২৪. বাহাত্তর নম্বর ঘরে এগারো নম্বর সীটে

শংকর (মণিশংকর মুখোপাধ্যায়)

মিস্টার মাওজীর অফিস থেকে ফিরে সোমনাথ বাহাত্তর নম্বর ঘরে এগারো নম্বর সীটে মাথা নীচু করে বসে আছে। আজ এই ১লা আষাঢ়েই তার জীবনের সবগুলো অধ্যায়ের একই সঙ্গে বিয়োগান্ত পরিণতি হতে চলেছে। বাবা নোটিশ দিয়েছেন, হীরালালবাবু ড়ুবিয়েছেন, তপতী আর সময় দিতে অক্ষম। বাকি ছিলেন মিস্টার মাওজী। তিনি বললেন, দ্রুত কাজ না দিলে আর সময় নষ্ট করতে পারবেন না। কেমিক্যাল বেচবার জন্যে মিলগুলোতে তিনি নতুন লোক পাঠাবেন। মিস্টার মাওজীর কাছেও সময় ভিক্ষা করেছে সোমনাথ। বলেছে অন্তত এক সপ্তাহ অপেক্ষা করবার জন্যে।

অতএব সাঙ্গ হলো খেলা। চাকরি হবে না। ব্যবসার নামে সামান্য যা পজি ছিল তা জলাঞ্জলি দিয়ে অবসরপ্রাপ্ত ডবল, বি সি এস দ্বৈপায়ন ব্যানার্জির কনিষ্ঠপত্র সেমিনাথ ব্যানার্জি কোথায় যাবে এবার?

 

ক্রিং ক্রিং। সেনাপতি ছিল না। সোমনাথ নিজে গিয়েই ফোন ধরলো।

“হ্যালো, হ্যালো মিস্টার ব্যানার্জি?” মহাত্মা মিলস-এর সদর্শন গোয়েঙ্কা ফোন করছেন। “মিস্টার ব্যানার্জি, সেদিন আপনার ফ্রেন্ড নটবর মিটার সব বলেছেন। মেনি থ্যাংকস। হাতে একটু সময় পেয়েছি। আজ কলকাতায় যাচ্ছি। গ্রেট ইন্ডিয়ান হোটেলে সন্ধ্যেবেলাটা আপনার জন্যে ফ্রি রাখবো…হ্যালো, হ্যালো…কিন্তু হোলনাইট নয়।”

সোমনাথের হাতটা কাঁপছে, গোয়েঙ্কাকে যা বলবে ঠিক করে রেখেছিল তা বলবার আগেই গোয়েঙ্কা বললেন, “তখন আপনার কেস নিয়েও কথা হবে কুছ, গড নিউজ থাকতে পারে।”

সোমনাথ যা বলতে চেয়েছিল তা বলবার আগেই লাইন কেটে গেলো। সোমনাথ দু-তিনবার টেলিফোন ট্যাপ করে রিসিভারটা যথাস্থানে রেখে মাথায় হাত দিয়ে বসলো।

সোমনাথ এখন আর বাধা দেবে না। সময়ের স্রোতে নিজেকে ভাসিয়ে দেবে। গোয়েঙ্কাকে ট্রাঙ্ককল করে বলবে না—সে ব্যস্ত আছে এবং নটবর মিটার যেসব কথা বলেছেন তার জন্যে সোমনাথ দায়ী নয়।

সোমনাথের আর কোনো উপায় নেই। এখন নটবরবাবুকে ধরতে পারলে হয়। ভদ্রলোক যদি আবার কলকাতার বাইরে গিয়ে থাকেন তাহলে কেলেঙ্কারি।

দ্রুত কাজ করতে হবে সোমনাথকে। সেনাপতি লুকিয়ে লুকিয়ে বন্ধকীর কাজ করে। নতুন সোনার ঘড়িটা জমা রেখে সেনাপতি শ’পাঁচেক টাকা ধার দেবে না?

সেনাপতি এক কথায় রাজী হয়ে গেলো। বললো, “পাঁচ-ছ’শ যা ইচ্ছে নিন বাব।”

“তাহলে ছ’শই দাও। হঠাৎ একটা পাটি কলকাতার বাইরে থেকে আসছে। কত খরচ হবে জানি না।” সোমনাথ বললো।

সেনাপতি বললো, “আপনাকে তো ধার দিতে ভাবনা নেই। আপনি মদও খান না, মেয়েমানুষের কাছেও যান না। বোসবাবু সন্ধ্যেবেলায় টাকা চাইলে আমার চিতা হয়। ব্যবসায় লাগিয়ে উনি সব টাকা হোটেলে রেখে আসেন।”

সকল অধ্যায়

১. ০১. আজ পয়লা আষাঢ়
২. ০২. যোধপর পার্কে জলের ট্যাঙ্কের কাছে
৩. ০৩. চা খেয়ে সোমনাথ চুপচাপ বসেছিল
৪. ০৪. বাবার বন্ধু সুধন্যবাবু
৫. ০৫. আজকাল বাবাকে দেখলে কমলার কষ্ট হয়
৬. ০৬. দুপরের ক্লান্ত ঘড়িটা
৭. ০৭. মেঘ কাটতে শুরু করেছে
৮. ০৮. সুকুমার সেদিন চলে গিয়েছিল
৯. ০৯. অফিসের এক বন্ধুকে
১০. ১০. সোমনাথ মনস্থির করে ফেলেছে
১১. ১১. বউদি চলে যাবার একটু পরে
১২. ১২. হাতে অ্যাটাচি কেস নিয়ে
১৩. ১৩. মল্লিকবাবু ছাপানো প্যাডগুলো দিয়ে গেলেন
১৪. ১৪. পাশের ঘরের কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ
১৫. ১৫. তপতী বাহাত্তর নম্বর ঘরে হাজির হলো
১৬. ১৬. মিস্টার মাওজীর সঙ্গে সোমনাথের দেখা
১৭. ১৭. সোমনাথের ভাগ্যটা নিতান্তই পোড়া
১৮. ১৮. কমলা বউদি একবারও প্রশ্ন করলেন না
১৯. ১৯. গলার টাইটা কয়েক ইঞ্চি ঢিলে করে
২০. ২০. সোমনাথকে ডেকে পাঠালেন নটবর মিত্তির
২১. ২১. জন্মদিনটা আনন্দের কেন
২২. ২২. যোধপুর পার্ক বাস স্ট্যান্ডের কাছে
২৩. ২৩. সোমনাথ পাথরের মতো বসে রইলো
২৪. ২৪. বাহাত্তর নম্বর ঘরে এগারো নম্বর সীটে
২৫. ২৫. গোয়েঙ্কার প্রত্যাশিত ফোন এসেছে
২৬. ২৬. ইউরোপীয়ান অ্যাসাইলাম লেনের কাছে
২৭. ২৭. মিসেস গাঙ্গুলী
২৮. ২৮. উড স্ট্রীটে এলেন নটবর মিত্র
২৯. ২৯. মিসেস বিশ্বাসের ফ্ল্যাটের কাছে
৩০. ৩০. গোয়েঙ্কাজীর ঘরে
৩১. ৩১. দেড় ঘণ্টা
৩২. ৩২. মাতালের মতো টলছে সোমনাথ ব্যানার্জি
৩৩. ৩৩. জন-অরণ্যের নেপথ্য কাহিনী

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন