আমি এখানে ছিলাম – প্রমথনাথ বিশী

আমি এখানে ছিলাম – প্রমথনাথ বিশী

রেল গাড়িতে যাতায়াতের সময়ে বাড়িটা চোখে পড়ত, চোখে পড়ার মতো বটে বাড়িটা। পাহাড়ি নদীর ঠিক ওপারেই বনের আরম্ভ, বন যেখানে শেষ হয়েছে সেখানে পাহাড় উঠেছে, পাহাড় বনে ঢাকা। এপারে উচ্চাবচ ভূখণ্ডের একটি তরঙ্গের মাথায় মস্ত বাড়ি। বিলাতি ছবিতে যেমন সব কাসল (castle) জাতীয় বাড়ি দেখা যায়, গড়নটা সেইরকম, উচু নিচু অনেকগুলো কোঠার ওপরে একটা টাওয়ার (Tower)। বেশ বুঝতে পারা যায় বাড়ির মালিকের মাথায় কোনও বিদেশি স্থাপত্যের ঢং ছিল, এদেশের পাথরে তারই দুর্বল অনুকৃতি। এ ঢঙের বাড়ি এদেশে বড় চোখে পড়ে না। বাড়িটা চোখে পড়বার এ একটা কারণ। অবশ্য আরও কারণ আছে। কাছাকাছি আর কোথাও বাড়ি ঘর নেই, নিঃসঙ্গ মহিমায় বাড়িটা দণ্ডায়মান। জীর্ণতা সেই মহিমাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। পুরানো বাড়ি। যতবার চোখে পড়েছে মনুষ্যবাসের চিহ্ন দেখেনি। জানলা-দরজাগুলো বন্ধ তো বন্ধই, কতকগুলো অবশ্য ভাঙা, সেখানে খোলা বা বন্ধের প্রশ্ন ওঠে না। রেলপথ থেকে আধ মাইলের মধ্যেই হবে, কিছু কম হতে পারে, বেশি নিশ্চয় নয়। কাজেই নজরে না পড়ে যায় না।

আমাকে আবার কাজের গতিকে এ পথে প্রায় যাতায়াত করতে হয়, কাজেই প্রায় দেখি সেটাকে। ছোট রেলস্টেশনে গাড়ি থামে না। অনেক সময়ে ইচ্ছা করেছে একবার নেমে বাড়িটা ভাল করে দেখে যাব। কিন্তু রেলগাড়িতে আসি যাই, নানা আর হয়ে ওঠে না।

আমার মনে বাড়িটা নেশা ধরিয়ে দিয়েছিল, বাড়িটা দেখবার আশায় ঠিক সময়ে তৈরি হয়ে থাকতাম। গাড়িটা এই জায়গা অতিক্রম করে দিনের বেলায়, যাতায়াত দুই বারেই, কাজেই দেখবার অসুবিধা ছিল না। ভাবতাম কোন খেয়ালি কতকাল আগে কীসের প্রেরণায় এ-হেন নির্জনে বাড়িটা তৈরি করেছিল। তার পরে আর কী হল? মরে গিয়েছে নিশ্চয়, কেননা বাড়িটার বয়স একশো নিশ্চয় হবে। তার পরে তার উত্তরাধিকারীগণও কি এখানে বাস করেছে? এখন যে করে না দেখতেই পাচ্ছি। অমনি পড়ে আছে! হয়তো কতবার হাত বদলেছে। তারাও কেউ থাকে না। তা ছাড়া একশো বছর আগে এ রেলপথ হয়নি। মালিক এখানে এলো কেমন করে, কোন সূত্রে আর এই সৃষ্টিছাড়া স্থানে তৈরি করতেই বা গেল কেন! এই রকম নানা প্রশ্ন মনের মধ্যে পাক দিয়ে উঠত, কোনও সমাধান খুঁজে পেতাম না।

বাড়িটা মনে এমনি নেশা ধরিয়ে দিয়েছিল যে, মাঝে মাঝে স্বপ্নে এটাকে দেখতে পেতাম। দেখতাম গাড়িতে যাওয়ার সময়ে ওটাকে দেখতে পাচ্ছি, যেমন সত্যকার যাতায়াতে দেখতে পাই। কখনও দেখতাম রাজমিস্ত্রিরা বাড়িটা তৈরি করছে। একবার দেখলাম বাড়িটার মধ্যে এ-ঘর ও-ঘর ঘুরে বেড়াচ্ছি, সমস্তই যেন কত পরিচিত, আমি যেন আগন্তুক নই, বাড়িটারই বাসিন্দা। এক দিন তো দেখলাম হঠাৎ ভূমিকম্প শুরু হয়েছে। আমি তখন টাওয়ারের উপরে ছিলাম, লাফিয়ে পড়ব ভাবছি, এমন সময়ে কোথা থেকে কে যেন চিৎকার করে উঠল, লাফিয়ে পড়ে না, মারা যাবে, এ বাড়ি ভাঙবে না ভয় নেই। খুব চেনা গলা। ঘুম ভেঙে গেল। স্বপ্ন মাত্র। তবু সেই চেনা গলার স্মৃতি মনের মধ্যে ঘুরতে লাগল।

এমন সময়ে একটা যোগাযোগ ঘটে গেল যার ফলে আমার কৌতূহল নিবৃত্ত হওয়া সম্ভব হল। আমার বন্ধু অনিল রায় চাইবাসার মহকুমা হাকিম। অনিলের সঙ্গে দীর্ঘকালের পরিচয়, ইস্কুলে পড়ার আমল থেকে। সে জানত যে খামোকা বনে-জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানো আমার শখ। সিংভূম জেলা বনজঙ্গল আর পাহাড়ে অঞ্চল। অনেকবার তার আগ্রহে সেখানে গিয়ে সরকারি জিপের কল্যাণে দুর্গম অঞ্চলে প্রবেশ করেছি, বিশেষভাবে সারাঙ্গা অরণ্যে। অত বড় অরণ্য আর সমতলভূমি নেই। তাই এবারে যখন তার আহ্বান এল কাল ব্যয় না করে চাইবাসায় গিয়ে উপস্থিত হলাম। কদিন এদিক ওদিক ঘোরবার পরে একদিন বললাম, একবার নরসিংগড়ে নিয়ে যেতে পারো?

কেন সেখানে কেন?

শুনেছি সেদিকেও বনজঙ্গল আছে।

তা আছে বটে। ধারা গিরিমন্ত পাহাড়।

সে আরও বলল, সমস্ত খবরই রাখো দেখছি।

বললাম, জানোই তো ভাই, এই আমার বাতিক।

তা বেশ চলো, কালকেই রওনা হওয়া যাবে।

ধরো যদি দু-একদিন সেখানে থাকবার প্রয়োজন হয়।

নদীর ধারে সুন্দর ডাকবাংলো আছে, আজই খবর পাঠিয়ে দিচ্ছি।

সেই কথাই স্থির হল, আগামী কাল নরসিংগড় রওনা হব।

নরসিংগড় সেই জায়গাটার নাম যেখানে ওই বাড়িটা। জায়গাটাকে একটা বড় গ্রাম বা ছোট শহর বলা যায়। শহরের অনেক সুবিধা আছে আবার সেই সঙ্গে আছে গাঁয়ের জনবিরলতা ও শান্তি। সেখানে বনজঙ্গল দেখতে যাচ্ছি বলেই বললাম, বাড়িটার কথা আর প্রকাশ করলাম না। কেননা, ওই বাড়ির সঙ্গে আমার যে আকর্ষণের সম্বন্ধ দাঁড়িয়েছে কেমন করে তা বোঝাব অপরকে। নিজেই ভাল করে বুঝতে পারি না। ভাবলাম একবার গিয়ে তো পড়ি তারপরে ক্ষেত্ৰ-কৰ্ম-বিধীয়তে, অবস্থা বুঝে ধীরে ধীরে প্রকাশ করলেই চলবে। এখন হঠাৎ একটা বাড়ি দেখতে যাচ্ছি বললে ও ভাববে বুঝি কিনতে চাই। না, এখন কিছুই প্রকাশ করা হবে না।

পরদিন বিকালবেলা নরসিংগড় ডাকবাংলোয় এসে উপস্থিত হলাম, একটি ঘর আগে থেকেই ঠিক করা ছিল। বারান্দায় বসলে সম্মুখে নদী আর ওপারে পাহাড়ের শ্রেণী দেখতে পাওয়া যায়। চা-পান করতে করতে পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে অনিল বলল, ওই পাহাড়গুলোয় হাতি, বাঘ, ভালুক, বাইসন বুনো মোষ কী না আছে।

বলো কি!

ঠিক কথাই বলেছি, অনেকবার গিয়েছি কিনা।

এবার যাবে ভাবছ নাকি।

না, ওখানে শুধু হাতে যাওয়া নিরাপদ নয়। শখ থাকে তো আর একবার না হয় যাওয়া যাবে।

সেই ভাল আজকে চলো, একবার জায়গাটা ঘুরে দেখে আসি।

হাঁ, আজ আর দূরে যাওয়া চলবে না, শীতের সন্ধ্যা এখনি অন্ধকার হয়ে আসবে।

আগে তুমি কখনও এখানে এসেছ?

সে বলল, সিংভূম জেলা আমার প্রায় নখদর্পণে, কিন্তু ঠিক এ জায়গায় আগে কখনও আসা হয়নি।

বললাম, সে একরকম ভালই, দুজনের চোখেই নতুন লাগবে।

নতুন লাগবার মতো কী-ই বা আছে এখানে।

ডাকবাংলো থেকে সেই বাড়িটা দেখা যায় না। বেরিয়ে পড়ে নদীর ধার দিয়ে সেই বাড়িটার দিকেই চললাম।

কোথায় চললে শুধালো অনিল।

সব দিক সমান অপরিচিত, সব দিক সমান নতুন, চলো না।

একটা মোড় ঘুরতেই অদূরে পড়ল সেই বাড়িটা।

অনিল বলল, চলো না, ওই বাড়ি দেখে আসি।

আমি এই রকমটাই আশা করছিলাম, অনিলের আগ্রহ প্রকাশিত হোক।

বাড়ির কাছে গিয়ে অনেকক্ষণ দুজনে অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। অনিল কি ভাবছিল জানি না, আমার মনে হচ্ছিল এ বাড়ি আমি আগে দেখেছি, তবে কখন, কীভাবে কিছুই বুঝতে পারলাম না। মনে হল ভিতরে গেলে সমস্ত চিনতে পারব। একবার ভিতরে যাওয়া আবশ্যক।

অনিল বলল, এ রকম বাড়ি এদেশে দেখতে পাওয়া যায় না, বিলাতি কাসল জাতীয় বাড়ি এটা। কে তৈরি করল হে।

আমার মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল, যে-ই তৈরি করুক এ বাড়ি আগে আমি দেখেছি।

সে বলল, দেখেছ বইকী। তুমিই তো বলেছ রেলে যাতায়াত করতে কতবার চেয়ে চেয়ে দেখেছ।

বললাম, সে রকম দেখা নয়। আমার মনে হচ্ছে আমি এখানে ছিলাম।

নাও কবিত্ব রাখো।

কবিত্ব নয় ভাই।

তোমার পেট গরম হয়েছে। ও দুটোই এক। হয় মাথা গরম নয় পেট গরম।

বললাম, চলো না ভিতরে গিয়ে দেখা যাক।

কাউকে যে দেখছি না, দরজা বন্ধ।

ভিতর থেকে বন্ধ, কাজেই লোক আছে।

তখন দুজনে মিলে ডাকাডাকি করতে ও দরজায় ধাক্কা দিতে লাগলাম। অনেকক্ষণ পরে একজন লোক বের হয়ে এল। সে এই বাড়িটার মতোই অদ্ভুত।

লোকটা বুড়ো মোটা কালো, মাথার চুল একটাও কালো নেই, চোখের পাতার চুল ও ভুরু অবধি সাদা, পরণের খাটো ধুতিখানাও সাদা। গায়ের আবলুসের মতো কালো রঙ আর ধুতি ও চুল প্রভৃতির সাদায়—মানিয়েছে ভাল।

ভারী ভাঙা গলায় লোকটা শুধলো, কি চাই?

তুমি এখানে থাকো?

সে তো দেখতেই পাচ্ছ।

সে তো পাচ্ছি। এখানে কি করো?

ওই তো আগেই বললে আমি এখানে থাকি।

কি করো?

কি আর করব, থাকি।

বাড়ির মালিক কে?

তোমাদের কি দরকার?

মনে করো আমরা বাড়িটা ভাড়া নেবো।

সংলাপ আমাদের তিনজনের মধ্যে চলছিল, এক পক্ষে সে, অন্য পক্ষে আমরা দুইজন।

এবারে সে বলল, এ বাড়ি ভাড়া হয় না।

কেন?

মালিকের হুকুম নাই।

মালিক কোথায় থাকে?

তা জানি না।

জানো না, তবে তোমাকে মাইনে দেয় কে?

কেউ দেয় না।

তবে তোমার চলে কি করে?

লোকটা অদূরে একটা চাষের ক্ষেত দেখিয়ে দিয়ে বলল, ক্ষেতি করে খাই।

ওই জমিটা কে দিল?

জানি না। আমার পরদাদা পেয়েছিল মালিকের কাছ থেকে, তারপর আমরা, আমার পরদাদা আর বাপ চাষ করেছে, আর বাড়ি পাহারা দিয়েছে। এখন আমি চাষ করি আর বাড়ি পাহারা দি।

মালিক মাঝে মাঝে আসে না?

না।

দরকার হলে বাড়ি মেরামত করে কে?

মেরামতের দরকার হয় না।

মেরামত না হলে আর কিছুদিনের মধ্যেই তো ভেঙে পড়বে, যে রকম চেহারা দেখছি।

এই রকমটি আমিও দেখছি ছেলেবেলা থেকে।

তোমার বয়স কত হল?

কে জানে! চার কুড়ি কি পাঁচ কুড়ি হবে।

বুঝলাম লোকটার ধারাপাতে চার কুড়ি কি পাঁচ কুড়ি সমান।

তোমার নাম কি বাপু?

ভারী ভাঙা গলায় বলল, গুরুচরণ।

বললাম, বেশ নামটি তো। তা গুরুচরণ, একবার বাড়ির ভিতরটা দেখতে পাই না!

কী আছে যে দেখবে!

তাই তো দেখতে চাই কী আছে।

কালকে এসো, আজ সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে—বলে মুহূর্তমাত্র অপেক্ষা না করে লোকটা ভিতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল। তখন চলে আসা ছাড়া আর গত্যন্তর রইল না।

ডাকবাংলোয় ফিরবার পথে অনিল বলল, দেখো হে, আমার সন্দেহ হচ্ছে বাড়িটা বদমায়েসদের আড্ডা, বুড়োটা তাদেরই একজন।

কি যে বলো! ওই বুড়ো যার বয়স চার কুড়ি কি পাঁচ কুড়ি!

আরে এক সময়ে নিজেও বদমায়েস ছিল এখন অশক্ত হয়ে গার্জেন হয়ে তাদের আগলাচ্ছে। আমার বিশ্বাস এ অঞ্চলের চোরাই মালের ডিপো হচ্ছে জায়গাটা। অনিল সরকারি চাকুরে। সরকারি চাকুরেদের অভ্যাস প্রত্যেক ঝোপে বাঘ দেখা।

রাতে ঘুম এল না, বাড়িটা আর গুরুচরণের কথা ঘুরে ফিরে মনে পড়তে লাগল, দুটোই সমান রহস্যময়। তবে কাছাকাছি গিয়ে বাড়িটার যে চেহারা দেখলাম তাতে আমার সন্দেহ দৃঢ় প্রত্যয়ে পরিণত হল, এখানে আমি ছিলাম। কিন্তু তা-ই বা কি করে সম্ভব। আমার আটত্রিশ বছরের জীবনকথা আর কারও কাছে না হোক আমার কাছে তো স্পষ্ট। বাড়িটা দূরে থাক, নরসিংগড়ে এই আমার প্রথম পদার্পণ! তবে দেখলাম কি করে? কিন্তু তখনি প্রত্যয় কানে কানে বলল, ভিতরে ঢুকলে দেখবে সমস্তই অত্যন্ত পরিচিত।

মনে হল অনেক সময়ে পূর্বজন্মের স্মৃতি সচেতন হয়ে ওঠে, মাঝে মাঝে সংবাদপত্রে জাতিস্মরের কাহিনী পাঠ করি, হয়তো সেই রকম কিছু হবে। কিন্তু ও তো ব্যাখ্যা হল না, কারণ এ ব্যাখ্যা প্রকৃত ঘটনার চেয়ে আরও রহস্যময়। এই রকম পাঁচ কথা ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়লাম।

পরদিন অনেক বেলা থাকতে বাড়িটার কাছে গিয়ে উপস্থিত হলাম, দেখলাম দ্বার রোধ করে গুরুচরণ দণ্ডায়মান। অনিল টুক করে দুটো টাকা তার হাতে গুঁজে দিয়ে বলল, শীত পড়েছে, হাড়িয়া খেয়ে নিয়ো গুরুচরণ। এই এতক্ষণ পরে তার ওষ্ঠাধরে একটা ক্ষীণ, অতি ক্ষীণ হাসির রেখা দেখা দিল, সেই সেকালের দুয়ানিটির মতো। এবারে ঘরে প্রবেশ অবাধ হল। প্রথমেই একটা মস্ত হলঘর। ঘরটায় ঢুকতেই মনে হল যেন কোন পূর্বজন্মের স্মৃতির মধ্যে যেন জেগে উঠলাম, সমস্তই চেনা জানা, মায় বদ্ধ ঘরের সেই ভ্যাপসা গন্ধটি পর্যন্ত।

কি ভাবছ অনির্বাণ।

বললাম, এ ঘর আমি জানি, ওই দেখো দেয়ালে মস্ত একটা কাঁটা, আর বাতির ধোঁয়ার দাগ, এখানে একটা দেয়ালগিরি আলো টাঙানো থাকত।

দেখো অনির্বাণ, আমার কাছে শার্লক হোমসগিরি করো না। দেয়ালে কাঁটা আর ধোঁয়ার দাগ, এ দেখে যে কেউ বুঝতে পারে যে, এক সময়ে বাতি টাঙানো ছিল।

আর এখানে মস্ত দুখানা ভারী খাট ছিল।

আপাতত প্রমাণাভাবে অসিদ্ধ।

আচ্ছা, আরও বলছি, পাশের ঘরের পশ্চিম দেয়ালে একটা আলমারি আছে।

চলো দেখি গিয়ে।

পাশের ঘরে ঢুকে অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম, অনিল হো হো করে হেসে উঠল বলল, হল তো মিঃ শার্লক হোমস।

গুরুচরণকে শুধালাম, আলমারিটা কি হল?

সে বলল, অনেকদিন হল ইট দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

সপ্রতিভভাবে অনিলের দিকে তাকিয়ে বললাম, কি হল ওয়াটসন।

ওটা আন্দাজি। আচ্ছা বলো পাশের ঘরটায় কি আছে।

ঘরটা নয়, পাশাপাশি দুটো ছোট ঘর আছে। একটার ছাদ থেকে ঝুলছে লম্বা লোহার শিক, আলো ঝুলত।

আর একটায়?

রাজ্যের ভাঙা আসবাবপত্র স্তূপ করা থাকত।

চলো পরীক্ষা করি গিয়ে।

ঘর দুটোয় পর পর প্রবেশ কবে অনিল অবাক হয়ে গেল। হ্যাঁ, একটা ছাদ থেকে সত্যই ঝুলছে লম্বা লোহার শিক আর একটায় ভাঙা খাট। দেরাজ প্রভৃতি রাজ্যের আবর্জনা।

সগর্বে বললাম, দেখলে তো?

দেখলাম কিন্তু বিশ্বাস হল না।

কেন ওগুলো কি মায়া?

তুমি আগে কখনও এসে দেখে গিয়েছ।

কখনও না, বরঞ্চ গুরুচরণকে জিজ্ঞাসা করো।

কি গুরুচরণ, বাবু কখনও আগে এসেছে।

গর্জন ও বাচনের মাঝামাঝি স্বরে সে বলল, না।

এবারে!

দোতালার খবর বলতে পারো?

পারি। ওঠবার সিঁড়ি দুটো। একটা প্রকাণ্ড আর সরল, আর একটা সরু আর পাক খাওয়া।

চলো পরীক্ষা হোক।

একটা সংকীর্ণ লম্বা ঘর পার হয়ে পৌঁছলাম প্রশস্ত সিঁড়িটার কাছে। মাঝে মাঝে ফেটে গিয়ে ঘাস গজিয়েছে, মাঝে মাঝে পাথর বেরিয়ে পড়েছে।

চলো উপরে উঠি।

গুরুচরণের মুখ দেখে বুঝলাম সে আমাদের ভাবগতিক কিছুই বুঝতে পারছে না; পিছনে পিছনে চলছে, পারলে বাধা দিত, কিন্তু অন্তরায় সদ্যলব্ধ রজতখণ্ড দুটি।

দোতালায় উঠতেই মস্ত একটা টানা হল ঘরে পৌঁছলাম।

অনিল, এখানে দেয়ালে বড় বড় তৈল চিত্র টাঙানো ছিল, তার মধ্যে একখানা ছিল আমার ছবি, ঘোড়ায় চড়ে শিকার করতে যাচ্ছি।

কি গুরুচরণ এখানে ছবি টাঙানো ছিল?

সে বলল, হাঁ।

কি হল?

মালিক এসে খুলে নিয়ে গিয়েছে।

কতকাল আগে?

দুতিন কুড়ি বছর আগে।

প্রশ্নকর্তা অনিল।

তখন তোমার বয়স কত ছিল?

কে জানে! তখন আমি ঘোড়ায় চেপে ওপারের বনে যেতাম।

কেন?

মালিকের বনের তদারক করতে।

এখন যাও না।

না।

কেন?

ঘোড়াটা মরে গিয়েছে আর বনটাও মালিকের হাতে নেই।

বললাম এবারে এসো, সরু সিঁড়িটার কাছে যাই।

সঙ্কীর্ণ, অন্ধকার, ভাপসা গন্ধে ভরা সিঁড়িটার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম দুজনে।

কি বিশ্বাস হল তো।

এবারে আর সে আপত্তি করল না, বলল বিশ্বাস না করা কঠিন, আর বিশ্বাস করা আরও কঠিন। বলল, তুমি কি জাতিস্মর?

জাতিস্মর কাকে বলে জানি না, তারা কি স্মরণ করে জানি না, তবে এ বাড়ি যে আমার বহুকালের চেনা প্রমাণ পেলে তো।

কোনও উত্তর না দিয়ে বলল, সরু সিঁড়িটা কোথায় উঠেছে।

উপরে যে টাওয়ারটা দেখা যায় সেখানে।

চলো উঠি।

সিঁড়িতে আগাছা জন্মেছে। সেসব ঠেলেঠুলে দুজনে কোনক্রমে অন্ধকারের মধ্যে হাতড়িয়ে টাওয়ারের উপরে গিয়ে উঠলাম।

গুরুচরণ আসেনি।

ডাকলাম, গুরুচরণ এসো।

নীচে থেকে উত্তর দিল, না, ওখানে যেতে মালিকের বারণ আছে।

কি করে জানলে?

আমার বাপ, দাদা, পরদাদা সকলেই জানত, আমিও জেনেছি।

তবে তুমি ওখানেই থাকো, বলল অনিল।

টাওয়ারের উপরে গিয়ে দাঁড়াতেই চারদিকে দিকচক্রবাল অবারিত হয়ে গেল, সত্যই “আমাদের এ পল্লীখানি পাহাড় দিয়ে ঘেরা।”দক্ষিণে দূরে ময়ূরভঞ্জের গিরিমালার আভাস, পশ্চিমে সিদ্ধেশ্বরী ডুংরির শিখর, উত্তর পশ্চিম কোণে দেখা যায় দখলা পাহাড়ের একটুখানি। চারদিকেই পাহাড়, তার কটারই বা নাম জানি। আমি যখন গিরিসন্দর্শন করছিলাম, অনিল তখন নীচের দিকে তাকিয়ে দেখছিল। তারপরে বলে উঠল, এখান থেকে নীচে পড়লে আর বাঁচবার সম্ভাবনা নেই।

আমিও নীচের দিকে তাকালাম, মাখাটা ঘুরে উঠল।

কি হল?

হঠাৎ মাথাটা ঘুরে উঠল।

তবু ভাল, আমি ভাবলাম এখনি বলবে যে আমি এক সময়ে এখান থেকে লাফিয়ে পড়েছিলাম।

আমাকে নীরব দেখে সে বলল, কি ঠিক বলেছি তো!

ঠিকই বলেছ, নীচের দিকে তাকিয়েই আমার মনে হয়েছিল আমি এক সময়ে লাফিয়ে পড়েছিলাম।

হঠাৎ লাফাতে যাবে কেন?

মনে হল ভূমিকম্প হচ্ছে, এখনই বাড়িটা ধ্বসে পড়ে যাবে।

আর লাফ দিয়ে পড়ে মরে গেলে আর পরজন্মে জন্মেছ অনির্বাণ চৌধুরী হয়ে! ওহে তোমার মাথার চিকিৎসা করা দরকার। নাও, অনেক উপন্যাস বুনেছ, এখন ডাক বাংলোয় ফিরে চলো, সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে।

এই বলে সে আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে হিড় হিড় করে সিঁড়ি দিয়ে নামতে লাগল।

আমার প্রথম যখন চৈতন্য হল, পুরোপুরি চৈতন্য নয়, সূর্যোদয়ের পূর্বে যেমন অরুণাভাস এ অনেকটা তেমনি, চোখে পড়ল অনিলের করুণাকাতর দুটি চোখ। ভারী একটি স্বস্তি বোধ হল, তখনই আবার ওই চেতনাটুকু ঝিমিয়ে এল, ঘুমিয়ে পড়লাম। আরও চব্বিশ ঘণ্টা লাগল, (পরে হিসাব শুনেছি) বাস্তব জগৎ সম্বন্ধে পূর্ণ সম্বিৎ লাভ করতে। অনিলকে শুধালাম, এ কোথায় আছি? আমার মাথায় গায়ে হাতে পায়ে ব্যান্ডেজ কেন?

সে একটুখানি হেসে বলল, এখন থাক, পরে শুনো।

পরে, তিনচারদিন পরে সমস্ত শুনেছি।

অনিল বলল, আজ আর বলতে বাধা নেই, ডাক্তার বলে গিয়েছেন সংকট কেটে গিয়েছে, কাল তোমাকে মোটরে করে চাইবাসা নিয়ে যাবো।

এ কোথায় আছি?

নরসিংগড় মিশনারীদের হাসপাতালে। ভাগ্যিস হাসপাতালটা এখানে ছিল, আর এর ব্যবস্থাও খুব ভাল।

কিন্তু এখানে এলাম কেন?

হাসপাতালে কেন আসে? কিছু মনে পড়ছে না?

অস্পষ্টভাবে পড়ছে, তুমি খুলে বলো, তোমার কথা শুনলে সব স্পষ্ট হয়ে উঠবে।

অনিল আরম্ভ করল, সেদিন অনেক রাত পর্যন্ত যখন তুমি ফিরলে না তখন আমি উদ্বিগ্ন হয়ে উঠলাম। ডাক বাংলো থেকে তাড়াতাড়ি রওনা হলাম বাড়িটার দিকে। আমার মনে সন্দেহ ছিল না যে ওখানেই তুমি গিয়েছ।

আমি বললাম, এবারে মনে পড়েছে। বিকাল বেলায় তুমি Inspection-এ বেরিয়েছিলে, বলে গিয়েছিলে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যেতে পারে। আমি ভাবলাম একলা বসে থেকে কি করব, আর একবার বাড়িটা দেখে আসি কালকে তো চলে যেতে হবে। বাড়িটার কাছে এসে পৌঁছতেই গুরুচরণ দরজা খুলে দিল, তোমার সেই দুই টাকার কৃতজ্ঞতার জের তখনও চলছিল। আমি সোজা ভিতরে ঢুকে গিয়ে দোতালায় উঠে টাওয়ারটার ওপরে চড়বার ইচ্ছা প্রকাশ করলাম। তখন গুরুচরা বলল, একলা সন্ধ্যার সময়ে উটার উপরে উঠেনি।

কেন রে?

উ জায়গাটা ভাল নয়।

নোংরা।

না গো না ।

তবে কী?

তখন গুরুচরণ এক গালগল্প ছাড়ল, বলল, উটার ওপর থেকে মালিকের ছেলে নীচে পড়ে গিয়ে মারা গিয়েছিল, তাতেই তো মালিক বাড়ি ছেড়ে চলে গেল।

তুমি দেখেছিলে?

সে বলল, আমি দেখব কি করে? সে অনেক কাল আগেকার কথা, আমার পরদাদার কাছে আমার দাদা শুনেছে, তার কাছে শুনেছে আমার বাপ, তার কাছে শুনেছি আমি। উখানে যেয়ো না।

ভাবলাম যত সব বাজে গল্প। বললাম, কোনও ভয় নেই, আমি শিগগির নেমে আসছি।

তারপরে বললাম, অনিল, টাওয়ারটার ওপরে উঠে এদিক ওদিক দেখছি হঠাৎ পায়ের তলায় মাটি কেঁপে উঠল, বুঝলাম ভূমিকম্প আরম্ভ হয়েছে।

অনিল আমাকে বাধা দিয়ে বলল, এর মধ্যে এদিকে কোনও ভূমিকম্প হয়নি, তোমার মাথা নিশ্চয় ঘুরে উঠেছিল।

না, না, ভূমিকম্প তাতে আর সন্দেহ নেই; সমস্ত বাড়িটা চলতি হাতির পিঠের উপরকার হাওদার মতো দুলছে। নামবার জন্যে সিড়ির দিকে এগিয়ে দেখি যে সিড়িটা ঘা খাওয়া সাপের মতো বেঁকে চুরে গিয়েছে, তার উপরে আবার কেমন যেন পাক খাচ্ছে। তখন টাওয়ারের আলসের ধারে এসে দাঁড়ালাম, বুঝলাম নীচে লাফিয়ে পড়া ছাড়া প্রাণ বাঁচাবার উপায় নেই। লাফাতে যাব এমন সময়ে—

অনিল বলল, কি থামলে কেন? ক্লান্ত হয়ে থাকো তো এখন বলে কাজ নেই।

আমি ভাবছিলাম, কথাটা তাকে বলি কি না। হঠাৎ কে যেন বলে উঠল লাফিয়ে পড়ো না, এ বাড়ি ভাঙবার নয়। ভাবলাম, কে বলল? গুরুচরণ ছাড়া কাছাকাছি কোনও মানুষ নেই, আর কণ্ঠস্বর যে গুরুচরণের নয় সে বিষয়ে আমি নিঃসন্দেহ। আরও এক বিষয়ে নিঃসন্দেহ। সেই যে স্বপ্ন নিষেধ বাক্য শুনেছিলাম লাফিয়ে পড়ো না, এ বাড়ি ভাঙবার নয়, এ সেই কণ্ঠস্বর।

অনিল বলল, কি ক্লান্তি দূর হল।

আমার হঠাৎ নীরবতার একটা অজুহাত পেয়ে গেলাম, বললাম হ্যাঁ, বেশ সুস্থ বোধ করছি।

তারপরে কি হল অনির্বাণ?

ভূমিকম্পের হাত থেকে বাঁচবার আশায় আমি টাওয়ার থেকে নীচে লাফিয়ে পড়লাম। তারপরে আর কিছু মনে নেই।

থাকবার কথাও নয়, বলল অনিল।

থামলে কেন বলে যাও।

অনিল আবার আরম্ভ করল। সে বলল, আমি সোজা বাড়িটার কাছে গিয়ে উপস্থিত হলাম। দেখলাম দরজা বন্ধ। কাছেই গুরুচরণের খড়ের ঘর, সেখানে যেতেই গুরুচরণের দেখা পেলাম। শুধালাম, বাবু এসেছিল।

সে বলল, এসেছিল চলে গিয়েছে।

না যায়নি তো, এসো একবার দেখা যাক।

লণ্ঠন নিয়ে সে আমার সঙ্গে এল, কি ঘুমুলে নাকি?

আমি চোখ বুঁজেছিলাম, মনে মনে সব অভিজ্ঞতার ছিন্ন গ্রন্থি মিলিয়ে নিচ্ছিলাম, বললাম, না ঘুমাইনি, বলে যাও।

অনিল বলল, বাড়িতে আর ঢুকতে হল না, একদিকে গুরুচরণের ক্ষেতের ফসল স্তূপ করা ছিল, তার উপরে সাদা কি একটা বস্তু দেখে গিয়ে দেখি অজ্ঞান অবস্থায় তুমি পড়ে আছ, হাত পা ছড়ে কেটে গিয়েছে।

শুধালাম গুরুচরণ, এ কি করে হল!

সে মোটেই বিস্মিত হল না। বলল, বাবুকে আমি মানা করেছিলাম উটার উপরে উঠতে।

তুমি কি বলতে চাও, পড়ে গিয়েছে?

লাফিয়ে পড়েছে বটে।

লাফিয়ে পড়তে যাবে কেন?

সে বলল, মালিকের ছেলে লাফিয়ে পড়েছিল, মরে গিয়েছিল বটে।

বুঝলাম বুড়োটা আবোল-তাবোল বকছে, বোধ করি নেশা করেছে। তোমার কাছে গিয়ে দেখলাম যে, না প্রাণ আছে, নিয়মিত নিশ্বাস প্রশ্বাস পড়ছে। তখন লোকজন ডাকিয়ে একটা Strecher-এর মতো তৈরি করে তোমাকে সোজা নিয়ে এলাম হাসপাতালে। ৭/৮ দিন গুরুতর উদ্বেগের মধ্যে কাটল।

এতক্ষণে আমার ছিন্ন গ্রন্থিগুলো জোড়া লেগেছে। সেই স্বপ্নে শোনা কণ্ঠস্বর, সেই স্বপ্নের ভূমিকম্প, আমার টাওয়ারে ওঠা, ভূমিকম্প, সেই নিষেধের কণ্ঠস্বর, আমার লাফিয়ে পড়া; আর গুরুচরণ কথিত মালিকের ছেলের লাফিয়ে পড়ে মৃত্যু; সব মিলিয়ে একটি অবিচ্ছিন্ন ঘটনা সূত্র। আর সংশয় রইল না যে কেমন করে কীভাবে, কতকাল আগে বলতে পারবো না, তবে সমস্ত ঐহিক সংশয়ের অতীতভাবে উপলব্ধি করলাম যে আমি এখানে ছিলাম।

২৯ সেপ্টেম্বর ১৯৬৮

সকল অধ্যায়

১. রবিবার – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
২. একটি পাড়াগাঁয়ের মেয়ের প্রেমকাহিনী – সরলাবালা সরকার
৩. ভরতের ঝুমঝুমি – পরশুরাম
৪. মাথার বালিশ – উপেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়
৫. নিরুপম তীর্থ – জগদীশ গুপ্ত
৬. আহ্বান – বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
৭. কঙ্কাল – বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়
৮. যাদুকরী – তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
৯. প্রিয় চরিত্র – শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়
১০. বোবা – বনফুল
১১. অপরাজিতা – শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়
১২. আমি এখানে ছিলাম – প্রমথনাথ বিশী
১৩. সভাপর্ব – মনোজ বসু
১৪. আর্দালি নেই – অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত
১৫. রেডিয়ো সর্বদাই রেডি – শিবরাম চক্রবর্তী
১৬. অন্ধকারের অন্তরালে – সরোজকুমার রায়চৌধুরী
১৭. বেলা যে গেল – অন্নদাশঙ্কর রায়
১৮. স্নব্ – সৈয়দ মুজতবা আলী
১৯. অঙ্গার – প্রবোধকুমার সান্যাল
২০. হিসাব নিকাশ – সতীনাথ ভাদুড়ী
২১. অ্যাবারক্রোম্বি – লীলা মজুমদার
২২. সঞ্চয়াভিলাষীর অভিযান – মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
২৩. ভাড়াটে বাড়ি – গজেন্দ্রকুমার মিত্র
২৪. আবছায়া – বুদ্ধদেব বসু
২৫. আত্মজ – আশাপূর্ণা দেবী
২৬. রুপো ঠাকরুনের ভিটা – সুবোধ ঘোষ
২৭. অনিমন্ত্রিত আশুকাকা – বিমল মিত্র
২৮. কবি শিশির রায়ের মৃত্যু – অজিতকৃষ্ণ বসু
২৯. নীল পেয়ালা – জ্যোতিরিন্দ্র নন্দী
৩০. তমোনাশের মন – অদ্বৈত মল্লবর্মণ
৩১. ক্যালেন্ডার – নরেন্দ্রনাথ মিত্র
৩২. প্রহরী – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়
৩৩. পটভূমি – শচীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়
৩৪. স্ত্রৈণ – সন্তোষকুমার ঘোষ
৩৫. বীরভোগ্যা – শান্তিরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
৩৬. পিকুর ডায়েরী – সত্যজিৎ রায়
৩৭. ইন্টারভিউ – বিমল কর
৩৮. খুনি বউ – রমাপদ চৌধুরী
৩৯. প্রশ্ন – গৌরকিশোর ঘোষ
৪০. বিহিত – সমরেশ বসু
৪১. পর্বত – মহাশ্বেতা ভট্টাচার্য
৪২. তাপ্পিমামার অপেক্ষায় – হিমানীশ গোস্বামী
৪৩. মায়ার খেলা – ইন্দ্রমিত্র
৪৪. ছিনতাই – বরেন গঙ্গোপাধ্যায়
৪৫. বুনোহাঁসের মাংস – সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ
৪৬. ফুল – শরৎকুমার মুখোপাধ্যায়
৪৭. একটি পিকনিকের অপমৃত্যু – মতি নন্দী
৪৮. কুসুম আসছে – শক্তি চট্টোপাধ্যায়
৪৯. চোর চাই – শংকর
৫০. নিশীথে সুকুমার – শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়
৫১. ঈর্ষা – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
৫২. মেঘনার গল্প – প্রফুল্ল রায়
৫৩. ঠগী – তুলসী সেনগুপ্ত
৫৪. আজ আমার সংবর্ধনা – অতীন বন্দোপাধ্যায়
৫৫. আমার মেয়ের পুতুল – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৫৬. P.A. – সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
৫৭. ভীষণ ভিড়ের মধ্যে – তারাপদ রায়
৫৮. লাল ভেটকি – বুদ্ধদেব গুহ
৫৯. এক্সপ্রেস – নবনীতা দেব
৬০. ওতুলের প্রতিদ্বন্দ্বী – বাণী বসু
৬১. মুন্নির সঙ্গে কিছুক্ষণ – দিব্যেন্দু পালিত
৬২. নীল আলোয় – শেখর বসু
৬৩. তিনতলার ঘর – রমানাথ রায়
৬৪. ঈশ্বরের ভূমিকায় – সমরেশ মজুমদার
৬৫. কম্পি বড় ভাল মেয়ে – সুব্রত সেনগুপ্ত
৬৬. পৃথিবীটা কার বশ – শৈবাল মিত্র
৬৭. উনিশ বছর বয়স – সুচিত্রা ভট্টাচার্য
৬৮. চান্দ্রায়ণ – সুব্রত মুখোপাধ্যায়
৬৯. একদিন অমিতাভ – রাধানাথ মণ্ডল
৭০. ঈর্ষা – আবুল বাশার
৭১. নবগ্রামের মেয়ে – অমর মিত্র
৭২. ভাগের মা – মানব চক্রবর্তী
৭৩. ঝড়ে কাক মরে – স্বপ্নময় চক্রবর্তী
৭৪. মল্লার যেখানে নামে – জয় গোস্বামী
৭৫. জার্মানি যাচ্ছি না – সুকান্ত গঙ্গোপাধ্যায়

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন