যৌবন রে, তুই কি রবি সুখের খাঁচাতে

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

যৌবন রে, তুই কি রবি সুখের খাঁচাতে।
তুই যে পারিস কাঁটাগাছের উচ্চ ডালের ‘পরে
পুচ্ছ নাচাতে।
তুই পথহীন সাগরপারের পান্থ,
তোর ডানা যে অশান্ত অক্লান্ত,
অজানা তোর বাসার সন্ধানে রে
অবাধ যে তোর ধাওয়া;
ঝড়ের থেকে বজ্রকে নেয় কেড়ে
তোর যে দাবিদাওয়া।

যৌবন রে, তুই কি কাঙাল, আয়ুর ভিখারী।
মরণ-বনের অন্ধকারে গহন কাঁটাপথে
তুই যে শিকারি।
মৃত্যু যে তার পাত্রে বহন করে
অমৃতরস নিত্য তোমার তরে;
বসে আছে মানিনী তোর প্রিয়া
মরণ-ঘোমটা টানি।
সেই আবরণ দেখ্‌ রে উতারিয়া
মুগ্ধ সে মুখখানি।

যৌবন রে, রয়েছ কোন্‌ তানের সাধনে।
তোমার বাণী শুষ্ক পাতায় রয় কি কভু বাঁধা
পুঁথির বাঁধনে।
তোমার বাণী দখিন হাওয়ার বীণায়
অরণ্যেরে আপনাকে তার চিনায়,
তোমার বাণী জাগে প্রলয়মেঘে
ঝড়ের ঝংকারে;
ঢেউয়ের ‘পরে বাজিয়ে চলে বেগে
বিজয়-ডঙ্কা রে।

যৌবন রে, বন্দী কি তুই আপন গণ্ডিতে।
বয়সের এই মায়াজালের বাঁধনখানা তোরে
হবে খণ্ডিতে।
খড়গসম তোমার দীপ্ত শিখা
ছিন্ন করুক জরার কুজ্‌ঝটিকা,
জীর্ণতারি বক্ষ দু-ফাঁক ক’রে
অমর পুষ্প তব
আলোকপানে লোকে লোকান্তরে
ফুটুক নিত্য নব।

যৌবন রে, তুই কি হবি ধুলায় লুণ্ঠিত।
আবর্জনার বোঝা মাথায় আপন গ্লানিভারে
রইবি কুণ্ঠিত?
প্রভাত যে তার সোনার মুকুটখানি
তোমার তরে প্রত্যুষে দেয় আনি,
আগুন আছে ঊর্ধ্ব শিখা জ্বেলে
তোমার সে যে কবি।
সূর্য তোমার মুখে নয়ন মেলে
দেখে আপন ছবি।

শান্তিনিকেতন, ৪ চৈত্র, ১৩২২

সকল অধ্যায়

১. আজ এই দিনের শেষে
২. আজ প্রভাতের আকাশটি এই
৩. আনন্দ-গান উঠুক তবে বাজি
৪. আমরা চলি সমুখপানে
৫. আমার কাছে রাজা আমার রইল অজানা
৬. আমার মনের জানলাটি আজ হঠাৎ গেল খুলে
৭. আমি যে বেসেছি ভালো এই জগতেরে
৮. এই দেহটির ভেলা নিয়ে দিয়েছি সাঁতার গো
৯. এইক্ষণে মোর হৃদয়ের প্রান্তে আমার নয়ন-বাতায়নে
১০. এবার যে ওই এল সর্বনেশে গো
১১. এবারে ফাল্গুনের দিনে সিন্ধুতীরের কুঞ্জবীথিকায়
১২. ওরে তোদের ত্বর সহে না আর
১৩. ওরে  নবীন, ওরে আমার কাঁচা
১৪. কত লক্ষ বরষের তপস্যার ফলে
১৫. কে তোমারে দিল প্রাণ রে পাষাণ
১৬. কোন্‌ ক্ষণে সৃজনের সমুদ্রমন্থনে
১৭. জানি আমার পায়ের শব্দ রাত্রে দিনে শুনতে তুমি পাও
১৮. তুমি কি কেবল ছবি শুধু পটে লিখা
১৯. তুমি দেবে, তুমি মোরে দেবে
২০. তোমার শঙ্খ ধুলায় প’ড়ে
২১. তোমারে কি বারবার করেছিনু অপমান
২২. দূর হতে কী শুনিস মৃত্যুর গর্জন
২৩. নিত্য তোমার পায়ের কাছে
২৪. পউষের পাতা-ঝরা তপোবনে
২৫. পাখিরে দিয়েছ গান, গায় সেই গান
২৬. পুরাতন বৎসরের জীর্ণক্লান্ত রাত্রি
২৭. বলাকা (সন্ধ্যারাগে-ঝিলিমিলি ঝিলমের স্রোতখানি বাঁকা)
২৮. বিশ্বের বিপুল বস্তুরাশি
২৯. ভাবনা নিয়ে মরিস কেন খেপে
৩০. মত্ত সাগর দিল পাড়ি গহন রাত্রিকালে
৩১. মোর গান এরা সব শৈবালের দল
৩২. যখন আমায় হাতে ধরে
৩৩. যতক্ষণ স্থির হয়ে থাকি
৩৪. যে-কথা বলিতে চাই
৩৫. যে-বসন্ত একদিন করেছিল কত কোলাহল
৩৬. যেদিন উদিলে তুমি, বিশ্বকবি, দূর সিন্ধুপারে
৩৭. যেদিন তুমি আপনি ছিলে একা
৩৮. যৌবন রে, তুই কি রবি সুখের খাঁচাতে
৩৯. শা-জাহান
৪০. সর্বদেহের ব্যাকুলতা কী বলতে চায় বাণী
৪১. স্বর্গ কোথায় জানিস কি তা ভাই
৪২. হে প্রিয়, আজি এ প্রাতে
৪৩. হে বিরাট নদী, অদৃশ্য নিঃশব্দ তব জল
৪৪. হে ভুবন আমি যতক্ষণ তোমারে না বেসেছিনু ভালো
৪৫. হে মোর সুন্দর

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন