রাত্রি

জীবনানন্দ দাশ

হাইড্র্যান্ট খুলে দিয়ে কুষ্ঠরোগী চেটে নেয় জল;
অথবা সে হাইড্র্যান্ট হয়তো বা গিয়েছিল ফেঁসে।
এখন দুপুর রাত নগরীতে দল বেধে নামে
একটি মোটরকার গাড়লের মতো গেল কেশে

অস্থির পেট্রল ঝেড়ে–সতত সতর্ক থেকে তবু
কেউ যেন ভয়াবহভাবে পড়ে গেছে জলে।
তিনটি রিক্‌শা ছুটে মিশে গেল শেষ গ্যাস ল্যাম্পে
মায়াবীর মতো জাদুবলে।

আমিও ফিয়ার লেন ছেড়ে দিয়ে–হঠকারিতায়
মাইল মাইল পথ হেঁটে–দেয়ালের পাশে
দাঁড়ালাম বেন্টিক্ ষ্ট্রিটে গিয়ে–টেরিটিবাজারে;
চীনেবাদামের মতো বিশুষ্ক বাতাসে।

মদির আলোর তাপ চুমো খায় গালে।
কেরোসিন কাঠ, গালা, গুণচট, চামড়ার ঘ্রাণ
ডাইনামোর গুঞ্জনের সাথে মিশে গিয়ে
ধনুকের ছিলা রাখে টান।

টান রাখে মৃত ও জাগ্রত পৃথিবীকে।
টান রাখে জীবনের ধনুকের ছিলা।
শ্লোক আওড়ায়ে গেছে মৈত্রেয়ী কবে;
রাজ্য জয় করে গেছে অমর আত্তিলা।

নিতান্ত নিজের সুরে তবুও তো উপরে জানালার থেকে
গান গায় আধো জেগে ইহুদি রমণী;
পিতৃলোক হেসে ভাবে কাকে বলে গান–
আর কাকে সোনা, তেল, কাগজের খনি।

ফিরিঙ্গি যুবক কটি চলে যায় ছিমছাম।
থামে ঠেস দিয়ে এক লোল নিগ্রো হাসে;
হাতের ব্রায়ার পাইপ পরিষ্কার ক’রে,
বুড়ো এক গরিলার মতন বিশ্বাসে।

নগরীর মহৎ রাত্রিকে তার মনে হয়
লিবিয়ার জঙ্গলের মতো।
তবুও জন্তুগুলো আনুপূর্ব–অতিবৈতনিক,
বস্তুত কাপড় পরে লজ্জাবশত।

সকল অধ্যায়

১. সপ্তক
২. স্বভাব
৩. সূর্যতামসী
৪. ফিরে এসো
৫. আকাশলীনা
৬. ঘোড়া
৭. সমারূঢ়
৮. নিরঙ্কুশ
৯. রিস্টওয়াচ
১০. গোধূলিসন্ধির নৃত্য
১১. যেই সব শেয়ালেরা
১২. একটি কবিতা
১৩. অভিভাবিকা
১৪. কবিতা
১৫. মনোসরণি
১৬. নাবিক
১৭. রাত্রি
১৮. লঘু মুহূর্ত
১৯. হাঁস
২০. উন্মেষ
২১. চক্ষুস্থির
২২. ক্ষেতে প্রান্তরে
২৩. বিভিন্ন কোরাস
২৪. স্বভাব
২৫. প্রতীতি
২৬. ভাষিত
২৭. সৃষ্টির তীরে
২৮. জুহু
২৯. সোনালি সিংহের গল্প
৩০. অনুসূর্যের গান
৩১. তিমির হননের গান
৩২. বিস্ময়
৩৩. সৌরকরোজ্জ্বল
৩৪. রাত্রির কোরাস
৩৫. নাবিকী
৩৬. সময়ের কাছে
৩৭. লোকসামান্য
৩৮. জনান্তিকে
৩৯. মকরসংক্রান্তির রাতে
৪০. উত্তরপ্রবেশ
৪১. দীপ্তি
৪২. সূর্যপ্রতিম
৪৩. যাত্রী

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন