দীপ্তি

জীবনানন্দ দাশ

তোমার নিকট থেকে
যত দুর দেশে
আমি চলে যাই
তত ভালো।
সময় কেবলই নিজ নিয়মের মতো–তবু কেউ
সময়স্রোতের ‘পরে সাঁকো
বেঁধে দিতে চায়;
ভেঙে যায়,
যত ভাঙে তত ভালো
যত স্রোত বয়ে যায়
সময়ের
সময়ের মতন নদীর
জলসিঁড়ি, নীপার, ওডার, রাইন, রেবা, কাবেরীর
তুমি তত বহে যা্‌
আমি তত বলে চলি,
তবুও কেহই কারু নয়।
আমরা জীবন তবু।

তোমায় জীবন নিয়ে তুমি
সুর্যের রশ্মির মতো অগণন চুলে
রৌদ্রের বেলায় মতো শরীরের রঙে
খরতর নদী হয়ে গেলে
হয়ে যেতে।
তবু মানুষী হয়ে
পুরুষের সন্ধান পেয়েছে।
পুরুষের চেয়ে বড় জীবনের হয়তো বা।

আমিও জীবন তবু–
ক্বচিৎ তোমার কথা ভেবে
তোমার সে শরীরের থেকে ঢের দূরে চলে গিয়ে
কোথাও বিকেলবেলা নগরীর উৎসারণে উচল সিঁড়ির
উপরে রৌদ্রের রঙ জ্বলে ওঠে–দেখে
বুদ্ধের চেয়েও আরো দীন সুষমার সুজাতার
মৃত বৎসরে বাঁচায়েছে
কেউ যেন;
মনে হয়,
দেখা যায়।

কেউ নেই–স্তব্ধতায়; তবুও হৃদয়ে দীপ্তি আছে।

দিন শেষ হয় নি এখনও।
জীবনের দিন–কাজ–
শেষ হতে আজও ঢের দেরি।
অন্ন নেই। হৃদয়বিহীনভাবে আজ
মৈত্রেয়ী ভূমার চেয়ে অন্নলোভাতুর
রক্তের সমুদ্র চারি দিকে;
কলকাতা থেদেুর
গ্রিসের অলিভ-বন

অন্ধকার।

অগণন লোক মরে যায়;
এম্পিডোক্লেসের মৃত্যু নয়–
সেই মৃত্যু ব্যসনের মতো মনে হয়।
এ ছাড়া কোথাও কোনো পাখি
বসন্তের অন্য কোনো সাড়া নেই
তবু এক দীপ্তি রয়ে গেছে।

সকল অধ্যায়

১. সপ্তক
২. স্বভাব
৩. সূর্যতামসী
৪. ফিরে এসো
৫. আকাশলীনা
৬. ঘোড়া
৭. সমারূঢ়
৮. নিরঙ্কুশ
৯. রিস্টওয়াচ
১০. গোধূলিসন্ধির নৃত্য
১১. যেই সব শেয়ালেরা
১২. একটি কবিতা
১৩. অভিভাবিকা
১৪. কবিতা
১৫. মনোসরণি
১৬. নাবিক
১৭. রাত্রি
১৮. লঘু মুহূর্ত
১৯. হাঁস
২০. উন্মেষ
২১. চক্ষুস্থির
২২. ক্ষেতে প্রান্তরে
২৩. বিভিন্ন কোরাস
২৪. স্বভাব
২৫. প্রতীতি
২৬. ভাষিত
২৭. সৃষ্টির তীরে
২৮. জুহু
২৯. সোনালি সিংহের গল্প
৩০. অনুসূর্যের গান
৩১. তিমির হননের গান
৩২. বিস্ময়
৩৩. সৌরকরোজ্জ্বল
৩৪. রাত্রির কোরাস
৩৫. নাবিকী
৩৬. সময়ের কাছে
৩৭. লোকসামান্য
৩৮. জনান্তিকে
৩৯. মকরসংক্রান্তির রাতে
৪০. উত্তরপ্রবেশ
৪১. দীপ্তি
৪২. সূর্যপ্রতিম
৪৩. যাত্রী

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন