দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – ১৮

কেইগো হিগাশিনো

অধ্যায় ১৮

সামনে দাঁড়ানো কাস্টমারের হাতে লাঞ্চবক্সটা তুলে দিলো ইয়াসুকো। আজকের মত কাজ শেষ। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো ছ-টা বাজতে এখনও কিছুটা সময় বাকি। মাথার সাদা ক্যাপটা খুলে ফেলল সে।

দুপুরের খাবারের সময় কুডো তার মোবাইলে ফোন দিয়েছিলেন। “সেলিব্রেট করবো আমরা,” খুশিতে বলেছিলেন তিনি।

“কি সেলিব্রেট করবো?” ইয়াসুকো জিজ্ঞেস করে।

“সেটা আবার বলতে হবে নাকি?” কুডো জবাব দেন। “খুনি ধরা পড়েছে! তোমার ওপর আর নজর রাখবে না কেউ। এখন যদি সেলিব্রেট না করো তাহলে কখন করবে?”

কুডোর গলার আওয়াজ শুনে সত্যি তাকে খুব খুশি মনে হচ্ছিল। কারণ আসল সত্যটা জানেন না তিনি। কিন্তু ইয়াসুকো চেষ্টা করেও নিজের মধ্যে সেই ভাবটা আনতে পারেনি। কুডোকে বলে, আজ তার মুড ভালো নেই।

“কিন্তু কেন?” কুডো অবাক হয়ে জানতে চান। যখন এপাশ থেকে ইয়াসুকো কোন জবাব দেয় না, তখন নিজেই আবার বলেন, “বুঝতে

পেরেছি, ভিক্টিম হাজার হলেও তোমার আগের স্বামী। চেষ্টা করেও সম্পর্কের বাঁধনগুলো সহজে কেটে ফেলা যায় না, তাই না? সেলিব্রেট করার কথা বলা উচিত হয়নি আমার।”

প্রকৃত সত্যটা সম্পর্কে কিছুই জানেন না তিনি, কিন্তু ইয়াসুকোও আর আগ বাড়িয়ে সে বলেনি তাকে।

“আসলে… কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পরে বলেছিলেন তিনি “আরেকটা জরুরি ব্যাপারে তোমার সাথে কথা ছিল আমার। আজকে রাতে দেখা করতে পারলে খুবই ভালো হত। সেটা কি সম্ভব?”

ইয়াসুকো একবার ভেবেছিল, না বলে দেবে। কারণ ইশিগামির আত্মসমর্পণের ব্যাপারটা এখনো স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেনি সে। প্রচণ্ড আত্মগ্লানিতে ভুগছে। কিন্তু কিভাবে না বলবে ভেবে পাচ্ছিল না, আর কুডোর জরুরি কথা কি হতে পারে সেটা নিয়েও আগ্রহ ছিল তার মনে।

শেষপর্যন্ত ঠিক হয় সাড়ে ছটার দিকে তাকে তুলে নেবেন কুডো। মিশাতোকে আনার ব্যাপারেও একবার বলেছিলেন তিনি, কিন্তু সরাসরি না করে দেয় ইয়াসুকো। তার মেয়ের এখন যে অবস্থা, সেটা অন্য কেউ দেখুক তা সে চায় না।

বাসার ফোনে ফোন করে একটা মেসেজ রেখে দিয়েছে সে। বলেছে, ফিরতে একটু দেরি হবে তার আজকে। কিন্তু মিশাতো ব্যাপারটাকে কিভাবে দেখবে সেটা ভেবে লজ্জাই লাগলো তার।

ছ-টা বাজার সাথে সাথে অ্যাপ্রনটা খুলে ফেলল ইয়াসুকো। রান্নাঘরে উঁকি দিয়ে সায়োকোর উদ্দেশ্যে বলল, “আজকের মত কাজ শেষ তাহলে?”

“ছ-টা বেজে গেছে নাকি!” সায়োকো ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল। “ঠিক আছে, চলে যাও তুমি। বাকিটা আমি সামলে নেবো।”

“ধন্যবাদ,” এই বলে অ্যাপ্রনটা ভাজ করা শুরু করলো ইয়াসুকো। “আজ রাতে মি. কুডোর সাথে দেখা করবে তুমি, তাই না?” শান্তস্বরে জিজ্ঞেস করলো সায়োকো।

“কি?”

“দুপুরের দিকে তোমাকে মোবাইলে কথা বলতে দেখেছি আমি। তোমাকে নিয়ে বাইরে খেতে যেতে চান উনি নিশ্চয়ই?”

লজ্জা পেয়ে গেলো ইয়াসুকো, গালদুটো লাল হয়ে উঠলো।

তোমার জন্যে ভালো লাগছে আমার। সব ঝামেলা মিটে গেছে। এখন খালি মি. কুডোর সাথে সময় কাটাবে,” হাসিমুখে কথাগুলো বলে একবার চোখ টিপ দিলো সায়োকো।

“হয়তো…“

“কোন হয়তো না। অনেক কষ্ট করেছো তুমি এতদিন, এখন জীবনটাকে উপভোগ করার সময়। আর মিশাতোর কথাও চিন্তা করতে হবে তোমাকে।”

সায়োকোর কথাগুলো শুনে ভেতরে ভেতরে গুমরে উঠল ইয়াসুকো। সে যদি জানতো ইয়াসুকো আসলে একজন খুনি, তাহলে কি এই কথাগুলো বলতো?

আর কিছু না বলে বিদায় জানিয়ে রান্নাঘ থেকে বের হয়ে গেলো সে। সায়োকোর চোখের দিকে তাকাতে পারছে না।

বেন্টেন-টেই থেকে বেরিয়ে প্রতিদিনের রাস্তাটায় না গিয়ে উল্টোদিকে হাটতে শুরু করলো সে। কুডোর সাথে মোড়ের রেস্তোরাঁয় দেখা করার কথা তার। এই জায়গাটা সে এতদিন এড়িয়ে চলেছে ইচ্ছে করে। কিন্তু আজ কুডো যখন এখানে দেখা করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন তখন না বলার জন্যে কোন অজুহাত খুঁজে পায়নি।

রেস্তোরাঁর পাশের রাস্তাটা দিয়ে একটা ফ্লাইওভার চলে গেছে। সেটার ছায়া দিয়েই হাটছিল সে এমন সময় পেছন দিক থেকে ডাক দিলো কেউ, “মিস হানাওকা?”

ঘুরে তাকিয়ে দেখলো পরিচিত দু-জন লোক হেটে আসছে তার দিকে। একজন হচ্ছে ইউকাওয়া- পদার্থবিজ্ঞানের প্রফেসর, ইশিগামির পুরনো বন্ধু। আরেকজন ডিটেক্টিভ কুসানাগি। তাদের এই সময়ে এখানে আশার উদ্দেশ্য সম্পর্কে ইয়াসুকো ধারণা করতে পারলো না।

“আমাকে চিনতে পারছেন?” ইউকাওয়াই প্রথমে কথা বলল।

দু-জনের চেহারার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো ইয়াসুকো। এরপর মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো।

“এভাবে বিরক্ত করার জন্যে দুঃখিত। কোথাও যাচ্ছিলেন?”

“আসলে…” একবার ঘড়ি দেখে নিলো সে। খুব অস্বস্তি লাগছে কেন যেন। “একজনের সাথে দেখা করার কথা আমার।”

“ওহ্। কিন্তু আপনার সাথে কিছু কথা ছিল। খুব জরুরি।“

“হাতে একদমই সময় নেই…” মাথা ঝাঁকিয়ে বলল সে।

“তাহলে পনেরো মিনিট? ওটুকুই যথেষ্ট আমার জন্যে। ঐ বেঞ্চটাতে বসে কথা বলি?” এই বলে রাস্তার পাশের পার্কটার একটা বেঞ্চের দিকে ইঙ্গিত করলো ইউকাওয়া।

খুব শান্তভাবেই কথাগুলো বলল সে, কিন্তু গলার স্বর শুনেই বোঝা যাচ্ছে ব্যাপারটা নিশ্চয়ই জরুরি কিছু হবে। এই প্রফেসর আগেও এভাবে কথা বলেছে তার সাথে, শান্তস্বরে, কিন্তু ওগুলো শুনে দম বন্ধ হয়ে আসার মত অবস্থা হয়েছিল ইয়াসুকোর।

দৌড়ে সেখান থেকে যত দ্রুত সম্ভব পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে এখন তার। কিন্তু একটা অদম্য কৌতূহল আটকে রেখেছে তাকে। কারণ, সে জানে ইশিগামির ব্যাপারে কিছু বলতে এসেছে ইউকাওয়া।

“ঠিক আছে, দশ মিনিট।“

“তাই সই। ধন্যবাদ,” পার্কের দিকে যেতে যেতে বলল ইউকাওয়া। ইয়াসুকো ইতস্তত করতে লাগল। কিন্তু কুসানাগি হাত নেড়ে বলল

তাকে, “যান।” মাথা নেড়ে ইউকাওয়াকে অনুসরণ করলো সে। ডিটেক্টিভের গম্ভীর মুখটা দেখে তার সারা শরীর শিরশির করে উঠেছে।

বেঞ্চটাতে গিয়ে ইয়াসুকোর জন্যে জায়গা রেখে একপাশে বসে পড়লো ইউকাওয়া।

“তুমি ওখানেই দাঁড়াও,” কুসানাগিকে উদ্দেশ্য করে বলল সে। “একটু একান্তে কথা বলতে চাই আমরা।”

কুসানাগিকে দেখে অবশ্য মনে হলো না কথাটা শুনে সন্তুষ্ট হতে পেরেছে। কিন্তু কিছু না বলে পার্কের প্রবেশ পথের দিকে ফিরে যেতে লাগল সে। পকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে ধরিয়ে নিয়েছে এরমধ্যে।

ইউকাওয়ার পাশে বসে কুসানাগিকে দেখতে লাগল ইয়াসুকো। “এটা কি ঠিক হচ্ছে? তিনি তো একজন ডিটেক্টিভ?”

“সে ব্যাপারে আপনার না ভাবলেও চলবে। এখানে আসলে একা একাই আসতে চেয়েছিলাম আমি। তাছাড়া ও আমার খুব ভালো বন্ধু।

“বন্ধু?”

“হ্যা, ভার্সিটির সময় থেকেই,” হেসে বলল ইউকাওয়া। “ইশিগামি আর আমার সাথেই পড়তো সে। কিন্তু ওদের দু-জনের মধ্যে অবশ্য এই কেসের আগে কখনো দেখা হয়নি।”

এতদিনে ইয়াসুকো বুঝতে পারলো কেন খুনের ঘটনাটা ঘটার পরেই ইশিগামির বাসায় এসেছিল ইউকাওয়া। ইশিগামি অবশ্য এ ব্যাপারে কোন কথা বলেনি। নিশ্চয়ই এই পদার্থবিজ্ঞানের প্রফেসরের কারণেই ইশিগামির সব পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে। টোগাশির খুনটা সামাল দেয়ার কথা যখন ভাবছিল লোকটা, তখন নিশ্চয়ই ইউকাওয়ার কথা মাথায় আসেনি তার। এটাও ভাবেনি কেসের সিনিয়র ডিটেক্টিভও ইম্পেরিয়াল ইউনিভার্সিটির ছাত্র।

কিন্তু সব তো মিটেই গেছে এখন। তাহলে ইউকাওয়া কীসের ব্যাপারে কথা বলতে এসেছে?

“এটা কিন্তু আসলেই দুঃখজনক ব্যাপার, ইশিগামি ওরকমভাবে পুলিশের হাতে নিজেকে তুলে দিলো,” সরাসরি কাজের কথা বলা শুরু করলো ইউকাওয়া। “তার মত মেধাবি একজন মানুষের বাকি জীবনটা জেলে কাটাতে হবে, একজন বিজ্ঞানী হিসেবে এটা ভাবতেও খারাপ লাগছে আমার।”

ইয়াসুকো বুঝে উঠতে পারলো না কী জবাব দেবে। শক্ত করে বেঞ্চটাকে চেপে ধরলো সে আঙুল দিয়ে।

“সত্যি কথা বলতে কি, আমার মানতে কষ্ট হচ্ছে। তার পক্ষে যে এমন একটা কাজ করা সম্ভব সেটা চাইলেও বিশ্বাস করতে পারছি না আমি। মানে, আপনার ওপর তার নজর রাখার কথাটা বলছি।”

ইয়াসুকো বুঝতে পারলো ইউকাওয়া চোখের কোণ দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। সারা শরীর শক্ত হয়ে গেলো তার।

“আসলে কথাটা বোধহয় ভুল বললাম। বিশ্বাস না, আমি একদম নিশ্চিত, ওরকম কিছু করেনি সে। মিথ্যে বলছে ইশিগামি। তাহলে স্বাভাবিকভাবেই একটা প্রশ্ন আসে, কেন মিথ্যা বলবে? এমন একটা খুনের দায়ে ফেঁসে গেছে, যেটাতে তার কোন হাত নেই। তবুও ক্রমাগত মিথ্যা বলেই যাচ্ছে। এর একটা কারণই থাকতে পারে। নিজের জন্যে মিথ্যেটা বলছে না, অন্য কারো জন্যে বলছে, সত্যিটা লুকানোর জন্যে।”

ইয়াসুকো ঢোক গিলল একবার। খুব কষ্ট করে নিজেকে স্বাভাবিক রেখেছে। সে জানে না কিভাবে, কিন্তু তার সামনে বসা এই লোক সত্যিটা ধরে ফেলেছে। ইশিগামি খুনটা করেনি-কাউকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে সে। এখন যেভাবে সম্ভব তার বন্ধুকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে ইউকাওয়া। আর সেটা করার সবচেয়ে কার্যকরি উপায় কি? আসল খুনির মুখ থেকে সত্যটা বের করা। ইয়াসুকো যদি এখন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় তাহলে তার বন্ধু নির্দোষ প্রমাণ হয়ে যাবে।

ভয়ার্ত দৃষ্টিতে লোকটার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলো ইয়াসুকো। সে হাসছে।

“আপনি ভাবছেন আপনার পেট থেকে কথা বের করার জন্যে এখানে এসেছি আমি, তাই না?”

“না, সেটা কেন চিন্তা করতে যাবো-” ইয়াসুকো তাড়াতাড়ি মাথা ঝাঁকিয়ে বলল। “আমি বুঝতে পারছি না কীসের কথা বের করার কথা বলছেন আপনি….”

“জি, ঠিক বলেছেন। আমি দুঃখিত, কিছু মনে করবেন না আমার কথায়,” মাথা নিচু করে বলল ইউকাওয়া। “তবুও অন্য একটা ব্যাপারে আপনাকে জানাতে চাই আমি। সেজন্যেই এখানে এসেছি।”

“কি সেটা?”

কিছু বলার আগে বেশ খানিকক্ষন চুপ করে থাকলো ইউকাওয়া এরপর বলল, “আসলে আপনি সত্যটা সম্পর্কে কিছুই জানেন না।“

বিস্ময়ে চোখজোড়া বড় হয়ে গেলো ইয়াসুকোর। ইউকাওয়া আর হাসছে না এখন।

“আপনার অ্যালিবাইটা সত্য,” ইউকাওয়া বলতে থাকলো। “মেয়েকে নিয়ে আসলেই ঐদিন সিনেমা দেখতে গিয়েছিলেন আপনি। আমার মনে হয় না মিশাতোর বয়সি একটা মেয়ে এতবার পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের পরও সত্যটা লুকাতে পারবে। তার মানে, শুরু থেকেই কেউ মিথ্যা বলেননি আপনারা।”

“হ্যা, একটা কথাও মিথ্যা বলিনি আমরা। কিন্তু সেটা আমাকে বলছেন কেন আপনি?”

“আপনার কাছে কি ব্যাপারটা অদ্ভুত মনে হয়নি, কেন কখনই মিথ্যা বলতে হয়নি আপনাদের? আসলে ইশিগামি এমন বন্দোবস্ত করেছে যাতে মিথ্যা না বলতে হয় আপনাদের। ডিটেক্টিভরা যতই চেষ্টা করুক না কেন, আপনাদের পর্যন্ত পৌঁছুতে পারবে না। আপনি হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন অসাধারণ একটা চাল চেলেছে ইশিগামি, কিন্তু সেটা যে কি তা সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা বোধহয় নেই আপনার। আমি কি ভুল বলছি?”

“আমি দুঃখিত। আপনি কি বলছেন তার মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারছি না আমি,” ইয়াসুকো হাসার চেষ্টা করে বলল, কিন্তু বিশেষ সফল হলো না তাতে।

“আপনাদের বাঁচানোর জন্যে একটা চরম বলিদান করেছে সে। আর সেটার মাহাত্ম্য বোঝার ক্ষমতা আপনার আমার মত সাধারণ লোকের নেই। আমি নিশ্চিত, ঘটনার রাত থেকেই আপনার জায়গায় নিজে জেলে যাওয়ার জন্যে প্রস্তুত ছিল সে। আর এটার উপর ভিত্তি করেই সমস্ত পরিকল্পনা সাজায় ইশিগামি। অন্যভাবে বললে, সে জানত যতক্ষণ তার হাতে এই চালটা আছে, কেউ কিচ্ছু করতে পারবে না আপনাদের। আর সেটা একখান চালই বটে! কার পক্ষে সম্ভব এরকম কঠিন একটা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা? ইশিগামি জানত তার নিজের পক্ষেও সেটা করা অসম্ভব। আর এজন্যেই এমন একটা পথ বেছে নিয়েছে যেটা থেকে ফেরার কোন উপায় নেই। এ ব্যাপারটাই সবচেয়ে অবাক করেছে আমাকে।“

ইয়াসুকো পুরোপুরি বিভ্রান্ত হয়ে গেছে। প্রথম দিকে তার মনে হয়েছিল, প্রফেসর কি বলতে চাইছেন তা আঁচ করতে পারছে। কিন্তু এখন তো সব গুলিয়ে যাচ্ছে। আর সেটা যাই হোক না কেন তার জন্যে যে সুখকর হবে না সেটা নিশ্চিত।

তবে এতক্ষণ যা বলেছে প্রফেসর তার পুরোটাই সত্যি, কিন্তু এই সত্যিটাই এতদিন মাথায় আসেনি তার। আসলেও তো, ইশিগামি এতদিন ধরে কি পরিকল্পনা এঁটেছে সে সম্পর্কে তার কোন ধারণা নেই। ডিটেক্টিভরা তাকে বেশ কয়েকবার প্রশ্ন করতে এসেছে ঠিকই, কিন্তু কোনবারই আসল ঘটনাটার ধারে কাছ দিয়েও যায়নি তারা। এটা নিয়ে সে নিজেও অবাক হয়েছে।

আর ইউকাওয়া কারণটা জানে।

তাকে হাতঘড়িটার দিকে তাকাতে দেখলো ইয়াসুকো।

“আপনাকে এসব বলতে খারাপই লাগছে আমার,” মুখ ভার করে বলল প্রফেসর। “কারণ আমি জানি, ইশিগামি এটা চায় না। বরং আপনি সত্যটা না জানলেই খুশি থাকবে সে। সেটা যদি জানতে পারেন আপনি তবে এখন যেরকম কষ্টে আছেন, তার চেয়েও বহুগুণ বেশি কষ্ট নিয়ে বসবাস করতে হবে। তবুও আপনাকে সব কিছু খুলে বলতেই হবে আমাকে। কারণ আপনাকে যদি এটা না জানাই, তাহলে বন্ধু হিসেবে তার সাথে অবিচার করা হবে। আপনি জানতেও পারবেন না কিভাবে আপনার জন্যে নিজের জীবন নিয়ে জুয়া খেলেছে সে। তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে হলেও আপনাকে বলবো আমি সব।“

ইয়াকোর মনে হচ্ছে সে অজ্ঞান হয়ে যাবে যেকোন মুহূর্তে।

“আমি এখনও বুঝতে পারছি না আপনি কী বলতে চাচ্ছেন,” জোর দিয়েই কথাগুলো বলার চেষ্টা করলো সে কিন্তু পারলো না। গলা কাঁপছে তার। “কিছু যদি বলতেই চান, পরিস্কার করে বলুন।”

“এডোগাওয়া নদীর তীরে যার লাশ পাওয়া গেছে তাকে সে-ই খুন করেছে,” ইউকাওয়া বলল। “ইশিগামিই খুনি, আপনি কিংবা আপনার মেয়ে নয়। বিনা দোষে আত্মসমর্পণ করেনি সে। আসলেও একটা খুন করেছে।”

ইয়াসুকোর মুখটা হা হয়ে গেলো, কি শুনছে বুঝতে পারছে না।

“যাই হোক,” ইউকাওয়া বলতেই থাকলো, “ঐ লাশটা শিনজি টোগাশির নয়। আপনার আগের স্বামীর লাশ পাওয়া যায়নি। সম্পূর্ণ অচেনা একজন লোকের লাশকে এমনভাবে সাজিয়েছে সে যাতে মনে হয় ওটা টোগাশির লাশ।”

ইয়াসুকো অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে প্রফেসরের দিকে তাকালো। কিন্তু যখন দেখলো প্রফেসরের চোখের দুকোণে জল চিকচিক করছে, চশমার কাঁচ ঘোলা হয়ে এসেছে তার, তখনই সত্যটা আঘাত করলো তাকে। হাত দিয়ে মুখ ঢেকে বিস্ময় গোপন করার চেষ্টা করলো সে। সমস্ত রক্ত সরে গেছে মুখ থেকে।

“মনে হয় এতক্ষণে আপনি বুঝতে পেরেছেন কি বলার চেষ্টা করছিলাম আমি,” নরম সুরে বলল ইউকাওয়া। “হ্যা, আপনাকে বাঁচানোর জন্যে আসলেও একটা খুন করেছে ইশিগামি মার্চের দশ তারিখে। শিনজি টোগাশি খুন হবার পরের দিন।”

ইয়াসুকোর মাথা ঘোরাচ্ছে, সোজা হয়ে বসে থাকতেও কষ্ট হচ্ছে তার। হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে; মনে হচ্ছে হাজারটা মৌমাছি একসাথে হুল ফুটিয়েছে তার সারা শরীরে।

X

পার্কের গেটের কাছে দাঁড়িয়েও ইয়াসুকোর চেহারা দেখে কুসানাগি বুঝতে পারলো তাকে সত্যটা বলে দিয়েছে ইউকাওয়া। সম্পূর্ণ ফ্যাকাসে হয়ে গেছে তার মুখ। এমনটাই হবার কথা ছিল, ভাবলো সে। এরকম অদ্ভুত একটা গল্প শুনে কারো পক্ষেই ঠিক থাকার কথা নয়।

কুসানাগির এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না কথাটা। ইউকাওয়া যখন সব ব্যাখ্যা করছিল তার কাছে তখন রীতিমত বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিল সে কিছুক্ষণের জন্যে। এতটাই অবাস্তব শোনাচ্ছিল গল্পটা আর তার বন্ধু যে এরকম বিষয় নিয়ে মজা করার মানুষ নয় সেটা সে ভালোমতই জানে।

“অসম্ভব,” কুসানাগি বলেছিল। “ইয়াসুকো হানাওকার অপরাধ ঢাকার জন্যে অন্য একজন লোককে খুন করবে সে? এতটা গাধামি কারো পক্ষে করা সম্ভব? আর সেটা যদি ঘটেই থাকে, তাহলে কাকে খুন করেছে সে?”

এই প্রশ্নটা শোনার পর ইউকাওয়াকে আরো দুঃখি দেখাচ্ছিল। মাথা নেড়ে সে বলেছিল, “তার নাম জানি না আমি, কিন্তু সে কোথায় থাকতো সেটা জানি।”

“মানে?”

“এই পৃথিবীতে এমন অনেক মানুষ আছে যারা রাতারাতি উধাও হয়ে গেলে কারো কিছু যায় আসে না। এমনকি পুলিশের কাছে রিপোর্টও করবে না কেউ। সাধারণত এমন লোকদের পরিবারের সাথেও যোগাযোগ থাকে না,” ইউকাওয়া হাটতে হাটতে নদীর তীরের বাস্তুহারাদের বসতিটার দিকে ইশারা করে বলেছিল, “তাদেরকে একটু আগেই দেখেছো তুমি।”

কুসানাগি প্রথমে বোঝেনি ইউকাওয়া কি বলতে চাচ্ছে। কিন্তু নদীর তীরে তাকাতেই বিদ্যুৎ চমকের মত কথাটা মাথায় আসে তার,

“বাস্তুহারাদের কথা বলছো তুমি!”

“তুমি কি ঐ লোকটাকে খেয়াল করেছো, খালি ক্যান সংগ্রহ করে যে? এই বসতিতে থাকা প্রত্যেক ব্যক্তি সম্পর্কে ধারণা আছে ইশিগামির। তার সাথে কিছুদিন আগে কথা বলি আমি, তখন একটা লোকের কথা বলে সে আমাকে, গত একমাস ধরে তাদের সাথে থাকছিল ঐ লোকটা। তখনও নিজের জন্যে কোন ঘর কিংবা শ্যান্টি বানায়নি, কারণ কার্ডবোর্ডের ওপর ঘুমানোর অভ্যাস ছিল না তার। ক্যান-মানব আমাকে বলল, সবাই নাকি প্রথম দিকে অমনটাই থাকে কারণ নিজের আত্মসম্মানবোধ ত্যাগ করা অত সহজ নয়। কিন্তু শেষপর্যন্ত পরিস্থিতির কাছে হার মানতে বাধ্য হয়। যাই হোক, এই নতুন লোকটা একদিন হঠাৎ করেই উধাও হয়ে যায়। ক্যান- মানব একবার ভেবেছিল তার কথা, কিন্তু কিছু করার প্রয়োজনবোধ করেনি। আসলে এখানে প্রায়ই এমনটা হয়। হঠাৎ করেই উধাও হয়ে যায় অনেকে।” ইউকাওয়া যোগ করলো, “কাকতালিয়ভাবে লোকটা মার্চের দশ তারিখে উধাও হয়। বয়স পঞ্চাশের আশেপাশে হবে, শারীরিক গঠন টোগাশির মতই।’

পুরনো এডোগাওয়াতে লাশটা পাওয়া গিয়েছিল এগারো তারিখে

“আমি ঠিক জানি না কি হয়েছিল, কিন্তু ইশিগামি কোনভাবে ইয়াসুকোর অপরাধের কথা জানতে পেরে গিয়েছিল আর তখনই তাকে বাঁচানোর সিদ্ধান্ত নেয় সে। এটা বুঝতে পারে, লাশটা সরিয়ে ফেললেই বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে না। কারণ একবার লাশের পরিচয় বের করে ফেললে ইয়াসুকোকে পুলিশ ঠিকই সন্দেহ করবে। আর মা-মেয়ে কতক্ষণ পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের সামনে টিকতে পারবে এ ব্যাপারে তার ভরসা ছিল না। এজন্যেই অন্য একটা লোককে খুন করে লাশটা টোগাশির মত করে সাজানোর সিদ্ধান্ত নেয়। আর সময়ে সময়ে তোমাদের হাতে বিভিন্ন তথ্য তুলে দেয়। যার ফলে তদন্তের অগ্রগতি হবার সাথে সাথে ইয়াসুকোর ওপর সন্দেহ কমতে থাকে সবার। আর কমবে না কেন? প্রমাণগুলো তো শিনজি টোগাশির খুনের কেসের ছিল না। এতদিন সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা কেস নিয়ে তদন্ত করেছো তোমরা, কিন্তু সে ব্যাপারে বিন্দুমাত্র ধারণা ছিল না কারো।“

কথাটা হজম করতে বেশ কষ্ট হয়েছিল কুসানাগির। পুরোটা সময় মাথা নাড়ছিল সে।

“তার মাথায় এই বুদ্ধিটা আসে কারণ প্রতিদিনই নদীর পার দিয়ে হেটে যেতে হত তাকে। এখানকার লোকদের ভালোমত পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ পেয়েছে সে। জানতো, এখান থেকে কেউ উধাও হলে কোন প্রশ্ন উঠবে না।”

“আর এজন্যেই তাদের একজনকে খুন করার সিদ্ধান্ত নেয় সে?” কুসানাগি জিজ্ঞেস করেছিল।

“তোমাকে কি বলেছিলাম ভুলে গেছো? যৌক্তিক মনে হলে যেকোন কিছু করা সম্ভব তার পক্ষে।”

“খুন করাটাও যৌক্তিক?”

“তার ধাঁধার শেষ টুকরো ছিল একজন অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশ। যেভাবেই হোক সেটা জোগাড় করতে হত তাকে।“

গল্পটা পুরোপুরি অবিশ্বাস্য, কিন্তু ইউকাওয়ার কথা ফেলেও দিতে পারছিল না কুসানাগি।

“ইয়াসুকো হানাওকা টোগাশিকে খুন করার পরের দিন সকালে ঐ বাস্তুহারা লোকটার সাথে যোগাযোগ করেছিল ইশিগামি। কি বলেছিল সেটা জানি না কিন্তু ধারণা করতে পারছি নিশ্চয়ই কোন চাকরির প্রস্তাব দিয়েছিল তাকে, আর সে অনুযায়ি তাকে শিনজি টোগাশির বোর্ডিং হাউজটাতে নিয়ে গিয়েছিল। ইশিগামি আগের রাতেই সেই ঘর থেকে টোগাশির সব চিহ্ন মুছে ফেলে, যাতে ওখান থেকে যে চুল আর আঙুলের ছাপ পাবে পুলিশ সেটা যেন বাস্তুহারা লোকটারই হয়। সেইদিনই রাতের বেলা অন্য একটা জায়গায় লোকটাকে তার সাথে দেখা করতে বলে ইশিগামি। কিছু কাপড় চোপড়ও দিয়ে দিয়েছিল আগে থেকে।”

“শিনোজাকি স্টেশনে?” কুসানাগি জিজ্ঞেস করেছিল, কিন্তু ইউকাওয়া মাথা নেড়ে না করে দেয়।

“না, সম্ভবত এর আগের স্টেশনটাতে। মিজুতে।”

“ওখানে কেন?”

“কারণ তার সাথে আগেভাগে দেখা করতে চায়নি সে। ইশিগামি শিনোজাকি স্টেশন থেকে একটা সাইকেল চুরি করে সেটা নিয়ে লোকটার সাথে দেখা করতে মিজু স্টেশনে যায়। আমার ধারণা সে নিজের জন্যেও আরেকটা সাইকেলের ব্যবস্থা করে রেখেছিল। এরপরে দু-জন মিলে এডোগাওয়া নদীর তীরে জায়গাটায় গেলে ইশিগামি খুন করে লোকটাকে। তার আসলে লোকটার আঙুলগুলো না পোড়ালেও চলতো, কারণ ঐ বোর্ডিং হাউজের ঘর থেকে তো আঙুলের ছাপ পাবেই পুলিশ। কিন্তু চেহারা থেতলে দেয়ার পর আঙুলের ছাপ নষ্ট না করলে সন্দেহ জাগতে পারে পুলিশের মনে। তার আরেকটা ভয় ছিল, লাশটার পরিচয় খুঁজে পেতে হয়তো অনেক সময় লাগবে পুলিশের, এজন্যেই ইচ্ছে করে সাইকেলেও লোকটার আঙুলের ছাপ রেখে দেয় সে।”

“কিন্তু এর জন্যে একটা নতুন সাইকেল চুরি করার কি দরকার ছিল?”

“ইশিগামি কোন ঝুঁকি নিতে চায়নি।”

“কি রকম ঝুকি?”

“ইশিগামিকে এটা নিশ্চিত করতে চেয়েছে, পুলিশ যাতে খুনের সময়টা একদম সঠিকভাবে বের করতে পারে। ময়নাতদন্ত করে এখনকার যুগে একদম ঠিক সময়ই বলে দিতে পারে ফরেসিনক ডাক্তাররা। কিন্তু লাশটা পেতে পুলিশের যদি দেরি হয়ে যেত তাহলে হয়তো মৃত্যুর সময় নিয়ে কিছুটা বিভ্রান্তি সৃষ্টি হত। কোনক্রমে যদি পুলিশের মনে হয়, খুনটা ৯ তারিখে হয়েছে, তাহলে তার পুরো পরিকল্পনাটাই ভেস্তে যাবে। কারণ ঐদিন সন্ধ্যাবেলাতেই টোগাশিকে খুন করেছিল ইয়াসুকো হানাওকা। এরকম যাতে না হয় এজন্য তাকে প্রমাণ করতে হত, সাইকেলটা দশ তারিখে কিংবা এর পরে চুরি হয়েছে। আর সেজন্যেই একটা নতুন সাইকেল চুরি করে সে, যাতে মালিক পুলিশের কাছে অভিযোগ করে।”

“তাহলে তো সাইকেলটা তার অনেক কাজে দিয়েছে,” কুসানাগি নিজের কপালে একটা চাপড় মেরে বলে।

“আমি শুনেছি, সাইকেলটার দুটো চাকাই নাকি ফুটো করে দেয়া হয়েছিল। এটা সে করেছিল যাতে অন্য কেউ সাইকেলটা না নিতে পারে।“

“আচ্ছা, এত কিছুর পর ওরকম নড়বড়ে একটা অ্যালিবাই তৈরি করলো কেন সে? আমরা এখনো একশভাগ নিশ্চিত হতে পারিনি, ঐ রাতে সিনেমা দেখেছে ইয়াসুকো আর তার মেয়ে।”

“কিন্তু এটাও তো নিশ্চিত হতে পারোনি, তারা ওখানে যায়নি?” ইউকাওয়া যুক্তি দেখিয়েছিল। “একটা নড়বড়ে অ্যালিবাই, যেটাকে যাচাই করে দেখা প্রায় অসম্ভব। এখানেই তো তোমাদের জন্যে ফাঁদটা পাতা হয়েছিল। কিন্তু সে যদি একটা শক্তপোক্ত অ্যালিবাইয়ের ব্যবস্থা করতো তাহলে পুলিশের সন্দেহ অন্যদিকে ঘুরে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কারো মাথায় হয়তো এটা এসেই যেত, এখানে লাশ বদলে ফেলা হয়েছে। সেটা নিয়ে ভয়ে ছিল ইশিগামি, এজন্যেই সে সবকিছু এমনভাবে সাজায় যাতে ইয়াসুকোকে খুনি আর শিনজি টোগাশিকে ভিক্টিম মনে হয়। আর পুলিশও না বুঝেই সেই ফাঁদে পা দেয়।”

কুসানাগি গুঙিয়ে উঠেছিল। ইউকাওয়া যেমনটা বলছে ঠিক তেমনটাই ঘটেছিল। তারা যখন ধরে নেয়, লাশটা টোগাশির তখন থেকেই ইয়াসুকোকে সন্দেহ করা শুরু হয়। কেন? কারণ ইয়াসুকোর অ্যালিবাইটা আপাত দৃষ্টিতে ঠুনকো মনে হচ্ছিল। এটা নিয়েই পড়ে থাকে তারা। কারো মাথায় এটা ঘুনাক্ষরেও আসেনি লাশটা আসলে ইয়াসুকোর প্রাক্তন স্বামীর নয়।

“কি ভয়ঙ্কর লোক রে বাবা!” কুসানাগি বলেছিল। ইউকাওয়াও একমত প্রকাশ করে তখন বলে, “তোমার একটা কথা থেকেই কিন্তু ইশিগামির পরিকল্পনাটা আস্তে আস্তে বুঝতে শুরু করি আমি।”

“আমার কথা?”

“মনে আছে, তুমি কি বলেছিলে ইশিগামির অঙ্ক পরীক্ষা নেয়ার ধরণের ব্যাপারে? অতিরিক্ত কল্পনার সুযোগ নিয়ে পরীক্ষার্থিকে বিভ্রান্ত করে দিত সে? বীজগণিতের সমস্যা দেখে জ্যামিতির মত লাগত।”

“হ্যা। ওটার সাথে এসবের কি সম্পর্ক?”

“এখানেও একই কাজ করেছে সে। লাশটাকে বদলে পুরো কেসটার ধরণই বদলে দেয় সে।”

কুসানাগি বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিল।

“তুমি ইশিগামির যে কর্মতালিকাটা নিয়ে এসেছিলে অফিস থেকে সেখানে লেখা ছিল সে পরপর দু-দিন সকালে ক্লাস নিতে যায়নি, মনে আছে? দশ তারিখ আর এগারো তারিখ সকালে যায়নি সে। এখান থেকেই আমি বুঝতে পারি, ইশিগামি যে ঘটনাটা লুকাতে চাচ্ছে সেটা নয় তারিখ রাতে ঘটেছিল, দশ তারিখে না।”

আর সেই ঘটনাটা হচ্ছে ইয়াসুকো হানাওকার হাতে টোগাশির খুন। ইউকাওয়ার প্রতিটা কথা খাপে খাপে মিলে গেছিলো। এমনকি গত কয়েকদিনে তার অদ্ভুত আচরণের ব্যাখ্যাও পাওয়া যায়। কুসানাগি স্বীকার করতে বাধ্য হয় সে নিজেও ডিপার্টমেন্টের অন্য পুলিশ অফিসারদের মতই ইশিগামির বানানো গোলকধাঁধায় ঘুরপাক খাচ্ছিল এতদিন।

তবুও বড্ড অবাস্তব লাগছিল গোটা ব্যাপারটা। একটা খুন ঢাকতে আরেকটা খুন? কে চিন্তা করবে এটা। আর সেটাই ইশিগামির মূল লক্ষ্য ছিল, যাতে কেউ চিন্তা না করে এ ব্যাপারে।

“এই পরিকল্পনার আরেকটা অংশ আছে,” যেন কুসানাগির মনের কথা ধরতে পেরেই বলেছিল ইউকাওয়া। “যদি কোনভাবে সব কিছু ফাঁস হয়ে যায়, তাহলে ইয়াসুকোর জায়গায় নিজেই জেলে যাবে বলে ঠিক করে রেখেছিল ইশিগামি। এজন্যেই পরে সবকিছু এমনভাবে পুলিশকে শোনায় যাতে তাকে খুনি বলে মেনে নিতে বাধ্য হয় সবাই। আর একটা খুন কিন্তু আসলেও করেছে ইশিগামি। সেটার সাজা কাটানোর বিনিময়ে ভালোবাসার মানুষটাকে বাঁচাতে পারবে সে।”

“তাহলে সে কখন বুঝতে পারলো তোমার কাছে ধরা পড়ে গেছে?”

“ইঙ্গিতে তাকে কথাটা বলেছিলাম আমি। একটু আগে তোমাকে বললাম না ঘড়ির কাঁটার ব্যাপারটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ? কারণ তাকে আমি বলেছিলাম, ঘড়ির কোন কাঁটাই অদরকারি নয়। সেটা দিয়ে কি বোঝাতে চাচ্ছিলাম ধরতে পেরেছো?”

“ঐ নাম-পরিচয়হীন লোকটার কথা বুঝিয়েছিলে। কারণ পৃথিবীতে কোন মানুষই ফেলনা নয়।“

“ইশিগামি যেটা করেছে তা ক্ষমার অযোগ্য। তার শাস্তি পাওয়াই উচিত। এজন্যেই ঘড়ির কাঁটার কথাটা বলেছিলাম। কিন্তু তাতে যে সে ওভাবে আত্মসমর্পণ করবে এটা আমার মাথায় আসেনি। নিজেকে আধপাগল প্রেমিক হিসেবে প্রমাণ করা! কার মাথায় আসতো এটা?”

“তাহলে শিনজি টোগাশির লাশটা কোথায়?”

“সেটা জানা নেই আমার। ইশিগামি নিশ্চয়ই কোনভাবে গুম করে ফেলেছে ওটা। হতে পারে শহরের বাইরে কোন পুলিশ ডিপার্টমেন্ট খুঁজে পেয়েছে তার লাশ।”

“শহরের বাইরে? মানে, বলতে আওতার বাইরে?”

“হ্যা।”

চাচ্ছো আমাদের ডিপার্টমেন্টের

“এজন্যেই লাইব্রেরিতে আশেপাশের স্থানিয় পত্রিকার খোঁজ করছিলে তুমি? কোন অজ্ঞাত লাশের খবর ছাপিয়েছে নাকি এটা দেখছিলে?”

“কিন্তু ওরকম কোন খবরই খুঁজে পাইনি আমি, যার সাথে টোগাশির লাশের বর্ণনা মিলে যায়। তবে আশা করি সামনে কোন এক সময়ে পাওয়া যাবেই।”

“তাহলে আরো ভালোমত খুঁজে দেখতে হবে আমাকে,” কুসানাগি কথাটা বললে জোরে মাথা ঝাঁকিয়ে তাকে নিষেধ করে দেয় ইউকাওয়া।

“তুমি আমাকে কথা দিয়েছো এ ব্যাপারে কাউকে কিছু বলবে না। একজন বন্ধুর সাথে এতক্ষণ কথা বলছিলাম আমি, গোয়েন্দার সাথে নয়।“

ইউকাওয়ার চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছিল এ ব্যাপারে কোন তর্কে যাবে না সে।

“আমি এখন বলটা ইয়াসুকোর কোর্টে ফেলে দেখতে চাই সে কি করে,” বেন্টেন-টেইয়ের দিকে ইশারা করে বলেছিল ইউকাওয়া। “আমার মনে হয় না আসল সত্য সম্পর্কে কিছু জানে সে। ইশিগামি যে তার জন্যে কি করেছে এ সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণা নেই তার। আমি জানি ইশিগামি চায় না সে কিছু জানুক, কিন্তু চুপ করে থাকা সম্ভব নয় আমার পক্ষে।”

তোমার ধারণা, সব শোনার পর ইয়াসুকো নিজেও আত্মসমর্পণ করবে?”

“তা জানি না। কিন্তু আমার মনে হয় না তার আত্মসমর্পণ করা উচিত এত কিছুর পর। ইশিগামির কথা চিন্তা করে বলবো, ইয়াসুকো গ্রেফতার না হলেই ভালো হবে।

“কিন্তু ইয়াসুকো যদি আত্মসমর্পণ না করে তাহলে আবার নতুন করে তদন্ত শুরু করবো আমি। এরজন্যে যদি আমাদের বন্ধুত্ব নষ্টও হয়, কিছু করার থাকবে না আমার।”

“সেটা তোমার সিদ্ধান্ত।”

এ কারণেই এতক্ষন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ইয়াসুকোর সাথে ইউকাওয়ার কথোপকথন দেখেছে কুসানাগি। একটার পর একটা সিগারেট টেনে গেছে। ইয়াসুকো একদম ঠান্ডা হয়ে গেছে এখন, মাথা ঝুলে পড়েছে নিচের দিকে ইউকাওয়ার ঠোঁট নড়েই যাচ্ছে। এতদূর থেকেও ওখানকার ভারি পরিবেশটা অনুভব করতে পারছে সে।

অবশেষে ইউকাওয়া উঠে দাঁড়াল বেঞ্চটা ছেড়ে। ইয়াসুকোর উদ্দেশ্যে একবার বাউ করে কুসানাগির দিকে এগিয়ে আসল। মহিলা বেঞ্চেই বসে আছে, পাথর হয়ে গেছে যেন।

“অপেক্ষা করার জন্যে ধন্যবাদ,” ইউকাওয়া বলল। “সবকিছু বলে দিয়েছো তাকে?”

“হ্যা।”

“সে বলেছে এখন কি করবে?”

“না। বেশিরভাগ সময় আমিই কথা বলছিলাম। সে কি করবে এ ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করিনি। সেটা সম্পূর্ণ তার ওপর নির্ভর করছে এখন।“

“ সে নিজে আত্মসমর্পণ না করলে কিন্তু–“

“জানি,” হাটা শুরু করে বলল ইউকাওয়া। কুসানাগি তার পাশে পাশে হাটতে লাগল। “আবার বলতে হবে না তোমাকে সেটা। যাই হোক, একটা উপকার করতে পারবে আমার?”

“ইশিগামির সাথে দেখা করতে চাও?”

“তুমি কিভাবে বুঝলে?” ইউকাওয়া অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো। “কতদিন ধরে বন্ধু আমরা?”

“সে তো ভুলেই গেছি আমি,” মৃদু হেসে বলল ইউকাওয়া।

সকল অধ্যায়

১. দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – ১
২. দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – ২
৩. দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – ৩
৪. দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – ৪
৫. দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – ৫
৬. দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – ৬
৭. দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – ৭
৮. দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – ৮
৯. দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – ৯
১০. দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – ১০
১১. দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – ১১
১২. দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – ১২
১৩. দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – ১৩
১৪. দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – ১৪
১৫. দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – ১৫
১৬. দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – ১৬
১৭. দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – ১৭
১৮. দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – ১৮
১৯. দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – ১৯

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন