দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – ১৭

কেইগো হিগাশিনো

অধ্যায় ১৭

তেরো নম্বর ল্যাবের জানালার পাশে দাঁড়িয়ে উদাস চোখে বাইরে তাকিয়ে আছে ইউকাওয়া। তার সবসময়ের স্বতঃস্ফূর্ততা অনুপস্থিত এমুহূর্তে। গম্ভীর হয়ে কী যেন ভাবছে। পুরনো বন্ধুর অপরাধই হয়তো তার এ অবস্থার কারণ, কিন্তু কুসানাগির ধারণা অন্য কিছু চলছে পদার্থবিদের মাথায়।

“তো,” কিছুক্ষণ পরে নিচুস্বরে বলল ইউকাওয়া, “ইশিগামির এই স্বীকারোক্তি বিশ্বাস করো তুমি?”

“একজন গোয়েন্দার দৃষ্টিকোণ থেকে বলবো গল্পটা বিশ্বাস না করার কোন কারণই নেই,” কুসানাগি উত্তর দিলো। “তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ি তল্লাশি করে বিভিন্ন আলামতও সংগ্রহ করেছি আমরা। তার বাসার কাছের পার্কটাতে যে ফোনবুথ আছে সেখানেও খোঁজ নিয়ে দেখেছি আমি। ওটার পাশে একটা মুদি দোকান আছে, সেটার মালিক নাকি বেশ কয়েকবার ইশিগামির মত এক লোককে ফোন করতে দেখেছে ওখান থেকে।“

আস্তে করে তার দিকে ঘুরে তাকালো ইউকাওয়া। “একজন গোয়েন্দার দৃষ্টিকোণ থেকে এগুলো মেনে নিয়েছো তুমি। কিন্তু আমি জিজ্ঞেস করেছি তুমি নিজে গল্পটা বিশ্বাস করো কিনা? তোমার তদন্তে কি বেরিয়ে এসেছে সেটা জানতে চাচ্ছি না।”

“সত্যি কথা বলতে, কী যেন একটা মিলছে না। গল্পে কোন খুঁত নেই। যথেষ্ট প্রমাণও আছে। কিন্তু তার মত একজন লোক ওসব করবে এটা বিশ্বাস করতেও কষ্ট হচ্ছে আমার। অবশ্য চিফকে যখন বলেছি এ কথা, তিনি পাত্তাই দেননি।”

“তারা তো একজন আসামি পেয়েই খুশি। আর কিছু শুনবে কেন এখন?”

“যদি এমন হত, ঘটনাটায় কিছু একটা মিলছে না তাহলেও অতটা সন্দেহ জাগতো না আমার মনে। কিন্তু প্রত্যেকটা জিনিস খাপে খাপে মিলে গেছে। এই যেমন আঙুলের ছাপের কথাই ধরো না কেন, ইশিগামির ভাষ্যমতে সে জানেও না ভিক্টিম সেখানে সাইকেলে করে গেছে। কিন্তু তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ি এটা মেনে নিতে বাধ্য আমি। সব প্রমাণও ওরকমই নির্দেশ করছে।”

“মানে, তার কথা পুরোপুরি বিশ্বাস না করলেও বাধ্য হয়ে তোমাকে মেনে নিতে হচ্ছে, ইশিগামিই খুনি।”

“দেখো, আমি জানি ব্যাপারটা নিয়ে তুমিও খুশি নও, কিন্তু আমার ওপর ওটার রাগ ঝেড়ো না। বিজ্ঞানীদের উচিত যৌক্তিক সমাধানটা মেনে নেয়া, সেটা যতই উদ্ভট হোক না কেন। তুমিই তো এটা বলেছিলে আমাকে।”

হতাশ ভঙ্গিতে মাথা নাড়তে নাড়তে তার পাশে এসে বসে পড়লো ইউকাওয়া। “শেষবার কথা বলার সময় বিখ্যাত একটা গাণিতিক সমস্যার কথা শুনিয়েছিল আমাকে ইশিগামি। P=NP। সমস্যাটা কথায় বললে প্রশ্নটা এরকম দাঁড়ায় : একটা সমস্যার সমাধান নিজে বের করা কঠিন নাকি সেই সমস্যাটার অন্য কারো সমাধান ঠিক আছে কিনা সেটা যাচাই করা কঠিন?

“এটা কি গণিত নাকি ল্যাটিন ভাষা?” কুসানাগি ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো।

“আমার কথা শোন। পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করার মাধ্যমে ইশিগামি তোমাকে এমন একটা সমাধান দেখিয়ে দিয়েছে যেটাকে যেদিক দিয়েই দেখো না কেন, কোন ভুল বের করতে পারবে না। এখন তুমি যদি বিনা-বাঁধায় তার কথা মেনে নাও তাহলেই হেরে যাবে খেলাটায়। তোমাকে এখন সর্বোচ্চটা দিয়ে যাচাই করে দেখতে হবে সমাধানটা আসলেই ঠিক কিনা। এটা একটা চ্যালেঞ্জ। তোমার পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে।”

“কিন্তু আমি তো তোমাকে বললামই, সব প্রমাণ তার স্বীকারোক্তির সাথে মিলে যাচ্ছে।”

“তার দেখানো প্রমাণগুলো ধরে ধরেই সামনে এগোচ্ছো তুমি। অথচ তোমার এখন ভেবে দেখা উচিত, এই কেসের যুক্তিসংগত সম্ভাব্য অন্য কোন সমাধান আছে কিনা। আর যদি সেটা খুঁজে না পাও, একমাত্র তখনই বলতে পারবে তার দেখানো সমাধানটাই সঠিক।”

ইউকাওয়ার গলার স্বর শুনেই বোঝা যাচ্ছিল এই কেসটা মানসিকভাবে ভীষণ আঘাত করেছে তাকে। অন্য কোনদিন এতটা গম্ভীর স্বরে তাকে কথা বলতে দেখেনি কুসানাগি।

“তো, তোমার ধারণা ইশিগামি মিথ্যা কথা বলছে? খুনটা সে করেনি?” কপাল কুঁচকে তার দিকে তাকিয়ে থাকলো ইউকাওয়া।

“কিসের ভিত্তিতে কথাটা বলছো তুমি?” কুসানাগি জিজ্ঞেস করতেই থাকলো। “যদি তোমার মাথায় অন্য কোন সমাধান থেকে থাকে, নির্দ্বিধায় আমাকে বলতে পারো সেটা। নাকি তোমার বন্ধু একজন খুনি এটা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে?”

ইউকাওয়া উঠে জানালার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।

“ইউকাওয়া?”

“হ্যা, এটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে আমার। তোমাকে আগেও বলেছি, সবকিছু যুক্তি দিয়ে ভাবে সে, আবেগ দিয়ে নয়। তার কাছে যদি কোন সমাধান যুক্তিসংগত বলে মনে হয়, তবে সেটা যেভাবেই হোক করেই ছাড়বে। তবুও আমি এটা মানতে পারছি না, খুনের মত একটা কাজ করা সম্ভব তার পক্ষে। বিশেষ করে এমন কাউকে, যার সাথে বলতে গেলে কোন ব্যক্তিগত সম্পর্কই নেই তার।”

“এটার ভিত্তিতেই তার স্বীকারোক্তিটা বিশ্বাস করছো না তুমি?”

ঘুরে ডিটেক্টিভের দিকে তাকালো ইউকাওয়া। কিন্তু সে দৃষ্টিতে রাগ নয়, বেদনা।

“আমি জানি জীবনে মাঝে মাঝে এমন সব সত্যের সম্মুখিন হতে হয় যেগুলো মেনে নেয়া কঠিন।”

“তবুও তুমি বলবে ইশিগামি নির্দোষ?”

“সেটা বলছি না আমি,” মাথা নেড়ে বলল ইউকাওয়া।

“আমি জানি তুমি কি ভাবছো। তোমার ধারণা ইয়াসুকো হানাওকা খুনটা করেছে আর ইশিগামি তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু প্রমাণগুলোর কথা যতবারই চিন্তা করছি, ততবারই সেটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে আমার। সব আলামত ইশিগামিকে একজন অন্ধ প্রেমিক হিসেবে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে আমাদের সামনে। আর কতজন অন্যের খুনের দায় নিজের ঘাড়ে এভাবে চাপিয়ে নেবে বলো দেখি? ইয়াসুকো ইশিগামির প্রেমিকাও নয়, স্ত্রীও নয়। অথচ ইশিগামি বলছে তাকে বাঁচাতেই নাকি খুনটা করেছে সে। শেষে যখন তার মনে হলো বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে তার সাথে, তখন একেবারে ভেঙে পড়লো, আত্মসমর্পণ করলো।”

হঠাৎ করেই ইউকাওয়ার চোখগুলো বড় বড় হয়ে গেলো, যেন কিছু একটা ধরতে পেরেছে সে। “হ্যা,” বিড়বিড় করে বলল। “পরিস্থিতি খারাপের দিকে এগোলে হাল ছেড়ে দেয় মানুষ। কিন্তু ইয়াসুকোকে বাঁচাতে গিয়ে তাকে যে পরিণতি মেনে নিতে হচ্ছে, এতটা কষ্ট স্বীকার কারো পক্ষে অসম্ভব…” নিজেকেই কথাগুলো শোনাচ্ছে যেন সে। “যদি না -”

“যদি না?”

“না,” মাথা ঝাঁকিয়ে বলল ইউকাওয়া। “কিছু না।”

“আসলে আমরা মেনে নিতে বাধ্য হয়েছি ইশিগামিই কাজটা করেছে। এখন যদি অন্য কোন তথ্য প্রমাণ হাতে না আসে আমাদের, তাহলে তদন্তের কাজ খুব তাড়াতাড়িই শেষ হয়ে যাবে।”

“সে নিজেই এটা বেছে নিয়েছে,” অনেকক্ষণ পরে বলল ইউকাওয়া। ‘সে নিজেই বেছে নিয়েছে জীবনের বাকি সময়টা জেলে কাটাবে।”

“এটা আসলে তার হাতে নেই এখন। একজনকে খুন করেছে সে।”

“আসলেই,” ফিসফিস করে বলল। চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলো কিছুক্ষণ। এরপর সেখান থেকে না নড়ে বলল, “আমাকে এখন একটু একা থাকতে দাও, দয়া করে। খুব ক্লান্ত লাগছে আমার।”

ইউকাওয়া মাথায় নিশ্চয়ই কিছু ঘুরছে। কুসানাগি একবার ভাবলো জিজ্ঞেস করবে, কিন্তু পরমুহূর্তেই বাতিল করে দিলো সে চিন্তা। চুপচাপ চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। তার বন্ধুকে আসলেও ভয়ঙ্কর ক্লান্ত লাগছে এখন।

তেরো নম্বর ল্যাব থেকে বের হয়ে মৃদু আলোকিত হলওয়ে ধরে হাটতে শুরু করলো কুসানাগি। করিডোরের একদম শেষ মাথায় এক শিক্ষার্থির সাথে দেখা হয়ে গেলো তার। মুরাকামি নামের এই ছেলেটাকে আগেও দেখেছে। সে-ই তাকে গতবার ইউকাওয়ার খোঁজ দিয়েছিল।

একবার বাউ করে তাকে পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিল ছেলেটা, এমন সময় তাকে ডাকলো কুসানাগি। বিভ্রান্ত হয়ে ঘুরে দাঁড়াল সে।

“তোমার সাথে একটু কথা আছে। এখন সময় দিতে পারবে?”

মুরাকামি হাতঘড়ি দেখে জানাল হাতে অল্প কিছুক্ষণ সময় আছে তার। বিল্ডিং থেকে বের হয়ে ক্যাফেটেরিয়াতে গিয়ে বসলো তারা। বিজ্ঞানের ছাত্ররা অবসর সময়টা এখানেই কাটায়। আসার পথে ভেন্ডিং মেশিন থেকে দু-জনের জন্যে কফি কিনে নিয়েছে কুসানাগি।

“তোমাদের ল্যাবের ইনস্ট্যান্ট কফির চেয়ে এটা অনেক ভালো, কফির কাপে চুমুক দিয়ে বলল ডিটেক্টিভ। জবাবে মুরাকামি হাসলো, কিন্তু মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে এখনও বিভ্রান্তি দূর হয়নি তার।

কিছুতেই সুবিধা হচ্ছে না দেখছি, মনে মনে বলল কুসানাগি। আরো কিছুক্ষণ এটাসেটা বলে কাজের কথায় আসল অবশেষে। “প্রফেসর ইউকাওয়া সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন করতে চাচ্ছিলাম তোমাকে। ইদানিং অদ্ভুত কিছু লক্ষ্য করেছো তার মধ্যে?”

মুরাকামির চেহারা দেখেই বোঝা গেলো প্রশ্নটা শুনে অবাক হয়ে গেছে। মনে মনে নিজেকেই গাল দিলো কুসানাগি এভাবে সরাসরি প্রশ্নটা করার জন্যে। কিন্তু যা হবার তা হয়ে গেছে। “মানে, ইউনিভার্সিটির কাজ বাদেও অন্য কোন কাজে ব্যস্ত থাকছে নাকি সে? অথবা কোথাও যায় আজকাল?”

গাল চুলকাতে লাগল মুরাকামি। চেহারা দেখে মনে হচ্ছে আসলেও ভালোমত ভেবে দেখছে ব্যাপারটা।

তার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিলো কুসানাগি, “চিন্তা করো না, কোন তদন্তের সাথে জড়িত নয় সে। ব্যাপারটা আসলে ব্যাখ্যা করা কঠিন, কিন্তু কেন যেন মনে হচ্ছে আমার কাছ থেকে কিছু একটা লুকাচ্ছে ইউকাওয়া। আমি জিজ্ঞেস করেছি তাকে, কিন্তু তুমি তো তাকে চেনোই।“

একথা শুনে একটু নরম হলো ছেলেটার চেহারা। “আসলে,” বলতে শুরু করলো সে, “আমি ঠিক জানি না উনি এ মুহূর্তে কি নিয়ে গবেষণা করছেন, কিন্তু কিছুদিন আগে লাইব্রেরিতে ফোন করে কথা বলছিলেন প্রফেসর ইউকাওয়া।”

“লাইব্রেরি? মানে, ইউনিভার্সিটির লাইব্রেরি?”

মাথা নেড়ে সায় জানাল মুরাকামি। “আমার মনে হয় খবরের কাগজ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছিলেন তিনি।”

“খবরের কাগজ? সব লাইব্রেরিতেই তো খবরের কাগজ থাকে, তাই না?”

“তা থাকে। কিন্তু তিনি জানতে চাচ্ছিলেন তাদের কাছে পুরনো খবরের কাগজ আছে কিনা।“

“তাই নাকি?”

“হ্যা। তবে বেশিদিনের পুরনো নয়। আমি শুনেছিলাম তিনি এ মাসের খবরের কাগজের কথা বলছিলেন।“

“এ মাসের? পেয়েছিল সে ওগুলো?”

“আমার মনে হয়ে পেয়েছিলেন, কারণ এরপরই লাইব্রেরিতে চলে যান তিনি।”

মুরাকামিকে ধন্যবাদ জানিয়ে উঠে দাঁড়াল কুসানাগি, কফির কাপটা এখনও অর্ধেক ভর্তি।

X

ইম্পেরিয়াল ইউনিভার্সিটির লাইব্রেরি একটি তিনতলার ভবন। ছাত্র থাকাকালীন এখানে বড়জোর দুয়েকবার আসার দরকার হয়েছিল কুসানাগির। তখন অবশ্য এত বড় ছিল না এটা।

ভেতরে ঢুকে দেখলো রিসিপশনে একজন মহিলা বসে আছে। প্রফেসর ইউকাওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে সন্দেহের দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থাকলো মহিলা।

বাধ্য হয়ে পকেট থেকে ব্যাজ করে দেখালো কুসানাগি। “চিন্তা করবেন না, প্রফেসর ইউকাওয়ার সাথে এর কোন লেনদেন নেই। আমি শুধু জানতে চাচ্ছি তিনি কোন খবরের কাগজটা দেখতে চেয়েছিলেন,” সে জানে প্রশ্নটা অদ্ভুত শোনাচ্ছে, কিন্তু অন্য কোন উপায়ের কথা মাথায় আসল না তার।

“তিনি মার্চ মাসের আর্টিকেলগুলো দেখতে চাচ্ছিলেন,” সাবধানে জবাব দিলো মহিলা।

“কোন ধরণের আর্টিকেল, সেটা জানেন কি? “

“না, বলতে পারবো না,” কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলল সে। “শুধু এটুকু মনে আছে স্থানিয় খবরের অংশগুলো দেখতে চাচ্ছিলেন।”

তাকে একটা লম্বা শেলফের কাছে নিয়ে গেলো মহিলা। প্রতি দশ দিনের কাগজের জন্যে একটা তাক। খবরের কাগজগুলো একটার ওপর আরেকটা সাজিয়ে রাখা হয়েছে।

“শুধু গত মাসের খবরের কাগজগুলোই এখানে আছে,” কুসানাগিকে উদ্দেশ্য করে বলল সে। “এর থেকে পুরনোগুলো বিক্রি করে দেয়া হয়। কারণ ইন্টারনেটেই খবরের কাগজের আর্কাইভ থাকে এখন।”

“কিন্তু ইউকাওয়া, মানে প্রফেসর ইউকাওয়া তো কেবল মার্চের পত্রিকাগুলোই দেখতে চাচ্ছিলেন, তাই না?”

“হ্যা, আসলে মার্চের দশ তারিখের পরেরগুলো।”

“দশ তারিখ?”

“হ্যা, অমনটাই বলছিলেন তিনি।”

“আমি একটু এগুলো নাড়াচাড়া করে দেখলে সমস্যা হবে?”

“না, দেখুন যত ইচ্ছা। কাজ শেষ হলে আমাকে বলবেন।”

লাইব্রেরিয়ান চলে যেতেই খবরের কাগজগুলো নিয়ে একটা টেবিলে গিয়ে বসলো কুসানাগি। মার্চের দশ তারিখের পর থেকে স্থানিয় খবরের অংশগুলো ওল্টাতে লাগলো মনোযোগ দিয়ে।

মার্চের দশ তারিখেই খুন হয়েছিল শিনজি টোগাশি। এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে, তদন্তের কাজেই এখানে এসেছিল ইউকাওয়া। কিন্তু কি খবর দেখতে চেয়েছিল সে?

টোগাশি সম্পর্কিত খবরগুলো খোঁজার চেষ্টা করলো কুসানাগি। প্রথম খবরটা খুঁজে পেলো মার্চের এগারো তারিখের সান্ধ্যকালীন একটি পত্রিকায়। এরপরের খবরটা তেরো তারিখের, লাশের পরিচয় যখন মিডিয়ার কাছে প্রকাশ করে পুলিশ। তারপরে আর কোন উল্লেখ নেই এই কেসটার ব্যাপারে। অবশেষে গতকালের পত্রিকায় ইশিগামির আত্মসমর্পণের ব্যাপারে একটা রিপোর্ট খুঁজে পেলো সে।

কি এমন আছে এই খবরগুলোতে?

বারবার সেগুলো পড়তে লাগলো কুসানাগি। কিন্তু অজানা কিছুই চোখে পড়লো না তার। এখানে যে খবর ছাপা হয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি কিছু ইউকাওয়া নিজেই জানতো। তাহলে কষ্ট করে এগুলো পড়লো কেন সে?

হাত ভাঁজ করে চিন্তা করতে লাগল কুসানাগি।

ইউকাওয়ার মত একজন লোক তদন্তের জন্যে কখনই খবরের কাগজের ওপর নির্ভর করবে না। জাপানে প্রতিদিন অনেক লোক খুন হচ্ছে, পত্রিকাগুলো যে কেবল একটা খুনের কেস নিয়ে পড়ে থাকবে তা-ও নয়। আর টোগাশির কেসটা এমন কোন গুরুত্বপূর্ণ কিছু না। এসব কিছুই ইউকাওয়ার জানার কথা।

কিন্তু কোন বিশেষ কারণ ছাড়া লাইব্রেরিতে আসেনি সে নিশ্চয়ই।

ইউকাওয়াকে সে যা-ই বলে আসুক না কেন, আসলে সে নিজে ইশিগামির গল্পটা মেনে নিতে পারছে না। তার এখনও মনে হচ্ছে ভুল করছে গোটা পুলিশ ডিপার্টমেন্ট। ইউকাওয়া জানে, তারা কি ভুল করছে। এর আগেও অনেকবার বিভিন্ন কেসে তাদের ভুল ধরিয়ে দিয়েছে সে, এবারও হয়তো সেরকম কিছু খুঁজে পেয়েছে। কিন্তু বলছে না কেন কিছু?

কুসানাগি খবরের কাগজগুলো জায়গামত রেখে দিয়ে লাইব্রেরিয়ানকে জানাল তার কাজ শেষ।

“আশা করি কাজে এসেছে ওগুলো?” অনিশ্চিত ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করলো মহিলা।

“হ্যা, অনেক কাজে এসেছে,” কথা না বাড়িয়ে বলল কুসানাগি।

“উনি কিন্তু আশেপাশের স্থানিয় পত্রিকাগুলোর ব্যাপারেও খোঁজ করেছিলেন,” কুসানাগি রেজিস্ট্রারে সাইন করার সময় বলল লাইব্রেরিয়ান।

“কি?” কুসানাগি তার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “কোথাকার স্থানিয় পত্রিকা?”

“শিবা আর সাটিমার পত্রিকাগুলোও চেয়েছিলেন তিনি, কিন্তু আমরা ওগুলো রাখি না।”

এছাড়া আর কিছু বলেছিলেন?”

“না।”

শিবা আর সাটিমা?

বিভ্রান্ত অবস্থায় লাইব্রেরি থেকে বের হয়ে আসল কুসানাগি। এবার ইউকাওয়া কি ভাবছে সে সম্পর্কে আসলেও কোন ধারণা নেই তার। স্থানিয় পত্রিকাগুলো কেন সে দেখতে চাচ্ছিল? হয়তো খুনের কেসের সাথে এর কোন সম্পর্কই নেই।

এসব ভাবতে ভাবতে পার্কিংলটে পৌছে গেলো সে। ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ির চাবিটা ঘোরাতে যাবে এমন সময়ে হাটতে হাটতে সেখানে এসে হাজির হলো ইউকাওয়া। ল্যাব কোট বদলে একটা নীল রঙের জ্যাকেট পরে নিয়েছে। গম্ভীর মুখে কী যেন ভাবতে ভাবতে ইউনিভার্সিটির সামনের গেটের দিকে হাটতে শুরু করলো সে।

ইউকাওয়া গেট দিয়ে বের হয়ে বামদিকে ঘুরলে গাড়ির ইঞ্জিন চালু করে নিজেও সেখান থেকে বেরিয়ে আসল কুসানাগি। বের হয়ে দেখলো কেবলই একটা ট্যাক্সি ক্যাবে চড়ে বসছে ইউকাওয়া। সেটার পিছু নিলো সে।

দিনের বেশিরভাগ সময় সাধারণত ইউনিভার্সিটিতেই কাটায় ইউকাওয়া। কুসানাগিকে সে বলেছে ব্যাচেলর হওয়ায় বাসায় বেশি কাজ থাকে না তার। আর ভার্সিটিতে থাকলে মাঝে মাঝে টেনিসও খেলা যায়। খাবার নিয়েও কোন সমস্যায় পড়তে হয় না।

ঘড়ির দিকে তাকালো। পাঁচটাও বাজেনি এখন। এত তাড়াতাড়ি বাসায় যাওয়ার কথা না ইউকাওয়ার।

সাবধানে ক্যাবটার পেছন পেছন যেতে লাগল সে। ক্যাব কোম্পানির নাম আর লাইসেন্স নম্বরটাও মুখস্ত করে নিলো। হঠাৎ যদি হারিয়ে ফেলে তাহলে কোম্পানিতে ফোন করে জিজ্ঞেস করবে প্যাসেঞ্জারকে কোথায় নামিয়ে দিয়েছিল ড্রাইভার।

একটা ব্যস্ত রাস্তা ধরে এগোচ্ছে ট্যাক্সিটা এখন। কুসানাগির গাড়ি আর সেটার মাঝে বেশ কয়েকটা গাড়ি ঢুকে গেলো। কিন্তু ট্যাক্সিটাকে দৃষ্টির আড়াল হতে দিলো না সে।

অনেকক্ষণ অনুসরণ করার পর অবশেষে নিহনবাশি এলাকায় ঢুকে সুমাইদা নদী পার হবার ঠিক আগে থেমে গেলো ট্যাক্সিটা। শিনোহাশি ব্রিজের পাশেই জায়গাটা। ইশিগামির অ্যাপার্টমেন্টটা ব্রিজের ওপাশে।

কুসানাগি রাস্তার পাশে গাড়ি থামিয়ে ট্যাক্সিটার ওপর নজর রাখতে লাগল। এই সময় ইউকাওয়া বের হলো ক্যাব থেকে। একবার চারপাশে নজর বুলিয়ে ব্রিজের নিচে যাওয়ার সিঁড়িটার দিকে এগিয়ে গেলো সে।

অ্যাপার্টমেন্টে যাচ্ছে না তাহলে।

কুসানাগি আশেপাশে একবার দেখে তাড়াতাড়ি গাড়িটা পার্ক করে বের হয়ে আসল।

ইউকাওয়া এ মুহূর্তে আস্তে আস্তে সুমাইদা নদীর পার ধরে হাটছে। দেখে মনে হচ্ছে না বিশেষ কোন উদ্দেশ্য নিয়ে এদিকে এসেছে সে। মাঝে মাঝে থেমে বাস্তুহারাদের বসতিটার দিকে তাকাচ্ছে।

হাটতে হাটতে একসময় বাস্তুহারাদের পেরিয়ে অনেক সামনে চলে গেলো সে। সামনেই লম্বা রেলিং আলাদা করে রেখেছে সুমাইদা নদীকে। রেলিংটার ওপর কঁনুই দিয়ে ভর করে ঝুঁকে দাঁড়াল সে। এভাবে কিছুক্ষণ থাকার পর একদম হঠাৎ করে কুসানাগির দিকে ঘুরে গেলো ইউকাওয়া।

কুসানাগি ইতস্ততবোধ করতে লাগল, কিন্তু ইউকাওয়াকে দেখে মনে হচ্ছে না খুব একটা অবাক হয়েছে। বরং তার মুখে হাসির একটা রেখা দেখা গেলো।

তার দিকে এগিয়ে গেলো ডিটেক্টিভ। “আমাকে আগেই খেয়াল করেছিলে?”

“তোমার গাড়িটা খুব সহজেই চোখে পড়ে যায়,” ইউকাওয়া আস্তে করে বলল। “এত পুরনো স্কাইলাইন খুব কম মানুষই চালায় আজকাল।”

“আমি অনুসরণ করছিলাম দেখেই কি ওখানে নেমে গিয়েছিলে? নাকি এখানে আসার ইচ্ছে ছিল তোমার আগে থেকেই?”

“দুটোই, আবার কোনটাই না। আমার আসল গন্তব্য এখান থেকে একটু সামনে। কিন্তু যখন দেখলাম তুমি আমার পিছু নিয়েছো তখন ড্রাইভারকে বলে ওখানেই নেমে গেলাম, কারণ তোমাকে এখানটা দেখাতে চাই আমি।”

“মানলাম। কিন্তু এখানে কি দেখাতে চেয়েছিলে?” আশেপাশে দ্রুত একবার নজর বুলিয়ে জিজ্ঞেস করলো কুসানাগি।

“এখানে দাঁড়িয়েই শেষবার কথা বলেছিলাম আমি আর ইশিগামি। বলেছিলাম, পৃথিবীতে কোন মানুষই ফেলনা নয়। একটা ঘড়ির জন্যে যেমন সবগুলো কাঁটা প্রয়োজন তেমনি এই পৃথিবীতেও সব মানুষেরই সমান গুরুত্ব আছে।”

“বুঝলাম না? ঘড়ির কাঁটা?”

“হ্যা। এরপরে কেসটা নিয়ে কয়েকটা প্রশ্ন করার চেষ্টা করি আমি তাকে, প্রতিবারই সেগুলো এড়িয়ে যায় সে। কিন্তু আমাদের সাক্ষাতের একদম শেষ পর্যায়ে একটা সিদ্ধান্ত নেয়। আত্মসমর্পণ করার সিদ্ধান্ত।”

“মানে, বলতে চাচ্ছো তোমার প্রশ্নগুলো শোনার পরেই ভাগ্যের হাতে সব ছেড়ে দিয়ে আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নেয় সে?”

“ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দেয়া’-হ্যা, তা বলতে পারো। কিন্তু তার জন্যে ওটা ছিল দাবার শেষ চাল। যেটার জন্যে দীর্ঘ সময় ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছিল সে।

“তা, কী এমন বলেছিলে তুমি?”

“বললামই তো, ঘড়ির কাঁটার ব্যাপারটা।”

“না, এরপরে। বললে না, কেসের ব্যাপারে কিছু প্রশ্ন করেছিলে? গুলো জানতে চাচ্ছি।”

“কিন্তু সেগুলো তো গুরুত্বপূর্ণ নয়,” হেসে উত্তর দিলো ইউকাওয়া। “ গুরুত্বপূর্ণ না?”

“ঘড়ির কাঁটার ব্যাপারটাই গুরুত্বপূর্ণ এখানে। ওটা শোনার পরেই আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নেয় সে।”

“ইউনিভার্সিটি লাইব্রেরিতে খবরের কাগজ দেখেছিলে তুমি, তাই না? কি খোঁজার চেষ্টা করছিলে?” প্রসঙ্গ পাল্টে জিজ্ঞেস করলো সে।

“মুরাকামি বলেছে তোমাকে সেটা? আমি কি করি না করি সেটার প্রতি তোমার এত আগ্রহ কেন?

“দেখো, ওভাবে কথা বলবে না। তুমিই কিছু জানাচ্ছিলে না আমাকে।”

“ঠিক আছে, কিছু মনে করিনি আমি। হাজার হলেও এটাই তোমার কাজ। যত খুশি তদন্ত করতে পারো আমার ওপর।”

কিছুক্ষণ ইউকাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকলো কুসানাগি। এরপর অন্যদিকে তাকিয়ে বলল, “দয়া করে এরকম ধাঁধার মাধ্যমে কথা বলা বন্ধ করো ইউকাওয়া। আর ভালো লাগছে না এসব। আমি জানি কিছু একটা ধরতে পেরেছো তুমি। কি সেটা? ইশিগামি আসলে লোকটাকে খুন করেনি, তাই না? তাহলে সে বলল কেন, করেছে? তুমি কি চাও তোমার বন্ধু এমনি এমনি খুনের দায়ে শাস্তি পাক?”

“এদিকে তাকাও।”

কুসানাগি চোখ ফেরাল তার দিকে। আবারো আগের অবস্থায় ফিরে গেছে ইউকাওয়া। রাজ্যের কষ্ট এসে ভর করেছে তার চেহারায়। হাত দিয়ে চোখগুলো চেপে ধরে আছে সে এমুহূর্তে।

“অবশ্যই আমি চাই না তার কোন শাস্তি হোক। কিন্তু তাকে বাঁচানোর কোন পথ খোলা দেখছি না আমি।”

“কি নিয়ে এতটা ভেঙে পড়েছো তুমি? আমাকে বললে কি হয়? আমি তো তোমার বন্ধু।”

“হ্যা, বন্ধু। কিন্তু সেই সাথে একজন গোয়েন্দাও।”

কুসানাগি বুঝে উঠতে পারলো না কী বলবে। এই প্রথম তাদের দু- জনের মাঝে অদৃশ্য একটা দেয়াল অনুভব করলো। সে দেখতে পাচ্ছে তার বন্ধু কষ্ট পাচ্ছে, কিন্তু কারণটাও জিজ্ঞেস করতে পারছে না।

“ইয়াসুকো হানাওকার ওখানে যাচ্ছি আমি,” ইউকাওয়া বলল। “আমার সাথে যেতে চাও?”

“যেতে দেবে?”

“আসতে চাইলে আসো। কিন্তু মুখ বন্ধ করে রাখলেই খুশি হবো আমি।”

“ঠিক আছে।”

ইউকাওয়া ঘুরে ব্রিজের দিকে হাটা দিলো। কুসানাগি অনুসরণ করলো তাকে। তার মানে, বেন্টেন-টেইয়ে যাবার উদ্দেশ্যেই বের হয়েছিল সে। আবারো হাজারটা প্রশ্ন এসে ভিড় করলো কুসানাগির মনে। কিন্তু কিছুই বলল না সে, নীরবে হাটতে লাগল তারা।

কিয়োসু ব্রিজের কাছে গিয়ে আগে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলো ইউকাওয়া। তাকে অনুসরণ করে কুসানাগি উপরে উঠে দেখলো সেখানে তার জন্যে অপেক্ষা করছে সে।

“ঐ অফিস বিল্ডিঙটা দেখছো?” কাঁচ দিয়ে মোড়ানো একটা বিল্ডিঙের দিকে ইশারা করে বলল ইউকাওয়া।

সেদিকে তাকিয়ে বিল্ডিঙে তাদের দু-জনের প্রতিবিম্ব দেখতে পেলো কুসানাগি। “হ্যা, কি হয়েছে?”

“প্রথম দিকে ইশিগামির সাথে যখন দেখা করেছিলাম, সেদিন এভাবেই আমাদের প্রতিবিম্ব দেখেছিলাম ওখানটায়। আসলে আমি খেয়াল করিনি প্রথমে। ইশিগামিই কথা বলেছিল ওদিকে তাকিয়ে। তখনও কেসটার সাথে তার সম্পৃক্ততার ব্যাপারে সন্দেহ করিনি আমি। বরং পুরনো এক বন্ধুর সাথে দেখা করতে পেরে খুব খুশি হয়েছিলাম।”

“তো, ওখানে নিজেদের প্রতিবিম্ব দেখার পর থেকেই তাকে সন্দেহ করা শুরু করলে?”

“না। একটা কথা বলেছিল সে তখন- ‘এখনও এরকম শরীর ধরে রেখেছো কিভাবে, ইউকাওয়া? মাথাভর্তি চুল তোমার। আমাদের মধ্যে কত পার্থক্য!’-এরপরে একবার মাথায় হাত বোলায় সে। ভীষণ অবাক হই আমি। চেহারা নিয়ে চিন্তা করার মত লোক নয় ইশিগামি। তার বিশ্বাস ছিল, চেহারা দিয়ে কখনও কাউকে মূল্যায়ন করা যায় না। কারণ সে- ব্যাপারে মানুষের নিজের কোন হাত নেই। তখনই বুঝতে পারি এমন এক পরিস্থিতিতে আছে সে, যেখানে চেহারাটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মানে, প্ৰেমে পড়েছে। তবুও ঠিক এই জায়গাটাতে এসে সেই কথাটা মনে হয়েছিল কেন তার?”

এতক্ষণে বুঝতে পারলো কুসানাগি। “কারণ তার স্বপ্নের রাজকুমারির সাথে দেখা করতে যাচ্ছিল সে।”

ইউকাওয়া মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল। “ঠিক এটাই ভেবেছিলাম আমি। তখনই আমার মনে হয় কেসটার সাথে হয়তো সম্পর্ক আছে তার। কিন্তু সেটা কি, বুঝতে পারছিলাম না। আদতে তার প্রতিবেশির প্রাক্তন স্বামী খুন হয়েছিল। আর সেই প্রতিবেশিকে ভালোবাসে ইশিগামি। নিশ্চয়ই কিছু একটা করবে সে ইয়াসুকোকে বাঁচানোর জন্যে। কিন্তু তখন এমন ভান করছিল যাতে মনে হয় এসব ব্যাপারে কোন আগ্রহই নেই তার। তাই আবার তার সাথে দেখা করার সিদ্ধান্ত নেই আমি। এবার বেন্টেন-টেইয়ে যাবো বলে ঠিক করেছিলাম। কারণ সেখানে গিয়ে তার প্রতিক্রিয়া দেখে অনেক কিছু বোঝা যেত। কিন্তু বেন্টেন-টেইয়ে যাওয়ার পরে সেখানে ‘মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি’র মত আবির্ভাব ঘটে আরেকজনের। ইয়াসুকোর সাথে আগে থেকেই পরিচয় ছিল লোকটার।”

“কুডো,” কুসানাগি বলল। “ইয়াসুকোর আরেক প্রেমিক।”

“সেরকমটাই ভেবেছিলাম। আর তাকে দেখার পরে ইশিগামির যা চেহারা হয়েছিল সেটা যখন খেয়াল করলাম-” চোখ সরু করে মাথা নাড়তে লাগল ইউকাওয়া, “তখনই একদম নিশ্চিত হয়ে যাই আমি। ইশিগামিকে দেখে মনে হচ্ছিল হিংসায় মরেই যাবে।“

“আর তখন থেকেই একদম পাকাপোক্তভাবে সন্দেহ করতে শুরু করলে তাকে। মাঝে মাঝে আমাকে ভয়ই পাইয়ে দাও তুমি,” কুসানাগি কাঁচের বিল্ডিংটার দিকে তাকিয়ে বলল। “আমি হলে কখনই এই সামান্য ব্যাপার থেকে কিছুই বুঝতে পারতাম না।”

“ইশিগামি শুরু থেকেই একদম অন্যরকম। তাই এত দিন পরেও আমার মাথায় তার স্মৃতিগুলো একদম পরিস্কার ছিল। যদি সেরকম না হত তাহলে আমিও বুঝতে পারতাম না কিছু।”

“তার দুর্ভাগ্য,” এই বলে সামনের রাস্তাটা ধরে হাটতে শুরু করলো কুসানাগি। কিন্তু একটু পরেই খেয়াল করলো ইউকাওয়া আসছে না তার পেছন পেছন। “আমি ভেবেছিলাম বেন্টেন-টেইয়ে যাচ্ছো তুমি?”

নিচের দিকে তাকিয়ে তার পাশে এসে দাঁড়াল ইউকাওয়া। “তোমাকে একটা অনুরোধ করবো আমি আজকে। হয়তো সেটা ভালো লাগবে না তোমার।”

“সেটা নির্ভর করছে কি বলবে তার ওপরে,” কুসানাগি হেসে বলল। “কয়েক মুহূর্তের জন্যে এটা ভুলে যেতে পারবে তুমি একজন গোয়েন্দা?”

“কি বলতে চাইছো বুঝতে পারছি না।”

“তোমাকে একটা কথা বলবো আমি। কিন্তু একজন বন্ধুকে বলতে চাই সেটা, কোন গোয়েন্দাকে নয়। আর সেটা কাউকে জানাতে পারবে না তুমি। তোমার বস্, তোমার বন্ধু-বান্ধব এমনকি তোমার পরিবারকেও না। সে কথা দিতে পারবে আমাকে?”

ইউকাওয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে কুসানাগি বুঝতে পারলো প্রচন্ড সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে সে এখন। এমন কিছু একটা আছে তার মনে যেটা সে বলতে পারছে না আবার না বলেও স্বস্তি পাচ্ছে না।

কুসানাগি বলতে চেয়েছিল-কি বলবে সেটার ওপর নির্ভর করবে সবকিছু। কিন্তু সেটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলল, কারণ এ মুহূর্তে এমন কিছু বলার অর্থ ইউকাওয়ার সাথে চিরদিনের জন্য বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যাওয়া।

“ঠিক আছে। কথা দিলাম।”

সকল অধ্যায়

১. দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – ১
২. দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – ২
৩. দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – ৩
৪. দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – ৪
৫. দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – ৫
৬. দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – ৬
৭. দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – ৭
৮. দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – ৮
৯. দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – ৯
১০. দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – ১০
১১. দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – ১১
১২. দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – ১২
১৩. দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – ১৩
১৪. দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – ১৪
১৫. দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – ১৫
১৬. দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – ১৬
১৭. দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – ১৭
১৮. দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – ১৮
১৯. দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – ১৯

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন