সভাপর্ব – মনোজ বসু

সভাপর্ব – মনোজ বসু

সভার ব্যাপারে দিন দিন নানান পদ সৃষ্টি হচ্ছে। সভাপতি তো বটেই, পরের পদ প্রধান-অতিথি। আর একটা হল উদ্বোধক। তা ছাড়া অনুষ্ঠান ভেদে আরও নানা পদযোজনা হয়। নামী লোক কেউ পদ বিনা সভায় আসেন না। খাতিরে পড়ে হয়তো কথা দিলেন, সময় কালে পাত্তা মেলে না। ভেবে ভেবে সে-জন্য পদ বের করতে হয়।

তিন পদের মধ্যে উদ্বোধক পদটাই বেশি পছন্দ আমার। উদ্বোধকের বক্তৃতা সকলের আগে। উৎসাহ ভরে মানুষ ভিড় করেছে, দেহ ও মনে প্রচুর তাগদ—এমনই অবস্থায় যথেচ্ছ বক্তৃতাব মুশলাঘাত করা চলে। করেই ছুটি। তারপরে ইচ্ছে হল তো সভাস্থলেই বসে বসে শ্রোতৃমণ্ডলীর দুর্গতিতে বিমল রসাস্বাদন করুন। বেরিয়ে এসে প্রাকৃতিক শোভা দেখে বেড়াতে পারেন। কিম্বা কাজের অজুহাত দেখিয়ে সরাসরি বাড়ি গিয়ে শয্যায় আশ্রয় নিতে পারেন। শেষ পন্থায় কিছু মুশকিল আছে। আসবার সময় গাড়ি খরচা করে পরম যত্নে তাঁরা নিয়ে এসেছিলেন, যাবার মুখে হয়তো বা শুধুমাত্র গাড়ি ডেকে দেবার লোকই মিলবে না। যেন ফৌজদারি মামলার সাক্ষী। সাক্ষী যতক্ষণ না কাঠগড়ায় উঠছে, খাতিরযত্নের অবধি নেই। যা বলছে তাতেই ‘হ্যাঁ’। চড়া রোদ্দুরে, কর্তামশায়, ছাতার অভাবে বড় কষ্ট হচ্ছে। কর্তামশায় এখন কল্পতরু : তার জন্যে কি—দেব কিনে ফ্যান্সি সিল্কের ছাতা। কোর্টে পৌঁছুতে দেরি হয়ে যাবে, নয়তো এখনই কিনে দিতাম। ফেরার সময় মনে কোরো। ফেরার পথে কর্তামশায়কে দিয়েছে সে মনে করিয়ে। তখন ভিন্ন সুর ; ওই তো, কত সব দোকান রয়েছে, টাকা ফেলে পছন্দ মতন নাওগে কিনে ছাতা। আমাদেরও, কোনও কোনও ক্ষেত্রে, ওই রকম ছাতা কেনার অবস্থা। বক্তৃতা সমাধা হবার সঙ্গে সঙ্গে পট-পরিবর্তন—শত প্রশ্নের তখন ভালমতো একটা জবাব মেলে না।

উদ্বোধক হয়ে একবার কী বিপদে পড়েছিলাম বলি। তারিখ আঠাশে-উনত্রিশে বৈশাখ। জায়গা কলকাতার কাছাকাছি। অনুষ্ঠান সম্পর্কে কী সব বলে দিয়েছিলেন, ভুলে গেছি; ছাপান চিঠিও এসে থাকবে, হারিয়ে গেছে। সভাক্ষেত্রে উঠে দাঁড়ালাম উদ্বোধন করতে। বৈশাখের শেষ অতএব রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকী না হয়ে যায় না। তদনুযায়ী রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে পড়েছি। বক্তৃতা ঝরঝর করে এগুচ্ছে, উদ্যোক্তারা দেখি মুখ চাওয়াচাওয়ি করছেন। শেষকালে একজন উঠে এসে কানে কানে বললেন, রবীন্দ্রজয়ন্তী নয়, নববর্ষ-আবাহন। রসভঙ্গে আগুন হয়ে উঠেছি আমি ; বৈশাখের শেযে কোনদেশি নববর্ষ মশায়? সে হবে না, রবীন্দ্রজয়ন্তী চালাব। সকাতরে ভদ্রলোক পুনশ্চ বলেন, ক্ষমাঘেন্না করে দিন সার, সমিতির দলাদলি মেটাতে এত দেরি হয়ে গেল। কী করা যায় তখন! ‘ঈশানের পুঞ্জ মেঘ অন্ধবেগে ধেয়ে চলে আসে বাধাবন্ধ হারা’—‘বর্ষশেষ’ কবিতার খানিকটা আবৃত্তি করে রবীন্দ্রজয়ন্তীর পাশ কাটিয়ে নববর্ষ-বন্দনায় মোড় নিতে হল।

কে সভাপতি, কোন জন প্রধান-অতিথি, আগে থাকতে এসব কথাবার্তা হয়ে আছে। কার্ডে নাম ছাপা। তা সত্ত্বেও একজনে উঠে নাম প্রস্তাব করবেন, অন্যে সমর্থন করবেন। রীতকর্মটুকু সমাধা না হওয়া পর্যন্ত নিচের আসনে বসে আছি আমরা। পদ পাকা হয়ে গেলে মাতব্বররা সঙ্গে করে নিয়ে যথাযোগ্য স্থানে বসিয়ে দিচ্ছেন। ছাতনাতলায় বর নিয়ে বসানোর মতন। ফুটফুটে চেহারার এক বাচ্চা ধরে আনা হল মাল্যদানের জন্য। এক একটা গলায় মালা পড়ছে, আর চটপট হাততালি। নিয়ম হল, মালা তৎক্ষণাৎ খুলে ফেলতে হবে, মালার সঙ্গে গল-দেশের আর কোনও যোগাযোগ নেই। ইতিমধ্যে এক মাতব্বর প্রোগ্রাম নিয়ে সভাপতির সামনে দিয়েছেন। যাক বাবা, বক্তা দেখা যাচ্ছে সর্বসাকুল্যে পাঁচজন। কায়ক্লেশে দুটো ঘণ্টা কাবার করতে পারলেই সভাপতির পালা এসে যাবে। বক্তারা একের পর এক উঠেছেন—সভাপতি ততক্ষণ ভেবে নিচ্ছেন, তাঁর অভিভাষণ কোন কায়দায় শুরু করবেন। এবং উপসংহারই বা কোন কথার উপর হবে যাতে প্রচণ্ডতম হাততালি আদায় করা যায়। কিন্তু কী সর্বনাশ—একটি বক্তার হয়ে গেল তো মাতব্বরমশায় প্রোগ্রামের নিচে দুটো-তিনটে নতুন নাম বসিয়ে দিয়ে গেলেন। দীনবন্ধু-দাদার দধিভাণ্ড আর কি! ভাণ্ড যতই উপুড় করুন, দধি আর শেষ হয় না। কার পরে কে বলবেন, সেটাও সেই মাতব্বর মশাই বলে দিচ্ছেন। সভাপতির কাজ শুধু করুণ মুখে শেষ সময়ের প্রতীক্ষা করা, সকলের যাবতীয় কথা যখন শেষ হয়ে যাবে। ইতিমধ্যে উঠে গিয়ে একটান সিগারেট টেনে আসবেন, সে উপায় নেই। কোমরে ফিক ধরলেও একবার নড়ে বসতে দেবে না। প্রাচীন গানে মৃত্যুসময়ের ভয়ঙ্কর অবস্থার বর্ণনা আছে, তারই একটা কলি সেই সময়ে ঘুরে ফিরে মনে আসে— ‘অন্যে বাক্য কবে তুমি রবে নিরুত্তর।’ রামমোহন রায়ের রচনা। তিনিও নিশ্চয় অনেক সভায় সভাপতিত্ব করেছিলেন। নয়তো কলমের ডগায় এমন মোক্ষম বাক্য সম্ভবে না।

আরও যে কত রকমের বিপদ সভাপতিত্ব করতে গিয়ে! শুনবেন? এক গণ্ডগ্রামে নিয়ে গেছে, ছোঁড়াদের কী এক সাংস্কৃতিক সভা। ভোরের আগে ট্রেন নেই, রাতটুকু কাটিয়ে আসতে হবে। এক ছোকরা নিয়ে এসেছে। বলে, স্টেশনের উপর দোতলা হরিসভার বাড়ি, ফুরফুরে হাওয়া, তোফা থাকবেন। অতএব মাঝারি গোছের বেডিং ও স্যুটকেশ সঙ্গে নিতে হল।

স্টেশনে নেমে কুলি পাইনে। ছোকরা বলে, গাঁয়ের ডেলি-প্যাসেঞ্জার, শক্তসমর্থ মানুষ সবাই, কুলির তোয়াক্কা রাখিনে আমর। স্টেশন ছেড়ে যত কুলি খাদের কাজে নেমে গেছে।

বেডিংটা সে নিয়ে নিল—প্রথমে বগলে, পরে কাঁধে, সর্বশেষ মাথায়। স্যুটকেশ আমি নিয়েছি। ওটাও মাথায় তুললে সুবিধা হত। কিন্তু সভাপতি মানুষের ইজ্জত বিবেচনা করে প্রাণপণে হাতে ঝুলিয়ে নিয়ে চলেছি। চলেছি তো চলেইছি।

কী ভায়া, বললে যে স্টেশনের উপর—

ছোঁড়া খিঁচিয়ে উঠল : স্টেশনের উপর মানে কি প্লাটফর্মের উপর?

সন্ধ্যা হয় হয়। এক সময় অবশেষে হরিসভার বারান্দায় ধপাস করে সে বেডিং নিয়ে ফেলল। তাকিয়ে তাকিয়ে দেখি। বাড়ি দোতলাই বটে, কিন্তু সামনের দরজায় ভারী তালা ঝুলছে।

বসুন আপনি—বেডিং-এর উপরেই চেপে বসুন না। দেখে আসি, ঘর খোলার কী করা যায়।

গেল তো গেল। ঘোর হয়ে গেছে। ঠায় বসে আছি এক জায়গায় ধুলোপায়ে। জনমানব দেখিনে যে জিজ্ঞাসা করে নেব হাত পা ধোবার পুকুরঘাট কোন দিকে। নিজে খোঁজ করব—কিন্তু জায়গাটা যেন কেমন কেমন, জিনিসপত্র ফেলে বেরুতে ভরসা হয় না। সেই ফাঁকে হয়তো বা লোপাট হয়ে যাবে।

আওয়াজ পাচ্ছি, কলকাতার গাড়ি এল একটা। রাস্তার উপরে এতক্ষণে মানুষের চলাচল। ডেলি-প্যাসেঞ্জাররা বাড়ি ফিরছেন। ডাকাডাকিতে একজন এসে কম্পাউন্ডে ঢুকলেন।

কে আপনি মশায়? এখানে কী জন্যে বসে?

সভায় নিয়ে এসেছে। তাদের কারও পাত্তা পাচ্ছিনে।

ছেলেছোকরার কাণ্ড। বোধহয় ভুলে গেছে।

আপনি যদি একটু মনে করিয়ে দিয়ে আসেন দয়া করে।

দূর মশায়। খেটেখুটে এলাম, কোথায় কাকে এখন খুঁজে বেড়াই! কে নিয়ে এসেছে, নামটাও তো সঠিক বলতে পারছেন না।

পরক্ষণে সান্ত্বনা দেন : থাকুন না বসে। জলে পড়েননি। গাড়িভাড়া দিয়ে যখন নিয়ে এসেছে, ঠিক একসময় মনে পড়ে যাবে।

তিনি সরে পড়লেন। তারপর আরও সব আসছেন। কয়েকজন করুণাপরায়ণ। চুক-চুক করে বলেন, ছোঁড়াগুলোর কাণ্ডই এইরকম। আপনাকেও বলি মশায়। ওরা নাচিয়ে দিল, অমনি নেচে উঠলেন। গিয়ে তো গাঁয়ের নিন্দে করবেন—গ্রামবাসী আমাদেরই যত জ্বালা।

আমি ঘাড় নেড়ে বলি, কিচ্ছু না, শতমুখে প্রশংসা করব, সাড়ে-আটটার ট্রেনে যাতে কলকাতা ফিরতে পারি সেই উপায় করে দিন। একটা লোক দেখে দিন মালগুলো যে স্টেশনে দিয়ে আসবে।

ভদ্রলোক শিউরে ওঠেন : রক্ষে করুন। মারা যাই আর কি আপনার কথা শুনে। আপনি তো গাড়ি চেপে সড়াৎ করে বেরিয়ে পড়লেন। জানাজানি হতে বাকি থাকবে না—সভাপতিকে সরিয়ে যজ্ঞি নষ্ট করেছি। সকালসন্ধ্যা স্টেশনের পথে যেতে হয়, পথের উপর চায়ের দোকানে ওদের আড্ডা। ইট মেরে মাথা ফাটিয়ে দিলে আপনি কি তখন ঠেকাতে আসবেন। তার চেয়ে চা এনে দিচ্ছি—চা খেয়ে চাঙ্গা হয়ে বসুন।

সত্যি, করুণার অন্ত নেই। কেটলি ও মাটির ভাঁড় নিয়ে এলেন সেই কোনও চায়ের দোকান থেকে। অতিরিক্ত একখানা লেড়ো-বিস্কুট। ঈশ্বর এঁদের শতায়ু করুন। তারপরেও নিজেদের মধ্যে বলাবলি হচ্ছে : শোবেন কোথা সভাপতি মশায়—বারান্দার উপরে? খাবেন কি?

এক ময়রা আছে বুঝি, তাকে লুচি ভাজবাব ফরমাস দিলে সভাপতিকে উপবাসে নিশিযাপন করতে হয় না। লুচি আর আলু-কুমড়োর তরকারি। কিন্তু যা করতে হয়, এখনই। দোকান বন্ধ করে ময়রা বাড়ি চলে গেলে আর হবে না।

ফিস্‌ফিস্-গুজগুজ চলছে। লুচির মূল্যটা কে দেয়, সেই কথা। চাঁদা তোলার কথা উঠছে, তা-ও বুঝতে পারি। ক্রুদ্ধ একজন ওঁদের মধ্যে বলে উঠলেন, মাতব্বরি করে ছোঁড়া নিয়ে এল, আমরা কেন গচ্চা দিয়ে মরব?

আমি একটা টাকা বের করে দিলাম। ময়রাকে দিন গিয়ে। লুচিভাজা হলেই নিয়ে আসবে, গরম গরম খেয়ে নেব।

সভার উদ্যোক্তারা অনতিপরেই এসে উপস্থিত, যে ছোকরা আমায় বসিয়ে দিয়ে চাবি খোলার ব্যবস্থায় গিয়েছিল, সে-ও এসেছে।

মিটিঙে আসুন।

রাত আটটার সময় মিটিং আবার কী?

ছোকরা বলে, ভারি লজ্জার ব্যাপার। হরিসভার চাবি যাঁর কাছে, তিনি কলকাতায় গিয়ে বসে আছেন। তাঁর খোঁজে দেরি হয়। তার উপর দুটো দল আমাদের। সাবজেক্ট কমিটিতে মারামারি ব্যাপার। অনেক কষ্টে এতক্ষণে মিটমাট হয়ে গেল।

না ভাই, শরীর ভেঙে পড়ছে। যা হোক কিছু মুখে দিয়ে আমি শুয়ে পড়ব।

ওপক্ষের স্বর ক্রমশ উষ্ণ হয়ে উঠছে : শুয়ে পড়বেন কি—সভাপতি বিনে মীটিং হয় কখনও?

বারান্দার উপর সেই তো শিবস্থাপনা করে চলে গেলেন। সভাপতির কি গতি হল, এতক্ষণের মধ্যে খোঁজ নিয়েছেন একবার?

ছোকরা অধীরভাবে বলে, বললাম তো অন্যায় হয়েছে। এক কথা কতবার বলতে হবে? খাতিযরত্ন করে অতদূর থেকে নিয়ে এলাম, আপনি বলছেন শুয়ে পড়বেন। চার গাঁয়ের মানুষ জড় হয়েছে, তাদের সামনে চুন-কালি দেবেন আমাদের মুখে। বেশ, দেখুন না সেই চেষ্টা করে।

মেজাজ বুঝে সুড়সুড় করে চললাম। দুটি ছেলে—ভলান্টিয়ার হবে তারা—স্যুটকেশ ও বেডিং ছোঁ মেরে তুলে চলল।

যায় কোথা ওরা?

তুলে পেড়ে রাখছে। ঘর খোলা গেল না, এইখানে ফাঁকায় শোবেন। ফুরফুরে হাওয়া। মিটিং হয়ে গেলে ওরাই এসে যত্ন করে বিছানা পেতে দিয়ে যাবে।

লুচির অর্ডার দিয়ে সেই ভদ্রলোক ইতিমধ্যে ফিরে এসেছেন। বললেন, ঠাণ্ডা লুচি কিন্তু চামড়ার মতন টেনে ছিঁড়তে হবে। তার চেয়ে খেয়েদেয়ে কায়েমি হয়ে মিটিঙে বসুন গে।

সেই লোভে নিমেষকাল বোধহয় থমকে দাঁড়িয়েছি। অমনি হুঙ্কার উঠল : বাগড়া দেন কি জন্যে? লুচি খেতে তো আসেন নি, কী দরের মানুষ—লুচি কলকাতায় ঢের ঢের খেয়ে থাকেন। কী বলেন সার?

ঘাড় নেড়ে তৎক্ষণাৎ সকাতরে সায় দিই।

কত লোক, আশা করে এসেছে। নমো-নমো করে সেরে ওঁর মতলব মতন ফলারে এসে বসবেন, সেটা কিন্তু হবে না সার।

চিঁচিঁ করে বলি, তা কেন হবে?

প্রীত হয়ে ছোকরা বলে, দেশের এই দুর্দশা—বক্তৃতা জ্বালাময়ী হয় যেন। দেখবেন কী হাততালি!

আরও আছে। পরের দিন সকালবেলা। ওদের বলেছিলাম, যা হবার হল। পয়লা ট্রেন ধরিয়ে দিতে হবে কিন্তু।

আলবাৎ। তার আগে ব্রেকফাস্ট। চায়ের দোকানটা বলতে গেলে আমাদেরই। তারা ব্যবস্থা করেছে। যত কিছু খুঁত ওই এক খাওয়াতে পুষিয়ে দেবে। দেখবেন কী পেল্লায় ব্যাপার।

রোদ উঠে যায়, চোখ মুছতে মুছতে ভলান্টিয়ার একটি এল।

চলুন। যা ধকলটা গেল, ঘুম ভাঙতে দেরি হয়েছে। ছুটে চলুন, স্টেশনে গাড়ি এসে পড়ল বোধহয়।

আজকে উল্টো। সে নিয়েছে স্যুটকেশ, আমি বিছানা। বিছানা মাথায় চাপিয়ে নিলাম। দেখুকগে লোকে, বয়ে গেল। হাঁপাতে হাঁপাতে কোনও রকম কামরায় ওঠা গেল। গাড়ি তখন চলতে শুরু করেছে।

প্ল্যাটফর্ম থেকে বলে, টিকিট করা হয়নি কিন্তু সার।

তবে?

ভয় কিসের? টিকিটবাবু টিকিট চাইলে হাতে একটা আধুলি গুঁজে বেরিয়ে যাবেন। এই তো রেওয়াজ। হরদম করছি আমরা।

কিন্তু কাপুরুষ আমি, বহুপরীক্ষিত পন্থা নিতে সাহসে কুলায় না। পরের স্টেশনে গার্ডকে বলে ন্যায্য ভাড়া মিটিয়ে দিলুম। এতক্ষণে সোয়াস্তির নিশ্বাস পড়ে—এ যাত্রার ফাঁড়াটা বোধহয় কাটল।

এসব অনেক দিনের কথা। এ লাইনে নবীন আগন্তুক তখন। আবার ঝানু সভাপতিও আছেন— সামাল দিতে উদ্যোক্তারা নাকের জলে চোখের জলে হন। এক সভাপতির তুষ্টির জন্য টালিগঞ্জ থেকে দু-গাড়ি বাঁশ কিনে পাঠাতে হয়েছিল। সে গল্প, পারেন তো, কবিশেখর কালিদাস রায় মশায়ের কাছে শুনে নেবেন।

২৬ মার্চ ১৯৬১

সকল অধ্যায়

১. রবিবার – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
২. একটি পাড়াগাঁয়ের মেয়ের প্রেমকাহিনী – সরলাবালা সরকার
৩. ভরতের ঝুমঝুমি – পরশুরাম
৪. মাথার বালিশ – উপেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়
৫. নিরুপম তীর্থ – জগদীশ গুপ্ত
৬. আহ্বান – বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
৭. কঙ্কাল – বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়
৮. যাদুকরী – তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
৯. প্রিয় চরিত্র – শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়
১০. বোবা – বনফুল
১১. অপরাজিতা – শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়
১২. আমি এখানে ছিলাম – প্রমথনাথ বিশী
১৩. সভাপর্ব – মনোজ বসু
১৪. আর্দালি নেই – অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত
১৫. রেডিয়ো সর্বদাই রেডি – শিবরাম চক্রবর্তী
১৬. অন্ধকারের অন্তরালে – সরোজকুমার রায়চৌধুরী
১৭. বেলা যে গেল – অন্নদাশঙ্কর রায়
১৮. স্নব্ – সৈয়দ মুজতবা আলী
১৯. অঙ্গার – প্রবোধকুমার সান্যাল
২০. হিসাব নিকাশ – সতীনাথ ভাদুড়ী
২১. অ্যাবারক্রোম্বি – লীলা মজুমদার
২২. সঞ্চয়াভিলাষীর অভিযান – মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
২৩. ভাড়াটে বাড়ি – গজেন্দ্রকুমার মিত্র
২৪. আবছায়া – বুদ্ধদেব বসু
২৫. আত্মজ – আশাপূর্ণা দেবী
২৬. রুপো ঠাকরুনের ভিটা – সুবোধ ঘোষ
২৭. অনিমন্ত্রিত আশুকাকা – বিমল মিত্র
২৮. কবি শিশির রায়ের মৃত্যু – অজিতকৃষ্ণ বসু
২৯. নীল পেয়ালা – জ্যোতিরিন্দ্র নন্দী
৩০. তমোনাশের মন – অদ্বৈত মল্লবর্মণ
৩১. ক্যালেন্ডার – নরেন্দ্রনাথ মিত্র
৩২. প্রহরী – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়
৩৩. পটভূমি – শচীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়
৩৪. স্ত্রৈণ – সন্তোষকুমার ঘোষ
৩৫. বীরভোগ্যা – শান্তিরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
৩৬. পিকুর ডায়েরী – সত্যজিৎ রায়
৩৭. ইন্টারভিউ – বিমল কর
৩৮. খুনি বউ – রমাপদ চৌধুরী
৩৯. প্রশ্ন – গৌরকিশোর ঘোষ
৪০. বিহিত – সমরেশ বসু
৪১. পর্বত – মহাশ্বেতা ভট্টাচার্য
৪২. তাপ্পিমামার অপেক্ষায় – হিমানীশ গোস্বামী
৪৩. মায়ার খেলা – ইন্দ্রমিত্র
৪৪. ছিনতাই – বরেন গঙ্গোপাধ্যায়
৪৫. বুনোহাঁসের মাংস – সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ
৪৬. ফুল – শরৎকুমার মুখোপাধ্যায়
৪৭. একটি পিকনিকের অপমৃত্যু – মতি নন্দী
৪৮. কুসুম আসছে – শক্তি চট্টোপাধ্যায়
৪৯. চোর চাই – শংকর
৫০. নিশীথে সুকুমার – শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়
৫১. ঈর্ষা – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
৫২. মেঘনার গল্প – প্রফুল্ল রায়
৫৩. ঠগী – তুলসী সেনগুপ্ত
৫৪. আজ আমার সংবর্ধনা – অতীন বন্দোপাধ্যায়
৫৫. আমার মেয়ের পুতুল – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৫৬. P.A. – সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
৫৭. ভীষণ ভিড়ের মধ্যে – তারাপদ রায়
৫৮. লাল ভেটকি – বুদ্ধদেব গুহ
৫৯. এক্সপ্রেস – নবনীতা দেব
৬০. ওতুলের প্রতিদ্বন্দ্বী – বাণী বসু
৬১. মুন্নির সঙ্গে কিছুক্ষণ – দিব্যেন্দু পালিত
৬২. নীল আলোয় – শেখর বসু
৬৩. তিনতলার ঘর – রমানাথ রায়
৬৪. ঈশ্বরের ভূমিকায় – সমরেশ মজুমদার
৬৫. কম্পি বড় ভাল মেয়ে – সুব্রত সেনগুপ্ত
৬৬. পৃথিবীটা কার বশ – শৈবাল মিত্র
৬৭. উনিশ বছর বয়স – সুচিত্রা ভট্টাচার্য
৬৮. চান্দ্রায়ণ – সুব্রত মুখোপাধ্যায়
৬৯. একদিন অমিতাভ – রাধানাথ মণ্ডল
৭০. ঈর্ষা – আবুল বাশার
৭১. নবগ্রামের মেয়ে – অমর মিত্র
৭২. ভাগের মা – মানব চক্রবর্তী
৭৩. ঝড়ে কাক মরে – স্বপ্নময় চক্রবর্তী
৭৪. মল্লার যেখানে নামে – জয় গোস্বামী
৭৫. জার্মানি যাচ্ছি না – সুকান্ত গঙ্গোপাধ্যায়

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন