হিন্দু-মুসলমান মিলনের প্রধান অন্তরায়কে চিহ্নিত করতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন :-“হিন্দু-মুসলমানের মিলন অসম্ভব-প্রায় করে তুলছে আর একটি প্রধান ব্যাপার, তা হচ্ছে এই যে, মুসলমানের ভৌগোলিক সীমাবদ্ধ দেশাত্ববোধ নেই।”
রবীন্দ্রনাথ অনেক মুসলমান নেতাকে স্পষ্ট ভাষায় জিজ্ঞাসা করে জানতে চেয়েছেন যে আফগান বা অপর কোনো মুসলমান শক্তি যদি ভারতবর্ষ আক্রমণ করে, তাহলে হিন্দুদের সঙ্গে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে সে আক্রমণ প্রতিহত করতে তারা প্রস্তুত কিনা। জবাব তাঁরা যা দিয়েছেন তাতে, রবীন্দ্রনাথ বলেছেন :-“আমি নিশ্চিন্ত হতে পারিনি।”
রবীন্দ্রনাথ নিজে সরাসরি প্রশ্ন করে যে উত্তর পেয়েছেন অন্যান্য মনীষীরা তাঁদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা ও চিন্তাশক্তি দিয়ে তার বাইরে অন্য কিছু অনুভব করেননি।
শরৎচন্দ্র স্পষ্টই বলেছেন :-“…….মুসলমান মুখ ফিরাইয়া আছে তুরস্ক ও আরবের দিকে এদেশে চিত্ত তাহার নাই।” (শরৎরচনাবলী-জন্মশতবার্ষিক সংস্করণ, পৃ-৪৭৫)
আরও আগে বিপিনচন্দ্র পালের মতো নেতারাও লক্ষ্য করেছেন :-“ভারতবর্ষের মুসলমানরা মুসলমান আগে, ভারতবাসী পরে। অতএব, রাষ্ট্রীয় ব্যাপারে এবং রাষ্ট্র সম্বন্ধে যদি ভারতের মুসলমানগণের নিকট ভারতবাসীত্ব অপেক্ষা মুসলমানত্ব বড় হয়, তাহা হইলে ভারতরাষ্ট্রের বা প্রভুশক্তির সঙ্গে যদি কখন কোন মুসলমান রাষ্ট্রের বা মুসলমান প্রভুশক্তির যুদ্ধ বিগ্রহাদি বাধিয়া উঠে, তখন সৈয়দ আমির আলি প্রভৃতি প্যান্-ইস্লামী মুসলমান লোকনায়কগণের মতে ভারতের রাষ্ট্রশক্তির প্রতিকূলে বিপক্ষ মুসলমান রাষ্ট্রের বা মুসলমান প্রভুশক্তির আনুকূল্য করাই একান্ত ধর্মসঙ্গত হইবে।” (রাষ্ট্রনীতি, বিজয়া-১৩১৯)
বিপিনচন্দ্র পাল, শরৎচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ—কেউই প্রাতিষ্ঠানিক হিন্দুধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন না। হিন্দুধর্ম ত্যাগ করেছিলেন বলে বিপিনচন্দ্র পালের বাবা পুত্রকে পরিত্যাগ করেছিলেন।
প্রকৃত ভারতীয় মুসলমান ভারতবর্ষের কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম স্থপতি আবদুল হালিম প্রশ্ন তুলেছেন :-“এদেশে বাস করে, এদেশে মানুষ হয়ে মুসলমানদের অন্তরে যদি এদেশের ওপর একটি মমত্ববোধ না জন্মায়, তাহলে তার চেয়ে বেশী দুঃখ আর কি হতে পারে? (লাঙল, ৯ই সেপ্টেম্বর, ১৯২৬)
সাহিত্যিক গৌরকিশোর ঘোষ ‘৯২সালে বিহারের ভাগলপুরে গেলেন ‘৮৯-‘৯০ সালে ঘটে যাওয়া হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গার অন্তর্তদন্তমূলক প্রতিবেদন লিখবার জন্য। রবিবাসরীয় আনন্দবাজারে তাঁর প্রতিবেদন প্রকাশ পেল।
গৌরবাবু লিখলেন :-“হিন্দুরা কি নির্মম, নৃশংস, শিশু হত্যা করেছে, একটি মুসলমান মেয়ের পা কেটে নিয়েছে।”
প্রতিবেদনে কোথাও হিন্দুদের উপর মুসলমানের অত্যাচারের কোন কথা নেই। দাঙ্গার দায়িত্ব চাপিয়ে দেওয়া হলো রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ ও অন্য হিন্দু সংগঠনের উপরে।
পরবর্তীকালে শৈলেশ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর লেখা ‘দাঙ্গার ইতিহাস’-এ তেমন কথাই লিখলেন।
কিন্তু ধর্মের কল সম্ভবত যথার্থই বাতাসে নড়ে। ২রা এপ্রিল, ২০০৩-এর আনন্দবাজার পত্রিকায় ‘দাঙ্গা-অভিযুক্ত খুন’ শিরোনামে সংবাদে লেখা হলো :-“বিহারের ভাগলপুরের ‘৮৯ দাঙ্গার মূল অভিযুক্ত মহম্মদ এনায়েতুল্লা আনসারি খুন হলেন বেনিয়াপুকুরে। শনিবার সন্ধ্যায় সার্কাস অ্যাভিনিউয়ে অজ্ঞাত পরিচয় দু-তিন জন দুস্কৃতী তাকে খুব কাছ থেকে গুলি করে। এনায়েতুল্লা বিহারের জেল থেকে জামিনে ছাড়া পেয়ে দক্ষিণ ২৪-পরগণার মল্লিকপুরে আত্মগোপন করে ছিল। এই খুনের তদন্তে বেনিয়াপুকুর থানার তদন্তকারী অফিসার ভাগলপুর গিয়েছেন। বছর দশেক এনায়েতুল্লার আত্মগোপন করে থাকতে পারা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল ভিন রাজ্যের অপরাধীদের কাছে এ রাজ্য এখনও অভয়ারণ্য।”
এরপরেও ধর্মের কল কিন্তু নড়েই চলল।
২০০৫ সালে প্রকাশ পেল বিহারের প্রাক্তন কংগ্রেসী মুখ্যমন্ত্রী সত্যেন্দ্রনারায়ণ সিংহের আত্মকথা। ভাগলপুর দাঙ্গার সময় বিহারের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন সত্যেন্দ্রবাবু। কয়েক পুরুষের কংগ্রেসী। বাবা অনুগ্রহনারায়ণ সিংহও বিহারের বিশিষ্ট কংগ্রেস নেতা ছিলেন।
সত্যেন্দ্রনারায়ণ তাঁর লেখায় ভাগলপুর দাঙ্গার জন্য কংগ্রেসের দুই নেতা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভগৎ ঝা আজাদ ও বিধানসভার স্পীকার শিবচন্দ্র ঝাকে দায়ী করেন। কংগ্রেস নেতারাই ষড়যন্ত্র করে দাঙ্গা বাধিয়েছিলনে একথাও জানান সত্যেন্দ্রনারায়ণ।
স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদে যিনি ছিলেন সেই মুখ্যমন্ত্রীর সংবাদ সংগ্রহের উপর আমরা বেশী গুরুত্ব দেব, না গৌরকিশোর ঘোষ, শৈলেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখার উপর?
গৌরকিশোর ও শৈলেশ বন্দ্যোপাধ্যায় যে কথা লিখেছেন তার সূত্র সম্পর্কে কোন বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ উপস্থাপিত করেননি। কাজেই লেখাতে তাঁদের নিজেদের বিশ্বাস-এর প্রতিফলন ঘটেছে যা আদৌ সত্য না হওয়াই সম্ভব। বুদ্ধিজীবীর ভূমিকা এখানে নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হবে না?
তসলিমা নাসরিনের ‘দ্বিখণ্ডিত’ প্রকাশ হবার পর বিতর্ক শুরু হলে একদা “মার্কিনঘেঁষা” অভিযোগে নিন্দিত, বর্তমানের বামফ্রন্টের রাজকবি সমপর্যায়ের সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তসলিমার বই সম্পর্কে বলতে গিয়ে বই-এ ধর্মবিষয়ক কোন বিতর্ক না থাকাই বাঞ্ছনীয় বলে মন্তব্য করেছেন।
ধর্ম বিষয়ে কবি সুনীলবাবুর কেনোদিনই কোনো মোহ ছিল বলে জানা নেই। যখন যেমন প্রয়োজন হয়েছে হিন্দু দেবদেবী রাধাকৃষ্ণ, কালী সম্পর্কে সুনীলবাবু নানা মন্তব্য করে তাঁর রচনাকে বিতর্কিত করে ব্যবসায়িক সাফল্য পেয়েছেন। এবিষয়ে কেউ কেউ যারপরনাই ক্ষুব্ধ হলেও সুনীলবাবুর কণ্ঠরোধ করাবার কথা ঘুণাক্ষরেও বলেননি। ইসলামের প্রবর্তক হজরত মহম্মদ সম্পর্কে কিছু কথা বলায় হঠাৎ করে সুনীলবাবুর বিবেচনাবোধ জেগে উঠল কেন?
জনৈক জীবনমুখী গানের গায়কের না হয় মুসলমান ধর্ম গ্রহণ করার পিছনে কিছু বাস্তব তাগিদ ও কিছু বাস্তব দায় এড়ানোর কৌশল ক্রিয়াশীল ছিল, কিন্তু সুনীলবাবুর বেলায়? অবশ্য বাংলাদেশে নিজের লেখা বই কাটতির সম্ভাবনা মাথায় রেখে সুনীলবাবুর বোধদয় ঘটে থাকলে বাস্তব দায় শিরোধার্য।
একদল তথাকথিত বুদ্ধিজীবী অদ্ভুত অদ্ভুত ফতোয়া দিয়ে চলেছেন। তথাকথিত প্রগতিশীল সরকার তাদের গুরুত্ব দিয়ে এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিচ্ছে যা দেশের সাংস্কৃতিক, সামাজিক এমনকী গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যকেও সমূলে উৎপাটন করছে।
তসলিমা নাসরিনের লেখা বই-এর বিরুদ্ধে তথাকথিত প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবীরা রে-রে করে উঠলেন। নিষিদ্ধ হলো তসলিমার বই। হাইকোর্টের রায়ে সরকারের গণতান্ত্রিক ও মৌলিক অধিকার খর্ব করার চেষ্টা বাধা পেল সত্যি কথা, কিন্তু মানুষের কাছে কি বার্তা পৌঁছোলো?
শিশুদের পাঠ্যবই-এ ছৌনাচের ওপর লেখা প্রবন্ধে গণেশ বন্দনা আছে বলে তাতে সাম্প্রদায়িকতার গন্ধ পেলেন তথাকথিত সরকারী বুদ্ধিজীবীরা। গণেশ বন্দনা বাদ দেওয়া হলো। কিন্তু বাংলার লোকসংস্কৃতি বিষয়ে গবেষণা করছেন এমন বিশেষজ্ঞ সনৎ মিত্র জানিয়েছেন :-“গণেশ বন্দনা ছৌ নাচের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় দেখেছি এক অনুষ্ঠানে একাধিক দল নাচলেও প্রতিটি দল আলাদা করে গণেশ বন্দনা করে। এই অংশ ছেঁটে ফেলা অন্যায় হয়েছে। এই পথ ধরলে তো চর্যাপদ থেকে ভারতচন্দ্র বাংলা সাহিত্যের গোটা মধ্যযুগটাই বাদ দিতে হয়।”
অবশ্য স্বয়ং রবীন্দ্রনাথও এমন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন।
রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন :-“……..পাঠ্যনির্ব্বাচন সমিতিতে পিতৃদেবের আত্মজীবনী বিচারকালে মুসলমান পক্ষের বিচারক মহর্ষির দিদিমার মৃত্যুকালীন ঠাকুরদেবতার নামোচ্চারণের বিবরণ-মাত্রকেই অপত্তিজনক বলে মত দিয়েছিলেন। এই সমস্ত অদ্ভুত আপত্তি কেবলমাত্র বাংলাসাহিত্য সম্বন্ধেই খাটছে। ……….. ওঁরা বাংলা বিদ্যালয়ে পাঠ্য ইংরেজি সাহিত্যকে বিশেষভাবে মুসলমান সমাজের রোচক করে পরিবর্তন করার প্রস্তাব এখনো পর্যন্ত করেন নি। একেই বলে কম্যুনালিজম, এই কম্যুনালিজমের উপরই বাংলাদেশে রাষ্ট্রতন্ত্রের ভিৎপত্তন হলো।”
রবীন্দ্রনাথ বুঝেছিলেন :-“ঘুষ দিয়ে প্রকৃত মিলন হয়না।”
অতীতে হয়নি। দেশভাগ ঠেকানো যায়নি। আবারও যদি ঠেকানো না যায় তাহলে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হবে মাত্র।
রবীন্দ্রনাথের লেখা ‘সহজপাঠ’-এর বিশ্লেষণ করে একজন পণ্ডিতম্মন্য আবিষ্কার করেছেন ‘সহজপাঠ’-এ হিন্দু নাম ৮৬টি, মুসলিম নাম ২টি এবং খ্রিষ্টান নাম মাত্র ১টি এবং গবেষণার আবশ্যম্ভাবী ফল বইটি ‘সাম্প্রদায়িকতার দোষে দুষ্ট”।
এই জাতীয় ‘জাতের নামে বজ্জাতি’ গবেষণা গুরুত্ব পাচ্ছে ভাবলেও শঙ্কিত হতে হয়। এই পদ্ধতিতে চলতে গেলে মুর্শিদাবাদ এবং মালদহ জেলার লেখকদের খেয়াল রাখতে হবে যে তাদের লেখা বই-এ জেলার লোকসংখ্যার ভিত্তিতে যথাক্রমে শতকরা ৬৫টি এবং ৫৫টি চরিত্র যেন মুসলমান হয়! তা না হলে ভবিষ্যতে সাম্প্রদায়িকতার দোষে দুষ্ট হলে কিছু করার থাকবেনা। এখন তো এমনও মনে হচ্ছে যে কোন লেখক যদি পাঁচটি বই লেখেন তবে তার একটি অন্তত উর্দুভাষায় লেখা হতে হবে তা না হলেই সমূহ বিপদ
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘বন্দেমাতরম’ গানটি নিয়ে যত টানা-হেঁচড়া চলেছে তা জানতে পারলে বঙ্কিমচন্দ্রের মতো যুক্তিবাদী মানুষ দেশের সমস্যা লাঘবের কথা ভেবে গানটি হয়তো লিখতেনই না।
‘বন্দেমাতরম’ গানটির বিরুদ্ধে অভিযোগ গানটিতে হিন্দু দেবীর কথা আছে। এ নিয়ে বহু তর্ক-বিতর্ক হয়েছে। এখনও লোকসভায় গানটি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
কিন্তু কেন? আসলে এদেশে এমন বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা এখনও যথেষ্ট যারা দেশভাগের মধ্যে দিয়ে সমাধান হয়ে গিয়েছে এমন সব সমস্যাগুলিকে ঝুলির থেকে টেনে এনে নতুন ‘যোগেন মণ্ডল’ হবার স্বপ্ন দেখছেন। বঙ্কিমচন্দ্রের ‘বন্দেমাতরম’-এ এদের গাত্রদাহ হয়। অথচ এদের অনেকেই যখন নিজেদের রবীন্দ্রানুসারী বলে চিহ্নিত করে গর্ব অনুভব করেন তখন এবিষয়ে রবীন্দ্রনাথের ভাবনা বিচার করে দেখবেন না?
বঙ্কিমচন্দ্র রচিত “বন্দেমাতরম’ সঙ্গীত নিয়ে মুসলমানদের আপত্তির বিষয়টি নিয়ে ১৯৩৭ সালে কলকাতায় অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত কংগ্রেস কমিটির অধিবেশনে আলোচনা হয়েছে। এর আগেই রবীন্দ্রনাথ তাঁর মতামত জানিয়েছেন। ১৯৩৭ এর ৬ই আক্টোবর তৎকালীন কংগ্রেস সভাপতি জওহরলালকে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন :-
“An unfortunate controversy is raging round the qustion of stability of ‘Bande Matram’ as national song. In offering my own opinion about it I am reminded that the privilege of origi-nally setting its first stanza to the tune was mine when the au-thor was still alive and I was the first person to sing it before a gathering of the Calcutta Congress. To me the spirit of tender-ness and devotion expressed in its first portion, the emphasis it gave to beautiful and beneficient aspects of our motherland made spcial appeal so much so that I found no difficulty in dissociat-ing it from the rest of the poem and from those protions of the book of which it is a part, with all sentiments of which, brought up as it was in the monotheistic ideals of my father, I could have no sympathy.
It first caught on as an appropriate national anthem at the poignant period of our strenuous struggle for asserting the peoples will against the decree of separation hurled upon our prov-ince by the rulling power. The subsequent developments during which ‘Bande Mataram’ became a national slogan cannot, in view of the stupendour sacrifices of some of th best of our youths, be lightly ignored at a moment when it has once again become necessary to give expression to our triumphant confi-dence in the victory of our cause.
I freely concede that the whole of Bankim’s Bande Mataram’ poem read together with its context is liable to be interpreted in ways that might sound Moslem suspectibilities, but a national song though derived from it which has spontaneously come to consist only of the first two stanzas of the original powem, need not remind us every time of the whole of it, much less of the story with which it was accidentally associated. It has acquired a separate individuality and an inspiring significance of its own in which I see nothing to offend any sect or community.” (Amrita Bazar Patrika, November 2nd, 1937).
অর্থাৎ ‘বন্দেমাতরম’ গানটির যে অংশ জাতীয়সঙ্গীত হিসেবে গীত হয় তা নিয়ে কোন বিতর্ক থাকাই উচিত নয়। অথচ এখনো এ নিয়ে একশ্রেণীর বুদ্ধিজীবীর সংকোচ যেন কাটেনা।
অবশ্য রবীন্দ্রনাথকেও তো এখন সাম্প্রদায়িক দোষে দুষ্ট বলা হচ্ছে।
দেখা যাক জওহরলাল কি বলেছেন এ বিষয়ে, বিশেষ করে তাঁর বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগ যখন এখনো ওঠেনি। ১৯৩৭ সালেই কংগ্রেস অধিবেশনে এক বক্তৃতায় জওহরলাল বলেছেন :-
“…the first two stanzas are such that it is impossible for anyone to take objection to, unless he is maliciously inclind. Remember, we are thinking in terms of a national song or all India”.
প্রবাসী পত্রিকার সম্পাদক, রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় ছিলেন সাধারণ ব্রাহ্মসমাজভূক্ত। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের বিষয় সর্বজনবিদিত। তাঁর মতে ‘বন্দেমাতরম’ গানটি আদৌ “পৌত্তলিকতাব্যঞ্জক বা পৌত্তলিকতা-প্রণোদক নহে……….. মুসলমানবিদ্বেষ-প্রসূত বা মুসলমান বিদ্বেষ-জনক নহে।”
অগ্রহায়ণ ১৩৪৪-এর প্রবাসী পত্রিকাতে রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় পরিস্কারভাবে তাঁর মতামত ব্যক্ত করেছেন।
বিতর্ক, কিন্তু-কিন্তু ভাব এখনও রয়েছে, যা জওহরলাল যেমন বলেছেন তেমনিই যথার্থই অভিসন্ধিমূলক।
দেখা যাক কি বলা হয়েছে এমনকী ‘বন্দেমাতরম’ সঙ্গীতের সেই অংশে যা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
দেশমাতাকে বন্দনা করতে গিয়ে বলা হয়েছে
“ত্বং হি দুর্গা দশপ্রহরণধারিণী”
তুমি-ই (দেশমাতা) দশপ্রহরণধারিণী দুর্গা।
“কমলা কমল-দলবিহারিণী”
তুমি-ই (দেশমাতা) পদ্মফুলের উপর উপবিষ্টা লক্ষ্মী।
“বাণী বিদ্যাদায়িনী……..”
তুমি-ই (দেশমাতা) বিদ্যাদাত্রী-জ্ঞানদায়িনী।
সমস্ত গান জুড়ে দেশমাতার বন্দনা করে তাঁর মধ্যেই খুঁজে নেওয়া হয়েছে দুর্গা, লক্ষ্মী কিংবা সরস্বতীকে। অর্থাৎ দেশমাতাই দেবী–অন্য কেউ নন। কাকে বড় করা হল—তথাকথিত দেব-দেবীকে না দেশমাতাকে?
তর্কের খাতিরে যদি বলা হতো ‘দেশ তুমিই আমার কাছে আল্লা-খোদা’-তাহলে কি হতো? মুসলমানরা মেনে নিতেন যে তাদের ‘আল্লা’ অন্য কেউ নন— ‘দেশ’?
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন