বুদ্ধদেব বসু
পাত্রপাত্রী
প্রবীণ লেখক
একজন মধ্যবয়সী অধ্যাপক
তরুণ কবি
একজন মধ্যবয়সী ব্যারিস্টার
ব্যারিস্টার-পত্নী
অধ্যাপক (প্রবীণ লেখককে, আগের কথার জের টেনে )। … আপনি ঘরে বসে থাকেন, কোথাও বেরোন না, খবর-কাগজটা পর্যন্ত পড়েন না মন দিয়ে–আপনি কি জানেন, কী-সব কাণ্ড হচ্ছে চারদিকে?
প্রবীণ লেখক। কী হচ্ছে, বলো তো?
অধ্যাপক। ফক্করাবাদে যে-বঙ্গসাহিত্য-সম্মেলন হয়ে গেলো, তার খবর কিছু শুনেছেন?
প্রবীণ লেখক। শুনেছি। বেশ একটা তামাশা হলো। তা-ই হয় সব সময়। লোকেদের কিছু আমোদপ্রমোদ চাই তো।
তরুণ কবি। সেখানেই থামেনি। (একটা খবর-কাগজে চোখ ফেলে) হুতোমগঞ্জে একটি অশ্লীলতা-নিবারণী সংঘ স্থাপিত হলো সেদিন। উদ্বোধন করলেন ডক্টর মদনভস্ম ভট্টাচার্য, গোবর্ধন বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস-অধ্যাপক
প্রবীণ লেখক। দীর্ঘজীবী হোন এমেরিটাস অধ্যাপকেরা। তাঁরা আছেন বলেই হুতোগঞ্জেও বক্তৃতা করার লোক পাওয়া যায়।
অধ্যাপক (আর-একটা কাগজে চোখ ফেলে)। কলকাতার উপকণ্ঠে কোনো-এক পাব্লিক লাইব্রেরিতে ‘তুঙ্গভদ্রা’ বইটার পাঁচ কপি ছিলো, পাড়ার ব্যায়াম-সমিতির যুবকেরা সেগুলো কেড়ে নিয়ে চৌরাস্তার মোড়ে পুড়িয়েছে।
প্রবীণ লেখক। ভালো। আরো দশ কপি বিক্রি হবে বইটার।
তরুণ কবি। আমাদের পাড়ায় থাকেন চিত্রকর সলিলসিন্ধু নাগ। শখ করে তাঁর দোতলার বারান্দায় একখানা ছবি ঝুলিয়েছিলেন তিনি, তাঁর নিজের আঁকা প্রকাণ্ড একটি ন্যুড। হঠাৎ একদিন একখানা চিঠি এলো তাঁর নামে, পাড়ার সাতান্নজন মহিলা তাতে সই দিয়েছেন। ‘এই প্রকার প্রকাশ্য দুর্নীতি আমরা কিছুতেই সহ্য করিব না।’ অগত্যা ছবিটা সরাতে হলো।
প্রবীণ লেখক। অর্থাৎ—দুর্নীতি গোপন হলে আপত্তি নেই?
অধ্যাপক। তিরিক্ষিপুর মহিলা-সমিতির কাণ্ড জানেন না? তাঁরা প্রস্তাব করেছেন রবীন্দ্রনাথ ও শরৎচন্দ্রের কোনো-কোনো অংশ বাদ দিয়ে নতুন সংস্করণ ছাপানো হোক।
প্রবীণ লেখক। ওঁদের লিখে পাঠানো যাক, ঐ তালিকায় অন্তত আরো চারটি নাম যোগ করা উচিত : কালিদাস, জয়দেব, চণ্ডীদাস, ভারতচন্দ্র।
অধ্যাপক (অসহিষ্ণু ভঙ্গি করে)। আপনি অত হালকা করে দেখছেন কেন? বুঝছেন না, এগুলো খুচরো ঘটনা নয়, একটা জোট-বাঁধা জোরালো আন্দোলন?
প্রবীণ লেখক। ভালো তো। বেশ ভালো কথা।
অধ্যাপক (উত্তেজিত হয়ে)। আপনি একে ভালো বলছেন!
তরুণ কবি (ততোধিক উত্তেজিত)। সাহিত্যকে ধ্বংস করার চক্রান্ত এটা — তাছাড়া আর কী?
প্রবীণ লেখক। সাহিত্য কি এতই ঠুনকো যে ওটুকুতেই ধ্বংস হয়ে যাবে?
তরুণ কবি। জানেন, রাসভপল্লীতে রাস্তায়-রাস্তায় পোস্টার পড়েছে–ঘুষি-পাকানো একটা হাতের ছবি, তলায় লেখা, ‘অশ্লীল সাহিত্যের ধ্বংস চাই!’—আপনি হাসছেন?
প্রবীণ লেখক। আমার অন্য একটা কথা মনে পড়লো। জীবনানন্দ দাশের চাকরি যাওয়ার গল্প জানো তো?
অধ্যাপক (মৃদু হেসে)। সেই ‘ঘাই-হরিণী’!
প্রবীণ লেখক। ‘পরিচয়ে “ক্যাম্পে” কবিতা সদ্য বেরিয়েছে। একদিন কলেজে যাওয়ামাত্র জীবনানন্দর তলব পড়লো প্রিন্সিপালের ঘরে। সেই কলেজেই পড়েছিলেন জীবনানন্দ, প্রিন্সিপাল তাঁর মাষ্টারমশাই। জীবনানন্দ ঘরে ঢোকামাত্র চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন বৃদ্ধ ভদ্রলোক —’পরিচয়ে’র সংখ্যাটা হাতে নিয়ে নিশেনের মতো নাড়তে নাড়তে বললেন, ‘তুমি “ঘাই-হরিণী” লিখেছো? “ঘাই-হরিণী” লিখেছো? যাও—চলে যাও এক্ষুনি!’ আর জীবনানন্দ তাঁর লাজুক ভঙ্গি নিয়ে, তির্যক চাহনি নিয়ে, নিঃশব্দ গোপন অট্টহাসি নিয়ে, আস্তে-আস্তে বেরিয়ে এলেন। (সরবে হেসে উঠে) — “ঘাই-হরিণী” লিখেছো!’ ওঃ, এই একটি গল্পের দাম এক লাখ টাকা! সোনার ফ্রেমে বাঁধিয়ে রাখার মতো! একটা শক্তপোক্ত বিরুদ্ধতা না-থাকলে এই চমৎকার গল্পটি তো পেতুম না আমরা! তাই বিরুদ্ধতাও দরকার। ভালো। উপকারী। না-থাকলে খেলা জমে না।*
[* এই লেখাটা ‘দেশ’ পত্রিকায় বেরোবার পর এক পত্রলেখক জানিয়েছিলেন যে সিটি কলেজ থেকে জীবনানন্দ দাশের অপসারণ অন্য কারণে ঘটেছিলো। তা হতে পারে; কিন্তু চরিত্রলক্ষণসম্মত প্রবচন হিশেবে এটি ‘জানি, কিন্তু বলবো না’-র মতোই রক্ষণযোগ্য। তাছাড়া, আমার যতদূর মনে পড়ে, আমি জীবনানন্দর মুখেই একবার শুনেছিলাম যে ‘ঘাই-হরিণী’ লেখার জন্য তিনি তাঁর প্রাক্তন অধ্যাপক- মহাশয়ের দ্বারা তিরস্কৃত হয়েছিলেন। ― বু.ব. ]
তরুণ কবি (গম্ভীর হয়ে)। আপনি ভুলে যাচ্ছেন জীবনানন্দ চাকরির অভাবে আর্থিক কষ্ট পেয়েছিলেন।
প্রবীণ লেখক। তুমি কি এমন ব্যবস্থা চাচ্ছো—না কি ভাবতে পারো তরুণ কবি। যাতে কবিরা কখনোই কোনো কষ্ট পাবেন না? তাহলেই কিন্তু সত্যিকার মারা পড়বে কবিতা, সুখের খাঁচায় হাই তুলে-তুলে উড়তে ভুলে যাবে। আমি সুখের কথা ভাবছি না, আমি স্বাধীনতার জন্য চিন্তিত। কবিতা লেখার জন্য একজনের চাকরি যাবে, এর চেয়ে অন্যায় অবিচার আর কী হতে পারে?
প্রবীণ লেখক। অন্যায়? অবিচার? কিন্তু এটাই তো জনসাধারণের অভ্যর্থনা। যা-কিছু খাঁটি, নতুন, যা-কিছু ভবিষ্যতের–তার প্রথম অভিনন্দনের ভাষাই তো এই। অবহেলা, বিদ্রূপ, বিরুদ্ধতা–এ-সব না-থাকলে শিল্পী কী-করে বেড়ে উঠবেন, গড়ে তুলবেন নিজেকে, মনটাকে কোন পাথরে শান দেবেন, কোন বাতাসে আঁচ তুলবেন উনুনে? তুমি যাকে স্বাধীনতা বলছো কোনো সমাজ সেটা থালায় করে উপহার দেবে না, সেটা আমাদের চোরাই মাল। যুদ্ধ আছে বলেই শিল্পীরা আছেন।
তরুণ কবি। আমিও যুদ্ধ চাই। ফিলিস্টাইনদের সঙ্গে। প্যুরিটানদের সঙ্গে। এস্টাব্লিশমেন্টের সঙ্গে। যত ন্যাকা, বোকা, ভণ্ড, পণ্ডিত ফোঁপরদালালদের সঙ্গে। প্রত্যক্ষ সংগ্রাম।
প্রবীণ লেখক। পরোক্ষ সংগ্রাম। গোপন। সচেতনভাবে সংগ্রামও নয়। তুমি যখন নতুন কিছু লিখে ছাপাও, তোমার কি মনে হয় না সমুদ্রে একটা কাগজের নৌকো ভাসিয়ে দিলে— হয়তো ডুবে যাবে, হয়তো কোনো ঘাটে পৌঁছবে— কোথাও, কোনোদিন?
অধ্যাপক (অসহিষ্ণুভাবে)। ওঃ, আপনার এই গজদন্তমিনার! আর সহ্য হয় না! আপনাকে সোজাসুজি একটা কথা জিগেস করি : এই যে অশ্লীলতা নিয়ে হুজুগ উঠেছে, এর বিরুদ্ধে আমাদের কি দাঁড়ানো উচিত নয়?
প্রবীণ লেখক। দাঁড়ালে দোষ কী।
তরুণ কবি (উত্তেজিত সুরে)। দাঁড়ালে দোষ কী! এর বেশি কিছু বলার নেই আপনার?
অধ্যাপক। আমি বোধহয় আপনার মনের কথাটা অনুমান করতে পারছি। এককালে ‘চিত্রাঙ্গদা’ অশ্লীল ছিলো। তারপর ‘ঘরে-বাইরে’। তারপর ‘চরিত্রহীন’, ‘শ্রীকান্ত’। তারপর ‘কল্লোল’-গোষ্ঠী।
প্রবীণ লেখক। অতএব— অতএব এখন আবার আর-একটা হুজুগ না-উঠলে আশঙ্কা হতো বাংলা সাহিত্য মরে যাচ্ছে।
অধ্যাপক। কিন্তু সব সময়ই প্রতিবাদ ছিলো। কেউ-না-কেউ রুখে দাঁড়িয়েছে। আপনি বলছিলেন বিরোধিতা দরকার— আমি মানি সে-কথা— কিন্তু বিরোধিতার বিরোধিতাও তেমনি প্রয়োজন। নয়তো ভারসাম্য টেকে না।
প্রবীণ লেখক। বাঃ, বেশ বলেছো। বিরোধিতার বিরোধিতা। কবিতা লেখা ব্যাপারটাও তা-ই। ভাষা চায় না ছন্দে ধরা দিতে, কিন্তু কবির জেদ তাকে নিজের ইচ্ছেমতো চালাবেন। এমনি রেষারেষি চলে।
অধ্যাপক। কবিতার কথা পরে হবে। আমরা হাতে-কলমে কিছু করবো ভাবছি। আপনি আমাদের সঙ্গে আছেন তো?
প্রবীণ লেখক। নিশ্চয়ই। কী করতে চাও তোমরা?
তরুণ কবি। আমরাও পাল্টা আন্দোলন চালাবো। গড়ে তুলবো প্রতিরোধ—
অধ্যাপক। গড়ে তুলবো জনমত। সেমিনার ডাকবো নানা জায়গায়—
তরুণ কবি। রাস্তার মোড়ে-মোড়ে মীটিং। পোস্টার। প্যাম্ফলেট। মিছিল—
অধ্যাপক। নানা দিক থেকে তাত্ত্বিক আলোচনা— বিতর্ক— বিশ্লেষণ—
তরুণ কবি। পাড়ায়-পাড়ায় পক্ষপাতী চীৎকার। ঢাক, ঢোল, জগঝম্প। কলকাতাকে কাঁপিয়ে দেবো আমরা। আমাদের স্লোগান হবে : সাহিত্যের ওপর হস্তক্ষেপ— চলবে না! চলবে না!
অধ্যাপক। আমি একটা ইস্তাহারের কথাও ভাবছি। চারদিকে জোর গুজব অশ্লীলতা-সংক্রান্ত আইনের সংশোধনের জন্য একটা আবেদনপত্র তৈরি হয়েছে। হাজার-হাজার সই পড়ছে তাতে।
তরুণ কবি। সংশোধন মানে— আরো কড়া আইন। আরো কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা। এর উত্তরে আমরা দাবি করবো ঐ আইন বরবাদ হয়ে যাক।
অধ্যাপক। অতটা বললে কোনো কাজ হবে না। বরং বলা যাক— অশ্লীলতা বিষয়ে একটা তদন্ত-কমিশন বসানো হোক। আপনি কী বলেন? (প্রবীণ লেখক জবাব দিলেন না।) না কি বিচারের পদ্ধতি বদলাবার প্রস্তাব করলে ভালো হবে? (প্রবীণ লেখক জবাব দিলেন না।) আমি কাল একটা খাড়া করতে বসেছিলাম, কিন্তু— এই যে, আমাদের আইনজ্ঞ বন্ধু এসে গেছেন। বাঃ, একেবারে সস্ত্রীক। আসুন। বসুন।
[ব্যারিস্টার ও ব্যারিস্টার-পত্নীর প্রবেশ। ব্যারিস্টারের হাতে কয়েকটা বই।]
ব্যারিস্টার (বসে, সকলের দিকে তাকিয়ে)। আমার দেরি হলো, এই বইগুলো দেখে নিচ্ছিলাম আসার আগে। আপনারা কি খাড়া লিখতে শুরু করেছেন?
অধ্যাপক। আপনার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। আমার হঠাৎ মনে হলো, ‘অশ্লীলতা’ কথাটাই ধোঁয়াটে। বলুন তো, আমাদের পীনাল কোডে ওর সংজ্ঞার্থটা ঠিক কী?
ব্যারিস্টার। সংজ্ঞার্থ? মানে ডেনিশন? সে-ই তো মুশকিল। কোথাও কোনো ডেনিশন নেই। কোনো দেশেই নেই মনে হচ্ছে। একবার জেনিভায় একটি আন্তর্জাতিক বৈঠক বসেছিলো; তাতে যে-সব প্রস্তাব গৃহীত হয় আমাদের ২৯২ নম্বর ধারার সেটাই ভিত্তি। কিন্তু সেখানেও অশ্লীলতাকে ডিফাইন করার কোনো চেষ্টা হয়নি।
তরুণ কবি। আশ্চর্য! খুন, ডাকাতি, চুরি, জোচ্চুরি— এগুলো যে কী তা আমরা সকলেই জানি, কিন্তু অশ্লীলতা, যার জন্য জরিমানা হতে পারে, জেল হতে পারে, সেটা যে কী, তা আইনকর্তারাও বলতে পারেন না!
ব্যারিস্টার। আর-একটা পয়েন্ট : যা-কিছু ধর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত— হোক ছবি মূর্তি নাচ গান নাটক বই অঙ্গভঙ্গি—তার ওপর এই আইনের কোনো এক্তিয়ার নেই।
অধ্যাপক (সকৌতুকে হেসে)। জয় মা কালী! তোমাকে কেউ ছুঁতে পারবে না।
তরুণ কবি। আমি বলবো এটা অত্যন্ত অন্যায়। যদি কালীমূর্তিতে কোনো দোয না থাকে, তাহলে কেন–
অধ্যাপক। সর্বনাশ! অমন কথা ভুলেও মুখে এনো না। তাহলে কোন না একদিন লোকসভার কোনো সদস্য প্রস্তাব আনেন, কোণারক খাজুরাহোর মূর্তিগুলো ভেঙে ফেলা হোক।
ব্যারিস্টার। বৈজ্ঞানিক বলা যেতে পারে, এমন বই বা ছবিও আইনের মধ্যে পড়ে না।
অধ্যাপক। কিন্তু ‘মাদাম বভারি’ও বৈজ্ঞানিক ধরনে লেখা। তবু ও-বই নিয়ে মামলা হয়েছিলো ফ্রান্সে।
তরুণ কবি। সর্বনাশ! ও-কথা কারো কানে তুলে দেবেন না যেন। তাহলে কোন না একদিন ফ্লোবের আমাদের দেশে নিষিদ্ধ হয়ে যান।
ব্যারিস্টার (নিজের কথার জের টেনে)। তাছাড়া, আমাদের পীনাল কোড ইংরেজিতে লেখা; সেখানে যার নাম ‘অবসীনিটি’, আমরা তাকেই ‘অশ্লীলতা’ বলছি। দুটো জিনিশ কি অবিকল এক?
অধ্যাপক (সহাস্যে ও ঈষৎ সগর্বে)। আ! তাহলে দেখা যাচ্ছে সবই শেষ পর্যন্ত সেমানটিক্স-এর তর্ক!
ব্যারিস্টার। আমার কৌতূহল হলো ‘অবসীন’ কথাটার ব্যুৎপত্তি জানার জন্য। কিন্তু আমার অভিধান বলছে—’origin unknown!
অধ্যাপক (উঠে, বইয়ের শেলফের সামনে দাঁড়িয়ে)। শর্টার অক্সফোর্ডটা দেখা যাক। (একটা মোটা বই নামিয়ে, বই থেকে পড়ে) ‘—obscene — from Latin obscenus, etymology unknown.’ আশ্চর্য! (অধ্যাপকের কপালে রেখা পড়লো, তিনি শেলফের বইগুলোর ওপর চোখ চালিয়ে গেলেন।) এই যে, এরিক পার্ট্রিজ। (আর-একটা মোটা বইয়ের পাতা উল্টে, সহাস্যে) পেয়েছি। ইনি দুটো সম্ভবপর ব্যুৎপত্তি দিচ্ছেন। (বই থেকে পড়ে) perhaps ob scaena, less likely ob caenum. প্রথমটার মানে দাঁড়ায় off scene বা off stage, অর্থাৎ, যা রঙ্গমঞ্চে দেখাবার যোগ্য নয়। (সরবে হেসে) তাহলে দেখা যাচ্ছে প্রাচীন গ্রীকদের মতে হত্যা, আত্মহত্যা, যুদ্ধ—এই সবই ছিলো অবসীন।
তরুণ কবি। কিন্তু সুস্থ, সুগঠিত, নগ্ন নারী ও পুরুষের দেহ তাঁদের চোখে ছিলো গৌরবময়। সুসভ্য গ্রীক!
অধ্যাপক। আর অন্যটা—লাতিন ‘caenum’, তার মানে পাঁক, নোংরা, কিন্তু পাট্রিজ সেটাকে ‘less likely’ বলছেন।
তরুণ কবি। ‘অশ্লীল’ আসছে ‘অ-শ্রীল’ থেকে, অর্থাৎ যা অসুন্দর তা-ই অশ্লীল। কিন্তু আমাদের নির্বাচিত সদস্যেরা যখন পৌরসভা বা বিধানসভার পবিত্র মন্দিরে মেছোনির মতো কোঁদল চালান, সেই আচরণকে কেউ অশ্লীল বলে না।
ব্যারিস্টার। না, বলে না। অন্য কোনোরকম কুশ্রীতাই আইনের চোখে ‘অ-শ্রীল’ নয়। স্পষ্ট কোনো ডেনিশন কোথাও না-থাকলেও আইনের লক্ষ্যটা কী তা আমরা সকলেই জানি। আর-কিছু নয়―শুধু যৌনতার প্রকাশই অবসীন বা অশ্লীল।
তরুণ কবি (সরবে হেসে উঠে)। যৌনতার প্রকাশ! তাহলে ‘সদ্ভাবশতক’ ছাড়া কেউ কিছু লিখবে না?
ব্যারিস্টার (গম্ভীরভাবে)। কথা নিয়ে খেলা করে লাভ নেই, সরকারি কর্তৃপক্ষের কাছে কোনটা আপত্তিজনক, বা আপত্তিজনক হতে পারে, সেটাই আমাদের বিবেচ্য।
ব্যারিস্টার পত্নী। আমি একটা কথা বলতে পারি কি? একজন মহিলা হিশেবে, সন্তানের মা হিশেবে—
ব্যারিস্টার (ঈষৎ অসহিষ্ণুভাবে)। তুমি একজন ভারতীয় নাগরিক হিশেবেই কথা বলতে পারো।
ব্যারিস্টার-পত্নী (দৃঢ় স্বরে)। আমার কাছে প্রশ্নটা খুব সহজ। যে-বই পড়ে বা যে-ছবি দেখে মনে কদর্য ভাব জাগে, সেটাই অশ্লীল।
তরুণ কবি। ‘কদর্য ভাব’ কাকে বলছেন?
ব্যারিস্টার-পত্নী (একটা তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ছুঁড়ে)। বলতে বাধ্য হচ্ছি আজকাল অনেক বই পড়ে আমার নোংরা লাগে, গা-ঘিনঘিন করে, বমি পায়।
তরুণ কবি। বমি পায়–অথচ পড়েন! আশ্চর্য!
[ ব্যারিস্টার-পত্নী ঈষৎ লাল হলেন, ব্যারিস্টার মৃদু কাশলেন। ]
অধ্যাপক (মধ্যস্থ হয়ে)। আমরা জানতে চাই, ঠিক কোন ধরনের বর্ণনাকে আপনি কদর্য বলছেন। দু-একটা উদাহরণ দেবেন কি?
ব্যারিস্টার-পত্নী। মাপ করবেন, সে-সব আমি মুখে আনতে পারবো না। তবে আমি যা বুঝি, তা এই। সে-লেখাই ভালো, যা পড়ে মনে সৌন্দর্যের অনুভূতি হয়, তার বিষয় যা-ই হোক, বা যে-ধরনের বর্ণনাই তাতে থাক না। যে-লেখা শুধু শরীরটাকে খুঁচিয়ে তোলে, মনকে জাগায় না, সেটাই বোধহয় ‘অশ্লীল’ পর্যায়ে পড়ে। (প্রবীণ লেখককে) আপনি কী বলেন?
প্রবীণ লেখক (তিনি এতক্ষণ সোফায় হেলান দিয়ে সিগারেট টানছিলেন এইবার সোজা হয়ে বসলেন)। চমৎকার বলেছো রমলা, খুব একটা সম্ভ্রান্ত মত বলেছো। কিন্তু কোন লেখা সুন্দর আর কোনটা নয়, তা আমরা কী করে জানবো? কে বলে দেবে?
ব্যারিস্টার-পত্নী (আত্মপ্রত্যয়ের সঙ্গে)। বলে দেবে আমার মন।
প্রবীণ লেখক। ঠিক! ঠিক বলেছো! কিন্তু জনে-জনে মনও আলাদা। ভগবানের দয়ায় আমরা সুইফটের সচ্চরিত্র অশ্ব-সমাজ নই; সকলেই একরকম ভাবি না। যত সমস্যা তা-ই নিয়ে, আবার জীবনের লবণও সেইটে। যেখানে সব বিষয়ে সব সময় সকলেই একমত, তার চেয়ে ভয়াবহ স্থান আর কী হতে পারে?
ব্যারিস্টার-পত্নী। আপনি বিষয়ান্তরে চলে যাবেন না— আপনার নিজের কী মনে হয়, বলুন। কেউ-কেউ আজকাল এমনও বলছে যে অশ্লীল বলে কিছু নেই। আপনিও কি তা-ই বলেন?
প্রবীণ লেখক। আমি কী বলি না বলি, তাতে জগতের কী এসে যায়? ধরো, আমার মতে ‘লেডি চ্যাটার্লিজ লভার’ পড়লে এক ধরনের চিত্তশুদ্ধি ঘটে, কিন্তু দেশে-বিদেশে অনেকে তার নাম শোনামাত্র শিউরে উঠবেন। ব্যা
রিস্টার-পত্নী। হতে পারে ‘লেডি চ্যাটার্লিজ় লভার’ উঁচু দরের সাহিত্য, কিন্তু ‘ফ্যানি হিল’ বিষয়ে আপনি কী বলবেন?
প্রবীণ লেখক। ‘ফ্যানি হিল্’? বেশ পড়ে ওঠা যায়। ভিক্টরিয়ান ইংলন্ডের ওপর মজার ঠাট্টা একটা।
ব্যারিস্টার পত্নী। ‘ট্রপিক অব ক্যানসার’?
প্রবীণ লেখক। জীবনের ক্লান্তি— পুনরুক্তি-অর্থহীনতা—এরই একটা রূপক বলা যায় উপন্যাসটিকে।
ব্যারিস্টার-পত্নী। ‘লোলিটা’?
তরুণ কবি (মহিলাটিকে)। ওরেব্বাবা, আপনি দেখছি সব পড়েছেন।
ব্যারিস্টার পত্নী (তরুণ কবিকে গ্রাহ্য না-করে)। বলুন।
প্রবীণ লেখক। ইংরেজি ভাষার ব্যবহার অসাধারণ। কনরাডের পরে নাবোকভই বোধহয় প্রথম বিদেশী, যিনি ইংরেজির ওপর তাঁর ব্যক্তিত্বের ছাপ দিতে পেরেছেন।
অধ্যাপক (নিশ্বাস ছেড়ে)। আ! তাহলে সবই শেষ পর্যন্ত স্টাইলের প্রশ্ন!
ব্যারিস্টার-পত্নী। আপনি কি ও-সব বই কোনো দশ বছরের মেয়ের হাতে দেবেন?
প্রবীণ লেখক। (ব্যারিস্টারকে)। খুব যোগ্য স্ত্রী পেয়েছো, রণেন। (ব্যারিস্টার মৃদু কাশলেন)। জেরা করতে ওস্তাদ!
ব্যারিস্টার-পত্নী (ঈষৎ সলজ্জভাবে)। কিছু মনে করবেন না। আমি আপনার উত্তর শুনতে চাই।
প্রবীণ লেখক। দশ বছরের মেয়ে ওর মাথামুণ্ডু কিছু বুঝবেই না। ব্যা
রিস্টার পত্নী। ষোলো বছরের ছেলেকে?
প্রবীণ লেখক। আমি লুকোবো না, বারণ করবো না। যে যা পড়তে চায় খোলাখুলি পড়াই ভালো।
ব্যারিস্টার-পত্নী। আপনি কি বুকে হাত দিয়ে বলবেন এ-সব বইয়ে অপরিণত ছেলেমেয়েদের ক্ষতি হবার কোনো আশঙ্কা নেই?
প্রবীণ লেখক। কী-রকম ক্ষতি?
ব্যারিস্টার-পত্নী (ঈষৎ বিব্রত)। মানে— ধরুন—যে-সব বই—যে-সব বই শারীরিকভাবে নাড়া দেয়—
প্রবীণ লেখক। যেমন মহাভারত? যেমন হোমার? যেমন শেক্সপিয়র? আমার যখন ষোলো বছর বয়স আমি একদিন রাত জেগে শেক্সপিয়রের ‘ভেনাস অ্যান্ড অ্যাডোনিস’ পড়েছিলাম। পড়তে-পড়তে যেন আগুন ছড়িয়ে পড়েছিলো আমার শরীরে। (ব্যারিস্টার-পত্নী সলজ্জভাবে মাথা নিচু করলেন।) কিন্তু কই, আমার তো কোনো ক্ষতি হলো না। আমি বখেও গেলাম না, ম্যাট্রিকে স্কলার্শিপও পেলাম।
ব্যারিস্টার-পত্নী। সব ছেলে আপনার মতো নয়। কী করে জানেন অন্য ছেলেরা বখে যাবে না?
প্রবীণ লেখক। বখে যাবার আর কি কোনো কারণ নেই?
[ একটু চুপচাপ। ]
ব্যারিস্টার (গলা-খাঁকারি দিয়ে)। আইনের কথায় ফিরে আসা যাক। সুপ্রীম কোর্ট কী বলছেন, শুনুন। (চিহ্ন-দেয়া পাতায় একটা বই খুলে) ‘অশ্লীলতার প্রশ্ন উঠলে এক বইয়ের সঙ্গে অন্য বইয়ের তুলনা করার কোনো দরকার নেই। সাহিত্যিকদের মতামতও অবান্তর, কেননা সিদ্ধান্ত নেবেন শেষ পর্যন্ত বিচারকরাই।’ অতএব শেক্সপিয়র ইত্যাদির কথায় চিঁড়ে ভিজবে না। কোনো বই ‘উঁচু দরের সাহিত্য’ কিনা, তার স্টাইল উৎকৃষ্ট কিনা, কোনটা ‘ওঅর্ক অব আর্ট’ আর কোনটা নয়, এ-সব তর্ক একদম অকেজো। বরং তাতে উল্টো ফল হতে পারে। ইংলন্ডে যখন ‘ওয়েল অব লোনলিনেস’-এর মামলা উঠলো, তখন একদল জোর গলায় বললেন, বইটা খুব সুলিখিত। বিচারক জবাব দিলেন, ‘তাহলে তো আরো বেশি পাঠক আকৃষ্ট হবে। আরো বেশি ভয়ের কথা।’
তরুণ কবি। (চেঁচিয়ে উঠে)। বরবাদ হোক আইন! বরবাদ! বরবাদ!
অধ্যাপক (গম্ভীর গলায়)। সংশোধন নিশ্চয়ই দরকার। কোনদিক থেকে প্রস্তাবটা আনা যায় ভাবছি। (একটু ভেবে) আমাদের সমাজ অনেক বদলে গেছে, ‘জীবন অনেক বদলে গেছে, সে-অনুপাতে আইনেরও বদল দরকার : এ-ভাবে বললে কেমন হয়?
ব্যারিস্টার। কিন্তু আইনের ভাষাটা তো তেমন জরুরি নয়, প্রয়োগই আসল। সময় বুঝে, দেশ বুঝে, সমাজের অবস্থা বুঝে, বিচারকদের দৃষ্টিভঙ্গি আপনিই কিছুটা বদলে যায়। এককালে মারী স্টোপস-এর বই আয়র্লন্ডে নিষিদ্ধ ছিলো, ইংলন্ডে একবার আনি বেসান্ট আদালতে সাজা পেয়েছিলেন জন্মনিয়ন্ত্রণ প্রচার করার জন্য—
ব্যারিস্টার-পত্নী। অ্যাঁ? সত্যি?
তরুণ কবি। বলেন কী!
ব্যারিস্টার-পত্নী। আশ্চর্য।
অধ্যাপক। সমাজসেবিকা মারী স্টোপস। মহীয়সী আনি বেসান্ট।
ব্যারিস্টার। —আর আজ ভারতের মতো সনাতনী দেশ পরিবার পরিকল্পনার পোস্টারে ছেয়ে গেছে!
তরুণ কবি। কিন্তু তাই বলে সময়ের ওপর বরাদ্দ দিয়ে নিশ্চিন্ত থাকা যায় না। আজকের দিনে পরিবর্তনের বেগ অনেক বেড়ে গেছে। আমার মনে হচ্ছে বিচারের পদ্ধতিটাই ভুল। আমরা জুরির বিচার দাবি করবো।
অধ্যাপক। এটা বেশ ভালো প্রস্তাব। সাহিত্যিক, অধ্যাপক, সমালোচক—এঁদের থেকে জুরি বেছে নিলে সুফল হতে পারে।
প্রবীণ লেখক (দ্রুত ভঙ্গিতে দু-হাত তুলে)। তোমরা কি পাগল হলে! ফক্করাবাদে যাঁরা হামলা করলেন তাঁরাও তো ছিলেন সাহিত্যিক, অধ্যাপক, সমালোচক! মনে নেই ‘ফ্ল্যর দ্যু মাল’-এর মামলা? স্যাৎ-ব্যভ কি কড়ে আঙুলটি তুলেছিলেন বোদলেয়ারের সপক্ষে? কেউ তো শেক্সপিয়র কালিদাসের নামে মামলা আনবে না। কিন্তু যে-বই এইমাত্র বেরোলো, তাকে বিশ্বাস কী?
অধ্যাপক। আপনি কি তাহলে বিচারকদের হাতেই সব দায়িত্ব ছেড়ে দিতে রাজি?
প্রবীণ লেখক। আমি তাতে কোনো দোষ দেখি না।
অধ্যাপক (গম্ভীরভাবে)। আমাদের ভয় হচ্ছে আপনি এস্টাব্লিশমেন্টের দিকে চলে যাচ্ছেন।
তরুণ কবি। জজসাহেবরা আইনজ্ঞ, কিন্তু সাহিত্যের তাঁরা কী বোঝেন?
ব্যারিস্টার-পত্নী (তক্ষুনি প্রতিবাদ করে)। এটা কিন্তু ঠিক কথা হলো না! আইন জানলে সাহিত্য বুঝবে না তার কী মানে আছে?
ব্যারিস্টার (মৃদু কেশে, বইয়ে চোখ ফেলে)। এটা শুনুন। ‘আজকের জগতে, যেখানে প্রলোভন এত বেশি, সেখানে অ্যারিস্টোফেনিস, বা জুভেনাল না-পড়লেই একজন ভদ্রসন্তান সচ্চরিত্র থাকবেন, এ-কথা বিশ্বাস করা অসম্ভব।’ কথাটা বলেছিলেন টমাস ব্যাবিংটন মেকলে, একজন আইনের দিক্পাল। ইংলন্ডে বা ফ্রান্সে যাঁরা বিচারপতি, ধরে নেয়া যায় তাঁরা স্কুলে-কলেজে হোরাস, ওভিদ, কাতুল্লুস পড়েছিলেন, স্কুলের বাইরে আপুলেউস ও পেত্রনিয়ুসকেও বাদ দেননি, হয়তো সাফোর লাইন গ্রীক ভাষায় আওড়াতেও পারেন। অথচ তাঁরাই কেন ‘ফ্ল্যর দ্যু মাল’ বা ‘ইউলিসিস’ দেখে চমকে ওঠেন ভেবে পাই না।
প্রবীণ লেখক। সহজ কথা! ভয়টা তো অশ্লীলতার নয়, নতুনের। নতুনের ভয়—সবচেয়ে পুরোনো ভয় মানুষের। নিখিলকামুক কালিদাসকে প্রতিদিন পেন্নাম ঠুকছি আমরা, ওভিদের যৌনতত্ত্ব নিয়ে পাণ্ডিত্যপূর্ণ পুঁথি লিখছি— কিন্তু একজন নতুন ওভিদ! কোনো-এক-টাটকা বিশ-শতকী ‘অদিসি’! সৰ্বনাশ!
ব্যারিস্টার-পত্নী। কিন্তু আপনি কি বলবেন যা-কিছু নিয়ে আপত্তি ওঠে, তা-ই আর একটি ‘ফ্ল্যর দ্যু মাল’, আর-একখানা ‘ইউলিসিস’?
প্রবীণ লেখক। কে বলে দেবে?
ব্যারিস্টার-পত্নী। আপনি কি সাহিত্য আর পর্নোগ্রাফিতে কোনো তফাৎ করবেন না? প্রবীণ লেখক। কে বলে দেবে?
ব্যারিস্টার-পত্নী। আপনি কি বলছেন এমন কোনো আদর্শই নেই, যা দিয়ে যাচাই করা যায়?
প্রবীণ লেখক। পুরোনো বই হলে—নিশ্চয়ই। কিন্তু নতুন! কে বলে দেবে সে কী কেমন ভবিষ্যৎ ছাড়া?
ব্যারিস্টার-পত্নী। তাই বলে আপনি বাজে বই চলতে দেবেন?
প্রবীণ লেখক। লক্ষ-লক্ষ বাজে বই চলছে পৃথিবী ভরে। কী এসে যায়? ব্যারিস্টার-পত্নী (অসহিষ্ণু ভঙ্গি করে)। আমি বিশেষ এক ধরনের বইয়ের কথা বলছি।
প্রবীণ লেখক। যদি বাজেই হয় তাহলে আর দুশ্চিন্তা কেন? টুপ করে ডুবে যাবে দু-দিন পরে। তোমার আমার সাহায্যের দরকার হবে না।
ব্যারিস্টার-পত্নী। আপনি একজন নামজাদা লেখক, আপনার কথা অনেকেই কানে তোলে। আপনার কি সমাজের কাছে কোনো দায়িত্ব নেই?
প্রবীণ লেখক (দু-হাত তুলে)। রক্ষে করো! নিজের লেখা নিয়েই ফাটাফাটি, তার ওপর আবার পরের ব্যাপারে নাক গলানো।
[ একটু চুপচাপ। ]
তরুণ কবি। আমরা আপনার গয়ংগচ্ছ নীতি মানি না।
অধ্যাপক। আপনি বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্বীকার করছেন। সমালোচনাকে অস্বীকার করছেন।
তরুণ কবি। প্রপ্যাগ্যান্ডার মূল্য অস্বীকার করছেন।
ব্যারিস্টার-পত্নী। আপনি ভুলে যাচ্ছেন লেখকরাও সামাজিক জীব।
অধ্যাপক। ভুলে যাচ্ছেন সমালোচকরা রুচি বদলে দিতে পারেন।
তরুণ কবি। ভুলে যাচ্ছেন শিল্পীরা হলেন সমাজের বিবেক।
ব্যারিস্টার। আমরা আমাদের প্রসঙ্গ থেকে দুরে সরে আসছি। (ঘড়িতে চোখ ফেলে) আমাকে একটু পরেই উঠতে হবে।
অধ্যাপক। এতক্ষণ ধরে কথা বলেও কোনো মীমাংসায় পৌঁছনো গেলো না।
তরুণ কবি। আমি তাই বলি : তর্ক-ফর্ক বাজে—যা করবার বুলেটের মতো করে ফেলতে হয়।
অধ্যাপক (প্রবীণ লেখককে, লেখককে, ঈষৎ নৈরাশ্যের সুরে)। আর-একবার বলছি আপনাকে—আমাদের ইস্তাহারের খশড়াটা নিয়ে একটু ভাববেন? আমরা না-হয় পরে আবার আসবো।
প্রবীণ লেখক। তোমাদের আর পাঁচ মিনিট সময় হবে কি? তাহলে কয়েকটা লাইন পড়ে শোনাই।
[ অন্যদের চাঞ্চল্য। ‘বাঃ, আপনি লিখে ফেলেছেন!’ ‘চমৎকার!’
‘এতক্ষণ বলেননি কেন?’ ‘তাহলে তো আর কথাই নেই!’
ইত্যাদি মন্তব্য ]
প্রবীণ লেখক (উঠে, টেবিলের দেরাজ থেকে একটা খাতা বের করে)। লেখাটা কিন্তু শেষ হয়নি। আরম্ভটা তোমাদের পছন্দ হয় কিনা, দ্যাখো।
তরুণ কবি। তাহলে কাল থেকেই সিগনেচার ক্যাম্পেন শুরু করে দেবো।
অধ্যাপক। কাগজে আমাদেরটা আগে বেরিয়ে গেলে চমৎকার হবে।
প্রবীণ লেখক। আগে শুনে নাও। (খাতা খুলে পড়তে লাগলেন।) ‘সম্প্রতি বাংলা দেশে অশ্লীলতার বিরুদ্ধে যে-আন্দোলন চলছে আমরা তার পক্ষপাতী নই।—’
তরুণ কবি। —‘পক্ষপাতী নই’। অত নরম করে বলতে চাই না আমরা!
অধ্যাপক। শোনা যাক না।
প্রবীণ লেখক (পড়ে)। ‘পক্ষপাতী নই এই কারণে যে বিষয়টির গুরুত্ব ও ব্যাপ্তির তুলনায় এই আন্দোলন ভীরু, মৃদু, দুর্বল, সীমিত ও অত্যধিক সহনশীল। এর হোতা, উদ্গাতা, যাজক বা বটুকবৃন্দ—’
তরুণ কবি। এ আবার কী?
অধ্যাপক। প্রতিবাদের মতো শোনাচ্ছে না তো।
ব্যারিস্টার। শোনা যাক।
প্রবীণ লেখক (পড়ে)। ——যাজক বা বটুকবৃন্দ, কারোরই ধারণা নেই, তাঁরা যে-শত্রুর সঙ্গে যুদ্ধে নেমেছেন তা কত দুর্ধর্ষ, সূক্ষ্মগামী, শাঠ্যনিপুণ, দুর্গম ও পরাক্রান্ত। তাকে ধ্বংস করতে হলে কোনো খণ্ডযুদ্ধ যথেষ্ট নয়, বিপুলতম বৈশ্বিক যুদ্ধ চাই।’
তরুণ কবি। আপনি কি বলতে চাচ্ছেন-
অধ্যাপক। আমার মনে হচ্ছে—
ব্যারিস্টার। শেষ পর্যন্ত শুনে নিন, তারপর মতামত দেবেন।
প্রবীণ লেখক (পড়ে)। ‘অশ্লীলতা কাকে বলে তা নিয়ে আমরা তর্ক করবো না; আমাদের কাছে তার সংজ্ঞার্থ খুব স্পষ্ট। যা-কিছু জীবের যৌন প্রক্রিয়াকে অনাবৃতভাবে বা অশোভনভাবে বা উদ্দীপকভাবে প্রকাশ করে, আমরা তাকেই অশ্লীল বলছি। মনে রাখতে হবে এই যৌনবৃত্তি মৌলিক, আদিম, সনাতন, সর্বজনীন, আবহমান। শুধু অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোর-কিশোরী অথবা শুধু যুবক-যুবতীরাই নয়, বয়স্ক প্রৌঢ়গণও এর অধীন, এমনকি বৃদ্ধ ও বৃদ্ধারাও এর সংক্রাম থেকে মুক্তি পান না কয়েকখানা সাম্প্রতিক পুস্তক নিষিদ্ধ করে দিলেই অবাঞ্ছিত বা অবৈধ যৌন উত্তেজনার আশঙ্কা তিরোহিত হবে, এ-কথা যাঁরা ভাবেন তাঁরা ভ্রান্ত, দৃষ্টিহীন, নির্বোধ, মোহাচ্ছন্ন।’
তরুণ কবি (সহাস্যে)। বুঝেছি—এটা রসিকতা।
অধ্যাপক (সহাস্যে)। আমি বলবো—বিদ্রূপ।
ব্যারিস্টার। কিন্তু— প্র্যাকটিকল হবে কি?
তরুণ কবি। পড়ুন। আমরা শুনছি।
প্রবীণ লেখক (পড়ে)। ‘এই ভীমবল মহাশত্রুকে নিপাত করতে হলে আরো ব্যাপক কর্মসূচি চাই। আরো ব্যাপক, আরো বিরাট, আরো দূরস্পর্শী, আরো ক্ষমাহীন। আমাদের প্রথম প্রস্তাব : জগতের সব শিল্পকলা নিষিদ্ধ বা বিনষ্ট বা লুক্কায়িত বা অবগুণ্ঠিত হোক। সব সাহিত্য, সব চিত্র, সব মূর্তি, সব অলংকৃত মন্দির। আর্টের অজুহাতে যেন নিস্তার না পান শেক্সপিয়র বা কালিদাস, রূবেন্স বা বতিচেল্লি। ইতিহাসের অজুহাতে যেন নিস্তার না পায় মহাভারত বা কথাসরিৎসাগর বা আরব্যোপন্যাস। ধর্মের অজুহাতে যেন নিস্তার না পায় চতুর্বেদ বা হোলি বাইবেল বা কোণারক-মন্দির বা সিস্টিন চ্যাপেল। বাহুল্যবোধে জয়দেব অথবা বৈষ্ণব কবিদের উল্লেখ করছি না। আমরা গভীরভাবে চিন্তা করে দেখেছি : এই পাপের আচ্ছাদন ও প্রশ্রয়দাতা ধর্ম যে-ভাবে হতে পারে এবং হয়ে এসেছে, সে-তুলনায় সাধারণ সাহিত্যের ভূমিকা অকিঞ্চিৎকর। যাঁরা নগ্নতার অপসারণের জন্য সচেষ্ট, তাঁরা কি এ-বিষয়ে অবহিত আছেন যে বহুচিত্রিত আদম ও ঈভা বসনমুক্ত এবং হরপ্রিয়া পার্বতীও ভিক্টরিয়ান জ্যাকেট-ধারিণী মহিলা নন? বেশি আর কথা কী, অসংখ্য হিন্দু নর-নারী শিবলিঙ্গের পূজা করে থাকে, এবং শিব-শক্তি বা যম-যমী নামে প্রচলিত-যুগলমূর্তিসমূহ ― যা স্পষ্টভাবে, উগ্রভাবে, উদ্ধতভাবে, অকুণ্ঠভাবে স্ত্রী-পুরুষের যৌন ক্রিয়ার চিত্ররূপ—তারও উপাসকবৃন্দ কন্যাকুমারিকা থেকে তিব্বত পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে। এর চেয়ে গর্হিত, লজ্জাকর, ভয়াবহ, লোমহর্ষক অবস্থা আর কী হতে পারে? অতএব আমাদের প্রস্তাব : দেবদেবীদের সংহার করা হোক; মূর্তি, মন্দির, প্রতিমা, পট, গ্রন্থ, সংগীত, পদাবলি, কথকতা, যাত্রা, কীর্তন ইত্যাদি সমুদয় অবলম্বন নিয়ে ধর্ম অবলুপ্ত হোক।’
[ অধ্যাপক ও তরুণ কবি একসঙ্গে হেসে উঠলেন। ]
ব্যারিস্টার-পত্নী। আপনার ঠাট্টা কিন্তু মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। অতটা বললে কিছুই বলা হয় না।
অধ্যাপক। এক ধরনের লজিক আছে কিন্তু। সত্যি তো, যদি বই পড়ে কারো চরিত্র খারাপ হতে পারে, তাহলে মহাভারত পড়েই বা তা হবার বাধা কী?
তরুণ কবি। শোনা যাক। শেষ পর্যন্ত শোনা যাক।
প্রবীণ লেখক। (পড়ে)। ‘অনেকে মনে করেন ধর্ম, সাহিত্য, শিল্প ইত্যাদির পরিবর্তে বিজ্ঞানের চর্চা বাড়ালে অশ্লীলতা-রূপ বিষবৃক্ষ সমূলে উৎপাটিত হবে। কিন্তু আমাদের মতে এই ধারণাও ভ্রান্ত। কোনো-কোনো বিজ্ঞানেও যৌনতাচর্চার প্রচুর অবকাশ আছে : যেমন, নৃতত্ত্ব, শরীরতত্ত্ব, প্রাণতত্ত্ব, জীববিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্যা ফ্রয়েড-প্রবর্তিত মনস্তত্ত্বের কথা কিছু না-ই বললাম। ভূগোল—যা প্রতি বিদ্যালয়ে অবশ্যপাঠ্য, তারই বা আলোচ্য বিষয় কী? পর্বত —উপত্যকা—নির্ঝরিণী উষ্ণ প্রস্রবণ আগ্নেয়গিরি; কেউ অস্বীকার করতে পারবেন না এগুলো সুস্পষ্ট যৌন চিত্রকল্প, যার প্রভাব অন্তত সুকুমারমতি বালক-বালিকাদের পক্ষে–অত্যন্ত ক্ষতিকর হতে পারে। এমনকি জ্যামিতি– যাকে অনেকে ভাবেন বিশুদ্ধ ও নিরঞ্জন তাতেও আছে ত্রিভুজ, বৃত্ত, লম্বরেখা, শয়ান রেখা, অবতল ও উত্তলের ধারণা এবং চিত্ররূপ, যার ইঙ্গিত তর্কাতীতরূপে যৌন। অতএব আমাদের মতে বিজ্ঞান ও পরিহার্য।’
[ অধ্যাপক ও তরুণ কবি হেসে উঠলেন। ব্যারিস্টার ও ব্যারিস্টার-পত্নী ভুরু কুঁচকোলেন। ]
ব্যারিস্টার-পত্নী। বড্ড বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে।
ব্যারিস্টার। কিছু মনে করবেন না। একেই বলে অ্যাবসার্ড।
অধ্যাপক। এক ধরনের লজিক আছে কিন্তু।
তরুণ কবি। আপনি পড়ুন। বেশ ভালো লাগছে।
প্রবীণ লেখক (পড়ে)। ‘এখন কথা হচ্ছে : কোনো যোগসিদ্ধ মহাপুরুষ যদি ধর্ম, সাহিত্য, শিল্প ও বিজ্ঞানকে নিধন করতে পারেন, তাহলেও থাকবে যৌনতার অজস্র জীবন্ত উদাহরণ : পশু, পাখি, তৃণ, বৃক্ষ ইত্যাদি। কল্পনা করে দেখুন কুকুর ও কুক্কুরীগণের ব্যভিচার; রাজপথে, গৃহস্থের প্রাঙ্গণে, প্রকাশ্যে, দিবালোকে, বালক-বালিকার দৃষ্টির সামনে, মাতা পুত্র ভ্রাতা ভগ্নী শ্বশুর পুত্রবধূর চোখের সামনে, তারা কি নির্লজ্জভাবে কামকেলিতে মত্ত হচ্ছে না? জগৎ ভরে কে না দেখেছে কুক্কুট, পারাবত ও চটকপক্ষীর তৃপ্তিহীন লাম্পট্যের দৃশ্য, জোনাকির যৌন আলোকবিন্দু, ময়ূরের যৌন নৃত্য, কে না শুনেছে বসন্তকালে পুংস্কোকিলের কামাতুর চীৎকার? ফুল, যা বৃক্ষের যৌনাঙ্গ, এক অগুপ্ত উভলিঙ্গ উচ্ছ্বাস—তার মতো অশ্লীল আর কী আছে? অথচ এই ফুল, ময়ূর, পায়রা, কোকিল এ-সব নিয়েই কত কাব্য, কাহিনী, সংগীত, ভাবোন্মাদনা, মানুষ এদেরই রমণীয় বলে ধারণা করে থাকে—এমনি পাপিষ্ঠ মানববংশ! কেউ চিন্তা করে দ্যাখে না যে মাতা, পিতা, সন্তান, শিশু—এই সব শব্দের অন্তরালে আছে প্রজনন ও জন্ম, অতএব এরা কুৎসিত ও অনুচ্চারণীয়।—’
ব্যারিস্টার পত্নী (তীব্র, নিচু গলায়)। ছি!
অধ্যাপক। আমার মনে পড়ে যাচ্ছে ডি. এইচ. লরেন্স একবার বলেছিলেন—To the puritan everything is impure.’
ব্যারিস্টার-পত্নী। তাই বলে মা, বাবা, সন্তান–ছি!
অধ্যাপক। কিন্তু লজিকেলি তা-ই দাঁড়াচ্ছে না কি ব্যাপারটা?
তরুণ কবি। আপনারা তর্ক থামান–লেখাটা শোনা যাক।
প্রবীণ লেখক (আবার পড়তে লাগলেন)। ‘কেউ চিন্তা করে দ্যাখে না যে জন্ম অশ্লীল, সন্তান অশ্লীল, যৌবন অশ্লীল, জীবন অশ্লীল!—’
ব্যারিস্টার-পত্নী (তীব্র, নিচু গলায়)। কোনো মানে হয় না, সত্যি!
প্রবীণ লেখক (পড়ে)। ‘তাই, যাঁরা মাঝে-মাঝে শুধু কোনো-কোনো সাম্প্রতিক পুস্তক বা লেখকের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে থাকেন, তাঁদের আচরণ আমাদের মতে উপহাস্য, অন্তঃসারশূন্য, অর্থহীন। আমরা যারা নিগূঢ়তম অর্থে অশ্লীলতার বিরোধী, আমরা সর্বান্তকরণে প্রার্থনা করি : “আগত হও, কল্কি-অবতার, ত্রাণ করো। এসো, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ। এসো, মুক্তিদাতা আণবিক বোমা!”’ (পড়া থামিয়ে)—এই পর্যন্ত লিখেছি।
ব্যারিস্টার-পত্নী। তৃতীয় যুদ্ধের কথাটা কী করে এলো বুঝলাম না।
অধ্যাপক (মৃদু হেসে)। সেটা বুঝলেন না? বোমার বিষে মানুষ বিলকুল বদলে যাবে, যৌনতা ব্যাপারটাই আর থাকবে না, আর সেটাই হবে অশ্লীলতা ব্যাধির চরম চিকিৎসা—তা-ই নয় কি?
ব্যারিস্টার-পত্নী (নিরাশ ও ঈষৎ রুষ্ট)। আমরা এবার উঠি তাহলে।
ব্যারিস্টার (তাঁর কণ্ঠস্বরে অস্বস্তি)। সত্যি কি এটাকেই আপনারা ইস্তাহার করবেন?
তরুণ কবি। তা মন্দ কী। অন্তত একটা আয়না ধরা হবে লম্বকর্ণদের মুখের সামনে। ভালো তো।
প্রবীণ লেখক। এমনিতেও কথাটা খুব নির্দোষ, খুব—কী বলে গিয়ে সচ্চরিত্র, আমরা চাই সম্পূর্ণ সুনীতিপরায়ণ এক জগৎ—এক অন্য গ্রহ।
তরুণ কবি। এক অন্য জগৎ যেখানে ঘাস নেই, গাছপালা নেই, নেই মাছ, পাখি পশু, কীট, পতঙ্গ।
অধ্যাপক। বাতাস নেই। জল নেই। মাটি নেই।
প্রবীণ লেখক। বালু, ধাতু, পাথর আর জমে-যাওয়া লাভায় তৈরি এক জগৎ।
তরুণ কবি। মানুষ নেই। শুধু আছে লক্ষ-লক্ষ রোবট, লোহা, তামা আর প্ল্যাটি- নামে তৈরি। এক অদৃশ্য নপুংসক ঈশ্বর তাঁর বিরাট ল্যাবরেটরিতে অনবরত তৈরি করছেন, পুরোনো হলেই ভেঙে ফেলছেন।
প্রবীণ লেখক। রোবট। নিষ্প্রাণ, কর্মিষ্ঠ, অনিদ্র, ক্লান্তিহীন। যকৃৎ নেই, জিহ্বা নেই, হৃৎপিণ্ড নেই, ইন্দ্রিয় নেই, শুক্র শোণিত মল মূত্র কিছুই নেই।
অধ্যাপক। সাধু, নিষ্কলুষ, অপাপবিদ্ধ
তরুণ কবি। এতদিনে এক আদর্শ জগৎ!
অধ্যাপক। নির্বীজ, নির্বিষ, নীরন্ধ্র, নিরাপদ, পবিত্র।
তরুণ কবি। এতদিনে অশ্লীলতার অবসান।
অধ্যাপক। এতদিনে মোক্ষ। এতদিনে নির্বাণ।
প্রবীণ লেখক। শান্তি। শান্তি। শান্তি।
ব্যারিস্টার। কিন্তু এ-সব কথায় আইনের কিছু এসে যায় না।
ব্যারিস্টার-পত্নী। ভাগ্যিশ।
১৯৬৮
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন