দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – ৮

কেইগো হিগাশিনো

অধ্যায় ৮

জিমের দরজার বাইরে থেকেই পরিচিত আওয়াজ শুনতে পেলো কুসানাগি। শক্ত হার্ডউডের ওপর কেডসের প্রতিধ্বনি, নিয়মিত বিরতিতে টেনিস বলে র্যাকেটের বাড়ি লাগার আওয়াজ ভেসে আসছে। দরজায় দাঁড়িয়ে ভেতরে উঁকি দিলো সে। সবচেয়ে কাছের টেনিস কোর্টটাতে খেলায় ব্যস্ত ইউকাওয়া। তার প্রতিপক্ষ এক আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ছাত্র। বলটা উঁচু করে নিখুঁত একটা সার্ভ করলো ছেলেটা। ইউকাওয়া সেটার কাছে যাওয়ার আগেই এপাশের দেয়ালে আঘাত করলো বলটা। খেলা শেষ, হেরে গেছে ইউকাওয়া। যেখানে ছিল সেখানেই বসে পড়লো। হাসিমুখে প্রতিপক্ষকে কী যেন বলল। খানিকবাদে কুসানাগিকে দরজায় দেখে উঠে দাঁড়াল সে। বিদায় জানিয়ে বেরিয়ে এলো কোর্ট থেকে।

“কি হয়েছে আবার?”

“আরে, সেটা তো আমার জিজ্ঞেস করার কথা! তুমিই তো আমাকে ফোন দিয়েছিলে।”

কুসানাগির কল লিস্টে ইউকাওয়ার নাম উঠেছিল দেখেই সে এসেছে এখানে।

“ও, হ্যা, ফোন করেছিলাম তোমাকে। কিন্তু সরাসরি ভয়েস মেইলে চলে গিয়েছিল। অত জরুরি কিছুও ছিল না, তাই আর মেসেজ রাখার প্রয়োজনবোধ করিনি। ভেবেছিলাম তুমি কোন কাজে ব্যস্ত হবে।”

“আসলে আমি একটা সিনেমা দেখছিলাম, তাই ফোনটা বন্ধ ছিল।”

“কাজের সময়ে সিনেমা! তোমার বেশ উন্নতি হয়েছে দেখছি!”

“হুহ! তাহলে তো ভালোই হত। আমি ঐ মা-মেয়ের অ্যালিবাই পরীক্ষা করে দেখার জন্যেই সিনেমাটা দেখছিলাম।”

“তা-ও ভালো, বসে বসে সিনেমা দেখার জন্যে বেতন তো পাচ্ছো।”

“একটা সিনেমা যখন তোমাকে কেউ জোর করে দেখাবে তখন বুঝবে কেমন লাগে। যাই হোক, শুধু শুধু তাহলে তোমাকে বিরক্ত করলাম। ল্যাবেই খুঁজেছিলাম প্রথমে, কিন্তু ওখান থেকে বলল কোর্টে আছো তুমি।”

“এসেই যখন পড়েছো কিছু খাওয়া যাক তাহলে, কি বলো? আর তোমাকে একটা কথা আসলেও জিজ্ঞেস করতে হবে আমার,” এই বলে কোর্ট থেকে বের হয়ে আসল তারা। মাঝখানে টেনিস স্নিকার্স পাল্টে জুতো পরে নিলো ইউকাওয়া।

“কি জিজ্ঞেস করবে?”

“তুমি আজ বিকেলে যেখানে ছিলে সেখানকার সাথে যোগাযোগ আছে ব্যাপারটার।”

“কোথায় ছিলাম আমি?”

“সিনেমা হলে,” কুসানাগির দিকে তাকিয়ে বলল ইউকাওয়া।

X

ক্যাম্পাসের কাছেই একটা বারে গেলো তারা। কুসানাগি যখন এখানকার ছাত্র ছিল তখন অবশ্য এটার অস্তিত্ব ছিল না, আরো পরে খুলেছে। পেছনের দিকে একটা টেবিল দখল করলো দু-জন মিলে।

“মিস হানাওকা বলছেন মার্চের দশ তারিখে সিনেমাটা দেখতে গিয়েছিলেন তারা, যেদিন টোগাশি খুন হয়। আর তার মেয়ে স্কুলের এক বান্ধবির সাথে বারো তারিখে সিনেমাটা নিয়ে গল্প করে,” ইউকাওয়ার গ্লাসে বিয়ার ঢালতে ঢালতে বলল কুসানাগি। “সেই বান্ধবির সাথেও কথা বলেছি আমি। সেজন্যেই সিনেমাটা দেখতে গেলাম, কাহিনী মেলানোর জন্যে।”

“হ্যা হ্যা, মানছি তোমার কথা। জনগণের পয়সায় সিনেমা দেখার যথেষ্ট কারণ ছিল তোমার। তো, মেয়েটার বান্ধবি কি বলল?”

“তেমন কিছু না। মেয়েটার নাম মিকা। মিশাতো নাকি বারো তারিখে সিনেমাটা নিয়ে তার সাথে আলোচনা করেছিল। সে নিজেও সিনেমাটা আগে দেখেছিল, তাই অনেকক্ষণ গল্প করে তারা সেটা নিয়ে।”

“সিনেমাটা দেখার একদিন পরে আলোচনা করেছে, অদ্ভুত তো,” ইউকাওয়া মন্তব্য করলো।

“তাই না? সে যদি গল্প করতেই চায় তাহলে পরের দিন সেটা করলো না কেন? তখনই আমার মনে প্রশ্ন জাগে, তারা কি আসলেও দশ তারিখে সিনেমাটা দেখতে গিয়েছিল, নাকি এগারো তারিখে?”

“সেটা কি সম্ভব?”

“বলা যায় না। মহিলা সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত কাজ করে। এরপরে তার মেয়ের ব্যাডমিন্টন প্র্যাকটিস শেষে সাতটার শো সহজেই ধরতে পারার কথা তাদের। দশ তারিখে নাকি তারা একাজই করেছিল।”

“ব্যাডমিন্টন? মেয়েটা ব্যাডমিন্টন ক্লাবে আছে?”

“হ্যা, সেটা আমি প্রথমবার তাদের বাসায় গিয়েই বুঝেছিলাম। একটা র‍্যাকেট ঝোলানো ছিল দেয়ালে। আর এই ব্যাডামিন্টনের ব্যাপারটাও খোঁচাচ্ছে আমাকে। সহজ কোন খেলা নয় এটা। প্র্যাকটিসের পর তো একদম ক্লান্ত হয়ে যাবার কথা মেয়েটার।”

“তোমার মত শরীর যাদের তাদের অবশ্যই ক্লান্ত হবার কথা,” গরম গরম কোনিয়াকুতে সরিষা মাখাতে মাখাতে বলল ইউকাওয়া।

“তোমার এসব ফাজলামোমার্কা কথা বন্ধ করো তো। আমি কি বলছি সেটা বোঝার-”

“তুমি বলতে চাইছো ওরকম কমবয়সি একটা মেয়ের ব্যাডমিন্টন প্র্যাকটিসের পরে সিনেমা হল আর কারাওকে বারে যাবার ব্যাপারটায় তোমার খটকা লাগছে, এই তো?”

কুসানাগি অবাক হয়ে গেলো। ঠিক এই কথাটাই বলতে যাচ্ছিল সে। “আমার কিন্তু মনে হয় না ব্যাপারটা অসম্ভব। মেয়েটার বয়স তো কম, আর আর স্বাস্থ্যও বেশ ভালো।”

“তা ঠিক। কিন্তু মেয়েটা শুকনো গড়নের, ক্লান্ত হয়ে যাবার কথা খুব তাড়াতাড়ি।”

তোমার সাথে একমত হতে পারছি না। এমনটাও হতে পারে, সেদিন প্র্যাকটিসে অত কঠিন কিছু ছিল না। আর তুমি তো কারাওকে বারে যাবার ব্যাপারটা নিজে খতিয়ে দেখেছিলে, তাই না?”

“হ্যা।”

“কখন গিয়েছিল তারা সেখানে?”

“ন-টা চল্লিশে।”

মেয়েটার মা সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত কাজ করে, তাই না?”

“হ্যা।”

“খুনটা হয়েছে শিনোজাকিতে। বাসা থেকে সেখানে যাওয়া আসা বাবদ সময় বাদ দিলেও কারাওকে বারে যাবার আগে তারা দু-ঘন্টা সময় হাতে পাচ্ছে। হ্যা, তুমি যা বলছো সেটা সম্ভব হলেও হতে পারে, “ ইউকাওয়া হাতে চপস্টিক নিয়ে বলল।

কুসানাগি তার দিকে তাকিয়ে মনে করার চেষ্টা করতে লাগলো, সে কখন তাকে লাঞ্চবক্স শপটার কথা বলেছিল। “একটা কথা বলো তো, কিছুক্ষণ পরে বলল সে। “হঠাৎ করে এই কেসটার ব্যাপারে এত আগ্রহ দেখাচ্ছো কেন তুমি? অন্যান্য কেসের ব্যাপারে তো কখনও জিজ্ঞেস করো না।”

“ঠিক ‘আগ্রহ’ বলবো না ব্যাপারটাকে। ভাবছিলাম আর কি। এধরণের অ্যালিবাইকে মিথ্যা প্রমাণ করার কাজটা করতে ভালোই লাগে।“

“অতও সোজা না কিন্তু কাজটা। আমরা কম চেষ্টা করছি না।”

“কিন্তু এখন পর্যন্ত মহিলার বিরুদ্ধে কোন প্রমাণ জোগাড় করতে পারোনি, তাই না?”

“তা ঠিক। কিন্তু কথা হচ্ছে অন্য কোন সন্দেহভাজন নেই আমাদের হাতে এ মুহূর্তে। টোগাশিও পেছনে কোন সূত্র রেখে যায়নি। খুব বেশি বন্ধুবান্ধব ছিল না তার, আর শত্রুও নেই বলতে গেলে। তোমার কাছে কি ব্যাপারটা একটু বেশিই কাকতালিয় মনে হচ্ছে না, খুনের দিন সন্ধ্যাতেই তারা সিনেমা দেখতে গেলো?”

“বুঝতে পারছি তুমি কি বলতে চাচ্ছো। কিন্তু এখানে যুক্তি দিয়ে চিন্তা করতে হবে তোমার। অ্যালিবাইটা বাদেও অন্যকোন দিক নিয়ে ভাবা উচিত এখন।“

“কিভাবে কাজ করতে হয় সেটা শেখাতে এসো না আমাকে। সবকিছুই খতিয়ে দেখছি আমরা, বিশ্বাস করো,” কুসানাগি পকেট থেকে একটা ফটোকপি করা কাগজ বের করে টেবিলে রাখলো। একজন মানুষের চেহারা আঁকা রয়েছে ওখানে।

“কি এটা?”

“জীবিত থাকা অবস্থায় ভিক্টিমের চেহারা কেমন ছিল সেটা বের করার চেষ্টা করেছি আমরা। শিনোজাকি স্টেশনের আশেপাশে কয়েকজন অফিসারকে ছবিটা হাতে দিয়ে পাঠানোও হয়েছিল খোঁজ-খবর নেয়ার জন্যে।”

“আচ্ছা, একটা কথা জিজ্ঞেস করবো ভাবছিলাম, তুমি বলেছিলে না, লোকটার জামাকাপড় পুড়িয়ে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল? কিন্তু পুরোপুরি পোড়েনি ওগুলো। একটা জ্যাকেট, একটা সোয়েটার আর কালো রঙের একটা প্যান্ট, তাই তো? গুগুলো তো যে কেউই পরতে পারে।”

“হুম। ডজনখানেক লোক বলেছিল তারা স্টেশনের আশেপাশে ওরকম পোশাক পরা কাউকে না কাউকে দেখেছে। কোত্থেকে যে শুরু করবো কিছুই বুঝতে পারছি না আমরা।”

“কোন লাভই হয়নি তাহলে?”

“না। শুধু একজন মহিলা বলছিল, অফিস থেকে ফেরার পথে সে নাকি স্টেশনের কাছে ওরকম পোশাক পরা একজন লোককে পায়চারি করতে দেখেছে। শিনোজাকিতে পোস্টারগুলো লাগানোর পরে ফোন করেছিল সে।”

“বাহ্, এখানকার লোকজন তো দেখি বেশ সহযোগিতা করছে আজকাল। মহিলাকে আরো জিজ্ঞাসাবাদ করছো না কেন? জরুরি কিছু তো জানতেও পারো।’

“সেটা করেছি আমরা। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে সে যার কথা বলছে তার সাথে আমাদের ভিক্টিমের কোন মিল খুঁজে পাচ্ছি না।“

“কেমন?”

“এই যেমন, সে যে স্টেশনটার কথা বলছে সেটা শিনোজাকি না, মিজু স্টেশন। শিনোজাকির আগের স্টেশন সেটা। আর আমাদের আর্টিস্ট যে চেহারাটা এঁকেছে, তার চেয়েও নাকি গোলাকার ছিল লোকটার মুখ।”

“গোলাকার?”

“একটা কথা তোমাকে বুঝতে হবে, ইউকাওয়া। তদন্ত করার সময় প্রায়ই আমরা ভুল দিকে পা বাড়াই। কিন্তু একসময় দেখা যায় সেখান থেকেও গুরুত্বপূর্ণ কিছু বেরিয়ে এসেছে। তোমাদের বিজ্ঞানের দুনিয়ার মত নয় এটা, যেখানে সব কিছুই একটা নির্দিষ্ট সূত্র অনুযায়ি হবে। আর সেই সূত্রটা বের করতে পারলেই তোমার কাজ শেষ হয়ে যাবে,” এই বলে খাওয়ার দিকে মনোযোগ দিলো কুসানাগি। সে আশা করছিল, উত্তরে কঠিন কিছু একটা শুনতে হবে তাকে, কিন্তু ইউকাওয়া কিছুই বলল না। তার দিকে মুখ তুলে দেখলো হাতে ভর দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে সে।

কুসানাগি আগেও তার বন্ধুকে এ অবস্থায় দেখেছে। এর অর্থ হচ্ছে সে এখন গভীর চিন্তায় মগ্ন। বিরক্ত করা যাবে না।

“তুমি বলেছিলে লোকটার চেহারা ইচ্ছাকৃতভাবে আঘাত করে বিকৃত করে দেয়া হয়েছে?”

“হ্যা, আঙুলের ছাপও পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। নিশ্চিতভাবেই খুনি চাচ্ছিল না আমরা ভিক্টিমের পরিচয় বের করে ফেলি।”

“কি ব্যবহার করে করা হয়েছে সেটা?”

কুসানাগি আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো কেউ তাদের কথা শুনতে পাচ্ছে কিনা। এরপর সামনে এগিয়ে এসে বলল, “আমরা কিছু খুঁজে পাইনি, তবে ধারণা করছি খুনি একটা হাতুরি ব্যবহার করেছে। ফরেনসিকের লোকদের ধারণা বেশ কয়েকবার আঘাত করা হয়েছে হাড্ডি ভাঙার জন্যে। চোয়াল আর দাঁত পুরোপুরি গুড়িয়ে গেছে তাতে। ডেন্টাল রেকর্ডসের সাথেও মিলিয়ে দেখতে পারিনি আমরা।”

“একটা হাতুড়ি?” ইউকাওয়া চপস্টিক দিয়ে একটা আলুর টুকরো তুলে নিতে নিতে বলল।

“কেন, কি হয়েছে?”

ইউকাওয়া চপস্টিকটা নামিয়ে রেখে বলল, “আচ্ছা, তোমার সন্দেহভাজন মহিলাই যদি কাজটা করে থাকে, তাহলে খুনের দিনটাতে সারাদিন সে কি করেছিল বলে তোমার মনে হয়? তুমি ধারণা করছো, সে সিনেমা দেখতে যায়নি ঐদিন, তাই তো?”

“আমি আসলে পুরোপুরি নিশ্চিত নই, সে গিয়েছিল কিনা।”

“যাই হোক, আমি তোমার ধারণার কথাই জানতে চাচ্ছি। ভেবেচিন্তে বলো,” ইউকাওয়া হাত নেড়ে তাকে উৎসাহ দেয়ার ভঙ্গিতে বলল।

কুসানাগি ভুরু কুঁচকে বলল, “ঠিক আছে। ধারণা করেই বলছি তোমাকে, প্রমাণ দিতে পারবো না কিন্তু। ধরো আমাদের সন্দেহভাজন মহিলা, সুবিধার জন্যে মিস এক্স বলছি তাকে। তো, মিস এক্স সন্ধ্যা ছটার পরে কাজের জায়গা থেকে বের হন। সেখান থেকে হামামাটসু স্টেশনে হেটে যেতে তার দশ মিনিট লাগার কথা। সেখান থেকে সাবওয়েতে করে শিনোজাকি স্টেশনে যেতে আরো বিশ মিনিট লাগবে। তারপর বাসে বা ট্যাক্সিতে করে এডোগাওয়া নদীর কাছে পৌছে যায় সে। সবমিলিয়ে সাতটার আশেপাশে তার সেখানে থাকার কথা।”

“আর এই সময়ে আমাদের ভিক্টিম কি করছিল?”

“ভিক্টিমও মিস এক্সের সাথে দেখা করতে সেখানে যাচ্ছে। কিন্তু সে শিনোজাকি স্টেশন থেকে সাইকেলে করে যাচ্ছে।”

“সাইকেল?”

“হ্যা। লাশটা যেখানে পাই আমরা তার পাশেই একটা পরিত্যক্ত সাইকেল খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল। সেখানে যে আঙুলের ছাপ পাওয়া যায় সেটা ভিক্টিমের আঙুলের ছাপের সাথে পুরোপুরি মিলে গেছে।”

“আঙুলের ছাপ? আমি তো ভেবেছিলাম ওগুলো পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে।”

কুসানাগি মাথা নেড়ে সায় জানালো, “ভিক্টিমের পরিচয় বের করার পর আমরা ব্যবহার করার মত আঙুলের ছাপ উদ্ধার করতে পেরেছিলাম। আসলে আমার বলা উচিত ছিল ভিক্টিম যেখানে রাতে ছিল সেখানকার দেয়াল থেকে আঙুলের ছাপ খুঁজে পাই আমরা।” এটা শুনে ইউকাওয়া কিছু বলতে যাওয়ার আগেই আবার বলে উঠলো কুসানাগি, “আমি জানি তুমি কি বলতে চাচ্ছো এখন, দেয়ালের ছাপ আর সাইকেলে পাওয়া আঙুলের ছাপ পুরোপুরি মিলে গেলেও সেটা ভিক্টিমের না-ও হতে পারে। খুনিরও হতে পারে সেটা, তাই তো? যুক্তি আছে তোমার কথায়। কিন্তু ঘরটা থেকে কিছু

চুলও খুঁজে পাই আমরা। আর সেটা ভিক্টিমের চুলের সাথে মিলে যায়। আমরা ডিএনএ অ্যানালাইসিস করেও দেখেছি।

ইউকাওয়া হেসে বলল, “পুলিশের কাজের ভুল ধরতে চাচ্ছিলাম না আসলে। আমি বরং সাইকেলের ব্যাপারটা নিয়ে বেশি চিন্তিত। ভিক্টিম কি নিজে সাইকেলটা শিনোজাকি স্টেশনে রেখে দিয়েছিল?”

“না, আসলে-”

এরপরে কুসানাগি তাকে সাইকেল চুরির ঘটনাটা খুলে বলল। চশমার পেছনে ইউকাওয়ার চোখজোড়া বড় হয়ে গেলো সেটা শুনে।

“তো, ভিক্টিম শুধুমাত্র সেদিন সেখানে যাওয়ার জন্যে সাইকেলটা চুরি করার ঝুঁকি নিয়েছিল? বাস কিংবা ট্যাক্সি নিলো না কেন?”

“আমি ঠিক জানি না সে কেন সাইকেলটা চুরি করেছিল, কিন্তু সে সেটাই করেছিল। লোকটা বেকার ছিল, খুব বেশি টাকা-পয়সা থাকতো না হয়তো তার কাছে। বাস কিংবা ট্যাক্সিতে উঠলে ভাড়া দিতে হত।”

যুক্তিটা ইউকাওয়াকে সন্তুষ্ট করতে পারলো বলে মনে হয় না। নাক দিয়ে একটা আওয়াজ করে সে বলল, “যাই হোক, যেকোনভাবে আমাদের ভিক্টিম মিস এক্সের কাছে পৌছল। এরপর?”

“আমার ধারণা, তারা ঠিক করে রেখেছিল কোথায় দেখা করবে। কিন্তু মিস এক্স সেখানে আগেই পৌছে যায়। যখন ভিক্টিমকে আসতে দেখে সে তখন পেছন দিক থেকে গলায় একটা দড়ি জাতীয় কিছু দিয়ে পেঁচিয়ে ধরে শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলে।”

“দাঁড়াও, দাঁড়াও!” দু-হাত তুলে বলল ইউকাওয়া, “ভিক্টিমের উচ্চতা কত ছিল?”

“একশ সত্তর সেন্টিমিটারের আশেপাশে,” খুব কষ্ট করে খিস্তি আউড়ানো থেকে নিজেকে সামলালো কুসানাগি। সে জানে ইউকাওয়া কি বলবে এরপর।

“আর মিস এক্স?”

“একশ ষাট সেন্টিমিটারের মত।”

“তার মানে ভিক্টিম প্রায় দশ সেন্টিমিটারের মত লম্বা,” ইউকাওয়া একটা শয়তানি হাসি দিয়ে বলল। “আশা করি তুমি বুঝতে পারছো আমি কি বলতে চাচ্ছি।’

“অবশ্যই। নিজের থেকে লম্বা কাউকে শ্বাসরোধ করা বেশ কঠিন একটা কাজ। আর ভিক্টিমের গলার দাগ দেখে মনে হয়েছে, কেউ উপরের দিকে টানছিল দড়িটা। কিন্তু সে তো বসেও থাকতে পারে। হয়তো সাইকেলেই ছিল তখনও।”

“বাহ্, একটা খোঁড়া অজুহাত তৈরি করে রেখেছো দেখছি।”

“মোটেও খোঁড়া অজুহাত না,” কুসানাগি টেবিলে কিল দিয়ে বলল।

“তো, এরপর কি হলো? ভিক্টিমের শরীর থেকে সব জামাকাপড় খুলে

নিয়ে সঙ্গে করে নিয়ে আসা হাতুড়ি দিয়ে মুখের নকশা পাল্টে দিলো আর একটা লাইটার দিয়ে আঙুলগুলো পুড়িয়ে দিলো? এরপর কাপড়-চোপড়ে আগুন লাগিয়ে দিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে গেলো। তাই তো?”

“তবুও নয়টার মধ্যে কিনশিকোতে পৌঁছে যাবার কথা তার।”

“কাগজে কলমে সেটা সম্ভব। কিন্তু বলতে বাধ্য হচ্ছি, খুবই দূর্বল সব যুক্তি ব্যবহার করছো তুমি। এখন আবার এটা বোলো না, তোমার পুরো ডিপার্টমেন্ট তোমার সাথে একমত।”

কুসানাগির মুখটা কালো হয়ে গেলো। হাতের বিয়ারের গ্লাসটা নামিয়ে রেখে ওয়েটারকে আরেক রাউন্ড বিয়ার দিয়ে যেতে ইশারা করে বলল, “আসলে ওদিককার অনেকেরই সন্দেহ একজন মহিলার পক্ষে এতকিছু করা আসলেও সম্ভব কিনা।

“সন্দেহ করাটাই স্বাভাবিক। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষকে শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলা অত সহজ নয়। আর আমি হলফ করে বলতে পারি, লোকটা বাঁধা দেয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করেছিল। তাছাড়া গড়পড়তা গড়নের একজন মহিলার পক্ষে তার লাশ বয়ে নিয়ে যাওয়াটাও কঠিন। দুঃখিত, কিন্তু তোমার অফিসের লোকদের সাথেই তাল মেলাতে হচ্ছে আমাকে।”

“আমি জানতাম তুমি এটাই বলবে। আসলে আমি নিজেও পুরোপুরি বিশ্বাস করি না ব্যাখ্যাটা। একটা সম্ভাবনার কথা বলছিমাত্র।”

“তার মানে আরো সম্ভাবনা ঘুরছে তোমার মাথায়। বলে ফেলো, আমরাও শুনি সেগুলো।”

“না, আমি এটা বলছি না যে, এমূহূর্তে খুব বেশি কিছু জানি আমি। তোমাকে যে সম্ভাব্য দৃশ্যটার কথা বললাম সেখানে িিভক্টিমকে শিনোজাকিতেই খুন করা হয়েছে। কিন্তু এমনটাও তো হতে পারে তাকে খুন করার পর সেখানে নিয়ে আসা হয়েছে। ডিপার্টমেন্টের সবার আসলে এটাই ধারণা। মিস এক্স সেটা করে থাকুক আর না করে থাকুক।”

“সেটাই কিন্তু বেশি যুক্তিসঙ্গত বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু তোমার মনে এটা প্রথমে আসেনি। কেন?”

“সোজা ব্যাপার। মিস এক্স যদি আসলেও খুনি হয়ে থাকে, তাহলে অন্য কোথাও খুনটা হবার সম্ভাবনা একেবারেই নেই। তার কোন গাড়ি নেই আর সে গাড়ি চালাতেও জানে না। তাই অন্য কোন গাড়িও জোগাড় করা সম্ভব নয় তার পক্ষে। লাশটা নদীর তীরে নিয়ে যাবার কোন উপায় ছিল না তার।”

“হুম, ভালো বলেছো।’

“আর ঐ সাইকেলের ব্যাপারটাও বাদ দিলে চলবে না। আমরা এটা ধরে নিতে পারি, সেটা ইচ্ছেকৃতভাবে সেখানে ফেলে রাখা হয়েছিল, যাতে করে আমরা ধরে নেই খুনটা সেখানেই হয়েছে। কিন্তু এরপর আবার কষ্ট করে ভিক্টিমের আঙুলের ছাপ সেখানে লাগানোর কি দরকার ছিল?” বিশেষ করে যখন আঙুলগুলো পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে।”

“সাইকেলটা একটা রহস্য, বেশ কয়েকটা কারণে,” এই বলে আঙুল দিয়ে টেবিল বাজাতে লাগলো ইউকাওয়া। এরপর বলল, “আচ্ছা, এটা ধরে নেয়া কি যুক্তিসঙ্গত নয়, একজন পুরুষ খুনটা করেছে, মহিলা নয়?”

“আমার ডিপার্টমেন্টের সবারও একই ধারণা। তবুও আমি বলবো, মিস এক্স কোনভাবে খুনের ঘটনার সাথে জড়িত।”

“তাহলে মিস এক্সের কোন পুরুষ সঙ্গি ছিল?”

“তার সাথে যোগাযোগ আছে এমন লোকজনের খোঁজ করছি আমরা এখন। হাজার হলেও সে একটা বারে হোস্টেস হিসেবে কাজ করতো। বেশ কয়েকজন পুরুষ মানুষের সাথে যোগাযোগ থাকাটা মোটেও অসম্ভব কিছু নয়।”

“এই কথাটাও ভালো বলেছো,” হেসে বলল ইউকাওয়া। এরপরেই আবার গম্ভীর মুখ করে ফটোকপিটা দেখতে চাইলো।

কুসানাগি ভিক্টিমের সম্ভাব্য ছবিটা তার হাতে দিলো। সেটাতে টোগাশির যে ছবিটা আঁকা হয়েছে তাতে সে খুনের ঘটনাস্থলের পাশে যে কাপড়গুলো পাওয়া গিয়েছিল সেগুলো পরিহিত অবস্থায় আছে।

ইউকাওয়া কিছুক্ষণ মনোযোগ দিয়ে সেদিকে তাকিয়ে থেকে বলল, “একটা ব্যাপার আমার মাথায় ঢুকছে না, খুনি জামাকাপড়গুলো খুলে নিলো কেন?”

“ভিক্টিমের পরিচয় গোপন করার জন্যে। একই কারণে সে আঙুলের ছাপও নষ্ট করে দেয় আর চেহারার ওই অবস্থা করে।”

“তাহলে কাপড়গুলো সাথে করে নিয়ে গেলো না কেন? তোমরা ওগুলো খুঁজে পেয়েছো কারণ সে কাপড়গুলো পোড়ানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। আর সেজন্যেই এই ছবিটা আঁকা সম্ভব হয়েছে।”

“মনে হয় তাড়াহুড়ো ছিল তার, অথবা ভুল করে ফেলেছে।“

“আমি মানছি কারো ওয়ালেট কিংবা ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখে তার পরিচয় বের করা ফেলা সম্ভব। কিন্তু কারো পোশাক দেখে পরিচয় বের করা কি সহজ? মনে হচ্ছে কাপড়চোপড় পুড়িয়ে ফেলার চেষ্টাটা পণ্ডশ্রম ছাড়া আর কিছু নয়। খুনির তো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঘটনাস্থল থেকে পালানোর চেষ্টা করার কথা, তাই না?”

“কি বলতে চাচ্ছো তুমি? তোমার ধারণা অন্য কোন কারণে কাপড়চোপড়গুলো খোলা হয়েছে?”

“একদম নিশ্চিতভাবে বলতে পারছি না। কিন্তু আসলেও যদি অন্য কোন কারণ থেকে থাকে তাহলে সেটা বের না করা পর্যন্ত খুনির খোঁজ পাবে বলে মনে হয় না,” আঙুল দিয়ে টেবিলে বড় একটা প্রশ্নবোধক চিহ্ন একে বলল ইউকাওয়া।

x

এইটথ গ্রেডের বি গ্রুপের পরীক্ষার ফলাফল হতাশাজনক। শুধু গ্রুপ বি’ই নয়, সম্পূর্ণ এইটথ গ্রেডই পরীক্ষায় খারাপ করেছে। ইশিগামির ধারণা ছাত্র- ছাত্রিরা আরো গাধা হচ্ছে দিন দিন

পরীক্ষার খাতা দেয়ার পরে সব সেকশনের গণিত শিক্ষকেরা মিলে একটা মেক-আপ পরীক্ষার তারিখ ঠিক করবে। এ বছর স্কুল থেকে পাশের জন্য সর্বনিম্ন নম্বর একদম কম করে ধরা হয়েছে। যেসব শিক্ষার্থি সে নম্বর পাবে না তারা পরবর্তি গ্রেডে উঠতে পারবে না। অবশ্য কেউ যাতে ফেল করে আগের ক্লাসে আটকে না থাকে সেজন্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে মেক-আপ পরীক্ষা নেয়া হবে।

পরীক্ষার গ্রেড দেখার পর ক্লাসে প্রতিবাদের গুঞ্জন উঠলেও ইশিগামি বরাবরের মতই সেগুলোকে পাত্তা দিলো না।

“আচ্ছা স্যার, এমনও তো ইউনিভার্সিটি আছে যেখানে ভর্তি হবার জন্যে গণিতের দরকার নেই,” এক শিক্ষার্থি বলল। “আমরা যারা ঐসব ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হতে চাই, তাদের কেন গণিতে পাশ করা লাগবে?”

ইশিগামি প্রশ্নকর্তার দিকে তাকালো। ছেলেটার নাম মরিওকা। এ মুহূর্তে সে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে সমর্থনের আশায় আশেপাশে তাকাচ্ছে আর মাথা চুলকাচ্ছে। ছেলেটা খাটো, কিন্তু ক্লাসের সবচেয়ে দুষ্টুদের মধ্যে

একজন। স্কুল থেকে ইতিমধ্যেই তাকে বেশ কয়েকবার সতর্ক করা হয়েছে মোটরসাইকেলে করে ক্লাসে আসার জন্যে, যেটা একদম নিষিদ্ধ।

“তুমি কি কোন আর্টস কলেজে ভর্তি হতে চাও, মরিওকা?”

“না, মানে…যদি আমি কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে আদৌ ভর্তি হই, সেটাতে গণিত থাকবে না এটা জোর দিয়ে বলতে পারি। আমার অবশ্য ভর্তি হবার ইচ্ছেও নেই তেমন। আর আগামি বছর উচ্চতর গণিত নিচ্ছি না আমি, তাহলে এই গণিতের গ্রেড কি কাজে লাগবে, শুনি? আমার মত গর্দভদের পড়াতেও নিশ্চয়ই ভালো লাগে না আপনার। তাই বলছিলাম, একটা চুক্তিতে আসতে পারি আমরা, কি বলেন? যেখানে দু-জনেরই লাভ হবে।”

শেষ কথাটা শুনে পুরো ক্লাসে হসির রোল উঠলো। ইশিগামিও শুকনোভাবে হেসে বলল, “আমাকে নিয়ে যদি তোমার এতই চিন্তা হয় তাহলে মেক-আপ পরীক্ষায় পাশ করে দেখাও। ডিফারেন্সিয়াল আর ইন্টেগ্রাল ক্যালকুলাসই তো আছে শুধু।”

“এই ছাতার ক্যালকুলাস করে কী লাভ হবে আমার? শুধু শুধু সময় নষ্ট।”

ইশিগামি ঘুরে ব্ল্যাকবোর্ডে একটা কঠিন অঙ্ক বোঝানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল, কিন্তু শেষ কথাটা শুনে আবার পেছনে ফিরে তাকালো সে। এ ধরণের কথার জবাব দিতেই হবে তাকে। “আমি শুনেছি মোটরসাইকেল খুব পছন্দ তোমার, মরিওকা। কখনও মোটরসাইকেল রেস দেখেছো তুমি?”

মরিওকা বোকার মত মাথা নাড়লো। প্রশ্নটা শুনে অবাক হয়েছে সে। “ওখানে কি রেসাররা সব সময় একই গতিতে মোটরসাইকেল চালায়? না। একটু পরপর গতি বদলায় তারা। বাতাস কোনদিকে বইছে, রাস্তা কেমন সেটার ওপর নির্ভর করে সবকিছু। কোথায় গতি কমাতে হবে আর কোথায় গতি বাড়াতে হবে সেটা সবসময় মাথায় থাকে তাদের। আমি কি বলছি বুঝতে পারছো?”

“হ্যা, কিন্তু তার সাথে গণিতের কি সম্পর্ক?”

“কোথায় কেমন গতিতে চালাতে হবে সেটা বের করার জন্যে কিন্তু আলাদা দল থাকে। তারা মাইক্রোফোনে বলে দেয় সব। আর সেই হিসেবের জন্যে ক্যালকুলাস প্রয়োজন। তাহলে এখন বুঝতে পারছো তো কেন ডিফারেন্সিয়াল আর ইন্টেগ্রাল ক্যালকুলাস করতে হবে তোমাকে?”

“হ্যা,” কিছুক্ষণ পরে বলল মরিওকা। “কিন্তু সেজন্যে তো সফটওয়্যার ব্যবহার করলেও হয়।”

“কিন্তু ধরো, তোমাকেই সেই সফটওয়্যারটা বানাতে হচ্ছে, তখন?”

“আমি? সফটওয়্যার বানাবো? অসম্ভব!” চেয়ারে আরো হেলান দিয়ে বসে বলল মরিওকা।

“তুমি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার না-হলে এই ক্লাসের অন্য কেউ তো হতে পারে। এজন্যেই গণিত শেখানো হয়। তোমাকে একটা জিনিস বুঝতে হবে, আমি তোমাদের পথটা দেখিয়ে দিচ্ছি মাত্র, এরপর সবকিছু তোমাদের নিজেদেরই শিখতে হবে। কিন্তু তুমি যদি সেটাই না জানো কোন্ দরজা দিয়ে ও পথে প্রবেশ করবে তাহলে তো বিপদ। আর আমি পরীক্ষা নিয়ে দেখছি তোমরা সে দরজাটা চেনো কিনা।“

কথাটা বলার সময় পুরো ক্লাসে একবার চোখ বোলাল ইশিগামি প্রতিবারই একজন না একজন থাকে জিজ্ঞেস করে তারা কেন গণিত শিখছে। প্রতিবছরই সে এই একই উত্তর দেয়। কিন্তু এবারেরজন যেহেতু মোটরসাইকেল পছন্দ করে তাই সেটা দিয়েই উদাহরণ দিয়েছে। গত বছর গাড়ি দিয়ে উদাহরণ দিয়েছিল, তার কাছে এটা নতুন কিছু নয়।

X

ক্লাস শেষে টিচার’স রুমে গিয়ে ইশিগামি দেখলো কেউ তার ডেস্কে একটা কাগজে লিখে রেখেছে, ‘ইউকাওয়াকে ফোন দাও’-তার নিচে একটা ফোন নম্বর লেখা। হাতের লেখাটা সে চেনে। তার স্কুলেরই অন্য এক গণিত শিক্ষকের।

ইউকাওয়া আবার কি চায়? সে নিজেকেই প্রশ্ন করলো।

মোবাইল হাতে নিয়ে হলওয়েতে চলে গেলো সে। কাগজে লেখা নম্বরটাতে ডায়াল করলো। একবার রিং হতেই ফোন ধরলো ইউকাওয়া।

“ক্লাসের মধ্যে তোমাকে বিরক্ত করার জন্যে দুঃখিত।”

“জরুরি কিছু?”

“বলতে পারো। আজকে দেখা করতে পারবে?”

“আজকে? আমার হাতে অবশ্য কিছু কাজ আছে এখন। পাঁচটার পরে হলে…” কেবল ষষ্ঠ পিরিয়ডের ক্লাস শেষ হলো। সব শিক্ষার্থি এখন যার যার হোমরুমে। ইশিগামির অবশ্য নিজের কোন হোমরুম নেই। তাই জুডো স্কুলের চাবিটা অন্য এক টিচারের হাতে দিয়ে বের হয়ে যেতে পারবে সে।

“ঠিক আছে তাহলে, পাঁচটার সময় স্কুলের সামনের গেটে দেখা করছি আমরা?”

“আচ্ছা। এখন কোথায় তুমি?”

“আশেপাশেই আছি।”

“ঠিক আছে।”

ইউকাওয়া ফোনটা কেটে দেয়ার কিছুক্ষণ পরেও ইশিগামি শক্ত করে মোবাইলটা ধরে রাখলো। দুশ্চিন্তা হচ্ছে তার। এমন কি জরুরি কাজ আছে যে, ইউকাওয়া সব ফেলে তার সাথে দেখা করতে চলে এসেছে? উদ্ভ্রান্ত অবস্থাতেই ডেস্কে গিয়ে বসলো সে।

পরীক্ষার বাকি খাতাগুলো দেখতে দেখতে পাঁচটা বেজে গেলো। টিচার’স রুম থেকে বের হয়ে মাঠ পেরিয়ে সামনের গেটের দিকে হাটতে লাগলো ইশিগামি।

ইউকাওয়া গেটের কাছে আগে থেকেই দাঁড়িয়ে ছিল। কোটটা বাতাসে উড়ছে। ইশিগামিকে দেখে হেসে হাত নাড়লো সে, “এভাবে ডাকার জন্যে দুঃখিত।”

“আমিও ভাবছিলাম, কি এত জরুরি কাজ আছে যে, একেবারে এখানে চলে এসেছো তুমি,” একটু নরম হয়ে বলল ইশিগামি।

“হাটতে হাটতে কথা বলি,” এই বলে কিয়োসুবাশি রোড ধরে হাটা শুরু করলো ইউকাওয়া।

“না, এদিক দিয়ে গেলে তাড়াতাড়ি হবে,” পাশের রাস্তাটা দেখিয়ে বলল ইশিগামি। “তাহলে তাড়াতাড়ি আমার অ্যাপার্টমেন্টে পৌছে যাবো আমরা।”

“কিন্তু আমি তো সেই লাঞ্চবক্স শপটাতে যেতে চাই,” ইউকাওয়া ব্যাখ্যা করলো।

“লাঞ্চবক্স শপ? কেন, ওখানে কেন?” ইশিগামি বলল, মুখের পেশিগুলো শক্ত হয়ে গেছে।

“কেন আবার? লাঞ্চবক্স কিনতে! আজ রাতে ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করার সুযোগ পাবো বলে মনে হয় না। তাই আগে থেকেই ব্যবস্থা করে রাখতে চাই। ওখানকার খাবার তো ভালো, তাই না? তুমি তো প্রতিদিনই কিনছো।”

“ওহ্, আচ্ছা। ঠিক আছে, চল তাহলে,” ইশিগামি বেন্টেন-টেইয়ের দিকে ঘুরে বলল।

কিয়োসু ব্রিজের দিকে হাটা শুরু করলো ওরা। সেই সময় একটা ট্রাক চলে গেলো ওদের পাশ দিয়ে।

“তো,” ইউকাওয়া বলল, “সেদিন কুসানাগির সাথে দেখা হয়েছিল আমার, বুঝলে। মনে আছে না ওর কথা? ঐ যে গোয়েন্দাটা।”

ইশিগামি আরো সতর্ক হয়ে গেলো। “কি বলল সে?”

“সেরকম কিছু না। যখনই সে কোন কানাগলিতে গিয়ে পৌঁছায়, তখনই আমার শরণাপন্ন হয়। আর কেসগুলো বেশিরভাগ সময়ই কঠিন হয়। একবার এ অতৃপ্ত এক আত্মার সমস্যা নিয়েও এসেছিল, বোঝো তাহলে।”

অতৃপ্ত আত্মার গল্পটা বলা শুরু করলো সে। খারাপ না গল্পটা একেবারে, কিন্তু ইশিগামি জানে, ইউকাওয়া এই গল্প করতে আসার মানুষ নয়।

ইশিগামি ভাবছিল ইউকাওয়া এখানে আসার আসল কারণটা জিজ্ঞেস করবে এমন সময় বেন্টেন-টেই নজরে আসল তাদের। আবার অস্বস্তিবোধ করতে লাগলো সে। ইয়াসুকো তাদের দেখে কি ভাববে? এই সময়ে ইশিগামির আগমনই তার কাছে বিস্ময়কর ঠেকবে, তার ওপর একজন বন্ধুসহ সেখানে গেলে তো আরো চমকে যাবে। এখন এটা আশা করা ছাড়া উপায় নেই যে, ইয়াসুকো স্বাভাবিক আচরণ করবে।

ইউকাওয়া দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে পড়লো, ইশিগামিও গেলো তার পেছন পেছন। ইয়াসুকো অন্য এক কাস্টমারের সাথে কথা বলতে ব্যস্ত।

“স্বাগতম,” উচ্ছসিত ভঙ্গিতে ইউকাওয়াকে বলল ইয়াসুকো। এরপরে ইশিগামির দিকে নজর দিলো সে। মুখেই জমে গেলো হাসিটা, চোখগুলো দেখে বোঝাই যাচ্ছে অবাক হয়ে গেছে।

“আমার বন্ধু কিছু করেছে নাকি?” ইউকাওয়া জিজ্ঞেস করলো।

“না না, সেরকম কিছু না,” ইয়াসুকো দ্রুত উত্তর দিলো। “উনি আমার প্রতিবেশি, এখান থেকেই প্রতিদিন লাঞ্চ কেনেন…

“সেরকমই শুনেছি। তাই এসেছি এখানে।“

“ধন্যবাদ আপনাকে,” শান্তভাবে মাথা নেড়ে বলল ইয়াসুকো।

“আমরা পুরনো বন্ধু। একই সাথে ক্লাস করতাম একসময়,” ইউকাওয়া বলতেই থাকলো। “সেদিন ওর বাসাতেও গিয়েছিলাম।”

“জি,” ইয়াসুকো হেসে আবার মাথা নাড়লো।

“আপনি জানেন সেটা?”

“হ্যা, আমাকে বলেছেন তিনি।”

ইউকাওয়া হেসে বলল, “তো, আপনি কোন লাঞ্চবক্সটা নিতে বলবেন?”

“মি. ইশিগামি তো সবসময় স্পেশাল প্যাকেজটাই নেন। কিন্তু আজ তো শেষ হয়ে গেছে ওগুলো।”

“আহ্-হা। তাহলে অন্য কিছু নিতে হচ্ছে। এগুলোও দেখতে খারাপ না…“

ইউকাওয়া লাঞ্চবক্স পছন্দ করার সময় ইশিগামি দরজা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইলো। গোয়েন্দারা কি বাইরে থেকে নজর রাখছে তাদের ওপর? তাহলে ইয়াসুকোর সাথে অতটা কথাবার্তা বলা উচিত হবে না এখন।

এরপরে আরেকটা চিন্তা মাথায় এলো তার। ইউকাওয়ার দিকে ফিরলো সে। ওকে কি বিশ্বাস করা যায়? ওর সাথে থাকার সময়ও কি সতর্ক থাকতে হবে? যদি কুসানাগি ওর বন্ধু হয়ে থাকে তাহলে এখানে যা যা ঘটবে সেটা তো তার কানেও যেতে পারে।

ইউকাওয়া অবশেষে একটা লাঞ্চবক্স পছন্দ করলো। ইয়াসুকো তার অর্ডারের কথা জানাতে পেছনে গেছে, এমন সময়ে দোকানের দরজাটা খুলে গেলো। কালো কোট পরা এক লোক ঢুকেছে ভেতরে। তাকে দেখেই ইশিগামির চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো।

একেই সে কিছুদিন আগে ইয়াসুকোকে তার বাসায় নামিয়ে দিতে দেখেছিল। ছাতার নিচ দিয়ে তাদের দিকে তাকিয়েছিল সে অনেকক্ষণ। দেখে পুরনো বন্ধু বলে মনে হয়েছিল ওদের, অথবা আরো ঘনিষ্ঠ কিছু।

লোকটা অবশ্য ইশিগামিকে খেয়াল করলো না। চুপচাপ দাঁড়িয়ে ইয়াসুকোর ফেরার অপেক্ষা করতে লাগলো। পেছন থেকে ফিরে লোকটাকে দেখে ইয়াসুকো অবাক হয়ে গেলো। লোকটার চোখের ভাষা দেখে মনে হলো বলতে চাইছে কাস্টমাররা বের হয়ে যাওয়া পর্যন্ত সে অপেক্ষা করতে রাজি আছে।

কে এই লোকটা? ইশিগামি নিজেকেই জিজ্ঞেস করলো। এ আবার কখন উদয় হলো, আর ইয়াসুকোর সাথে এত ঘনিষ্ঠই বা হলো কিভাবে? ইশিগামির এখনও সেদিনকার ইয়াসুকোর খুশি খুশি চেহারাটা মনে আছে, ট্যাক্সি থেকে বের হওয়ার একদম প্রাণবন্ত লাগছিল তাকে। ওভাবে তাকে আগে কখনও দেখেনি ইশিগামি। একজন সুখি মহিলার চেহারা যেমন হওয়ার কথা, সেরকম।

আর সেটার কারণ এই লোকটা, ইশিগামি নয়।

তার দৃষ্টি ইয়াসুকো আর লোকটার মাঝে ঘুরতে লাগলো। লোকটা ভেতরে ঢোকার পরে পরিবেশটাই বদলে গেছে। গণিত শিক্ষকের বুকের ভেতরটা মুচড়ে উঠল যেন।

ইউকাওয়ার লাঞ্চবক্সটা তৈরি হয়ে গেছে। বিল দিয়ে সেটা হাতে নিয়ে নিলো সে। এরপর ইশিগামির দিকে ঘুরে বলল, “অপেক্ষা করার জন্যে ধন্যবাদ।

বেন্টেন-টেই থেকে বের হয়ে তারা সুমাইদা নদী ধরে হাটতে লাগলো। কিছুক্ষণ পরেই পৌছে গেলো কিয়ো ব্রিজের সিঁড়ির কাছে।

“ঐ লোকটা কে ছিল?” ইউকাওয়া জিজ্ঞেস করলো।

“কি?”

“দোকানে যে লোকটা এসেছিল। তোমার চেহারা দেখে মনে হলো তুমি তাকে চেনো।”

ইউকাওয়ার পর্যবেক্ষণ ক্ষমতাকে মেনে মনে গালি দিলো ইশিগামি, “তাই নাকি? চিনি বলে মনে হয় না।”

“ওহ্, থাক তাহলে, বাদ দাও।”

“কি জরুরি কাজে এসেছো বললে না তো? লাঞ্চবক্স কিনতে এসেছো এটা বলো না আবার।”

“ওহ্, তাই তো, এখনও বলিইনি তোমাকে কেন এসেছি,” ইউকাওয়া বলল। “ঐ কুসানাগির কারণেই এসেছি, বুঝলে। তোমাকে তো বললামই, যেকোন কেসে আটকে গেলে আমার কাছে আসে সে। এবার যখন শুনলো তুমি আমার বন্ধু, অদ্ভুত একটা অনুরোধ নিয়ে আসলো…”

“কি সেটা?”  

“সরাসরিই বলি, পুলিশ এখনও তোমার প্রতিবেশির আগের স্বামীর খুনের ব্যাপারটা তদস্ত করছে। তোমার প্রতিবেশিকে সন্দেহ করছে তারা। দুর্ভাগ্যবশত এখনও কোন প্রমান আসেনি ওদের কাছে, যাতে করে মহিলাকে ফাঁসানো যায়। তাই তার ওপর নজর রাখতে চায় এখন। কিন্তু সবসময় সেটা সম্ভব না। এজন্যেই তোমার কাছে এসেছি আমি।”

“মানে? আমাকে তো তার ওপর নজর রাখতে বলেনি ওরা, তাই না?”

ইউকাওয়া বোকার মত মাথা চুলকে বলল, “ইয়ে মানে, সেটাই চাইছে কুসানাগি। সবসময় অবশ্য নজর রাখতে বলছে না। শুধু পাশের বাসা থেকে সবকিছু খেয়াল করতে হবে। যদি সেরকম কিছু তোমার নজরে আসে তাহলে সেটা ওদের জানাতে হবে। আমি জানি, তোমার এতে ভালো লাগবে না, কিন্তু ওরা এমনই।”

“তো এজন্যেই আমার সাথে কথা বলতে এসেছো তুমি?”

“হ্যা, পুলিশের পক্ষ থেকে অবশ্য তোমাকে অফিশিয়ালি জানাবে শিঘ্রই, কিন্তু তার আগে আমার মনে হলো তোমাকে একবার জানিয়ে রাখি। তুমি না করে দিলেও আমার সমস্যা নেই। বরং তাতেই খুশি হবো আমি। আসলে কুসানাগির জন্যেই এখানে আসা। হাজার হলেও বন্ধু মানুষ।“

ইউকাওয়াকে দেখে মনে হচ্ছে সে আসলেও ব্যাপারটা নিয়ে চিন্তিত। ভেতরে ভেতরে অবশ্য ইশিগামি সন্দেহ করছে তাকে। পুলিশ কি আসলেও কোনও সাধারণ নাগরিককে এরকম অনুরোধ করবে?

“এজন্যেই কি বেন্টেন-টেই’তে গিয়েছিলে তুমি?”

“সত্যি কথা বলতে, হ্যা, সেজন্যেই গিয়েছিলাম। সন্দেহভাজন মহিলাকে একবার দেখার ইচ্ছে ছিল আমার। কিন্তু এখন আমার মনে হচ্ছে তার পক্ষে কাউকে খুন করা সম্ভব নয়।”

ইশিগামি প্রায় বলেই ফেলেছিল তারও একই ধারণা, কিন্তু চুপ করে থাকলো সে। বরং বলল, “বাইরে থেকে দেখে কিছু বোঝা যায় না। একটা বইয়ের প্রচ্ছদ দেখে কিন্তু ধারণা করতে পারবে না ভেতর কি আছে।’

“হুম। তো, কি ঠিক করলে? পুলিশের হয়ে কাজ করবে?”

“আসলে, এসবে না জড়ালেই খুশি হবো আমি,” মাথা ঝাঁকিয়ে বলল ইশিগামি। “অন্য কারো ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে ঘাটানোও আমার পছন্দ নয়। তাছাড়া আমার হাতে সে সময়ও নেই। আমাকে দেখে হয়তো মনে হয় না, কিন্তু আমি আসলে বেশ ব্যস্ত থাকি।”

“সেরকমটাই ভেবেছিলাম আমি। কুসানাগিকে তোমার কথাটাই বলে দেবো। তাহলে আর তোমাকে ঘাটাবে না ওরা। এভাবে বিরক্ত করার জন্যে দুঃখিত।”

“আরে, ব্যাপার না।

শিনোহাশি ব্রিজের কাছে পৌছে গেছে তারা। বাস্তুহারাদের শ্যান্টিগুলো দেখা যাচ্ছে নদীর পাশে।

“খুনটা বোধহয় মার্চের দশ তারিখে হয়েছিল, কুসানাগি ওরকমই বলেছে। তুমি নাকি সেদিন বেশ তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরেছিলে?”

“হ্যা, সেদিন অত জরুরি কোন কাজ ছিল না আমার। সাতটার দিকে ফিরেছিলাম বোধহয়। সেরকমটাই তো তাকে জানিয়েছি।”

“এরপরে গণিত নিয়ে যুদ্ধ করতে বসে গিয়েছিলে?”

“ওরকমই কিছু একটা হবে।”

ইউকাওয়া কি ওর অ্যালিবাই খোঁজার চেষ্টা করছে? তাই যদি হয়ে থাকে তাহলে নিশ্চয়ই সে ধরে নিয়েছে ইশিগামি এসবের সাথে কোনভাবে জড়িত।

“তোমার তো গণিত বাদে অন্য কোন শখ ছিল না?”

“শখ,” ইশিগামি নাক দিয়ে আওয়াজ করে বলল। “না, গণিত নিয়েই ব্যস্ত থাকি আমি।”

“তাহলে একঘেয়েমি লাগলে কি করো? গাড়ি চালাতে বের হয়ে যাও নাকি?” ইউকাওয়া গাড়ির স্টিয়ারিং ঘোরানোর ভঙ্গি করে বলল।

“না। আর চাইলেও সেটা সম্ভব না আমার পক্ষে। গাড়ি নেই আমার।”

“কিন্তু ড্রাইভিং লাইসেন্স তো আছে তোমার, নাকি?”

“এত নিশ্চিত হচ্ছো কিভাবে?”

“না, এমনি বলছি। তুমি এতটাও ব্যস্ত নও যে, কোন ড্রাইভিং স্কুলে ভর্তি হতে পারবে না, তাই না?”

“হ্যা, লাইসেন্স আছে আমার। চাকরি পেতে সুবিধা হবে ভেবে শিখেছিলাম। কিন্তু বুঝতেই পারছো, কোন কাজে আসেনি ওটা, “ ইউকাওয়ার দিকে না তাকিয়েই বলল সে। “তুমি কি এটা জানার চেষ্টা করছিলে আমি গাড়ি চালাতে পারি কিনা?”

“না, সেটা কেন করবো?” অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো ডিটেক্টিভ গ্যালেলিও।

“না, তোমার প্রশ্নগুলো শুনে আমার সেরকমই মনে হচ্ছিল।”

“আসলে ওরকম কিছু ভেবে প্রশ্নগুলো করিনি আমি। গণিত বাদে অন্য কিছু নিয়ে কথা বলার জন্যেই ও প্রসঙ্গ তুলেছিলাম।

“গণিত আর ‘খুনের রহস্য বাদে অন্য প্রসঙ্গ,” ইচ্ছে করেই খুনের রহস্য শব্দ দুটোতে জোর দিলো ইশিগামি।

“হা-হা-হা, ভালো বলেছো,” হেসে জবাব দিলো ইউকাওয়া।”

শিনোহাশি ব্রিজের নিচ দিয়ে হাটতে লাগলো তারা। পনিটেইলওয়ালা ধূসর চুলের লোকটা একটা পাত্রে কী যেন সেদ্ধ করছে। পাশে একটা ছোট তেলের কৌটো। আশেপাশে আরো কয়েকজনকে দেখা গেলো।

সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠার সময়ে ইশিগামির দিকে ঘুরে ইউকাওয়া বলল, “আমি তাহলে বাড়ির পথ ধরি এখন। এই তদন্তের ব্যাপারে তোমাকে বিরক্ত করার জন্যে দুঃখিত।”

“আমার তরফ থেকে কুসানাগির কাছে ক্ষমা চেয়ে নেবে। তাকে সাহায্য করতে না পারার জন্যে দুঃখিত আমি।”

“আরে, এখানে ক্ষমা চাওয়ার মত কিছু আছে বলে আমার মনে হয় না। আশা করি আমি আবার দেখা করতে আসলে তুমি কিছু মনে করবে না।”

“না, অবশ্যই না।”

“যাক। তাহলে একসাথে বসে হুইস্কি খাওয়া আর গণিত নিয়ে আড্ডা দেয়া যাবে।”

“মানে, বলতে চাইছো গণিত আর খুন নিয়ে আড্ডা দেয়া যাবে।”

ইউকাওয়া শ্রাগ করে বলল, “হতে পারে তোমার জন্যে আরেকটা কঠিন কোন সমস্যা নিয়ে আসলাম আমি। যেটা নিয়ে অবসর সময়ে চিন্তা করতে পারবে তুমি?”

“যেমন?”

“বলো তো কোনটা কঠিন? একটা সমস্যার সমাধান করা নাকি সেই সমস্যাটা তৈরি করা? এটার কিন্তু উত্তর আছে। ঐ ক্লে গণিত সংস্থার দেয়া ফালতু ধাঁধাটার মত নয়। মজার না প্রশ্নটা?”

“আসলেই,” ইউকাওয়ার মুখের ভঙ্গি বোঝার চেষ্টা করতে করতে বলল ইশিগামি। “চিন্তা করবো আমি প্রশ্নটা নিয়ে।”

ইউকাওয়া একবার বাউ করে ঘুরে নিজের বাড়ির দিকে পা বাড়ালো।

সকল অধ্যায়

১. দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – ১
২. দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – ২
৩. দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – ৩
৪. দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – ৪
৫. দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – ৫
৬. দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – ৬
৭. দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – ৭
৮. দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – ৮
৯. দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – ৯
১০. দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – ১০
১১. দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – ১১
১২. দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – ১২
১৩. দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – ১৩
১৪. দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – ১৪
১৫. দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – ১৫
১৬. দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – ১৬
১৭. দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – ১৭
১৮. দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – ১৮
১৯. দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – ১৯

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন