১৯. সারপ্রাইজ সারপ্রাইজ

হুমায়ূন আহমেদ

হ্যালো মতিন!

সারপ্রাইজ সারপ্রাইজ। হো হা হা হা হো হো! কী ভাবছিস? পাগল হয়ে গেছি? ঠিক ধরেছিস। পাগলই হয়েছি। পাগল হবার মতো ঘটনা ঘটেছে।

ক্যামব্রিজের নাসির ভাই দারুণ কাণ্ড ঘটিয়েছেন। তোর লেখা (থুরি নদ্দিউ নতিম সাহেবের লেখা) Autobiography of a Fictitious Poet–পেঙ্গুইন নিয়েছে। বিদেশী সাহিত্যের অনুবাদ সিরিজে বইটি প্রকাশিত হচ্ছে। অতি দ্রুতই হচ্ছে। নাসির ভাই লেগে আছেন পেছনে। উনার লেগে থাকার অবশ্যি আলাদা কারণও আছে। তোর বইটির অনুবাদ আমি করলেও অনুবাদক হিসেবে নাসির ভাইকে তার নাম দিতে বলেছি। উনি মহানন্দে এই অন্যায় কাজটি করেছেন। এখন তিনি অনুবাদক হিসেবে ৩০% রয়েলটি মানি পাবেন। তার মতো মহাকৃপণের কাছে অনুবাদের রয়েলটির পাউন্ডগুলি অতি মূল্যবান।

সে যা পাওয়ার পাক, তুই যা পেতে যাচ্ছিস সেটাই ইম্পোর্টেন্ট। মতিন শোন, তুই যে অনেক দূর যাবি তা আমি বুঝতে পেরেছিলাম। কবে বুঝতে পেরেছিলাম মনে করিয়ে দেই। আমরা রমিজের বিয়েতে জয়দেবপুর গিয়েছিলাম। সন্ধ্যা নাগাদ বিয়ে হয়ে গেল। রাতের খাবার দিতে দেরি হবে। আমরা দুজন গ্রাম দেখতে বের হলাম। একটা পুকুরঘাটে গিয়ে বসেছি। আকাশে মস্ত চাঁদ। চাঁদের প্রতিবিম্ব পড়েছে পুকুরের পানিতে। দেখতে ভালো লাগছে। এই সময় একজন বুড়োমানুষ বাশের লম্বা কঞ্চি নিয়ে পুকুরঘাটে উপস্থিত হলেন। তিনি কঞ্চি দিয়ে পুকুরের পানিতে কী যেন করছেন। এই সময় তুই হঠাৎ উত্তেজিত গলায় বললি, চাঁদটা কী রকম লাজুক দেখেছিস? বুড়ো চাঁদটাকে কঞ্চি দিয়ে যখনই ছুঁয়ে দিচ্ছে তখনি চাঁদটা লজ্জায় শতখণ্ড হয়ে যাচ্ছে। আবার নিজেকে জড় করছে আবার সে শতখণ্ড হচ্ছে।

পানিতে চাঁদের প্রতিবিম্ব স্পর্শ মাত্র শতখও হবে এটা আমরা জানি। জানি না এই ব্যাখ্যা। একজন বড় মাপের সৃষ্টিশীল মানুষের কাজ সৌন্দর্য ব্যাখ্যা করা। এই কাজটি তুই কী চমৎকারভাবেই না করলি! তার পরপরই তুই বিষয়টি নিয়ে কবিতা লিখলি। কবিতার শিরোনাম অদ্ভুত–বৃদ্ধ রমিজ মিয়ার হাতে চন্দ্র নিগৃহীত।

কবিতার লাইনগুলি তোর কি মনে আছে? আমার মনে আছে–

বৃদ্ধ রমিজ মিয়া ইনসমনিয়ার রোগী
দিনে কিছুক্ষণ ঘুমুলেও রাত নির্ঘুম
তার কাছে রজনীও দিবসের মতোই নিঝুম॥

আচ্ছা থাক কবিতা থাক, আমরা এখন থেকে কথা বলব মহান নদ্দিউ নতিম সাহেবের গদ্য নিয়ে। জয় গদ্য।

কুহক লেখনী ছুটায়ে কুসুম তুলিছে ফুটায়ে

বল দেখি কার লাইন? বৃদ্ধ রবীন্দ্রনাথের। তিনিও কিন্তু ইনসমনিয়ার রোগী বুদ্ধ রমিজ মিয়ার মতো চন্দ্রশাসন। করেছিলেন। এই বিষয়ে আমারও এখন একটা প্রবন্ধ লিখতে ইচ্ছা করছে। প্রবন্ধের নাম চন্দ্ৰশাসন। তোকে দেখে উৎসাহ পাচ্ছি।

তুই কি আমার আনন্দ বুঝতে পারছিস? খবরটা পেয়ে এত আনন্দ হলো–ইচ্ছা করল এক বোতল শ্যাম্পেন একাই খেয়ে ফেলি। জঙ্গলে শ্যাম্পেন কোথায় পাব? শেষে কী করলাম শোন, সব কাপড় খুলে নেংটো হয়ে কিছুক্ষণ ছুটাছুটি করলাম।

প্রবল আনন্দের সময় মানুষ গায়ের বসল খুলে ফেলতে চায়, এই বিষয়টি কি তুই জানিস?

না জানলে নাই। আমি জানি তাতেই চলবে।

আজ এই পর্যন্তই।

তোর অনুরাগী পাঠক–
নঠিক ধাগা

(কঠিন গাধা উল্টো করে লিখলাম নঠিক ধাগা। তোর মতো হবার ব্যর্থ চেষ্টা।)

সকল অধ্যায়

১. ০১. অতি তুচ্ছ একটা বিষয়
২. ০২. চিঠি এসেছে হাতে হাতে
৩. ০৩. কথা মন দিয়ে শুনছেন
৪. ০৪. ইমরান সাহেবের ঘুম
৫. ০৫. কমল তার বাবার পাশে বসে আছে
৬. ০৬. উজবেক মরমী কবি নদ্দিউ নতিম
৭. ০৭. কমল মেঝেতে বসে আছে
৮. ০৮. মতিন তার মেসের ঘরে শুয়ে আছে
৯. ০৯. হ্যালো মতিন
১০. ১০. কমল তার খেলনা সাজানো শেষ করেছে
১১. ১১. ভোরের স্বদেশ পত্রিকা
১২. ১২. বোনের বিয়ে ঠিক
১৩. ১৩. সুইজারল্যান্ডে পড়তে যাবার ব্যাপারে
১৪. ১৪. নদ্দিউ নতিম সাহেবের গল্পের বই
১৫. ১৫. তৌহিদা এসেছে নিউ সালেহা ফার্মেসিতে
১৬. ১৬. ফার্মেসির ম্যানেজার হেদায়েতুল ইসলাম
১৭. ১৭. তৌহিদাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে
১৮. ১৮. অনেক দূরে কোথাও ঘণ্টা বাজছে
১৯. ১৯. সারপ্রাইজ সারপ্রাইজ
২০. ২০. কমল ছাদে
২১. ২১. সালেহার বুক থেকে ঘড়ঘড় শব্দ হচ্ছে
২২. ২২. মুনা অবাক
২৩. ২৩. চিঠিটা পড়ে ধাক্কার মতো
২৪. ২৪. একটা কবিতার লাইন
২৫. ২৫. নিশু ব্যাগ গোছাচ্ছে
২৬. ২৬. কম্পিউটারে কমলের গোপনীয় ডায়েরি
২৭. ২৭. মৃন্ময়ী জঙ্গলে এসে পৌঁছেছে
২৮. ২৮. সালেহ ইমরান কাঠগড়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন
২৯. ২৯. এই জীবনটাও তো সুন্দর

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন