রাজপাট – ৫২

তিলোত্তমা মজুমদার

৫২ 

জ্যৈষ্ঠে নিষ্ঠুর ভানু 
অনলের প্রায়। 
নিদাঘে বিরহ হিয়া 
সহন না যায় ॥ 
দারুণ মলয়ার বাও 
না জুড়ায় শ্রীরাধার গাও 
কৃষ্ণ বিনে শীতল 
হয় না দেহ 
কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরি হরি 
তাঁহারে স্মরিয়া মরি 
আমার কুশল কই 
শুধাল না কেহ। 

.

সূর্যালোক ফিকে হয়ে সন্ধ্যা নামল। ঘরে ঘরে কুপি জ্বেলে, লম্ফ জ্বেলে, আঁধারের সঙ্গে লড়াই করে বাঁচা। জব্বারদের জীবনও তার থেকে ব্যতিক্রমী নয়। এখন তাদের ঘর আঁধারতর সারা গ্রামের কাছে হেঁট হয়ে গেছে জব্বার মণ্ডলের দৃপ্ত মেরুদণ্ড! কেন এমন হল? কেন? অন্দরে তারা কোন জীবন যাপন করবে, তা নির্বাচন করার অধিকার থাকবে না মানুষের! হায়, মানুষ কখনও একক হতে চায়, কখনও যৌথ। কখনও তার প্রয়োজন সামাজিকতা, কখনও ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা। কোনটা ভাল? কোনটা প্রয়োজন? কোনটা প্রাপ্য? বহুমুখী মহাদ্বন্দ্বে কোনও নির্দিষ্ট সমাধান পাবার আগেই, এক-একটি জীবন ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে যায়। 

সন্ধ্যায় জব্বারের বাড়িতে উপস্থিত হল সমিরুদ্দিন। বলল—মোহনবাবুর কথায় রাজি হয়ে যাও জব্বার ভাই। মিছিলে যেতে হবে না। শুধু কংগ্রেস ছেড়ে দাও। 

জব্বার বিহ্বল চোখে তাকাল সমিরুদ্দিনের দিকে। যা ঘটে যাচ্ছে, তার কোনওটাই সে স্ববশে রাখতে পারছে না। সমিরুদ্দিন বলছে—দেখো, অতগুলো টাকা। জমি বেচা ছাড়া উপায় কী! দু’হাজার টাকা তুমি পাবে মোহনবাবুর কাছে। বাকি তিন হাজার না হয় ধার নিয়ে নাও। জমিটা বেঁচে যাবে তোমার। 

জব্বার বলে—আমাকে ভাবতে দাও ভাই। 

সমিরুদ্দিন জব্বারের বিবির হাতে চা খেয়ে, মোহনবাবুর দলে ভিড়ে যাবার কত সুবিধা এ সম্পর্কে নাতিদীর্ঘ কথা বলে, খুশি হয়ে ফেরে। মেরুদণ্ড ভেঙে গেছে জব্বারের। সে এখন শক্তি আঁকড়াতে চাইবেই। গ্রামের লোকের আলোচনা ফুরল না, সেই রাতেই রেশমকুচি গ্রামের নুর মহম্মদের বাড়িতে আগুন লেগে গেল। প্রথমে আগুন ধরেছিল গোহালে। খড়ের চালের আগুন ক্রমশ ছড়িয়ে গেল অন্য চালেও। দু’দিনের রোদ্দুরে ভেজা খড় শুকিয়ে গিয়েছিল। আগুন নেবানো গেল না। বিবি ছেলে-মেয়ে নিয়ে আঙিনায় দাঁড়িয়ে সংসার ভস্ম হয়ে যেতে দেখল নুর মহম্মদ। গ্রামের লোক পিটিয়ে পিটিয়ে ভেঙে দিচ্ছিল তার বাড়ি যাতে আগুন না ছড়ায়। ভাঙার সময় কেরোসিন তেলের গন্ধ পেয়েছিল। বিদ্যুৎবিহীন গ্রামের সব বাড়িতেই মজুত থাকে কিছু-না-কিছু কেরোসিন তেল। অতএব আগুন লাগার কারণ হিসেবে কেরোসিন তেলকেই দায়ী তারা করল না। খবর শুনে পরের দিন ছুটে এলেন অর্জুন সেন এবং বরকত আলি। অর্জুন সেন নুর মহম্মদের কাঁধে হাত রাখলেন। বললেন- আমরা আপনার পাশে আছি। ঘর উঠে যাবে আবার। 

বরকত আলিও বললেন একই কথা। এবং ফিরলেন তিনি এক জটিল সন্দেহ বুকে করে। ওই সন্দেহে তাঁর হৃদয় জ্বলে যেতে লাগল। কিন্তু এই সন্দেহ তিনি কার কাছে প্রকাশ করবেন! কোথায় করবেন! এই মুহূর্তে সিদ্ধার্থকে কাছে পাবার প্রয়োজনীয়তা বোধ করলেন তিনি। বলবেন, তাকেই বলবেন। তাঁর মনে হল, এক শ্বাসরুদ্ধকারী অন্ধকার ঘিরে ফেলছে তাঁকে। নিজেকে অক্ষম অসহায় মনে হল। অনেক আগে বাপের মুখে শোনা একটি ব্যঙ্গছড়া তাঁর মনে পড়ে গেল— 

কলির কাল পড়সে
মানুষ অইব ছোট ছোট
বর্ণ অইব কালা 
মায়রে ডাকব চুতমারানি 
বাপরে ডাকব হালা 
এই দেখিয়া প্রাণ কান্দে
আক্কেল কান্দে কাও
বেআক্কলের তলাশ লইতে 
বন্দুর বাড়িত যাও 
এক বেআক্কল নছরত বাদশা 
আরেক বেআক্কল তুই 
আরেক বেআক্কল ঘরের খসম 
আরেক বেআক্কল মুই 

সকল অধ্যায়

১. রাজপাট – ১
২. রাজপাট – ২
৩. রাজপাট – ৩
৪. রাজপাট – ৪
৫. রাজপাট – ৫
৬. রাজপাট – ৬
৭. রাজপাট – ৭
৮. রাজপাট – ৮
৯. রাজপাট – ৯
১০. রাজপাট – ১০
১১. রাজপাট – ১১
১২. রাজপাট – ১২
১৩. রাজপাট – ১৩
১৪. রাজপাট – ১৪
১৫. রাজপাট – ১৫
১৬. রাজপাট – ১৬
১৭. রাজপাট – ১৭
১৮. রাজপাট – ১৮
১৯. রাজপাট – ১৯
২০. রাজপাট – ২০
২১. রাজপাট – ২১
২২. রাজপাট – ২২
২৩. রাজপাট – ২৩
২৪. রাজপাট – ২৪
২৫. রাজপাট – ২৫
২৬. রাজপাট – ২৬
২৭. রাজপাট – ২৭
২৮. রাজপাট – ২৮
২৯. রাজপাট – ২৯
৩০. রাজপাট – ৩০
৩১. রাজপাট – ৩১
৩২. রাজপাট – ৩২
৩৩. রাজপাট – ৩৩
৩৪. রাজপাট – ৩৪
৩৫. রাজপাট – ৩৫
৩৬. রাজপাট – ৩৬
৩৭. রাজপাট – ৩৭
৩৮. রাজপাট – ৩৮
৩৯. রাজপাট – ৩৯
৪০. রাজপাট – ৪০
৪১. রাজপাট – ৪১
৪২. রাজপাট – ৪২
৪৩. রাজপাট – ৪৩
৪৪. রাজপাট – ৪৪
৪৫. রাজপাট – ৪৫
৪৬. রাজপাট – ৪৬
৪৭. রাজপাট – ৪৭
৪৮. রাজপাট – ৪৮
৪৯. রাজপাট – ৪৯
৫০. রাজপাট – ৫০
৫১. রাজপাট – ৫১
৫২. রাজপাট – ৫২
৫৩. রাজপাট – ৫৩
৫৪. রাজপাট – ৫৪
৫৫. রাজপাট – ৫৫
৫৬. রাজপাট – ৫৬
৫৭. রাজপাট – ৫৭
৫৮. রাজপাট – ৫৮
৫৯. রাজপাট – ৫৯
৬০. রাজপাট – ৬০
৬১. রাজপাট – ৬১
৬২. রাজপাট – ৬২
৬৩. রাজপাট – ৬৩
৬৪. রাজপাট – ৬৪
৬৫. রাজপাট – ৬৫
৬৬. রাজপাট – ৬৬
৬৭. রাজপাট – ৬৭
৬৮. রাজপাট – ৬৮
৬৯. রাজপাট – ৬৯
৭০. রাজপাট – ৭০
৭১. রাজপাট – ৭১
৭২. রাজপাট – ৭২
৭৩. রাজপাট – ৭৩
৭৪. রাজপাট – ৭৪
৭৫. রাজপাট – ৭৫
৭৬. রাজপাট – ৭৬
৭৭. রাজপাট – ৭৭
৭৮. রাজপাট – ৭৮
৭৯. রাজপাট – ৭৯
৮০. রাজপাট – ৮০
৮১. রাজপাট – ৮১
৮২. রাজপাট – ৮২
৮৩. রাজপাট – ৮৩
৮৪. রাজপাট – ৮৪
৮৫. রাজপাট – ৮৫
৮৬. রাজপাট – ৮৬
৮৭. রাজপাট – ৮৭
৮৮. রাজপাট – ৮৮
৮৯. রাজপাট – ৮৯
৯০. রাজপাট – ৯০
৯১. রাজপাট – ৯১
৯২. রাজপাট – ৯২
৯৩. রাজপাট – ৯৩
৯৪. রাজপাট – ৯৪
৯৫. রাজপাট – ৯৫
৯৬. রাজপাট – ৯৬
৯৭. রাজপাট – ৯৭
৯৮. রাজপাট – ৯৮
৯৯. রাজপাট – ৯৯
১০০. রাজপাট – ১০০
১০১. রাজপাট – ১০১
১০২. রাজপাট – ১০২
১০৩. রাজপাট – ১০৩
১০৪. রাজপাট – ১০৪
১০৫. রাজপাট – ১০৫
১০৬. রাজপাট – ১০৬
১০৭. রাজপাট – ১০৭
১০৮. রাজপাট – ১০৮
১০৯. রাজপাট – ১০৯
১১০. রাজপাট – ১১০
১১১. রাজপাট – ১১১
১১২. রাজপাট – ১১২
১১৩. রাজপাট – ১১৩
১১৪. রাজপাট – ১১৪
১১৫. রাজপাট – ১১৫
১১৬. রাজপাট – ১১৬
১১৭. রাজপাট – ১১৭
১১৮. রাজপাট – ১১৮ (শেষ)

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন