মসজিদে আকসার ভূমিকা

এ . এন. এম. সিরাজুল ইসলাম

মসজিদে আকসা ইসলামের সুমহান নেতৃস্থানীয় মসজিদসমূহের অন্যতম। অতীতে এই মসজিদ বহুমুখী ভূমিকা পালন করেছে। শিক্ষা, রাজনীতি ও সামাজিক ভূমিকা পালনের ক্ষেত্রে মসজিদটি অনন্য বৈশিষ্ট্যের দাবীদার। হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম কর্তৃক পুনঃনির্মাণের পর হাজার হাজার বছর ধরে এটি ছিল বহুসংখ্যক আম্বিয়ায়ে কেরামের দীনি, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় কেন্দ্র। তদানীন্তন যুগের জন্য এটি ছিল বিশ্বের সর্ববৃহৎ কেন্দ্র, যাকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। বিভিন্ন নবী ও বাদশাহরা এখান থেকেই জেরুসালেম-ভিত্তিক রাষ্ট্রের শাসনকার্য পরিচালনা করেছেন।

মসজিদে আকসা মূলতঃ সভ্যতা ও তমদুনের উজ্জ্বল নিদর্শন এবং ইসলামী সভ্যতা-সংস্কৃতির অনন্য প্রতীক। এটি ইসলামী কৃষ্টি ও ঐতিহ্যের ধারক।

মসজিদে আকসায় ইসলামী শিক্ষাদান করা হত এবং তা আজ পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে। বরং এর চারপাশে রয়েছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মাদ্রাসা ও লাইব্রেরী। অর্থাৎ সেখানে রয়েছে দারুল কুরআন, দারুল হাদীস ও বোর্ডিং। সেগুলোতে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও ইনস্টিটিউট পর্যায়ে শিক্ষাদান অব্যাহত রয়েছে। এছাড়াও তাতে আরবী ভাষা, ইসলামী আইন, ইতিহাসসহ বিভিন্ন বিষয় শিক্ষা দেয়া হয়।

মোটকথা, মসজিদে আকসায় দীনি শিক্ষার সাথে সাথে ইতিহাস, অংক, তর্কশাস্ত্র ও দর্শনসহ অন্যান্য দুনিয়াবী বিদ্যা শিক্ষা দেয়া হত।

উলামায়ে কেরাম, বিচারকমণ্ডলী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা মসজিদে আকসায় বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সমস্যার সমাধানের বিষয়ে আলোচনা করতেন।

এই মসজিদ থেকেই তদানীন্তন শাসকরা জনগণের উদ্দেশ্যে সরকারী পয়গাম ও বক্তৃতা বিবৃতি প্রকাশ করতেন। সেগুলো সেখানে পাঠ করার পর তা জনগণের জন্য বাধ্যতামূলক করা হত। মসজিদে আকসার ভেতর অবস্থিত বিভিন্ন মাদ্রসায় বহু প্রখ্যাত আলেম ও পণ্ডিত ব্যক্তি শিক্ষাদানের কাজে নিয়োজিত ছিলেন। তাদের মধ্যে মাদ্রাসা নাসারিয়ায় শেখ আবুল ফাতহ নাসার বিন ইবরাহীম আল-মাকদেসী অন্যতম। ইমাম গাজালী এবং আবু বা বিন আল-আরাবী তার সাথে সেখানে সাক্ষাত করেন। পরবর্তীতে ইমাম গাজালী মসজিদে আকসায় বসে একটি বই লেখন। বইটির নাম হচ্ছে, আর-রিসালাতুল কুদসিয়াহ্ ফি কওয়ায়েদিল আকায়েদ। এ বিষয়টি তিনি ‘এহইয়াউলুমিদ্দিন’ বইতে উল্লেখ করেছেন। আজ মসজিদে আকসা ইসরাইলের ইহুদীদের জবরদখলে রয়েছে। তাই সেখানে মসজিদের পূর্বের ভূমিকা এখন আর নেই। মসজিদ ইহুদীদের জবরদখল থেকে মুক্তি লাভ করার পর আবার তার কাঙ্ক্ষিত ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবে, ইনশাআল্লাহ।

.

সকল অধ্যায়

১. জেরুসালেম
২. জেরুসালেমের গোড়ার কথা
৩. জেরুসালেম শহরের গুরুত্ব
৪. মসজিদে আকসার তাৎপর্য ও ফজীলত
৫. মসজিদে আকসার বর্ণনা
৬. মসজিদে সাখরা
৭. রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর মেরাজ
৮. মসজিদে আকসার প্রাচীন ইতিহাস
৯. আল আকসা মসজিদের ইসলাম পরবর্তী ইতিহাস
১০. মসজিদে আকসার ভূমিকা
১১. ইসরাইল রাষ্ট্রের জন্ম ও ইহুদী জাতি
১২. ইহুদী চিন্তার আলোকে পবিত্রস্থান ও হাইকাল
১৩. প্রতীক্ষিত মাসীহর আগমন ও হাইকাল পুনঃ নির্মাণ
১৪. প্রতীক্ষিত মাসীহ সম্পর্কে খৃস্টানদের বিশ্বাস
১৫. মসজিদে আকসার স্থলে হাইকাল নির্মাণেছু ইহুদী সংস্থাসমূহ
১৬. ক্রিশ্চিয়ান যায়নবাদ
১৭. জেরুসালেম শহরে খৃস্টানদের পবিত্র স্থান
১৮. মসজিদে আকসা ও সাখরায় ইহুদী হামলার বিবরণ
১৯. বিদেশী ইহুদী পুনর্বাসন ষড়যন্ত্র
২০. জেরুসালেমের উপর ইহুদী দাবীর ভ্রান্তি
২১. মসজিদে আকসার বর্তমান প্রয়ােজন
২২. জেরুসালেম ও মসজিদে আকসা উদ্ধারের সঠিক উপায়

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন