৩০. গোয়েঙ্কাজীর ঘরে

শংকর (মণিশংকর মুখোপাধ্যায়)

গোয়েঙ্কাজীর ঘরে টোকা পড়তেই তিনি নিজে দরজা খুলে দিলেন। সোমনাথের জন্যে তিনি অপেক্ষা করছেন।

আজ একটু স্পেশাল সাজগোজ করেছেন গোয়েঙ্কাজী! সাদা গরদের দামী পাঞ্জাবী পরেছেন তিনি। ধুতিটা জামাইবাবদের মতো চুনোট করা। গায়ে বিলিতী সেন্টের গন্ধ ভুরভুর করছে। পানের পিচে ঠোঁট দুটো লাল হয়ে আছে। মুখের তেল-চকচক ভাবটা নেইএখানে এসে বোধহয় আর এক দফা স্নান সেরে নিয়েছেন।

আড়চোখে শিউলিকে দেখলেন গোয়েঙ্কা। সাদরে বসতে দিলেন দুজনকে।

নটবরবাবু বারবার বলে দিয়েছিলেন, “গোয়েঙ্কাকে বোলো, ওর স্পেসিফিকেশন জানা থাকায়, আমাদের বিদ্যেবধি মতো মেয়েমানুষ চয়েস করেছি। একটু কেয়ারফুলি গোয়েঙ্কাকে স্টাডি কোরো। যদি বোঝো জিনিস তেমন পছন্দ হয়নি, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে বোলো, এর পরের বারে আপনি যেমনটি চাইবেন ঠিক তেমনটি এনে রাখবো।”

এসব প্রশ্ন উঠলো না। কারণ গোয়েঙ্কাজীর হাবভাবেই বোঝা যাচ্ছে সঙ্গিনীকে তাঁর বেশ পছন্দ হয়েছে।

সোমনাথের সমস্ত শরীর অকস্মাৎ মিশরের মমির মতো শক্ত হয়ে আসছে। তার চোয়াল খুলতে চাইছে না। নটবরবাবু বারবার বলেছিলেন, “জিজ্ঞেস করবে, কলকাতায় আসবার পথে গোয়েঙ্কাজীর কোনো কষ্ট হয়েছিল কিনা?”

গোয়েঙ্কাজী বললেন, “আমি এসেই আপনার চিঠি পেলাম। কষ্ট করে আবার ফুল পাঠাতে গেলেন কেন?”

“তোমাকে জুতো মারা উচিত ছিল, এই বলতে পারলেই ভিতরের সোমনাথ শান্তি পেতো। কিন্তু সোমনাথের মমিটা কিছুই বললো না।।

গোয়েঙ্কাজী সুইট নিয়েছেন। সামনে ছোট একটু বসবার জায়গা। ভিতরে বেডরুমটা উঁকি মারছে।

মানুষের চোখও যে জিভের মতো হয় তা সোমনাথ এই প্রথম দেখলো। শিউলির দিকে তাকাচ্ছেন গোয়েঙ্কা আর চোখের জিভ দিয়ে ওর দেহটা চেটে খাচ্ছেন।

শিউলি মাথা নিচু করে সোফায় বসেছিল। লম্বা বেণীর ডগাটা শিউলি যে বারবার নিজের আঙুলে জড়াচ্ছে গোয়েঙ্কা তাও লক্ষ্য করলেন। সঙ্গিনীকে সন্তুষ্ট করবার জন্যে গোয়েঙ্কা জিজ্ঞেস করলেন, সে কিছু, খাবে কিনা। শিউলি না বললো। ভদ্রতার খাতিরে গোয়েঙ্কাজী এবার সোমনাথকে জিজ্ঞেস করলেন, “আপনি কী খাবেন বলুন?” সোমনাথ বলায় ভদ্রলোক যেন আশ্বস্ত হলেন।

শিউলির দেহটা একবার চেটে খেয়ে গোয়েঙ্কা বললেন, “বসুন না, মিস্টার ব্যানার্জি। শিউলির সঙ্গে দুজনে গল্প করি।” নটবরবাবুর উপদেশ সঙ্গে সঙ্গে মনে পড়ে গেলো।

“খবরদার এই কাজটি করবেন না। যার জন্যে ভেট নিয়ে গেছেন, মেয়েমানুষটি সেই সময়ের  জন্যে তার একার, এই কথাটি কখনও ভুলবেন না। মেয়েমানুষের ক্ষেত্রে যা কিছু, রস-রসিকতা পার্টি করুক। শাস্ত্রে বলেছে, পর দ্রব্যেষু লোষ্ট্রবৎ।”

ঘড়ির দিকে তাকালো সোমনাথ। অধৈর্য গোয়েঙ্কাজী এবার সঙ্গিনীকে বেড রুমে যেতে অনুরোধ করলেন।

নিজের কালো হাতব্যাগটা তুলে নিয়ে শিউলি পাশের ঘরে যেতেই সোমনাথ উঠে দাঁড়ালো। গোয়েঙ্কাজী খুশী মেজাজে সোমনাথের কাঁধে হাত দিলেন।

গোয়েঙ্কাজী অসংখ্য ধন্যবাদ জানালেন সোমনাথকে। বললেন, “অনেক কথা আছে। এখনই বাড়ি চলে যাবেন না যেন।”

সোমনাথ জানিয়ে দিলো সে একটু ঘুরে আসছে। গোয়েঙ্কা নির্লজ্জভাবে বললেন, “আপনি ঘণ্টা দেড়েক পরে ফিরে এসে নিচে লাউঞ্জে অপেক্ষা করবেন। আমি আপনাকে ফোনে ডেকে নেবো।”

সকল অধ্যায়

১. ০১. আজ পয়লা আষাঢ়
২. ০২. যোধপর পার্কে জলের ট্যাঙ্কের কাছে
৩. ০৩. চা খেয়ে সোমনাথ চুপচাপ বসেছিল
৪. ০৪. বাবার বন্ধু সুধন্যবাবু
৫. ০৫. আজকাল বাবাকে দেখলে কমলার কষ্ট হয়
৬. ০৬. দুপরের ক্লান্ত ঘড়িটা
৭. ০৭. মেঘ কাটতে শুরু করেছে
৮. ০৮. সুকুমার সেদিন চলে গিয়েছিল
৯. ০৯. অফিসের এক বন্ধুকে
১০. ১০. সোমনাথ মনস্থির করে ফেলেছে
১১. ১১. বউদি চলে যাবার একটু পরে
১২. ১২. হাতে অ্যাটাচি কেস নিয়ে
১৩. ১৩. মল্লিকবাবু ছাপানো প্যাডগুলো দিয়ে গেলেন
১৪. ১৪. পাশের ঘরের কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ
১৫. ১৫. তপতী বাহাত্তর নম্বর ঘরে হাজির হলো
১৬. ১৬. মিস্টার মাওজীর সঙ্গে সোমনাথের দেখা
১৭. ১৭. সোমনাথের ভাগ্যটা নিতান্তই পোড়া
১৮. ১৮. কমলা বউদি একবারও প্রশ্ন করলেন না
১৯. ১৯. গলার টাইটা কয়েক ইঞ্চি ঢিলে করে
২০. ২০. সোমনাথকে ডেকে পাঠালেন নটবর মিত্তির
২১. ২১. জন্মদিনটা আনন্দের কেন
২২. ২২. যোধপুর পার্ক বাস স্ট্যান্ডের কাছে
২৩. ২৩. সোমনাথ পাথরের মতো বসে রইলো
২৪. ২৪. বাহাত্তর নম্বর ঘরে এগারো নম্বর সীটে
২৫. ২৫. গোয়েঙ্কার প্রত্যাশিত ফোন এসেছে
২৬. ২৬. ইউরোপীয়ান অ্যাসাইলাম লেনের কাছে
২৭. ২৭. মিসেস গাঙ্গুলী
২৮. ২৮. উড স্ট্রীটে এলেন নটবর মিত্র
২৯. ২৯. মিসেস বিশ্বাসের ফ্ল্যাটের কাছে
৩০. ৩০. গোয়েঙ্কাজীর ঘরে
৩১. ৩১. দেড় ঘণ্টা
৩২. ৩২. মাতালের মতো টলছে সোমনাথ ব্যানার্জি
৩৩. ৩৩. জন-অরণ্যের নেপথ্য কাহিনী

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন