্যে স্বীকার করে, কুটুমের নজর আছে। ঠানদি নন্দরাণী হেসে বলে, না দেওয়ার মধ্যে দেখছি ঢেঁকি। একটা ঢেঁকি দিলেই রাসুর শ্বশুরের ষোলকলা দেওয়া হত। ঘরবসতে বৌমার বেহাই ওইটেই বা বাকী রাখল কেন?

না, ঢেঁকিটা পটলীর বাবা দেয় নি।

কিন্তু পটলীকে দিয়েছে!

আর পটলীই ঢেঁকির মুষল হয়ে অন্তত একজনের বুকের গহ্বরে পাড় দিতে শুরু করেছে।

তবু সেই টেকির পাড়ের মধ্য থেকেই শক্তি সঞ্চয় করে নেয় সারদা। সংকল্প করে এ সতীনকে সে স্বামীর ধারেকাছে আসতে দেবে না। সেই সিংহবাহিনীর শপথটা রীতিমত কাজে লাগাবে।

তা ছাড়া আর উপায় কি!

রাসুকে তো চিনতে বাকী নেই সারদার। এই রূপসীর কাছে আসতে পেলে রাসু তো তদ্দণ্ডেই মাথা মুড়িয়ে তার চরনে নিজেকে বিকিয়ে দেবে।

.

প্রথম দিন অবিশ্যি অভয়াই বৌকে কাছে নিয়ে শুলেন এবং অনেক রাত পর্যন্ত জেগে আর জাগিয়ে বৌকে জ্ঞানদান করতে চেষ্টা করলেন…এ সংসারে তার কে আপন কেহ পর! কাকে সমীহ করতে হবে, আর কাকে সন্দেহ করতে হবে।

কিন্তু পরদিন কি হবে?

অথবা তারও পরদিন?

পর পর চিরদিন?

সারদা সেই কথাই ভাবতে থাকে।

আজ তো গেল। কিন্তু কাল?

এবং চিরকাল?

রাসুর জন্যে না হয় সিংহবাহিনীর শপথ। কিন্তু সংসারের আর দশজনের কী ব্যবস্থা? তাদের প্রশ্নবান যখন বিষের প্রলেপ মেখে বুকে এসে বিধবে? কি উত্তর দেবে সারদা?

.

ঘরের প্রদীপ নেভানো, রাসু এখনো বারবাড়ি থেকে আসে নি।

বৈশাখের দুরন্ত বাতাসে বৈশাখী চাপার মদির গন্ধ, ছোট ছোট গবাক্ষ-পথেও সেই বাতাস ঝলসে জলকে ঢুকে পড়েছে, আর সারা ঘরে ছড়িয়ে দিচ্ছে তার সুবাস।

এই রাত্রি, এই মোহময় বাতাস, আর এই ব্যথায় টনটনে বুক-এর মাঝখানে কি আনা যায়, সারদা অনেকদিন স্বামীসঙ্গ পেয়েছে, সারদার ছেলের বয়স এখন বারো!

ভাবা যায়, সারদার জীবনের ভোগপাত্রের দিকে হাত বাড়ানো শোভন নয়, স্বামীর অধিকার স্বেচ্ছায় ত্যাগ করে ভাঁড়ারের হাঁড়িকুঁড়ির মধ্যে জীবনের সার্থকতা খুঁজে বার করাই এখন তার উচিত।

আশ্চর্য, আশ্চর্য, কিছুতেই কেন বিশ্বাস হচ্ছে না এই ঘর সারদা এত দিন ভোগ করছে?

বরং দৃষ্টি-অন্ধকার-করে দেওয়া অশ্রু-বাম্পের সঙ্গে বারে বারে মনে হচ্ছে, ক’দিনই বা

মাঝে মাঝে কাদচ কখনো যে বাপের বাড়ি গিয়ে থেকেছে, সেইগুলোই যেন এখন মনে হচ্ছে বিরাট এক-একটা বিরতি।

কিন্তু গরীব গেরস্ত বাপ সারদার, কতই বা নিয়ে যেতে পেরেছে মেয়েকে! ওর এই ষোল সতেরো বছরের বিবাহিত জীবনের মধ্যে দিন মাস ঘণ্টা মিলিয়ে হিসেব করলে না হয় চার-পাঁচটা বছর!

তা হলেও তো হাতে থাকে এক যুগ।

কখন কোথা দিয়ে গেল সেই দীর্ঘ এক যুগ?

আস্তে আস্তে ঘরে এস ঢুকল রাসু। বরাবর যেমন ঢোকে। সারদা যে ধরনটাকে ব্যঙ্গহাসিতে অভিষিক্ত করে বলে, চোরের মতন।

এই নতুন বিয়ের বরের ভঙ্গীটা আর কোনদিনই বদলাল না রাসুর।

তবে কি সেও টের পায় নি কবে কখন তার বয়স আঠারো থেকে চৌত্রিশে এসে পৌচেছে? টের পায় নি, মাঝখানের সেই বয়সগুলো হাতফসকে পালাল কি করে?

তাই আজও শয়নমন্দিরে ঢুকতে তার লজ্জা!

.

আজ কিন্তু সমস্তটা দিন রাসুর বড় যন্ত্রণায় কেটেছে। অব্যক্ত সেই যন্ত্রণাটা যেন ধরা-ছোওয়া যাচ্ছে না, শুধু মনটা ভারাক্রান্ত করে রেখেছে।

তা যন্ত্রণার কারণ আছে বৈকি।

এ যন্ত্রণা শুধু যে রূপসী স্ত্রীকে এখনো চোখে দেখতে পায় নি বলে তা নয়, কর্তব্য নির্ধারণের দ্বন্দ্বই বেচারী রাসুকে এত বিচলিত করছে।

অতঃপর রাসুর কর্তব্য কি?

পূর্ব শপথ স্মরণ করে দ্বিতীয়বার মুখদর্শন না করা? সারদার প্রতিই একান্তক অনুরক্তি রেখে চলা? না শপথটা একটা মুখের কথামাত্র বলে উড়িয়ে দিয়ে

যন্ত্রণা এইখানেই।

উড়িয়ে দিলে সারদা যদি ভয়ঙ্কর একটা কিছু করে বসে? তা ছাড়া সারদা মর্মাহত হবে, সারদা রাসুকে ধিক্কার দেবে, ঘৃণা করবে, এ কথা ভাবতেও তো বুকটা ফাটছে।

অথচ সারদার প্রতি সেই আনুগত্যের শপথ রক্ষা করতে গেলে আর একটা নির্দোষ অবলা সরলার প্রতি অবিচার করা হয়। এতদিন পরে স্বামীগৃহ এসে স্বামীর এই নিষ্ঠুরতা দেখে সেও কি দুঃখে লজ্জায় অভিমানে দেহত্যাগ করতে চাইবে না? এতখানি আঘাত তাকে দেওয়া যাবে? যে নাকি বৌ নয়, যেন পদ্মফুল!

এই দোটানায় রাসু সারাদিন টুকরো টুকরো হচ্ছে।

তবু ঘরে ঢুকে সহজ হবার চেষ্টা করল রাসু। বলল, উঃ, কী অন্ধকার!

একটা মাত্র মাটির প্রদীপে মস্ত একখানা ঘরের অন্ধকার দূরীভূত হয় এ কথা রাসুর আমলে হাস্যকর ছিল না। তাই সেই দীপশিখাটুকুর অভাবে রাসু বলল, উঃ, কী অন্ধকার!

কিন্তু ও পক্ষ থেকে এ সম্পর্কে কোন সাড়া এল না।

রাসু যথানিয়মে দরজায় হুড়কোটা এঁটে সরে এসে এসে বলল, পিদ্দিম জ্বালো নি যে?

এবার সারদা কথা বলল।

আর আশ্চর্য, ভিতরকার সেই বেদনা-বিধুর হাহাকার যখন কথা হয়ে বেরিয়ে এল, এল তীক্ষ্ণ তীব্র একটি ব্যঙ্গের মূর্তিতে। হয়তো এইজন্যই স্বভাব জিনিসটাকে মৃত্যুর ওপার পর্যন্ত বিস্তৃতি দেওয়া হয়েছে।

সারদা তীক্ষ্ণ হুল ফোঁটানোর সুরে বলে উঠল, আর পিদিম জ্বালার দরকার কি? বাড়িতে যেকালে পুন্নিমা চাঁদের উদয় হয়েছে!

পূর্ণিমা চাঁদ!

রাসু সরল, রাসু অবোধ, রাসু এইমাত্র স্বর্গ হতে খসে পৃথিবীতে এসে পড়েছে। পূর্ণিমা চাঁদ মানে?

ও, মানে জানো না বুঝি? স্বামীকে যেন বিদ্রুপে খানখান করে দেয় সারদা, কেন, বাড়িসুদ্দু সবাই এত ধন্যি ধন্যি গাইছে, আর তোমার কানে ওঠে নি? তোমার দ্বিতীয়পক্ষর রূপেই তো ভুবন আলো গো! তাতেই আর তেল খরচা করে আলো জ্বালি নি!

রাসু হঠাৎ বল সঞ্চয় করে বলে ওঠে, মেয়েমানুষ বড় হিংসুটে জাত!

কী! কী বললে? সারদা যেন তীক্ষ্ণতার প্রতিযোগিতায় নেমেছে, মেয়েমানুষ হিংসুটে জাত?

তবে না তো কি?

মহাপুরুষ পুরুষজাতটা একেবারে দেবতা, কেমন? সারদা ক্ষুব্ধ গর্জনে বলে, কি বলব– মুখ ফুটে তুলনা করে দেখাতে গেলে মহাপাতকের ভয়, তবু বলি–মেয়েমানুষের অবস্থার সঙ্গে একবার নিজেদের অবস্থা মিলিয়ে দেখ না। পরিবার যদি একবার পরপুরুষের দিকে তাকায়, তা হলে তো মহাপুরুষের মাথায় খুন চাপে!

রাসু ধিক্কার-বিজড়িত কণ্ঠে বলে, ছি ছি, কিসের সঙ্গে কী! পরপুরুষের নাম মুখে আনতে লজ্জা করল না তোমার? দ্বিতীয় পক্ষ বুঝি পরস্ত্রী? ছিঃ!

সারদা কিন্তু এ-হেন ধিক্কারেও বিচলিত হয় না, তাই অনমনীয় কণ্ঠে বলে, তা দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ যত ইচ্ছে, পক্ষ জুটলে আর পরস্ত্রীতে দরকার? মেয়েমানুষের তো আর সে সুবিধে নেই?

রাসু হতাশ কণ্ঠে বলে, হিংসেয় জ্বালায় তোমার দিগ্বিদিক জ্ঞান ঘুচে গেছে বড়বৌ, তাই যা নয় তাই মুখে আনছ! নতুন বৌকে আমি আনতে যাই নি, গুরুজনরা বুঝেসুঝে এনেছে। নইলে এযাবৎ কাল তো সেখানেই পড়ে ছিল!

ওঃ, ইল্লি! দুঃখু যে উথলে উঠছে দেখছি! পড়েই ছিল! আহা-হা, মরে যাই, অথৈ জলে পড়ে থেকেছিল একেবারে!

সারদা ছুরি দিয়ে কেটে কেটে কথা বলে, আমি কিন্তু সাফ কথা কয়ে দিচ্ছি, ভাগাভাগির ইল্লুতেপনায় আমি নেই। আমায় চাও তো ওকে স্পশ্য করতে পারে না, আর ওকে চাও তো আমি

হঠাৎ কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে যায় সারদার। আর এই রুদ্ধ কণ্ঠই বড় ভয় রাসুর।

আরও হতাশ গলায় বলে সে, তার আমায় কি করতে বলো? মাথার ওপরকার গুরুজনরা যে ব্যবস্থা দেবে তাই মানব, না চেঁচামেচি করে তার প্রতিবাদ করব?

কি করবে সে তোমার নিজের বিবেচনা। তুমিও কিছু কচি খোকাটি নও। মাথার ওপরকার গুরুজন যদি বিষ খেতে বলে, খাবে? খুড়োঠাকুর ধম্ম করলেন, ভদ্রলোকের জাত রক্ষে করলেন আমার বুকে বাশ ডলে! এতই যদি ধম্মজ্ঞান, নিজেই কেন—

বড়বৌ! হঠাৎ ধমকে ওঠে রাসু, কি বলছ কি? উন্মাদ হয়ে গেলে নাকি?

সারদা ঝপ করে বিছানায় শুয়ে পড়ে গম্ভীর গলায় বলে, উন্মাদ হবার ঘটনা ঘটলে মানুষ উনাদ হবে, এ আর আশ্চয্যি কি? খুড়োঠাকুর যদি তখন আমার ঘর না ভাঙতেন, তা হলে বরং আজ ওনার ভাঙা ঘর ভরত।

বড়বৌ! কাকে নিয়ে তুলনা? এসব অকথা কুকথা মুখে উচ্চারণ করলেও মহাপাতক হয় তা জান?

মুখে উচ্চারণ করলে মহাপাতক, কিন্তু মনে? মনকে কেউ শাসিয়ে রাখতে পারে? যাগ গে, ভাল-মন্দ কিছুই বলব না আমি। আমার যা বলবার বলেছি।

রাসু আপসের সুরে বলে, অতই বা খাপ্পা হচ্ছ কেন বড়বৌ? তুমি ঘরণী গিন্নী, বলতে গেলে জোয়ান ব্যাটার। তোমার জায়গা কে কাড়ে? তবে লোকদ্যাখতা একটা কথা আছে তো? ওকে একেবারে ভাসিয়ে দিলে

সারদা গম্ভীরভাবে বলে, মা সিংহবাহিনীর নামে দিব্যি গেলেছিলে, সে কথা বোধ হয় ভুলেই গেছ?

ভুলে যাব কেন রাসু অসন্তুষ্ট স্বরে বলে, কিন্তু লোকে কি বলবে, সেটাও তো চিন্তা করতে হবে?

সারদা আবার ঝপ করে উঠে বসে। বলে, কেন, লোককে বোঝাবার উপায় নেই? লোককে বোঝাতে কত কল-কাঠি আছে! লোককে বলতে পার না, কোনও সাধু-ফকির তোমার হাত দেখে বলেছে, ওই দ্বিতীয় পক্ষের পরিবারকে স্পর্শ করলে তোমার পরমায়ুক্ষয় যোগ আছে?

সকল অধ্যায়

১. ০১. সত্যবতীর গল্প
২. ০২. গঞ্জে মেলায় যেমন
৩. ০৩. দীনতারিণী নিরামিষ ঘরে
৪. ০৪. সারাদিন গুমোটের পর
৫. ০৫. রোদে পিঠটা চিনচিন করছে
৬. ০৬. শুধু হাঁটু পর্যন্ত
৭. ০৭. আঁচল ডুবিয়ে নাড়া
৮. ০৮. দুঃসংবাদের সঙ্গে সঙ্গে
৯. ০৯. আসর-সাজানো বরাসনে
১০. ১০. যাও বলে মানুষকে তাড়ানো যায়
১১. ১১. অপরাধটা হচ্ছে লক্ষ্মীর ঘরে
১২. ১২. সত্যর মনের কাছে এত বড় ভয়ের পরিচয়
১৩. ১৩. যজ্ঞির জন্যে ছানাবড়া ভাজা হচ্ছে
১৪. ১৪. পালকি থেকে মুখ বাড়িয়ে
১৫. ১৫. সকালবেলা নেড়ুকে হাতের লেখা
১৬. ১৬. বসেছে কাব্যপাঠের আসর
১৭. ১৭. জগতের সমস্ত বিস্ময়
১৮. ১৮. সপরিবার তুষ্টু গয়লা
১৯. ১৯. লক্ষ্মীকান্ত বাড়ুয্যে মারা গেলেন
২০. ২০. এলোকেশী দাওয়ায় পাটি পেতে
২১. ২১. ত্রিবেণীর ঘাটে এসেছিলেন রামকালী
২২. ২২. রামকালীর পালকি
২৩. ২৩. সত্যর বেহায়াপনার কথা
২৪. ২৪. নীলাম্বর বাঁড়ুয্যে নিত্যনিয়মে
২৫. ২৫. শীত গ্রীষ্ম বর্ষা বসন্তের অচ্ছেদ্য শৃঙ্খলা
২৬. ২৬. নবকুমার চলে গিয়ে পর্যন্ত
২৭. ২৭. ভাগ্যবানের বোঝা ভগবান বয়
২৮. ২৮. সংসারসুদ্ধ সকলেই আশা করেছিল
২৯. ২৯. জ্বর জ্বর
৩০. ৩০. এ তল্লাটে এ ইতিহাস এই প্রথম
৩১. ৩১. সাহেব ডাক্তারের হাতযশে
৩২. ৩২. এ এক আশ্চর্য সকাল
৩৩. ৩৩. কালের খাতায় কয়েকখানা পাতা
৩৪. ৩৪. নিতাইয়ের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ নেই
৩৫. ৩৫. হাত ধরার অপরাধে জাত যাবে না
৩৬. ৩৬. কথায় আছে মাটি বোবা
৩৭. ৩৭. দেশের বাড়িতে আর এক চেহারা
৩৮. ৩৮. হারিয়ে যাওয়া সত্য
৩৯. ৩৯. ভরা দুপুর
৪০. ৪০. সরল পিসির কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি
৪১. ৪১. অনুতাপ-দগ্ধ সুহাসের দৃঢ় সংকল্প
৪২. ৪২. সময়ের বাড়া কারিগর নেই
৪৩. ৪৩. পরকীয়া ভাব
৪৪. ৪৪. জগন্নাথের রথের চাকা
৪৫. ৪৫. কাটে দিন, কাটে রাত্রি
৪৬. ৪৬. নিতাইয়ের বাড়ি থেকে
৪৭. ৪৭. ছেলের বিয়ের জন্য
৪৮. ৪৮. হিহি হিহি হিহি হিহি

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন