কেয়ারটেকার – ৩

মহাশ্বেতা দেবী

পরদিন অপরূপবাবু আসে। সুদেবকে কটেজে ডাকে।

—কি লিখেছে? কে এসেছে তোমার?

—আমার আত্মীয়া।

—তোমার আত্মীয়া। তোমাদের সবংশে চিনি। তোমার আত্মীয়া, এখানে এসে থাকছেন…?

—ওই ঘর তো ভাড়া দেয়াই হয় সীজনে।

ভাড়া দিয়ে আছেন, পয়সা দিয়ে খাচ্ছেন।

—সে কথা নয়, সে কথা নয়। কথা হোল সেদিনে আমার বাসেই এসেছেন। ড্রাইভার বলল, কোনো মন্দ ভাবে বলেনি, যে উনি সিনেমা করতে এসেছিল, ওরা শুটিং দেখেছে। আবার সেদিনে বাসে ডাক্তারও ছিল। সে বলল, মেয়েটা জলে ডুবে গেছল, ও চিকিৎসা করে।

—তাতে কি হোল?

সিনেমা করছিল, না জলে ডুবে গেল?

—সিনেমার জন্যেই জলে ঝাঁপ দেয়, তারপর ডুবে যেত। ওকে তোলা হোল।

—সে তো আমি জানি। তখনি শুনেছি।

—আপনার প্রশ্নটা কি?

—একলা মেয়েছেলে…তুমি বলছ আত্মীয়া এতেই আমি অবাক। তুমি তো কোনোদিন…

—একলা স্ত্রীলোক কি সুবর্ণ লজে থাকে না? বুকিং করে পাঠান না? এ কি নতুন?

—সুদেব, সুদেব, আমি তোমায় মন্দ ভাবে বলছি না। আসে বটে, কিন্তু রিটায়ার টিচার, ডাক্তার…বয়স্কা মেয়েছেলে—তোমাকে আমি…

—আর কিছু বলবেন?

—সুবর্ণ লজ তোমারি হাতে…

—ভাববেন না। যদি বুঝি যে আমার দ্বারা সুবর্ণ লজের কোনো দুর্নাম হচ্ছে, আমি ছেড়ে দেব।

—কি বললে?

—ছেড়ে দেব।

—ছেড়ে দেব! দাও! ভালো কথার কি জবাব! ছেড়ে দেব! বলতে একটু ইয়েও হয় না! দেখ সুদেব! আমার কথা পরিষ্কার। বলেছি ভালোভাবে। বলেছি তোমাকে ইয়ে করি বলে। বলাটা যদি অন্যায় হয়ে থাকে, ছেড়েই দাও।

তবে এ কথাতেই ছেড়ে দিলে ধর্ম করবে না।

রাগে অপরূপবাবুর চিবুক কাঁপে।

—যাও! বোগাস ছেলে তুমি। হটচটকা ক্ষেপে যেতেই জানো। হতেই হবে, ছাড়া ঘুড়ি যে! সংসার ধর্ম করলে পাঁচদিক ভেবে কথাবার্তা বলতে, বুঝতে। অপরের ব্যাপারটা তুমিই বোঝই না।

—আমি…স্যরি স্যার!

—ওই এক বাক্য ”স্যরি”! স্যরি বললেই সব হয়ে যায়। কলকাতায় মার্কেটে গেলে সব ব্যাটা পা মাড়িয়ে দেয় আর ”স্যরি” বলে। কেন বলেছি, ভেবে দেখো।

—খুব দুঃখী মেয়েছেলে স্যার!

—তাই যদি হয়, কাজ দেখে দাও, সাহায্য করো। ঘাড়ে নিও না সুদেব। ভালো মানুষরাই বিপদে পড়ে।

—হ্যাঁ স্যার, মনে রাখব।

—এবারে সংসারী হও। ফ্যামিলি কোয়াটার করে দেব। নয় বউকে দেশে রাখবে, যাবে—আসবে।

—এদিকে কাজের কি হবে?

সুদেব বুঝতে পারে, চীনাবাদামের চাষ করবে না অপরূপবাবু। ইউথ হস্টেল করবে। তার জন্য আলাদা স্টাফ রাখবে না, এদিকে স্টাফ সামান্য বাড়াবে।

একজন অ্যাসিস্টান্ট নিয়ে সুদেব ওদিকে দেখবে। একটা দারোয়ান, একজন সুইপার, একটা বয় বাড়বে। সনাতন কিছু বেশি টাকা পাবে, জল দেবে।

অপরূপবাবুর উদ্বেগ সত্যি। কিন্তু নিশ্চয় কোনো লোক কান ভাঙিয়েছে। এ সব হবেই। নমিতা যেহেতু অসহায়, সেহেতু তার বিষয়ে কথাবার্তা হবে। নমিতার মুখও ঠিক অচেনা নয়। শুটিংয়ের সময় অনেকেই ওকে দেখেছিল।

সকল অধ্যায়

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন