অঘোরে ঘুমিয়ে শিব – ৩৪

দেবারতি মুখোপাধ্যায়

৩৪

প্রজাতন্ত্র দিবসের সকালে একে একে স্কুলবাস তাজমহলের সামনে আসছে, অভিভাবক হিসেবে দু-একজন শিক্ষক-শিক্ষিকা নামছেন, তারপরেই টিকিট কাউন্টারে গিয়ে বাধা পাচ্ছেন। কিছুসময় পরেই বাসগুলো হতাশ কচিকাঁচাদের নিয়ে ফেরত চলে যাচ্ছে। ছাব্বিশে জানুয়ারির সকালে কোনো বিশেষ নিরাপত্তার কারণে তাজমহল দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ।

ঘড়িতে কাঁটায় কাঁটায় যখন আটটা, তখন নাহুম খান তাঁর পুলিশের গাড়িতে করে রুদ্র, প্রিয়ম, অঘোরেশ, নাগেশ সিং-কে নিয়ে মেহতাববাগের পাশের জঙ্গলটায় পৌঁছোলেন। সেখানে তখন পুলিশি ধড়পাকড় চলছে। মি ত্রিবেদী আগে থেকেই একটা বড়ো ফোর্স পাঠিয়ে দিয়েছিলেন নাহুম খানের ফোন পেয়ে।

পুলিশের কনস্টেবলরা গোটা জঙ্গলটা চষে ফেলছিল। প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষ্যে কোনো শ্রমিক আজ কাজে আসেনি। মাঝের আর্কিয়োলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার অধীনে থাকা মেহতাববাগের অংশটুকু বাদ দিলে গোটা জঙ্গলটা একটা সার্কলের মতো যেন চারদিক থেকে মেহতাববাগকে ঘিরে আছে।

ওরা বিস্ময়ে দেখছিল সেই গোটা জঙ্গলটাকে পরিষ্কারের নামে খুঁড়ে ফেলা হয়েছে। ছোটো ছোটো বর্গাকার একধরনের স্ল্যাবে ছেয়ে গেছে গোটা জায়গাটা। প্রতিটা স্ল্যাবের পাশে ছোট্ট একটা করে ফ্ল্যাগ আটকানো, তাতে লেখা রয়েছে একটা করে নম্বর।

রুদ্র এগিয়ে গিয়ে একটা স্ল্যাবের সামনে বসে পড়ল। চৌকো করে কাটা একটা সিমেন্টের বর্গাকার পাত। একজন কনস্টেবল গিয়ে স্ল্যাবটা চেপে ধরে সরিয়ে দিতেই বেরিয়ে পড়ল একটা গর্ত। বোঝাই যাচ্ছে স্ল্যাবগুলো গর্তগুলোকে চিহ্নিত করতে সম্প্রতি বসানো হয়েছে।

নাহুম খান এগিয়ে এলেন, ‘সরুন, সরুন কেউ ভেতরে উঁকি দেবেন না!’ গর্তের ভেতরে তিনি জোরালো টর্চের আলো ফেললেন।

পুলিশের টর্চের আলোয় সবাই দেখতে পেল প্রায় মিটার দশেক তেরচাভাবে ভাঙাচোরা ধাপ বেয়ে নেমে গেছে গর্তের পথ, একদম নীচে গাঢ় অন্ধকারের মধ্যে দেখা যাচ্ছে একটা গরাদ।

প্রফেসর বেগ উত্তেজনায় কাঁপতে কাঁপতে বললেন, ‘সুড়ঙ্গ!’ বলে এগোতে গেলেন, কিন্তু নাহুম খান সঙ্গেসঙ্গে ধরে ফেললেন, ‘আপনি কোথাও যাবেন না ড বেগ! এখানে বসুন।’

প্রফেসরকে নাহুম খান ধরাধরি করে বসিয়ে দিলেন পাশের মাটিতে।

একজন সাবইনস্পেকটর ছুটে এল এদিকে, ‘স্যার! মোট তেরোটা গর্ত বেরিয়েছে, প্রত্যেকটারই নীচের দিকে গরাদ রয়েছে।’

‘চলো তো, দেখি!’ নাহুম খান এগোতে যাচ্ছিলেন, নাগেশ সিং এবার ধৈর্য হারিয়ে কর্কশ স্বরে চেঁচিয়ে উঠলেন, ‘আরে আপনি আগে আমার মেয়ের ব্যাপারটা রিসলভ করুন মি খান! কমিশনারের তো আপনাকে তেমনই ইনস্ট্রাকশন দেওয়া রয়েছে। দিল্লি পুলিশ আসতে আসতে অনেক দেরি হয়ে যাবে। এইসব গর্ত-টর্ত পরে দেখবেন, আমার মেয়ের জীবনটা তো আগে!’

নাহুম খান থমকে দাঁড়িয়ে একঝলক তাকালেন নাগেশ সিং-এর দিকে। নাহুম খানকে রুদ্র এই দু-দিন ধরে যা দেখছে, লোকটা সৎ, পরিশ্রমী কিন্তু স্পষ্টবাদী। ও ভাবল, এই বুঝি উনি উত্তর দেবেন কিছু একটা।

কিন্তু না, নাহুম খান বললেন, ‘অবশ্যই স্যার, আমি চেষ্টা করছি।’ কথাটা বলে একটা কনস্টেবলকে নিয়ে এগিয়ে গেলেন ভেতরের দিকে।

নাগেশ সিংও দাঁড়ালেন না, দ্রুত বেগে হাঁটতে লাগলেন নাহুম খানের পেছন পেছন। একটু বাদেই তাঁরা সবাই দৃষ্টির আড়ালে চলে গেলেন।

গোটা জঙ্গলটা ছড়ানো, তার ওপর অজস্র যত্রতত্র বেড়ে ওঠা বড়ো বড়ো গাছের কারণে বোঝা যাচ্ছে না এর আকারটা কেমন। তারই মধ্যে অঘোরেশ আর ড বেগ বসেছিলেন চুপ করে।

‘তোমার কী মনে হয়, কবীর খানকে ধরা যাবে?’ রুদ্র প্রিয়মের উদ্দেশে কথাটা বলে ড বেগের পাশের একটা উঁচু ঢিপিতে বসে পড়ল। দাঁড়িয়ে থাকার ক্ষমতা ওর ক্রমশই লোপ পাচ্ছে।

প্রিয়ম উত্তর দিল না, নিজের মনেই বিড়বিড় করে বলল, ‘প্রাচীন অঙ্ক বলতে যদি মিরর সিমেট্রিকে বোঝানো হয় আর সেই অনুযায়ী যদি সুড়ঙ্গ হয়, তবে তো তাজমহলের একদম উলটোদিকে এই পুরো চত্বরটাই পড়ছে, তার মধ্যে পড়ছে মেহতাববাগের অংশটাও, আর্কিয়োলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার অধীনে থাকায় সেটায় তো এরা খোঁড়াখুঁড়ি চালাতে পারেনি, ওর মধ্যেও তো কিছু সুড়ঙ্গ লুকিয়ে থাকতে পারে!’

‘কবীর অসম্ভব চালাক!’ এই প্রথম একটা সুসংবদ্ধ বাক্য বললেন ড নিজামুদ্দিন বেগ। তার হাতের আঙুলগুলো এখনও কাঁপছে, তবু তিনি থামলেন না, ‘কবীর আমার রিসার্চের শ্লোকগুলো থেকে অঙ্কগুলো খুঁজে বের করত। ওর মতো ক্ষুরধার মাথার ছেলে যখন শয়তানদের সঙ্গে হাত মেলায়, তখন সেই অশুভ কাজ আগে থেকে টের পাওয়ার ক্ষমতা অনেক কমে যায়, আর যখন মানুষ বুঝতে পারে, তখন আর কিচ্ছু করার থাকে না।’

‘কিছু যদি না মনে করেন স্যার।’ রুদ্র বলল, ‘আপনার সবকটা কলাম আমরা মন দিয়ে পড়েছি। আপনি আপনার রিসার্চ প্রথমে শুরু করেছিলেন চান্দেলা রাজাদের আর্কিটেকচারের অন্তর্নিহিত গণিতের পারদর্শিতা নিয়ে, কিন্তু ক্রমশই আপনার মনে হতে থাকে চান্দেলা রাজাদেরই কীর্তি আগ্রার এই তাজমহল আর ইতমদ-উদ-দৌলার কবর। এবং সেই কারণে ঠিক করেন আপনার মতামত দেশের জনসাধারণকে জানাবেন। আপনার গবেষণা, যুক্তি আমি পড়েছি, কিন্তু কবীরের স্বার্থটা আমাদের কাছে এখনও পরিষ্কার নয়। আপনার কাছে কিছু বিদেশি এসেছিল কোনো একটা কাজ হাসিল করতে, যেটা আপনি না বলে দিয়েছিলেন, কিন্তু ওরা পরে কবীর খানকে অ্যাপ্রোচ করে, নিশ্চয়ই প্রচুর টাকার লোভ দেখায়, কবীর আপনার কাজ ছেড়ে ওদের প্ল্যানমাফিক এইসব করতে থাকে। আমি শিয়োর যাদের আন্ডারে কবীর কাজ করছে, তাদের হাত অনেক লম্বা, কর্পোরেশনের ভেতর থেকে পুলিশমহলেও ওদের চর আছে, আর সেই ইনফ্লুয়েন্সেই কবীর হঠাৎ করে এই জায়গারই সুপারভাইজারের কাজ পেতে পেরেছে। কিন্তু কথাটা হল, কেন এরা এমন আটঘাট বেঁধে নেমেছে? এদের উদ্দেশ্যটা কী?’

‘আর এই ওরা-টাই বা কারা?’ প্রিয়ম বলল।

‘বটেশ্বর শিলালিপি থেকে আমি একটা সন্দেহ করি যে চান্দেলা রাজা পরমাদ্রিদেব ১১৫৫ সালে যে দুটো শিব আর বিষ্ণু মন্দির যমুনা নদীর তীরে বানান, সে-দুটো আসলে ইতমদ-উদ-দৌলার কবর আর তাজমহল। এই সন্দেহটা যখন মাথায় আসে, তখন আমি আমার পুরো রিসার্চটা আরেকবার প্রথম থেকে তলিয়ে দেখতে শুরু করি। প্রায় দশ বছর আগে খাজুরাহো মন্দির সম্পর্কে বেশ কিছু শিলালিপি আমি কালেক্ট করেছিলাম মধ্যপ্রদেশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে। সেগুলো সবই আর্কিয়োলজিকাল সার্ভের সঙ্গে মিলিতভাবে এক্সক্যাভেট করতে হয়েছিল, ফলে সেই শিলালিপিগুলো এখন সবই এ এস আইয়ের আর্কাইভসে, অদ্ভুতভাবে তারপরেও সরকার থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।’ প্রফেসর বেগ মাথা নাড়লেন, ‘জানি না কেন। আমি অনেকবার ওদের আবেদন করেছিলাম, কিছুতেই কিছু না হওয়ায় আমি নিজের মতো রিসার্চ শুরু করি। ওই শিলালিপিগুলোর প্রতিটার কপি আমার কাছে ছিল। সেগুলো ডিকোড করার জন্য আমি কবীরকে কাজে নিই।’

‘কী ভাষায় ছিল সেগুলো?’ রুদ্র জিজ্ঞেস করল।

‘১২০০ সালের আগে পর্যন্ত ছোটোখাটো বিচ্ছিন্ন অঞ্চল বা দক্ষিণ ভারত বাদ দিলে গোটা ভারতবর্ষ সংস্কৃত ভাষায় কথা বলত। ১২০০ সালের পর থেকে মুসলিম আক্রমণ শুরু হলে ফার্সি বা অন্যান্য ভাষা ঢুকতে শুরু করে।’ প্রফেসর বেগ বললেন, ‘কীভাবে কবীর ডিকোড করত, একটা উদাহরণ দিই। শিলালিপিতে একটা শ্লোক ছিল,

 গোপীভাগ্য মধুব্রাত শৃঙ্গীসোদাধিসন্ধিগা
 খলজীবিতখাবত গলহলরসন্ধরা।

‘এটা সংস্কৃত? সেই নরঃ নরৌ নরাঃ! কই অনুস্বর, হসন্ত এইসব নেই তো!’ প্রিয়ম বলল।

প্রফেসর বেগ প্রিয়মের কথা বুঝতে পারলেন না, বললেন, ‘এটা ভগবান কৃষ্ণের একটা শ্লোক। মানে, গোপিদের রক্ষাকর্তা হে কৃষ্ণ, আপনি শত্রু মধুকে বিনাশ করেছেন। আপনি আমাদের গবাদি পশুদের রক্ষা করুন, আপনি সাগরমধ্যে অভিযান করা বীর, সমস্ত অশুভশক্তির বিনাশকারী, আপনার কাঁধে লাঙল, আপনি অমৃতবাহক, আপনি আমাদের রক্ষা করুন!’

‘চান্দেলা রাজারা শৈব ছিলেন না?’ রুদ্র বলল।

‘বেশিরভাগ রাজাই শিবের উপাসক ছিলেন, কেউ কেউ শিব বিষ্ণু দু-জনেরই, যেমন পরমাদ্রিদেব। আবার রাজা ধঙ্গ কৃষ্ণভক্ত ছিলেন।’ প্রফেসর বললেন।

‘এটা তো একটা কৃষ্ণের মন্ত্র, মানে পাঁচালি টাইপ। এর মধ্যে অঙ্ক কোথা থেকে আসছে?’ প্রিয়ম জিজ্ঞেস করল।

‘হ্যাঁ, সবাই সেটাই ভেবেছেন যে এটা একটা ভক্তিমূলক শ্লোক। কিন্তু…!’ প্রফেসর বেগ বললেন, ‘একটা কাগজ কলম কি কারুর কাছে আছে?’

পুলিশের সদর দপ্তরে আঁকার সময় নোটপ্যাডটা রুদ্রর হাতেই ছিল, পেনসুদ্ধু সেটা সঙ্গেসঙ্গে ও এগিয়ে দিল প্রৌঢ়ের দিকে।

প্রফেসর বেগ কাগজে আঁকিবুকি কাটলেন কাঁপা কাঁপা হাতে,

আঁকিবুকি

[প্রফেসর বেগ লিখেছিলেন দেবনাগরীতে, পাঠকের সুবিধার্থে এখানে বাংলা হরফ ব্যবহার করা হল।]

‘এটা কী?’ প্রিয়ম বলল।

‘কতপয়দি!’ অস্ফুটে এই প্রথম বিড়বিড় করলেন অঘোরেশ।

প্রফেসর বেগ খসড়াটার ওপরে আঙুল দিলেন, ‘ঠিক। এটা একটা প্রাচীন হিন্দু এনক্রিপশন, এটার নাম ক-ত-প-য়-দি। দ্যাখো, শ্লোকের প্রতিটা অক্ষরকে যদি আমরা এই চার্ট অনুযায়ী কনভার্ট করি, তাহলে গোপীভাগ্যর গ = 3, প = 1, ভ = 4, এইভাবে আমরা অনেকগুলো সংখ্যা পাব। আর এইভাবে যদি পুরো শ্লোকটাকেই কতপয়দি-তে কনভার্ট করি, গোটা সংখ্যাটা দাঁড়াবে,

31415926535897932384626433832792

‘এটা তো পাই!’ প্রিয়ম লেখা শেষ হতে-না-হতে উঠল, ‘পাই মানে ২২/৭, মানে ৩.১৪১৫৯…। এই কৃষ্ণস্তুতির শ্লোকে পাইয়ের বত্রিশ দশমিক স্থান পর্যন্ত মান দেওয়া আছে?’ বিস্ময়ে প্রিয়মের চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেল, ‘মাই গড!’

‘ইয়েস। বৃত্তের পরিধি এবং ব্যাসের অনুপাতকে বলে পাই। এর মান ২২/৭। মিশরীয়রা বলে আমরা আবিষ্কার করেছি, গ্রিকরা বলে আমরা, এদিকে আমাদের প্রাচীন বৈদিক যুগের মুনিঋষিরা কয়েক হাজার বছর আগে পাইয়ের মান নির্ভুলভাবে এই শ্লোকে লুকিয়ে রেখে গেছেন।’ প্রফেসর বেগ সামান্য হাসলেন, ‘সবচেয়ে আশ্চর্যের কথা কী জান, এই কতপয়দি একক্রিপশন কিন্তু নতুন নয়, বহু পুরোনো। ৬৮৩ সালে হরিদত্ত নামে কেরালার একজন গণিতজ্ঞ এই কতপয়দি ব্যবহার করে গেছেন, আরও অনেক জায়গায় ব্যবহৃত হয়েছে। পুরাতত্ত্ব বিভাগ খুব ভালো করে জানে এর প্রয়োগ, কিন্তু কিছুতেই তারা কোনো গরজ দেখায়নি এবং ভবিষ্যতেও দেখাবে না। ইতিহাস জানার আগ্রহের চেয়ে সেখানে বড় হয়ে দাঁড়াবে রাজনৈতিক অঙ্ক।’

‘এটার মানে কবীর খান বের করেছিল?’ রুদ্র বলল।

‘শুধু এটা নয়, এরকম অজস্র শ্লোকের গাণিতিক রূপও দিয়েছিল। প্রাচীন ভারতবর্ষের শুধু চান্দেলাই নয়, প্রচুর হিন্দু ভাস্কর্যে এমন দৃষ্টান্ত লুকিয়ে আছে। সব শ্লোকই দ্ব্যর্থবোধক, বাইরে ভক্তিমূলক, কিন্তু ভেতরে লুকিয়ে আছে অন্য মানে।’ প্রফেসর একটা নিশ্বাস ফেললেন, ‘যদি প্রাণে বেঁচে যাই, তবে সব মণিমুক্তো একে একে বের করব ঠিক।’

‘আচ্ছা, তাজমহলে ঢোকার সুড়ঙ্গ যে এই মেহতাববাগেই আছে, সেটা কী করে বুঝলেন?’ রুদ্র জিজ্ঞেস করল।

প্রফেসর বেগ মাথা নাড়লেন, ‘এটা মেহতাববাগ কোথায়! মেহতাববাগ তো পাঁচিল দেওয়া ভেতরের অংশ। আর্কিয়োলজিকাল সার্ভে ওটার তত্ত্বাবধান করে।’

‘হ্যাঁ, মানে ওই আর কি, তাজমহলের এই উলটোদিকের অঞ্চল…!’ রুদ্র কথা শেষ করতে পারল না।

প্রফেসর বেগ বললেন, ‘এই পুরো বাগানটার নাম আটশো বছর আগে ছিল চন্দ্র উদ্যান। সম্রাট পরমাদ্রিদেবের বাবা দ্বিতীয় যশোবর্মণ মাত্র এক বছর রাজত্ব করেছিলেন, তার মধ্যেই তিনি এই সুবিশাল উদ্যানটি তৈরি করেন। এই উদ্যানটাও বর্গাকৃতি ছিল, এই দ্যাখো।’ প্রফেসর বেগ একটা নকশা বের করলেন পকেট থেকে, ‘এটা আমি আর কবীর মিলে বের করেছিলাম।’

সুড়ঙ্গগুলো

‘মোটা কালির যে বর্গাকার অঞ্চলটা, ওই পুরোটাই ছিল চন্দ্র উদ্যান, দ্বিতীয় যশোবর্মণের ছেলে পরমাদ্রিদেব তেজোমহালয় বানানোর সময় তাই এই উদ্যানের উলটোদিকটাই বেছে নিয়েছিলেন, যাতে দর্শনার্থীরা এই উদ্যান থেকেও মহাদেবকে প্রণাম করতে পারে। তখনকার দিনে উদ্যানটির বৈশিষ্ট্য ছিল, এর মাঝামাঝি ছিল একটা সুদৃশ্য জলাশয়।’ প্রফেসর বেগ বললেন।

‘কিন্তু এর মাঝে জলাশয় কোথায়? পুরোটাই তো জমি!’ প্রিয়ম বলল।

‘জলাশয়টাই আজকের মেহতাববাগ। আর চন্দ্র উদ্যানের জমিটা পরিত্যক্ত, যেটার ওপর আমরা বসে আছি।’ প্রফেসর বেগ বললেন, ‘চারশো বছর পরে ১৬৫২ সালে শাজাহান মাঝখানের জলাহয় ভরাট করে মেহতাববাগ তৈরি করেন।’ প্রফেসর বেগ নকশার নীচের ছবিটা দেখালেন।

সুড়ঙ্গগুলো

‘আর এই হল সুড়ঙ্গগুলোর অবস্থান। মোট তেরোটা সুড়ঙ্গ। এর মধ্যে কোনো একটা আসল, বাকিগুলো নকল।’ প্রফেসর বেগ বললেন, ‘আমি আর কবীর এই পর্যন্ত এগিয়েছিলাম, তারপর আর এগোতে পারিনি।’

‘কেন?’ রুদ্র জিজ্ঞেস করল।

সকল অধ্যায়

১. অঘোরে ঘুমিয়ে শিব – ২৬
২. অঘোরে ঘুমিয়ে শিব – ১
৩. অঘোরে ঘুমিয়ে শিব – ২
৪. অঘোরে ঘুমিয়ে শিব – ৩
৫. অঘোরে ঘুমিয়ে শিব – ৪
৬. অঘোরে ঘুমিয়ে শিব – ৫
৭. অঘোরে ঘুমিয়ে শিব – ৬
৮. অঘোরে ঘুমিয়ে শিব – ৭
৯. অঘোরে ঘুমিয়ে শিব – ৮
১০. অঘোরে ঘুমিয়ে শিব – ৯
১১. অঘোরে ঘুমিয়ে শিব – ১০
১২. অঘোরে ঘুমিয়ে শিব – ১১
১৩. অঘোরে ঘুমিয়ে শিব – ১২
১৪. অঘোরে ঘুমিয়ে শিব – ১৩
১৫. অঘোরে ঘুমিয়ে শিব – ১৪
১৬. অঘোরে ঘুমিয়ে শিব – ১৫
১৭. অঘোরে ঘুমিয়ে শিব – ১৬
১৮. অঘোরে ঘুমিয়ে শিব – ১৭
১৯. অঘোরে ঘুমিয়ে শিব – ১৮
২০. অঘোরে ঘুমিয়ে শিব – ১৯
২১. অঘোরে ঘুমিয়ে শিব – ২০
২২. অঘোরে ঘুমিয়ে শিব – ২১
২৩. অঘোরে ঘুমিয়ে শিব – ২২
২৪. অঘোরে ঘুমিয়ে শিব – ২৩
২৫. অঘোরে ঘুমিয়ে শিব – ২৪
২৬. অঘোরে ঘুমিয়ে শিব – ২৫
২৭. অঘোরে ঘুমিয়ে শিব – ২৭
২৮. অঘোরে ঘুমিয়ে শিব – ২৮
২৯. অঘোরে ঘুমিয়ে শিব – ২৯
৩০. অঘোরে ঘুমিয়ে শিব – ৩০
৩১. অঘোরে ঘুমিয়ে শিব – ৩১
৩২. অঘোরে ঘুমিয়ে শিব – ৩২
৩৩. অঘোরে ঘুমিয়ে শিব – ৩৩
৩৪. অঘোরে ঘুমিয়ে শিব – ৩৪
৩৫. অঘোরে ঘুমিয়ে শিব – ৩৫
৩৬. অঘোরে ঘুমিয়ে শিব – ৩৬
৩৭. অঘোরে ঘুমিয়ে শিব – ৩৭
৩৮. অঘোরে ঘুমিয়ে শিব – ৩৮

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন