২৭. মৃন্ময়ী জঙ্গলে এসে পৌঁছেছে

হুমায়ূন আহমেদ

মতিন,

মৃন্ময়ী আমার এখানে এসে পৌঁছেছে। তার বয়েসী একটি মেয়ে এক জঙ্গলে আমার মতো জংলির কাছে বেড়াতে চলে আসবে, আমি ভাবতেই পারি নি। তুই কলকাঠি নাড়ছিস এটা বুঝতে পারছি। তোর কাঠি খেলার ক্ষমতা দেখে আমি মুগ্ধ।

মৃন্ময়ী মুগ্ধ আমার কাণ্ডকারখানা দেখে। তার অবস্থা Alice in Wonderland-এর মতো। আমার সঙ্গে তার প্রথম কথা–এই হাতির বাচ্চাটা কি আপনার?

আমি বললাম, না। সে মাঝে মাঝে আমার এখানে বেড়াতে আসে।

এর কি কোনো নাম আছে?

আমি তাকে একটা নামে ডাকি। আপনি আপনার পছন্দমতো নাম দিতে পারেন।

আমি নাম রাখলাম, অম্বু।

অম্বু তো পানির আরেক নাম। হাতির নাম পানি মিয়া রাখা কি ঠিক?

ঠিক হোক না-হোক এর নাম অন্তু।

মৃন্ময়ী এখন কী করছে জানিস? অম্বুকে গোসল দিচ্ছে। তার গায়ে বালতি বালতি পানি ঢালা হচ্ছে এবং স্পঞ্জ দিয়ে ডুলা হচ্ছে। বিষয়টাতে অঙ্কুর তেমন আপত্তি আছে বলেও মনে হচ্ছে না। সে চারপায়ে খুঁটি গেড়ে দাঁড়িয়ে মহানন্দে শুঁড় দোলাচ্ছে।

আমি বারান্দায় বসে লিখছি এবং এই মজার দৃশ্য দেখছি। লেখা বন্ধ করে মনায়ীকে বললাম, হাতিদের গায়ে মাটির যে প্রলেপ থাকে সেটা হাতিদের জন্যে জরুরি। তারা ইচ্ছে করেই গায়ে কাদা মাখায়। শরীরের তাপ ধরে রাখার জন্যেই এই ব্যবস্থা।

মৃন্ময়ী বলল, আমার কাছে জ্ঞান ফলাবেন না।

কাজেই জ্ঞান ফলানো বন্ধ। আমি মৃন্ময়ীর আশেপাশে ঘুরছি অজ্ঞানী মূর্খসম।

আচ্ছা মায়ীকে যে আমার খুব পছন্দ হয়েছে–এটা কি তুই আমার চিঠি পড়ে বুঝতে পারছিস? বুঝতে পারার তো কথা।

মৃন্ময়ীর যে আমাকে খুব পছন্দ এটা কি স্পষ্ট হয়েছে?

তোকে অন্ধকারে রেখে লাভ নেই, আসল কথা শোন–মৃন্ময়ী ঠিক করেছে সে আর শহরে ফিরে যাবে না। এইখানেই থাকবে। বিয়ে ছাড়া আমাদের এখন আর উপায় কী? হা হা হা।

মৃন্ময়ীর সঙ্গে বিয়ের ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা শেষ করে আমি ট্রি হাউসে উঠে বিকট চিৎকার দিয়েছি। আমি বলেছি–

I am the happyest man
in the whole universe.

আমার চিৎকার শুনে গাছের সব পাখি উড়ে চলে গেছে। ওরা আর ফিরে আসবে এরকম মনে হয় না।

এতক্ষণ নিজেকে নিয়েই বকবক করলাম, এখন তোর কথা শুনি। নিশুর মামলা সালেহ ইমরান নামের এক ব্যারিস্টার পরিচালনা করতে আসছেন শুনে ভালো লাগল। তোর কি মনে আছে বলাকা সিনেমাহলে জাজমেন্ট অ্যাট নুরেমবার্গ ছবি দেখে আমরা দুজন কী মুগ্ধই না হয়েছিলাম! বিখ্যাত সব আইনজ্ঞ। কী কঠিন তাদের জেরা!

নিশুর মামলার জেরাপর্ব দেখার শখ আছে। আমি চলে আসব। কিছুদিন নগরের ধুলাময়লা গায়ে মেখে প্রত্যাবর্তন।

মৃন্ময়ীরও অনেক গৃহস্থালী কেনাকাটা আছে। সে আবার বলে দিয়েছে তার প্রতিটি কেনাকাটার সময় আমাকে উপস্থিত থাকতে হবে।

নতুন কিছু কি লিখছিস? সায়েন্সফিকশানের চমৎকার একটা আইডিয়া আমার মাথায় আছে। ধার নিবি? দশ এগারো বছরের একটি কিশোর। তার মামা জার্মানি থেকে তার জন্যে উপহার হিসেবে একটা ক্যামেরা এনেছেন। বিশেষ ধরনের ক্যামেরা… বাকিটা সাক্ষাতে বলব।

ভালো থাকিস। পৃথিবীর সবচে মায়াবতী মেয়েটিকে আমার কাছে পাঠানোর জন্যে ধন্যবাদ।

ইতি–
কঠিন গাধা

সকল অধ্যায়

১. ০১. অতি তুচ্ছ একটা বিষয়
২. ০২. চিঠি এসেছে হাতে হাতে
৩. ০৩. কথা মন দিয়ে শুনছেন
৪. ০৪. ইমরান সাহেবের ঘুম
৫. ০৫. কমল তার বাবার পাশে বসে আছে
৬. ০৬. উজবেক মরমী কবি নদ্দিউ নতিম
৭. ০৭. কমল মেঝেতে বসে আছে
৮. ০৮. মতিন তার মেসের ঘরে শুয়ে আছে
৯. ০৯. হ্যালো মতিন
১০. ১০. কমল তার খেলনা সাজানো শেষ করেছে
১১. ১১. ভোরের স্বদেশ পত্রিকা
১২. ১২. বোনের বিয়ে ঠিক
১৩. ১৩. সুইজারল্যান্ডে পড়তে যাবার ব্যাপারে
১৪. ১৪. নদ্দিউ নতিম সাহেবের গল্পের বই
১৫. ১৫. তৌহিদা এসেছে নিউ সালেহা ফার্মেসিতে
১৬. ১৬. ফার্মেসির ম্যানেজার হেদায়েতুল ইসলাম
১৭. ১৭. তৌহিদাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে
১৮. ১৮. অনেক দূরে কোথাও ঘণ্টা বাজছে
১৯. ১৯. সারপ্রাইজ সারপ্রাইজ
২০. ২০. কমল ছাদে
২১. ২১. সালেহার বুক থেকে ঘড়ঘড় শব্দ হচ্ছে
২২. ২২. মুনা অবাক
২৩. ২৩. চিঠিটা পড়ে ধাক্কার মতো
২৪. ২৪. একটা কবিতার লাইন
২৫. ২৫. নিশু ব্যাগ গোছাচ্ছে
২৬. ২৬. কম্পিউটারে কমলের গোপনীয় ডায়েরি
২৭. ২৭. মৃন্ময়ী জঙ্গলে এসে পৌঁছেছে
২৮. ২৮. সালেহ ইমরান কাঠগড়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন
২৯. ২৯. এই জীবনটাও তো সুন্দর

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন