জন্মশতবর্ষে সুধীরকুমার – তপন রায়চৌধুরি

জন্মশতবর্ষে সুধীরকুমার – তপন রায়চৌধুরি

সমবেত বন্ধুবর্গ, আজকে সুধীরকুমার মিত্রের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে একটি ফলক উন্মোচন করা হয়েছে। সংস্কৃতি হিসেবে যে কর্তব্যকর্ম অনেক আগেই করা উচিত ছিল। ওঁর বিরাট কীর্তি পাঁচ মিনিট সে-বিষয়ে কিছু বলে বাগবিস্তার করা উচিৎ কাজ নয়। তাতে তাঁর প্রতি অশ্রদ্ধা দেখানো হয়। আমি শুধু একটা কথা বলতে চাই সুধীরকুমার মিত্র অসাধারণ ব্যক্তি। অসাধারণ তাঁর আত্মনিবেদনে তাঁর কর্মমগ্নতায়, এ আমাদের সংস্কৃতিতে একটা কথা আছে সাধনা, সে শব্দটা আমরা ভুলে গিয়েছি। এই-জাতীয় সাধক জীবনের নানা ক্ষেত্রে দেখা যেত। স্বাধীনতাপূর্ব যুগে ভারতীয় বুদ্ধিজীবীদের, ভারতীয় কর্মীদের জীবনের নানাক্ষেত্রে সুযোগসুবিধে প্রায় ছিল না বললেই চলে। অর্থকষ্ট, বহুমুখী ব্যর্থতার মধ্যে মানুষ তাঁদের জীবনযাপন করতেন। সেই যে ব্যর্থতাবোধ তার থেকে উত্তরণের কতকগুলি পথ ছিল। কেউ আন্দোলনের পথে, কেউ ধর্মের পথে, কেউ সেবার পথে, কেউ জ্ঞানচর্চার পথে, সেই উত্তরণের চেষ্টা করতেন। এই উত্তরণের প্রচেষ্টার মধ্যে একটা নৈর্ব্যক্তিক দিক ছিল। এঁরা নিজেদের খ্যাতির জন্যে প্রতিষ্ঠার জন্যে করতেন না। আঞ্চলিক ইতিহাস লিখে স্বাধীনতাপূর্ব যুগে প্রচুর খ্যাতি কেউ অর্জন করবেন এই ভরসায় একাজ কেউ করেননি। করেছেন প্রাণের টানে। নীহাররঞ্জন রায় তাঁর বাঙালির ইতিহাসের ভূমিকায় একটা কথা লিখেছিলেন—রাজনৈতিক কর্মপ্রসঙ্গে, অন্য নানা কাজে তিনি এই বাংলার নানা জায়গায় সারাজীবন ঘুরে বেড়িয়েছেন। উনি বলেছেন ওঁর ইতিহাস লেখার পেছনে একটাই প্রেরণা। আমি ওঁর কথার উদ্ধৃতিতেই ‘এই দেশকে জানি না কখন যেন ভালোবাসিয়াছিলাম।’ এঁরা দেশকে ভালোবাসিয়াছিলেন। এঁরা যা করতেন মনে করতেন দেশের গৌরবের জন্যে করছেন, দেশের কাজে আসার জন্য করছি। এই যে আত্মনিবেদনের ইতিহাস, সেই ইতিহাস যেন আমাদের জীবন থেকে মুছে গেছে। সুধীরকুমার মিত্রের মতো জ্ঞানসাধকের কথা স্মরণ করতে সেই আত্মনিবেদনের কথা আমরা যেন আবার স্মরণ করি। আজ আমাদের আদর্শবিহীন জীবনে যদি আদর্শ ফিরিয়ে আনতে হয়—এবং আদর্শবিহীন কোনো জাতি বেশি দিন বাঁচতে পারে না তাহলে এই জাতীয় মানুষের জীবন আমাদের স্মরণ করা প্রয়োজন। এই কথা বলে আমার বক্তব্য আজকে শেষ করছি।

[৫.১.২০০৯ সুধীরকুমার মিত্রের কালীঘাটের বাড়িতে জন্মশতবর্ষ ফলক উন্মোচকের ভাষণ]

সকল অধ্যায়

১. বাংলার আঞ্চলিক ইতিহাসচর্চা – রমাকান্ত চক্রবর্তী
২. বাংলার মন্দির-টেরাকোটা – ইন্দ্রজিৎ চৌধুরি
৩. বাংলার মন্দিরগাত্রচিত্র – অঞ্জন সেন
৪. কুলুজি বৃত্তান্তে ইতিহাসের উপাদান – তারাপদ সাঁতরা
৫. বঙ্গে আঞ্চলিক ইতিহাসচর্চা প্রসঙ্গে – ড. গোপীকান্ত কোঙার
৬. আঞ্চলিক ইতিহাসচর্চা : হাওড়া – শিবেন্দু মান্না
৭. আঞ্চলিক ইতিহাসচর্চা : বর্ধমান – বারিদবরণ ঘোষ
৮. আঞ্চলিক ইতিহাসচর্চা : দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা – মৃত্যুঞ্জয় সেন
৯. আঞ্চলিক ইতিহাসচর্চা : মুর্শিদাবাদ – প্রকাশদাস বিশ্বাস
১০. আঞ্চলিক ইতিহাসচর্চা : বীরভূম – পার্থশঙ্খ মজুমদার
১১. নদিয়া মাঝারে অগ্রদ্বীপ একনাম – বারিদবরণ ঘোষ
১২. আঞ্চলিক ইতিহাসচর্চা : বাঁকুড়া – শেখর ভৌমিক
১৩. পুরোনো কলকাতার জনগোষ্ঠী : একটি রূপরেখা – দেবাশিস বসু
১৪. আঞ্চলিক ইতিহাসচর্চা : হুগলি – বিশ্বনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়
১৫. আঞ্চলিক ইতিহাসচর্চা : উত্তর চব্বিশ পরগনা – কানাইপদ রায়
১৬. পুরুলিয়ার মন্দির স্থাপত্য – দীপকরঞ্জন দাশ
১৭. অখন্ড মেদিনীপুরের পুরাকীর্তি – তারাপদ সাঁতরা
১৮. গ্রামগবেষণার পথিকৃৎ – নিশীথরঞ্জন রায়
১৯. আঞ্চলিক ইতিহাসের পুরোধা ব্যক্তিত্ব – প্রতাপচন্দ্র চন্দ্র
২০. জন্মশতবর্ষে সুধীরকুমার – তপন রায়চৌধুরি
২১. অন্তরতর গবেষক – ভবেশ দাস
২২. সুধীরকুমারের জীবন ও ইতিহাসচর্চা – সৌমিত্রশংকর সেনগুপ্ত
২৩. কাছে থেকে দেখা – পল্লব মিত্র
২৪. Tarakeshwar and Its History – Rajat Kanta Roy
২৫. History and Culture Nishith – Ranjan Roy
২৬. ইতিহাস রচনায় সুকীর্তি – শক্তিপ্রসাদ রায়শর্মা
২৭. সুধীরকুমার মিত্রের স্থাপত্য ভাবনা – মণিদীপ চট্টোপাধ্যায়
২৮. বাঙালির দেব-দেবী প্রসঙ্গ – অর্ধেন্দু চক্রবর্তী
২৯. শ্রীচৈতন্যদেবের পথ ধরে – দেবব্রত মল্লিক
৩০. পত্রপত্রিকার আলোকে – নজরুল সুনীল দাস
৩১. ইতিহাস সমাজ সংস্কৃতি – মনীষা রক্ষিত
৩২. অতীত যখন কথা বলে – পার্থ গুহবক্সী
৩৩. সুধীরকুমার মিত্রের গিরিশচন্দ্র মুগ্ধতা – অরুণ মুখোপাধ্যায়
৩৪. অঞ্চলচর্চা বিষয়ক নির্বাচিত গ্রন্থ-তালিকা – অশোককুমার রায়

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন