মত্ত সাগর দিল পাড়ি গহন রাত্রিকালে

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

মত্ত সাগর দিল পাড়ি গহন রাত্রিকালে
ওই যে আমার নেয়ে।
ঝড় বয়েছে, ঝড়ের হাওয়া লাগিয়ে দিয়ে পালে
আসছে তরী বেয়ে।
কালো রাতের কালি-ঢালা ভয়ের বিষম বিষে
আকাশ যেন মূর্ছি পড়ে সাগরসাথে মিশে,
উতল ঢেউয়ের দল খেপেছে, না পায় তারা দিশে,
উধাও চলে ধেয়ে।
হেনকালে এ-দুর্দিনে ভাবল মনে কী সে
কূলছাড়া মোর নেয়ে।

এমন রাতে উদাস হয়ে কেমন অভিসারে
আসে আমার নেয়ে।
সাদা পালের চমক দিয়ে নিবিড় অন্ধকারে
আসছে তরী বেয়ে।
কোন্‌ ঘাটে যে ঠেকবে এসে কে জানে তার পাতি,
পথহারা কোন্‌ পথ দিয়ে সে আসবে রাতারাতি,
কোন অচেনা আঙিনাতে তারি পূজার বাতি
রয়েছে পথ চেয়ে।
অগৌরবার বাড়িয়ে গরব আপন সাথি
বিরহী মোর নেয়ে।

এই তুফানে এই তিমিরে খোঁজে কেমন খোঁজা
বিবাগী মোর নেয়ে।
নাহি জানি পুর্ণ ক’রে কোন্‌ রতনের বোঝা
আসছে তরী বেয়ে।
নহে নহে, নাইকো মানিক, নাই রতনের ভার,
একটি ফুলের গুচ্ছ আছে রজনীগন্ধার,
সেইটি হাতে আঁধার রাতে সাগর হবে পার
আনমনে গান গেয়ে।
কার গলাতে নবীন প্রাতে পরিয়ে দেবে হার
নবীন আমার নেয়ে।

সে থাকে এক পথের পাশে, অদিনে যার তরে
বাহির হল নেয়ে।
তারি লাগি পাড়ি দিয়ে সবার অগোচরে
আসছে তরী বেয়ে।
রুক্ষ অলক উড়ে পড়ে, সিক্ত-পলক আঁখি,
ভাঙা ভিতের ফাঁক দিয়ে তার বাতাস চলে হাঁকি
দীপের আলো বাদল-বায়ে কাঁপছে থাকি থাকি
ছায়াতে ঘর ছেয়ে।
তোমরা যাহার নাম জান না তাহারি নাম ডাকি
ওই যে আসে নেয়ে।

অনেক দেরি হয়ে গেছে বাহির হল কবে
উন্মনা মোর নেয়ে।
এখনো রাত হয় নি প্রভাত, অনেক দেরি হবে
আসতে তরী বেয়ে।
বাজবে নাকো তূরী ভেরী, জানবে নাকো কেহ,
কেবল যাবে আঁধার কেটে, আলোয় ভরবে গেহ,
দৈন্য যে তার ধন্য হবে, পুণ্য হবে দেহ
পুলক-পরশ পেয়ে
নীরবে তার চিরদিনের ঘুচিবে সন্দেহ
কূলে আসবে নেয়ে।

কলিকাতা, ৫ ভাদ্র, ১৩২১

সকল অধ্যায়

১. আজ এই দিনের শেষে
২. আজ প্রভাতের আকাশটি এই
৩. আনন্দ-গান উঠুক তবে বাজি
৪. আমরা চলি সমুখপানে
৫. আমার কাছে রাজা আমার রইল অজানা
৬. আমার মনের জানলাটি আজ হঠাৎ গেল খুলে
৭. আমি যে বেসেছি ভালো এই জগতেরে
৮. এই দেহটির ভেলা নিয়ে দিয়েছি সাঁতার গো
৯. এইক্ষণে মোর হৃদয়ের প্রান্তে আমার নয়ন-বাতায়নে
১০. এবার যে ওই এল সর্বনেশে গো
১১. এবারে ফাল্গুনের দিনে সিন্ধুতীরের কুঞ্জবীথিকায়
১২. ওরে তোদের ত্বর সহে না আর
১৩. ওরে  নবীন, ওরে আমার কাঁচা
১৪. কত লক্ষ বরষের তপস্যার ফলে
১৫. কে তোমারে দিল প্রাণ রে পাষাণ
১৬. কোন্‌ ক্ষণে সৃজনের সমুদ্রমন্থনে
১৭. জানি আমার পায়ের শব্দ রাত্রে দিনে শুনতে তুমি পাও
১৮. তুমি কি কেবল ছবি শুধু পটে লিখা
১৯. তুমি দেবে, তুমি মোরে দেবে
২০. তোমার শঙ্খ ধুলায় প’ড়ে
২১. তোমারে কি বারবার করেছিনু অপমান
২২. দূর হতে কী শুনিস মৃত্যুর গর্জন
২৩. নিত্য তোমার পায়ের কাছে
২৪. পউষের পাতা-ঝরা তপোবনে
২৫. পাখিরে দিয়েছ গান, গায় সেই গান
২৬. পুরাতন বৎসরের জীর্ণক্লান্ত রাত্রি
২৭. বলাকা (সন্ধ্যারাগে-ঝিলিমিলি ঝিলমের স্রোতখানি বাঁকা)
২৮. বিশ্বের বিপুল বস্তুরাশি
২৯. ভাবনা নিয়ে মরিস কেন খেপে
৩০. মত্ত সাগর দিল পাড়ি গহন রাত্রিকালে
৩১. মোর গান এরা সব শৈবালের দল
৩২. যখন আমায় হাতে ধরে
৩৩. যতক্ষণ স্থির হয়ে থাকি
৩৪. যে-কথা বলিতে চাই
৩৫. যে-বসন্ত একদিন করেছিল কত কোলাহল
৩৬. যেদিন উদিলে তুমি, বিশ্বকবি, দূর সিন্ধুপারে
৩৭. যেদিন তুমি আপনি ছিলে একা
৩৮. যৌবন রে, তুই কি রবি সুখের খাঁচাতে
৩৯. শা-জাহান
৪০. সর্বদেহের ব্যাকুলতা কী বলতে চায় বাণী
৪১. স্বর্গ কোথায় জানিস কি তা ভাই
৪২. হে প্রিয়, আজি এ প্রাতে
৪৩. হে বিরাট নদী, অদৃশ্য নিঃশব্দ তব জল
৪৪. হে ভুবন আমি যতক্ষণ তোমারে না বেসেছিনু ভালো
৪৫. হে মোর সুন্দর

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন