বিশ্বের বিপুল বস্তুরাশি

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

বিশ্বের বিপুল বস্তুরাশি
উঠে অট্টহাসি;
ধুলা বালি
দিয়ে করতালি
নিত্য নিত্য
করে নৃত্য
দিকে দিকে দলে দলে;
আকাশে শিশুর মতো অবিরত কোলাহলে।

মানুষের লক্ষ লক্ষ অলক্ষ্য ভাবনা,
অসংখ্য কামনা,
রূপে মত্ত বস্তুর আহ্বানে উঠে মাতি
তাদের খেলায় হতে সাথি।
স্বপ্ন যত অব্যক্ত আকুল
খুঁজে মরে কূল;
অস্পষ্টের অতল প্রবাহে পড়ি
চায় এরা প্রাণপণে ধরণীরে ধরিতে আঁকড়ি
কাষ্ঠ-লোষ্ট্র-সুদৃঢ় মুষ্টিতে,
ক্ষণকাল মাটিতে তিষ্ঠিতে।
চিত্তের কঠিন চেষ্টা বস্তুরূপে
স্তূপে স্তূপে
উঠিতেছে ভরি–
সেই তো নগরী।
এ তো শুধু নহে ঘর,
নহে শুধু ইষ্টক প্রস্তর।

অতীতের গৃহছাড়া কত যে অশ্রুত বাণী
শূন্যে শূন্যে করে কানাকানি;
খোঁজে তারা আমার বাণীরে
লোকালয়-তীরে-তীরে।
আলোকতীর্থের পথে আলোহীন সেই যাত্রীদল
চলিয়াছে অশ্রান্ত চঞ্চল।
তাদের নীরব কোলাহলে
অস্ফুট ভাবনা যত দলে দলে ছুটে চলে
মোর চিত্তগুহা ছাড়ি,
দেয় পাড়ি
অদৃশ্যের অন্ধ মরু ব্যগ্র ঊর্ধ্বশ্বাসে
আকারের অসহ্য পিয়াসে।

কী জানি কে তারা কবে
কোথা পার হবে
যুগান্তরে,
দূর সৃষ্টি-‘পরে
পাবে আপনার রূপ অপূর্ব আলোতে।
আজ তারা কোথা হতে
মেলেছিল ডানা
সেদিন তা রহিবে অজানা।
অকস্মাৎ পাবে তারে কোন্‌ কবি,
বাঁধিবে তাহারে কোন্‌ ছবি
গাঁথিবে তাহারে কোন্‌ হর্ম্যচূড়ে,
সেই রাজপুরে
আজি যার কোনো দেশে কোনো চিহ্ন নাই।
তার তরে কোথা রচে ঠাঁই
অরচিত দূর যজ্ঞভূমে।
কামানের ধূমে
কোন্‌ ভাবী ভীষণ সংগ্রাম
রণশৃঙ্গে আহ্বান করিছে তার নাম!

সুরুল, ২৭ পৌষ, ১৩২১

সকল অধ্যায়

১. আজ এই দিনের শেষে
২. আজ প্রভাতের আকাশটি এই
৩. আনন্দ-গান উঠুক তবে বাজি
৪. আমরা চলি সমুখপানে
৫. আমার কাছে রাজা আমার রইল অজানা
৬. আমার মনের জানলাটি আজ হঠাৎ গেল খুলে
৭. আমি যে বেসেছি ভালো এই জগতেরে
৮. এই দেহটির ভেলা নিয়ে দিয়েছি সাঁতার গো
৯. এইক্ষণে মোর হৃদয়ের প্রান্তে আমার নয়ন-বাতায়নে
১০. এবার যে ওই এল সর্বনেশে গো
১১. এবারে ফাল্গুনের দিনে সিন্ধুতীরের কুঞ্জবীথিকায়
১২. ওরে তোদের ত্বর সহে না আর
১৩. ওরে  নবীন, ওরে আমার কাঁচা
১৪. কত লক্ষ বরষের তপস্যার ফলে
১৫. কে তোমারে দিল প্রাণ রে পাষাণ
১৬. কোন্‌ ক্ষণে সৃজনের সমুদ্রমন্থনে
১৭. জানি আমার পায়ের শব্দ রাত্রে দিনে শুনতে তুমি পাও
১৮. তুমি কি কেবল ছবি শুধু পটে লিখা
১৯. তুমি দেবে, তুমি মোরে দেবে
২০. তোমার শঙ্খ ধুলায় প’ড়ে
২১. তোমারে কি বারবার করেছিনু অপমান
২২. দূর হতে কী শুনিস মৃত্যুর গর্জন
২৩. নিত্য তোমার পায়ের কাছে
২৪. পউষের পাতা-ঝরা তপোবনে
২৫. পাখিরে দিয়েছ গান, গায় সেই গান
২৬. পুরাতন বৎসরের জীর্ণক্লান্ত রাত্রি
২৭. বলাকা (সন্ধ্যারাগে-ঝিলিমিলি ঝিলমের স্রোতখানি বাঁকা)
২৮. বিশ্বের বিপুল বস্তুরাশি
২৯. ভাবনা নিয়ে মরিস কেন খেপে
৩০. মত্ত সাগর দিল পাড়ি গহন রাত্রিকালে
৩১. মোর গান এরা সব শৈবালের দল
৩২. যখন আমায় হাতে ধরে
৩৩. যতক্ষণ স্থির হয়ে থাকি
৩৪. যে-কথা বলিতে চাই
৩৫. যে-বসন্ত একদিন করেছিল কত কোলাহল
৩৬. যেদিন উদিলে তুমি, বিশ্বকবি, দূর সিন্ধুপারে
৩৭. যেদিন তুমি আপনি ছিলে একা
৩৮. যৌবন রে, তুই কি রবি সুখের খাঁচাতে
৩৯. শা-জাহান
৪০. সর্বদেহের ব্যাকুলতা কী বলতে চায় বাণী
৪১. স্বর্গ কোথায় জানিস কি তা ভাই
৪২. হে প্রিয়, আজি এ প্রাতে
৪৩. হে বিরাট নদী, অদৃশ্য নিঃশব্দ তব জল
৪৪. হে ভুবন আমি যতক্ষণ তোমারে না বেসেছিনু ভালো
৪৫. হে মোর সুন্দর

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন